অধ্যায় ১৫
শামীমের দিনটা গেলো অনেকটাই সাদামাটা। ছোট্ট এক দায়িত্ব দিয়ে গেছে মুহিব, শামসভাইয়ের বন্ধুদের ব্যাপারে তাকে জানতে হবে। খোঁজ সে যতদূর পারে নিয়েছে। জাকি ভাইদের ফ্রেন্ড সার্কেলটাই মূলত শামসভাইয়ের বন্ধু বান্ধব। মার খেয়ে ছাতু হওয়া জাকির মতো বাকিগুলোও ঢোঁড়া সাপ। বিষ নেই। কেউ মারলে মার খায়। আগ বাড়িয়ে ঝামেলা তেমন করে না। আগামীবার এদের থেকে যে কেউ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠনে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের পদ পাবে না সে বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই। অন্তত নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ করার জন্য হলেও তো ক্ষমতা কিছু দেখাতে হবে। ক্যাম্পাসে মার খাওয়া মানুষ নেতা হতে পারে না।
রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে সেদিন দেখা করলো শামীম। এটা ওটা নিয়ে আড্ডা দিলো। মুভি আর সিরিয়াল। তারপর কথাপ্রসঙ্গে এলো দাজ্জালের ফিতনা আর পশ্চিমা আগ্রাসন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতর এই আড্ডাটা খুব মুখরোচক। সারা রাত পেরিয়ে যাবে কিন্তু আড্ডা ফুরবে না। ইহুদি জাতিটিকে মিনিট দুয়েক পর পর গালি দিলেই আড্ডার গতিপথ থাকবে মসৃণ, যেন তাদের জন্যই পৃথিবীর এই দুরবস্থা! আর সবে ধোয়া তুলসি পাতা। নিশ্চিত কোনও উপসংহারেও এসে পৌছানো যাবে না। কাজেই চাইলে পরদিন বা পরের সপ্তাহে আবারও দাজ্জালের চিহ্ন নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। কোনও সমস্যা নেই।
এসব করেই সকালটা পার করলো শামীম। রাজ্জাক ভাই উৎসাহী লোক। শামীমের জন্য বড় একটা মগে কফি বানালেন। সিগারেট ধরালেন। কফি আর সিগারেটের সাথে চলে না এমন কোনও গরম টপিক নেই। কাজেই সময় এবং সুযোগ বুঝে জাকি গ্রুপের নপুংসকতার কথাও তুলে আনলো সে।
“এগুলো সব পলিটিক্স।” এক বাক্যে বললেন রাজ্জাক ভাই, “ফাইনাল ইয়ারে উঠতেছে। সামনে আরেকটা সম্মেলন আছে। পদ বাগানোর জন্য এইটা তাদের চাল।”
“যেই গ্রুপ ক্যাম্পাসেই নিজেদের রক্ষা করতে পারে না, তাদের কেউ পদ কিভাবে পাবে?”
“কয়েকটা কারণে পাইতে পারে। একটা হলো সবগুলো প্রধান গ্রুপকে খুশি রাখতে চাইতে পারে কেন্দ্র। সেজন্য নামকাওয়াস্তে হলেও একটা পদ
দিয়ে দেবে। কিন্তু সেইটা তো আর জাকিদের টার্গেট না। জাকির ধান্ধা হলো প্রেসিডেন্ট হওয়া। মার মুর খেয়ে চুপ থাকে সে এইজন্যই।”
“সেটা তাহলে দ্বিতীয় কারণ?”
