সেই কুয়াশা ২.১২

বারো

চ্যারিং ক্রস স্টেশন থেকে দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে এল রানা, মিশে গেল স্ট্র্যাণ্ড-মুখী পথচারীদের ভিড়ে। বার কয়েক মাথা ঘুরিয়ে পিছনটা দেখল, ওকে অনুসরণ করা হবে বলে আশঙ্কা করছে। মনে মনে অভিসম্পাত দিচ্ছে ভাগ্যকে, এমনিতেই বিপদে আছে, সেটার মাত্রা আরও বেড়েছে কয়েক মিনিট আগে। স্টেশনের ভিতরে দেখা হয়ে গেছে এক আমেরিকানের সঙ্গে- লোকটা সঙ্গে—লোকটা সিআইএ-র লণ্ডন শাখার লোক। হালকা ছদ্মবেশ নিয়েছে রানা, কিন্তু অভিজ্ঞ চোখের জন্য সেটা যথেষ্ট নয়। ওর দিকে তাকিয়ে ব্যাটা যেভাবে চমকে উঠল, তাতে সন্দেহ নেই যে ওকে চিনে ফেলেছে সে। এতক্ষণে হয়তো এসভেনর স্কয়্যারের আমেরিকান এম্বাসিতে খবরও দিয়ে ফেলেছে: জেনারেল গ্রেগরি ওয়ার্নারের হত্যাকারীর খোঁজ পাওয়া গেছে লণ্ডনে। লোকটা ফাঁকি দিয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে এসেছে রানা, কিন্তু তাতে বিপদ কমেনি একবিন্দু। খুব শীঘ্রি সিআইএ-র লণ্ডন নেটওঅর্ক সক্রিয় হয়ে উঠবে। ওকে খুঁজে বের করার জন্য মাঠে নামানো হবে স্থানীয় সমস্ত এজেন্ট, কন্ট্যাক্ট আর ইনফর্মারদেরকে। ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের সাহায্য নেয়া হবে বলে মনে হয় না, এসব কাজ আমেরিকান-রা একাকী করতে ভালবাসে। তাতে ওদের কৃতিত্বে ভাগ বসাতে পারে না কেউ।

ট্রাফালগার স্কয়্যারে পৌঁছে ইন্টারসেকশন পেরুল রানা। সন্ধ্যার ভিড়ের মাঝখানে লুকাল নিজেকে। ঘড়ি দেখল—সোয়া ছ’টা বাজে; তারমানে প্যারিসে সোয়া সাতটা। আধঘণ্টা পর সোনিয়াকে রু দ্য বাখ্-এর ফ্ল্যাটের নাম্বারে ফোন করবার কথা, কিন্তু তার আগে বদলে নিতে হবে বেশভূষা। সিআইএ এজেন্ট ওর পোশাকের বর্ণনা দিয়েছে নিঃসন্দেহে, দূর থেকে উইণ্ডব্রেকার আর ময়লা ক্যাপ দেখে ওকে স্পর্ট করে ফেলতে পারে অনুসন্ধানকারীরা।

কাছেই একটা ক্লোদিং স্টোর দেখতে পেয়ে তাতে ঢুকে পড়ল রানা। নতুন শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট, হ্যাট আর জুতো কিনল। ট্রায়াল রুমে ঢুকে পরে ফেলল ওগুলো। পুরনোগুলো দান করে দিল স্কয়্যারের কোণে হাত পেতে বসে থাকা এক ভিখিরিকে। তারপর হাঁটতে শুরু করল দক্ষিণ দিকে। হে-মার্কেটের টেলিফোন কাউন্টারে পৌঁছে থামল। অপারেটরকে টাকা দিয়ে ঢুকে পড়ল একটা কাঁচের বুথে।

কবজিতে বাঁধা ট্যাগ-হিউয়ার ঘড়ির ডায়ালে চোখ বোলাল রানা। সাতটা বাজতে দশ মিনিট। সোনিয়া নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে ওর ফোনের। প্রয়োজন ছাড়া যোগাযোগের ইচ্ছে ছিল না রানার, কিন্তু রোজ ফোন করার শর্তটা ও-ই দিয়েছে। রানার কণ্ঠ না শুনলে- নাকি অস্থিরতা অনুভব করে। আপত্তি করেনি রানা, মেয়েটার অনিশ্চয়তা-ভরা জীবনে এ-মুহূর্তে ও-ই একমাত্র আশ্রয়স্থল। ওর উপরেই ভরসা রাখছে সোনিয়া, সেটা কিছুতেই হারাতে দেয়া যাবে না।

রিসিভার তুলে প্যারিসের নাম্বারে ডায়াল করল রানা। রিং হলো কি হলো না, ওপাশ থেকে ভেসে এল মেয়েটির সুরেলা কণ্ঠ। ‘হ্যালো?’

বুকের ভিতর আলোড়ন অনুভব করল রানা। জানে উচিত হচ্ছে না, তা-ও কেন যেন সোনিয়ার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে ও। ওর কণ্ঠ শোনার জন্য সোনিয়া যেমন উতলা, রানা নিজেও সে-তুলনায় কম নয়। প্রেম, নাকি ক্ষণিকের আবেগ… বলতে পারবে না ও।

গলা খাঁকারি দিল রানা। ‘কোনও খবর আছে?’

‘কুয়াশা এসেছে।’

‘প্যারিসে? কখন?’

‘কাল রাতে। চেহারা-সুরত দেখে মনে হচ্ছে ঝড় বয়ে গেছে ওর উপর দিয়ে।’

‘কথা বলতে দাও আমাকে।’

একটু নীরবতা। তারপরেই শোনা গেল কুয়াশার কণ্ঠ। ‘কেমন আছ, রানা?’

‘ভাল। কী খবর,ওদিককার

‘মিশন সাকসেসফুল বলতে পারো। অনেককিছু জানতে পেরেছি।

‘ভারাকিন?’

‘জার্মানিতে মাইগ্রেট করেছিল সে। নাম বদলে ভরগেন হয়েছে। অ্যানসেল ভরগেন।

‘ভরগেন ইণ্ডাস্ট্রিজ?’

‘হ্যাঁ।’

‘মাই গড!’ চমকে উঠল রানা। ‘সে তো বিশাল ব্যাপার।’

কারেক্ট। আশি সালে মারা গেছে প্রিন্স ভারকিন। এক ছেলে রেখে গিয়েছিল, কিন্তু সেই ছেলে আদর্শবাদী বলে তার হাতে তুলে দেয়নি ফেনিস কাউন্সিলের পদ। দিয়ে গেছে নাতনিকে ব্রুনা তরসেন… তার নাম হয়তো শুনেছ তুমি।’

‘এখন কোথায় আছে ওরা?’

দু’জনেই মারা গেছে। আমার সামনে বাপকে খুন করিয়েছে ব্রুনা, পরে ওকে খুন করেছে ফেনিসের খুনিরা… সম্ভবত আমি ওর

পরিচয় জেনে ফেলেছি বলেই।

‘কাউন্ট বিয়াঞ্চির মত।

‘এগজ্যাক্টলি,’ একমত হলো কুয়াশা। ‘ওরা আসলে হর্তা-কর্তা ছিল না সংগঠনের। ব্রুনার ভাষ্যমতে, রাখাল বালকের নির্দেশে ছোট ছোট মিশন সম্পন্ন করাই ছিল ওদের দায়িত্ব।

‘তারমানে ওই রাখাল বালক-ই ফেনিসের মাথা, এই তো?’

‘হুম। তবে ব্রুনা মারা যাওয়ায় একদিক থেকে ভাল হয়েছে। ভরগেন ইণ্ডাস্ট্রিজ এখন নেতৃত্বশূন্য। কোম্পানিটার মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যেতে হলে নিজস্ব কাউকে ম্যানেজমেন্টের মাথায় বসাতে হবে ফেনিসকে। একটু অপেক্ষা করতে হবে আমাদেরকে। দেখা যাক, কে হাল ধরে ভরগেনের ‘

‘মনে হচ্ছে আমার মত একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন আপনি- বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর মাধ্যমে অপারেশন চালাচ্ছে ফেনিস সারা দুনিয়ায়।

ঠিক বলেছ। কিন্তু কীভাবে কী করতে চাইছে, তা-ই বুঝতে পারছি না। কাজ-কারবারের কোনও মাথামুণ্ডু নেই ওদের।’

‘আর কিছু?’

‘তোমাকে সতর্ক করে দেয়া দরকার- আমাদের ফাইল মাইক্রোস্কোপের তলায় রেখে স্টাডি করেছে ওরা। সমস্ত কন্ট্যাক্ট—শত্রু, মিত্র… কাছের, দূরের… সব ওদের জানা। অলরেডি লেনিনগ্রাদ আর এসেনে আমার তিনজন বন্ধুকে খুন করেছে ওরা। কারও সাহায্য নেবার আগে ব্যাপারটা মাথায় রেখো।’

‘ফাইলে যাদের নাম নেই, তাদেরকে ব্যবহার করব। তা ছাড়া… ফাইলে যত লোকের নাম আছে, তাদের সবাইকে কাভার দেয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।’

‘আমিও ও-কথা ভেবেছিলাম, সে-কারণে খুব ঘনিষ্ঠ তিনজনকে হারিয়েছি। সাবধানে থেকো। আর হ্যাঁ… উল্কির কথা বলেছিলাম আমার মেসেজে… মনে আছে?’

হুঁ। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না। একদল খুনি কেন নিজের গায়ে মোছার অযোগ্য চিহ্ন দিয়ে রাখবে?’

‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্য,’ বলল কুয়াশা। আরেকটা ব্যাপার বলা হয়নি তোমাকে ওরা সুইসাইডাল। প্রাণ থাকতে ধরা দেয় না, মুখের মধ্যে সায়ানাইড পিল নিয়ে ঘোরে। আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, যতটা বড় বলে দেখানোর চেষ্টা চলছে, আসলে তত বড় নয় ফেনিসের দলটা। একান্ত অনুগত সৈনিকের সংখ্যা বেশ কম… ওদেরকে পাঠানো হয় নির্বাচিত এলাকায়, সিরিয়াস ধরনের সমস্যা মোকাবেলার জন্য। সাধারণ কাজগুলো সারা হয় সেকেণ্ড বা থার্ড পার্টির ভাড়াটে লোক দিয়ে।

গম্ভীর হয়ে গেল রানা। ‘কীসের কথা বলছেন আপনি, বুঝতে পারছেন?’

‘অবশ্যই!’ বলল কুয়াশা। হাসাসিন–শেখ হাসান ইবনে আল-সাবাহ্ মধ্যযুগীয় খুনি গোত্র। মানবহত্যাকে ধর্ম হিসেবে নিয়েছিল ওরা, প্রাণ উৎসর্গ করত তার জন্য।

মধ্যযুগের ওই ধর্মের আধুনিকায়ন করল কীভাবে?’

‘আমার একটা থিয়োরি আছে এ-ব্যাপারে। দেখা হলে আলোচনা করা যাবে।’

‘দেখা হচ্ছে আমাদের? কখন?’

‘আগামীকাল রাতে… কিংবা পরশু সকালে। ছোট একটা বিমান ভাড়া করব। হিথ আর অ্যাশফোর্ডের মাঝখানে একটা প্রাইভেট এয়ারফিল্ড আছে, ল্যাণ্ড করব ওখানে। আগেও বেশ কয়েকবার এভাবে ঢুকেছি ইংল্যাণ্ডে। রাত একটার মধ্যে পৌঁছুতে পারব বলে আশা করছি। তুমি কোথায় উঠেছ?’

সাঙ্কেতিক ভাষায় ঠিকানা দিল রানা।

‘ঠিক আছে,’ বলল কুয়াশা। ‘খুব শীঘ্রি দেখা হবে আমাদের। সোনিয়ার সঙ্গে কথা বলবে?’

‘হ্যাঁ।’

.

ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস হেডকোয়ার্টার।

নিজের অফিসে বসে কাজ করছেন বিএসএস চিফ মারভিন লংফেলো, ইন্টারকম বেজে উঠল হঠাৎ করে। সামনে রাখা ফাইল থেকে দৃষ্টি সরালেন না তিনি, হাত বাড়িয়ে আলগোছে তুলে নিলেন রিসিভার। কানে ঠেকিয়ে বললেন, ‘ইয়েস?’

‘এক্সকিউজ মি, স্যর, ওপাশ থেকে সেক্রেটারির কণ্ঠ ভেসে এল। ‘বিরক্ত করতে মানা করেছিলেন আপনি, কিন্তু একটা জরুরি কল আছে…’

‘কে করেছে?’

‘নাম বলছে না। শুধু বলল, আপনাকে রাজহাঁস শিকারের কথা মনে করিয়ে দিতে। তা হলেই নাকি ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারবেন আপনি।’

চমকে উঠলেন মি. লংফেলো। রাজহাঁস শিকার… ওটা মাসুদ রানার কোড!

বিসিআই চিফ মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাহাত খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিনি। বয়েসের বিস্তর পার্থক্য থাকায়, ব্যক্তি হিসেবে প্রিয় বলেও, রানাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন মারভিন লংফেলো; তবে স্নেহ ছাড়াও ওর প্রতি তাঁর সমীহ ও শ্রদ্ধার ভাবও আছে, কারণ বিপদে-আপদে অতীতে বহুবার ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসকে সাহায্য করেছে রানা, এখনও করে। ওর সঙ্গে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন লংফেলো, তাই বিভিন্ন রকম কোড ঠিক করে রাখা হয়েছে।

‘ঠিক আছে, লাইন দাও।’

খুটখাট শব্দ হলো, কয়েক সেকেণ্ড পরেই শোনা গেল রানার পরিচিত কণ্ঠ। হ্যালো, স্যর। কেমন আছেন?’

‘একটু ধরো, বললেন লংফেলো। ‘আমি স্ক্র্যাম্বলার অন করছি।’ টেলিফোন সেটের গায়ে একটা বোতাম চাপলেন তিনি । চালু হয়ে গেল ভায়েক এনক্রিপশন আড়ি পাতলেও এখন আর ওঁদের কথা বুঝতে পারবে না কেউ। হ্যাঁ, এবার বলো।’

‘আমার মিশন সম্পর্কে কিছু জানেন আপনি?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘রাহাত কিছুটা আভাস দিয়েছে। তুমি এখন কোথায়? এসভেনর স্কয়্যার থেকে তোমার নামে একটা অ্যালার্ট জারি হয়েছে, সেটা জানো?’

‘আপনি জানেন?’ একটু অবাক হলো রানা। ‘আমেরিকান-রা সাহায্য চেয়েছে বিএসএস-এর?’

‘উঁহুঁ,’ নেতিবাচক জবাব দিলেন লংফেলো। ‘নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়েছি আমরা। ব্যাপারটা নিয়ে খোঁচাখুঁচি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমেরিকানরা মুখে তালা এঁটে রেখেছে।’

অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনের পরিণতির কথা মনে পড়ল রানার। বলল, ‘আপনি একটু সাবধানে থাকবেন, স্যর। আমার ধারণা, আপনার পিছনে লোক লাগানো হয়েছে।

‘কী যে বলো না!’ তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেল মি. লংফেলোর কণ্ঠে। ‘এখানে… লণ্ডনের মাটিতে বিএসএস চিফের পিছনে লোক লাগাবে? এত সাহস হবে না সিআইএ-র।’

‘আমেরিকানদের কথা বলছি না, বলল রানা। ‘আমার বসের কাছে নিশ্চয়ই শুনেছেন ফেনিস সম্পর্কে?

হ্যাঁ। কিন্তু কেন যেন বিশ্বাস হতে চায় না। একটা গুপ্তসংঘ এত শক্তিশালী হতে পারে না।’

‘প্লিজ, আণ্ডার-এস্টিমেট করবেন না ওদেরকে। সতর্ক না থাকায় অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন প্রায় খুন হয়ে যাচ্ছিলেন!’

‘আমি সবসময় সতর্ক-ই থাকি। এনিওয়ে, কী করতে পারি তোমার জন্য?’

‘আপনার সঙ্গে দেখা হওয়া দরকার আমার। গোপনে। অনেক কথা আছে… সাহায্যও দরকার। ফোনে এত কিছু বলা সম্ভব নয়।

‘কখন দেখা করতে চাও?’

‘পারলে এখুনি। তবে কাক-পক্ষীকেও টের পেতে দেয়া যাবে না।’

‘হুম!’ একটু ভাবলেন লংফেলো। ‘ঠিক আছে, ব্যবস্থা করছি সাক্ষাতের। তুমি এখন কোথায়?’

‘সোহো-তে। ওয়ার্ডোর আর শাফটস্বিউরি-র মোড়ে।’

‘গুড। টটেনহ্যাম কোর্টের দিকে এগোও। বিশ মিনিটের মধ্যে একটা খয়েরি রঙের মিনি-কার পৌঁছুবে ওখানে, অক্সফোর্ডের দিক থেকে আসবে। রাস্তার মোড়ে ইঞ্জিনে গোলমাল দেখা দেবে ওটার, থামবে কয়েক মিনিটের জন্য। নিগ্রো একজন ড্রাইভার থাকবে… ও-ই তোমার কন্ট্যাক্ট। ওর সঙ্গে উঠে যেরো পাড়িতে।’

‘লোকটা কতখানি বিশ্বস্ত?’

‘ষোলো আনা। আমার খাস লোক। ওকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না। জায়গামত নিয়ে আসবে তোমাকে।’

‘থ্যাঙ্ক ইউ, স্যর।’.

‘ডোন্ট মেনশন। তোমার অপেক্ষায় রইলাম আমি।’

.

ঠিক সময়ে এসে গেল গাড়ি। চারপাশ দেখে নেবার জন্য এক মিনিট দেরি করল রানা, তারপর দরজা খুলে উঠে বসল সামনের সিটে।

‘মি. রানা?’ নিশ্চিত হবার জন্য জিজ্ঞেস করল নিগ্রো ড্রাইভার। কুঁকুতে চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সে। একটা হাত দৃষ্টিসীমার আড়ালে, সম্ভবত পিস্তল ধরে রেখেছে।

‘হ্যাঁ।’ মাথার হ্যাট খুলে ফেলল রানা। চেহারা দেখতে দিল।

‘থ্যাঙ্ক ইউ,’ বলল ড্রাইভার। আড়াল থেকে স্টিয়ারিঙে উঠে এল হাত। ইঞ্জিন চালু করে গাড়ি আগে বাড়াল। টটেনহ্যাম কোর্ট থেকে বেরিয়ে এল __। এবার নিজের পরিচয় দিল সে। ‘আমার নাম আহাব।’

‘আহাব?’ ভুরু কোঁচকাল রানা।

‘ক্যাপ্টেন আহাবের নাম থেকে এসেছে… বাবা-মা মবিডিকের ভক্ত ছিলেন।’ হাসল নিগ্রো। ‘আপনি তো বিখ্যাত মাসুদ রানা!- পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।’

‘নাইস টু মিট ইউ টু, আহাব।’ রানাও হাসল।

সহজ হয়ে এল পরিবেশ। দক্ষিণদিকের পথ ধরে লণ্ডন থেকে বেরিয়ে এল মিনি। হিথরো এয়ারপোর্টের রাস্তায় এগোল কয়েক মাইল, তারপর বাঁক নিয়ে রেডহিলের রাস্তা ধরল — পশ্চিমের কান্ট্রিসাইডের দিকে যাচ্ছে। খুব একটা কথা বলল না আহাব, বোধহয় বুঝতে পেরেছে, গল্প করার মুডে নেই রানা। নীরবতা পাওয়ায় ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করতে পারল রানা। মারভিন-লংফেলোর সঙ্গে কী কথা বলবে, তা সাজিয়ে নিল মনে মনে।

‘আর একটু পরেই প্রথম ডেস্টিনেশনে পৌঁছে যাব আমরা, অনেকক্ষণ পর বলে উঠল আহাব।

‘প্রথম ডেস্টিনেশন?’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ফুটল রানার চোখে।

‘হ্যাঁ। দু’ভাগ করা হয়েছে আমাদের ট্রিপ। সামনে গিয়ে গাড়ি বদলাব আমরা। আমাদের মত চেহারা-সুরতের দু’জনকে রাখা হয়েছে ওখানে, মিনি নিয়ে লণ্ডনে ফিরে যাবে ওরা। আপনি আর আমি আরেকটা গাড়ি নিয়ে এগোব। পরের জার্নিটা মোটামুটি পঁয়তাল্লিশ মিনিটের। মি. লংফেলোর পৌঁছতে একটু দেরি হতে পারে। চারবার গাড়ি বদলাবেন উনি।’

বোঝা গেল, রানার ওয়ার্নিংকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন বিএসএস চিফ। তাঁকে পুরো ব্যাপারটা কতখানি খুলে বলবে, তা নিয়ে একটু দ্বিধায় ভুগছে রানা। না, ভদ্রলোকের সততা বা বিশ্বস্ততা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনও। কিন্তু তারপরেও ব্রিটেনের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থার কর্ণধারের কাছে সে-দেশেরই পররাষ্ট্র-সচিব সম্পর্কে অভিযোগ করতে গেলে নিরেট তথ্য-প্রমাণ দরকার। অথচ পঁচাত্তর বছরের পুরনো একটা তালিকায় লেখা : নাম ছাড়া নাইজেল উইটিংহ্যামের বিরুদ্ধে কিছুই নেই ওর থলেতে।

ব্রিটেনের ফরেন সেক্রেটারি কীভাবে সাহায্য করতে পারে। ফেনিসকে, এ-নিয়েও ভাবছে রানা। বড় বড় কর্পোরেশনের কাভার নিয়ে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস-কে ফাইনান্স করছে সংগঠনটা,, কিন্তু উইটিংহ্যামের তো সে-ধরনের কোনও ব্যবসা নেই। তবে এ-কথা, ঠিক, দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টাকা চালাচালি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং মুদ্রানীতির বড় একটা ভূমিকা থাকে। আর আমেরিকা-ব্রিটেনের মত পরাশক্তিগুলোর বৈদেশিক নীতি যে বাকি পৃথিবীকে প্রভাবিত করে, সে তো জানা কথা। উইটিংহ্যাম কি মুদ্রা পাচারের কাজে ফেনিসকে সাহায্য করছে কি না, সেটাই এখন দেখতে হবে।

গতি কমিয়ে রাস্তা থেকে গাড়ি নামিয়ে ফেলল আহ্লাব। ইউ-টার্ন নিয়ে মুখ ঘোরাল যে-দিক থেকে এসেছে সে-দিকে। ত্রিশ সেকেণ্ড পরেই রাস্তা ধরে বড় একটা বেন্টলি সেডান উদয় হলো। দরজা খুলে নেমে পড়ল আহাব, পিছু পিছু রানা। বেন্টলির ড্রাইভার আর আরোহীও নামল। হাতবদল হলো চাবি। নীরবে গাড়িও বদলাল ওরা। বেন্টলি নিয়ে আবার পশ্চিমদিকে রওনা হলো রানা

আর আহাব।

‘আপনাকে একটা প্রশ্ন করব? একটু পর ইতস্তত করে বলে উঠল আহাব।

‘করো।’

‘ট্রেইনিং নেয়া আছে আমার… কিন্তু আজ পর্যন্ত কাউকে খুন করিনি। ও-ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিলে জমে যাই কি না, এই ভয়ে আছি। আচ্ছা… অভিজ্ঞতাটা কেমন?’

জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল রানা। আহাবের প্রশ্ন ওকে টানাপড়েনের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যেন এমন এক জায়গায় ফিরে যেতে বলা হচ্ছে ওকে, যেখানে কষ্ট-বেদনা আর আত্মগ্লানি ছাড়া আর কিছুর অস্তিত্ব নেই।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও। বলল, ‘আসলে… বলবার মত কিছু নেই। একেবারে অনন্যোপায় না হলে কারও প্রাণ নেবে না তুমি। যখন নেবে, তখন মনে কোরো, ওই একটা প্রাণের বিনিময়ে অসংখ্য প্ৰাণ বাঁচাচ্ছ। এই একটা যুক্তি দেখিয়েই বুঝ দিতে হবে বিবেককে, তারপর স্মৃতিটা চাপা দিতে হবে মনের গভীরে। চেষ্টা করতে হবে ভুলে যেতে। যদি না ভোলো, বিবেকের দংশনে পাগল হয়ে যাবে তুমি।

গম্ভীর হয়ে গেল আহাব। ‘এর থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই, না?’

‘না। এখন পর্যন্ত অমন কিছু ঘটেনি তোমার ভাগ্যে, বেঁচে গেছ। প্রার্থনা কোরো, কোনোদিন যাতে কারও প্রাণ নিতে না হয়। সে বড় ভয়ানক এক অভিজ্ঞতা।’

‘আপনার নিশ্চয়ই সে-অভিজ্ঞতা বহুবার হয়েছে?

জবাব দিল না রানা। মন ভারী হয়ে গেছে। হ্যাঁ, ওর অভিজ্ঞতার ঝুলি পুরো হয়ে গেছে। মনের গভীরে এখন আর স্মৃতিগুলোকে চাপা দেবার জায়গা অবশিষ্ট নেই।

.

পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর গিল্ডফোর্ডের পিকনিক এরিয়ায় পৌঁছল বেন্টলি, ঢুকে পড়ল পরিত্যক্ত পার্কিং লটে। চাঁদের আলোর রেইল-ফেন্সের ওপাশে ভৌতিক অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি দোলনা, স্লাইড আর সি-সা। বসন্তের বেশি দেরি নেই, তখন এ-জায়গা ভরে উঠবে শিশুদের কলকাকলি, হাসি-আনন্দ আর খেলাধুলায়। নিয়মিত চলবে বনভোজন। তবে আজ রাতে ইঞ্জিনের চাপা গর্জন ছাড়া আর কোনও আওয়াজ নেই এখানে।

পার্কিং লটে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ওদের অপেক্ষায়, তবে মারভিন লংফেলো নেই ওর ভিতরে। আগেভাগে দু’জন এজেন্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি মিটিঙের আগে লোকেশন-সুইপ করবার জন্য। অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনের উপর কীভাবে হামলা করা হয়েছিল, সে-খবর নিশ্চয়ই পেয়েছেন বিএসএস চিফ, তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। অ্যারেঞ্জমেন্ট দেখে খুশি হলো রানা।

গাড়ি থেকে নামতেই বেঁটেখাটো একজন মানুষ হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এল। ‘হ্যালো, মি. রানা!’

‘হাই, কেমন আছ?’ হাত মেলাল রানা। চেহারা পরিচিত, বিএসএস হেডকোয়ার্টারে একে আগে দেখেছে ও, কিন্তু নাম মনে করতে পারল না।

‘বোধহয় তিন-চার বছর পর দেখা হলো আমাদের, তাই না?’ হাসল এজেন্ট। ‘শেষবার আপনাকে দেখেছিলাম তাসখন্দের জয়েন্ট অপারেশনে যাবার আগে। ব্রিফিং দিয়েছিলাম আপনাকে… মনে পড়ে।

‘হ্যাঁ, অ্যাশটন,’ নাম মনে পড়ে যাওয়ায় রানার মুখেও হাসি ফুটল। ‘এখন কী করছ?’

‘সাউদার্ন ইয়োরোপ ডেস্ক। খুবই নীরস কাজ।’

‘মি. লংফেলো কোথায়?’

‘এসে যাবেন শীঘ্রি। একটু অপেক্ষা করুন।’

মিনিটদশেক পরে দূরে হেডলাইটের আলো দেখা গেল। তার কিছুক্ষণ পরে একটা লণ্ডন-ট্যাক্সি ঢুকল পার্কিং লটে। ক্যাবচালকের আসনে বসে আছেন লংফেলো স্বয়ং! আর কেউ নেই গাড়িতে। বেন্টলির পাশে এসে থামল ট্যাক্সি, দরজা খুলে নেমে এলেন বিএসএস চিফ। হাত-পা ঝাড়া দিয়ে আড়ষ্টতা কাটালেন, তারপর এগিয়ে এলেন রানার দিকে

‘রানা! মাই বয়! কেমন আছ?’ হাত মেলালেন তিনি।

‘এত তাড়াতাড়ি দেখা করতে আসায় ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা জানাল রানা।

‘ভুলে যাও। তোমার জন্য এটুকু করা তো কিছুই না। কিন্তু… লণ্ডনের এই ট্যাক্সিগুলো চালানো সহজ কাজ নয়। স্টিয়ারিং আর ট্রান্সমিশন, দুটোই যেন জ্যাম হয়ে আছে। সিটও ভীষণ শক্ত। পিঠ ব্যথা হয়ে গেছে। হাসলেন লংফেলো। আগামীতে কখনও ট্যাক্সিতে চড়লে ড্রাইভারের বখশিশ বাড়িয়ে দিতে হবে। অনেক কষ্ট করে বেচারারা।’ ঘাড় ফিরিয়ে পার্কের এন্ট্রান্সের দিকে তাকালেন। ‘চলো হাঁটি। ভিতরে গিয়ে শুনব তোমার কথা!‘

পার্কে ঢুকে পাশাপাশি দুটো দোলনায় বসল ওরা। নিচু গলায় ফেনিস সম্পর্কে সব খুলে বলল রানা। এখন পর্যন্ত যা যা জানতে পেরেছে… আর আগামীতে যেসব তথ্য ভেরিফাই করে নিতে চায়। পররাষ্ট্র-সচিব নাইজেল উইটিংহ্যাম সম্পর্কে বলবার আগে একটু ইতস্তত করল, তবে দ্বিধা ঝেড়ে ফেলল খানিক পর।

ওর কথা শেষ হবার পর কিছুটা সময় চুপ করে রইলেন মারভিন লংফেলো। বোধহয় হজম করে নিতে চাইছেন এতসব তথ্য। একটু পর বললেন, ‘ইট’স্ আনবিলিভেবল, রানা। আর কেউ বললে হয়তো বিশ্বাসই করতাম না। কিন্তু তারপরেও…’

‘কোথায় খটকা লাগছে আপনার, সার?’ জিজ্ঞেস করল রানা। আমাদের ফরেন সেক্রেটারির ব্যাপারটা। নাইজেল উইটিংহ্যামকে আমি খুব ভাল করে চিনি। ধোয়া তুলসীপাতা বলব না… তাই বলে ফেনিসের মত একটা সংগঠনের সদস্য বলে মনে হয় না।’

‘ওটাই ওদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, মি. লংফেলো। এমন সব লোকের মাধ্যমে স্বার্থ হাসিল করছে, যাদেরকে সন্দেহ করবার কোনও অবকাশ নেই।’

‘হুম! তুমি যদি চাও, আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পারি…’

‘না,’ বাধা দিয়ে বলল রানা। ‘আপনার কাছ থেকে অন্যরকম সাহায্য চাই আমি। নাইজেল উইটিংহ্যামের সঙ্গে একটা আনঅফিশিয়াল মিটিঙের ব্যবস্থা করে দিন আমার।’

ভুরু কোঁচকালেন লংফেলো। সরাসরি কনফ্রন্টেশনে যাবে? ইটালিতে কিন্তু লাভ হয়নি। মার্সেলো বিয়াঞ্চি খুন হয়ে গেছে। ওর কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারোনি তুমি।

‘এ-ছাড়া আর কোনও উপায়ও তো নেই। গোপনে খোঁজখবর নিতে অনেক সময় লাগবে। অত সময় নেই আমার হাতে। আমার আর কুয়াশার পিছনে খুনি লেলিয়ে দিয়েছে ওরা। কতক্ষণ ওদেরকে ফাঁকি দিয়ে টিকে থাকতে পারব, জানি না।’

‘তারপরেও তোমার এই ট্যাকটিক্স পছন্দ হচ্ছে না আমার, ‘ অস্বস্তিভরে বললেন লংফেলো। ‘কী করতে চাইছ, রাহাত তা জানে?’ বিসিআই চিফ মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাহাত খানের কথা জিজ্ঞেস করছেন তিনি।

‘গতকাল কথা বলেছি আমি বসের সঙ্গে,’ জানাল রানা।

‘এ-কথা বোলো না যে, গ্রেট ব্রিটেনের ফরেন সেক্রেটারির সামনে গিয়ে অভিযোগের আঙুল তোলার অনুমতি দিয়েছে তোমাকে রাহাত।’

‘উনি শুধু বুঝে-শুনে এগোতে বলেছেন।’

‘এ-ই বুঝি তোমার বুঝে-শুনে এগোনো? অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করব আমি … গোলমাল দেখা দিলে ফেঁসে যাব না?’

‘আপনাকে বিপদে ফেলবার কোনও ইচ্ছে নেই আমার, স্যর, ‘ আন্তরিক কণ্ঠে বলল রানা। ‘নিশ্চিন্ত থাকুন, ওখানে আমি যা-ই বলি না কেন, সেটা আমার আর ফরেন সেক্রেটারির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে… ফেনিসের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকুক বা না-ই থাকুক। আফটার অল, বুদ্ধিমান কোনও রাজনীতিক তার পূর্বপুরুষের সঙ্গে একটা গুপ্তসংঘের কানেকশনের খবর বা গুজব… কোনোটাই প্রচার হবার ঝুঁকি নেবে না। তাতে পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাৰে ভদ্রলোকের।’

‘ব্ল্যাকমেইল করবে ওঁকে?’ আঁতকে উঠলেন লংফেলো। মাই গড!’

‘আমি শুধু ফেনিসের মাথাটার খোঁজ জানতে চাইব তাঁর কাছে।

‘দিস ইজ ম্যাডনেস!’ ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলেন লংফেলো। ‘তুমি স্রেফ পাগলামি করছ, রানা। এভাবে কিছুই জানতে পারবে না উইটিংহ্যামের কাছ থেকে।

‘দেখাই যাক,’ বলল রানা। ‘আপনি মিটিঙের ব্যবস্থা করতে পারবেন কি না বলুন। নইলে আমার কাজ আরও কঠিন হয়ে যাবে।’

কয়েক মুহূর্ত ওর মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন বিএসএস চিহ্ন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ঠিক আছে, করব আমি সাহায্য। তবে শুধুই তোমার অনুরোধের কারণে। আমি এখনও বলব, ভুল কৌশল বেছেছ তুমি।’

‘আর কোনও বিকল্প থাকলে বলতে পারেন।

‘বলেছি তো, উইটিংহ্যামের ব্যাপারে তদন্ত করবার সুযোগ দাও আমাকে।’

‘না, স্যর। আপনার নিরাপত্তার জন্যই সেটা উচিত হবে না। খোঁজখবর নেয়া শুরু করতেই মৃত্যু-পরোয়ানা জারি হয়ে যাবে আপনার নামে… ঠিক অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনের মত। আমি সে-ঝুঁকি নিতে পারি না।

‘বিএসএস চিফকে খুন করা এত সহজ নয়।

কথাটা প্রফেশনালদের ব্যাপারে খাটে না,’ থমথমে গলায় বলল রানা। প্লিজ, স্যর, আমাকে আমার মত কাজ করতে দিন এমনিতেই আপনাকে সতর্ক হবার অনুরোধ করছি আমি, দয়া করে বিপদ বাড়াবেন না।’

হাল ছেড়ে দিলেন মারভিন লংফেলো। আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দু’হাত তুলে বললেন, ‘বেশ, তোমার যা ইচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *