১৪
স্পেনে রোদ খটখট করছে। সুন্দর দিন। এই দেশে আমার যাবার অনেক দিনের শখ। কোথা দিয়ে কেমন করে যাব স্থির করে উঠতে পারিনি। ইচ্ছা ছিল পিরেনিশ পাহাড় পার হয়ে স্পেনে যাব। কিন্তু পিরেনিশ পর্বতমালা বরফে ঢাকা। এক মানুষের বেশি উঁচু বরফ ঠেলে সাইকেল টানতে আর শখ নেই। ঠান্ডা ও বরফের প্রচণ্ড প্রকোপ সহ্য করেছি নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে আল্পসের উঁচু পাহাড়ি পথে। যথেষ্ট হয়েছে আর নয়।
বার্সিলোনা শহরে আমরা দুই বন্ধু একটা বুল ফাইট দেখতে গেলাম। মস্ত বড় স্টেডিয়াম, প্রায় চল্লিশ হাজার ছেলে, মেয়ে, যুবক, যুবতী দেখতে গিয়েছে। তারা রক্তাক্ত অবস্থায় ষাঁড়কে রক্ত বমি করতে করতে মরতে দেখল এবং ভীষণ উল্লাসে ম্যাটাডরকে, যে লাল কাপড় ও তলোয়ার নিয়ে লড়তে নেমেছিল, সবাই তাকে হর্ষধ্বনি করে অভিবাদন জানাল।
বুল ফাইট কী সাংঘাতিক রকম হৃদয়হীন খেলা তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। স্বীকার করি অসীম সাহস ও ধৈর্য লাগে লড়াই করতে। একজন যুবক একখানা লাল কাপড়ের টুকরো ও একটা তলোয়ার নিয়ে রিঙের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ষাঁড়ের জন্য অপেক্ষা করছিল! ষাঁড়কে রিঙের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হল, ম্যাটাডর মাঝখান থেকে লাল কাপড়টা দেখিয়ে ষাঁড়কে খেপাচ্ছিল। লালের ওপর নজর পড়তেই, তীব্র বেগে ষাঁড় ছুটে গেল শিং খাড়া করে গুঁতিয়ে দেবার জন্য। ম্যাটাডর প্রায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অচল অটল। নিজের জায়গা থেকে অল্প পরিসরের মধ্যে ষাঁড়কে নাস্তানাবুদ করে তাকে ভীষণ উত্তেজিত করে তুলল। এই জাতীয় ষাঁড় তৈরি করা হয় আন্দলুসিয়া অঞ্চলে। তারা সহজেই ক্ষেপে যায় এবং মানুষের সঙ্গে লড়তে এগোয়।
ষাঁড় যখন লাল কাপড়টা ছিঁড়তে অক্ষম হয়ে খুব হয়রান হয়, তখন ম্যাটাডর তলোয়ারটা তার কাঁধের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। এই রকমভাবে কয়েকটা তলোয়ার হতভাগ্য জানোয়ারের পিঠে ঠেলে দেওয়া হয়। অল্পক্ষণের মধ্যে তলোয়ার পিঠের হাড় ভেদ করে হার্ট পর্যন্ত পৌঁছয়। ফলে রক্তের ফোয়ারা বইতে লাগল। তরুণ- তরুণী যারা দেখছে তাদের উৎসাহ ও উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। তারা এই চরম দৃশ্য দেখে তৃপ্তি কেমন করে পায় জানি না। আমার খারাপ লাগছিল, অত্যন্ত নিষ্ঠুর মনে হচ্ছিল এই খেলা।
ষাঁড়ের চেয়ে মানুষের বুদ্ধি বেশি একথা প্রমাণ দেওয়া যদি উদ্দেশ্য হয় তবে অন্য অনেক উপায়ে তা প্রমাণ করা যায়। একটা জানোয়ার যদি লাল কাপড় দেখলেই ক্ষেপে যায় এবং সেটাকে ছিঁড়ে ফেলতে না পারার জন্য যদি তার বুদ্ধিভ্রংশ হয়, তবে তাকে প্রাণ বলি দেবার ব্যবস্থা মানুষ কেন করল জানি না। ম্যাটাডর হতে খুব সাহস লাগে সন্দেহ নেই। আমি তার বেশি বাহাদুরি দিতে রাজি নই।
