সেই কুয়াশা ১.৬

ছয়

বেসিনের কল ছেড়ে এক আঁজলা পানি মুখে ছিটাল রানা। তাকাল আয়নার দিকে। ঘুমের অভাবে চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে উঠেছে, সেই সঙ্গে গালভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি মিলে বুনো দেখাচ্ছে চেহারা। বিশ তারিখ, ভোর চারটে বাজে; প্রায় একটা দিন পেরিয়ে গেছে লুকোচুরি খেলায়, এর মাঝে ঘুমানোর বা বিশ্রাম নেবার কোনও সুযোগই পায়নি ও।

করিডোরের ওপারে, দুইশ’ এগারো নম্বর রুমে কুয়াশার সুবেশী ডিকয়ও ঘুমাতে পারছে না। চোখ মুদলেই বেজে ওঠে ফোন। শুরু হয় জ্বালাতন।

‘মি. মাসুদ রানা, প্লিজ!’

‘বলেছি তো, কোনও মাসুদ রানাকে চিনি না আমি। কেন বিরক্ত করছেন? কে আপনি?’

‘মি. রানার বন্ধু। জরুরি একটা ব্যাপারে কথা বলা দরকার ওঁর সঙ্গে। প্লিজ, দিন না ফোনটা!’

‘এই নামে কেউ নেই এখানে। আমি মি. রানাকে চিনি না। আপনি আমাকে পাগল করে তুলছেন! খবরদার, আর ফোন করবেন না। নইলে হোটেল ম্যানেজমেন্টকে বলে টেলিফোন ডিসকানেক্ট করে রাখব আমি।

‘ও-কাজ করতে যাবেন না। আপনার নিয়োগকর্তা মোটেই খুশি হবে না ওতে। বলা যায় না, পেমেণ্ট আটকে দিতে পারে।

‘স্টপ ইট!’

রীতিমত হৈচৈ করছে মেয়েটা। উল্টোপাশের কামরা থেকে ও পরিষ্কার সব শুনতে পাচ্ছে রানা। মুচকি হাসি ফুটে উঠল ওর ঠোঁটে। চমৎকার কাজ দেখাচ্ছে তিশা। খুব শীঘ্রি সহ্যের বাঁধ ভেঙে যাবে মেয়েটার, হোটেল ছেড়ে পালাবে। যত টাকাই সেধে থাকুক কুয়াশা, টেলিফোনের এমন উৎপাত সইতে হবে বলে ভাবেনি নিশ্চয়ই? বিপদের আশঙ্কাও জেগে উঠবে তার ভিতরে ঘড়ি দেখল রানা, দেরি নেই আর। ডিকয় সরে যাচ্ছে দৃশ্যপট থেকে… কুয়াশার পরিকল্পনায় সৃষ্টি হতে চলেছে খুঁত।

এরপর শকুনদেরকে পাঠাতে বাধ্য হবে সে। ওদেরকেও পরাস্ত করবে রানা ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে। নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে কুয়াশা। হতাশা আর ক্ষোভের কারণে নিজেই মাঠে নামতে বাধ্য হবে। পা রাখবে রানার ফাঁদে। শুধু সময়ের অপেক্ষা, একসময় না একসময় ঠিকই তিনতলার করিডোরে উদয় হবে কুয়াশা; থামবে দুইশ’ এগারো নম্বর কেবিনের সামনে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের কামরার দরজা খুলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে রানা, ইতি ঘটাবে ওদের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের।

করিডোরে পায়ের আওয়াজ শুনে ঝট্ করে সোজা হলো রানা। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে দরজার কাছে গেল ও, পিপহোলে চোখ রাখল।

বয়স্কা একজন হোটেল মেইডকে দেখতে পেল ও, দুইশ’ এগারোর দরজা খুলছে। ডানহাতে তোয়ালের স্তূপ, যেন বাথরুমের তোয়ালে বদলাতে যাচ্ছে। ভুরু কোঁচকাল রানা। ভোর চারটায় হোটেল মেইড? কুয়াশার কীর্তি নিঃসন্দেহে। রাতের শিফটের এই মেইডকে ভাড়া করেছে অফ-আওয়ারে তার ডিকয়ের উপর নজর রাখবার জন্য। বুদ্ধিটা মন্দ নয়, তবে খুঁত আছে এতে। এ-ধরনের মানুষকে খুব সহজেই সরিয়ে দেয়া যায়—ফ্রন্ট ডেস্কে সামান্য একটা ফোন করেই অন্যত্র ব্যস্ত করে ফেলা যায় হোটেল মেইডকে। সবচেয়ে বড় কথা, মেইডের ডিউটি শেষ হয়ে যাবে সকালে। তখন তাকে ডেকে নিয়ে বাড়তি টাকা সাধতে পারে ও, কুয়াশার ইনফরমেশন বের করে নিতে পারে। কোত্থেকে যোগাযোগ করেছিল সে, কীভাবে পেমেণ্ট দিয়েছে, ইত্যাদি।

