স্ত্রী-সুখ

স্ত্রী-সুখ

দাম্পত্যকলহে নাকি বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া হয়ে থাকে। কথাটা সত্যি, কেবল আড়ম্বরটা যদি বরের দিক থেকে শুরু হয়। বউয়ের দিক থেকে আরম্ভ হলে ক্রিয়াকান্ড কোথায় গিয়ে শেষ হবে বলা কঠিন, এমনকী লঘু থেকে লগুড়ে গড়িয়ে বহুতর হয়ে ক্রমে ক্রমে অবশেষে বৈধব্যে গিয়েও দাঁড়াতে পারে। আজ বৈকালীন বিশ্রামকালে পার্কে যে-লোকটি আমার পাশে এসে বসেছিল তার সঙ্গে আলাপ করে এই ধারণাই আমার বলবৎ হয়েছে।

লোকটা এধার-ওধার তাকাতে তাকাতে আমার কাছে এসে খাড়া হল। লম্বা-চওড়া এবং মেদস্বী—চুড়িদার পাঞ্জাবির ভেতর খাসা ভুঁড়িদার চেহারা! একটু ইতস্তত করে—যেন অত্যন্ত অগত্যাই জিজ্ঞেস করল আমায়—

‘আজ্ঞে, একটি লোককে দেখেছেন? কপালে জলপটি লাগানো আর চোখের কোল ভয়ংকর রকম ফোলা—এইরকম একটি লোককে এই ধার দিয়ে যেতে দেখেচেন আপনি?’

‘না। দেখিনি তো।’ আমি জানালাম।

‘আজ্ঞে, আমার বন্ধুটিকে খুঁজছি। ওই চিহ্নগুলির দ্বারা আধ মাইল দূর থেকেও তাকে আজ চেনা যাবে। আর একবার সেই চেহারা দেখলে ভোলা কঠিন।’

‘না, ওরকম কোনো দৃশ্য আপাতত দেখেচি বলে তো মনে পড়চে না।’

‘সচরাচর সেতো এমন লেট খাবার ছেলে নয়।’ লোকটি ভাবিত হয়ে পড়ে—‘তাহলে নিশ্চয় তার ভালো-মন্দ কিছু একটা হয়েছে।’ এই বলে সেধপ করে আমার পাশে বসে পড়ল—একেবারে যেন হাল ছেড়ে দিয়েই মনে হয়।

অচেনা লোকের সম্পর্কে হলেও ওরূপ গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতে বিচলিত না হয়ে পারা যায় না। ভালো-মন্দ—নিজের বা অপরের, যারই কেন হোক-না, শেষপর্যন্ত তা কাকস্য পরিবেদনা হলেও সজ্ঞানে তা শুনে চুপ করে থাকা শক্ত।

‘অ্যাঁ, বলেন কী? একেবারে এসপার-ওসপার—অ্যাদ্দূর?’ ভবপারাবার পারাপার সহজ ব্যাপার না, সেই চেষ্টায় ইহলোক বা পরলোকে কেউ হাবুডুবু খাচ্ছে ভাবতে ভারি খারাপ লাগে।

‘না, অতটা ভালো-মন্দ হয়তো নয়। তবে ওর কাছাকাছি কিছু একটা হয়েছে নিশ্চয়।’ লোকটি বসে বসে ভুঁড়ি-কাঁপানো দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়তে লাগল।

‘কীরকম আশঙ্কা করচেন?’ জানতে আমার আগ্রহ হয়। অত্যন্ত স্বভাবতই।

‘ওর বউ বোধ হয় বাড়ি থেকে ওকে বেরোতে দেয়নি।’ লোকটি বলে।

‘ও!’ আমি গুঞ্জন করি। ‘—এই ব্যাপার!’ এমন কিছু সঙ্গিন নয় তাহলে। রাজবন্দির অন্তরীণ দশা মাত্র!

লোকটি নীরবে তার সিগ্রেট ধরায়। নি:শব্দে ধোঁয়া ছাড়ে।

‘অদ্ভুত প্রকৃতি…এই মেয়েরা! প্রকৃতির সৃষ্টি আজব জীব! কখন যে কী করে বসে কিছুই স্থিরতা নেই। পাঁচিলের ওপরকার বেড়ালটার মতোই, কোন দিকে যে লাফ খাবে কেউ বলতে পারে না।’

‘যা—বলেছেন!’ আমার সায় দিই। ‘এমনকী লাফ না খেয়ে সারা পাঁচিলটা কেবল চষে বেড়াতেও পারে।’

‘আপনি কি বিয়ে করেছেন—আজ্ঞে?’ সেজানতে চায়।

‘ঠিক না করলেও, বিবাহিত অবস্থা কল্পনা করতে আমার অসুবিধা নেই।’ আমি জানাই।

‘উঁহু, তাতে হয় না মশাই। অনেক মেয়েকে একটু একটু ঘাঁটলে বিবাহিত জীবনের স্বাদ পাওয়া যায় না; তাতে মেয়েদের কিছুই জানা যায় না। একটা মেয়েকে অনেক ঘাঁটালে তবেই যদি জানা যায়। একটু টিপলে তারা কমলা নেবুর মতো—উত্তর-দক্ষিণে চাপা…চমৎকার! যেমন অপার্থিব তেমনি উপাদেয়। অনেক কচলালে তবেই তাদের আসল রূপ বেরিয়ে আসে…সত্যিকারের তিক্ত স্বাদ টের পাওয়া যায়। ওদের আগাপাশতলা জানতে হলে আগে বিয়ে করা দরকার।’

এত বড়ো দার্শনিক তত্ত্ব হেসে উড়িয়ে দেবার নয়। তাহলেও নারীদের ব্যাপারে আমি একেবারে আনাড়ি একথা স্বীকার করতে আমার সংকোচ হয়। কোথায় যেন বাধে।

‘ধরুন-না কেন, আমিও বিবাহিত।’ আমি বলি।

‘তবে তো,’ লোকটি বলে—‘আমিও ওদের বিষয়ে যতখানি জানি আপনারও তা জানা আছে। আপনাকে আর আমি বেশি কী জানাব?’

‘যতখানি? তার মানে যতটা বেশি, না যতটা কম? কী আপনি বলতে চাইচেন?’

‘ঠিক বলেচেন।’ আমার বাক্যে লোকটিকে বেশ পুলকিত হয়ে উঠতে দেখা যায়। ‘আমিও ঠিক ওই কথাই বলি। একেবারে খাঁটি কথা। আমার কথাই ধরুন-না। দৃষ্টান্তস্বরূপ এই আমাকেই ধরা যাক। সতেরো, সতেরো বছর বউয়ের সঙ্গে ঘর করছি কিন্তু সত্যি বলতে সেই কনে দেখতে যাবার দিন যতটুকু তার বুঝেছিলাম, আজ এতদিন বাদেও তার বেশি এতটুকুও বুঝতে পারিনি। আর সদানন্দ হালদারের কথা যদি বলেন…তার সমঝদারি যদি মাপতে হয়…তাহলে স্রেফ একটা বড়ো গোছের শূন্য। শূন্য ছাড়া কিছু না।’

‘সদানন্দ হালদার?’ আমি প্রতিধ্বনি করি—‘আপনার সেই বন্ধুটির কথা বলচেন?’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ, তাকেই তো গোরু খোঁজা করছি। চোখের কোলটা ভীষণরকম ফুলেছে, কপালে জলপটি জড়ানো। গালে আরেক পট্টি।’

‘আপনার বন্ধুর এমন পট্টিবাজ হবার কারণ?’ আমি জিজ্ঞেস না করে পারি না।

‘তার কারণ জানতে চান? তার বউই হচ্ছে তার কারণ। তার বউ হয়েছে যাকে বলে খাণ্ডার…সর্বদা খাণ্ডা খর্পর ধরেই রয়েছে। বেঁটেখাটো হলে কী হয়…সারা দেহজোড়া আগাগোড়াই তার একখানা জিভ। অনবরত লকলক করছে আর বকবক করছে। দিনরাত। কুড়ি বছর আগে বিয়ের রাতে সাতপাক ঘুরিয়ে আনার তারিখ থেকে সদানন্দ নিজের নাম ভুলে গেছে। নাম না ভুললেও নামের মানে তো বটেই! তার বিয়ের পর আর তাকে হাসতে দেখিনি এক দিনও…অন্তত বউয়ের সামনে তো নয়। আর এই কুড়ি বছর ধরে সেবউয়ের বক্তৃতা শুনছে একনাগাড়ে। সদানন্দ যা-ই করুক তার বউয়ের মতে সব খারাপ, এমন কিছু যদি নাও করে তাও খারাপ। তার বউ কিছুতেই সন্তুষ্ট নয়। আমি স্বকর্ণে সব শুনেছি দেখেছি বলেই জানি কিনা।’

কী ভাষায় নিজের সহানুভূতি জানাব ভেবে পাই না।

‘কত বার আমি বলেচি সদানন্দকে—ব্যাটা, বউকে তুই অতটা প্রশ্রয় দিসনে। অত বাড় ভালো নয়। আর অমন ভয়ই-বা করিস কীসের? সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সমুচিত জবাব দিতে কী হয়? কিন্তু বলা বৃথা! সদানন্দ হালদার নামেই হালদার…আসলে হাল ধরবার মতো মুরোদ তার নেই। হাল তার ভাঙা।’

‘হাল খুব খারাপ।’ আমার মনে হয়।

‘চাল আরও। হালের চেয়েও চাল খারাপ আরও। বউয়ের সামনে ও একেবারে জুজু। কিন্তু অমন কেঁচো হয়ে বেঁচে থেকে লাভ? যদি মাটির তলায় সেঁধিয়েই বঁাচতে হয় তবে আর বঁাচা কেন?’

মাধ্যাকর্ষণের জন্যই হয়তো-বা, আমার ধারণা হয়। কেঁচোরাও তো বলতে গেলে এক রকমের হালদার। পুরুষ বা কাপুরুষ যা-ই হোক, তাদের যৎসামান্য হালের দ্বারা তারাও যথাসাধ্য মৃন্ময়ীকে কর্ষণ করে। হলধর ঠিক তাদের বলা না গেলেও, তাদেরও নিজস্ব একটা কৃষ্টি রয়েছে—নি:সন্দেহই। কেঁচোদের মতো সদানন্দেরও নিজের কৃষিক্ষেত্রের প্রতি নিজের দুর্বলতা থাকা স্বাভাবিক।

‘দু-দিন আগের কথা বলি। কী হয়েছিল শুনুন তাহলে।’ লোকটি কেঁচে গন্ডূষ করে। বেশ জাঁকিয়ে তার আরম্ভ হয়—‘সন্ধ্যে তখন হব হব। আমি আর সদানন্দ একটা চায়ের দোকানে বসে। আমরা চা খাচ্ছি। আমাদের মুখোমুখি আরেকটা লোকও চা খাচ্ছিল। লম্বা লম্বা চালের গল্প করে চায়ের দোকান গুলজার করছিল লোকটা। হঠাৎ পাশের মন্দিরে কাঁসর ঘণ্টা ঢাক-ঢোল কাড়ানাকাড়া বাজতে শুরু করে দিল—পুজো কি আরতি কিছু একটা হচ্ছিল। সামনের লোকটা তখন ঢাকের বাদ্যি নিয়ে পড়ল। বলল যে এ রকমের আওয়াজে মুসলমানরা যে কেন খেপে ওঠে তা বোঝা কঠিন নয়। এমন বিটকেল বাদ্যিতে ভূত পর্যন্ত পালিয়ে যায় আর মুসলমান টিকবে? আর দেবতাই কি কখনো তিষ্ঠতে পারে? ভদ্র কানের পক্ষে একেবারে অসহ্য এইসব বিচ্ছিরি বাজনা যে কে বের করেছিল—ইত্যাদি কথা বলতে লাগল সেই লোকটা।’

এত বলে সদানন্দ-চরিতকার থামল। কান খাড়া করে সেদিনের ঢাকঢাক গুড়গুড় শোনবার চেষ্টা করতে লাগল কি না কে জানে।

‘তার পরমুহূর্তে আমি এক ধাক্কা খেলাম। এমন ধাক্কা আমি এ জীবনে খাইনি। খেলাম ওই সদানন্দর কাছ থেকেই।’

‘বলেন কী? আপনাকেই ধাক্কা মারল আপনার সদানন্দ? আপনার বন্ধু হয়ে আপনাকেই—বলেন কী মশাই?’ আমার তাক লাগে।

‘না, আমাকে নয়। সামনের সেই লোকটাকেই। প্রচন্ড এক ঘুসির ধাক্কায় লোকটাকে সামনের চেয়ারসমেত সেভূমিসাৎ করে দিল। সঙ্গে সঙ্গে সদানন্দর কী চিৎকার! ‘ঢাকের তুই কী জানিস রে হতভাগা? ঢাকে কাঠি দিতে এসেছিস যে বড়ো? ফের যদি আমার কাছে ঢাকের নিন্দে করবি, হিন্দুধর্মের গ্লানি করবি, তাহলে ভালো হবে না। তাহলে তোরই একদিন কি আমারই একদিন।’ বলল সদানন্দ। এই কথাই বলল। তার ধাক্কাটা ঠিক আমার গায়ে না লাগলেও আমিই ধাক্কা খেলাম বই কী! ওর কাছ থেকে এতদূর বীরত্ব কোনোদিন আমি আশা করিনি!’

‘সদানন্দ হিন্দু মহাসভার কোনো চাঁই-টাই বুঝি?’ আমার প্রশ্ন হয়। ‘ওদের এধারে ঢাক ওধারে ঢাক ঢাক কিনা! একদিকে তুমুল বাদ্যি—অন্যদিক বেবাক ঢাকা। মাঝখানে কেবল চাঁদা করে চাঁটি—চাঁদা বাগাও আর চাঁটি লাগাও।’

‘মোটেই না। হিন্দু মহাসভার ধার দিয়েও যায় না সে। তবে ঢাকের বাদ্যি শুনলে কেমন তার রক্ত গরম হয়ে ওঠে। তখন আর সেনিজেকে সামলাতে পারে না। চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে এসে অনুতপ্ত কন্ঠে এই কথাই সেআমাকে জানাল।’

‘আর সেই লোকটার কী হল? সেই ধাক্কাখোরের?’ আমি কৌতূহলী হলাম।

‘অচেনা লোকের হাতে অকারণ মার খেয়ে সেগুম হয়ে গেল। একটা কথাও বলল না আর। নিজের ঢাক থামিয়ে চুপ করে চলে গেল তারপর।’

‘আহা!’ তার দুঃখে আমার হাহাকার।

‘আমি কিন্তু এই করুণ দৃশ্যের মধ্যেই আশার একটু আলো দেখতে পেলাম।’ সদানন্দ-বান্ধব প্রকাশ করতে থাকে—‘দেখতে পেলাম যে ঢাকের আওয়াজে সদানন্দের ভীরুতা কোথায় উপে যায়। এক নিমেষে ওর চোখ-মুখ চেহারা সব বদলে যায় কীরকম! যেন আগের সদানন্দই নয়। তখন সামনে পেলে তার চেয়ে বিশগুণ জোরালো দশটা কুস্তিগিরকেও সেযেন একাই গুঁতিয়ে কাবু করে দিতে পারে। ঢাকের কী মহিমা কে জানে!’

‘দেব-দেবীর পাষাণ মূর্তিতেও প্রাণ জাগিয়ে তোলে বলে যখন—’ আমি বাতলাই—‘তখন আর এটা এমন অসম্ভব কী?’

‘সদানন্দর কীর্তি দেখে আমি তখন ভাবতে শুরু করেছি। ভেবেচিন্তে বলেচি তাকে—তুই এক কাজ কর। সত্যিই যদি তোর বউকে শিক্ষা দিতে চাস, তাহলে সেই শিক্ষাদানের সময়ে এক জোড়া ঢাকিকে বায়না দিয়ে তোর বাড়িতে নিয়ে যা। আর বউকে যদি এইভাবেও শেষপর্যন্ত মানুষ করে তুলতে পারিস তাহলে তোদের দুজনকার তাতে লাভ বই ক্ষতি নেই। সদানন্দ কথাটা আমার শুনল। শুনল, কিন্তু কোনো জবাব দিল না। একটি কথাও না বলে চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে সটান সেঢাকিদের কাছে চলে গেল। গিয়ে সব ক-টা ঢাকিকে নগদ টাকায় বেঁধে ফেললে। ঠিক হল আর ঘণ্টা খানেক পরে আরও ঢাকিদের জোগাড় করে সবাই মিলে তার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে জোরসে পিটোবে। তারপর সদানন্দ ফের চায়ের দোকানে ঢুকে পর পর আরও তিন কাপ চা মারল। দেহ-মন ভালো করে চাগিয়ে নেবার জন্যেই বোধ হয়।’

‘তারপর?’ অধীর আগ্রহে আমি উতলা হই—‘কী হল তারপরে?’

লম্বা-চওড়া লোকটার সর্বাঙ্গ কম্পিত হতে থাকে। ভাবতেই—ভয়ে কিংবা হর্ষে কীসে তা বলতে পারি না।

‘তারপরে? তারপরেই সদানন্দের সেই ফোলাটা ঘটল। চোখের এলাকার সেই পর্বতপ্রমাণ ফোলাটা।’ জানাল লোকটি ‘কপালের জলপট্টির আর আমি পুনরুল্লেখ করতে চাই না।’

কিছুক্ষণের জন্য উভয়েই আমরা নীরব হয়ে রইলাম। অন্তর্নিহিত ভাবাবেগের জন্যেই মনে হয়। কিংবা নিজেদের অভিজ্ঞতার প্রতিফলনে সদানন্দর প্রতিফলের রসাস্বাদ করতেই আমাদের এই মৌনতা হবে হয়তো। মৌনতা অথবা মৌতাত।

‘কেন হল এমনটা—অ্যাঁ? আপনার বন্ধুর বউও বুঝি ঢাকের বাজনা শুনলে আরও খেপে ওঠেন—তাই বুঝি?’

‘তাই হবে হয়তো। কীসে কী হয় কেউ কি বলতে পারে? মোটের ওপর সদানন্দর কাছ থেকে যা জানা গেছে তা এই। সেযখন বউকে শিক্ষাদানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তার বক্তৃতাটাও প্রায় তৈরি, ঠিক সেই সময়ে—ঠিক সময়টিতেই দরজার বাইরে ঢাকের কাঠি পড়ল। সদানন্দর বউ তখন রুটি বেলছিল, হাতে ছিল তার বেলনা। সদানন্দকেই সেআরেকটা ঢাক বলে ভ্রম করল কি না কে জানে! বিচিত্র নয় কিছু, অনেকটা ঢাকাই চেহারাই তো আমার বন্ধুটির। ঢাকের তালে তালে বেলনা দিয়ে সদানন্দকে সেবাজাতে শুরু করে দিলে। চারধারেই বাজিয়েছিল—বেশ জোরে জোরে—যেমন বাজাতে হয়। ঢাক বাজানোর যা দস্তুর! তবে কেবল কপালের আর চোখের কাছের বাজনাটাই একটু বেশি জোরালো হয়ে গেছে। কপালের জোরে চোখটা বেঁচে গেছে বেচারার, এই রক্ষে!’

‘ঢাকের বাদ্যি যে ওর কপালে গিয়েই থেমেছিল সেটাও কম বঁাচোয়া নয়।’ আমি বলি—‘ও-বাদ্যি থামলে পরেই তো মিষ্টি!’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *