মোহনবাগান লেনে চন্দ্রাদের বাড়ির উঠোনে একটি চাঁপা ফুলের গাছ আছে। বারোমাসই সে গাছে ফুল ফোটে। চন্দ্রা বলে, এই গাছটার নাম উর্বশী-চাঁপা। গেট দিয়ে ঢুকে সেই গাছটার তলা দিয়ে যাবার সময় কয়েক মুহূর্ত থেমে যান অসমঞ্জ রায়। তাঁর নাকে আসে একটা অন্যরকম জীবনের ঘ্রাণ।
এই বাড়ির খুব কাছেই, কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটের পুতুল-দারোয়ান সাজানো দত্তদের বাড়িতে একটি ইংরেজি অনার্সের ছাত্রকে সপ্তাহে দু’দিন পড়াতে আসেন তিনি। সাড়ে আটটার সময় সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বাড়ি ফিরতে পারেন না, চন্দ্রাদের বাড়ি তাঁকে চুম্বকের মতন টানে।
কোনো অনাত্মীয়া মহিলার বাড়িতে রাত সাড়ে আটটার সময় যাওয়ার কথা তিনি আগে ভাবতেই পারতেন না। তাঁর এতদিনকার পরিমণ্ডলে এটা ছিল অস্বাভাবিক। কিন্তু চন্দ্রাদের বাড়িটা আলাদা ধরনের, ওখানে যেতে কোনো বাধা নেই।
চন্দ্রার বাবা বহুদিন ছিলেন দেরাদুনে, ভারত সরকারের জরিপ বিভাগে উচ্চ চাকরি করতেন। চন্দ্রার জন্মও সেখানে। চাকরি থেকে রিটায়ার করার পর চন্দ্রার বাবা আনন্দমোহন চক্রবর্তী দেরাদুনেই একটি ব্যবসা শুরু করে পুরোপুরি প্রবাসী বাঙালী হয়ে গিয়েছিলেন। চন্দ্রা আর তার দিদি অলকা এই দু’জনেরই বিয়ে হয় এলাহাবাদে। চন্দ্রার দাদা আদিত্য থাকে অমৃতসরে, তার শ্বশুর বাড়ি এবং চাকুরিস্থল দুটোই সেখানে। তবু কোনো কারণে আনন্দমোহন হঠাৎ দেরাদুনের পাট তুলে দিয়ে কলকাতায় মোহনবাগান লেনের এই পুরোনো বাড়িটি কিনেছেন। অবশ্য কলকাতায় তিনি নিছক অবসর জীবন যাপন করতে আসেন নি, শ্যামবাজারের মোড়ে একটি বড় ওষুধের দোকান চালু করে দু বছরের মধ্যেই সেটিকে। স্বর্ণপ্রসবী করে তুলতে পেরেছেন।
চন্দ্রা কেন এলাহাবাদে তার স্বামীর কাছে থাকে না, তা অসমঞ্জ রায় এখনো জানেন না। চন্দ্রার জীবনের ঐ অংশটা রহস্যাবৃত, খোলাখুলি কোনোদিন জিজ্ঞেসও করতে পারেন নি। তিনি। একদিন তাঁদের সমিতির একটি ছেলে বলেছিল, এলাহাবাদে কোন বাড়িতে আপনার বিয়ে হয়েছে চন্দ্রাদি? এলাহাবাদে আমার মামার বাড়ি, আমি ছোট বেলা অনেক দিন থেকেছি। সেখানে। কোনো উত্তর না দিয়ে চন্দ্রা সেই ছেলেটির চোখের দিকে সরাসরি কয়েক মুহূর্ত। তাকিয়ে থেকে বলেছিল, এলাহাবাদের কথা থাক, এখানকার কাজের কথা বলো।
চন্দ্রাদের বাড়ির অনেকের কথাতেই এখনো প্রবাসী টান রেয়ে গেছে। বাক্যের শেষে একটা করে হচ্ছে বা হচ্ছেন যোগ করে দেয়। যেমন, উনি আমার পিসেমশাই হন, না বলে বলবে ইনি আমার পিসেমশাই হচ্ছেন। লেখাপড়াকে এরা বলে পড়ালেখা। চন্দ্রার বাবা যখন-তখন বলেন, কোনো কথা নেই! অর্থাৎ বুঝতে হবে তিনি বলতে চান, কোই বাৎ নেহি! চন্দ্রার মা ঝি-চাকরদের বকাঝকা করার সময় বেশরম, বেহুঁস, বেহুদা–এই সব শব্দগুলো অনর্গল। ব্যবহার করে যান।
কিন্তু চন্দ্রার কথায় কোনো টান নেই, কোনো মুদ্রাদোষও নেই। প্রখর বুদ্ধিমতী মেয়ে সে, দু’এক বছরের মধ্যেই এখানকার ভাষা রপ্ত করে নিয়েছে। আগে সে নাকি ভালো করে বাংলা। পড়তেই পারতো না, এখন বাংলায় চমৎকার চিঠি লেখে।
চন্দ্রাদের বাড়িটি পুরোনো, ঘরের সংখ্যা অনেক। কোনো কোনো ঘরে এখনো কোনো আসবাব নেই। প্রবাস থেকে এই পরিবারের চেনাজানা মানুষরা কোনো কাজে কলকাতায় এলে এখন আর হোটেলে ওঠে না, এ বাড়িতেই এসে থাকে। অসমঞ্জ রায় তাই এ বাড়িতে প্রায়ই নতুন নতুন মানুষ দেখতে পান।
ব্যাডমিন্টন খেলার খুব শখ চন্দ্রার, এখন শীতকাল শুরু হয়েছে, এখন প্রত্যেক সন্ধেবেলা সে মানিকতলার একটি ক্লাবে খেলতে যায়। দু’একটি কমপিটিশানেও সে ট্রফি পেয়েছে। এক সময় নাকি চন্দ্রা ভালো নাচতেও পারতো, অনেক জায়গায় মঞ্চে নেচেছে, দৈবাৎ সে রকম একটি ছবি দেখে ফেলেছিলেন অসমঞ্জ, কিন্তু চন্দ্রা এখন আর নাচের উল্লেখ পছন্দ করে না। তার শরীরের গড়নটি এখনো নর্তকীর মতন। এই রকম একটি মেয়েকে সমাজ সেবার কাজ নিয়ে বেশি মাতামাতি করতে দেখলে বিস্ময়ই জাগে। অসমঞ্জ এখনো চন্দ্রার চরিত্রটি বুঝতে পারেন না।
হারীত মণ্ডলের ছেলে সুচরিতকে নিজের বাড়িতেই আশ্রয় দিয়েছে চন্দ্রা। কাছাকাছি টাউন স্কুলে ক্লাস নাইনে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। সে একটা নিজস্ব ঘর পেয়েছে। হারীত মণ্ডল তার স্ত্রী ও অন্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে গেছে বাংলার বাইরে। তাকে আটকে রাখা যায় নি।
চাঁপা ফুল গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে অসমঞ্জ তাকালেন দোতলায় দক্ষিণের ঘরটির দিকে। ঐটি চন্দ্রার নিজস্ব ঘর। সেখানে আলো জ্বলছে। তা হলে চন্দ্রা নিশ্চয়ই ব্যাডমিন্টন খেলা শেষ করে ফিরেছে। চাকর-বাকরদের ডেকে খবর দেবার কোনো প্রথা নেই এখানে, অসমঞ্জ সোজা উঠে এলেন দোতলায়। চন্দ্রার ঘরের দরজার একটা পাল্লা ভেজানো। সেখানে দাঁড়িয়ে অসমঞ্জ দেখলেন একটা টেবিলের দু’পাশে বসে আছে চন্দ্রা আর একজন যুবক। দু’জনের মাথা খুব কাছাকাছি, নিবিড় মনোযোগ দিয়ে তারা দেখছে টেবিলের ওপর বেছানো একটা বড় কাগজ।
অসমঞ্জের বুকটা মুচড়ে উঠলো এই দৃশ্য দেখে। ঐ যুবকটি চন্দ্রার কাছে প্রায়ই আসে। ওর নাম অপূর্ব বর্মণ, ভালো ব্যাডমিন্টন খেলে, মিক্সড ডাবলসে চন্দ্রার পার্টনার হয়। অসমঞ্জ বরাবরই পড়ুয়া মানুষ, খেলাধুলো প্রায় কিছুই করেন নি জীবনে। খেলোয়াড় জাতীয় মানুষদের সম্পর্কে তাঁর মনে একটা অবজ্ঞার ভাব আছে। তাঁর ধারণা, যারা বেশি শরীর চর্চা করে তাদের মাথা মোটা হয়। চন্দ্রা শখ করে ব্যাডমিন্টন খেলে, সেটা ঠিক আছে, সে সময় সে যে-কোনো একজনকে পার্টনার হিসেবে বেছে নিতে পারে, কিন্তু ঐ সব খেলোয়াড়দের বাড়িতে ডেকে এনে নিভৃতে গল্প করার কোনো মানে হয় না। চন্দ্রার বুদ্ধির স্তর অনেক উঁচু, ওদের সঙ্গে চন্দ্রা কী বিষয়ে কথা বলবে?