পিপহোল থেকে চোখ সরিয়ে নিচ্ছিল, এমন সময় আবার নড়াচড়া লক্ষ করল রানা। সুন্দরী মেয়েটা বেরিয়ে এসেছে কামরা থেকে, হাতে তার ওভারনাইট ব্যাগ। মেইডও বেরুল, নিচু গলায় কিছু বলার চেষ্টা করল মেয়েটাকে।

‘জাহান্নামে যেতে বলো ওকে!’ খেপাটে গলায় চেঁচিয়ে উঠল সুন্দরী। ‘পাগলের পাল্লায় পড়েছি আমি। আগে জানলে কিছুতেই রাজি হতাম না। না, আর এক মুহূর্তও থাকছি না আমি এখানে।

গটমট করে হেঁটে দৃষ্টিসীমা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল সে। মেইড কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল তার গমনপথের দিকে তাকিয়ে, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও চলে গেল অন্যদিকে 1

দরজা থেকে সরে এল রানা। চমৎকারভাবে এগোচ্ছে ওর প্ল্যান। টেলিফোন করার বুদ্ধিটা কাজে লেগে গেছে। ডিকয়কে হটিয়ে দেয়া গেছে, আবার আকৃষ্ট করা গেছে কুয়াশাকেও। যত কিছুই হোক, ফোনে মাসুদ রানার নাম শোনা গেছে… কৌশলে একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে তার দিকে। এখন কিছুতেই পিছু হটবে না অকুতোভয় বিজ্ঞানী। হয় এস্পার, নয় ওস্পার: একটা কিছু করতেই হবে তাকে।

জমে উঠছে খেলা।

.

রাস্তার ধারে হাঁটছে কুয়াশা। পা টনটন করছে ব্যথায়, সতর্ক থাকতে হচ্ছে সাইডওয়াকে হাঁটতে থাকা লোকজনের উপর হুমড়ি খেয়ে না পড়ার জন্য। মনোযোগ ধরে রাখার জন্য মগজের এক্সারসাইজ করছে—পায়ের কদম গুনছে, হিসেব রাখছে পেভমেন্টের ফাটলের, কিংবা বিড়বিড় করে সমাধান করছে নানা রকম সমীকরণ। পকেটের ওয়াকি-টকিটাকে মনে হচ্ছে বাড়তি উপদ্রব, এ-মুহূর্তে একেবারে অচল ওটা। চার্জ শেষ হয়ে গেছে; থাকলেও লাভ হতো না। যাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কিনেছিল যন্ত্রটা, তারাই আর নেই এখন।

বেলা এগারোটা বিশ বাজে। জ্যান্ত হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন নগরী। ব্যতিব্যস্ত মানুষ ছোটাছুটি করছে চারদিকে, রাস্তাঘাট ভরে গেছে গাড়িঘোড়ায়… কিন্তু এখনও থামেনি এক্সেলসিয়র হোটেলে উদ্ভট ফোনের উৎপাত।

মাসুদ রানা, প্লিজ। ওঁর সঙ্গে জরুরি কথা আছে আমার…

পাগলামি!

কী করছে রানা? কোথায় ও? এখন পর্যন্ত টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না কেন ওর?

