তেরো
বোটের গানেল টপকে অগভীর পানিতে নেমে পড়ল রানা, কোমর পর্যন্ত ডুবে গেল তাতে। পানি ভেঙে তীরের দিকে এগোল ও, দু’হাতে হ্যাভারস্যাক আর ডাফল ব্যাগ উঁচু করে ধরেছে। সৈকত বলতে কিছু নেই খালের পারে, ছোট-বড় নানা আকারের পাথর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে দু’ধার—ভাঙন ঠেকানোর জন্য। ওখানে পৌঁছে দ্রুত খোলা জায়গা পেরুল রানা, ঢুকে পড়ল গাছপালার ভিতরে। বোটের ক্যাপ্টেন সতর্ক করে দিয়েছে—তীরের কাছটায় টহল দেয় পুলিশ। কাউকে সন্দেহ হলেই আটক করে। ঘুষ দিলে মুক্তি মিলবে, এমন গ্যারান্টি নেই।
মাটিতে হাতের বোঝা নামিয়ে রাখল রানা, ডাফল ব্যাগের ভিতর থেকে বের করল কর্ডের ট্রাউজার, এক জোড়া অ্যাঙ্কেল বুট, গাঢ় রঙের সোয়েটার, আর একটা উলের জ্যাকেট। সবই সেকেণ্ড হ্যাণ্ড, প্যারিস থেকে কিনেছে। এ-পোশাকে ওকে স্থানীয় অধিবাসীর মত দেখাবে। কাপড় বদলে নিল ও, ভেজা পোশাক একটা পলিথিন ব্যাগে পুরে ঢুকিয়ে রাখল ব্যাগের ভিতর। হাঁটতে শুরু করল ঢালু পথ ধরে, দ্বীপের মূল সড়কের দিকে। বিভিন্ন কাজে কর্সিকায় অতীতে কয়েকবারই এসেছে রানা, রাস্তাঘাট মোটামুটি চেনা আছে। দূর থেকে ভিলা বারেমির ধ্বংসস্তূপ দেখেছে একবার। তখন অবশ্য জানত না, কতবড় রহস্য জড়িয়ে আছে ওটার সঙ্গে।
রাস্তায় পৌছে টুপিটা কপালের উপর একটু টেনে দিল রানা। হাঁটতে হাঁটতে ভাবল কুয়াশার কথা। কোথায় লোকটা? কর্সিকায় নিরাপদে পৌঁছুতে পেরেছে তো? এখন কি পোর্তো ভেচিয়োর পাহাড়ি এলাকায় অপেক্ষা করছে ওর জন্য? খুব শীঘ্রি জানা যাবে জবাব। স্থানীয় লোকজনের মাঝে ওর মত বিদেশি একজন আগন্তুককে খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না।
ঘড়ি দেখল রানা। বেলা সাড়ে এগারোটা বাজে। জ্যাকেটের ভিতর থেকে একটা ম্যাপ বের করে নিজের লোকেশন আন্দাজ করার চেষ্টা চালাল। সেইণ্ট লুসি থেকে সম্ভবত আড়াই মাইল দক্ষিণে আছে ও। সোজা পশ্চিমে গেলে কাউণ্ট বারেমির এলাকা। তবে ওখানে যাবার আগে একটা বেস অভ অপারেশন দরকার; এমন একটা জায়গা, যেখানে নিজের বাড়তি জিনিসপত্র লুকিয়ে রেখে যেতে পারবে। হোটেল বা সরাইখানা হলে চলবে না, ওসব জায়গায়, ওর মত অচেনা মানুষকে দেখে মনে রাখবে সবাই। জায়গাটা হতে হবে নির্জন; বনের ভিতরে হলেই ভাল হয়। কাছাকাছি পানির উৎস আর ছোটখাট দু’একটা দোকান থাকা দরকার, যা-তে সহজে খাবার জোগাড় করা যায়। কতদিন পোর্তো ভেচিয়োয় থাকতে হবে, বলা যায় না। সবই নির্ভর করছে ও আর কুয়াশা কতদিনে ফেনিস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, তার ওপর।
কিছুদূর এগোবার পর একটা পায়ে হাঁটা পথ দেখতে পেল ও, দ্বীপের মূল সড়কের পাশ থেকে শুরু হয়ে পশ্চিমদিকে চলে গেছে। সম্ভবত পশুচারণের জন্য রাখালেরা ব্যবহার করে ওটা, একেবারে সরু, গাড়ি যেতে পারবে না। হ্যাভারস্যাকের স্ট্র্যাপ ভাল করে এঁটে নিল, ডান হাত থেকে বাম হাতে নিল ডাফল ব্যাগ, তারপর ওই পথে নেমে পড়ল রানা।
দুপুর পৌনে একটা নাগাদ দ্বীপের ছ’মাইল ভিতরে ঢুকে পড়ল ও। আঁকাবাঁকা পথে এগিয়েছে, খোলা জায়গায় বেশিক্ষণ থাকেনি। অবশেষে যা খুঁজছিল, তা পেয়ে গেল। পাহাড়ির ঝর্ণার কিনারে বনের একটা অংশ আচমকা উঁচু হয়ে উঠেছে, বড় বড় কর্সিকান পাইন আর ঝোপ-জঙ্গল মিলে সবুজ এক প্রাচীর সৃষ্টি হয়েছে ওখানে। মানুষ এবং জিনিসপত্র… দুটোই লুকানোর জন্য আদর্শ। দক্ষিণ-পশ্চিমে, মাইলখানেক দূর দিয়ে গেছে আরেকটা পথ—উঠে গেছে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে। ম্যাপ মিলিয়ে নিল রানা; নিশ্চিত হলো, ওই পথ ধরে পৌছুনো যাবে কাউন্ট বারেমির এলাকায়। খুব বেশি সময়ও লাগবে না।
ঝর্ণা পেরিয়ে পাইন গাছের তলায় চলে গেল ও। ডাফল ব্যাগ থেকে ছোট একটা শাবল বের করে মাটি খুঁড়তে শুরু করল। গর্তের ভিতর লুকিয়ে ফেলল ব্যাগ আর হ্যাভারস্যাক। তার আগে বদলে নিল কাঁধ ও পায়ের ব্যাণ্ডেজ। ধুয়ে নিল হাত-মুখ। সঙ্গে আনা বিস্কিট দিয়ে লাঞ্চ সারল। তারপর হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল গাছের ছায়ায়। বিশ্রাম না নিলে শরীর আর চলতে চাইছে না।
ঘুম এল না সহজে, নানা রকম চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে রইল মন। শেষ পর্যন্ত যখন চোখ মুদল, দুঃস্বপ্ন দেখল ঘুমের মাঝে!
হঠাৎ জেগে উঠল রানা। নড়ল না সঙ্গে সঙ্গে, নিঃসাড়ে পড়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করল ঘুম ভাঙার কারণ। খেয়াল করল, বেলা পড়ে এসেছে। ঘড়িতে বিকেল চারটে বাজে। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া রোদের তেজ কমে গেছে অনেক। আকাশে আতঙ্কিত ভঙ্গিতে ডানা ঝাপটাচ্ছে অনেকগুলো পাখি, ওগুলোর আওয়াজেই আসলে নিদ্রাভঙ্গ হয়েছে ওর। কিন্তু পাখিগুলো এমন
করছে কেন?
ধীরে ধীরে উঠে বসল রানা, পরমুহূর্তে শুনতে পেল নতুন আওয়াজ। বনের ভিতরে ছোটাছুটি করছে মানুষ, আবছাভাবে তাদের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর ভাসছে বাতাসে। কপালে ভাঁজ পড়ল। ওর। কেউ ওকে দেখে ফেলেছে? তা কী করে হয়? উবু হয়ে ঝোপের পাশে গেল ও, পাতা সরিয়ে উঁকি দিল সন্তর্পণে।
একশো গজ দূরে, ঝর্ণার অন্য পাড়ে স্থানীয় দু’জন যুবককে দেখতে পেল রানা—মাচেটি চালাতে চালাতে বেরিয়ে এসেছে জঙ্গল ভেদ করে। দু’জনেরই কোমরে ঝুলছে পিস্তল। পানির ধারে পৌঁছে থেমে গেল ওরা, ব্যস্তভাবে নজর বোলাল চারপাশে, হাবভাবে মনে হলো, কিংকর্তব্য ঠিক করতে পারছে না। শিকারী নাকি? বুনো হরিণ শিকারে বেরিয়েছে?
রানার ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে শোনা গেল চিৎকার। দুই। যুবকের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসেনি সেটা, এসেছে বনের ধারের ফাঁকা মাঠ থেকে।
‘ইল্ উয়োমো। একোলো! ইল্ ক্যাম্পো!!’
বুনো পশু না, মানুষ শিকারে বেরিয়েছে ওরা! চিৎকার শুনেই পিস্তল হাতে নিয়ে দুই যুবক যেভাবে ছুটে চলে গেল, তাতে বোঝা গেল, শিকারকে দেখামাত্র খুন করে ফেলবে। কিন্তু কাকে খুঁজছে ওরা? কুয়াশাকে?
কেন যেন বাঙালি বিজ্ঞানীর নামটাই মাথায় এল রানার। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো সঙ্গে সঙ্গে, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে উঠল—অনুমানটা ভুল নয়। কিন্তু কেন? কুয়াশা কি এরই মধ্যে কিছু জেনে ফেলেছে?
পাইন গাছের আড়ালে এসে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবল রানা। রাস্তা ধরে পোর্তো ভেচিয়োতে চলে যেতে পারে, কুয়াশার জন্য অপেক্ষা করতে পারে ওখানে। লুকিয়ে থাকার জন্য ঝর্ণার ধারের এ-জায়গাটা আদর্শ, অনায়াসেই সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাটিয়ে দিতে পারবে এখানে, এরপর অন্ধকারের আড়াল ব্যবহার করে পোর্তো ভেচিয়োয় পৌঁছুতে কষ্ট হবে না। সমস্যা হলো, অনেকটা সময় বসে থাকতে হবে এতে; অথচ কী ঘটেছে, তা জানার জন্য ছটফট করছে মন। একটাই বিকল্প আছে সামনে—শিকারীদেরকে অনুসরণ করা, কম সময়ে কুয়াশাকে নাগালে পাবার এটাই সহজ উপায়। ওটাই করবে বলে সিদ্ধান্ত নিল রানা।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় প্রথমবারের মত কুয়াশার দেখা পেল ওপাহাড়ি এক ঢাল ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে। অস্তায়মান সূর্যের আলোয় আবছাভাবে আলোকিত দীর্ঘ দেহটা লক্ষ্য করে কয়েকটা গুলি ছুঁড়ল উত্তেজিত জনতা, কিন্তু লাগাতে পারল না। একটু পরেই মুচকি হাসি ফুটল রানার ঠোঁটে—কুয়াশার কৌশল বুঝতে পেরে। পালাবার চেষ্টা করছে না লোকটা, বরং শত্রুদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়ে একজনকে কবজা করতে চাইছে। মন্দ নয় বুদ্ধিটা, দুঃসাহসিকও বটে—শত্রুর এলাকায় শত্রুকেই আটক করা! কেউ আশা করবে না ব্যাপারটা
লম্বা লম্বা ঘাসে ঢাকা সমভূমির মাঝখানে ঘাপটি মেরে আশপাশের এলাকা জরিপ করল রানা। সন্ধ্যার বাতাসে বার বার * নুয়ে পড়ছে ঘাসের ডগা, উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমা-সুবিধেই হলো এতে। কুয়াশার পরবর্তী পদক্ষেপ, সেইসঙ্গে কোথায় ওকে ইন্টারসেপ্ট করা যায়—বোঝার চেষ্টা করল। উত্তরদিকে যাচ্ছে লোকটা, মাইলখানেক গেলে পর্বতসারির গোড়ায় পৌছুবে। থামবে ওখানেই, কারণ পাহাড়ের উপরে উঠে কোনও লাভ হবে না। তারমানে আবার ফিরে আসবে সে, দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে এগোবে, যাতে ধাওয়াকারীদের সামনে পড়ে না যায়। ওদিকেই কোথাও ডাইভারশন সৃষ্টি করবে, বিশৃঙ্খলার মাঝে পাতবে ফাঁদ, আটক করবে কাউকে।
ওই সময়টাতেই কুয়াশাকে ইন্টারসেপ্ট করতে হবে। আগে করা গেলে ভাল হতো, কারণ ফাঁদ নিয়ে যখন সে ব্যস্ত থাকবে, তখন যে-কোনও ধরনের অ্যাপ্রোচ ঝুঁকিপূর্ণ। ওকে শত্রু ভেবে বসতে পারে কুয়াশা। কিন্তু আর কোনও উপায়ও নেই। ডাইভারশন এবং কনফিউশন ছড়াবার জন্য ছোটাছুটি করছে কুয়াশা, তার মাঝে ওর ধারেকাছে পৌঁছনো সম্ভব নয়। তাই হামাগুড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে এগোতে শুরু করল রানা।
ধীরে ধীরে দূর পাহাড়ের আড়ালে মুখ লুকাল সূর্য। গোটা এলাকার ছায়াগুলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর… গাঢ় থেকে গাঢ়তর হলো। পাহাড়ি এলাকা ঢেকে যেতে শুরু করল নিকষ অন্ধকারে। কিন্তু কুয়াশার কোনও চিহ্ন দেখতে পেল না রানা। যেখানে তাকে আশা করছে ও, সেখানকার পেরিমিটারের ভিতর ঘোরাফেরা করতে থাকল। সন্ধ্যার আবছায়া পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে চোখ, কান খাড়া করে রেখেছে অস্বাভাবিক শব্দ শোনার জন্য। কিন্তু না, নেই কুয়াশা।
চলাচলের সুবিধার্থে কাঁচা রাস্তার দিকে গেছে নাকি লোকটা? অমন কাজ করে থাকলে মস্ত বোকামি করেছে। পুরো এলাকা এখন জ্যান্ত হয়ে আছে সার্চ-পার্টির হট্টগোলে। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সবাই চিরুনি-তল্লাশি চালাচ্ছে—একেক দলে দুই থেকে ছ’জন মানুষ, প্রত্যেকে সশস্ত্র— ছুরি, বন্দুক বা মাচেটি… কিছু না কিছু আছে সবার কাছে। আর আছে ফ্ল্যাশলাইট আলোকরশ্মিগুলো ডানে-বামে ঘুরছে, ক্ষণে ক্ষণে ভেদ করছে পরস্পরকে, যেন অত্যাধুনিক সিকিউরিটি সিস্টেমের ইন্টারসেক্টিং লেজার। ঢাল ধরে আরও উঁচুতে উঠে যেতে শুরু করল রানা। ফ্ল্যাশলাইটের আলোকরশ্মিগুলোই এখন বাঁচাচ্ছে ওকে উন্মত্ত, খুনে কর্সিকানদের হাত থেকে। ওগুলো দেখেই ও বুঝতে পারছে, কখন এগোতে হবে, কখনই বা থেমে যেতে হবে।
দুটো আলোকরশ্মির মাঝখান দিয়ে পথ করে ছুটছিল রানা, আচমকা থেমে গেল গরগর করতে থাকা একটা পশুকে দেখতে পেয়ে—চোখ বড় করে ওটা তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ছুরি বের করে ফেলেছিল রানা, থেমে গেল প্রাণীটার পরিচয় টের পেয়ে। সাধারণ এক পোষা কুকুর-পশুচারণের সময় গরু-ছাগল আর ভেড়ার পালকে একাটা রাখার জন্য ব্যবহার করে রাখালরা। মোটেই হিংস্র নয়। কাছে গিয়ে সতর্কভাবে কুকুরটার গায়ে হাত বোলাল ও, বাধা পেল না। গরগরানি থেমে গেল, গুটিসুটি মেরে মাটিতে বসে পড়ল প্রাণীটা। ফ্ল্যাশলাইটের আলো এগিয়ে আসছে দেখে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে গেল রানা।
মাটিতে অর্ধেক দেবে থাকা একটা বড় বোল্ডারের পিছনে পৌঁছে থামল ও। দম ফিরে পাবার জন্য অপেক্ষা করল একটু, তারপর বোল্ডারের পাশ দিয়ে উঁকি দিল নীচে। পাহাড়ি ঢাল আর প্রান্তরে পাগলের মত নেচে বেড়াচ্ছে শত শত আলোকরশ্মি, সার্চ-পার্টির অবস্থান বোঝা যাচ্ছে পরিষ্কার। ওর কাছাকাছি নেই একটাও। আবছাভাবে একটা সরাইখানার কাঠামো দেখতে পেল দূরে, ওটার সামনে দিয়ে গেছে পায়ে হাঁটা পথ। সরাইখানার একশো গজ দক্ষিণে চওড়া রাস্তা—পোর্তো ভেচিয়োতে যেতে হয় ওটা দিয়ে। মশাল আর ফ্ল্যাশলাইটের ভিড় দেখে বোঝা গেল, রাস্তাটা অবরোধ করে রেখেছে কর্সিকানরা
নরক-গুলজার চলছে পুরো এলাকা জুড়ে। রানার কানে ভেসে আসছে মানুষের উত্তেজিত চিৎকার, কুকুরের ডাক আর ঝোপঝাড়ের মাঝে মাচেটি চালানোর আওয়াজ। অদ্ভুত, ভীতিকর এক দৃশ্য—একটা দেহও দেখা যাচ্ছে না, অন্ধকারের মাঝে শুধু নেচে বেড়াচ্ছে আলোর রেখা, অদৃশ্য সুতোয় বেঁধে ওগুলো নিয়ে যেন খেলা ক্রছে কেউ
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ নতুন এক আলো দেখা গেল বনভূমির মাঝে। সাদাটে নয়, হলুদ-কমলা। আগুন জ্বলে উঠেছে পোর্তো ভেচিয়োর রাস্তার একপাশে। ডাইভারশনের সূচনা করেছে কুয়াশা। চমৎকার ফলও মিলল। হৈ-হৈ করে কর্সিকানরা ছুটতে শুরু করল আগুনের দিকে।
নিজের জায়গা ছেড়ে নড়ল না রানা। বোঝার চেষ্টা করল, এই ডাইভারশনকে কীভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে কুয়াশা। এরপর কী করবে সে? কীভাবে ফাঁদ পাতবে? তিন মিনিট পরেই পেয়ে গেল জবাব। বনের আরেক অংশে লাফ দিয়ে উঠল আগুনের শিখা—পোর্তো ভেচিয়োর রাস্তা থেকে সিকি মাইল বাঁয়ে। একটার জায়গায় দুটো ডাইভারশন সৃষ্টি হয়েছে এবার, বিভক্ত করে দিয়েছে কর্সিকানদেরকে। তল্লাশিতে ব্যাঘাত ঘটেছে—আগুন নেভানোর দিকে এখন সবার মনোযোগ; পাহাড়ি অরণ্যে দাবানল শুরু হলে মহা বিপদ!
আগুনের আভায় কর্সিকানদের দেখতে পাচ্ছে রানা, পাগলের মত ছোটাছুটি করছে তারা। আরেকটা আগুন লাফিয়ে উঠল- এবারেরটা আরও বড়, প্রথম দুটোর প্রায় চারশ’ গজ দূরে। কুয়াশার তৃতীয় ডাইভারশন। আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ল বিশৃঙ্খলা। কুয়াশা কোনও ঝুঁকি নিচ্ছে না। কাউকে যদি ফাঁদে ফেলতে না-ও পারে, গোলমালের সুযোগ নিয়ে সহজেই পালিয়ে যেতে পারবে।
বোল্ডারের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল রানা, হামাগুড়ি দিয়ে নামতে শুরু করল ঢাল বেয়ে। মাটির সঙ্গে প্রায় মিশিয়ে রেখেছে শরীর, এগোচ্ছে সরীসৃপের মত। তীক্ষ্ণ করে রেখেছে নজর। হঠাৎ রাস্তা থেকে একশো গজ পশ্চিমে এক টুকরো আলো জ্বলে উঠল, দেশলাই জ্বেলেছে কেউ। এক সেকেণ্ড জ্বলল ওটা, তারপর নিভে গেল। রানা একা না, কর্সিকানদের মধ্যেও কয়েকজন দেখতে পেয়েছে ওটা। পর পর তিনটে ফ্ল্যাশলাইটের আলো ঘুরে গেল ওদিকে। আলোর রশ্মির নাচানাচি দেখে বোঝা গেল, তিনজনেই ছুটতে শুরু করেছে ওদিকে। জানে না, কুয়াশার ফেলা টোপে সাড়া দিচ্ছে। ওদের একজনকে খুব শীঘ্রি আটক করবে দুর্ধর্ষ লোকটা
জ্যাকেটে তলায় হোলস্টার থেকে নিজের সিগ-সাওয়ার বের করল রানা, উঠে দাঁড়িয়ে ছুটতে শুরু করল। আড়াআড়ি একটা পথ ধরে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামছে কুয়াশার আনুমানিক অবস্থান লক্ষ্য করে। হয়তো সাহায্য দরকার নেই কুয়াশার, তবু যদি ধাওয়াকারীদের দু’জনকে ও ব্যস্ত রাখতে পারে, কুয়াশার প্ল্যান সফল হবে নিশ্চিতভাবে। বাড়তি একজনকে যদি আটক করা যায়, তা হলে তো আরও ভাল। জেরা করার জন্য দু’জন সাবজেক্ট পারে ওরা।
ছোট ছোট একেকটা ছুট’ লাগাচ্ছে রানা। এক কাভার থেকে পৌঁছচ্ছে আরেক কাভারে। প্রতি কদমে বাড়ছে সতর্কতা। নজর রাখছে ঢালের নীচে নড়তে থাকা ফ্ল্যাশলাইটগুলোর উপরে। হালকা আভায় দেখতে পাচ্ছে লোকগুলোর হাতে ধরা আগ্নেয়াস্ত্র, শিকারের ছায়া দেখলেও গুলি ছুঁড়তে প্রস্তুত।
হঠাৎ থেমে দাঁড়াল ও। একটা বৈসাদৃশ্য লক্ষ করেছে। একেবারে ডান দিকের ফ্ল্যাশলাইটটা… ওর থেকে মোটামুটি দুইশ’ গজ নীচে ওটা… নড়ছে অদ্ভুতভাবে। নড়াচড়ার ছন্দ একেবারে বেমানান। সামনে-পিছনে নয়, ওটা নড়ছে উপর-নীচে! প্রতিফলনও নেই ওটার পাশে—যত সামান্যই হোক, ফ্ল্যাশলাইটের মালিকের অন্য হাতে ধরা আগ্নেয়াস্ত্রের ধাতব শরীরে একটু হলেও প্রতিফলন ঘটবে আলোর। প্রতিফলন নেই মানে অস্ত্রও নেই।
রহস্যটা ধরতে পেরে চমকে উঠল রানা। ফ্ল্যাশলাইটটা এ-মুহূর্তে হাতে নেই কারও, গাছের ডালে বেঁধে ডালটাই নড়িয়ে দেয়া হয়েছে! এ আরেক ডাইভারশন… ফ্ল্যাশলাইটের মালিক নিজের মুভমেন্ট লুকাতে চাইছে।
ঝট্ করে ঘাসের আড়ালে বসে পড়ল রানা। অতিমাত্রায় সজাগ হয়ে উঠেছে। লোকটা ওর আশপাশে থাকতে পারে। আশঙ্কাটা সত্যি হয়ে উঠল মিনিটখানেকের মধ্যেই। ঘাসের প্রাচীর ভেঙে বিশালদেহী এক কর্সিকানকে উদয় হতে দেখল ও কয়েক গজ দূরে। আরেকটু হলে ‘রানার গা মাড়িয়ে দিত, গড়ান দিয়ে সরে গেল ও।
পায়ের শব্দ হালকা হয়ে এলে উঠে দাঁড়াল রানা। বুক ধক ধক করছে। আন্দাজের উপর ভর করে পিছু নিল কর্সিকানের পাহাড়ের উত্তরদিক লক্ষ্য করে ছুটছে লোকটা, রিজের তলায় পৌছুতে চাইছে—রানাও ওদিকেই যাচ্ছিল। অল্পক্ষণে বোঝা গেল, পুরো এলাকা হাতের তালুর মত চেনে ব্যাটা; অন্ধকারেও চিতার মত ছুটছে। দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে রানার সঙ্গে। ছোটার গতি বাড়িয়ে দিল ও, কিছুতেই পিছিয়ে পড়া চলবে না। চোখের কোণে. ফ্ল্যাশলাইটের আলো ঝিকমিকিয়ে উঠল, ঢাল বেয়ে উঠে আসছে একজন… নিঃসন্দেহে তাকেই টার্গেট করেছে কুয়াশা।
অনেকদূর উঠে আসার পর থেমে দাঁড়াল রানা। কর্সিকানকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও, শোনা যাচ্ছে না পায়ের আওয়াজও। চারপাশ নিস্তব্ধ… বড্ড বেশি নীরব। মাটিতে শুয়ে পড়ল ও, অন্ধকারের ভিতর আঁতিপাঁতি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওর দৃষ্টি, হাতের আঙুল চেপে বসেছে সিগ-সাওয়ারের ট্রিগারে। কিছু একটা ঘটতে চলেছে খুব শীঘ্রি। কিন্তু কোথায়? কীভাবে?
দেড়শো গজ সামনে, একটু নীচে, ফ্ল্যাশলাইটের আলো মিটমিট করতে শুরু করেছে। না… জ্বালানো-নেভানো হচ্ছে না, আলো বাধা পাচ্ছে গাছের গায়ে। ফ্ল্যাশলাইটের মালিক পাইন গাছের একটা ঝাড়ের দিকে এগিয়ে আসছে।
হঠাৎ লাফিয়ে উঠল আলোকরশ্মি-প্রথমে আকাশের দিকে উঠে পড়ল, তারপর আছড়ে পড়ল মাটিতে; একটু গড়িয়ে স্থির হয়ে গেল। বুঝতে পারল রানা, আঘাত হেনেছে কুয়াশা। কিন্তু ওর জানা নেই, আলোর এই সঙ্কেত দেখার জন্য আরেকজন কর্সিকান ঘাপটি মেরে আছে খুব কাছে।
আর শুয়ে থাকার মানে হয় না। উঠে ছুট লাগাল রানা আলোর উৎসের দিকে। পাহাড়ের পাথুরে ঢালে কর্কশ শব্দ তুলছে ওর জুতোর তলা, কিন্তু পরোয়া করল না। অনেকখানি জায়গা পেরুতে হবে ওকে, এবং খুব দ্রুত। অন্ধকারে দৃষ্টি চলছে না, বোঝা যাচ্ছে না কোত্থেকে শুরু হয়েছে গাছের সারি। যদি একটু চেহারা দেখা যেত, যদি একটু আওয়াজ শোনা যেত… ভাবতে ভাবতে সচকিত হয়ে উঠল ও। আওয়াজ! চিৎকার করেই তো সতর্ক করে দেয়া যায় কুয়াশাকে। তাই করতে যাচ্ছিল, কিন্তু থমকে গেল অচেনা কণ্ঠস্বর শুনে।
ওই তো… ত্রিশ গজ নীচে, দুটো গাছের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বিশালদেহী কর্সিকান। বাতাসে ভাসছে তার ভারী গলার আওয়াজ। মাটিতে পড়ে থাকা ফ্ল্যাশলাইটের আভায় চকচক করছে হাতে ধরা শটগান। ওদিকে ঘুরে গেল রানা, সিগ-সাওয়ার ধরা হাত প্রসারিত করছে সামনে।
‘তুমি ফেনিসের লোক?’ কুয়াশার গলা চিনতে পারল রানা জবাব না দিয়ে চেঁচাল কর্সিকান, ‘পার নস্ত্রো সার্কোলো!’ বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে লোকটার পিঠে তিনবার ফায়ার করল রানা। কর্সিকানও শটগানের ট্রিগার চেপেছে, ডাবল ব্যারেলের ভয়াবহ বিস্ফোরণের তলায় চাপা পড়ে গেল ওর সিগ সাওয়ারের আওয়াজ। পরমুহূর্তে হুড়মুড় করে মাটিতে পড়ে গেল বিশালদেহী, নিথর হয়ে গেল কেঁপে উঠে।
হামাগুড়ি দিয়ে পাইন ঝাড়ের দিকে এগোল রানা, কুয়াশার গুলি খেতে চায় না। কাছে গিয়ে ডাকল, ‘কুয়াশা?’
‘রানা, তুমি?’ শোনা গেল পরিচিত কণ্ঠ।
‘আপনার কোথাও লাগেনি তো?’
‘উঁহুঁ, ব্যাটা তার বন্ধুকেই ঝাঁঝরা করে ফেলেছে।’
এগিয়ে গেল রানা। বিশালদেহীর কয়েক গজ সামনে চিৎ হয়ে পড়ে আছে অপর কর্সিকান, কুয়াশা সরে যাওয়ায় শটগানের শেল তার বুক ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে।
‘আলোটা নেভান।’ চাপা গলায় বলল রানা।
তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাশলাইটটা তুলে নিয়ে সুইচ অফ করল কুয়াশা বলল, ‘এক্কেবারে সময়মত হাজির হয়েছ, ভাই।’
‘শোধবোধ,’ রানা বলল। ‘এক্সেলসিয়র হোটেলের সিঁড়িতে আপনিও প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন আমার। থাক ওসব….. নীচে আরেকজন রয়ে গেছে। দুই দোস্তের ডাক শোনার জন্য অপেক্ষা করছে সে। যদি না শোনে…’
‘এখানে উঠে আসবে,’ বলল কুয়াশা। —তখন ওকে ঘায়েল করব আমরা।’.
‘এত সাহস দেখাবে বলে মনে হয় না,’ মাথা নাড়ল রানা। ‘সঙ্গী-সাথীদেরকে ডেকে আনার আগেই আমাদের সরে যাওয়া দরকার।
‘ওরা ব্যস্ত, আগুনের দিকে ইশারা করল কুয়াশা। ‘সহজে আসতে পারবে না।’
‘তা-ও… ঝুঁকি নেবার কোনও মানে হয় না,’ গাছের আড়াল থেকে উঁকি দিল রানা। নড়তে দেখল ফ্ল্যাশলাইটের আলোকরশ্মি। ‘ওই তো, যাচ্ছে!’
‘চলো,’ পাইন ঝাড় থেকে বেরুনোর জন্য ঘুরল কুয়াশা। ‘লুকানোর মত ডজনখানেক জায়গা চিনে নিয়েছি আমি। অনেক কথা আছে তোমার সঙ্গে।’
‘কিছু জানতে পেরেছেন?’ জিজ্ঞেস করল রানা।‘
‘হ্যাঁ। একটু খোঁজখবর নিতেই…’
‘আমার জন্য অপেক্ষা করবার কথা ছিল আপনার!’ বাধা দিয়ে অনুযোগের সুরে বলল রানা।
‘কোনও কাজ ছাড়া চুপচাপ বসে থাকলে সন্দেহ করত লোকে,’ কৈফিয়ত দিল কুয়াশা। ‘আফটার অল, এ-জায়গা তো ট্যুরিস্ট স্পট নয়!’
‘হুম! কী জানতে পেরেছেন?’
‘পুরোপুরি নিশ্চিত নই, তবে ফেনিসের সঙ্গে যে এ-জায়গার সম্পর্ক এখনও আছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। নিজের চোখেই তো দেখতে পাচ্ছ, আমাকে খুন করার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছে ওরা। আমার ধারণা…..’
কথা শেষ হলো না কুয়াশার। তার আগেই আগ্নেয়াস্ত্র কক করার শব্দ শুনে জমে গেল।
‘ফারমা!’ চালের উপর থেকে চেঁচিয়ে উঠল একটা অস্থির কণ্ঠ।
একসঙ্গে অস্ত্র তুলল রানা-কুয়াশা, ঘুরে গেল’ শব্দের উৎসের দিকে।
‘বাস্তা!’ ধমকে উঠল কণ্ঠটা। তারসঙ্গে শোনা গেল চাপা গরগর… কুকুরের আওয়াজ। ‘আমার হাতে এটা দুই ব্যারেলের রাইফেল, সেনিয়র,’ স্থানীয় উচ্চারণে ইংরেজিতে বলে উঠল এবার কণ্ঠটা। মেয়ের গলা। ‘একটু আগে যেটা ফায়ার হলো, সেটার মতই আরেকটা লুপো। তবে তোমাদের পায়ের কাছে যে-লোকটা পড়ে আছে, তারচেয়ে ভালভাবে এটা চালাতে জানি আমি। অস্ত্র নামাও, সেনিয়র। ফেলে দেয়ার দরকার নেই, ফলে দেয়ার দর ওগুলো তোমাদের কাজে আসবে।’
‘কে তুমি?’ জানতে চাইল রানা। চোখ পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করল রহস্যময়ীকে। দেহের রেখা ছাড়া আর কিছু দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। বোঝা যাচ্ছে, ট্রাউজার আর ফিল্ড জ্যাকেট পরে আছে মেয়েটা। এক হাতে ধরে রেখেছে কুকুরের গলার শেকল।
ঘেউ ঘেউ করে উঠল প্রাণীটা।
‘তোমাদের মধ্যে ইতিহাসবিদ কে?’ পরিচয় না জানিয়ে বলল মেয়েটা। ‘তাকে খুঁজছি আমি।’
‘কী!’ রানা একটু বিভ্রান্ত বোধ করল।
‘আমার কাভার!’ ফিসফিস করে বলল কুয়াশা। তারপর গলা চড়িয়ে বলল, ‘আমিই ইতিহাসবিদ… এ আমার সহকারী।’ রানাকে দেখাল। ‘কেন খুঁজছ আমাকে? খুন করতে?’
‘না। পুরো এলাকায় তোমার কথা ছড়িয়ে পড়েছে। তুমি নাকি পাদ্রোনিদের পাদ্রোনি-এর ব্যাপারে প্রশ্ন করে বেড়াচ্ছ??
‘কাউণ্ট গিলবার্তো বারেমি-র কথা বলছ? হ্যাঁ, তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি আমি। কিন্তু কেউ আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না।
‘একজন দেবে। বৃদ্ধা এক মহিলা… পাহাড়ের অনেক ভিতরে থাকেন। তোমাকে ডেকেছেন তিনি।’
‘পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তা জানো তো?’ বলল কুয়াশা। আমাকে শিকার করতে বেরিয়েছে নীচের লোকজন, দেখামাত্র খুন করে ফেলবে। এর মাঝে ঝুঁকি নিয়ে ওই বৃদ্ধার কাছে নিয়ে যাবে আমাকে?’
‘হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি এসো, অনেকদূর যেতে হবে আমাদেরকে রাস্তাও খুব খারাপ। পাঁচ-ছ’ঘণ্টা লেগে যাবে।’
আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও। কেন জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছ তুমি?’
‘কারণ ওই বৃদ্ধা আমার দাদী। পাহাড়ের সবাই ওঁকে ঘৃণা করে, তাই নীচে থাকতে পারেন না। কিন্তু আমি তাঁকে ভালবাসি।’
‘কে তিনি? কী তাঁর পরিচয়?’
‘ভিলা বারেমির রক্ষিতা… এনামেই সবাই ডাকে তাঁকে, ‘ বলল মেয়েটা। ‘আর কোনও কথা নয়। এসো আমার সঙ্গে।