৮
মার্গারেট ক্লার্ক বন্দরে রয়ে গেল। তখনও চিমনি সারানো হয়নি। আমরা শাঁখ ঘণ্টা অর্থাৎ ভোঁ বাজিয়ে রওনা হলাম। আমার পথ অজানা অচিন দেশে, গ্রিনল্যান্ডে।
জাহাজ উত্তরে চলেছে। মাঝে মাঝে আইসবার্গ (ভাসমান বরফের পাহাড়) দেখা গেল। এই বরফের পাহাড়ে যদি ধাক্কা খায় ৮,০০০ টন জাহাজ, তো আমরাই ডুবব। প্রচণ্ড পাহাড় হয়তো একটু কেঁপেও উঠবে না। এই অঞ্চলের সব জাহাজে ব্যবস্থা আছে বড় আইসবার্গ দেখলে তাকে কামান দিয়ে ভেঙে ফেলবার। বড় আইসবার্গ খুবই বিপজ্জনক। ওপরে হয়তো সামান্য ২-৪ হাজার ফুট উঁচু কিন্তু জলের নিচে বিশ হাজার ফুট গভীরে তার অস্তিত্ব ঠিক বোঝা যায় না। মনে পড়ে অতিকায় লুসিটানিয়া জাহাজের দৃশ্য। সেকালের বৃহত্তম জাহাজ আটলান্টিক পার হচ্ছিল দুই হাজার আমেরিকাযাত্রী সমেত। এমনই একটা বরফের পাহাড় নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের দিক থেকে ভেসে আসছিল। দুইয়ের সংঘর্ষ হল। ফলে লুসিটানিয়া আটলান্টিক মহাসাগরে সব যাত্রীসুদ্ধ নিমজ্জিত হল। যাত্রীদের মধ্যে একজন বঙ্গ সন্তানও ছিলেন।
এই উত্তর অঞ্চলে প্রায় আট মাস শীত এবং চার মাস গ্রীষ্মকাল। শীতের সময় সূর্যের মুখ একেবারে দেখা যায় না। বিকাল থেকে অরোরা বোরিয়ালিস বা নর্দার্ন লাইটের কাঁপা কাঁপা অস্পষ্ট আলোয় দেখা যায় এবং মোটামুটি সব কাজ সারা হয়। জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সূর্যের আলো দিবারাত্র পাওয়া যায়। অক্টোবর মাস থেকে ঝড়, বরফ ও শীতের সূত্রপাত। শীত যে কত কঠিন হতে পারে তা কল্পনার অতীত। -৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট শীত যে কত কষ্টকর ভাবা যায় না। মরুভূমিতে ১৩৫-১৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট গরম পেয়েছি। গ্রিনল্যান্ডে তার সম্পূর্ণ উল্টো।
ইসাবেলাতে এসে পর্যন্ত পুরনো সঙ্গীদের অভাব অনুভব করি। সবচেয়ে করি পাখিদের। সী-গাল, আলবাট্রশ ইত্যাদি যারা মেছো জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে থাকে। ইসাবেলা তো তা নয় সেইজন্য উদয়াস্ত কিচির মিচির পাখির ডাক শুনতে পাই না। আম্ব্রেলা বার্ডের হঠাৎ ডানা খোলার ও বন্ধ করার চাতুরিও দেখি না।
আইসবার্গের অত্যাচার বেড়েছে, আমাদের জাহাজ সন্তর্পণে চলেছে।
চতুর্থদিনে গ্রিনল্যান্ডে পৌঁছলাম। প্রথমেই চোখে পড়ল সবুজের অভাব, গ্রিন কোথাও দেখলাম না। চারদিক চিরতুষারে ঢাকা একেবারে সাদা, লোকেদের স্বাস্থ্য ভালো। রং ফর্সা, অনেকাংশে যেন ভুটিয়াদের সঙ্গে মিল দেখা যায়। চামড়ার পোশাক পরা।