“বলতে পারো। যেহেতু ক্যাম্পাসে একটা মাত্র গ্রুপেরই ব্যাকগ্রাউন্ড পরিস্কার। জাকি গ্রুপ কিন্তু আর যাই হোক, সৎ আছে। চাঁদাবাজি করে নাই, ক্ষমতার কোনও অপব্যবহার করে নাই। এরা ফোকাসে আসছিলো বিরোধীদলের অঙ্গসংগঠনের তিনজন সিনিয়র নেতাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে। শালবাগানের কেসটা মনে আছে না? বোমা মাইরা যে একজন পুলিশের হাত উড়াইয়া দিলো। বিরোধীদলের যুবসঙ্ঘ থেকে তিনজন নেতা গেছিলো ছাপরা বাড়িতে। গ্রেনেড হামলার একটা পরিকল্পনা ছিল জনসভায়। জাকিরা কিন্তু এদিক দিয়ে চালু। কিভাবে জানি ইন্টারসেপ্ট করছিলো খবরটা। তারা অ্যাকশনেও গেছিলো। বোমা মাঝ দিয়া ফাইটা গেলো পুলিশের হাতে। কিন্তু ওটাই শেষ। জাকিরা এরপর থেকে একদম ঠাণ্ডা। তবে ওরা মাইর-মুইর যাই খাক, তাদের আন্ডার এস্টিমেট করার দিন এখনও আসে নাই।”
রাজনীতি বিশারদ হিসেবে শামীম নিজেকে দাবি করে না। কাজেই রাজ্জাক ভাই যা বলছেন তা মেনে নিলো চুপচাপ।
“আপনি বলতে চাইছেন, নিজেদের একটা পরিস্কার রেকর্ড রাখছে তারা, সেই সাথে আছে ডেয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড। লোকজন তাদের সমীহ করে। এমনটা তাদের সবচেয়ে যোগ্যদের একজন করে তুলবে?”
“তা তো অবশ্যই।”
“তবে জাকি ভাইদের গ্রুপটা নিশ্চয় তোফায়েল ভাইদের একদিন পাল্টা আঘাত করবে। সবকিছু চুপচাপ হজম করার পেছনে তো করণ কিছু আছেই। তাই বলে অপমান গিলে ফেলেছে এমনটা তো না।”
“তা হয়তো ঠিক। তবে এসব নিয়ে তোফায়েলদেরও পরিকল্পনা কিছু থাকবে। আমার ধারণা সম্মেলনের শুরুতে আবেদনপত্র পাঠাতেই দেবে না সে। আবেদনপত্র ছাড়া তো আর জাকি পদ পাবে না। আর পদ না পেলে তাকে গুনলেই কি, না গুনলেই কি? তোফায়েল বা রেদোয়ানের মাথা পড়াশোনায় যা-তা, কিন্তু পলিটিক্সে দারুণ চালু। তাছাড়া রেদোয়ানের ফ্যামিলি পলিটিকাল। ওপরে অনেক আত্মীয় আছে হারামজাদার। আকাম–কুকাম করেও টিকে আছে এতোদিন, বুঝো না?”
শামীম তো বোঝে সবই, তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের ক্যাম্পাসে এসব প্রথম হচ্ছে না। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর এধরণের ঝামেলা আছে কিছু। থাকবেই। এখানেই জাকি আর তোফায়েল হয়তো ভবিষ্যতে হবে প্রেসিডেন্ট আর জেনারেল সেক্রেটারি। অনেক ইতিহাস আর অনেক দ্বন্দ্ব নিয়েই তারা এই পদ ধরে রাখবে। মাঝে মাঝে মাথা ফাটাফাটি হবে। জাকির “ছেলেরা” হয়তো মেডিকেলে পাঠাবে তোফায়েলের “ছেলেদের।” কি এসে যায়? দলীয় মিছিলে হাতে হাত ধরে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে তখন ওই তোফায়েল-জাকিই। ক্ষমতার লড়াই তো এভাবেই চলে আসছে এদেশে। পেছনে রেখে আসছে ইতিহাস।
এসব নতুন করে বললেন রাজ্জাকভাইও। তাকে বেশি বিরক্ত করার ইচ্ছে ছিল না শামীমের। তাছাড়া ভয় হচ্ছিলো জাকি আর তোফায়েলকে নিয়ে দীর্ঘ আলাপ করলে রাজ্জাকভাই সন্দেহ করে বসতে পারেন কিছু। এক কান দুই কান হয়ে কথাগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কানে চলে যেতে পারে। আর এই ঘটনাটি যেন না ঘটে সেজন্য সতর্ক থাকতে বার বার বলে দিয়েছে মুহিব। অন্তত এই তদন্ত কাজে তার কথাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে সে। মুহিব যদি বলে ‘এটা করিস না,’ শামীম তা করছে না। যখন সে বলছে ‘এটাই কর্!’ তখন বিনা প্রশ্নে সেটাই করছে। কারণ, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা আছে ওই মুহিবেরই, অকুস্থলে সে-ই উপস্থিত ছিল। স্রেফ খেয়ালের বশে বন্ধুকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে না শামীম। সেই সঙ্গে পারে না বন্ধুর মুখ থেকে নিশ্চিতভাবে খুনির পরিচয় জানার পরও হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে।
