বন্যা হবার দরকার হয় না, এমনিই প্রতি বছর এদিককার মাঠ-ঘাট জলে-জলাকার হয়ে যায়। বাড়ির উঠোনেও এক কোমর জল। রান্না ঘরে যেতে হয় জল ভেঙে। এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যেতে হয় নৌকোয়, ধান খেতের ওপর দিয়েও নৌকো চলে।
মামুন একাই একটা ডিঙ্গি নৌকো নিয়ে চলেছেন পাশের গ্রামে। ছেলেবেলায় বেশ ভালোই পারতেন, তারপর অনেকদিন তাঁর নৌকো বাওয়ার অভ্যেস নেই। জোরে বৈঠা টানলেই নৌকো টলমল করে। ডুবে যাওয়ার ভয় নেই অবশ্য, অনেকদিন পর নৌকো চালাতে মামুন বেশ কৌতুক বোধ করছেন।
আদিগন্ত জল-দৃশ্য দেখে মনে একটা স্নিগ্ধ প্রশান্তি আসে। জল মামুনের প্রিয়। ধানগাছগুলো জলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লম্বা হয়ে উঠেছে, এই সব অঞ্চলে পাট গাছও খুব লম্বা হয়। জলের ওপর জেগে থাকা ধান গাছের ডগায় লাফালাফি করছে মসৃণ সবুজ রঙের কয়া (ঘাসফড়িং), ছোটবেলায় মামুনের এই কয়া ধরার খুব শখ ছিল। এক একটা কয়া বেশ বড় হয়। প্রায় এক আঙুলের সমান, অদ্ভুত বিস্ময়ভরা তাদের চোখ। এই কয়াগুলো শালিকের প্রিয় খাদ্য, তাই কিছু শালিকও ওড়াউড়ি করছে।
ধান খেতের জল বেশ স্বচ্ছ, নিচের দিকে তাকালে মাঝে মাঝেই পুঁটি মাছের রূপোলি ঝিলিক চোখে পড়ে। একবার চোখে পড়লো এক ঝাঁক চাপিলা মাছ। এই সময় পুকুরগুলো ভেসে যায় বলে ধান ক্ষেতের জলেও কই মাছ, শোল মাছ দেখতে পাওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। মেঘের ডাক শুনলে কই মাছ ডাঙায় উঠে আসে, কানকো দিয়ে হাঁটে। অন্য সব মাছেদের মধ্যে শুধু কই মাছেরই যে কেন এই স্বভাব তা কে জানে। পরশু দিনও তো মামুনের মেয়েরা বৃষ্টির মধ্যে তিনটে কই মাছ কুড়িয়ে এনেছে পুকুর ধারের বাগান থেকে।
উল্টো দিক থেকে একটা নৌকো আসছে, তাতে দু’জন যুবক বসে আছে। মামুন ঠিক চিনতে পারলেন না, চশমা না পরলে তিনি দূরের জিনিস ভালো দেখতে পান না। সেই নৌকো থেকে একজন জিজ্ঞেস করলো, মামুনভাই চল্লেন কোথায়?
মামুন উত্তর দিলেন, যাবো মহেশপুর। সিদ্দিকী সাহেবের জানাজায়।
কাছে আসতে মামুন চিনতে পারলেন। ছেলে দুটির নাম বাদল আর ফিরোজ। এই গ্রামেরই ছেলে, দুরন্তপনার জন্য ওদের নাম আছে। জাল নিয়ে মাছ ধরতে বেরিয়েছে। মামুনকে খালুই তুলে দেখালো, কুচো মাছ পেয়েছে অনেক, দুই-তিন সের তো হবেই।
বাদল বললো, ফিরতে ফিরতে আপনের সন্ধ্যা হয়ে যাবে যে। আকাশের অবস্থা দ্যাখছেন? পানি আরও বাড়বে।
মামুন আকাশের দিকে তাকালেন। ঈষাণ কোণ থেকে কালো মেঘ জমাট বেঁধে এগিয়ে আসছে। মামুন ছাতা আনেননি, জানাজায় উপস্থিত থাকবেন বলে পরিষ্কার পা-জামা ও ভালো পাঞ্জাবি পরে এসেছেন। তবু তাঁর কোনো আশঙ্কা হলো না। আসুক না বৃষ্টি, তাতে কী হবে।
ফিরোজ বললো, মামুনভাই, মাছ নেবেন? আমাগো তো এতখানি লাগবো না। ন্যান, নৌকাটা লাগান একটু।
মামুন বললো, আরে না, না, আমি এখন মাছ-মোছ নিয়া কী করবো? তোমরা ধরছো, তোমরা খাও?
ফিরোজ তবু জোর করেই মামুনের নৌকোর খোলের মধ্যে কিছু মাছ দিয়ে দিল। ছোট ছোট ইচা মাছগুলো (চিংড়ি) এখনো জ্যান্ত, ছটছট করে লাফাচ্ছে।
বাদলের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট, মামুনকে দেখেও ফেলে দেয়নি। মামুন অবশ্য তাতে কিছু মনে করেন না। আঠেরো বছর বয়েস হবার পর ছেলেরা বয়স্কদের সঙ্গে সমান সমান ব্যবহার করবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবু তাঁর একটু চোখে লাগে। কিছুদিন আগেও এটা ছিল না। তাদের ছোটবেলায় তো গ্রামের গুরুজনদের সামনে এরকম ব্যবহার কল্পনাই করা যেত না।
বাদল জিজ্ঞেস করলো, মামুনভাই, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেরমেন সাহেবের সাথে আপনার তো খুব দোস্তি, যদি একটা কাজের কথা কইয়া দ্যান আমাগো জইন্য।
মামুন অবাক ভাবে ভুরু কোঁচকালেন। এখানকার ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান কে? তিনি মাত্র কয়েক মাস হলো এসেছেন ফরিদপুরে, তিনি ওসব খোঁজও রাখেন না।
মামুন সে প্রশ্ন করতেই বাদল জানালো যে কয়েকদিন আগেই মাদারিপুরে লঞ্চ ঘাটার। সামনে তারা নুরুল হুদা সাহেবের সঙ্গে মামুনভাইকে গল্প করতে দেখেছে। উনিই তো ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান।
নুরুল হুদার সঙ্গে মামুনের ছাত্র বয়েসে কিছুটা আলাপ ছিল, দীর্ঘদিন পরে আবার দেখা। নুরুল হুদাই মামুনকে ডেকে কথা বলেছিলেন। তিনি যে এখন উচ্চ পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি তা মামুন বোঝেননি। অবশ্য নুরুল হুদার কথাবার্তার মধ্যে একটা ভারিক্কী চাল তিনি লক্ষ্য করেছিলেন। মামুন বাদলকে জিজ্ঞেস করলেন, নুরুল হুদা সাহেবকে কী বলতে হবে?
বাদল বললো, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডে লোক নেবে। যদি আমাদের চাকরির জন্য একটু বলে দ্যান। আমরা দু’জনেই তো মেট্রিক পাস করে তিন বচ্ছর বসে আছি, কোনো কাজ পাই না।
ফিরোজ বললো, মামুনভাই, শহরের ছেলেরা সব চাকরি নিয়ে নেয়, গ্রামের ছেলেদের কেউ চাকরি দেয় না। আমাদের কথা কি কেউ ভাববে না? মামুনের হঠাৎ একটা নতুন উপলব্ধি হলো। এই দিকটা তিনি আগে চিন্তাই করেননি। ওদের দু’চারটি মামুলি স্তোক কথা শুনিয়ে তিনি আবার জলে বৈঠা ফেললেন।
এই জন্যই সেধে সেধে মাছ দেওয়া, চাকরির উমেদারি? ম্যাট্রিক পাস করে তিন বছর বসে আছে, গ্রামের মধ্যে দুরন্তপনা ও বৌ-ঝিদের জ্বালানো একঘেয়ে লাগছে, ওরা এখন কাজ চায়।
ফজলুল হকের নির্দেশে মামুন গ্রামে গ্রামে ইস্কুল খুলতে গিয়েছিলেন। এমনিতেও ইস্কুল খোলা হয়েছে অনেক। হিন্দুরা চলে যাবার পর মুসলমান ছাত্ৰই বেশি। সাধারণ মুসলমান পরিবারেও শিক্ষার বেশ চল হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে সেই শিক্ষার পরিণতি। গ্রামে গ্রামেও তৈরি হচ্ছে বেকারের দল।
এই যে ফিরোজ আর বাদল, ওদের খাওয়া-পরার যে তেমন কষ্ট আছে, তা বোধ হয় নয়। পরিবারের কিছু জমি জমা আছে, তা থেকে সম্বৎসরের খোরাকি ধানটা আসে, বাড়িতে হাঁস-মুর্গী পালে, দরকার হলে নিজেরাই খাল বিল থেকে মাছ ধরে আনে, তাতে চলে যায়। ওরা চাকরি চাইছে সমাজে একটা প্রতিষ্ঠার জন্য। চাকরিই যদি না পাবে তা হলে লেখাপড়া শিখলো কেন? এরকম ক্ষোভ ওদের মনে জাগতেই পারে। এ দেশে লেখাপড়া শেখে তো সবাই চাকরির জন্য। কেউ কি কখনো বলেছে যে, যে-মানুষ মাঠে ধান চাষ করবে, যে-মানুষ নদীতে মাছ ধরবে, যে-মানুষ খেজুরের রস জাল দিয়ে পাটালি গুড় বানাবে, তারও যে লেখা পড়া শেখার প্রয়োজন আছে, নিজের গণ্ডিটা ছাড়িয়ে গোটা দেশকে জানার প্রয়োজন যে তারও আছে, সে কথা তো কেউ বলে না! বরং চাষীর ছেলে, তাঁতীর ছেলে লেখা পড়া শিখলে আর বাপ-পিতেমো’র পেশা নিতে চাইবে না, তারা শহরে এসে বাঁধা মাইনের চাকরির জন্য গুতোগুতি করবে।
চাকরি পাবেই বা তারা কী করে? সাহেবরা চলে গেছে, হিন্দুরাও অনেকে চলে গেছে, কিন্তু সেই সব চাকরি পেলো কারা? বড় বড় কাজ সবই তো নিয়ে নিচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। কিছুদিন আগে মামুন একটি পত্রিকায় পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনামূলক আলোচনা পড়েছিলেন। সে এক হাস্যকর ব্যাপার। হিসেবটা উনিশ শো একান্ন সালের। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েটে ৪২ জনই পশ্চিম পাকিস্তানী, পূর্ব বাংলার একজনও নেই, জয়েন্ট সেক্রেটারি ওদের ২২ জন, পূর্ব বাংলার মাত্র ৮ জন, সেকশান অফিসার ওদের ৩২৫, এখানকার মাত্র ৫০ জন। নির্লজ্জতার চূড়ান্ত! সেনাবাহিনীতে বাঙালী প্রায় নেই-ই বলতে গেলে।
আজকের এই মেঘ-মেদুর অপরাহ্নে মামুনের আর ঐ সব কথা ভাবতে ইচ্ছে করছে না।
জলের ওপর নৌকো চলার সর সর শব্দ হচ্ছে। শব্দটি বড় মধুর লাগে। এখানে ওখানে শাপলা ফুল ফুটেছে। হলদেকালো ডোরা কাটা একটা বড় জল ঢোঁড়া সাপ হঠাৎ ডান দিকে ভেসে উঠলো। মামুন ইচ্ছে করলে সেটার মাথায় বৈঠার ঘা বসাতে পারতেন, কিন্তু মামুন মারলেন না। বিষ নেই, মানুষের ক্ষতি করে না, মেরে কী হবে! লম্বা শীতঘুম দেওয়ার আগে ওরা এই সময়টায় পেট ভরে খেয়ে নেয়। মাছ, সাপ, শালুক, সব মিলিয়ে একটা জল-জগৎ। এখন দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না যে শীতকালে এই জায়গাটা শুকনো মাঠ হয়ে যাবে, এখানে ছেলেপুলেরা খেলা করে।
ফিনফিনে হাওয়া দিচ্ছে, বৃষ্টি নামার আর দেরি নেই। মেঘ ডাকছে, তবে বজ্র গর্জনে নয়, গুরু গুরু রবে, যেন মেঘেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করছে।
মহেশপুরের গাছপালা যেন কুয়াশার মধ্যে জেগে উঠলো। বড় বড় কয়েকটি তাল গাছ। দেখে গ্রামটি চেনা যায় দূর থেকে।
ঘাটে এসে ডিঙি বেঁধে মামুন ভালো করে পা ধুয়ে নিলেন। এখানে বর্ষাকালে জুতো পরার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। মহেশপুর জায়গাটা একটু উঁচু, এখানে বাড়ির মধ্যে পানি যায় না।
বাবুল সিদ্দিকীর মৃত্যুটা তেমন দুঃখজনক নয়, তার জীবনটাই ছিল অভিশপ্ত। গত কয়েক বছর বাবুল সিদ্দিকী খুবই কষ্ট পাচ্ছিল, তার দুটি পায়েই গ্যাংগ্রিন ধরে গিয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে ত্বরান্বিত মৃত্যুই সব দিক থেকে শান্তির ব্যাপার। বাবুল সিদ্দিকীর সঙ্গে মামুনের কোনো হৃদ্যতা ছিল না, তার পারলৌকিক কাজে মামুন যোগ দিতে এসেছেন দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার খাতিরে।