টুলু ও আমি যেখানে বসে দেখছি আমার পাশেই এক ভদ্রলোক স্কেচ করছিলেন। একেকটি বিশেষ ঘটনা কাগজে ধরে ফেলবার অদ্ভুত ক্ষমতা দেখলাম। ইন্টারভ্যালের সময় ভদ্রলোক একটা সিগারেট খাবার জন্য থামলেন। আমি অবাক হয়ে দেখছি তাঁর কাজ। লোকটি আমার মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন তাঁর কাজ কেমন লাগছে। আমি খুব প্রশংসা করলাম। তারপর হল আমাদের পরস্পরের পরিচয়।
ভদ্রলোকের নাম গগ্যা শুনে আমি বললাম যে আমি একজন বিখ্যাত ফরাসি চিত্রকর জানি ওই নামে। হাসি মুখে তিনি তখন বললেন যে সেই গগ্যা তাঁর বাবা। তিনিও কলা চর্চা করেন তবে চিত্রে নয় পোর্সিলেনের নানা জিনিস তৈরি করে। তিনি যে স্কেচ করছেন সেটা এক বিখ্যাত পোর্সেলিন কোম্পানির অর্ডারে। কোপেনহাগেন শহরে যাবার পর বুল ফাইট সিরিজ পোর্সেলিনে তৈরি হবে।
ছেলে তার বাবার গুণ পেয়েছে। এত সুন্দর স্কেচ করছিল বুল-ফাইটের যে সেগুলো সত্যিই দেখবার মতো।
টুলু সেনকে ছেড়ে আমি সাইকেলে চড়লাম। কথা রইল যে সম্ভব হলে সে মাদ্রিদ শহরে ওয়াই এম সি এতে আবার দেখা করবে। কিন্তু তা আর হয়নি।
সুন্দর রোদমাখা দিন। রাতটা ঠান্ডা। ছয়দিন পরে মাদ্রিদ পৌঁছলাম। সেদিন সন্ধ্যায় রেডিওতে একটা ইন্টারভিউ দেবার পর ডাক পড়ল। বড় সুন্দর ইতিহাস প্রসিদ্ধ শহর, দেখার ইচ্ছা তো ছিলই। তাছাড়া স্পেনের রাজা আলফনসো আমায় বলেছিলেন যে মাদ্রিদ না দেখলে আমার পৃথিবী ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আমার আসার বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল এল প্রাডো চিত্রশালা দেখার। পৃথিবীতে যে কটি শ্রেষ্ঠ চিত্রশালা আছে প্রাডো তাদের মধ্যে অন্যতম। গ্রেকো, গয়া এবং ভেলাস্কের শত শ্রেষ্ঠ কাজের সঙ্গে পরিচয় করতে হলে এখানে আসতেই হবে। অন্য চিত্রশালাতে স্প্যানিশ চিত্রকরদের এক আধখানা ছবি দেখা যায়। প্রাডোতে ডজন ডজন তিন জগদ্বিখ্যাত আর্টিস্টের ছবি দেখলাম। মনটা খুশিতে ভরে গেল। স্পেনে আসা আমার সার্থক হল।
পরদিন ওয়াই এম সি এ হলে আমার ভ্রমণকাহিনী বলবার আমন্ত্রণ পেলাম। মাদ্রিদ ছেড়ে সারগোসার পথে আবার বার্সিলোনাতে ফিরে এলাম। সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ পেলাম, মার্সেলস বন্দরে যাবার। বিকালে ওই শহরে পৌঁছলাম। সব পরিচিত মনে হচ্ছিল এবার।
মার্সেলস ছেড়ে টুলুস-এর পথ ধরলাম। পাঁচদিন পর টুলুস শহরে পৌঁছে এক বিখ্যাত পেন্টারের বাড়ি (টুলুসলোট্রেক) দেখতে গেলাম। পথে গাড়ি কম। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা দিন, তাতে শীতের আমেজ আছে। টুলুস শহরটা পিরেনিশ পর্বতমালার ঠিক উত্তরে। খুব পরিষ্কার দিনে বরফ ঢাকা পাহাড় সব দক্ষিণে দেখা যায়। এ দিকটাকে গ্যাসকাইন বলে। চারদিক খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। একটা হোটেলে উঠলাম। রাত্রে সেখানে খুব নাচ হচ্ছিল। আমি তাতে যোগ দিলাম এবং যথেষ্ট আনন্দ পেলাম।