ইসাবেলা সঙ্গে এনেছে মদ ও ময়দা এবং আলু-পেঁয়াজ ইত্যাদি। এস্কিমোরা সবচেয়ে ভালোবাসে স্প্যানিশ মদ খেতে। তাই এই দুই দেশের মধ্যে তার আদানপ্রদান আছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে ডেনমার্কের সঙ্গেও সম্বন্ধ ঘনিষ্ঠ। ডেনিশ ভাষা অনেকে অল্পবিস্তর জানে। গ্রিনল্যান্ড দেশটা ডেনমার্কের অধীন নামে-মাত্র। এখানে লোকেদের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।
পাছে এস্কিমোদের ওপর শোষণ হয়, ডেনমার্ক থেকে তাই নিয়ম জারি করা হয়েছে যে বিশেষ ইঞ্জিনিয়ার বা অভিযাত্রী ছাড়পত্র নিয়েই তবে গ্রিনল্যান্ডে ঢুকতে পারবে। পাদ্রীরা ধর্ম প্রচারের নামে অপকর্ম করবার সুবিধা যাতে না পায় সেজন্য তাদের প্রবেশ নিষেধ।
ইসাবেলা জাহাজ থামবার পরই একজন এস্কিমো এসে স্টেফানের সঙ্গে করমর্দন করল। এস্কিমোটির নাম লেয়া, বেশি বয়স নয়। সে ময়দা, মদ ইত্যাদি গুদামজাত করবে এবং পরিবর্তে মাছ, মাছের তেল, চামড়া ইত্যাদি দেবে। লেনদেনের জন্য টাকাকড়ির প্রয়োজন নেই। মালের পরিবর্তে মাল, বার্টার সিস্টেম যাকে বলে।
লেয়ার সঙ্গে স্টেফান আমার পরিচয় করিয়ে দিল এবং সে আমায় সাদর অভ্যর্থনা জানাল। আমার হ্যাভারস্যাক ও সাইকেল নিয়ে গ্রিনল্যান্ডে পদার্পণ করলাম। লেয়ার অতিথি হয়ে থাকব, তার কাজে সাহায্য করব। আমি পরিশ্রম দেব। বরফের বাড়িতে লেয়ার স্ত্রী ও দুটি ছেলেমেয়ের সঙ্গে থাকতে হবে।
বাড়ির কাছেই গুদাম। প্রকাণ্ড বরফের বাড়ি, মানে একটি ঘর। আমার সাইকেল গুদামে আশ্রয় পেল। গুদামে মাছ, সীলের চামড়া ও মাছের তেল, কড লিভার তেল ইত্যাদি ছিল। তিনদিন ধরে এইসব জিনিস ইসাবেলাতে তুলতে এবং সেখান থেকে মদ ও ময়দা, আলু ইত্যাদি নামাতে কেটে গেল।
স্টেফান বিদায় নিল। আমি প্রতিশ্রুতি দিলাম স্পেনে বার্সিলোনায় তার বাড়ি যাব। চারদিন কাজ করার জন্য কুড়ি পাউন্ড মাইনে পেলাম। আবার এক বছর পর শীতান্তে ইসাবেলা এই বন্দরে আসবে, ডেনিশ ও নরওয়েজিয়ান জাহাজ ক্বচিৎ কখনও আসে।
লেয়ার অবস্থা ভালো। দেশের গভীরে সীল, শ্বেত ভালুক, সাদা খেঁকশিয়াল ইত্যাদির চামড়া পাওয়া যায়। অন্য এস্কিমো শিকারিরা এই সব মূল্যবান চামড়া সামান্য লাভে লেয়ার কাছে বিক্রি করে যায়। তারা মদ ও আলু, ময়দা, দেশলাই, বন্দুকের গুলি ইত্যাদি তার বদলে নিয়ে যায়।
লেয়ার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হল। নাম আন্না। ছেলের বয়স ৬, মেয়ের বয়স ৪। আন্নার বয়স ৩০ হবে। লেয়ার সঙ্গে বয়সের বিশেষ পার্থক্য নেই। বাড়িটা বরফের, ঢোকবার রাস্তা হামাগুড়ি দিয়ে যেমন দক্ষিণ ভারতবর্ষে টোডাদের বাড়িতে দেখা যায়। একটা বরফের স্ল্যাবে দড়ি বাঁধা থাকে। ভেতরে ঢুকে দড়ি টেনে দিলে ঘরে আর কেউ ঢুকতে পারে না। স্ল্যাবের বাইরের দিকে একটি দড়ি আছে সেটা টানলে দরজা খুলে যায়। বাড়িকে ইগলু বলে। ইগলুর ওপর বরফের মাঝে একটু ফাঁক রাখা হয়েছে, ভেন্টিলেশনের জন্য। তাছাড়া দরজা জানালা নেই। দিনের আলো হলে কিংবা অরোরা বোরিয়ালিসের আলোয় ইগলুর ভেতরটায় সব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাত্রের অন্ধকারে ইগলুর ভেতর অন্ধকার দেখায়। মাছের তেলের আলো মিটি মিটি জ্বলে। অস্পষ্ট হলেও দেখা যায় সব।
ঘরে চারটে বাঙ্ক বা বার্থ আছে। বিছানা বলতে কয়েকটা সীলের চামড়া পাতা, সীলের চামড়া দুটো পিঠোপিঠে সেলাই করে শিপিং ব্যাগ করা হয়েছে। তার ভেতর ঢোকবার সময় ঠান্ডা বেশি হলেও একটু পরেই গরম ও আরাম লাগে। এদের দেশে শোবার সময় কাপড়চোপড় পরে ঘুমানোর রেওয়াজ নেই।
শীতপ্রধান দেশ বলে এস্কিমোদের খুব কম ছেলেপুলে হয়। বাচ্চাদের খাঁদা নাক, ছোট চোখ হলেও মিষ্টি দেখায়। খুব ছোট বয়স থেকে এদের কড় লিভার তেল মাখানো হয় কর্মঠ করবার জন্য। শীতের সময় বড়রা বুকে পিঠে কড লিভার তেল মাখে শীত সহ্য করবার জন্য। যে কোনও মানুষের চেয়ে এস্কিমোরা অনেক বেশি শীতের কষ্ট সহ্য করতে পারে। এদের পূর্বপুরুষরা বেয়ারিং অন্তরীপের বরফ পার হয়ে আলাস্কার পথে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। সে কথা পরে হবে।
শীতের দিনে একটা ছোট ইগলুর মধ্যে বন্দী হয়ে থাকার কথা আমি ভাবতে পারি না। কিন্তু ইগলুর বাইরের অবস্থা এমনই ভয়ঙ্কর, এতই পীড়াদায়ক যে সেকথা ভাবলে বন্দী হয়ে থাকার কষ্ট মনেই পড়ে না। ইগলু কথাটার মানে আশ্রয় আর সত্যিই সেটা তাই।
এস্কিমোরা বলে যে যতদিন না পাদ্রীরা তাদের দেশে এসেছিল ততদিন তারা অনেক বেশি কর্মঠ ও শীতকে অগ্রাহ্য করবার ক্ষমতার অধিকারী ছিল। এস্কিমোরা গরমের দিনে নগ্ন হয়ে কড লিভার তেল মাখত, পাদ্রীরা বলল তোমরা অসভ্য, কাপড় পরো। কাপড়-জামা পরার ফলে তারা দুর্বল হয়ে গেল এবং টি বি রোগগ্রস্ত হল। সব শেষে গ্রিনল্যান্ডে পাদ্রীরা নাকি আরও একটা ক্ষতি করেছিল, যৌনরোগ ও তারাই নাকি আমদানি করেছিল সেদেশে।
লেয়া আমার জন্য একটা কাজ ঠিক করল, মাটির নিচে ক্রিয়োলাইট মাইন থেকে ধাতু ওপরে তোলা। ক্রিয়োলাইট থেকে অ্যালুমিনিয়াম হয়, বক্সাইটের মতো। বছরে প্রায় দশ মিলিয়ন ডেনিশ টাকার মতো দামের ক্রিয়োলাইট খনি থেকে তোলা হয়। এর অর্ধেক যায় আমেরিকায়। বাকিটা পৃথিবীর সর্বত্র বিক্রি হয়। কোপেনহাগেন শহরের একটি ধনী পরিবারের পাঁচজন এই বিপুল বাৎসরিক আয়ের মালিক। এক ক্রোনার প্রায় এক টাকার সমান। আমার এমন সৌভাগ্য যে ডেনমার্কে ওই পরিবারের যিনি সবচেয়ে বড়, আক্সেল ইয়ার্ল, তাঁর বাড়িতে বাড়ির ছেলের মতো অনেকদিন ছিলাম। কিন্তু সে তো পরের কথা।