বাবুল সিদ্দিকী অল্প বয়েসে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ইস্কুলের বদলে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল মাদ্রাসায়, সেই পড়াশুনো তার সহ্য হয়নি। বিনা টিকিটে স্টিমারে চেপে সে পৌঁছোয় খুলনায়। তার শরীরে তাগৎ ছিল, নিঃসম্বল অবস্থাতেও সে ভিক্ষে করার পাত্র নয়। খুলনায় একটা মুদি দোকানে সে একটা চাকরি জুটিয়ে ছিল, ক্রমে সেখানেই সে বিয়েশাদী করে সংসার পাতে এবং বছর পাঁচেকের মধ্যে নিজেই সে দোকানটির মালিক হয়ে যায়। একবার হাঁটা পথে খুলনা থেকে বাগেরহাট যাওয়ার সময় সে সস্ত্রীক ডাকাতের পাল্লায় পড়ে। তার স্ত্রীর আর সন্ধানই পাওয়া যায়নি, বাবুলও ডাকাতদের হাতে এমন প্রহৃত হয় যে তার বাঁ চক্ষুটি নষ্ট হয়ে যায়। খুলনায় তার পরিচিতরা তার প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছিল বটে, সেই সঙ্গে তার নতুন নাম দিয়েছিল কানা বাবুল।
খুলনা থেকে বাবুল ভাগ্যান্বেষণে চলে গিয়েছিল কলকাতায়। সেখানে এন্টালি বাজারে সে একটি মুগীর দোকান খুলেছিল। কলকাতায় বাবুলের বেশ সমৃদ্ধি ঘটেছিল। বেলেঘাটায় সে একটি কাঠের বাড়ি বানায় এবং সেই সময়েই সে অনেককাল বাদে মাদারিপুরে দেশের বাড়িতে ফিরে অনেক খরচ পত্তর করে কলকাত্তাই আমীরী দেখিয়ে যায়। পাটিশানের পরেও বাবুল কলকাতা ছাড়েনি, তার দোকান থেকে তখন প্রতিদিন পঞ্চাশ-ষাট টাকা মুনাফা হয়। অন্য বাজারেও সে আর একটি দোকান খোলার কথা ভাবছে। এন্টালি-মৌলালি রাজাবাজরে তো। তার মতন অনেকেই রয়ে গেছে। কলকাতায় দ্বিতীয়বার শাদী করেছিল বাবুল।
কিন্তু পঞ্চাশের দাঙ্গায় সে সর্বস্বান্ত হলো। তার বেলেঘাটার বাড়ি ও এন্টালির দোকান দুই-ই গেল। বাড়িটাতে যখন আগুন জ্বলছে, তখন কিছু জিনিসপত্র বাঁচাতে গিয়ে বাবুল কাঠের সিঁড়ি ভেঙে পড়ে যায়। তার দুটি পা-ই সাংঘাতিক ভাবে দগ্ধ হয়।
ইসলামিয়া হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসার পর বাবুল সিদ্দিকী সপরিবারে কলকাতা ছেড়ে চলে আসে পূর্ব পাকিস্তানে। আসার পথে স্টিমারে বাবুলের তিনটি সন্তানের মধ্যে একটির মৃত্যু হয় কলেরায়। মাদারিপুরের যে বাড়ি ছেড়ে বাবুল একদিন পালিয়ে গিয়েছিলসেখানে বাধ্য হয়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় সে ফিরে এলো তিক্ততার প্রতিমূর্তি হয়ে। অনেক চিকিৎসাতেও তার পা দুটি সারে নি, পচন ধরে গেছে, ক্রাচে ভর দিয়ে কোনো মতে যাতায়াত করতো।
দুর্ভাগ্যের মতন বাবুলের চেহারাটাও ভয়াবহ হয়ে গিয়েছিল। একটা চোখ নেই, মুখে অযত্নবর্ধিত দাড়ি, বুকের খাঁচা প্রকট হয়ে উঠেছে, পা দুটিতে দুর্গন্ধ ক্ষত। সবাইকে সে বলতো, কলকাতার মানুষ তার এই অবস্থা করেছে। হিন্দুরা সবাই দুশমন। চোখের সামনে সে যেন সর্বক্ষণ দেখতে পায় হিন্দু গুণ্ডারা তার দোকান লুট করছে। তার বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে, তার স্ত্রী-সন্তানদের খুন করতে আসছে।
বাবুল সিদ্দিকী প্রতিশোধ হিসেবে চাইতো পূর্ব বাংলা থেকে সমস্ত হিন্দুদের বিতাড়িত করতে। সে হিন্দু বলতো না, বলতো মালাউন। সে চিৎকার করে বলতো, মালাউনগো খেদাও। সব কটার ঘেটি ধরে পানিতে চুবাও!
মাদারিপুর অঞ্চলে এখনো বেশ কিছু হিন্দু রয়ে গেছে! বাবুল সিদ্দিকীর এরকম অনলবর্ষী ঘৃণার ফল সাঙ্ঘাতিক হতে পারে। মামুন প্রতিবাদ করতে গিয়েও সুবিধে করতে পারেননি। বাবুলের ভাষা অতি তীব্র, তার সমর্থকও জুটে গিয়েছিল বেশ। হিন্দুস্থানের হিন্দুদের দুশমনির জলজ্যান্ত উদাহরণ রয়েছে তাদের চোখের সামনে, সেই জন্য অনেকেরই আবেগ তপ্ত হয়ে ওঠে। সেই আবেগের সামনে মামুনের শান্ত কণ্ঠের যুক্তি ফুৎকারে উড়ে যায়।
কলকাতার এন্টালি বাজারে বাবুল সিদ্দিকীর মুর্গীর দোকানে মামুন একবারই গিয়েছিলেন। তখন বাবুল একজন পরিতৃপ্ত সংসারী মানুষ, বেশ তেল-চুকচুকে চেহারা, বেলেঘাটার বাড়িটা তখন সবে তৈরি হচ্ছে। মামুনকে এক জোড়া বেশ ডাগর চেহারার মুর্গী বেছে দিয়ে কিছুতেই দাম নেয়নি বাবুল। সেই মানুষটার অমন পরিণতি, তাকে কোনো সান্ত্বনা কি দেওয়া যায়?
দাঙ্গায় অনেক মুসলমান পরিবার ধ্বংস হয়েছে, সর্বস্বান্ত হয়েছে। পাটিশানের পর ওপার থেকে চলে এসেছে দলে দলে মুসলমান, কেউ কেউ জমি বিক্রি করতে পেরেছে, কেউ বিনিময় করেছে হিন্দুদের সঙ্গে, আবার অনেকে সে রকম সুযোগই পায়নি, সব কিছু ছেড়ে তড়িঘড়ি চলে। আসতে বাধ্য হয়েছে। যার যায় দুঃখটা তারই সবচেয়ে বেশি। এই সহসা বিপর্যয়ের জন্য তারা তো হিন্দুদের দায়ী করবেই। কেউ তাদের আসল কারণটা বোঝাতে সাহস করে না।
মামুন নিজে কলকাতা ছেড়ে চলে আসেন ছেচল্লিশ সালের গোড়ার দিকে। তাই ডাইরেক্ট অ্যাকশানের ফলাফল হিসেবে কলকাতার পথে পথে রক্ত গঙ্গা আর মৃত মানুষের স্থূপ তাকে স্বচক্ষে দেখতে হয়নি। কিন্তু পঞ্চাশের দাঙ্গার সময় তিনি ছিলেন বরিশালের গ্রামাঞ্চলে। দাঙ্গার ভয়ংকর রূপ সেবারে তিনি খানিকটা দেখেছিলেন। গ্রাম থেকে তিনি নিজেও ভয় পেয়ে চলে আসেন শহরে। বরিশালের সেই দাঙ্গায় হিন্দুরা প্রায় নিশ্চিহু হবার উপক্রম হয়েছিল। একটা স্টিমারের দৃশ্য মামুনের চোখের সামনে এখনো জ্বলজ্বল করে। এক স্টিমার ভর্তি হিন্দু নারী পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইণ্ডিয়ায়। তারা সকলে হাত-পা ছুঁড়ে আকুলি-বিকুলি হয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। তাদের প্রায় প্রত্যেকেই মা কিংবা বাবা, ভাই বা বোনকে কিংবা সবাইকেই হারিয়েছে দাঙ্গায়, তারা চিরকালের মতন ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে তাদের ভিটে মাটি, তাদের পিতৃপুরুষের দেশ। কার দোষে? তাদের নিজেদের কোনো দোষ ছিল?
বুক-ভাঙা কান্না-ভর্তি একটা জাহাজ ছেড়ে চলে গেল বন্দর।
আর একবার মামুন বরিশাল থেকে স্টিমারে ঢাকা আসছিলেন। ডেকে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন পাশের লোকদের কথাবার্তা। দু’জন মোল্লা বেশ উচ্চকণ্ঠে মালাউনদের মুণ্ডপাত করছিল। এক সময় নদীর মাঝখানে দ্বীপের মতন একটা গ্রামের দিকে আঙুল দেখিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেছিল, ঐ যে ঐ গ্রামটা, ঐ গ্রামে আর মাত্র তিন ঘর হিন্দু আছে। তারা চলে গেলেই আপদের শান্তি!
স্টিমার থেকেও দেখা যাচ্ছিল সেই গ্রামের মাঝখানে একটি মন্দিরের উঁচু চূড়া।
সেদিন মামুন বিষণ্ণ দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে ভেবেছিলেন, এই জন্যই কি পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল? বাংলার মানচিত্রের মাঝখানে সীমা রেখা টেনে দিলেও বাঙালী জাতটাকে দু’ভাগ করে দেবার উদ্দেশ্য ছিল কী? এবং এই দু’ভাগ হয়ে গেল পরস্পরের শত্রু!
হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার ছিল, অনেক রকম সামাজিক বৈষম্য ছিল ঠিকই। আবার অনেক রকম মিলও তো ছিল। দীর্ঘকাল হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি থেকেছে, কোনো বিবাদ হয়নি, এমন দৃষ্টান্তও তো অনেক। মুসলমানের ছেলে হিন্দুর বাড়িতে সারাদিন কাটাচ্ছে। হিন্দুর ছেলে মুসলমান রমণীকে মা বলে ডাকছে, এরকম তো মামুন নিজেই দেখেছেন!
পাকিস্তানের জন্ম যেন একটা স্বপ্ন হঠাৎ বাস্তব হয়ে ওঠার মতন অবিশ্বাস্য। উনিশ শো চল্লিশ সালের লাহোর ঘোষণার সময় কেউ কি সত্যি সত্যি কল্পনাও করেছিল যে মাত্র সাত বছরের মধ্যে ভারতকে কেটে মুসলমানদের জন্য একটা আলাদা দেশ পাওয়া যাবে? সেই সাত বছরের মধ্যে অসম্ভব দ্রুততায় ঘটে গেল সব আকস্মিক ঘটনা। সেই জন্যই পাকিস্তানের সঠিক রূপটি কী হবে তা চিন্তা করার সময়ও পাওয়া যায়নি। যে পাকিস্তান পাওয়া গেল তা কি সমস্ত মুসলমানদের পছন্দ হয়েছে? এমনকি জিন্না সাহেবরও পছন্দ হয়নি, তিনি প্রবল আক্ষেপ ও বিরক্তির সঙ্গে বলেছিলন, এই পোকায় কাটা পাকিস্তান নিয়ে আমি কী করবো? জিন্না কি পাকিস্তানকে পুরোপুরি ঐশ্লামিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন? আবার ইণ্ডিয়াতে রয়ে গেল যে কোটি কোটি মুসলমান, যারা পকিস্তান দাবির জন্য কণ্ঠ মিলিয়েছিল, তারা মনে করেনি যে তাদের মুসলমান ভাইরাই তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে! তাদের তো সেই। হিন্দুদের তাঁবেই থাকতে হলো!
পাকিস্তানের জন্য বাঙালী মুসলমানদের দাবিই ছিল সবচেয়ে জোরালো। পাকিস্তানের সমর্থনে বাংলার মুসলমানরা দিয়েছিল শতকরা ছিয়ানব্বইটি ভোট, পাঞ্জাবীরা দিয়েছিল মাত্র উনপঞ্চাশটি। কিন্তু সেটা কোন্ পাকিস্তান? বাংলা বিভাগের মতন প্রস্তাব মামুনের মতন বুদ্ধিজীবী পাকিস্তান সমর্থকরা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি আগে। ছেচল্লিশ সালে যখন বাংলা দেশকে দ্বিখণ্ড করার কথা প্রথম শোনা গেল তখন মামুনের মতন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। কলকাতার মতন সাহিত্য-সংস্কৃতির পীঠস্থানের ওপর বাঙালী মুসলমানদের অধিকার থাকবে না? বর্ধমানের শষ্য ভাণ্ডার,বীরভূমে রবীন্দ্রনাথের শান্তি নিকেতন, চব্বিশ পরগনার ফুরফুরা শরীফ, মুর্শিদাবাদের নবাবী ঐতিহ্য, এই সব কিছু থেকে বঞ্চিত হতে হবে? অখণ্ড বাংলা দেশকে বজায় রাখার জন্য তাঁরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেননি?
যাই হোক, তাড়াহুড়ো করে তো পাকিস্তানের পত্তন হয়ে গেল। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, এই পাঁচটি অঞ্চল নিয়ে গড়া হলো যে পাকিস্তান, তাতে বাঙালীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, বাংলা ভাষাই গরিষ্ঠ সংখ্যকের ভাষা। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী পাকিস্তানের রাজধানী হওয়া উচিত ছিল ঢাকা শহর। এবং বাংলা ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়ার সর্বোচ্চ দাবিদার। কিংবা পাঁচটি ভাষাই রাষ্ট্রভাষা হতে পারে। কিন্তু বিনা বিতর্কে রাজধানী হলো করাচি, পাকিস্তানের বড় কর্তারা সবাই প্রায় উর্দুভাষী এবং কোনোরকম যুক্তি ছাড়াই তাঁরা ধরে নিলেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। আট চলশ সালে ঢাকার এক সভায় জিন্না সাহেব সেই কথা স্বাভাবিক দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে গিয়ে যখন না, না, ধ্বনি শুনলেন, তখন তিনি নিশ্চিত বিস্মিত হয়েছিলেন।
জিন্না সাহেব আর যাই হোক সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। ওটা তাঁর রুচিতে বাধে। সোহরাওয়ার্দি ডাইরেক্ট অ্যাকশনের নামে কলকাতায় বীভৎস হত্যাকাণ্ডের সূচনা করেছিলেন বলে ঐ লোকটিকে জিন্না পছন্দ করেননি। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মদিনে জিন্না বলেছিলেন, আজ থেকে রাজনীতিতে মুসলমান আর মুসলমান নয়, হিন্দু আর হিন্দু নয়। সবাই মিলে এক মহান জাতি। পাকিস্তানের দুর্ভাগ্য, জিন্না বেশিদিন বাঁচলেন না।
উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং ভারত বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করলেন উজিরে আজম লিয়াকত আলী। ক্ষমতায় টিকে থাকতে গেলে দেশবাসীর সামনে সব সময় একটা জিগির তুলে রাখতে হয়, লিয়াকত আলী সেই জিগির তুললেন, ইসলাম বিপন্ন, ঐস্লামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে চাই সব মুসলমানের ঐক্য।
বিনয়েন্দ্রর মা মামুনকে যে কথাটি বলে অপমান করেছিলেন, অনেকদিন পর মামুন সেই কথারই প্রতিধ্বনি শুনলেন পশ্চিম পাকিস্তানী কর্তাদের মুখে। বাংলা তো হিন্দুদের ভাষা। তুমি যদি খাঁটি বাঙালী হতে চাও তা হলে তুমি আর খাঁটি মুসলমান থাকবে না। শত শত মামুন স্বজাতির নেতাদের মুখে এই রকম কথা শুনে আবার অপমানে কুঁকড়ে গেলেন।
অনেকেই অবশ্য প্রথম প্রথম ইসলাম বিপন্ন, ঐস্লামিক রাষ্ট্র গঠনের জিগির বেশ পছন্দ করেছিল। বাঙালীত্ব ছেড়ে শুধু মুসলমান হতে তাদের আপত্তি ছিল না, উর্দুকে গ্রহণ করতেও আগ্রহী ছিল। কিন্তু ভেতো বাঙালী উর্দু বাৎচিৎ শিখলেও তো এক জীবনে উর্দু কালচারে রপ্ত হতে পারে না। নিজেদের সংস্কৃতি ছেড়ে এক জগাখিচুড়ি সংস্কৃতি নিয়ে তারা পশ্চিম পাকিস্তানীদের চোখে উপহাসের পাত্র হলো।
বাহান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রকাশ্য রাজপথে বাংলা ভাষার দাবি মিছিলে যেদিন ছাত্র ও জনসাধারণের ওপর গুলি চলে, সেদিন মামুনের শেষ মোহটুকু ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি বুঝেছিলেন, শুধু ধর্মবন্ধনই এ যুগে একটি জাতির একাত্ম হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। মুসলমানও মুসলমানকে মারে। মুসলমানও মুসলমানকে শোষণ করে। হিন্দু আধিপত্যের। আওতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পাকিস্তানের জন্ম, কিন্তু এখানেও দ্রুত তৈরি হয়েছে শোষক শ্রেণী, এখানেও রয়েছে অত্যাচারী ও অত্যাচারিত। আসলে শোষক ও অত্যাচারীদের কোনো জাত বা ধর্ম নেই, ওরা সব দেশেই এক।
বাঙালী মুসলমানদের ওপর গুলি চালিয়েছে পূর্ব বাংলার পুতুল সরকার। ক্ষমতা সবই পশ্চিমীদের দখলে। গুলির আঘাতের চেয়েও মর্মান্তিক ওদের শোষণ। পূর্ব বাংলায় যদি ওরা এক টাকা খরচ করে তা হলে পশ্চিম পাকিস্তানে খরচ করে দশ টাকা। এখানে একজন চাকরি পায়, ওখানে পায় দশ জন। রপ্তানী হয় পূর্ববাংলা থেকে আমদানী হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
প্রতাপ ঠাট্টা করে বলেছিলেন, হাত মে বিড়ি মু’মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান, এই শ্লোগান তো দিচ্ছে অবাঙালী বিড়িওয়ালারা। মামুন, তোরাও এদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছিস? মামুন তখন বলেছিলেন, পাকিস্তান হওয়ার সত্যিই দরকার আছে রে। গরিব মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্যই সেটা দরকার। দেখিস, পাকিস্তান হয়ে যদি যায়, তাহলে হিন্দু মুসলমানের সম্পর্ক অনেক ভালো হয়ে যাবে।
বাহান্ন সালে মামুনের প্রথম মনে হয়েছিল, এই কি সেই পাকিস্তান? এই বৈষম্যভরা পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী? পূর্ব আর পশ্চিমে সৌহার্দ্য কী কোনোদিন সম্ভব?
একটা কান্নার রোল শুনে মামুন দ্রুত পা চালালেন।
বাবুল সিদ্দিকীর বাড়িতে গিয়ে শুনলেন শব যাত্রীরা একটু আগে রওনা হয়ে গেছে। আকাশে কালো মেঘ জমতে দেখে তারা আর দেরি করেনি। মহিলাদের কবর স্থানে যাওয়ার নিয়ম নেই, তাই তারা কান্নাকাটি করছে।
বাবুল সিদ্দিকীর মেয়ে দুটিকে চিনতে পারলেন মামুন। ওদের দেখে তাঁর নিজের মেয়েদের কথা মনে পড়লো। কে জানে কখন এক হ্যাঁচকা টানে তাঁকেও পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। তখন কী গতি হবে তাঁর মেয়ে দুটির? এই মেয়ে দু’টিরই বা কী হবে? ওদের দিকে তাকিয়ে মামুন বাৎসল্যের ব্যথা অনুভব করলেন।
দেরি করার উপায় নেই, মামুন ছুটলেন কবর স্থানের দিকে। একেবারে শেষের দিকে তিনি। ধরে ফেললেন শবযাত্রীদের। ঘাসে ভরা একটা পরিষ্কার জায়গায় উত্তর মুখ করে নামানো হলো লাশ। জেদ করে ক্রাচে ভর দিয়ে নৌকোয় উঠতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বাবুল সিদ্দিকীর। তার মুখোনি আরও বিকৃত হয়েছে কিনা তা দেখার উপায় নেই, পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাফনে মোড়া।
শবযাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিম মুখ করে মামুন জানাজা পড়তে শুরু করলেন। তাঁর চোখে জল এসে গেল। শত সহস্র বাবুল সিদ্দিকী আর বরিশালে দেখা সেই জাহাজ ভর্তি ক্রন্দনরত হিন্দু উদ্বাস্তুদের কথা কি চিন্তা করেছিল পাকিস্তানের প্রবক্তারা? ভারতের নেতারাই বা কী করেছিল? লক্ষ লক্ষ নিদোষ নিরীহ মানুষের অন্ন, ভূমি, ইজ্জৎ আর প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে খেলতে গড়ে উঠেছে ভারত আর পাকিস্তান, এই রকম অভিশপ্ত দুটি দেশের কি কোনো দিন মঙ্গল হতে পারে?।
নামাজের মন্ত্র পড়তে পড়তেও মামুন মনে মনে বাংলায় বলতে লাগলেন, বাবুল সিদ্দিকীর বিক্ষুব্ধ আত্মা যেন একদিন শান্তি পায়। কেয়ামতের পর ফেরেস্তারা যেন ওকে দয়া করেন।