এই গল্পটি আবু সুবাইদ বলেছিলো :
একদিন আমি বাগানে ফল কিনতে গেছি, হঠাৎ নজরে এলো, একটা আখরোট।ং গাছের তলায় বসে এক রমণী চুলের প্রসাধন করছে। আরও কাছে যেতে দেখতে পেলাম সে বয়সে প্রবীণা-মাথার সব চুলই সাদা। কিন্তু কী আশ্চর্য তার দেহের কোথাও বার্ধক্যের ছাপ পড়েনি। ঢলঢলে যৌবন তার সারা অঙ্গে! সুন্দর মুখশ্ৰী, দুধে-আলতা গায়ের রঙ, ডাগর-কচি তনু।
আমাকে দেখেও কিন্তু সে বোরখা দিয়ে দেহ ঢাকা দিলো না। যেমন করে হাতীর দাঁতের চিরুণী দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিল তেমনি ভাবেই আঁচড়াতে থাকলো। একেবারে নির্লিপ্ত নির্বিকার! আমাকে দেখে কোন ভাব বৈলক্ষণ্য দেখা গেলো না।
তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা সুন্দরী, তোমার চুলেই শুধু পাক ধরেছে, কিন্তু তুমি তো আসলে সুঠাম সুন্দরী যুবতী এখনও। তা কলপ লাগিয়ে সাদা চুলকে কালো করে নিলেই তো পারো! তা হলেই তো মনমোহিণী রূপ হবে তোমার!
এই কচি কাঁচা বয়েস তোমার, এই বয়সে চুলগুলো কালো করে নাও না কেন? কী ব্যাপার?
রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
তিনশো আটাত্তরতম রজনীর দ্বিতীয় প্রহরে আবার গল্প শুরু হয় :
মেয়েটি মাথা তুলে তাকায়। টানাটানা কাজল কালো চোখ। আমার প্রশ্নের সে জবাব দেয়? আমার পাকা চুলে রঙ ধরিয়ে কালো তো করেছিলাম। কিন্তু আমার পোড়া কপাল, সাদা হয়ে গজাচ্ছে, মিথ্যে কালিমা দিয়ে তাকে আর কঁহাতক ঢেকে রাখা যায়? ধৈর্যেকুলালো না, তাই সময়ে আবার সব সাদা হয়ে গেলো। তা যাক, ওনিয়ে আর দুঃখ করি না। ভয় হয়, আমার এই দুরন্ত যৌবনের জোয়ারকে। তাকে অনেক ঢেকেঢুকে ধরে বেঁধে সন্তৰ্পণে আগলে রাখতে হয়। কিন্তু সে তো আর পারা যায় না। আসল কথা—জোরজার করে কিছুই ঢেকে চেপে রাখা যায় না। আমার দেহের যৌবন, আমার এই পিনোদ্ধত বুক—কী করে আড়াল করে রাখতে পারি বলো? সুতরাং মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে বলে দুঃখ করি না। আমার দেহে তো এখনও ঢলঢলে যৌবন আছে—সে তো বয়সের ভারে বৃদ্ধ হয়ে পড়েনি।
শাহরাজাদ একটুক্ষণের জন্য থামে। তার পর আবার এক কাহিনী শুরু করে :