খনিতে যেখানে ক্রিয়োলাইট পাওয়া যায় সেখানে গভীরতা অনেক, ২,০০০- ৩,০০০ ফুট হবে। কয়লার খনি যেমন অনেক সময়ে নানারকম গ্যাসে দূষিত হয়, এখানে তেমন নয়। আমার কাজ হচ্ছে ক্রিয়োলাইট তুলে যন্ত্রের সাহায্যে ওপরে নিয়ে যাওয়া। খনির নিচে গরম। ওপরের ঠান্ডা হাওয়া ভালোই লাগে। খনিজ পদার্থটি আসলে পাথর। তার সঙ্গে সালফার আয়রন ইত্যাদি মেশানো থাকে। কোপেনহাগেন শহরে পাথর গুঁড়ো করে সালফার ও আয়রন ছেঁটে ফেলে খাঁটি ক্রিয়োলাইট বের করে। তারপর আরও গুঁড়ো করে ময়দার মতো অবস্থায় থলে ভর্তি হয় এবং বিক্রি হয়।
শুনলাম বন্দর থেকে ১৮ মাইল দূরে একটা শ্বেত ভালুক থাকে। প্রায়ই মাছ খাবার লোভে লেয়ার গুদামে হানা দেয়, বরফের নিচে নখ দিয়ে খুঁড়ে গর্ত করে এবং গুদামে ঢুকে খুব ক্ষতি করে।
একটা প্রকাণ্ড দল হল ভালুকটাকে শিকার করার জন্য। ভালুকটার খুব বড় দেহটা আট-দশ হাত হবে এবং গায়ের জোর অমানুষিক। এরা মানুষ দেখলে এত জোরে বরফের ওপর দিয়ে ছুটে এসে আক্রমণ করে যে তার তেজ ও দেহের ওজন সামলানো সম্ভব হয় না। কয়েক সেকেন্ড বড় জোর সময় দেয়, যদি বন্দুকের গুলিতে কিংবা বর্শা দিয়ে ভালুককে ঠেকানো যায়। আমাদের দলে চারটে রাইফেল এবং আটটা বর্শা। এস্কিমোদের সাহসও তেমনই। ভালুক প্রাণপণ জোরে ডাকতে আরম্ভ করে। এস্কিমোরা যদি বন্দুকের গুলিতে ছুটে আসবার সময় ভালুককে ঘায়েল করতে না পারে তো খুব দৃঢ়তার সঙ্গে ভালুকের পথ রোধ করে দাঁড়ায় এবং একজোট হয়ে বর্শা মারে।
সেদিনও ১০০ মিটার দূরে ভালুককে দেখা মাত্র তারা বন্দুক ছুড়ল। ভালুক বন্দুক অগ্রাহ্য করে, প্রচণ্ড বেগে দলকে আক্রমণ করতে এগিয়ে আসতে লাগল। যখন আর প্রায় ত্রিশ মিটার দূরে তখন অন্য একজন শিকারি এস্কিমো আবার বন্দুক ছুড়ল। কোথায় লেগেছে ঠিক বোঝা গেল না, কিন্তু ভালুক হোঁচট খেয়ে পড়ল সামনের দিকে। সেই অবস্থায় ভীষণ জোরে ভালুক পিচ্ছিল বরফের ওপর দিয়ে আমাদের দিকে এগোতে লাগল। তারপর সে ওঠবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল। অল্পক্ষণের মধ্যে দেহটা সটান হয়ে লুটিয়ে পড়ল বরফের ওপর। প্রাণপণ চিৎকার থেমে গেল, বুঝলাম ভালুকের দেহে প্রাণ নেই।
খানিকক্ষণ আমরা চুপচাপ অথচ সতর্কতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর উল্লাসধ্বনি করে ভালুককে দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে আরম্ভ করলাম। বরফের ওপর দিয়ে টানা সোজা।
ভালুককে দেখামাত্র সবাই মিলে গুলি ছুড়তে পারত। কিন্তু শিকারের তা নিয়ম নয়। যে প্রথম দেখেছে সে প্রথমে গুলি ছুড়বে। অন্যরা অযথা গুলি করে চামড়া ফুটো ফুটো করে দেবে না। তাতে চামড়ার দাম অনেক কমে যায়। যত কম গুলি মেরে কাজ হাসিল করা যায় ততই বাঞ্ছনীয়। বিপদে পড়লে অবশ্য যত খুশি গুলি ছুড়ে শিকারিদের বাঁচাবে।
লেয়া সবাইকে টাকা দিয়ে চামড়াটা রেখে দিল এবং শিকার সার্থক হয়েছে বলে সকলকে মদ খেতে দিল। ভালুককে এমনিভাবে শিকার করতে হয়। কোপেনহাগেনের বাজারে একটা সাদা রেশমের মতো নরম পশমের বিরাট চামড়ার দাম ১০,০০০ টাকা।
যারা যারা শিকারে যায় তারা সবাই সেই টাকার ভাগ পায়। গ্রিনল্যান্ডে সবচেয়ে ভালো চামড়ার দাম বড় জোর ৪,০০০-৫,০০০ টাকা হবে। আমার ভাগে ৪০০ টাকা জুটল। কিছু না করেই এই টাকা আমার লাভ হল।
সাদা শেয়ালের চামড়া লেজসুদ্ধ বিক্রি করতে প্রায়ই এস্কিমোরা আসে। খুব নরম ও সুন্দর দেখতে। একটার দাম ৭০০-১,০০০ টাকা। জামার ওপর গলায় এরকম একটা চামড়া জড়িয়ে থাকলে শীতের দিনে মেয়েদের সুন্দর দেখায়, কষ্টও হয় না।
এদেশে মাছ ধরার পদ্ধতি বেশ মজার। মানুষ ও ভালুক একই উপায়ে মাছ ধরে। কে কার দেখে শিখেছে, কে জানে। বরফ তিনহাত নাগাদ খুঁড়লে জল পাওয়া যায়। ভালুক গর্তের পাশে চুপ করে বসে থাকে। অফুরন্ত মাছ গর্তের আলো দেখে ছুটে আসে। ভালুক সহজেই একটার পর একটা ধরে খায়। মানুষ তারে বঁড়শি বেঁধে জলে নামিয়ে দেয় এবং এমনিভাবে প্রচুর মাছ ধরে।
গ্রিনল্যান্ডের কোথায় প্যারমা-ফ্রস্ট (Perma-frost), আর কোথায় জলের ওপর ভাসমান বরফ, বলা শক্ত। দেশের গভীরে অনেক বরফের পাহাড় দেখা যায়। তার ওপর খুঁড়লে নিশ্চয় জল দেখা যাবে না। চিরকঠিন বর্মের তুষারের ওপর হাজার হাজার বছরের সঞ্চিত বরফ। গ্রাম নেই, লোকের বাস নেই। এক আঙুলে গোনা যায় কটা বন্দর আছে। সেখানে মুষ্টিমেয় এস্কিমোর বাস। সমুদ্রের জন্য বন্দরগুলোর কাছাকাছি অপেক্ষাকৃত কম ঠান্ডা। রাজধানীর নাম থুলে। সেখানে অনেক বেশি ঠান্ডা। -৫০ ডিগ্রির চেয়েও কম হবে। শীতের চোটে লোহা বেঁকে যায়।
যদি দল বেঁধে গ্রিনল্যান্ডের ভেতর খনিজ পদার্থ কিংবা দেশ আবিষ্কার করতে যেতে পারতাম তো আরও ভালো লাগত। মে মাস এসে গেল। এখন দিন বড় হয়েছে কিন্তু শীতের বা বরফের ঘূর্ণিঝড় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। বরফ আর ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছে নরওয়ে যাবার। কিন্তু এখান থেকে কোনও জাহাজ সে দেশে যায় না। ডেনিশ জাহাজ ক্বচিৎ আসে-যায়। একটা জাহাজের ক্যাপ্টেন রাজি হল আমাকে রাইকাভিক নিয়ে যেতে।
লেয়া, আন্না ও ছোটদের গুডবাই বলে গ্রিনল্যান্ড ছাড়লাম। শীত ও বরফের অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল।