হর্ষবর্ধনের কিরিকেট
দুই ভাই-ই খেলোয়াড়।
ছোটোবেলায় সেই ধুলো খেলার কাল থেকে এখন অবধি এই খেলাধুলোর বয়েসে এসেও গোবরা তার দাদার সঙ্গে সমানে পাল্লা দেয়।
দুজনেই দারুণ স্পোর্টসম্যান, প্রায় সমান সমান, কেউ কারোর চেয়ে কম যায় না।
হর্ষবর্ধন পাড়ার ছেলেদের স্পোর্টস ক্লাবের পেট্রন, আর গোবর্ধন তাদের ক্যাপ্টেন—কারও পাল্লাই কম ভারী নয়।
পাড়ার ছেলেরা ধরেছে এসে হর্ষবর্ধনকে। বেহালা বয়েজ-এর সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচে তাদের একজন কম পড়ছে, হর্ষবর্ধনকে তার শূন্যস্থল পূর্ণ করতে হবে।
পাড়ার অভাব মোচনে হর্ষবর্ধন সর্বদাই তৎপর, তক্ষুনি তৈরি, কিন্তু গোবর্ধন দাদাকে বাধা দেয়—‘ক্রিকেট হচ্ছে বেজায় দৌড়ঝাঁপের খেলা দাদা, এই বয়েসে ওই ভুঁড়ি নিয়ে তুমি পারবে কি? যেয়ো না বেহালায়, বেহাল হয়ে যাবে।’
ভূরি ভূরি বাক্যব্যয়ের সেপ্রয়োজন বোধ করে না—ওই ভুঁড়িই যথেষ্ট।
‘তুই বলিস কী করে, আমি পারব না, পারি না, এমন জিনিস দুনিয়ায় আছে নাকি? কিরিকেট খেলতে আমি জানি না বুঝি?’—হর্ষবর্ধন সহর্ষে কন।
‘খুব পারবেন খুব পারবেন।’—ছেলেরা তাঁকে মদত দিতে থাকে।
‘ক্রিকেট পারতে গিয়ে তুমি নিজেকেই পেড়ে ফেলবে মাঠে,’—গোবর্ধনের সন্দেহ—‘তখন এই আড়াইমণি মাল আমাকেই ঘাড়ে করে বয়ে আনতে হবে।’
‘আমরা আছি, আমরা আছি! আমরাও রইব, গোবরদা।’—গোবর্ধনকে উৎসাহ জোগাতে ছেলেদের কোনো কসুর নেই।
‘তোমরা যে আছ সেআমি ভালোই জানি ভাইরা। তখন যে যার নিজের বাড়ির পথে সুরুত! টিকিরও পাত্তা নেই কারও।’—গোবর্ধনের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
‘হ্যাঁ, গোবরাদা যা বলেছ—সবাই তখন চড়াই পাখির মতো ফুরুত।’ দলের একটা ছোট্ট ছেলে গোবর্ধনের কথার প্রতিধ্বনি করে—‘আমি বাবা ওই আড়াইমণি আলুর বস্তা বইতে পারব না।’
‘আমি-আমি-আমি আলুর বস্তা। চলো আমি কিরিকেট খেলে দেখিয়ে দিচ্ছি তোমাদের।’ হর্ষবর্ধনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ—‘আমি আলুর বস্তা না চালের বস্তা দেখতে পাবে।’
‘কে বলে আলু আপনাকে? আপনি ক্রিকেটেও বেশ চালু।’ ছেলেরা সব সমস্বরে সায় দিল তাঁর কথায়।
কলকাতার স্থানাস্থানের ইতরবিশেষ আরও বিশদ করে গোবর্ধন বোঝাতে চাচ্ছিল দাদাকে, যাচ্ছিলও, উদাহরণ-সহ জানাতেও চাইছিল—‘কলকাতায় নেমেই তুমি ধরামতলায় ধড়াম করে পড়ে গেছলে কেন? মনে নেই? সেতো জায়গাটা ওই ধরামতলা বলেই। ওখানে গেলে অমনি করে তোমায় পড়তে হবেই। তেমনি উলটোডাঙায় গেলে তুমি উলটাবে, চিতপুরে গেলে চিত হয়ে পড়বে, বেহালায় গেলে বেহাল হতে হবে নির্ঘাত।’
‘হই হব, তোর কী? তোর নিজের বেহালা বাজা গে যা-না তুই। যা!’—বলে দাদা হইহই করে বেরিয়ে গেছেন পাড়ার ছেলেদের সাথে।
কথায় বলে আনাড়ির মার। ব্যাট ধরেই হর্ষবর্ধন প্রথমেই এমন হাঁকড়ালেন— বল একেবারে পগারপার।
প্রথম চোটেই এক ওভার বাউণ্ডারি!
‘চালান দাদা! চালান, চালান, চালিয়ে যান এমনি করে!’—হইহই করে উঠল সবাই।
‘চালাবই তো! আলবত চালাব।’ হর্ষবর্ধনের হর্ষ ধরে না—‘কিরিকেট খেলতে জানিনে আমি!’
‘ফার্স্টক্লাস খেলছেন দাদা! সত্যি মাইরি! গোবরাদাটা গেল কোথায়! দেখুন-না এসে! দ্বিতীয় বলটাও যে মাঠ পার হয়ে গেল। দৌড়োন দাদা, দৌড়োন, দৌড়োন—’ হাঁকতে লাগল ছেলেরা।
—‘না বাপু, ওইসব দৌড়ঝাঁপের ভেতর আমি নেই। এই স্থূল কলেবর নিয়ে এই হুলস্থুল আমার পোষাবে না।’
তৃতীয় বলেও তাঁর ওই কীর্তি।
—‘ছুটুন, ছুটুন! দাঁড়িয়ে কী করছেন?’
—‘কোথায় ছুটব? বল তো মাঠ পেরিয়ে গেছে, ওর কি আর নাগাল পাওয়া যাবে?’ হর্ষবর্ধন কন—‘অকারণ ছুটোছুটি করে মরব কেন? আমি নতুন বল কিনে দেব নাহয় তোমাদের।’
—‘আহা, ওই বলটা ছুটে আনতে বলছি না কি আপনাকে। দৌড়ে সামনের উইকেট পোস্ট ছুঁয়ে ঘুরে আসুন, ফের দৌড়ে যান। ফের— ফের— ফের। রান তুলতে হবে না?’
‘অনর্থক হয়রান হয়ে কী হবে?’ তিনি বাতলান—‘ওভার বাউণ্ডারি হলে ছয় রান হবে জানে সবাই। তার আবার তোলাতুলির কী আছে? ছয় রান হয়ে গেছে না ছুটতেই।’
ছোটাছুটিকে তিনি এক কথায় ছুটি দিয়ে দেন।
তাঁর পরের মারটা অবশ্যি বেশি দূর গড়াল না। মাঠের মাঝামাঝি গেল।
—‘এবার কিন্তু ছুটতে হবে দাদা। রান তুলতে হবে আপনাকে। এটা আপনার ওভার বাউণ্ডারি হয়নি কিন্তু।’
‘না হোক। আণ্ডার বাউণ্ডারি হয়েছে তো? দু-রান ধরে নাও তাহলে। না হোক, হয়রান হতে পারব না ভাই।’—হর্ষবর্ধন নিজের পোস্টে অনড়। আপিসের বড়োবাবুর মতো।
‘সবই কি আর ওভার বাউণ্ডারি হয় নাকি? মাঝে মাঝে আণ্ডার বাউণ্ডারিও হবে বই কী। বেশির ভাগ তাই হবে ভাই। নবাব পাতাউদিরও তাই হয়।’ হর্ষবর্ধন এক নবাবি চালে তাদের চুপ করিয়ে দেন—‘তোমরা দু-রান দু-রান করে ধরে নাও সব।’
এমনি করে গোটা বিশেক রান তুলতে না তুলতে বোলারের একটা বল তাঁর উইকেটে এসে লাগল— পড়ে গেল স্টাম্প।
‘আউট! আউট!’ অন্য পক্ষের ছেলেরা চ্যাঁচাতে শুরু করল।
‘নট আউট, নট আউট!’—আরও জোর গলা জাহির করেন হর্ষবর্ধন। কিন্তু তারা শোনে না, মানতে চায় না তাঁর কথা।
তখন তিনি ‘ফাউল ফাউল’ বলে চ্যাঁচাতে থাকেন।
‘ফাউল হয়েছে, অফ সাইড হয়ে গেছে।’—ঘোষণা করে দেন হর্ষবর্ধন।
‘এ কি ফুটবল যে ফাউল অফ সাইড হবে?’—তাদের বক্তব্য।
—‘নো বল, নো বল। আমাকে আরেকটা চান্স দিতে হবে। নইলে আমি খেলব না। খেলতে আসব না আর কক্ষনো। তোমাদের সঙ্গে আড়ি হয়ে যাবে আমার।’
নিয়মবিরুদ্ধ হলেও সবাই মিলে একমত হয়ে ভোটের জোরে আরেকটা চান্স দিল তখন।
কিন্তু এবার বল মারতেই সেটা লাফিয়ে উঠল আর একজন ক্যাচ ধরে ফেলল।
—‘ক্যাচ কট কট।’ আউট হয়েছেন দাদা।
—‘নট ভাই নট। বাইচান্স ওটা হয়ে গেছে। ও কিছু নয়।’—হর্ষবর্ধন ব্যাট না ছাড়তে নাছোড়বান্দা।
তখন আরেক চান্স দেওয়া হল তাঁকে। আবারও তিনি ক্যাচ আউট।
‘আরেক চান্স। লাস্ট চান্স এবার।’ তিনি ধরে বসলেন।
ব্যাট ছাড়তে চাইলেন না কিছুতেই।
বললেন, ‘আরেক চান্স দাও আমায়। চকোলোট খাওয়াব তোমাদের। এন্তার এন্তার। যত চাই। যত খুশি।’
চকোলেটের দৌলতে আরেক চান্স মিলল তাঁর তখন।
এবার তিনি খুব সতর্ক হয়ে ব্যাট করতে লাগলেন। ঠুকঠাক ঠুকঠাক। কিছুতেই আর আউট হবার পাত্র নন।
বড়ো বড়ো মারের ধার-কাছ দিয়েও যান না। কী জানি, যদি ক্যাচ আউট হয়ে যান আবার!
তাহলেও ওই মারেই এক-আধটা বল বেশ এক-আধটু গড়ায়।
—‘দৌড়ান দাদা, দৌড়ান! রান তুলুন! রান তুলুন-না।’
—‘দৌড়াচ্ছেন না কেন?’
হর্ষবর্ধন অনড় নট নড়নচড়ন। ব্যাট ধরে নাছোড়বান্দা।
‘দৌড়ান দৌড়ান।’—চারধার থেকে হইহই করে সবাই।
সবার প্ররোচনায় উত্তেজিত হয়ে যেই-না একবার দৌড়োতে গেছেন, অমনি কী হল কোথায় কে জানে, সবাই উঠল চেঁচিয়ে ‘রান আউট। রান আউট!’
তাঁর পরের ছেলেটি ছুটে এসে তাঁর হাতের ব্যাট কেড়ে নিয়ে বলল, ‘রান আউট হয়ে গেছেন দাদা, আর কোনো চান্স নেই আপনার। এবার আমার পালা ফিরে যান তাঁবুতে।’
ছেলেটার তাঁবে ব্যাট ছেড়ে দিয়ে ম্রিয়মান হয়ে তাঁবুতে ফিরতে হল তাঁকে।
‘দুর দুর! এসব ভারি ঝকমারির খেলা, আমার এসব পোষায় না।’—তিনি বকবক করেন।
‘খারাপ কী খেলেছেন দাদা। মন্দ কী এমন!’—উৎসাহ দেয় একজন।
‘না বাপু। এসব লক্করদের ফক্করদের খেলা!’—বিরক্ত হয়ে হর্ষবর্ধন দূর করে ছুড়ে ফেলেন হাত-পায়ের প্যাডগুলো—‘এসব আমার মতো ভদ্দর লোকের কম্ম না।’
‘বিশেষ করে ভদ্রলোক যদি বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়।’—তাঁর মনও সায় দেয় তাঁর কথায়।
বকতে বকতে মাঠ পার হয়ে রাস্তার একটা ট্যাক্সি ধরে চেতলায় নিজের আস্তানায় ফিরে যান সটান।
দোরগোড়াতেই গোবরার সঙ্গে মোলাকাত।
‘কোথায় ছিলিস রে এতক্ষণ!’—দাদা কন, ‘যেতে পারতিস আমার সঙ্গে। দেখতে পেতিস আমার খেলাটা। কীরকম খেললাম যে একখান!’
‘কীরকম?’—গোবরার ঈষৎ কৌতূহল।
‘গেলে দেখতিস।’—দাদার উৎসাহ প্রকাশ পায়, ‘ডাণ্ডাগুলি হলে অবশ্য আরও ভালো খেলতাম। তাহলেও নেহাত মন্দ খেলিনি—ডাণ্ডাগুলির মতোই দুদ্দাড় পিটিয়েছি। কিরিকেট কাকে কয় বেহালার পোলাদের দেখিয়ে দিয়েছি। তুই দেখতে পেলি না।’
—‘তাহলে শুনি-না একটুখানি।’
—‘ক-টা বাউণ্ডারি করলাম জানিস? ক-টা ওভার বাউণ্ডারি? আর ক-টা ওভার ওভার?’—দাদার বিবৃতি—‘খবর রাখিস তার?’
—‘ওভার ওভারটা কী আবার?’
—‘ডবল বাউণ্ডারি। তিন ডবল বাউণ্ডারি। আবার কী?’
—‘ও।’
—‘তা তুই কী করছিলিস এতক্ষণ কুঁড়ের মতন বাড়িতে বসে?’
—‘বাড়িতে বসেছিলুম না। আমিও খেলেছি। খেলতে গেছলাম ম্যাচ। আমিও।’
—‘তুইও ম্যাচ খেলেছিস? কী ম্যাচ রে? কিরিকেট?’
—‘তোমার ওই কিরিকেট ছাড়া কি খেলা নেই আর? আমি পিংপং খেলছিলাম।’
—‘পিংপং? সেআবার কী খেলা রে? নামও শুনিনি কক্ষনো।’
—‘তুমি না শুনলেই বুঝি সেখেলা থাকতে নেই?’
‘বায়োস্কোপের কোনো খেলা বুঝি!’—দাদার ঈর্ষাজড়িত ঈষৎ কৌতূহল—‘কিংকং তো জানি একটা বায়োস্কোপ। সেইরকম কোনো খেলা বুঝি ওই পিংপং?’
‘সেও তোমার ওই বল খেলাই মশাই। বল হাঁকড়ানোই। তবে বলগুলো ক্রিকেটের মতো বড়ো বড়ো নয়, ছোটো ছোটো। ব্যাটগুলোও বেঁটেখাটো।’ গোবর্ধন জানায়, ‘ভারি মজার খেলা গো!’
—‘কোথায় গেছলি খেলতে? কার সঙ্গে খেলছিলিস?’
—‘হিল্লি দিল্লি কোথাও না। টালা-টালিগঞ্জ করতে হয়নি আমায়। এই পাড়াতেই খেললাম। পাটালিওয়ালার ছেলের সঙ্গে খেলছিলাম এতক্ষণ—পাশের বাড়িতে।’
‘পাটলিপুত্রে গিয়েছিলিস!’—হাফ ছাড়েন দাদা—‘তাই বল।’
—‘তোমার সেই পাটালি নয় গো, জয়নগরের পাটলিপুত্রে। জয়নগরে থাকে ওরা, কী ফার্স্টক্লাস পাটালি গুড় ওদের, কী বলব দাদা! খেজুর গুড়ের পাটালি।’
দাদার জিভে জল সরে—‘খেলি পাটালি গুড়?’
—‘না খেয়ে ছেড়েছি নাকি? এন্তার খেয়েছি। ওই লোভ দেখিয়েই তো নিয়ে গেল ছেলেটা খেলতে। নইলে কি আর এই শর্মা যায়।’
—‘তা কী রকম ফাটালি? ওই পিংপং।
—‘ফাটাফাটির খেলা নয় দাদা! এ খেলা টুকটাক। এ তো তোমার কিরিকেট কি ডাংগুলি নয় যে ফাটাব। ভদ্দরলোকের খেলা বুঝলে? বলতে পারো ভদ্র বালকদের।’
—‘বটে বটে? কীরকম খেলাটা শুনিই-না। খেলাটা হয় কোথায়? মাঠে?’
—‘মাঠে নয়, হাটেও না, বলতে পারো খাটেই বরং।’
—‘খাটে আবার কীসের খেলা রে!’—হর্ষবর্ধন অবাক হন।
—‘খাটের তলাতেই বেশির ভাগ। আসলে খেলাটা হয় একটা টেবিলের ওপর, কিন্তু আসল খেলাটা ওই খাটের তলাতেই।’ গোবর্ধন প্রকাশ করে—‘ছেলেটা একটা বল মারে। একটুখানি বল। একটুতেই হারিয়ে যায়। খাটের তলা চৌকির তলার থেকে খুঁজে আনতে হয় গিয়ে। বল মারবার পর আমি আর ছেলেটা চৌকির তলায় ঢুকি গিয়ে, সেখান থেকে খুঁজে আনি বলটা। তারপর আমি একটা বল মারি। আবার সেটা চৌকির তলায় গিয়ে সেঁধোয়। ভারি মজার খেলা দাদা।’
—‘এর ভেতর মজাটা কোনখানে!’—হর্ষবর্ধন কোনো হদিস পান না। হাঁ করে থাকেন।
—‘মজা ওই চৌকির তলাতেই। বুঝছ না?’
—‘সেখানে তো যত আরশোলা। আরশোলাতে তুই মজা পাস বুঝি? আমার বাপু গা-ঘিনঘিন করে ওদের দেখলে। ভারি ভয় লাগে।’
—‘আরশোলা কেন গো? তার তলাতেই তো যত মজা। সাজানো যত, থরে থরে বিন্যস্ত যত গুড়ের পাটালি গো!’
—‘পাটালিওয়ালার পাটালি সব ফাটালি—অ্যাঁ?’
—‘আজ রাত্তিরে আর ভাতটাত কিছু খাচ্ছি না দাদা। আমিও না, তোমার সেই পাটালিপুত্রও নয়। সাতখানা ইয়া ইয়া পেল্লায় পাটালি দুজনে মিলে সাবাড় করেছি।’
তারপরই গোবর্ধন এক পাটনাই ঢেঁকুর তুলে তার প্রমাণ দিল।