অসমঞ্জ বললেন, আসতে পারি?
চন্দ্রা চোখ তুলে অসমঞ্জকে দেখা মাত্র যেন তার মুখোনি হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে গেল। সে বললো, আসুন, আসুন, আপনার কথাই ভাবছিলুম। আপনাকে আমার খুব দরকার।
এই হাসি, এরকম কথা শোনার জন্যই তো এ বাড়িতে আসা। অসমঞ্জর বুকের জ্বালা অনেকটা মিলিয়ে গেল।
অপূর্ব বর্মণের সঙ্গে এর আগে দুবার আলাপ করিয়ে দিয়েছে চন্দ্রা, কিন্তু সে কথা তার মনে নেই। আজ আবার বললো, আলাপ আছে? আমার বন্ধু অপূর্ব বর্মণ, আর ইনি ডক্টর অসমঞ্জ রায়, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ইংলিশের লেকচারার, আমাদের সমিতির প্রেসিডেন্ট।
অপূর্ব বর্মণ বললো, আমার বোনের কাছে আপনার কথা শুনেছি। আমার বোন ইংলিশ নিয়ে এম-এ পড়ছে, আপনার ছাত্রী।
চন্দ্রা উঠে আর একটা চেয়ার টেনে এনে বললো, বসুন, এই প্ল্যানটা দেখুন।
টেবিলের ওপর নীল রঙের কাগজটি কোনো বাড়ির নকশা। অসমঞ্জ তার ওপর একবার দৃষ্টি দিলেন। এই সব বিষয়ে তাঁর কোনো জ্ঞান নেই।
চন্দ্রা বললো, ডেস্টিটিউট মেয়েদের জন্য আমরা যে হোম তৈরি করতে যাচ্ছি, এটা সেই বাড়ির প্ল্যান। অপূর্ব এটা তৈরি করে দিয়েছে। অপূর্ব একজন আর্কিটেক্ট।
অসমঞ্জ একবার পাশ-চোখে অপূর্বকে দেখলেন। এই লোকটা খেলোয়াড় আবার আকিটেক্টও? আর্কিটেক্ট হতে গেলে তো বুদ্ধি লাগে! এমন হতে পারে যে ওদের ফার্ম আছে, সেখানকার অন্য কেউ নকশাটা করে দিয়েছে।
চন্দ্রা নক্সাটার ওপর আঙুল বুলিয়ে বললো, এই দেখুন, এই হলগুলো হবে ডর্মিটরি টাইপ, এটা কিচেন, এই দুটো ওয়ার্কশপ…
কাগজের গায়ে কয়েকটি রেখা দেখে একটা বাড়ি কল্পনা করা অসমঞ্জ রায়ের পক্ষে সম্ভব নয়। তবু তিনি আঙুল ফেলে বললেন, আর এই জায়গাটা! এটা কী?
চন্দ্রার আঙুলের সঙ্গে অসমঞ্জ নিজের আঙুল ছুঁয়ে দিলেন ইচ্ছে করে। এতে তাঁর শরীরের মধ্যে ঝনঝন শব্দ হয়, তাঁর বয়েস কমতে থাকে। চন্দ্রা কিন্তু আঙুল সরিয়ে নেয় না, তার শরীরের ঝনঝন শব্দ হয় কি না তা বোঝবার কোনো উপায় নেই, সে মন দিয়ে কথা বলে যায়।
নকশাটি সম্পর্কে আরও উৎসাহী হয়ে অসমঞ্জ তার মুখোনি এগিয়ে আনেন অনেকটা। চন্দ্রার গালের সঙ্গে তাঁর গালের আধ ইঞ্চি ফাঁক। একবার কি ছুঁয়ে যাবে, না যাবে না? ইচ্ছে করে ছুঁইয়ে দিলে চন্দ্রা বুঝতে পারবে? বুঝতে পারলেও কি বিরক্ত হবে?
টেবিলের ওপর থেকে একটা পেন্সিল পড়ে গেল, অপূর্ব নিচু হয়ে সেটা তুলতে যেতেই অসমঞ্জ অতি সূক্ষ্মভাবে চন্দ্রার গালটা ছুঁয়ে দিলেন। তাঁর বয়েস অনেকখানি কমে গেল।
চন্দ্রা মুখটা সরিয়ে নিয়ে অসমঞ্জর দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো কয়েক পলক। অসমঞ্জর বুক কাঁপছে, চন্দ্রা রাগ করে নি, বিরক্ত হয় নি, তার ঠোঁটে হাসি।
চন্দ্রা বললো, অপূর্ব এই প্ল্যানটা বিনা পয়সায় করে দিয়েছে!
চন্দ্রার মুখের হাসির সঙ্গে এই কথাটার কোনো মিল নেই বলে অসমঞ্জ আবার একটু ক্ষুণ্ণ হলেন। তিনি নীরসভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কত এস্টিমেট?
অপূর্ব বললো, জমি বাদ দিয়ে এক লাখ পঁয়তিরিশ হাজার।
–এত টাকা কোথায় পাওয়া যাবে?
চন্দ্রা বললো, ঠিক জোগাড় হয়ে যাবে। পাতিপুকুরে জমি তো পাওয়াই যাচ্ছে!
অসমঞ্জ বললেন, পাওয়া যাচ্ছে মানে এখনো তো রেজিস্ট্রি হয়নি। শুধু মুখের কথা।
চন্দ্রা দুষ্টু দুষ্টু ভাব করে বললো, ও আমি যোগেন দত্তর মাথায় হাত বুলিয়ে ঠিক আদায় করে ফেলবো।
চন্দ্রা হাতের এমন একটা ভঙ্গি করলো যেন সে আক্ষরিক অর্থেই সেই ঝানু ব্যবসায়ীটির মাথায় হাত বুলোবে।
অপূর্ব বললো, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এই সব কাজে ভালো গ্র্যান্ট দেয়। আমি দিল্লি যাচ্ছি, আপনারা যদি আমার হাতে একটা অ্যাপ্লিকেশন দেন, আমি খানিকটা গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে আসতে পারি।
চন্দ্রা বললো, শুধু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক নয়, তোমাকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।
তারপরেই সে অসমঞ্জর দিকে তাকিয়ে বললো, আজ কী বার? মঙ্গলবার, তাই না? আজ আপনার এ পাড়ায় টিউশানি ছিল তাই এসেছেন। কেন, অন্যদিন বুঝি শুধু আমার বাড়িতেই আসতে পারেন না?
অসমঞ্জ বললেন, তুমি চাইলে প্রত্যেক দিন।
চন্দ্রা একটু চিন্তা করে বললো, সুচরিত ছেলেটা কী রকম লেখাপড়া করছে সে খবরও তো নেন না। আমি কয়েকদিন নিয়ে বসেছি, দেখলুম যে ও ইংরিজিতে কাঁচা। আপনি মাঝে মাঝে এসে ওকে ইংরিজিটা পড়িয়ে দিন!
চন্দ্রা তাঁকে ঘন ঘন এ বাড়িতে আসতে বলায় অসমঞ্জ যেমন খুশী হয়ে উঠেছিলেন, তার পরের কথাটায় মনটা আবার বিগড়ে গেল।
তবু সুচরিতকে তিনি পড়াতে রাজি হলেন। একদিন সুচরিত আর তার মাকে তিনি নিজের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, সে জন্য তার মনে কোনো গ্লানি হলো না। তিনি ওরকম করেছিলেন বলেই তো ছেলেটার কপাল খুলে গৈল। চন্দ্রার নজরে পড়ায় ছেলেটা এখন রাজার হালে আছে। ফ্রি খাওয়া-দাওয়া, আর এরকম একখানা ঘর। সুচরিতকে পড়াবার বিনিময়ে। অসমঞ্জ কোনো টাকা পাবেন না বটে, কিন্তু প্রত্যেকদিন চন্দ্রাকে একবার অন্তত ছোঁয়া তো যাবে! কথা বলতে বলতে চার কাঁধে আলতো করে হাত রাখলে ও সরে যায় না।
যোগেন দত্তর সঙ্গে চন্দ্রার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অসমঞ্জই। বড়বাজারের এই ব্যবসায়ীটির মেয়েকে তিনি চার বছর পড়িয়েছেন। যোগেন দত্তর অনেক টাকা, একবার তিনি একটি খুনের মামলায় পড়েছিলেন, টাকার জোরেই মুক্তি পেয়েছিলেন সেবার। সম্প্রতি তাঁর মনে কিছুটা বৈরাগ্য ভাব এসেছে, পুণ্য অর্জনের জন্য তিনি রামকৃষ্ণ মিশনকে তাঁর পাতিপুকুরের জলা জমিটা দান করতে চান। সে খবর শোনা মাত্র চন্দ্রা লোকটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। রামকৃষ্ণ মিশনকে সাহায্য করার অনেক লোক আছে। ঐ জমিটা তার প্রজেক্টের জন্য চাই।
বিডন স্ট্রিটের মোড়ের কাছটায় যেখানে ঘোড়ার গাড়ির স্ট্যান্ড, সেখানে চাপা কলের সামনে একটি সম্পূর্ণ উলঙ্গ পাগলিনীকে দেখে চোখ বুজে ফেলেছিল চন্দ্রা। কলকাতার রাস্তায় এই দৃশ্য এমন কিছু অভিনব নয়।
বড় বড় বাড়ির গাড়িবারান্দার নিচে অনেক ভিখিরি পরিবার আশ্রয় নিয়ে থাকে। সেখানেই তাদের আহার-নিদ্রা-মৈথুন আর জন্ম-মৃত্যুর চক্র আবর্তিত হয়। দিনের বেলায় তারা তবু একটু আব্রু রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু পাগলদের তো সে ভঁসও থাকবার কথা নয়। পাগল তো অনেক আছেই, ইদানীং যেন পাগলিনীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মুখ চোখে পড়ে। অসমঞ্জও পাগলিনীদের এই সংখ্যাবৃদ্ধি লক্ষ করেছেন। খুব সম্ভবত, এরা সবাই ধর্ষিতা নারী। প্রতিদিন যে উদ্বাস্তুদের স্রোত আসছে, তার মধ্যে থেকে কিছু কিছু যুবতী মেয়ে তো ধর্ষিতা হবেই। পাগল হয়ে গেলে ক্যাম্পেও এদের জায়গা হয় না।
অসমঞ্জ রায় আর চন্দ্রা তখন একটা ট্যাক্সিতে বসে ছিলেন, সামনের রাস্তায় জ্যাম। উলঙ্গ নারীটিকে দেখে চোখ বুজে চন্দ্রা প্রায় কাঁপতে কাঁপতে বলেছিল, রাস্তা দিয়ে এত লোকজন যাচ্ছে, স্কটিশ চার্চ কলেজ, বেথুন কলেজের ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে, তাদের কারুর কোনো হুস নেই? এই মেয়েটির জন্য কেউ কিছু করতে পারে না? নারীত্বের এতখানি অপমান…
সেই দিন থেকেই চন্দ্রা রাস্তার মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দেবার জন্য পরিকল্পনা করতে শুরু করে। তারই প্রথম পদক্ষেপ এই মহিলা-আবাস স্থাপন।
যোগেন দত্ত জমিটা দিতে এখনো খানিকটা তা-নানা-না করছেন তার কারণ তিনি ঠিক বুঝতে পারছেন না, এই রকম কাজে জমি দিলে পুণ্য হয় কি না। রামকৃষ্ণ মিশনকে জমি দিলে পুণ্য একেবারে বাঁধা। চন্দ্রা তবু নাছোড়বান্দা, ইদানীং কয়েকটা দিন সে যোগেন দত্তর সঙ্গে সব সময় লেগে আছে।
চন্দ্রাকে এক কথায় না-ও বলতে পারছেন না আবার চন্দ্রা সম্পর্কে পুরোপুরি মনস্থিরও। করতে পারছেন না যোগেন দত্ত। চন্দ্রার মুখে কোনো ধর্মের কথা নেই, ঠাকুর-দেবতার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধার ভাবও নেই। রাস্তা থেকে পাগল ছাগল তুলে এনে রাখবার জন্য একটা বাড়ি বানাতে চায় মেয়েটা, যোগেন দত্তর মতে, এটাও ঐ মেয়েটার একটা পাগলামি। তবে চন্দ্রাকে তাঁর পছন্দ হয়েছে।
একদিন ইউনিভার্সিটি থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে অসমঞ্জ দেখলেন, তাঁর শয়নকক্ষে প্রীতিলতার বিছানার পাশে একটি চেয়ারে বসে আছে চন্দ্রা। দু’জনের হাতেই চায়ের কাপ, এমনভাবে হেসে হেসে গল্প করছে যেন দু’জনের কতদিনের চেনা।
অসমঞ্জ শুধু চমকে গেলেন না, ভয় পেয়ে গেলেন। প্রীতি আজকাল অদ্ভুতভাবে কথা বলে। তার মন যে কোন্ বিচিত্র গতিতে চলে তা অসমঞ্জ বুঝতে পারছেন না। চন্দ্রা সম্পর্কে প্রীতির মনে প্রবল ঈর্ষা আছে, অথচ কখনো কোনো প্রসঙ্গে চন্দ্রার নাম উঠলেই প্রতি তার দারুণ প্রশংসা করে। চন্দ্রার মতন এমন মেয়ে নাকি সে আর দেখেনি। তবু নিজের স্বামীর সঙ্গে চন্দ্রার বেশি ঘনিষ্ঠতা কি সে মেনে নেবে? চন্দ্রাকে সে একবার চিঠি লিখেছিল।
চন্দ্রার সামনে জামাটা খোলা ঠিক হবে না ভেবে তিনি জামাটা খুলতে গিয়েও খুললেন না। উদাসীন ভাব দেখিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, কী খবর, চন্দ্রা, ভালো তো?
চন্দ্রা সব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয় না। তার ঠোঁটে চায়ের কাপ।
প্রীতির দিকে তাকিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আজ কেমন আছো?
প্রীতিলতাও উত্তর না দিয়ে হাসলেন। যেন কোনো একটা বিশেষ আলোচনার মধ্যে অসমঞ্জ এসে পড়ায় ওরা দু’জনেই কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
ব্যস্ততার ভান দেখিয়ে অসমঞ্জ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হতেই চন্দ্রা বললো, আমি আপনার জন্যেই বসে আছি। আপনার সঙ্গে জরুরি কথা আছে।
এ কথা শুনে অসমঞ্জ সুখের চেয়েও স্বস্তি বোধ করলেন বেশি। চন্দ্রার বাড়িতে যে তিনি প্রায় প্রত্যেক সন্ধেবেলা যান তা প্রীতি জানেন না। চন্দ্রাও নিশ্চয়ই সে কথা জানিয়ে দেয় নি। চন্দ্রার বাড়িতে তিনি গতকালও গিয়েছিলেন। আজ. চন্দ্রা তাঁর সঙ্গে জরুরি কথা বলার জন্য বসে আছে, সুতরাং প্রীতি নিশ্চয়ই ধরে নেবে যে চন্দ্রার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি অনেক দিন।
তিনি চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার তো সব খবরই জরুরি। এটা কী?
চন্দ্রা তার চোখ-মুখে রং মশাল জ্বেলে বললো, যোগেন দত্ত রাজি হয়েছে! আজ সকালেই রাজি করিয়েছি! ইজট ইঁট সামথিং?
অসমঞ্জ ঔদাসীন্যের ভাবটা বজায় রেখে বললেন, ও রকম তো সে মুখে আগেও বলেছে। হ্যাঁজ হি সাইন্ড দা ডীড?
চন্দ্রা বললো, কাল সই করবে। আমাকে দুটো শর্ত দিয়েছে। পুরুত ডেকে জমিতে পুজো করে তারপর দলিলটা তুলে দেবে আমাদের হাতে। আর দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠানটি হবে ওঁর মায়ের নামে। এতে আমাদের আপত্তি করার কী আছে? আমাদের কাজ হলেই হলো।
–হ্যাঁ, এতে আপত্তি করার কিছু নেই।
–কাল সকালে জমি-পুজো হবে। সেই সময় আপনাকে যেতে হবে আমার সঙ্গে।
অসমঞ্জ ভুরু কুঁচকে চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, কাল? কাল তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার অন্য কাজ আছে।
–সে কি, আপনি না গেলে চলবে কেন? আপনি প্রেসিডেন্ট, আপনি তো দলিলটা নেবেন আমাদের পক্ষ থেকে।
–সে তুমি নিলেও চলবে। কিংবা, অন্য কোনো দিন করতে বলো!
–আবার অন্যদিন হলে যদি বুড়ো মত বদলে ফেলে? পুরুতকে খবর দেওয়া হয়ে গেছে, কাল নাকি ভালো দিন।
–কিন্তু কাল যে আমার বিশেষ কাজ আছে, কাল যাই কী করে?
চন্দ্রা জোর দিয়ে বললো, যতই কাজ থাক, আপনাকে যেতেই হবে। সকাল এগারোটায়। প্রীতি জিজ্ঞেস করলেন, কাল তোমার কী কাজ?
–বাঃ, কাল তোমার মামাদের সঙ্গে চন্দননগরে যাবার কথা নয়?
প্রীতি হাঁফ ছেড়ে বললেন, ও তোমার না গেলেও চলবে। মেজোমামাকে সকালে খবর পাঠিয়ে দেবো। তার থেকে এটা অনেক বেশি জরুরি। চন্দ্রার কাছ থেকে শুনছিলুম কত কষ্টে ও বুড়োটাকে রাজি করিয়েছে।
অসমঞ্জ এবারে একটা যথার্থ তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। প্রীতি বুঝুক যে চন্দ্রার যে-কোনো প্রস্তাবেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হন না। কাল তিনি চন্দ্রার সঙ্গে যাবেন প্রীতিরই অনুরোধে।
চন্দ্রা আজ একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে। এই রংটা চন্দ্রার বেশি পছন্দ। চন্দ্রার মুখেও একটা গোলাপি আভা। সিঁথিতে সে সিঁদুর দেয় না, তার কপালে একটা লাল টিপ।
চন্দ্রার মুখটা দেখেই তাকে এক্ষুনি একবার ছুঁতে ইচ্ছে হলো অসমঞ্জর। চন্দ্রা উঠে দাঁড়িয়েছে। তাকে সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গিয়ে অন্তত দুবার ছুঁতে চান অসমঞ্জ।
কিন্তু প্রীতিলতাও নেমে পড়লেন খাট থেকে।
অসমঞ্জ হা-হা করে উঠে বললেন, তুমি নামছো কেন? তুমি শুয়ে থাকো। আমি ওকে পৌঁছে দিচ্ছি।
প্রীতি বললেন, আমি আজ বেশ ভালো আছি। আমি একটু নিচে যাবো।
অসমঞ্জর মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তাহলে আর তার যাবার দরকার নেই, তবু তিনি চন্দ্রার শরীরের গন্ধ পাবার জন্য ওদের সঙ্গে নামলেন সিঁড়ি দিয়ে, একটু দূরত্ব রেখে।
চন্দ্র চলে যাবার পর তিনি বসবার ঘরে এসে একটা পত্রিকা খুলে মন বসাবার চেষ্টা করলেন। এক্ষুনি তিনি প্রীতির সঙ্গে কোনো কথা বলতে চান না, তা হলে তাঁর কণ্ঠস্বরে উত্তেজনার প্রকাশ পেতে পারে। পত্রিকাটিতে মুখ আড়াল করে তিনি আত্মসমালোচনা করতে। লাগলেন, কেন চন্দ্রাকে শুধু স্পর্শ করার জন্য তাঁর এই ব্যাকুলতা? এ যেন নিছক পাগলামির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আগে সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে লেখাপড়ার কাজ করতেন, এখন প্রায় প্রত্যেকটি সন্ধে চন্দ্রার বাড়িতে কাটে, শুধু তাকে দেখবার জন্য, তাকে একটু ছোঁয়ার জন্য। উদ্বাস্তু ত্রাণ, অনাথ আশ্রম স্থাপন এই সব বিষয়ে তাঁর সত্যিকারের কোনো উৎসাহ নেই, তিনি তো আর ইলেকশনে দাঁড়াতে চান না! শুধু চন্দ্রার জন্যই তিনি এসব নিয়ে মেতেছেন এবং ক্রমশই বেশি করে জড়িয়ে পড়ছেন।
অসমঞ্জ ঠিক করলেন, এবারে একটু সাবধান হতে হবে। চন্দ্রার মতন মেয়ে সমাজসেবা নিয়ে কেন এত মাতামাতি করছে তা বোঝা দুঃসাধ্য। এরকম অ্যাকমপ্লিসড মহিলারা তো হাই সোসাইটিতে ঘোরাফেরা করে। চন্দ্রা রূপসী তো বটেই, তা ছাড়া, বাড়ির অবস্থা বেশ ভালো, ইংরিজিও বলে চমৎকার। সে কেন গরিব-দুঃখী আর পাগলদের জন্য জীবনটা খরচ করবে? কয়েক বছর আগে পরিচালক দেবকী বসু তাঁর ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য ফিল্মটি তৈরি করার সময় চন্দ্রাকে নাকি পার্ট দিতে চেয়েছিলেন, এ কথা অসমঞ্জ চন্দ্রার বাবার মুখ থেকে শুনেছেন। চন্দ্রা রাজি হয়নি। চন্দ্রার বাবাও তো অদ্ভুত, তাঁর মেয়ে স্বামীর ঘর করে না, এখানে ইচ্ছে মতন ঘুরে বেড়ায়, তবু তিনি কোনো বাধা দেন না!
এরা অন্য রকম মানুষ, অসমঞ্জর সঙ্গে মিলবে না।
পরদিন সকালে চন্দ্রা তাদের বাড়ির গাড়ি নিয়ে এলো অসমঞ্জকে তুলে নিতে। পেছনের সীটে বসেই তিনি চন্দ্রার ডান হাতটা নিজের দু’হাতে তুলে নিলেন। এতটা সাহস তিনি আগে কোনো দিন দেখান নি। চন্দ্রা কোনো আপত্তি করলো না, হাত ছাড়িয়ে নিল না। উত্তেজনায় সে ছটফট করছে। অসমঞ্জের দিকে ঘুরে বসে সে বললো, আজই জমিটা আমাদের হয়ে যাচ্ছে, দারুণ না! আপনি অবিশ্বাস করেছিলেন। দেখুন না, এর পরে সব টাকাই আমি তুলে ফেলবো। ঐ বুড়োর মায়ের নাম দিয়ে আরও টাকা আদায় করবো ওর কাছ থেকে।
অসমঞ্জ কোনো কথা মন দিয়ে শুনছেন না, চন্দ্রার হাতটা জোর করে চেপে ধরে আছেন, তাঁর শরীরের মধ্যে ঝনঝন শব্দ হয়েই চলেছে।
গাড়ি চললো আমহার্স্ট স্ট্রিটের দিকে। সেখান থেকে যোগেন দত্তকে তুলে নিতে হবে। যোগেন দত্তর নিজস্ব গাড়ি আছে একাধিক, তবু তিনি চন্দ্রার গাড়িতে গিয়ে পয়সা বাঁচাতে চান। চন্দ্রাও তাঁকে চোখের আড়াল করতে চায় না যেন।
বাড়ির সামনেই তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন যোগেন দত্ত। বিশাল তাঁর বন্ধু। আজ জমি পুজোর ব্যাপার আছে বলেই বোধ হয় একটা গরদের পাঞ্জাবি পরেছেন, ঘাড়ে মুগার চাঁদর। কপালে চন্দনের ফোঁটা। এক গাল হাসি দিয়ে তিনি দু’জনকে অভ্যর্থনা করলেন, তারপর অসমঞ্জকে বললেন, এই যে মাস্টারবাবু, কী মেয়ে একটা জুটিয়েছেন, একেবারে ছিনে জোঁক। শেষ পর্যন্ত জমিটা আদায় করে ছাড়লো!
অসমঞ্জ বললেন, সৎ কাজেই তো লাগবে! আপনার অনেক আছে।
যোগেন দত্ত বললেন, আমি সামনের সীটে বসতে পারি না, আমার গন্ধ লাগে!
পেছনের সীটে তিনজন বসাই স্বাভাবিক, কিন্তু যোগেন দত্তর শরীরের আয়তনের জন্য আঁটাআঁটি হবে। চন্দ্রা অসমঞ্জকে বললো, আপনি সামনে গিয়ে বসুন!
অসমঞ্জর মনটা বিস্বাদ হয়ে গেল। এখন চার পাশ থেকে উঠে যেতে ইচ্ছে করছে না তাঁর। তবু তিনি নামলেন।
গাড়ি ছাড়বার পর যোগেন দত্ত চন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তা থেকে তুমি যে পাগলদের ধরে এনে রাখবে, তাদের সামলাবে কে?
চন্দ্রা বললো, আপনাকেও আসতে হবে মাঝে মাঝে। আপনার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠান হচ্ছে।
-–ওরে বাবা, পাগলদের আমি বড্ড ভয় পাই!
–মেলোমশাই, আমাদের বাড়ির প্ল্যানটা দেখবেন?
যোগেন দত্ত অট্টহাসি করে বললেন, মেলোমশাই! অ্যাাঁ? তুমি মাসি পেলে কোথায়? আমার তো পত্নী বিয়োগ হয়েছে পাঁচ বছর আগে!
–তা হলে কী বলে ডাকবো আপনাকে? মিঃ দত্ত বলতে আমার ভালো লাগে না!
–তা হলে দাদা বলো! বড়বাজারে সবাই আমায় দাদা বলেই ডাকে।
–দেখবেন প্ল্যানটা?
–দেখি।
চন্দ্রা তার কোলের ওপর নকশাটা বিছিয়ে ধরলো, কাছ ঘেঁষে এগিয়ে এলো যোগেন দত্ত। অসমঞ্জ পেছন দিকে ঘুরে বসলেন। কিন্তু তাঁর দিকে ওরা মনোযোগ দিচ্ছে না, চন্দ্রা আর যোগেন দত্ত কথা বলে যাচ্ছে।
হঠাৎ অসমঞ্জ লক্ষ করলেন, যোগেন দত্ত একেবারে চন্দ্রার গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে। পড়েছে, তার একটা হাত চন্দ্রার উরুতে। চন্দ্রা সরে বসছে না? সে যেন টেরই পাচ্ছে না! কিন্তু কোনো মেয়ে কি টের না পেয়ে পারে? এক টুকরো জলা জমির জন্য চন্দ্রা এই খুনে, কালোবাজারি লম্পটটার স্পর্শ সহ্য করছে? এ কোথায় নেমে যাচ্ছে চন্দ্রা?
অসমঞ্জর মাথায় আগুন জ্বলতে লাগলো।