টুলুসের পর আমার গন্তব্যস্থান বোর্দো। মাঝে আঙুরের খেত কত শত বর্গ মাইল জুড়ে বলতে পারব না। যতদূর দেখা যায় বড় বড় আঙুরের গাছ, ফল পেড়ে নিয়েছে এবং তা থেকে বোর্দো— লাল মদ তৈরি হয়েছে। দেশসুদ্ধ লোক দিনে দুবার খাবারের সঙ্গে দুই ছোট বোতল এই মদ খায়। দাম সস্তা লেমনেডের সঙ্গে সমান, দুই আনা।
ফ্রান্সের এই দিকটাকে দদইন কান্ট্রি বলা হয়। যেমন শস্যশ্যামল তেমনই নানা রকম চাষবাসে ও ডেয়ারিজাত পণ্যে সমৃদ্ধ। বোর্দোর কাছেই দুটি বড় নদী একটার নাম গারোন, অন্যটি দদইন।
আমি একরকম লাল মদ খেলাম যাতে অ্যালকোহল নেই বললেই চলে। বেশ মিষ্টি মিষ্টি, আঙুরের নির্যাস যাকে বলে। এই মদ অল্পদিন বাজারে বিক্রি হয় প্রতি বছর। ইউরোপের আঙুর-প্রধান সব দেশেই এই রকম আধা মদ পাওয়া যায়।
বোর্দোয়ে দুদিন বিশ্রাম করে জামাকাপড় ভালো করে কেচে নিলাম।
এবার উত্তরে টুরস যাচ্ছি। বেশ সমতল দেশ। রাস্তাও খুব ভালো। তবু এমন ঠান্ডা হাওয়া বইছিল যে আমার আটদিন লাগল পৌঁছতে। টুরসে একটা ইউথ হস্টেলে উঠলাম। হস্টেলটা ফ্রান্সের অন্যতম বড় নদী লয়ারের ধারেই। এখানে খাবার যেমন সস্তা, তেমনই সুস্বাদু।
সন্ধ্যার সময় একটা কাসিনোতে গেলাম। একপাশে একা বসে এক গ্লাস নির্যাস খাচ্ছি, হঠাৎ একদল ছেলেমেয়ে হলের ভেতর এল এবং আমাকে দেখে খুব উল্লাস প্রকাশ করতে লাগল। কেউ কেউ তাদের গ্লাস আমার গ্লাসে ঠেকিয়ে টুর দু মন্ড বলতে লাগল। আমি যে একজন বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছি সেটা আমার সাইকেল ও সরঞ্জাম দেখে বুঝেছে, তাদের ইচ্ছা আমাকে উৎসাহ দেওয়া।
ফরাসিরা খুব আমুদে হয়। দল বেঁধে রাস্তা দিয়ে চলবার সময় ছোট ছোট পিয়ানো একর্ডিয়ানের সঙ্গে গান গাইতে গাইতে যায়। কখনও এই সব দলের মধ্যে পড়েছি। কথা নেই বার্তা নেই আমাকে ঘিরে রাস্তার ওপর নাচতে আরম্ভ করেছে।
পথে টুরস শহর পড়ল। অনেক কালের অস্তিত্ব এর। দুই হাজার বছর আগে রোমানরা রাজত্ব করেছে এই অঞ্চলে। আজও বড় বড় রোমান পয়ঃপ্রণালী শহরের মধ্যে জল সরবরাহ করে।
এক ফরাসি পরিবারে থাকবার নিমন্ত্রণ ছিল। তাঁদের খুঁজে বের করলাম। এতদিনে কাজ চালানোর মতো ফরাসি ভাষা শিখে ফেলেছি। পরিবারের নাম রোজ। স্বামী-স্ত্রী এবং একটি ছেলে। স্বামীর সঙ্গে বোর্দোতে আলাপ হয়েছিল। রোজ ও তাঁর স্ত্রী আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। ছেলে আমার বয়সী। আমাকে দেখিয়ে ছেলেকে উৎসাহ দেওয়া বোধহয় নেমন্তন্ন করার উদ্দেশ্য ছিল। ছেলেটি ভালো।
রাত্রে ঘটা করে এক মস্ত বড় ডিনারের বন্দোবস্ত হল। রোজের আত্মীয় এবং কয়েকজন বন্ধু নিমন্ত্রিত ছিলেন। মাদাম অদ্ভুত ভালো রাঁধিয়ে। এত লোকের রান্না একাই করলেন। খাবার টেবিলে আঠারোজন স্ত্রী-পুরুষের জন্য আঠারো বোতল দামি মদ রেখেছিলেন।
একটি পরিবার রবীন্দ্রনাথের লেখা ইংরিজিতে পড়েছে। তাদের কী উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ভারতবর্ষের। আমি গর্ব অনুভব করলাম এই কথা ভেবে যে আমি সেই দেশের প্রতিনিধি।
এবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের দিকে যাচ্ছি। সমতল জায়গা, রাস্তা চওড়া এবং খুব ভালো, গাড়ি ঘোড়া অনেক বেড়ে গিয়েছে। পথে কোথাও কোথাও অনেক লোক লেগেছে রাস্তা ঠিক করতে। যারা রাস্তা সারাচ্ছে তাদের মোটর গাড়ি একপাশে রেখেছে। দুপুরবেলায় লাঞ্চ খেয়ে রাস্তার ধারে নালায় বসে কিংবা শুয়ে বিশ্রাম করছে শ্রমিক দল। এক ঘণ্টা পরে যে যার কাজে পুরোদমে মন দিল।
সাতদিন পরে প্যারিসের কাছাকাছি পৌঁছলাম। জিনিসপত্রের, বিশেষ করে খাবারের দাম বাড়ছে যতই রাজধানীর দিকে এগোচ্ছি। মোটর গাড়ি এত জোরে চলে যে ভয় হয় ঢিমে-তেতালা চালের বাইসাইকেল কখন ছিটকে চলে যাবে। যা হোক খুব সাবধানে একপাশ দিয়ে চলেছি।
আমার স্বপ্নের শহর প্যারিস আগত-প্রায়। পথের ধারে প্রথমে ভেলোড্রোম বা সাইকেল রেসের স্টেডিয়াম পেলাম। সন্ধ্যা হয়েছে। কাছেই লে ফ্লয়ের নামে একটা হোটেলে উঠলাম।
আমার এক ফরাসি বন্ধু, জাঁ দ্য গিভ্রির বাড়িতে ওঠবার কথা। কিন্তু রাত্রে বাড়ি খুঁজে পাব না, এই আশঙ্কায় তাকে টেলিফোন করলাম। আধঘণ্টার মধ্যে জাঁ চলে এল। ঠিক হল কি দ্য অতোই রাস্তার ধারে পরদিন সকালে এক নির্দিষ্ট সময়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।
জাঁ চলে যাবার পর হোটেলের ওপারে ভেলোড্রোমে গেলাম সাইকেল রেস দেখতে। আমাদের দেশে সাইকেল ট্র্যাক নেই। এখানে ঢালু ট্র্যাক নিচে থেকে ওপরে উঠে গেছে। কাঠের পাটাতন দিয়ে মেঝে তৈরি হয়েছে। খুব চমৎকার রেস দেখলাম। মনে হচ্ছিল আমি ভালোভাবেই এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জিততে পারি।
রাত্রে হোটেলে বিশ্রাম করে পরদিন জাঁর বাড়ির দিকে রওনা হলাম। জাঁ অবিবাহিত। মার সঙ্গে থাকে। সে আধুনিক চিত্রকর বলে নিজেকে। ঘোড়া আঁকা তার বিশেষত্ব। একদিন বললাম, চল লুভ্যর মিউজিয়ামে শ্রেষ্ঠ পেন্টিং সব দেখে আসি জাঁ উদাসীন, আগেকার লোকেরা আঁকতে জানত না, এই হচ্ছে তার মত। ইমপ্রেসনিস্ট স্কুলের অনেকের জীবনী পড়েছি, তাঁদের কাজের সঙ্গে এবার পরিচয় হবে। জাঁ এদের পেন্টিং আমাকে দেখাতে রাজি ছিল।
দুজনে বেরিয়ে পড়লাম। আগেকার পুরনো বড় জগদ্বিখ্যাত আর্টিস্টদের কাজ পড়ে রইল, আমরা আরম্ভ করলাম সেজান, ভ্যান গগ, গঁগ্যা, দেগা ইত্যাদি দিয়ে। শেষ দিয়ে শুরু করলাম। জাঁ এদের কাজ এত ভালো জানত যে তার জ্ঞানের কিছুটা আমি ভাগ পেলাম। প্রত্যেকটি ছবির সামনে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আমাকে বোঝাল। ফলে আমার একটা বিশেষ লাভ হল— ইমপ্রেসনিস্ট আর্টিস্টদের চিনতে জাঁ খুব সাহায্য করেছিল।
শেষকালে অনিচ্ছাসত্ত্বেও এবং আমার অনুরোধ রাখতে জাঁ রাজি হল অন্য সব -ছবি আমার সঙ্গে দেখতে। তার মতামতের সঙ্গে আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অমত হলাম যখন ওল্ড মাস্টারদের ছবি দেখলাম। জাঁ বলল যে লিওনার্ডো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার মধ্যে লোকে কী দেখে তার ঠিক নেই। সব রথী মহারথীর ছবির প্রতিই তার বক্র কটাক্ষ। তবু সে পেন্টিং বুঝতে এবং তারিফ করতে আমায় খুব সাহায্য করেছিল। সারাদিন কাটিয়ে বিকালে আবার আকাশের নিচে এসে দাঁড়ালাম। সামনে টুইলারি গার্ডেনসে অপূর্ব ফুলের সমাবেশ এই অসময়েও।
দুজনে ফুটপাথের ওপর রেস্তোরাঁয় ঢুকে কফি ও কেক খেলাম।
পরদিন গিমে মিউজিয়াম দেখতে গেলাম। এখানে আমি জাঁর গাইড হলাম। অনেক প্রাচ্যের জিনিসে ঠাসা এই মিউজিয়াম। তাদের মধ্যে অনেক জিনিসের সঙ্গে আমি পরিচিত। জাঁ পুরনো চিত্রকলার কোনও জিনিসের মূল্য দেয় না কিন্তু ভারতীয় পুরাতত্ত্বের নিদর্শন দেখে সে মুগ্ধ। ভারতীয় কলা এবং কারুকার্যের সৌন্দর্য তাকে আকৃষ্ট করল। আরও আকৃষ্ট করল ভারতীয় ভাস্কর্য। যারা ভাস্কর্য করেছে তাদের নাম জানতে চাইল। আমি বললাম, ওইখানেই ভারতবর্ষের বাহাদুরি। কে করেছে কেউ তাদের নাম জানে না। দেশ জুড়ে ভাস্কর্যের কাজ হাজার হাজার আছে যাদের শ্রেষ্ঠত্ব অনস্বীকার্য। অনেকের সঙ্গে মাইকেল এঞ্জেলো, প্র্যাক্সিটেলিশ ও মাইরোনের তুলনা করা চলে, কিন্তু আমাদের দেশে নামটা বড় ছিল না, তাই নাম নেই। যেন সৃষ্টির আনন্দে ভাস্কর কাজ করে গেছে। ভবিষ্যতে লোকেরা তার নাম জানবে কিনা তার কোনও ব্যবস্থা করেনি।
জাঁ পাশ্চাত্য দেশের লোক হয়ে এই কথাটা ভাবতে পারে না। এখানে সবার লক্ষ্য নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা এমনভাবে যে আগামী যুগের লোকেরাও তাকে স্মরণ করবে, বাহবা দেবে।
আমি জাঁকে ইলোরার ভাস্কর্যের কথা বিশেষ করে বললাম। বললাম, ভারতবর্ষে গেলে অজন্তাও যেন সে অবশ্যই দেখে।
বাড়ি ফিরে জাঁ বলল, আমাদের দেশে কী-কী দ্রষ্টব্য আছে তার লিস্ট তৈরি করতে। আমি বলেছিলাম আমি তার গাইড হব। সেকথা রাখতে পারিনি। আমার এক যুগ লেগে গেল ভারতবর্ষে ফিরতে। ইতিমধ্যে জাঁ আমাদের দেশ ঘুরে যা দেখার দেখে চলে গেল।
ঠিক করলাম পরদিন সকালে প্রাতরাশ খেয়ে বাস্তিল দেখতে যাব। জেলখানা দেখে আমরা খানিকক্ষণ প্যারিসের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে একটা ফুটপাথের ওপর রেস্তোরাঁয় কফি খেতে বসলাম। মাঝে মাঝে চা খেতে ইচ্ছা করত কিন্তু এদেশে তা দুষ্প্রাপ্য। যা পাওয়া যায় তার মধ্যে স্বাদ ও গন্ধ কিছুই থাকে না।
জাঁ একটা সাইকেল জোগাড় করেছিল। পরদিন শহরের বাইরে আমরা দুজনে ভেরসাই প্রাসাদ ও বাগান দেখতে গেলাম। কয়েক ঘণ্টা প্রশস্ত ও সুন্দর বাগান ঘুরে প্যালেসের ভেতরে মিউজিয়াম দেখতে পেলাম।
দেওয়ালে ঝুলছিল কয়েকখানি বহুমূল্য গোবেঁল্যা। কার্পেট যেমন মাটিতে পাতে গোরেঁল্যা তেমনই অতি সূক্ষ্ম কার্পেটের মতো, দেওয়ালে ঝোলায় ছবির বদলে, ভালো জাতের গোরেঁল্যার দাম অনেক লক্ষ টাকা হতে পারে। ইউরোপের বেশিরভাগ বড়লোকের বাড়িতে প্রায়ই দেখা যায়। এটা তাদের আর্থিক অবস্থার একটি পরিচয়।
প্যারিস থেকে ভেরসাই প্রায় কুড়ি মাইল দূরে। ট্রামে যাতায়াত করা যায়। সকালে প্যারিস থেকে দলে দলে লোকেরা স্ত্রী পুত্র পরিবার নিয়ে এখানে বেড়াতে আসে। সঙ্গে থাকে দুপুরের খাবার। বাগানের ঘাসের ওপর শুয়ে বসে বিশ্রাম করে বড়রা। ছোটরা ছোটাছুটি ও নানারকম খেলায় ব্যস্ত। দুটো জিনিস লক্ষ করবার মতো। কেউ ফুল ছিঁড়ল না কিংবা যেখানে সেখানে কাগজের টুকরো বা দেশলাইয়ের কাঠি বা সিগারেটের ভগ্নাংশ ফেলল না। একটু পর পর তারের বাক্স আছে। সবাই ময়লা সেখানে ফেলছিল। তাই সমস্ত বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সব সময়েই।
রবিবার দেখে আমরা দুজন ফঁতেনব্লু বেড়াতে গেলাম। এখানে নেপোলিয়ানের মিউজিয়াম আছে। ফঁতেনব্লু প্যালেসের চারপাশে প্রশস্ত জমি ও উপবন আছে। বড় বড় ঘাস হয়েছে সেখানে। সবাই স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। বড় বড় গাছ আরও সুন্দর দেখায়।
সন্ধ্যার আগে প্যারিস ফিরলাম। জাঁ বলল, ওর সঙ্গে একটা ক্যাবারে দেখতে যেতে। তার নাম ফোলি ব্যার্জার। ফরাসিরা দিনেরবেলায় খাটে আর সন্ধ্যা হলেই মদ পান করে এবং আর্থিক অবস্থানুসারে ছোট, বড় ক্যাবারে দেখতে যায়।
ফোলি ব্যার্জার আমার ভালো লাগল। খুব আর্টিস্টিক এবং রুচিসম্মত প্রোগ্রাম ছিল। ফিনফিনে কাপড়-জামার বাহুল্য। মেয়েরা স্বল্পবসনা।
নিমন্ত্রিত হয়ে আরও দুটো ক্যাবারে দেখেছি। একটার নাম মূলাঁ রুজ, অন্যটি বাল্ তাবারাঁ।
সোমবার থেকে জাঁ কাজে ভীষণ ব্যস্ত থাকবে। আমি আবার ল্যুভর চিত্রশালা দেখতে গেলাম। আমার ভালো লাগত বলে পর পর আরও তিনদিন ছবি দেখে এবং আর্টিস্টদের জীবনী পড়ে কাটালাম।
ফ্রান্সের যতখানি দেখলাম এবং যা শুনলাম তাতে মনে হয় সে শিক্ষায়, সভ্যতায় গ্রিসের উত্তরাধিকারী। স্থাপত্যে, ভাস্কর্যে, সাহিত্যে, বিজ্ঞানে সে এক মহা সম্মানের স্থান অধিকার করেছে ইউরোপের মধ্যে। আমার সব চেয়ে ভালো লাগে এই কারণে যে সেখানে বর্ণবৈষম্য কোথাও দেখিনি।
বিরাট আইফেল টাওয়ারও দেখতে গেলাম। ওপর থেকে মনে হল সমস্ত প্যারিস শহর আমার পায়ের নিচে। শহরের বিশেষ বিশেষ দ্রষ্টব্য বাড়িগুলি স্পষ্ট দেখা গেল কিন্তু অনেক ছোট আকারে। লিফটে করে এক হাজার ফুটের চেয়ে বেশি উঁচুতে উঠেছি। এই বাড়িতে রেডিও ট্রান্সমিটিং সেন্টার আছে। একতলায় একটা বড় রেস্তোরাঁ আছে। খেতে খেতে সব শহরটা দেখা যায়।
জাঁ-র সঙ্গে একদিন হুগো মিউজিয়াম দেখতে গেলাম। বিখ্যাত সব বইয়ের পাণ্ডুলিপি যত্ন করে রাখা রয়েছে এখানে। একটা সুন্দর প্রস্তরমূর্তি দেখলাম ভিক্টর হুগোর। রোঁদ্যার ভাস্কর্যের মিউজিয়াম দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
অপেরায় দি বাবার অব সেভিল শুনতে গেলাম। ভারি চমৎকার মিউজিক। মজারও বটে। অপেরা শেষ হবার পর হাঁটতে হাঁটতে প্লাস দ্য লা কনকর্ড থেকে এক বিস্তীর্ণ চওড়া রাস্তা সাঁ-জে-লিজে ধরে অন্য প্রান্তে আর্ক দ্য ত্রিয়ম্ফ পর্যন্ত দেখতে দেখতে গেলাম।
এক ফুটপাথের ওপর রেস্তোরাঁতে বসে খেয়ে নিলাম। মোটর গাড়িগুলো প্রচণ্ড জোরে চলেছে, যেন সবাই প্রতিযোগিতা করছে। আর্কের নিচে নিত্যকালের জন্য একটা আগুন জ্বেলে রেখেছে, যারা যুদ্ধে মারা গেছে তাদের স্মরণার্থে। আর্ক দ্য ত্রিয়ম্ফের ওপর একদিন উঠেছিলাম। সেখানে একটা যুদ্ধ-বিষয়ক মিউজিয়াম আছে। চারদিকের দৃশ্য খুব সুন্দর।
সোরবন ইউনিভার্সিটি থেকে জাঁ আমার জন্য এক নেমন্তন্ন এনেছে। দুদিন পরে ধড়াচূড়া পরে সাইকেল নিয়ে স্টুডেন্টস ইনস্টিটিউটে উপস্থিত হলাম। জাঁ তার সাইকেলে এসেছিল। সাইকেল দুটো দারোয়ানের হাতে দিয়ে ভেতরে গেলাম। জাঁ দো-ভাষীর কাজ করল। আমার ভ্রমণের পথ ও অভিজ্ঞতা বললাম। ফ্রেঞ্চ ফরেন লিজিয়নেয়ারদের সঙ্গে থেকেছি শুনে সবার খুব উৎসাহ।
বক্তৃতা শেষ হলে প্রশ্নোত্তর আরম্ভ হল। অনেকে ইচ্ছা প্রকাশ করল আমাদের দেশে যাবার।
জাঁ বন্দোবস্ত করেছিল আমার জন্য রেডিওতে একটা বক্তৃতার। সেখানে প্রোগ্রাম হল জাঁ ও আমার কথাবার্তা দিয়ে।
বেশ কিছু টাকা পকেটে এল। একদিন জাঁ-কে ভালো করে একটা রেস্তোরাঁতে খাইয়ে দিলাম। রাস্তার ধারে ফুটপাথের ওপর রেস্তোরাঁ প্যারিসে সর্বত্র। এ দেশে এই প্ৰশস্ত নিয়ম চালু। টেবিল চেয়ার পাতা আছে। বসা মাত্র লোক এসে অর্ডার নিয়ে যাবে। একটি কফি কিংবা একপাত্র মদ সামনে রেখে সারাদিন কাটিয়ে দিলেও আপত্তি নেই। প্যারিসে এ যুগের সবচেয়ে বড় দ্রষ্টব্য কলোনিয়াল এগজিবিশন তখন শহরের বাইরে এক বিরাট ভূখণ্ড নিয়ে তৈরি হচ্ছিল। জায়গাটার নাম ভ্যাসেন, সেখানে পরে হ্রদ তৈরি হয়েছে।
প্রদর্শনীর ভেতরে নানা দেশের থিয়েটার, নাচ দেখানো হচ্ছিল। তাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উদয়শঙ্করের নাচ।
সেই সময় উদয়শঙ্কর আর এলিসের সঙ্গে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল।
কিছুকাল পরে আমি লন্ডনে থাকাকালীন উদয়ের দল কন্টিনেন্টে নাচ সেরে লন্ডনে এল এবং লন্ডনবাসীদের মুগ্ধ করল তাদের কৃতিত্ব দেখিয়ে। ডার্টিংটন হল থেকে নেমন্তন্ন এল এলমহাস্টের বাড়িতে থাকবার। উদয় ডার্টিংটন হলে নাচল। অমন নাচ কেউ কখনও আগে দেখেনি।
একদিন সন্ধ্যায় ডার্টিংটন হলের প্রশস্ত মাঠে আমি আর উদয়শঙ্কর গল্প করছিলাম। উদয় বলল যে তার বিশ্রাম দরকার। গত তিন বছর ধরে প্রত্যহ ছয় থেকে আট ঘণ্টা ইউরোপের অপেরা হাউসে, থিয়েটারে নেচেছে এবং সঙ্গীদের নাচ শিখিয়েছে।
বিশ্রাম নেওয়ার আরও প্রয়োজন, নতুন নতুন নাচ তৈরি করতে হবে। আমি যদি ওর সঙ্গে দূরে পাহাড়ের ওপর অস্ট্রিয়ায় যাই তাহলে ভালো হয়। আমি রাজি হলাম। এত বড় একজন আর্টিস্টের সান্নিধ্য পাব একান্ত নির্জনে, এই কথা ভেবে।
আমার মতে উদয়শঙ্কর পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাচিয়ে কিন্তু তার চেয়ে সে অনেক অনেক বড় নৃত্যশিক্ষক। আমি ঠাট্টা করে বলতাম, তুমি গাধাকে ঘোড়া বানাতে পার। যার মধ্যে নাচবার কোনও ক্ষমতা নেই তাকেও স্বচ্ছন্দে নাচাতে পার। উদয় হেসে বলত এস, আমার দলে যোগ দাও, দেখো কেমন নাচিয়ে বানিয়ে ছাড়ি। তোমার উপযুক্ত কত নাচ আমার মাথার মধ্যে খেলছে।
উদয় পরিষ্কার ফরাসি বলতে পারত।
আমরা প্রথমে কয়েকদিন ভেনিসে কাটিয়ে বলজানো শহরে গেলাম।
আমার কোনও কাজ নেই— খাওয়া এবং উদয়ের সঙ্গে গল্প করা ছাড়া। ‘কল্পনা’ ফিল্ম করার কথা এবং তার আনুষঙ্গিক সমস্ত ঘটনা, এই সময় উদয়ের চিন্তার অনেক অংশ জুড়ে ছিল।
আরেকটা কাজ জুটেছিল আমাদের দুজনের। নিত্য নতুন পাহাড়ের ওপর চড়া, পাহাড়ি পথ ধরে। মেরানোর ওপর পৌঁছলাম। ক্লান্ত হয়ে একটা পাথরের ওপর দুজন বহুক্ষণ পাশাপাশি শুয়ে গল্প করলাম। তখন আকাশে একটি একটি করে অনেক তারা ফুটেছে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য! পাহাড়ের চূড়ার কাছেই একটা হোটেল ছিল। আমরা সেখানে খাবারের জন্য গেলাম।
উদয়শঙ্কর খুব লম্বা নয় কিন্তু স্টেজের ওপর তার দাঁড়াবার, চলবার ভঙ্গিমা দেখবার মতো। মনে হয় এক বিরাট পুরুষ, স্টেজ-জমানো আকৃতি যাকে বলে। অনেক গুণের মধ্যে সে একটি বিশেষ গুণের অধিকারী ছিল, সেটা হচ্ছে সময়-জ্ঞান। যখন শো আরম্ভ করবার কথা ঠিক সেই সময় সে শুরু করবেই। তাকে দেখবার বা শোনবার জন্য একজন লোকও না থাকে তাতে তার কিছু আসে যায় না। আমি কোনও ভারতীয়কে উদয়ের মতো এই দিকে এত সচেতন হতে দেখিনি।
বলজানোতে পরিচিত জায়গায় ফিরেছি। আমাদের ছুটি ফুরোতে মাত্র পাঁচদিন বাকি। আমি রোজই তাগিদ দিতাম যে নতুন নাচ তৈরি করার কাজ একটুও এগোয়নি। আমি যেন উদয়ের গার্জেন হয়ে গিয়েছি। সন্ধ্যাবেলায় একটা পাহাড়ি নদীর কাঠের সেতুর ওপর আমরা বসে আছি। অল্প চাঁদের আলো উঠেছে। অস্ট্রিয়ান চাষী দিনের শেষে গরুর গাড়ি চালিয়ে বাড়ি চলে গেল। এমন সময় উদয় দাঁড়িয়ে বলল যে তিনটে প্লট তার মাথায় এসেছে। প্রথমে প্লটের গল্প বলল। তারপর যারা নাচবে তাদের বেশভূষা কীরকম হবে, কেমন মিউজিক হবে, আলোর ব্যবস্থার কথা বিশদভাবে বলে নাচতে শুরু করল। তখন দলের সঙ্গীদের পার্টও সঙ্গে সঙ্গে নেচে দেখাল। খুব সুন্দর হয়েছে বললাম।
মনে রাখবার জন্য উদয় দ্বিতীয়বার নেচে দেখাল। গল্পের নাম দিল নিরাশ। নিরাশ পরে পৃথিবীর নানা জায়গায় নেচে দেখিয়েছে।
পরদিন সন্ধ্যায় আরেকটি নাচের থিম সম্বন্ধে কিছু বলে উদয় নাচতে আরম্ভ করল। গল্পের নাম ‘ইন্দ্র’। তার একক নাচ— খুব সুন্দর। তৃতীয়টি চাষীর নাচ। এমনিভাবে তিনদিনে তিনটে নাচ তৈরি করতে পারল।
আমি ও এলিস বোনার প্রায়ই প্রথম সারিতে বসে উদয়ের নাচ দেখতাম। একদিন এক সৌম্যদর্শন, লম্বা, বৃদ্ধ ভদ্রলোক নিজের পরিচয় দিলেন ডেনিশ আর্টিস্ট বলে। তিনি ভেবেছিলেন আমি বুঝি উদয়ের নাচের দলের একজন। তখন আমি আমার পরিচয় দিলাম পৃথিবী-পর্যটক বলে।
ভদ্রলোকের নাম আক্সেল ইয়ার্ল। তিনি আমাকে ডেনমার্ক যাবার নেমন্তন্ন করলেন এবং তাঁর বাড়িতে থাকবার কথা বারবার বললেন। নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ঘুরেছি অথচ স্কান্ডিনেভিয়ান সভ্যতার উৎসস্থান ডেনমার্ক দেখিনি, এটা হতে পারে না। এলিসকেও নেমন্তন্ন করলেন।