হোটেলে এখন শুধু বয়স্কা মহিলাটি আছে। পতিতা মেয়েটা বিদ্রোহ করেছে ভোরে; সকাল হতে না হতে লোকদুটোও বেঁকে বসেছে। একদিনের চুক্তিতে আনা হয়েছিল ওদেরকে, সকাল নাগাদ কাজের কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় ধৈর্য হারিয়েছে তারা। দ্বিতীয় দিনের জন্য অবিশ্বাস্য অঙ্কের একটা পারিশ্রমিক দাবি করে বসেছে। ওদেরকে ধরে রাখার কোনও যুক্তি দেখতে পায়নি কুয়াশা, তাতে লাভ নেই কোনও। বোঝাই যাচ্ছে, ওর সযত্নে গড়া পরিকল্পনা মাটি করে দিয়েছে রানা। ফোনের উৎপাতের পিছনে তাচ্ছিল্য, নাকি চ্যালেঞ্জ কাজ করছে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পরিস্থিতি অন্যরকম হলে আশা ছেড়ে দিত কুয়াশা। নিজের পথে চলে যেত। কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়। যেভাবে হোক, রানার সঙ্গে কথা বলতে হবে ওকে। কিন্তু লোকটা তো দেখাই দিল না হোটেলে। কী করা এখন? শেষ চেষ্টা হিসেবে বয়স্কা মহিলাটিকে দুইশ’ এগারো নম্বর রুমে ঢুকিয়েছে ও। মাঝে মাঝে ফোনে রিপোর্ট দিচ্ছে সে—না, রানার দেখা পায়নি। তবে আধঘণ্টা পর পরই টেলিফোন আসছে রুটিনমাফিক। মাসুদ রানাকে চাইছে একটি মেয়ে। দশ-পনেরো সেকেণ্ডের বেশি লাইনে থাকে না সে, বাড়তি একটা শব্দও উচ্চারণ করে না। পুরোপুরি প্রফেশনাল আচরণ। ফোনটা ট্রেস করবার উপায় নেই কোনও।

ফোন বুদের দিকে এগোল কুয়াশা। হোটেলের এন্ট্রান্স থেকে পঞ্চাশ গজ উত্তরে ওটা, রাস্তার উল্টোপাশে। ভিতরে ঢুকে গ্লাসডোর টেনে দিল। স্লটে কয়েন ফেলে ডায়াল করতে যাবে, এমন সময় একটা দৃশ্য দেখে স্থির হয়ে গেল।

হলুদ রঙের একটা ট্যাক্সি এসে থেমেছে হোটেলের সামনে, লম্বা-চওড়া একজন লোক নেমে এল সেটা থেকে। অস্বাভাবিক কিছু নয়, কিন্তু লোকটার চেহারা-সুরত এবং ভাবভঙ্গি সন্দিহান করে তুলল কুয়াশাকে। ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে সরাসরি হোটেলে ঢুকল না সে, পেভমেন্টে দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ, আশপাশ জরিপ করে নিল তীক্ষ্ণ চোখে। তারপর পা বাড়াল এন্ট্রান্সের দিকে। হাঁটার ভঙ্গি সাধারণ সিভিলিয়ানের মত নয়, সামরিক প্রশিক্ষণের ছাপ ফুটে আছে তাতে। চেহারাই বলে দিচ্ছে, কঠিন পাত্র। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা একটা ওভারকোট পরেছে, অস্ত্র লুকিয়ে রাখার জন্য আদর্শ পোশাক। কুয়াশার অভিজ্ঞ চোখ একজন প্রফেশনাল খুনিকে চিনতে পারছে।

ডায়াল করা আর হলো না কুয়াশার। ক্রেডল থেকে রিসিভার তুলে কানে ঠেকল, কথা বলার ভান করে ফোন বুথের ভিতর দাঁড়িয়ে রইল ও। ব্যাপারটা আরেকটু বুঝে নেয়া দরকার! লোকটা একা এসেছে, নাকি সঙ্গী-সাথী আছে আরও? একা হলে কো-ইনসিডেন্স ভাবা যেতে পারে। কিন্তু যদি আরও লোক থাকে, বুঝতে হবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। এ-মুহূর্তে হোটেল এক্সেলসিয়রে খুনি উদয় হতে পারে শুধু ওকে হত্যা করার জন্য।

কুয়াশার আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণের জন্য মিনিটপাঁচেক পরে আরেকজন উদয় হলো হোটেলের সামনে। এ-লোক গাড়িতে আসেনি; পথচারী, চোখে সাদামাঠা একটা চশমা, হাতে ব্রিফকেস। সাধারণ চাকরিজীবীর বেশ নিয়েছে। কিন্তু পরনে ঠিক প্রথম লোকটার মতই ওভারকোট। হোটেলের সামনে পৌঁছে একই কায়দায় চারদিক দেখে নিল। রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়ানো তৃতীয় একজনের সঙ্গে চোখাচোখি হলো তার। নিগ্রো, শীতের ভারী জ্যাকেট আর উইন্টার বুট পরে আছে। গলায় স্কার্ফ, চোখে কালো সানগ্লাস। সেকেণ্ডের ভগ্নাংশের জন্য পরস্পরের দিকে তাকাল ওরা। নিগ্রো পকেট থেকে সিগারেট বের করে লাইটারের সাহায্যে ধরাল… সঙ্কেত দিল আসলে। মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে উল্টো ঘুরল চশমাঅলা, ঢুকে পড়ল হোটেলে, প্রথম খুনির সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছে।

হৃৎস্পন্দন দ্রুততর হয়ে গেছে কুয়াশার। মানে কী এর? সার্ভেইলান্স করতে নয়, এরা এসেছে অ্যাকশনের জন্য। হাবভাবেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু টার্গেট কে? ও নিজে? হতে পারে, কিন্তু ও তো রয়েছে হোটেলের বাইরে। ওরা ভিতরে ঢুকল কেন? নিশ্চিত না হয়ে তো প্রফেশনাল লোকজন কোথাও ও পা ফেলে না। তা হলে? দ্বিতীয় কোনও টার্গেট আছে ওদের? কে সেটা? রানা?

আচমকা সব পরিষ্কার হয়ে গেল কুয়াশার কাছে। মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হলো নিজের বোকামির কথা ভেবে। রানা বাইরে থেকে আসবে বলে ধারণা করেছিল, ওভাবেই পুরো সেটআপ সাজিয়েছে। কিন্তু ও যে হোটেলের ভিতরেই থাকতে পারে, তা মাথায় আসেনি একবারও। বহু আগে থেকেই ওখানে ঘাপটি মেরে বসে আছে দুর্ধর্ষ বাঙালি এজেন্ট, ওখানে বসেই নাচিয়ে বেড়াচ্ছে ওকে। তিক্ত একটা হাসি ফুটল কুয়াশার ঠোঁটে, তবে মনে মনে তারিফও করল রানার।

কিন্তু এখন ওসব নিয়ে সময় নষ্ট করার উপায় নেই। তিন খুনির উপস্থিতিতে জটিল হয়ে গেছে পরিস্থিতি। নিঃসন্দেহে ফেনিসের লোক এরা। কীভাবে এই হোটেলের খোঁজ পেল, তা জানা নেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত-ওদের টার্গেটের তালিকায় কুয়াশার পাশাপাশি রানার নামও ঢুকে গেছে। সংগঠনটা কতখানি সিরিয়াস, তা বোঝা যাচ্ছে এবার। কোনও ধরনের ঝুঁকি নিতে রাজি নয়, কেউ পথের কাঁটা হতে পারে ভাবলেই তাকে সরিয়ে দিচ্ছে এরা। মানুষটা সত্যিকার কোনও সমস্যা সৃষ্টি করবার আগেই!

উদ্বেগ অনুভব করল কুয়াশা। ওর কারণে বিপদ নেমে এসেছে রানার উপরে, ওর জন্যই জীবন যেতে বসেছে বেচারার। কাজেই রানাকে রক্ষা করার দায়িত্বও এখন এর উপরেই বর্তাচ্ছে। কিন্তু কীভবে? রানা ঠিক কোথায় অবস্থান করছে, সেটাই তো জানা নেই ওর। কিছু একটা করতে হবে… এক্ষুণি! একটা মুহূর্ত অপচয় করা চলে না। তাড়াতাড়ি ফোন বুদ থেকে ডায়াল করল হোটেলের নাম্বারে।

‘রানা এখানে?’ কুয়াশার বক্তব্য শুনে প্রায় চেঁচিয়ে উঠ বয়স্কা মহিলাটি।

‘হ্যাঁ, তোমার খুব কাছাকাছিই আছে বলে ধারণা করছি আমি। রুমে কে ঢুকছে না ঢুকছে, সব দেখতে পাচ্ছে ও। তুমি কি এখনও ইউনিফর্মে আছ?’

‘হ্যাঁ। কেন?’

‘আশপাশের কামরাগুলো চেক করে দেখো।’

‘হায় যিশু! কী বলছ, বুঝতে পারছ? যদি কেউ টের পায় যে, মেইড নই আমি এখানকার…

‘কথা বাড়িয়ো না!’ ধমকে উঠল কুয়াশা। ‘হাতে সময় নেই  

একদম। রানাকে খুঁজে বের করতে হবে আমাদেরকে। এবং সেটা এখুনি। দশ মিনিটের মধ্যে আবার রিং দেব তোমাকে।

‘দাঁড়াও… ওকে আমি চিনব কী করে?’

‘খুব সহজ। একমাত্র ও-ই তোমাকে ওর কামরায় ঢুকতে দেবে না।‘

.

খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রানা। শার্ট খুলে ফেলেছে, ঠাণ্ডা বাতাসে কাঁপছে হি হি করে। হিটার বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই, রুমের তাপমাত্রা এখন পঞ্চাশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ইচ্ছে করে কষ্ট দিচ্ছে নিজেকে… জাগ্রত থাকার জন্য। আরামদায়ক ঊষ্ণ পরিবেশের চেয়ে শীতার্ত অবস্থায় মানুষের নার্ভ অনেক তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে।

মৃদু একটা শব্দ কানে এল ওর। ধাতুর সঙ্গে ধাতুর ঘর্ষণের আওয়াজ। জানালার পাল্লা টোনে ছুটে গেল ও পিপহোলের কাছে। দুইশ এগারো নম্বর থেকে বেরিয়ে এসেছে বয়স্কা মেইড, হাতে যথারীতি ভাঁজ করা তোয়ালে আর বিছানার চাদর। একদিকে চলে গেল সে। মনে হচ্ছে কুয়াশার শেষ অনুচরও হাল ছেড়ে দিয়েছে। দৃশ্যপট এখন সম্পূর্ণ ফাঁক এবার ফাঁদের অবস্থা দেখার জন্য ক্যাশাকে সশরীরে হাজির হতে হবে।

ক্লজিটের কাছে চলে গেল রানা, ভিতর থেকে বের করে আনল একটা পরিষ্কার শার্ট। গায়ে চড়াল ওটা। বালিশের তলা থেকে বের করল নিজের সিগ-সাওয়ার হ্যাগান। ম্যাগাজিন চেক করছে, এমন সময় দরজার টোকা পড়ল। দ্বিধান্বিত টোকা।

পাঁই করে ঘুরে দাঁড়াল রানা, ইন্দ্রিয় অতিমাত্রায় সতর্ক হয়ে উঠেছে। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক। ফ্রন্ট ডেস্কে বাড়তি টাকা দিয়েছে ও, কেউ যাতে বিরক্ত না করে ওকে। দরজার নবে ঝুলিয়ে দিয়েছে ডু নট ডিস্টার্ব সাইন। নামি-দামি হোটেলে প্রাইভেসি রক্ষার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। তা হলে কে টোকা দিচ্ছে দরজায়?

সিগ-সাওয়ার বাগিয়ে দরজার কাছে গেল রানা। পিপহোল দিয়ে সাবধানে উঁকি দিল বাইরে। বয়স্কা সেই মেইড ফিরে এসেছে। কুয়াশার ভাড়া করা শকুন… এখনও পরাজয় মেনে নেয়নি তা হলে! মুহূর্তের জন্য চেহারাটা দেখল রানা। সৌম্যদর্শন মুখটার ভিতর কী যেন লুকিয়ে আছে। কিন্তু ও নিয়ে সময় নষ্ট করার মানে হয় না। ওর নাগাল পেয়ে গেছে মহিলা, কনফ্রণ্টেশনে যাওয়াই ভাল। দেখা যাক, টাকার লোভ দেখিয়ে ওকে নিজের দলে ভেড়ানো যায় কি না। রানার খবর কুয়াশার কাছে নয়, বরং কুয়াশার খবর রানার কাছে পৌঁছবে ওতে।

সিগ-সাওয়ারটা কোমরের পিছনে গুঁজে ফেলল রানা, ঢেকে ফেলল শট নিয়ে তারপর গলা চড়িয়ে বলল, ‘ইয়েস?’

‘মেইড-সার্ভিস, স্যর।’ জবাব এল ওপাশ থেকে। উচ্চারণে আইরিশ টান। ‘ম্যানেজমেণ্ট বলেছে সব কামরার সাপ্লাই ঠিকঠাক আছে কি না, দেখে নিতে।’

মিথ্যেটা জুতসই হয়নি। তবে ভাড়াটে একজন প্রৌঢ়া মেইডের কাছে এরচেয়ে কনভিন্সিং কোনও কিছু আশা করাও যায় না।

‘ঠিক আছে, ভিতরে আসুন।’ ছিটকিনি খুলে দিল রানা।

.

‘দুইশ’ এগারো নম্বর থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, স্যর, ‘ জানাল এক্সেলসিয়রের সুইচবোর্ড অপারেটর।

‘আবার চেষ্টা করুন,’ বলল কুয়াশা। চোখ সেঁটে আছে রাস্তার উল্টোপাশের কফি শপের উপর। নিগ্রো খুনি ওখানে ঢুকেছে, বেরিয়ে আসবে যে-কোনও মুহূর্তে। ও-ই নিঃসন্দেহে দলটার  নেতা। ও মাঠে নামলেই শুরু হবে হিট টিমের মূল অ্যাকশন।

‘আপনার যা ইচ্ছে, স্যর,’ বিরক্তি নিয়ে বলল অপারেটর।

অস্থির হয়ে উঠেছে কুয়াশা। পনেরো মিনিট পেরিয়ে গেছে বয়স্কা মহিলাটির তল্লাশি শুরু হবার পর। হোটেলের তিনতলায় মাত্র আটটা রুম, সেগুলোর দরজায় টোকা দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখবার জন্য এত সময় লাগার কথা নয়। সবগুলোতে লোক থাকলেও না। ঘাপলা হয়েছে কোথাও!

চকিতে হোটেল এন্ট্রান্সের দিকে নজর ফেরাল কুয়াশা। চমকে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। আরেকজন হাজির হয়েছে। দাড়িঅলা, বেঁটে এক লোক। এর গায়েও কালো ওভারকোট, গলায় পেঁচিয়েছে সিল্কের মাফলার; মাথায় ধূসর হ্যাট—একটু নিচু করে পরেছে, যাতে ঠিকমত চেহারা দেখা না যায়। পেভমেন্টের উপর দাঁড়াল ক্ষণিকের জন্য। সঙ্গে সঙ্গে কফি শপের জানালায় মৃদু আলো দেখা গেল—ম্যাচ জ্বালানো হয়েছে। আরেকটা সঙ্কেত। ঘুরে হোটেলের এন্ট্রান্সের দিকে পা বাড়াল দাড়িঅলা খুনি।

ইয়ারপিতে কর্কশ আওয়াজ তুলে বেজে চলেছে দুইশ’ এগারো নম্বর রুমের ফোন জবাব দিচ্ছে না কেউ। আঁতকে উঠল কুয়াশা। একটাই অর্থ হতে পারে এর-বুড়ির পরিচয় ফাঁস হয়ে গেছে রানার কাছে। কিন্তু দুশ্চিন্তা বুড়িকে নিয়ে নয়, বরং রানাকে নিয়ে। প্রাক্তন ওই আইরিশ বিপ্লবীর স্বভাব-চরিত্র খুব ভাল করে জানা আছে কুয়াশার, কোণঠাসা হয়ে পড়লে উন্মাদ হয়ে যাবে। যদিও তাকে বার বার বলে দেয়া হয়েছে; কিছুতেই রানার ক্ষতি করা চলবে না, কিন্তু সার্ভাইভাল ইন্সটিঙ্কটের সামনে সেসবের কোনও মূল্য নেই। রানা যদি বুড়িকে বন্দি করতে চায়, স্রেফ বেঘোরে খুন হয়ে যাবে। মহিলা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।

রিসিভারের ইয়ারপিস খড়খড় করে উঠল। ওপাশ থেকে শোনা গেল টেলিফোন অপারেটরের কণ্ঠ। দুঃখিত, স্যর। কিছুতেই জবাব পাওয়া যাচ্ছে না দুইশ’ এগারো নম্বর রুম থেকে। আপনি বরং ঘণ্টাখানেক পরে চেষ্টা করুন।’

কুয়াশাকে আরেকদফা অনুরোধের সুযোগ দিল না মেয়েটা। কথা শেষ করেই লাইন কেটে দিল।

রিসিভার নামিয়ে রাখল কুয়াশা। ঠোঁট কামড়াল হতাশায়। আর কোনও উপায় নেই। রঙ্গমঞ্চে এবার নামতেই হবে ওকে। নিতে হবে ঝুঁকি। কাঁধ ঝাঁকাল, কী আর করা। কোটের ভিতরের পকেটে হাত দিয়ে বের করে আনল একটা ছোট বাণ্ডিল। এর ভিতরে ওর সমস্ত ভুয়া কাগজপত্র। ওখান থেকে বেছে বের করল সুইটজারল্যাণ্ডের নামকরা একটা ব্রোকারেজ হাউজের পরিচয়পত্র। ওটা গুঁজে রাখল ওয়ালেটে। হোটেলের উল্টোপাশের গলির ভিতরে একটি ব্রিফকেস লুকিয়ে রেখেছিল আগেই, সেটা সংগ্রহ করল। তারপর পাক্কা ব্যবসায়ীর ভঙ্গিতে নেব্রাস্কা অ্যাভিনিউ পেরিয়ে ঢুকে পড়ল হোটেলে।

সরাসরি ডে-শিফটের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করল ও। নিজের পরিচয়পত্র দেখাল, বিজনেস কনফারেন্সের জন্য পুরো হোটেল বুকিঙের টোপ ফেলল… ফলে দশ মিনিটের মাথাতেই বিনয়ে বিগলিত হয়ে যেতে দেখা গেল ম্যানেজারকে হাজার হোক, তাদের এই ছোট্ট হোটেলকে সুইটজারল্যাণ্ডের অমন নামকরা প্রতিষ্ঠান কনফারেন্সের জন্য বেছে নেবে, এ তো সাত কপালের ভাগ্য!

‘ছোট্ট একটা উপকার করতে হবে আমার,’ ম্যানেজারের হাতে একশো ডলারের তিনটে নোট গুঁজে দিয়ে বলল কুয়াশা, ততক্ষণে লোকটাকে বড়শিতে পুরোপুরি গেঁথে ফেলেছে ও। ‘কী দিনকাল পড়েছে, তা তো জানেন। সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য পদে পদে বাধা। একটা লোক খুব জ্বালাতন করছে আমাকে, S এ-মুহূর্তে এ-হোটেলেই আছে বলে সন্দেহ আমার…’

ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হোটেলের গত চব্বিশ ঘণ্টার টেলিফোন রেকর্ড এসে গেল কুয়াশার হাতে। কম্পিউটার থেকে প্রিন্টআউট নিয়ে এসেছে সুইচবোর্ডের অপারেটর। বলা বাহুল্য, তাকেও সামান্য পকেট-খরচ দেয়া হয়েছে।

বাকি সব ফ্লোর বাদ দিয়ে শুধু তিনতলার রেকর্ডে চোখ বোলাল কুয়াশা। দুটো করিডোর আছে ওখানে। দুইশ’ এগারো থেকে পনেরো পর্যন্ত পাঁচটা রুম পশ্চিম উইঙে। ওগুলোর আউটগোয়িং কলের উপরেই মনোযোগ দিল ও। বিল দেখে- বোঝা গেল, হোটেল ছোট হলেও এখানকার চার্জ অনেক বেশি এক্সক্লুসিভ হোটেল হলে যা হয় আর কী। লিস্টটা এরকম:

২১২…লণ্ডন, ইউকে। চার্জ: ২৬.৫০ ডলার।

২১৪… দেস ময়সে, আইওয়া! চার্জ: ৪.৫০ ডলার।

২১৪… সিডার রাপিডস, আইওয় চ র্জ: ৪.৮০ ডলার।

২১৩…আর্লিংটন, ভার্জিনিয়া চার্জ: ৫.১০ ডলার।

২১৫…ডেনভার, কলোরাডো। চার্জ: ৬.৭৫ ডলার।

২১৪…প্যাসাডেনা, ক্যালিফোর্নিয়া। চার্জ: ১১.৬৫ ডলার।

২১৫…ইস্টন, মেরিল্যান্ড চার্জ: ৮.০৫ ডলার।

২১২…এথেন্স, গ্রিস। চার্জ: ৩০.১০ ডলার।

২১২…স্টকহোম, সুইডেন। চার্জ: ৩৮.২৫ ডলার।

২১৫…ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া। চার্জ: ৩.৬৫ ডলার।

প্যাটার্ন খোঁজার চেষ্টা করল কুয়াশা। দুইশ’ বারো থেকে ইয়োরোপের তিনটা জায়গায় ফোন করা হয়েছে, কিন্তু তার সঙ্গে রানার কোনও সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। ইণ্টারন্যাশনাল কল করতে চাইলে সেটা ও নিজের সেলফোন থেকেই করতে পারে, তাতে পয়সা কম খরচ হয়: ট্রেসও থাকে না। দুইশ’ চোদ্দ আর পনেরোর বাসিন্দারা লোকাল কল করেছে, তাতেও কোনও বিশেষত্ব দেখতে পাচ্ছে না। খটকা লাগছে শুধু দুইশ তেরোর এন্ট্রিটা। একটামাত্র কল… কারণ কী? চব্বিশ ঘণ্টায় আর কোথাও কি ফোন করতে হয়নি লোকটাকে? নাকি সেলফোন আছে তার কাছে? তা-ই যদি হয়, সেক্ষেত্রে একটামাত্র কল হোটেলের সুইচবোর্ড থেকে করার দরকার কী ছিল?

‘আপনি বোধহয় দুইশ’ বারোর ভদ্রলোককে খুঁজছেন,’ আগ বাড়িয়ে বলে উঠল অপারেটর মেয়েটা। টাকা পেয়ে খুশির সীমা নেই তার। ‘ইয়োরোপে বার বার ফোন করছেন, বিজনেসম্যান হবার সম্ভাবনা বেশি।’

‘হতে পারে,’ কাঁধ ঝাঁকাল কুয়াশা। ‘কিন্তু আমি যাকে খুঁজছি, তার সঙ্গে এথেন্স, স্টকহোম বা লণ্ডনের সম্পর্ক নেই।’ একটু দ্বিধা করল ও। ইয়ে… দুইশ’ তেরোতে কে থাকছে?

‘না, না, ওই লোক হতে পারে না,’ বলল অপারেটর। গলার স্বর খাদে নামাল মেয়েটা। ‘চুপি চুপি জানাই আপনাকে, মসিয়ো, লোকটা সম্ভবত পাগল।

‘মানে?’

ব্যাখ্যা করল মেয়েটা, দুইশ’ তেরোর দরজায় গত তিনদিন থেকে ডু নট ডিস্টার্ব সাইন ঝুলছে। ফ্রন্ট ডেস্কে বলে দেয়া হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই ওই গেস্টকে বিরক্ত করা চলবে না। খাবার-দাবার ওয়েইটারে রেখে আসছে দরজার সামনে,

জার সামনে, ভিতরে যাবার অনুমতি নেই। এমনকী মেইড সার্ভিস পর্যন্ত বাতিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কামরা থেকে।

‘ব্যাপারটা অস্বাভাবিক না?’ জিজ্ঞেস করল কুয়াশা।

‘একেবারে খুবই অস্বাভাবিক তা বলব না,’ বলল অপারেটর। ‘মাঝে মাঝে এমন গেস্ট পাই আমরা। রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে দিনের পর দিন মদ গেলে; কিংবা বউয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফুর্তি করে অন্য মেয়েদের সঙ্গে। কিন্তু মেইড সার্ভিস বাতিল করতে দেখিনি কাউকে। আফটার অল, ময়লা চাদর আর ভেজা তোয়ালে নিয়ে ক’দিন থাকতে পারে মানুষ?’

‘খাটাশ লোকজন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মাথা ঘামায় না, হালকা গলায় বলল কুয়াশা।

‘তা বটে। কিন্তু আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় সরকারি চাকুরিতে এমন লোক পোষা হচ্ছে, সেটা সহ্য করা মুশকিল।

‘বলতে চাইছ, সরকারি লোক?

‘কোনও সন্দেহ নেই। নাইট ম্যানেজারের কাছে শুনেছি, আজ ভোরে… পাঁচটার দিকে নাকি একজন সুট-বুট পরা মানুষ এসেছিল দুইশ’ তেরোর গেস্টের ছবি নিয়ে। ম্যানেজারকে বলেছে, লোকটা অ্যালকোহলিক; সাইকিয়াট্রিক সমস্যাও আছে। ওকে কিছু বলতে মানা করেছে আমাদেরকে, আজ দুপুরের মধ্যেই নাকি একজন ডাক্তার নিয়ে আসবে চিকিৎসার জন্য।’

‘সরকারি ক্রিডেনশিয়াল দেখিয়েছে ওই সুট-বুট পরা লোক?’ উঁহুঁ। তবে এত বছর থেকে ওয়াশিংটনে আছি আমরা, চেহারা দেখেই সরকারি লোক চিনতে জানি।’

‘থ্যাংক ইউ, ম্যা’ম,’ মেয়েটার হাতে আরেকটা একশো ডলারের নোট দিল কুয়াশা অনেক উপকার করেছ আমার।’

‘মাই প্লেজার!’

সুইচবোর্ডের সামনে থেকে সরে এল কুয়াশা। বুক ঢিবঢিব করছে। পেয়েছে… রানার খোঁজ পেয়ে গেছে ও। কিন্তু দুঃসংবাদ, খোঁজটা খুনির দলও পেয়েছে। লবিতে চোখ বোলাল, কোথাও দেখতে পেল না লোকগুলোকে। নিশ্চয়ই পজিশন নিতে শুরু করে দিয়েছে। এখন ছুটে গিয়ে রানাকে সাবধান করে দেয়া সম্ভব নয়, খুনিরা ওকে কিছুতেই ও-পর্যন্ত পৌঁছুতে দেবে না। তার আগেই খুন করবে। ফোন করতে পারে, কিন্তু রানা ওর কথা বিশ্বাস করতে যাবে কেন?

তাড়া অনুভব করল কুয়াশা। একটা উপায় বের করতেই হবে ওকে। নইলে কোনও আশা নেই রানার। কী করা যায়? ভাবতে ভাবতে এন্ট্রান্সের দিকে তাকাল ও, স্থির হয়ে গেল নিগ্রো খুনিকে লবিতে ঢুকতে দেখে।

বড্ড দেরি হয়ে গেছে। এখুনি শুরু হবে হামলা!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *