নয়
কেবিনটা মেরিল্যাণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকায়, পাটুক্সেন্ট নদীর ধারে। তিনদিকে জংলা, অন্যদিকে পানি—একেবারে বিচ্ছিন্ন একটা জায়গা। আশপাশের দু-চার মাইলের ভিতর আর কোনও ঘরবাড়ি নেই। পুরনো আমলের একটা ভাঙাচোরা কাঁচা রাস্তা দিয়ে কেবল পৌঁছুনো যায় ওখানে।
সেফ-হাউস হিসেবে রানা ব্যবহার করে এই কেবিন। কাগজে-কলমে জায়গাটার মালিক রসায়নের এক প্রফেসর। প্রবাসী বাংলাদেশি তিনি, জর্জটাউনের ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন, জীবনে কোনোদিন এখানে পা রাখেননি। বেলা তিনটায় ওখানে পৌঁছুল রানা আর কুয়াশা। সঙ্গের পুরনো আমলের টয়োটা সেডান গাড়িটা লুকিয়ে ফেলল ঝোপঝাড়ের ভিতর, ঢেকে ফেলল গাছের ডাল আর পাতা দিয়ে। তারপর পা রাখল কেবিনে।
ভিতরটা সুন্দরভাবে সাজানো। কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি ভারী বিম আর পুরু দেয়ালের সঙ্গে মানানসই ফার্নিচার শোভা পাচ্ছে ঘর জুড়ে। সামনের কামরায় সোফা আর ইজিচেয়ার মুখ করে রাখা হয়েছে পুরনো আমলের পাথুরে ফায়ারপ্লেসের দিকে, জানালায় ঝুলছে গ্রামীণ চেকের পর্দা। একপাশের দেয়াল ঢাকা পড়ে গেছে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উঁচু বুকশেলফের আড়ালে–প্রতিটা তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা ধরনের বিষয়বস্তুর উপর অসংখ্য বই।
‘চমৎকার!’ কেবিনের উপর নজর বুলিয়ে মন্তব্য করল কুয়াশা।
‘ম্যান্টেলের উপর দেশলাই পাবেন, दলল রানা। ‘ফায়ারপ্লেসে লাকড়িও আছে। আগুন জ্বেলে ফেলুন। আমি খাবার-দাবারের ব্যবস্থা দেখছি।’
‘বাহ্, সব দেখছি রেডি!’
‘এটাই এ-কেবিনে থাকার একমাত্র নিয়ম। যাবার সময় ফায়ারপ্লেস পরিষ্কার করে নতুন লাকড়ি রেখে যেতে হবে।’
দেশলাই নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল কুয়াশা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধরিয়ে ফেলল আগুন। মৃদু তাপ ছড়াতে শুরু করল ফায়ারপ্লেস। ঊরুর ক্ষত থেকে রক্তপাত বন্ধ হয়েছে, আড়ষ্ট হয়ে আছে জায়গাটা, কিন্তু হাঁটতে পারছে এখন রানা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে গেল কিচেনে। খাবারের কেবিনেট আর ফ্রিজ খুলে দেখল—কয়েকদিন চলবার মত শুকনো খাবারের অভাব নেই। সন্তুষ্ট হয়ে স্টোভ জ্বালল। তাতে চড়িয়ে দিল পানি। তারপর ফিরে এল বলার ঘরে।
কুয়াশা একটা ইজিচেয়ার নিয়ে বসে পড়েছে ফায়ারপ্লেসের সামনে। ঘরে একটা গ্যাসচালিত হিটার আছে, পুরো কেবিনকে তাপ জোগায়—ওটা চালু করল রানা, তারপর এগিয়ে গেল কুয়াশার দিকে।
‘এখন আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারব না আমি,’ বলল রানা। ‘শরীরে শক্তি পাচ্ছি না একদম। বিশ্রাম প্রয়োজন। ঘুম থেকে উঠে নাহয় বসা যাবে একসঙ্গে। কী বলেন?’
‘আমার কোনও আপত্তি নেই,’ বলল কুয়াশা। ‘কিন্তু তোমার পায়ের চিকিৎসা দরকার।
‘ফার্স্ট এইড কিট আছে এখানে। পানিও গরম দিয়েছি। ক্ষতটা পরিষ্কার করে মলম-ব্যাণ্ডেজ লাগিয়ে নেব।’
‘আমি সাহায্য করব?’
‘দরকার নেই। নিজেই পারব। আপনি বিশ্রাম নিন। কিছু মনে করবেন না, আমি বেডরুমটা নিচ্ছি, আপনাকে সোফায় শুতে হবে।’ আঙুল তুলে একটা আলমারি দেখাল রানা। ‘ওর ভিতর বালিশ-কম্বল পাবেন। খিদে পেলে কিচেনে শুকনো খাবার আছে।’
‘আমাকে নিয়ে ‘ভেবো না,’ বলল কুয়াশা। ‘তুমি যাও।’
‘ঘুম থেকে উঠে আপনাকে পাবো তো এখানে?’ সন্দিহান গলায় বলল রানা।
হাসল কুয়াশা। তেমন কোনও ইচ্ছে থাকলে তোমার সঙ্গে এত ঝামেলা করে দেখা করতে আসতাম?’
‘তা অবশ্য ঠিক,’ স্বীকার করল রানা। ‘ঠিক আছে। কয়েক ঘণ্টা পর দেখা হবে আবার!’
গরম পানি নিয়ে বেডরুমে ঢুকল রানা। মেডিসিন কেবিনেট থেকে বের করে আনল ফার্স্ট এইড কিট। তোয়ালে ভিজিয়ে পরিষ্কার করল পা আর কাঁধের ক্ষত। ডিজইনফ্যাকটেন্ট মাখাল, তারপর পরিষ্কার ব্যাণ্ডেজ বাঁধল দু’জায়গায়। এটুকুতেই ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়ার জোগাড়। ঢাকায় ফোন করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেটা আর হলো না। শুয়ে পড়ল ও। তলিয়ে গেল অতল ঘুমে।
.
মৃদু চড় চড় শব্দে ঘুম ভেঙে গেল রানার। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আর ইন্সটিঙ্কটের বশে সতর্ক হয়ে গেল মুহূর্তে। বালিশের তলায় গোঁজা সিগ-সাওয়ারটা চলে এসেছে হাতে, আলতোভাবে একটা পা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিছানার বাইরে। গোলমালের আভাস দেখলেই গড়ান দিয়ে মেঝেতে নেমে যাবার জন্য প্রস্তুত।
কিন্তু ও ছাড়া আর কেউ নেই কামরায়। উত্তরপাশের জানালা গলে চাঁদের আলো ঢুকছে ভিতরে, সাদাটে একটা আভায় মানভাবে আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ। অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ। ক্ষণিকের জন্য মনে পড়ল না কোথায় আছে, গভীর ঘুম থেকে জাগলে এমনটা হয় মানুষের। মেঝেতে পা ঠেকানোর সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য ফিরে এল সব স্মৃতি বিছানার কিনারে পা ঝুলিয়ে উঠে বসল ও।
হাতঘড়ির লিউমিনাস ডায়ালে চোখ বোলাল রানা। ভোর সোয়া চারটে বাজে। প্রায় তেরো ঘণ্টা ঘুমিয়েছে ও। ক্লান্তি তো কমেইনি, মনে হচ্ছে যেন বেড়ে গেছে আরও। ঘাড় আর পায়ের আড়ষ্টতাও কমেনি। গলা শুকিয়ে খসখসে হয়ে আছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল ও, স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছে। ঘর ভীষণ ঠাণ্ডা হয়ে আছে, হিটার কাজ করছে না বোধহয়। পিস্তল নামিয়ে রেখে দু’হাতের তালু ঘষল, ম্যাসাজ করল শরীরের এখানে-ওখানে। তারপর উঠে দাঁড়াল।
দরজা খুলে কেবিনের সামনের কামরায় উঁকি দিল রানা। কুয়াশা জেগেছে, আধশোয়া হয়ে আছে ফায়ারপ্লেসের সামনে ইজিচেয়ারে, হাতে ধূমায়িত মগ, মাঝে মাঝে চুমুক দিচ্ছে তাতে। চড় চড় শব্দটা আসছে ফায়ারপ্লেস থেকে। নতুন লাকড়ি চড়িয়েছে কুয়াশা। আগুনের তাপে শব্দ করে ফাটছে ভেজা কাঠ।
‘গুড মর্নিং!’ বেডরুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল রানা।
অভ্যাসবশত কোলে রাখা পিস্তলের দিকে হাত চলে যাচ্ছিল কুয়াশার, মাঝপথে থামাল নিজেকে। ঘাড় ফিরিয়ে হাসল। ‘গুড মর্নিং, রানা। ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছি নাকি?’ ইজিচেয়ারে সোজা হয়ে বসল ও।
‘আপনি ভাঙাননি, ভাঙিয়েছে ঠাণ্ডা। ব্যাপার কী? হিটারটা বন্ধ হয়ে গেছে?’
হুঁ। গ্যাস বোধহয় শেষ। বাধ্য হয়ে নতুন লাকড়ি চড়াতে হয়েছে ফায়ারপ্লেসে।’
‘ঘুমাননি?’
‘ঘুমিয়েছি, তবে তোমার মত না। বাইরে একটা চোখ রাখতে হয়েছে সারাক্ষণ।’
‘দরকার ছিল না। এই কেবিন পর্যন্ত আমাদেরকে ট্র্যাক করা খুব কঠিন।’
‘তাও… কখন কী ঘটে যায়, তা তো বলা যায় না। যারা আমাদের পিছনে লেগেছে, তাদেরকে ছোট করে দেখার উপায় নেই।’
‘শুনব সবই, তার আগে একটু শরীর গরম করা দরকার আপনার হাতে কফি নাকি?’
‘হুঁ। কিচেনে পানি গরম করে রেখেছি। বানাতে পারবে, নাকি আমি বানিয়ে আনব?’
‘না, না। আমিই পারব।’
কিচেনে চলে গেল রানা। কফি নিয়ে ফিরে এল একটু পর কুয়াশার মুখোমুখি সোফায় বসে বলল, ‘আপনার ব্যাপারে একটা খটকা আছে আমার, কুয়াশা। সামান্য খোঁড়ানো ছাড়া বলতে গেলে একেবারে স্বাভাবিকভাবেই চলতে-ফিরতে দেখছি আপনাকে। অথচ ফাইল বলে, একটা পা নেই আপনার… লিমপোপো নদীতে কুমিরের আক্রমণে নাকি হারিয়েছেন ওটা।’
‘ভুল নয় কথাটা’, কুয়াশা বলল ‘প্লাস্টিকের তৈরি নকল পা ব্যবহার করি আমি।’
‘নকল পা দিয়ে স্বাভাবিক হাঁটাচলা বা দৌড়ানো যায় না বলে ধারণা ছিল আমার।’
‘এই পা আমার নিজের আবিষ্কার। দুনিয়ার সবচেয়ে উন্নত আর্টিফিশিয়াল লিম্ব। অল্প সময়ের জন্য এই পা দিয়ে একেবারে স্বাভাবিক চলাফেরা করা যায়, দৌড়ঝাঁপও করা যায়। ছড়িও একটা রাখি সঙ্গে, ওটা প্রয়োজন হয় দীর্ঘ সময় পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে, কিংবা হাঁটতে হলে। ওটা মাঝে মাঝে ডাইভারশন হিসেবেও কাজ করে। পঙ্গু লোককে সহজে সন্দেহ করে না কেউ।’
‘এ তো খুব ভাল আবিষ্কার! পঙ্গু মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। সারা দুনিয়ার সঙ্গে শেয়ার করছেন না কেন?’
‘কারণ আর্টিফিশিয়াল লিম্বের ম্যানুফ্যাচারার, বা মেডিক্যাল কোম্পানিগুলো আমার মত ক্রিমিনালের সঙ্গে কোনও ধরনের সংস্পর্শ রাখতে রাজি নয়। টেকনোলজি নেবার মত চুক্তি করা তো অনেক পরের কথা।
‘হুম! এনিওয়ে, আপনার যদি আপত্তি না থাকে, এবার আমরা কাজের কথা বলতে পারি, কুয়াশা।’
‘আপনি ডাকাটা বাদ দেয়া যায় না?’ বলল কুয়াশা। ‘তুমি করে ডাকলে আমি খুব খুশি হবো, রানা।’
‘দুঃখিত,’ শান্ত গলায় বলল রানা। ‘বয়সে আপনি আমার চেয়ে বড়, তা ছাড়া এক ধরনের সমীহও আছে আমার আপনার প্ৰতি।’
‘সমীহ নয়, আমি তোমার বন্ধুত্ব চাই, রানা।’
‘বন্ধু হবার মত কিছু ঘটেনি এখনও। যতকিছু হোক, আপনি একজন অপরাধী, কুয়াশা। অপরাধীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ব্যাপারে আমার অনীহা আছে। আপনার মধ্যে ভাল গুণ যেটুকু আছে, তা আমার সমীহ পাবার উপযুক্ত। কিন্তু বন্ধু হতে চাইলে আপনাকে অপরাধের রাস্তা থেকে সরে আসতে হবে।‘
‘ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞার বিষয়ে তোমার-আমার ভিতরে দ্বিমত আছে। মন্দ লোকের জীবন, কিংবা তাদের সম্পদ লুটেপুটে নেয়াকে অন্যায় মনে করি না আমি।’
‘ওদেরকে শাস্তি দেবার জন্য আইন আছে… আদালত আছে।’
‘আমরা কি এসব নিয়েই তর্ক করব এখন? এরচেয়ে অনেক সিরিয়াস একটা সমস্যা নিয়ে আমি তোমার কাছে এসেছি, রানা।
‘হ্যাঁ, ও-বিষয়েই কথা বলব,’ বলল রানা। সিগ-সাওয়ার তুলে তাক করল কুয়াশার দিকে। ‘তবে তার আগে আপনার পিস্তলটা আমাকে দিয়ে দিন।’
‘মানে?’ ভুরু কোঁচকাল কুয়াশা।
‘আপনাকে আমি বিশ্বাস করি না। সব কথা শোনার পর যে সাহায্য করব, এমন কোনও আশ্বাসও দিচ্ছি না। তাই পালাবার চেষ্টা করতে পারেন। এ-অবস্থায় আপনাকে আমি কোনও অস্ত্র রাখতে দিতে পারি না!’
‘ধ্যাত্তেরি! তুমি এখনও ওই নিয়েই আছ?’
শান্ত রইল রানা। ‘পিস্তলটা, কুয়াশা। তার আগে আমার কাছ থেকে কোনও রকম সহযোগিতা পাবেন না।
মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক একটা শব্দ করল কুয়াশা। বুঝতে পারছে, টলানো যাবে না রানাকে। কী আর করা, কাঁধ ঝাঁকিয়ে পিস্তলটা বাড়িয়ে ধরল। ওটা নিয়ে কোমরে গুঁজে রাখল রানা। নিজেরটাও নামিয়ে রাখল কোলের উপর।
এবার আপনার কথা শুরু করতে পারেন,’ বলল ও।
‘এসবের প্রয়োজন ছিল না,’ অসন্তুষ্ট শোনাল কুয়াশার কণ্ঠ।
‘আমার মতে… ছিল। যা হোক, কী বলতে চান বলুন। নাকি রাগ করে মুখে তালা আঁটবেন?’
কয়েক মুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে রানাকে দেখল কুয়াশা। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেলান দিল চেয়ারে। জিজ্ঞেস করল, ‘ ফেনিস নামে কোনও সংগঠনের নাম শুনেছ তুমি?’
একটু ভেবে নিল রানা। বলল, ‘অনেক পুরনো একটা গুপ্তসংঘ, তাই না? ভাড়াটে খুনির দল, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের এক্সপার্ট—কর্সিকার একটা কাউন্সিল ওদেরকে নিয়ন্ত্রণ করত। পঞ্চাশের দশকে সংঘটা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে শুনেছি। হঠাৎ ওদের কথা কেন?’
‘সংঘটা বিলুপ্ত হয়নি, রানা। গা-ঢাকা দিয়েছিল আসলে। ইদানীংকালে আবার ফিরে এসেছে… এবার আগের চেয়েও কয়েকগুণ ভয়ঙ্কর হয়ে। পৃথিবীর বড় বড় সমস্ত দেশের সরকারে লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে ওরা। নিয়ন্ত্রণ করছে টেরোরিস্ট আর অপরাধীদেরকেও। একটা কিছু উদ্দেশ্য আছে ওদের, সেটা পরিষ্কার নয় এখনও। আমেরিকার জয়েন্ট চিফ অভ স্টাফ, আর রাশার টপ নিউক্লিয়ার ফিযিসিস্ট খুন হয়েছে কিছুদিন আগে… দুটোই ওদের কীর্তি।’
কফির মগের উপর দিয়ে কৌতূহলী দৃষ্টিতে কুয়াশার দিকে তাকাল রানা। বলল, ‘আমার কানে এসেছে, ড. ইভানোভিচকে আপনি খুন করেছেন। ‘
‘মিথ্যে কথা,’ দৃঢ়কণ্ঠে প্রতিবাদ করল কুয়াশা। ‘ সব ফেনিসের চালাকি। ওরাই আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে চেষ্টা করছে।
‘ফেনিসের খবর আপনি জেনেছেন কীভাবে?’ ও জিজ্ঞেস করল। ‘বিশ্বাসই বা করছেন কেন?
‘যে-লোক আমাকে এসব বলেছে, তাকে অবিশ্বাস করবার কোনও কারণ নেই তা ছাড়া আমাকে সবকিছু খুলে বলার পরপরই তাকে খুন করা হয়েছে। কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি আমি।
‘কে এই লোক?’
‘লিও ভাদিম। কেজিবি-র প্রাক্তন ইনফরমেশন গ্যাদারার।’
কপালে ভাঁজ পড়ল রানার। ভাদিমের ব্যাপারে জানা আছে ওর। ‘কর্নেল ভাদিম আপনাকে ফেনিসের ব্যাপারে বলেছে?’
‘হ্যাঁ। বেসিক্যালি, ও নিজেও সংঘটার সদস্য ছিল। কাম অন, রানা। ভাল করে ভেবে দেখো, ড. ইভানোভিচকে কেন খুন করব আমি? তিনি আমার গুরু ছিলেন, বাবার মত সম্মান করতাম তাঁকে। আমি বরং তাঁর খুনির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। সেটা পছন্দ হয়নি ফেনিসের। আমাকে মিথ্যে অভিযোগ ফাঁসিয়ে দিয়েছে, খুন করবার চেষ্টা করেছে। এরা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, রানা। নিজেদের অস্তিত্ব লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি রকমের সতর্ক। কাউকে থ্রেট মনে হলেই সরিয়ে দিচ্ছে দুনিয়া থেকে। গতকাল ওরাই তোমাকে খুন করবার জন্য হিট-টিম পাঠিয়েছিল । কারণ ওরা জানত, আমি তোমার সাহায্য নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
খবরটা হজম করার জন্য একটু সময় নিল রানা। কেন যেন অবিশ্বাস করতে পারছে না ও কুয়াশার কথা। একটু পর জিজ্ঞেস করল, ‘ঠিক কী বলেছে আপনাকে লিও ভাদিম?’
সংক্ষেপে মস্কোর সেই সন্ধ্যার কথা খুলে বলল কুয়াশা। শেষে যোগ করল, ‘বুঝতেই পারছ, ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস।
‘অভিযোগ গুরুতর, তাতে সন্দেহ নেই,’ মাথা ঝোঁকাল রানা। ‘কিন্তু প্রমাণ কোথায়? বিভিন্ন দেশের সরকারে ফেনিসের লোক বসে আছে বলছেন, কিন্তু এসব কথা তো অতীতে বহুবার… বহু সংগঠনের ব্যাপারে শোনা গেছে। কখনোই খুব বেশি সত্যতা পাওয়া যায়নি।’
‘অন্তত ফেনিসের ব্যাপারে সত্যতা পাওয়া যাবেও না। কেউ মুখ খোলার চেষ্টা করলেই তাকে সরিয়ে দিচ্ছে ওরা। জেনারেল ওয়ার্নার আর ড. ইভানোভিচ তার উজ্জ্বল প্রমাণ।’
‘একটা ব্যাপার আমার মাথায় ঢুকছে না—সরকারকে নাহয় জায়গামত লোক বসিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, টেরোরিস্টদেরকে কীভাবে করছে? এ-কথা বলবেন না যে, দুনিয়ার সমস্ত সন্ত্রাসীদেরকে ওরা সৃষ্টি করেছে।’
‘তা বলছি না। তবে নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করা হচ্ছে, তা আন্দাজ করতে পারি। টাকা… টাকা দিচ্ছে ওরা সবাইকে। টেরোরিস্টরা টাকার উৎস নিয়ে কখনও মাথা ঘামায় না, পেলেই খুশি। বিনিময়ে জোগানদাতার কথাও শুনবে।’
‘কিন্তু দুনিয়াজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে কী লাভ হচ্ছে ওদের?’
‘আমার কোনও ধারণা নেই। ভাদিমও বলতে পারেনি। ও শুধু বলেছে, কর্সিকায় গেলে এর জবাব মিলতে পারে।’
‘কর্সিকা? কেন?’
‘ওখানে জন্ম হয়েছিল ফেনিসের…’
‘হয়তো,’ বাধা দিয়ে বলল রানা। ‘কিন্তু আমি যদ্দূর জানি, চল্লিশের দশকে ছড়িয়ে পড়েছিল ওরা। টাকার বিনিময়ে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটাত; কন্ট্রাক্ট নিত লণ্ডন, নিউ ইয়র্ক, কিংবা বার্লিন থেকে—আন্তর্জাতিক ট্রাফিকের কেন্দ্রবিন্দু ওসব জায়গা। এখনও কর্সিকায় ওদের ঘাঁটি আছে বলে মনে হয় না আমার।’
‘তারপরেও ওখানে কোনও না কোনও সূত্র থাকতে বাধ্য। কর্সিকার এক কাউন্ট… গিলবার্তো বারেমির হাতে জন্ম হয়েছিল সংঘটার। আজ পর্যন্ত এই একটা নামই নিশ্চিতভাবে জড়ানো গেছে ফেনিসের সঙ্গে ওর সঙ্গী কারা ছিল? কোথায় গেছে ওরা? এসব কর্সিকায় গেলে জানা সম্ভব।‘
‘এ-কাজের জন্যই সাহায্য চাইছেন আমার?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘ফেনিসের ব্যাপারে তদন্ত করতে? ওদেরকে ঠেকাতে?’
‘হ্যাঁ।’ মাথা ঝাঁকাল কুয়াশা।
‘কেন সাহায্য করব আপনাকে, সেটা বলতে পারেন?’ বাঁকা সুরে বলল রানা। ‘যা-ই ঘটাক ফেনিস, যত ষড়যন্ত্র-ই আঁটুক, আপনাকে… কিংবা আর যাকেই ফাঁসাক, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা কীসের?’
‘মাথাব্যথাটা নিজের জন্যই হওয়া উচিত, রানা,’ গম্ভীর গলায় বলল কুয়াশা। ‘ওদের হিটলিস্টে এখন তোমার নামও উঠে গেছে। যতক্ষণ না ওদেরকে ধ্বংস করতে পারছ, ততক্ষণ কিছুতেই তোমার পিছু ছাড়বে না ফেনিস। কিন্তু না, এ-যুক্তি দেখিয়ে তোমাকে দলে টানতে চাই না আমি। আমি যুক্তি দেখাব মানবতার… ন্যায়ের। পুরো দুনিয়ার জন্য ফেনিস একটা অভিশাপ, রানা। তুমি-আমি ছাড়া ওদের বিপক্ষে দাঁড়াবার মত কেউ আর বেঁচে নেই এ-মুহূর্তে।’
‘সারা দুনিয়ার জন্য লড়বেন আপনি? বিশ্বাস করি না।’
‘কেন? আমি অমন লোক নই? বৃহত্তর স্বার্থে কিছু করতে পারি না আমি? আগে কখনও করিনি? নাকি সেসবের রেকর্ড নেই বিসিআইয়ের ফাইলে? হ্যাঁ, ব্যক্তিগত একটা স্বার্থ আছে আমার—ড. ইভানোভিচের খুনিদেরকে শাস্তি দিতে চাই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাকি পৃথিবীর ব্যাপারে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই।‘
কুয়াশার কণ্ঠের গভীরতা স্পর্শ করল রানাকে। বুঝতে পারল, বাগাড়ম্বর নয়, সত্যিই আন্তরিক মানুষটা। নীরব হয়ে গেল একটু ভেবে নিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে, আপনার কথা বিশ্বাস করলাম আমি। কিন্তু সাহায্য করব কি না, সে-ব্যাপারে এখুনি কিছু বলতে পারছি না। আগে বিসিআই হেডকোয়ার্টারে কথা বলতে হবে আমাকে।’
‘জানি,’ কুয়াশা বলল। ‘ফেনিসের বিরুদ্ধে কাজ করতে হলে বিসিআই-এর সাহায্য এবং অনুমতি… দুটোই প্রয়োজন হবে তোমার। ওরা আমাদের পিছনে থাকলে সুবিধেও পাওয়া যাবে হয়তো। সেজন্যেই সরাসরি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না করে মেসেজ পাঠিয়েছিলাম ওখানে।’
‘একটু অপেক্ষা করুন,’ বলে উঠে দাঁড়াল রানা। ‘প্লিজ, কোনও চালাকি নয়, আমার চোখ থাকবে আপনার উপর। পায়ে তপায়ে পিছিয়ে রুমের একপ্রান্তে চলে গেল ও, কুয়াশার শ্রবণসীমার বাইরে। পকেট থেকে বের করে আনল নিজের সেলফোন। ডায়াল করল বিসিআই চিফের প্রাইভেট নাম্বারে। স্ক্র্যাম্বলড লাইন ওটা, কারও পক্ষে আড়ি পাতা সম্ভব নয়।
একবার মাত্র রিং হলো, তারপরেই শোনা গেল গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর। ‘ইয়েস?’
দিব্যচোখে রানা দেখতে পেল, প্রায়ান্ধকার রুমটায় বসে আছেন মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাহাত খান, চুরুটের ধোঁয়ায় ভরে আছে ঘরটা। কাঁচাপাকা ভুরুর নীচে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিটা এত দূর থেকেও যেন অনুভব করতে পারছে ও। পুরোটাই কল্পনা, তারপরেও বুকটা কেন যেন ঢিব ঢিব করতে থাকল। কোনোরকমে নার্ভাসনেসটা কাটিয়ে বলল, ‘রানা, স্যর। সুসংবাদ আছে, কুয়াশা এখন আমার কবজায়।’
‘ফরগেট কুয়াশা,’ বললেন রাহাত খান, সিরিয়াস শোনাচ্ছে তাঁর গলা। কী ঘটেছে ওখানে, বলো তো? আমেরিকানরা এভাবে খেপে উঠেছে কেন?
‘খেপে উঠেছে?’ দ্বিধান্বিত গলায় বলল রানা।
‘হ্যাঁ। তোমার নামে হুলিয়া জারি করেছে এফবিআই। পুরস্কার ঘোষণা করেছে গ্রেফতার করবার জন্য।’
‘কী! কেন?’
‘বিশ্বাস করবে কি না জানি না, তিক্ত গলায় বললেন রাহাত খান, ‘জেনারেল গ্রেগরি ওয়ার্নারকে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে তোমার বিরুদ্ধে!’
‘জয়েন্ট চিফ অভ স্টাফকে?’ চমকে উঠল রানা। এতক্ষণে বুঝতে পারল কুয়াশার কথার গুরুত্ব… পেল ফেনিসের ক্ষমতার প্রমাণ। ‘এ-সব মিথ্যে, স্যর!’
‘তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কথা হলো, কেন ফাঁসাচ্ছে তোমাকে? কার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছ তুমি?’
‘কুয়াশা যে-ব্যাপারে আমার সাহায্য চাইছে, তার সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে, স্যর।’ ফেনিসের বিষয়ে সবকিছু খুলে বলল রানা।
‘হুম!’ রানা কথা শেষ হলে বললেন রাহাত খান। ‘ব্যাপারটা সত্য বলেই মনে হচ্ছে। আমেরিকান আর রাশান সরকারের বড় বড় পদে ফেনিসের লোক আছে, নইলে তোমাকে বা কুয়াশাকে কিছুতেই ফাঁসাতে পারত না… তাও আবার একই কায়দায়। তোমাদেরকে সরাবার জন্য যে-রকম মরিয়া হয়ে উঠেছে ওরা, তাতে তো আর কিছু ভাবা চলে না।’
‘কী করব তা হলে, সার?’
‘অফিশিয়ালি এ-মুহূর্তে তোমাকে কোনও অ্যাসাইনমেণ্ট দিতে পারি না আমি। কিন্তু নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য যে-কোনও পদক্ষেপ নেবার অধিকার তোমার আছে। তাতে যদি একটা গুপ্তসংগঠনের বিপক্ষে লড়তে হয়, লড়বে না?’
চিফের ইশারা বুঝে নেয়া কঠিন নয়। বলল, কুয়াশার ব্যাপারে কী করব, সার? যদি বলেন তো ওকে বাংলাদেশে পৌঁছে দিয়ে কাজে নামতে পারি।’
‘তোমার কি সেরকমই ইচ্ছে?’
একটু দ্বিধায় পড়ে গেল রানা। শেষ পর্যন্ত সত্যি কথা বলল, ‘না, স্যর। ও নির্দোষ। ফেনিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যদি আমার পাশে থাকে, তা হলে সুবিধে হবে। সমস্যা একটাই—কাজ শেষে… মানে যদি শেষ করতে পারি আর কী… ও আবার গায়েব হয়ে যাবে।’
‘ওটা ঠেকানো যায় না?’
‘কী জানি, স্যর। জেলে পাঠানো হবে না, এ-ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলে হয়তো বা আত্মসমর্পণ করবে। আমি শিয়োর না।’
‘কুয়াশাকে জেলে পাঠানোর ইচ্ছে আমারও নেই। ওর মত প্রতিভাকে চোদ্দোশিকের পিছনে আটকে রাখলে দেশের কোনও উপকার হবে না। তারচেয়ে যদি ওকে শুধরে নিয়ে কাজের সুবিধে দেয়া যায়, তাতেই সবার লাভ।’
‘তা হলে কী করব, স্যর?’
‘ব্যাপারটা আপাতত তোমার হাতে ছেড়ে দিচ্ছি, রানা। বিসিআই-এর জন্য এ-মুহূর্তে কুয়াশার চেয়ে তোমার গুরুত্ব অনেক বেশি। মিথ্যে অভিযোগ নিয়ে তুমি পালিয়ে বেড়াও, তা চাই না আমরা কেউই। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য কী করবে, কাকে সঙ্গে নেবে, সেটা তোমার ব্যাপার।’
‘বুঝতে পেরেছি, স্যর।
‘আর হ্যাঁ, ফেনিসের খবর নেয়ার জন্য এখুনি কর্সিকায় যাবার দরকার আছে বলে মনে হয় না। আগে আশপাশে খোঁজ নাও। আমেরিকায় যদি ওদের সামান্যতম চিহ্নও থাকে, সেটা জর্জ বলতে পারবে। এ-পরিস্থিতিতে সাহায্যও করতে পারবে ও। যোগাযোগ করো ওর সঙ্গে।‘
ন্যাশনাল আণ্ডারওয়াটার অ্যাণ্ড মেরিন এজেন্সির চিফ, অ্যাডমিরাল জর্জ হ্যামিলটনের কথা বলছেন রাহাত খান, বুঝতে পারল রানা। জবাব দিল, ‘ঠিক আছে, স্যর।’
সাবধানে থেকো, এমআরনাইন,’ বললেন রাহাত খান। ‘শুভকামনা রইল।’
কথা শেষ করে ফিরে এল রানা।
‘তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সুসংবাদ আছে, হালকা গলায় মন্তব্য করল কুয়াশা।
‘সুসংবাদ-দুঃসংবাদ… দুটোই।’ বলল রানা। ‘এফবিআই আমার নামে জেনারেল ওয়ার্নারের খুনি হিসেবে হুলিয়া জারি করেছে। আর উপায় নেই, ষড়যন্ত্রটার পিছনে কারা জড়িত, তা বের করতে হবে আমাকে। তাই আপনাকে সাহায্য করব আমি। কিন্তু এক শর্তে। আপনাকে কথা দিতে হবে, কাজটা শেষ হলে আমার সঙ্গে ফিরে যাবেন দেশে। আপনি একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী, কুয়াশা… বাংলাদেশের জন্য অমূল্য এক সম্পদ। অন্যায়ের পথে ছোটাছুটি করে নিজেকে অপচয় করা মানায় না আপনাকে। চিফের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার- আপনি যদি নিজেকে শুধরে নেন, তা হলে গবেষণার জন্য সব ধরনের সাহায্য করব আমরা। আপনার সমস্ত ক্রিমিনাল রেকর্ড মুছে ফেলা হবে। বিসিআইয়ের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করবেন আপনি; যত ফাণ্ড লাগে, আমরা তা ম্যানেজ করে দেব। রাজি আছেন?’
‘লোভনীয় প্রস্তাব,’ স্বীকার করল কুয়াশা। ‘কিন্তু তোমরা যে কথা রাখবে, তার গ্যারান্টি কী?’
‘আমার উপরে বিশ্বাস রাখতে হবে আপনাকে। একই কথা খাটে আমার বেলাতেও—আপনার মুখের কথায় আস্থা রাখতে হবে আমাকে। ভদ্রলোকের চুক্তি হবে আমাদের মধ্যে… ওয়ার্ড অভ অনার।
মাথা নিচু করে একটু ভাবল কুয়াশা। তারপর বলল, ‘ঠিক আছে, আমি রাজি। তবে ছোট্ট একটা শর্ত আমার ও আছে—গবেষণা আমি নিজের ইচ্ছে অনুসারে করব। কোনও ধরনের তদারকি বা আদেশ-নির্দেশ দেয়া যাবে না।’
‘অন্যায় কোনও আবদার না করলে বাধা পাবেন না।’
‘যেমন?’
‘মানুষকে গিনিপিগ বানানোর কথা বলছি। ওসব চলবে না। অন্যান্য গবেষকরা যেভাবে কাজ করে, সেভাবেই কাজ করতে হবে আপনাকে। প্রয়োজন হলে ল্যাব-অ্যানিমেলের উপর টেস্টিং চালাবেন।’
‘যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব। আমার কোনও আপত্তি নেই।’
‘গুড,’ সোফায় বসে পড়ল রানা। কুয়াশাকে ফিরিয়ে দিল ওর পিস্তল। ‘এবার হাতের কাজটা নিয়ে মাথা ঘামানো যাক।’
‘কর্সিকায় যাবার কথা বলছ?’ জিজ্ঞেস করল কুয়াশা।
‘না। ওটা পরে করলেও চলবে। আগে আমরা অ্যাডমিরাল জর্জ হ্যামিলটনের সঙ্গে দেখা করব। আমার বসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিনি, আমাকে বিশেষ স্নেহ করেন। বিশ্বস্ত, এবং হাইলি কানেক্টেড মানুষ। আমেরিকায় ফেনিসের ব্যাপারে কোনও ব্লু থাকলে সেটা তাঁর কাছে পাওয়া যাবে।’
‘নুমার ডিরেক্টরের কথা বলছ?’ ভ্রূকুটি করল কুয়াশা। ‘উনি একটা গবেষণাধর্মী সংস্থার প্রধান। ফেনিসের খবর উনি জানবেন কী করে?’
‘অ্যাডমিরাল হ্যামিল্টন শুধু নুমার ডিরেক্টর নন,’ ব্যাখ্যা করল রানা। ‘একইসঙ্গে তিনি ন্যাভাল ইন্টেলিজেন্সের চিফ এবং প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা। আর কিছু না হোক, আমাকে ফাঁসানোর পিছনে কে কলকাঠি নেড়েছে, তা বের করতে পারবেন। ওই লোকই ফেনিস পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবে আমাদেরকে।’
‘মন্দ নয় আইডিয়াটা,’ সায় দিল কুয়াশা। ‘কখন দেখা করবে অ্যাডমিরালের সঙ্গে?’
‘আজই। সকাল হোক, তারপর ফোন করব ওঁকে।’
‘ততক্ষণ পর্যন্ত?’
‘ভোর হতে দেরি নেই, খিদেও পেয়েছে। চলুন ব্রেকফাস্ট সেরে নিই।’
‘বেশ,’ ইজিচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল কুয়াশা। ‘চা কিন্তু আমি বানাব!’