তিনতলায় বাড়িওয়ালাদের একটি অল ওয়েভ রেডিও আছে। এক বাড়িতে রেডিও থাকলে তা সারা পাড়ার লোক শোনে। গাড়ি, বাড়ি, রেডিও, টেলিফোন, এই চারটে জিনিস যাদের আছে তাদের কলকাতার মানুষ বড়লোক হিসেবে গণ্য করে। দোতলার ভাড়াটেদের এর কোনোটাই নেই, তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই যে নিম্ন মধ্যবিত্তের মানসিকতা এখনও তারা আয়ত্ত করে নিতে পারেনি। পূর্ব স্মৃতি এখনও জ্বল জ্বল করে, তাতে দুঃখ বাড়ে।
মালখানগরে প্রতাপদের যে বাড়ি ও জমি-জমা ছিল, দেশ বিভাগ না হলে, স্বাভাবিক অবস্থায় সেই সব বিক্রি করে তাঁরা কলকাতায় বাগানবাড়ি কিনতে পারতেন। প্রতাপের বাবা এক সময় একটি স্টিমার কিনেছিলেন। সুপ্রীতিরও স্বামীর গাড়ি ছিল এক সময়ে, বরানগরের বিশাল বাড়ি ছেড়ে তাঁরা চলে এসেছেন বেশীদিন আগে নয়। এখন সবাই মিলে ভাড়া করা একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে গাদাগাদি করে রয়েছেন বটে, কিন্তু চোখ মুখ থেকে আভিজাত্যের ছাপ মিলিয়ে যায়নি। এই জন্য পাড়ার লোকরা তাঁদের অহংকারী মনে করে, আড়ালে টিটকিরি দেয়।
প্রতাপদের রেডিও নেই। এখন সব দিকে খরচ সঙ্কোচের প্রয়াস চলছে, এর মধ্যে কোনোরকম বিলাসিতার প্রশ্ন ওঠে না। মমতা একবার রেডিও কেনার মৃদু দাবি তুলেছিলেন কিন্তু ছেলে মেয়েদের পড়াশুনোর ক্ষতি হবে এই অজুহাতে প্রতাপ সে দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।
যে বাড়িতে রেডিও আছে সে বাড়িতে প্রতি শুক্রবার নাটক শোনার জন্য পাড়ার মেয়েরা ভিড় করে আসে। বাড়িওয়ালার বউ অতসী দু’একবার মমতা আর সুপ্রীতিকে ডেকেছেন, কিন্তু তুচ্ছ ছুতোনাতা দেখিয়ে ওঁরা যাননি। অন্যের বাড়িতে রেডিও শুনতে যাওয়া ওঁদের পক্ষে সম্ভব নয়, এই-ই ওঁদের অহংকার। অন্য বাড়ির গৃহিণীরা ওঁদের নাম করে মুখ বেঁকিয়ে হাসেন।
পিকলু-বাবলু-তুতুলরাও ওপরে রেডিও শুনতে যায় না, কিন্তু নিচ থেকেই শুনে শুনে ওদের। সব প্রোগ্রাম মুখস্থ। ঘড়ি দেখার দরকার হয় না, সকালবেলার অনুষ্ঠান শেষের বাজনা বাজলেই ওরা স্কুল-কলেজে যাবার প্রস্তুতি শুরু করে দেয়, একজন অন্যদের আগে স্নানের ঘরের দিকে দৌড় মারে।
অন্যের রেডিও শোনার কষ্ট অনেক। রুচি পার্থক্য যখন-তখন বুকে ধাক্কা দেয়।
অতসী ফুল ভলমে রেডিও চালান, দোতলা থেকে শুনতে কোন অসুবিধে নেই, কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর অতসীর বড় রাগ। তাঁর মতে রবীন্দ্রসঙ্গীত হচ্ছে শুধু প্যানপাননি কিংবা ঘুমিয়ে পড়া গান। রবীন্দ্রসঙ্গীত শুরু হলেই তিনি দুম্ করে বন্ধ করে দ্যান। দোতলা থেকে তুতুলের মনে হয় যেন রেডিওটা কঁকিয়ে উঠে, দুঃখের আর্তনাদ করে থেমে গেল!
ইদানীং তুতুল রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যে তার মনোজগৎ আবিষ্কার করতে শুরু করেছে। এক একটা নতুন নতুন গান শোনে আর তার মনে হয়, এ তো অবিকল তার মনের কথা। একদিন সুচিত্রা মিত্র গাইছেন, “কী সুর বাজে আমার প্রাণে আমিই জানি, মনই জানে। কিসের লাগি সদাই জাগি, কাহার কাছে কী ধুন মাগি–তাকাই কেন পথের পানে..” এ গান তুতুল আগে কোনোদিন শোনেনি। সিঁড়ির ধারে দাঁড়িয়ে সে প্রত্যেকটা লাইন যেন এক অলৌকিক উপহারের মতন শরীর ভরে নিচ্ছে। এত ভালো লাগা, যেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠছে হৃদয়।
হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল রেডিও। আর কোনোদিন মনে হয়নি, কিন্তু আজ তুতুলের ইচ্ছে করলো দৌড়ে ওপরে গিয়ে অতসীকে মিনতি করে বলে, কাকীমা, রেডিওটা আবার খুলুন, এই গানটা শেষ অবধি শুনতে দিন! কাকীমা, আপনার পায়ে পড়ি–
কিন্তু তুতুল মনে মনেই শুধু বললো এ কথা। ওপরে গেল না। ইদানীং সে ওপরে যাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। অতসীর ভাই রূপেন হোস্টেল ছেড়ে এখন এ বাড়িতে থাকে। তুতুলকে দেখলেই কিছু না কিছু অসভ্যতা করার চেষ্টা করে সে। রূপেনের কথাবার্তা বেশ মজার হলেও স্বভাব ভালো নয়।
গানটির বাকি অংশ শোনা হলো না বলে যন্ত্রণায় তুতুলের মনটা কুঁকড়ে যেতে লাগলো। সুচিত্রা মিত্র এখনও গানটি গেয়ে যাচ্ছেন, শুধু ওপরের রেডিও যন্ত্রটা বন্ধ বলে তুতুল সেই গান শোনা থেকে বঞ্চিত হলো।
পিকলু কোথায় যেন গিয়েছিল, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে তুতুলকে দেখে সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, এই, তুই এখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিস কেন, কী হয়েছে?
গানের জন্য এতখানি কষ্ট তুতুল আগে কোনোদিন পায়নি। সে যে কাঁদছে, তা সে নিজেই জানে না। সে পিকলুর কথায় উত্তর দিতে পারলো না।
পিকলু কাছে এসে তুতুলের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, এই, কী হয়েছে রে তোর?
তুতুল ঘুরে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে মাথা রাখলো পিকলুর বুকে। কয়েক মুহূর্ত মাত্র। তারপরই আবার সে দৌড়ে ফ্ল্যাটের মধ্যে গিয়ে ঢুকে পড়লো বাথরুমে।
পিকলু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। তুতুলের জন্য তার কষ্ট হয়। কিন্তু ও মেয়ে হয়ে জন্মেছে, কীই বা করা যাবে! ভেতরে এসে পিকলু কারুকে জিজ্ঞেস করলো না তুতুল কেন কাঁদছিল। অবশ্য বেশিক্ষণ তুতুলের কথা তার মাথাতেও রইলো না, তার অন্য অনেক চিন্তা আছে।
শিবেন আর তার দলবলের উপদ্রবে তুতুলের ইস্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ওরা তুতুলকে রাস্তায় রোজ বিরক্ত করা শুরু করেছিল। এমন কি একদিন তুতুলকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল বরানগরে। অবশ্য ওরা তুতুলের ওপর কোনো শারীরিক অত্যাচার করেনি, কারণ শিবেনের বন্ধু সুদর্শন তুতুলকে বিয়ে করতে চায়, নিছক ফুর্তি করতে চায়নি। এমন কি ওদের দলের একজন তুতুলের হাত চেপে ধরেছিল বলে সুদর্শন নাকি এক থাপ্পড় কষিয়ে ছিল সেই বন্ধুকে। সেই ঘটনাটি প্রতাপের কানে গিয়েছিল তো বটেই, এমন কি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
ইস্কুলে যাওয়া বন্ধ করলেও টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে তুতুল। পরীক্ষার সময় পিকলু রোজ তার সঙ্গে গেছে এবং সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। এখন সে বাড়িতে বন্দিনী।
বাড়ি বদলাবার জন্য খোঁজাখুঁজি চলছে চতুর্দিকে।
বিয়ের পর প্রতাপ যখন প্রথম বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার পাতেন, তখন কলকাতায় পাড়ায় পাড়ায় বহু বাড়িতে ‘টু লেট’ সাইনবোর্ড ঝুলতো। বাড়িওয়ালারা হবু-ভাড়াটেদের খাতির করতো, দু’পাঁচ টাকা ভাড়া কমিয়ে দিত এক কথায়। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। শহরের কোনো বাড়িই খালি থাকে না। বাড়িওয়ালারা ভাড়াটেদের ইন্টারভিউ নেয়, ভাড়া কমাবার প্রস্তাব শুনলে ঠোঁট উল্টে বলে, আপনি বস্তিতে চেষ্টা করুন, ও ভাড়ায় পাকা বাড়িতে থাকা যায় না। ভাড়াটে যদি পূর্ববঙ্গের লোক হয়, তা হলে বাড়িওয়ালারা ব্যঙ্গ করে বলে, আপনারা ওখানে জমিদার ছিলেন নিশ্চয়ই? বাঙালরা সবাই নাকি জমিদার? হে-হে-হে-হে! তা জমিদার হয়ে কি আমাদের এই কুঁড়ে ঘরে আপনাদের মন টিকবে?
প্রতাপদের অবশ্য বর্তমান বাড়িওয়ালার দিক থেকে কোনো সমস্যাই নেই। অতসী আর। তাঁর স্বামী দু’জনেই খুব ভালো মানুষ। গত বছর প্রতাপ নিজে থেকেই দশ টাকা ভাড়া বাড়াবার প্রস্তাব দিলে অতসীর স্বামী জিভ কেটে বলেছিলেন, ছি ছি ছি, আমি কি কোনোদিন আপনাদের ভাড়া নিয়ে কোনো কথা বলিচি! আপনারা বিশিষ্ট সজ্জন, আমাদের বাড়িতে আচেন, এই তো আমাদের কত ভাগ্যি!
এ বাড়ি ছাড়তে গেলে মমতাদের বেশ কষ্টই হবে। বাজার-হাট কাছেই, অনেকগুলো ট্রামবাসের রুট। মমতা আর সুপ্রীতির গঙ্গাস্নানের অভ্যেস হয়ে গেছে, প্রায়ই যান। বাগবাজারের ঘাটে, অন্য পাড়ায় চলে গেলে এই সুবিধেগুলো পাওয়া যাবে না।
তবু বাড়ি বদলাতে হবে এই পাড়াটার জন্যই। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ছিনতাই, গুণ্ডামি, বদমায়েসি। একটু রাত হলেই শোনা যায় হুল্লোড়-চিৎকার। পচে যাওয়া বনেদী বাড়িগুলোর অকাল কুম্মাণ্ড ছেলেরা ছোট ছোট মাস্তানি দল গড়ে পরস্পরের সঙ্গে স্পর্ধা করে।
তুতুলের ষোল বছর বয়েসেই মনে হয় পূর্ণ যৌবন এসেছে, এমন তার শরীর। কিন্তু তার মনে এখনো পুরোপুরি কৈশোরের সারল্য। সে এখনো পৃথিবীর অনেক কিছুই জানে না কিন্তু দু’একটা ব্যাপার বাধ্য হয়েই বুঝেছে। হরিণীর প্রধান শত্রু যে তার নিজেরই শরীরের মাংস তা যেমন হরিণীরা ঠিকই বুঝে যায়। তুতুল বাড়ি থেকে বাইরে বেরোয় না, এমন কি ছাদেও যায়। এখন তার একমাত্র বন্ধু রবীন্দ্রনাথ।
গল্প উপন্যাসের চেয়ে সে কবিতা পড়তেই বেশি ভালোবাসে। গল্প-উপন্যাসের বই বেশি। পাওয়া যায় না, গল্প-উপন্যাস বার বার পড়াও যায় না। কিন্তু কবিতা তাকে পাগল করে দেয়। এই বন্দী-জীবনে রবীন্দ্রনাথ যেন তাকে দুখানি ডানা জুড়ে দিয়েছেন, শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ যেন তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান এক অজ্ঞাতপূর্ব আনন্দময় জগতের দিকে।
কিছুদিন আগেও তুতুল পিকলুর পাশাপাশি বসে এক সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তো। পিকলুই তার টিউশানির টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছে সঞ্চয়িতা। পিকলু চমৎকার আবৃত্তি করে, তার স্মৃতিশক্তিও দারুণ। একদিন সে তুতুলকে বলেছিল, তুই আমাকে যে-কোনো কথা বল, কিংবা প্রশ্ন কর, আমি উত্তর দেবো রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের সারা জীবনের জন্য ভাষা দিয়ে দিয়েছেন। তুতুল পরীক্ষা করে দেখেছিল, পিকলু সত্যি বলতে পারে। এমন কি একদিন মমতা বলেছিলেন, ‘ওরে, “তোরা সব খেতে আয়! তৎক্ষণাৎ উত্তরে পিকলু বলেছিল, “কাজ কি খেয়ে, তোফা আছি, আমায় কেউ না খেলেই বাঁচি!” তুতুলের সন্দেহ হয়েছিল, এই লাইন দুটো রবীন্দ্রনাথের নয়, পিকলু সেই মুহূর্তে নিজে নিজে বানালো। কিন্তু পিকলু বই খুলে দেখিয়ে দিল, সত্যি, ঐ লাইন দুটো আছে ‘কালমৃগয়া’ গীতিনাট্যে।
কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পর পিকলু বদলাতে শুরু করে। আগে তার বিশেষ বন্ধু ছিল না। বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকতো। এখন কলেজের ছুটির পরেও সে বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে অনেকক্ষণ সময় কাটায়।
একদিন পিকলুর মুখে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে একটা অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য শুনে তুতুল শিউরে উঠেছিল। এর থেকে পিকলু তার গালে ঠাস করে একটা চড় কষালেও সে বেশি আহত বোধ। করতো না। সেদিন তুতুল সদ্য একটা নতুন গান শুনে আনন্দে উচ্ছল হয়ে বলতে এসেছিল, পিকলুদা, এই গানটা জানো, “খেলা ঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে..”? পিকলু মন দিয়ে কী সব লিখছিল খাতায়, হঠাৎ মুখ তুলে প্রায় খেঁকিয়ে উঠে বলেছিল, দূর দূর, ঐ সব লাইন শুনলে আমার গা জ্বলে যায়! বাহির আর ভিতর, আলো আর কালো, রূপ আর অরূপ, ভাঙা আর গড়া, কূল আর অকূল, ঐ দাড়িওয়ালা বুড়োর কবিতায় এর একটা থাকলে বাকিটা থাকবেই। খালি কনট্রাস্ট! খালি কনট্রাস্ট! এতে কখনো কবিতা হয়? দুই আর দুয়ে চারের মতন!
শুনে তুতুলের গায়ে যেন আগুনের ছ্যাকা লেগেছিল। পিকলুর মুখে এমন পাষণ্ডের মতন কথা, যে-পিকলু কিছুদিন আগেও সারা সকাল অনর্গল রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্ত বলে যেত!
এরপর থেকে প্রায়ই তুতুলের সঙ্গে পিকলুর রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে তর্ক লাগে। পিকলুই গলার জোরে জিতে যায়।
পিকলুর গুরু এখন জীবনানন্দ দাশ। তুতুল ওঁর কবিতা বুঝতে পারে না। কয়েকবার সে পিকলুকে অনুরোধ করেছে জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ে বুঝিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু পিকলুর সময় নেই। পিকলু তার হাত খরচের পয়সা জমিয়ে ‘কবিতা’, ‘কৃত্তিবাস’, ‘শতভিষা’ এই সব নামের ছোট ছোট পত্রিকা কিনে আনে। সেগুলিতে শুধুই আধুনিক কবিতা ছাপা হয়। তুতুল ঐ পত্রিকাগুলো পড়বার চেষ্টা করেও কিছুই হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি, সে একা একা আবার ফিরে গেছে রবীন্দ্রনাথের কাছে।
আজকাল পিকলুর দু’একজন বন্ধু বাড়িতেও আসে। প্রতাপ যখন থাকেন না। ওরা ঘরের দরজা বন্ধ করে সিগারেট খায়, তুমুল তর্ক করে। সে তর্ক সাহিত্য বিষয়ে নয়, অধিকাংশ দিনই রাজনীতি বিষয়ে। পাশের ঘরে বসে তুতুল সব শুনতে পায়। সে বুঝতে পারে যে পিকলু তাদের কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছে।
প্রথম প্রথম পিকলু তার বন্ধুদের সঙ্গে তুতুলের আলাপ করিয়ে দিয়ে তাকেও বসতে বলতো। তিনজন বন্ধুই বেশি আসে। সুকেশ চক্রবর্তী, আলমগীর রহমান আর বিকাশ দাশগুপ্ত। এদের মধ্যে সুকেশ আর আলমগীর যখন তখন জওহরলাল নেহরুর চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করে, তাদের মতে ভারতের সব দুরবস্থার জন্য নেহরু পরিবারই দায়ী, সেই সঙ্গে গান্ধী। ওরা দু’জন চীনের কোন্ এক নেতার খুব ভক্ত, চীনের পথ অনুসরণ করলে ভারতে নাকি আর এমন গরিব থাকতো না। বরুণ একটু চুপচাপ স্বভাবের, সে কবিতা লেখে।
প্রথম দু’একদিন তুতুল ঐ ঘরে বসেছিল ওদের সঙ্গে, এখন তাকে ডাকলেও সে যায় না। পিকলু একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, এই, তুই কি পদানশীন নাকি? আমার বন্ধুরা এলে তুই আসিস না কেন?
তুতুল বলেছিল, আমার ওদের ভালো লাগে না!
পিকলু স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুদের নিয়ে সে এখন মত্ত। তার ধারণা তার বন্ধুদের মতন উজ্জ্বল যুবক কলকাতা শহরে আর নেই। তাদেরও পছন্দ হয় না তুতুলের? এ মেয়েটা কী, বোকা না জড়ভরত? পিকলু ঠোঁট উল্টে বলেছিল, তোর কিস্যু হবে না! ঐ শিবেনদার বন্ধুর সঙ্গেই তোর বিয়ে দিতে বলবো পিসিমণিকে। মাছের ভেড়ির মালিকের ঘর করবি, সারা গা দিয়ে মাছ মাছ গন্ধ বেরুবে!
তুতুল কিছু কৃত্রিম কথা বলেনি। পিকলুর বন্ধুরা দেখতে শুনতে কেউ খারাপ নয়। পড়াশুনাতেও ভালো নিশ্চয়ই, নইলে পিকলুর বন্ধু হবে কেন, তা ছাড়া তাদের কথাবার্তা শুনেও বোঝা যায়। তবু, তুতুলের মনে হয়, ওদের থেকে পিকলু অনেকখানি আলাদা। পিকলু অনেক উঁচুতে উঠে বসে আছে। তার মুখে যেন ফুটে থাকে একটা জ্যোতি, তার প্রতিটি কথার সঙ্গে লেগে থাকে প্রবল আত্মবিশ্বাস, কোনো বিষয়েই পুরোপুরি না জেনে সে কিছু বলে না, এমনই তার চরিত্রের সারল্য যে সে কখনো খোঁচা মারে না কারুকে। তর্ক বিভিন্ন দিকে বাঁক নিলে এক এক সময় সে বলে ওঠে, ভাই, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, কিছু মন্তব্যও করতে পারবো না। তখন মনে হয়, তার মতন সত্যবাদী ও জ্ঞানী আর কেউ নেই।
অন্যদের মাঝখানে পিকলুকে দেখলেই তুতুল তার দাদার শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারে। সে তখন মুগ্ধভাবে চেয়ে থাকে পিকলুর দিকে। রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে পিকলুর মতামতে আহত হলেও তুতুল জানে, পিকলুর সঙ্গে আর কারুর তুলনা চলে না। দিন দিন এই ধারণাটা তার মধ্যে বদ্ধমূল হচ্ছে।
ইস্কুলে যেতে হয় না, বাড়ির বাইরে যাওয়া হয় না বলে তুতুল তার সাজ পোশাকেরও কোনো যত্ন নেয় না। ফ্রক পরা সে ছেড়ে দিয়েছে, বাড়িতে কোনোরকমে একটা শাড়ী গায়ে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু পিকলুর বন্ধুরা এলে সে শাড়ী ঠিকঠাক করে নেয়, চুল আঁচড়ায়। পিকলুদের ঘরে সে যাবে না, তবুও। পাশের ঘরে তিন-চারটি যুবক রয়েছে এই সচেতনতাই যেন তার যুবতী সত্তাকে জাগিয়ে তোলে। দুপুরবেলা মমতা ও সুপ্রীতি দু’জনেই একটু ঘুমিয়ে নেন। বন্ধুদের বসিয়ে রেখে পিকলু এক একদিন এ ঘরে এসে ফিসফিস করে বলে, এই তুতুল, আমাদের একটু চা করে দিতে পারবি?
তুতুল প্রথমে মাথা নেড়ে অসম্মতি জানায়।
পিকলু তখন তার পিঠে হাত রেখে অনুনয় করে বলে, প্লীজ, দে একটু। বাইরের দোকান থেকে চা আনালে খারাপ দেখাবে!
ঐ যে পিঠের ওপর হাত রাখা, ঐ টুকুর জন্যই সারা শরীর দিয়ে প্রতীক্ষা করে থাকে তুতুল। তার অস্তিত্বে একটা আনন্দের কোলাহল পড়ে যায়। পিকলু তার দাদা, তা হোক, তবু পিকলুর স্পর্শে সে এমন কিছু পায় যা সে এ পর্যন্ত আর অন্য কিছুতে পায়নি। ওপরতলায় অতসী কাকীমার ভাই রূপেন যখন কোনো কোনো দিন জোর করে তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেছে, তখন তুতুলের শরীর আড়ষ্ট হয়ে গেছে। শিবেনদার বন্ধু সুদর্শন যখন তাকে ছুঁতে চেয়েছে। তখনও তুতুল যেন অশুচি স্পর্শ পেয়েছে। পিকলুর বন্ধু সুকেশও কেমন যেন অদ্ভুত চোখে দু’একবার তাকিয়েছে তুতুলের মুখের দিকে, তাতে তুতুলের একটুও ভালো লাগেনি। কিন্তু পিকলু যখন কোনো অনুরোধ জানাবার জন্য তার পিঠে হাত দেয়, তখন আবেশে তুতুলের চোখ বুজে আসে।
তুতুল চা বানিয়ে দেয় বটে কিন্তু মুন্নিকে ডেকে চায়ের ট্রে তার হাতে পাঠায়। মাত্র আট বছর বয়েস হলেও মুন্নি এসব কাজ বেশ ভালো পারে। দাদার বন্ধুরা আদর করে মুন্নির গাল। টিপে দেয়।
পিকলু তাকে পদানশীন বলে ঠাট্টা করলেও তুতুল ও ঘরে যেতে পারে না। পিকলু যদি বন্ধুদের সামনে কোনো কারণে তার সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করে তাও সে সইতে পারবে না।
পিকলুর সব ভালো, শুধু কেন সে রবীন্দ্রনাথের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? তুতুলের খুব ইচ্ছে করে ওকে আবার ফিরিয়ে আনতে। তুতুলের স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষার আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি, সুপ্রীতি যখন তখন বলেন, তুই পিকলুর কাছ থেকে পড়া বুঝে নে না। কিন্তু তুতুল তাতে গা করে না। তার পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কারুর কাছ থেকে সাহায্য নেবার দরকার নেই। কিন্তু পিকলু যদি আগেকার মতন তার পাশে বসে এক বই থেকে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তো, তাতেই তার মন এমন ভালো হয়ে যেত যে পরীক্ষার পড়ার উৎসাহ আসতো অনেক বেশি। কিন্তু পিকলু আজকাল রবীন্দ্রনাথের নাম শুনলেই বলে, ডেটেড! ডেটেড! বৈষ্ণব পদাবলী, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথের কবিতা ওসব বুড়োবুড়িদের জন্য! আমাদের দেশের মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি হয়, তুই-ও ষোলো প্লাসেই…!
একদিন পিকলু স্নান করছে বাথরুমে, তুতুল টিনের দরজায় দুম দুম করে ঘা মারতে লাগলো।
সুপ্রীতি তা দেখে বিস্মিত হয়ে বললেন, ও কী করছিস? তোর এত তাড়া কিসের? দাঁড়া, ছেলেটাকে স্নান শেষ করতে দে!
তুতুল অভিমানের ঝাঁঝ মেশানো গলায় বললো, ও কেন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে?
সুপ্রীতি ভেতরের ব্যাপারটা জানেন না। পিকলুর গানের গলা ভালো। বাথরুমে সে প্রায়ই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গান গায়। ইদানীং সে আই পি টি এর গানই বেশি করে। আজ সে গাইছে, “হে নিরুপমা, গানে যদি লাগে বিহ্বল তান, করিয়ো ক্ষমা…।”
সুপ্রীতি ভাবলেন যেন গাওয়ার সঙ্গে দেরি করার সম্পর্ক আছে। তিনি তবু পিকলুর পক্ষ নিয়ে মেয়েকে বললেন, ছেলেটা তো এইমাত্র ঢুকলো, তুই যা, একটু পড়াশুনো করে আয়।
তুতুল স্নান করতে আসেনি, পড়ার টেবিল থেকেই উঠে এসেছে, হাতে তার বই। সে। খানিকটা পাগলাটে গলায় বললো, না, ও রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারবে না! কেন গাইবে!
আবার সে ধাক্কা মারতে লাগলো দরজায়।
খালি গায়ে, শুধু একটা তোয়ালে-পরা অবস্থায় পিকলু দরজা খুলে ভুরু তুলে বললো, কী হয়েছে? তার মুখভর্তি সাবানের ফেনা, সবে দাড়ি কামাতে শুরু করেছিল।
তুতুল বললো, তুমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছো, তোমার লজ্জা করে না! পিকলু হাসতে হাসতে সুপ্রীতিকে বললো, ও পিসিমণি, দ্যাখো, রবীন্দ্রসঙ্গীত এখন তোমার মেয়ের একার সম্পত্তি! আমরা গাইলেও দোষ!
তুতুল বিস্ফারিতভাবে কয়েক পলক চেয়ে রইলো পিকলুর দিকে, তারপর দৌড়ে চলে গেল নিজের ঘরে।
ছোট ফ্ল্যাট, পিকলুবাবলুরা অধিকাংশ সময়েই খালি গায়ে থাকে, তুতুল কতবার ওদের সেই অবস্থায় দেখেছে। কিন্তু আজ, বাথরুমের বন্ধ দরজা খুলে পিকলু যে শুধু তোয়ালে পরে বেরিয়ে এলো, তা দেখে অদ্ভুত এক শিহরন হলো তুতুলের শরীরে। বন্ধ বাথরুম মানেই গোপনীয়তা, হঠাৎ সেই দরজা খুলে যেন দেখা গেল একজন অচেনা পুরুষ মানুষকে। এ যেন তার ভাই নয়। অন্য কেউ! তুতুলের সারা শরীর এখনো কাঁপছে! কী যে হচ্ছে তার তা অন্য কারুকে বলে বোঝানো যাবে না।
স্নান সেরে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে পিকলু তুতুলের পড়ার টেবিলের কাছে এসে বললো, এই, তুই যাবি তো যা! আমার হয়ে গেছে!
রাজ্যের লজ্জা এসে এখন জুড়ে বসেছে তুতুলের ওপর, সে পিলুর দিকে তাকাতে পারছে না, সে মুখ নিচু করে রইলো।
–কী রে যাবি না! অত তাড়া দিচ্ছিলি কেন?
–তাড়া তো দিইনি! তুমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছিলে, তাই অবাক হয়েছিলুম!
–কেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া কী অপরাধ?
–কেন, তুমিই তো বলো, রবীন্দ্রনাথের লেখা শুধু বুড়ো বুড়ি আর আমাদের মতন বোকাদের জন্য। নিরুপমা নামে কোনো মেয়ের সঙ্গে বুঝি চেনা হয়েছে?
পিকলু অট্টহাস্য করে উঠলো।
দু’দিন বাদে পিকলু কলেজ থেকে ফিরে এসে তুতুলকে বললো, এই, মহাজাতি সদনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটা কনফারেন্স আছে, তুই শুনতে যাবি? আমি দুটো কার্ড পেয়েছি। তুই দিনের পর দিন বাড়িতে বসে থাকিস, এটা মোটেও ভালো নয়। এতে পড়াশুনো মাথায় ঢোকে না।
তুতুলের পরীক্ষার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এই সময়ে কি গান শুনে একটা সন্ধে নষ্ট করা চলে? এ জন্য সুপ্রীতি-মমতা তো বটেই, প্রতাপের কাছ থেকেও অনুমতি নেবার প্রয়োজন আছে।
কেউ-ই আপত্তি করলেন না। পিকলু এ বাড়ির হীরের টুকরো ছেলে। যেমন তার পড়াশুনোয় মেধা, তেমনই তার সবদিকে সুবিবেচনা। সবাই জানে, আর কয়েক বছরের মধ্যে পিকলু এম এ পাশ করার পরই এ সংসারের ভাগ্য ফিরে যাবে। খুব বড় কোনো চাকরি তার জন্য বাঁধা। পরীক্ষার আগে গানের জলসা শুনতে যাওয়া উচিত কিনা তা পিকলুই তো ভালো বুঝবে।
সেদিন সন্ধেবেলা ওরা যখন বেরুতে যাবে তখন একটা কাণ্ড ঘটলো। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে ফেললো বাবলু। প্রতাপ তখনও ফেরেননি। পিকলুকেই যেতে হলো ছোট ভাইকে নিয়ে ডাক্তারখানায়, তিনটে স্টিচ হলো বাবলুর মাথায়। এক ঘণ্টা কেটে গেল এই সব করতেই। এরপর আর জলসায় যাওয়ার কোনো মানে হয় না।
মমতা তবু বললেন, মেয়েটা সেজে-গুঁজে মন খারাপ করে বসে আছে, তুই ওকে নিয়ে যা পিকলু! এখনো গেলে অদ্ধেকটা শুনতে পারবি!
এত দেরির জন্য হেমন্ত আর কণিকার গান শোনা হলো না। সুচিত্রা মিত্র গাইছেন তখন। একটা গান শেষ করে আর একটি গান সদ্য ধরেছেন তিনি, সেই সময় ঢুকলো পিকলু আর তুতুল। সুচিত্রা মিত্রের গান শোনা মাত্র সর্বাঙ্গে রোমাঞ্চ হলো তুতুলের। এই সেই গান, “কি সুর বাজে, আমার প্রাণে, আমিই জানি, মনই জানে…।” এই গান কয়েক লাইন শোনার পর রেডিও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই গান পুরোটা না শুনলে তার জীবনটাই অসমাপ্ত থাকতো!
তুতুলের মনে হলো, পিকলু কি দৈবজ্ঞ? এই বিশেষ গানটা শোনার জন্যই কি সে তুতুলকে নিয়ে এসেছে? কিংবা, সুচিত্রা মিত্র কি ইচ্ছে করেই এই মুহূর্তে ঐ গানটি ধরলেন? তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে একটি ষোলো বছরের মেয়ে ঐ গানটি শোনার জন্য কতটা কাতর হয়ে ছিল?
পিকলু কিন্তু তুতুলের পাশে বসলো না। এই জলসার উদ্যোক্তারা তার পরিচিত। সাধারণত উদ্যোক্তারা নিজেরা কিছু দেখে না, শোনে না, তারা বাইরে দাঁড়িয়ে চা-সিগারেট খায়, গল্প করে। পিকলু চলে গেল সেদিকে। তুতুল সতৃষ্ণ চোখে বার বার খুঁজতে লাগলো পিকলুকে। পিকলু তার পাশে থাকলে সে অনেক বেশি উপভোগ করতে পারতো।
শেষের দিকে নাচের অনুষ্ঠান আছে, তার আগে পাঁচ মিনিট বিরতি। সেই সময়ে পিকলু এসে বললো, তুতুল, এবারে বাড়ি চল। নাচ দেখে কী করবি! শেষ হতে হতে অনেক দেরি। হয়ে যাবে।
তুতুল বিনা প্রতিবাদে উঠে এলো। মহাজাতি সদন থেকে বেরিয়ে যখন তারা রাস্তা পেরিয়ে বাস স্টপের দিকে যাচ্ছে তখন তুতুল পিলুর হাত ধরে কাতরভাবে বললো, আমি..আমার এখন বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না।
গভীরভাবে অবাক হয়ে মুখ ফিরিয়ে পিকলু বললো, বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না মানে?
কোথায় যাবি?
দু’দিকে মাথা নেড়ে তুতুল বললো, জানি না! কতদিন বাদে বেরিয়েছি। তুমি আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চলো।
পিকলুর বিস্ময় আরও বেড়ে গেল। তুতুলের এরকম গলার আওয়াজ সে যেন আগে শোনেনি। এই মুহূর্তে তার খেয়াল হলো তুতুল যেন হঠাৎ কিশোরীর বদলে যুবতী হয়ে উঠেছে। এমন গাঢ় স্বরে তুতুল আগে কথা বলতো না তার সঙ্গে।
সে একটু দিশাহারা হয়ে বললো, বাড়ি যাবো না, তা হলে কোথায় যাবো এখন?