শামস হত্যার একটা বিহিত না করতে পারলে সে নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।
রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে দুর্দান্ত কফি-সিগারেট আড্ডাটি শেষ হতে বিকাল হয়ে গেলো। কাছাকাছি এক ভাতের হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেতে খেতে পরবর্তি পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছিলো শামীম। ইলোরার সাথে তাদের কথা হয়েছে। লেডিস হলে কোনও তূর্ণাই থাকে না। এক তূর্ণা আছে ক্যাম্পাসে, তবে সেই মেয়েটি ওই মেয়েটি নয়। তার ফেসবুক আইডি নিয়ে ঢুকে দেখেছে তারা-অন্য একটি মেয়ে। অর্থাৎ বাইরের কোনও মেয়ে এই রহস্যময় তূর্ণা। মাথার মধ্যে এসব চিন্তা ভাবনার মধ্যে আশেপাশে কে বসলো তা খেয়াল করা দুষ্কর। পাশের ছেলেটা ডাল মাখা হাত নিয়ে তার উদ্দেশ্যে কিছু বলছে খেয়াল করে মুখ তুলে তাকালো শামীম।
“কিরে, ধ্যান করতেছিস নাকি? লবণটা দে এদিকে।” শুকনো মুখে বলল ছেলেটা। একে শামীম চেনে, কল্লোল নাম। পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ইকোনমিক্স মনে হয়। শুকনো মুখ দেখে মনে হচ্ছে একদিন পর কিছু খেতে বসেছে। এমনটা অবশ্য ওদের জীবনে খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা। চুপচাপ লবণের বাটিটা এগিয়ে দিলো সে।
রাজ্জাকভাইসহ যতো জনের সাথে কথা হলো তাদের প্রায় সবারই জানা আছে জাকি গ্রুপের সাথে তোফায়েল গ্রুপের ঝামেলাটা একদিন আর দমিয়ে রাখা যাবে না। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ভূতবাবা খুব একটা ভুল বলেনি, জাকি-তোফায়েলের শেষ ঝামেলাটার কথা ক্যাম্পাসের অনেকেই জানে না। জাকিকে ক্যাম্পাসে না দেখা গেলে মিস করার মতো মানুষ কম। নানা কাজে সে এমনিতেও বছরের মধ্যে তিন মাস ক্যাম্পাসের বাইরেই থাকে। তাকে তিন দিন দেখা গেলে দুই দিন দেখা যায় না। তার অন্তর্ধান কারও চোখে সেভাবে নজর কাড়তে পারেনি। কারণ যাই হোক, খুব বেশি মানুষ জাকির মাথার মোটামুটি গভীর ক্ষতের পেছনে তোফায়েলের হাত থাকার ব্যাপারটা জানে না। সুমনের সোর্স তৈমুর ভাই কি করে জানলো তা শোনা লাগবে, ভেবে রাখলো শামীম।
হাত ধোয়ার সময় আরেকটা দিক আবিষ্কার করলো সে। বিল দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো কল্লোল। তাকে ডাক দিয়ে ফিরিয়ে আনলো।
“বিড়ি খাবি না?”
কাঁধ ঝাঁকালো কল্লোল, “আজিজ মামার দোকানে বসতেছি।”
মিনিট পাঁচেক ভার্সিটির নানাবিধ যন্ত্রণা, দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ, হলে সীট নিয়ে ছাত্রনেতাদের ন্যাংটামি এবং নিজ নিজ ভাইস চ্যান্সেলরের চৌদ্দ গুষ্টির প্রতি গীবতমাফিক এক পর্বত সমপরিমাণ সওয়াব জমিয়ে আসল কথা পাড়লো শামীম। চট করে জানতে চাইলো, “তূর্ণা নামে কোনও মেয়ে আছে তোদের ভার্সিটিতে? একটু লম্বা, ফর্সা মতো। দেখতে অনেক সুন্দর। কোঁকড়া চুল?”
খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসলো কল্লোল, “হারামজাদা, শেষ পর্যন্ত তুইও।”
শামীমের বুক ধ্বক ধ্বক করতে থাকলো। মুখে অবশ্য ফুটিয়ে রেখেছে প্রেমিক পুরুষের বোকা বোকা হাসি। বলল, “ ঐদিন দেখলাম আমাদের গেটে। মাথা খারাপ হয়ে গেলো দোস্ত। সত্যি মেয়েটাকে অনেক ভালো লাগছে। একটু দেখবি মামা, সিঙ্গেল কি না?”
কল্লোলের হাসির স্কেল এখনও আরও উঁচুতে।”ওরকম আগুন সুন্দরি কি সিঙ্গেল থাকে রে পাগলা? নাই। তোর নজর ভুল দিকে গিয়া পড়েছে। আপু আমাদের দুই ব্যাচ সিনিয়র। পিচ্চি পোলাপানের সাথে প্রেম করার মতো মেয়েও না আপু।”
শামীমের মনে হচ্ছে একটু আগে খাওয়া খাবারগুলো পেটের মধ্যে মার্চ করে যাচ্ছে উত্তর আর দক্ষিণে।
“মেয়েটার ফেসবুক লিংক দিতে পারবি, দোস্ত?” হাল্কা কেঁপেও গেলো ওর গলা, “যাকে দেখলাম সেই কি না দেখতে হবে তো। হয়তো দেখা গেলো তুই এক তূর্ণার কথা বলতেছিস আর আমি দেখছি আরেকজনকে।”
কল্লোল অবশ্য ওর এই অভিব্যক্তির ভুল অর্থ ধরলো। আজিজ মামা চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা তুলে নিতে নিতে আগের চেয়ে কোমল করলো কণ্ঠ, “নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিস? যে বর্ণনা দিলি তেমন মেয়ে পুরো শহরেই খুঁজে তিনটা পাবি না। সেই সাথে নাম মিলবে?”
শামীম এবার নিজের কণ্ঠটা করুণ করে ফেললো, “দেখা না, দোস্ত।”
“আমার নেট নাই।” ঘাড় গোঁজ করে বলল কল্লোল।
“আমি তোকে হটস্পট অন করে দিচ্ছি।”
শামীমের তাড়াহুড়ো দেখে মুচকি হাসলো কল্লোল। তবে ফেসবুকে ঢুকে তূর্ণার প্রোফাইল বের করে দিলো ঠিক ঠিক।
প্রোফাইল দেখেই মাথা নাড়লো শামীম, “কিভাবে আপু হয়? এই মেয়েটা আমাদের জুনিয়র নাহলে ব্যাচমেট!”
কল্লোলের মুখে এখন সবজান্তার হাসি, “এমনটাই বলেছে আমার আর নাহলেও জনাদশেক ফ্রেন্ড। কিন্তু লাভ নাই, মামা। চিঁড়ে ভিজবে না। তাছাড়া আপুর বয়ফ্রেন্ড আছে। কোন এক ব্যাংকে জব করে। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আমাদের মতো বেকার যুবকেরা আপুকে নিয়ে আর স্বপ্ন না দেখি।”
“বালামার।” হতাশ যুবকদের বেদবাক্য উচ্চারণ করলো শামীম
তোমার মুখে মামা এসব মানায় না। থাকো তো মেকানিক্যালের ইলোরার লগে। ও তো তূর্ণা আপুর থেকেও বেশি সুন্দর। আমাদের ভার্সিটির পোলাপানের নজরেও কম পড়ে নাই তোমার বান্ধবি! অবস্থা এমন, গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না আরকি।”
“বন্ধু বান্ধবের সাথে প্রেম করা যায় নাকি, বোকাচোদা। তুই তো ব্যাটা সুযোগ পেলে বোনকেও ছাড়বি না।”
কল্লোলকে উদ্দেশ্য করে আরও কিছু ভালো ভালো কথা বলল শামীম মুখটাই কালো করে ফেললো বেচারা। তবে শামীমের পরের কথাটা তার মুখে হাসি ফিরিয়ে এনেছে।
“বিল আমি দিচ্ছি, দোস্ত। টাকা বাইর করিস না।”
নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায় অন্য কারও চা-সিগারেটের বিল শামীম এই প্রথমবারের মতো দিলো হয়তো। মাথার ওপর থেকে বড় একটা পাথর নেমে গেছে। অবশেষে পাওয়া গেছে রহস্যময় তূর্ণাকে। একেবারে ফেসবুক আইডিসহ!
*
কল্লোলের ভাষ্যমতে যে মেয়েটি শামীমের আরাধ্য তূর্ণা আপুর চেয়েও অনেক সুন্দর, সেই ইলোরা তখন ছিল তোফায়েল ভাইয়ের সাথে। জালবাব নামে নতুন এক রেস্তোঁরা গড়ে উঠেছে শহরতলীর দিকে। বেশ নিরিবিলি একটা রেস্তোঁরা। প্রেমিক বা প্রেমিকার হাতে-গায়ে স্পর্শ করা যায়। দেখার কেউ নেই। আজকে তোফায়েলের বাইকের গন্তব্য সেদিকেই ছিল। সাধারণত কথা যা বলার তোফায়েলই বলে। ইলোরা তেমন সাড়া শব্দ করে না। আজও তেমনটাই চলছিলো।
ক্যাম্পাসে তোফায়েল যেমন-তেমন, পরিবারের সামনে অত্যন্ত অনুগত এবং বাধ্য সন্তান। ছোটোবোন শেফালির সাথে বাবার কি নিয়ে ঝগড়া চলছে তাই শোনাচ্ছিলো সে ইলোরাকে। অবশ্য তার আগে দু’জনের মধ্যকার দূরত্ব চোখে পড়ার মতো কমিয়ে নিতে সে ভোলেনি। ইলোরা যথারীতি হ্যাঁ-হুঁ করছে। তোফায়েল জানে আগ বাড়িয়ে কথা এই মেয়ে বলবে না। এ নিয়ে আগে কোনোদিন চাপাচাপি করেওনি সে। আজকেও করতো না হয়তো, তবে ভুলটা করে ফেললো মেয়েটিকে প্রশ্ন করে।
“ছোটো ভাই তো তোমারও একটা আছে। এরকম ঝামেলা হয়তো বুঝবা।”
ইলোরা কখনও তোফায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষপূর্ণ একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। আজকে সকাল থেকে বেশ কিছু কারণে মন-মেজাজ ভালো ছিল না তার। বাবার সাথে এক দফা ঝগড়া করে এসেছে, ফোনে। তার ওপর শামীম আর মুহিব তাকে লুকিয়ে একটা কিছু করছে। নিজেকে মনে হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার। সকালেও শামীমের সাথে দেখা হয়েছিলো। বড় ভাইদের সাথে সে দেখা করতে যায় না, তবে আজ নাকি সে উদ্দেশ্যেই বের হয়েছে। ইলোরা জানতে চেয়েছিলো, নতুন কোনো কিছু শিখতে যাচ্ছে কি না। শামীম বোকা বোকা হেসে বলেছিলো, “ওরকমই। সলিডওয়ার্কসটা পাই কি না দেখি।”
ইলোরা মানুষ হয়তো খুব ভালো চেনে না, তবে মানুষের বলা মিথ্যে সে ধরতে পারে। শামীম তাকে মিথ্যে বলেছিলো এটা সে নিশ্চিত। ওদিকে মুহিব অসময়ে ঢাকা যাচ্ছে কেন তাও জানতে চেয়ে বড় একটা ভুল করেছিলো সে। মুহিব তো চোখের পাতা না কাঁপিয়ে বলল, “ইতির সাথে ব্রেক আপ ফাইনাল করতে যাচ্ছি। ওর ডায়েরি আমার কাছে তো। আর কয়েকটা চিঠি। এগুলো দিতে হবে।”
একটা গাধাও বুঝতে পারবে, মুহিবের মনের ভেতর ব্রেক আপ বা চিঠি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ভেতরে ভেতরে ছেলেটা উত্তেজনায় মারা যাচ্ছিলো। ব্রেকআপে পুরুষ উত্তেজিত হয় না এটা একটা বাচ্চা মেয়েও জানে। তাহলে, কিসের এই উত্তেজনা? ইলোরা জানে না।
মুহিব-শামীম তাকে কিছুই জানায় না। এতোগুলো মাস পর নিজেকে বহিরাগত কেউ বলে মনে হচ্ছে তার। খুব জঘন্য, বিচ্ছিরি একটা অনুভূতি। কলেজ জীবনে বন্ধু তেমন ছিল না ইলোরার। ছেলেগুলো বন্ধুত্বের ভান করতো ঠিক, তবে ঠিক সেভাবে তাকে বন্ধু ভাবেনি কেউ। চেয়েছে প্রেমিকা হিসেবে। একটা মেয়ের সাথে খাতির ছিল ভালোই। অনামিকা নাম ছিল মেয়েটির। খুব অল্পবয়সে বিয়ে দিয়ে দিলো তার। এখন মাসে দুই মাসে একবার কথা হয়। বিয়ের পর মেয়েদের বন্ধুত্ব বিয়ের আগের মতো আর থাকে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সত্যিকারের বন্ধুত্বের দেখা পাবে তা অবশ্য ইলোরা আশা করেনি। এই ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়ত শিখিয়ে যাচ্ছে, একটা ছেলের সঙ্গে একটি মেয়ের বন্ধুত্ব কখনোই হতে পারে না। একসময় তা প্রেমে গড়াবেই। অথচ মুহিবদের গ্রুপটার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তেমন কিছু ঘটেনি। একদিন শামীমের কাঁধে মাথা রেখে ও ঘুমিয়েছে, একদিন ঘুমিয়েছে মুহিবের পাশে। ছেলেগুলোর মধ্যে কোনো কামভাব ছিল না। পরিবারের অন্য এক সদস্যের মতোই আচরণ করেছে তারা ওর সাথে। ইলোরার মনে হয়েছে ওরা যেন তারই ভাই, অন্য মায়ের সন্তান যদিও।
অথচ ওরা তাকে লুকিয়ে কিছু একটা করছে। চোখের পাতা না কাঁপিয়ে তাকে মিথ্যে বলছে। চোখের পাতা অবশ্য কেঁপেছে। মুহিব টের না পেলে কি এসে যায়? এটা সহ্য করা ইলোরার জন্য খুব কষ্টের।
এমন আচরণের পেছনের কারণ হিসেবে একটা কারণই দেখতে পাচ্ছে সে। তোফায়েলের সাথে তার মেলামেশা। তোফায়েলকে ওরা কেউ পছন্দ করে না। ইলোরাও যে তাকে খুব পছন্দ করে, এমন নয়। তবে তার নামে যা শোনা যায় তার কতোটা সত্য ইলোরা জানে না। অনেক কিংবদন্তী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, মানুষটা রহস্যঘেরা। কতোটা কল্পনা আর কতোটা সত্য তা দেখতে চায় ও। তাছাড়া, তোফায়েল প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছে তার প্রতি। এই আগ্রহের সঙ্গে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় ইলোরা জানে না। সে ধৈর্যের সাথে বল বাই বল ব্যাট করে যাচ্ছে। দীর্ঘ ইনিংসে নামলে যেভাবে ব্যাটিং করতে হয়, একটা একটা করে বল খেলে যেতে হয় সেখানে। ব্যাটসম্যান হিসেবে ইলোরা চমৎকার। সে তার ব্যাটিংয়ে কোনো খুঁত রাখছে না। তবে শামীম-মুহিবের তাচ্ছিল্য কিংবা অবহেলার ভাবটাই হয়তো আজকে তাকে একটা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে বাধ্য করলো।
সরাসরি তোফায়েলের চোখের দিকে তাকালো ইলোরা। তারপর বলল, “আমার ছোটোভাইয়ের খবর রাখার কোনো দরকার দেখি না আপনার। ‘
এক মুহূর্তের মধ্যেই টকটকে লাল হয়ে গেলো তোফায়েলের মুখ। বেশ পুরাতন এক কাটাদাগ তার কপালের পাশে, ক্রোধে মুখটা কুঁচকে গেলে কাটাদাগটাও কুঁচকে যায়। রীতিমতো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে চেহারাটা। এক সেকেন্ডের জন্য কথাটা বলে ফেলার জন্য অনুতাপ হলো ইলোরার। তবে তোফায়েল ততোক্ষণে নিজেকে সামলে ফেলেছে।
“ইলোরা, তোমাকে আমার কিছু কথা বলা দরকার।” স্বভাবসুলভ ড্যাম–কেয়ার ভাবটা ঝেড়ে ফেলে প্রায় শুদ্ধ উচ্চারণেই বলল ছাত্রনেতা। তার এমন ভঙ্গি ইলোরা আগে কখনও দেখেনি। বিনয় বলা যেতে পারে তার এখনকার কণ্ঠস্বরকে। কিছুটা অবাক হলো ইলোরা।
“আমার দুইটা লাইফ। তুমি এটা এতোদিনে কি টের পাইছো? পাইছো হয়তো। ক্যাম্পাসে আমার কিছু দায়িত্ব আছে। কিছু কর্তব্য আছে। সেইগুলা আমাকে করা লাগে। আমার ভালো লাগুক আর খারাপ লাগুক, দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়। সেই তোফায়েলকে তুমি হয়তো চেনো। ছাত্রনেতা। সব ঝামেলায় আমাকে দেখতে পাবা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় কি, আমাদের লাইফটা এইরকম। আমরা খালি ঝামেলা কইরা বেড়াই। কিন্তু কিছু ফালতু কাজ করা লাগলেও সবার ভালোর জন্যও অনেক কিছু আমাদের করা লাগে। সেইগুলা অবশ্য তোমরা দেখতে পাবা না সাদা চোখে ঐ যে বলে না, রোগবিরোগই ছড়ায়া যায়। স্বাস্থ্যবান লোকের পাশে সারাবছর বইসা থাকলেও তার স্বাস্থ্য তো তোমার গায়ে লাগবে না।”
মাথা দোলালো ইলোরা।
“আমরা কিন্তু হলের অ্যালোট দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করছি, তোমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র ব্যাচটাকে। হল অ্যালোটে বিরাট এক গ্যাপ ছিল, আমরা সেটা কমাচ্ছি আস্তে আস্তে। আগে আড়াই বছরের আগে সিট পাওয়া যেতো না। এখন কিন্তু অনেক সময় এক বছর গেলেই সিট পাচ্ছে ছেলেরা। সব সময় আমরা সাধারণ ছাত্রদের দাবিতে সমর্থন দেই, যদি তারা আষাঢ়ে দাবি না করে, কিংবা বিরোধীদলের উস্কানিতে কোনো দাবি না নিয়ে আসে। এগুলো অবশ্য চাপা পড়ে যায়। আমরা হয়ে যাই আল্টিমেট ভিলেন।”
অন্য কোনোদিন হলে ইলোরা মাথা দোলাতো কেবল, আজকে অতো বিনয় দেখানোর ইচ্ছে বা আগ্রহ, কোনোটাই তার নেই।
“আপনারা হল অ্যালোট এগিয়ে নিয়ে এসেছিলেন যেন আমাদের ব্যাচ থেকে যারা আপনাদের দলে এবার যোগ দিলো তাদের দ্রুত সিটে তোলা যায়। সেইটা করতে হলে আগের ব্যাচের সিনিয়রদের অ্যালোট দেওয়ার ব্যাপারটাও আসতো। এই কাজটাকে সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থে করা একটা কাজ বলে চালিয়ে দিতে চাইলে সেটা কিন্তু মিথ্যেচার হয়ে যাবে। আমাদের দাবিও বা ফিল্টার করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? আমাদের তোলা দাবি আপনারা প্রশাসনের বিপক্ষে কাজে লাগানোর হাতিয়ার বলে মনে করলে সমর্থন দেন। আমরা থাকি গুটি। আবার নিজেদের দিকে ছুটে আসার সম্ভাবনা দেখলে সমর্থন সরিয়ে নেন। দোহাই দেন বিরোধীদলের উস্কানির। আমরা যথারীতি গুটি হিসেবেই থাকি পুরো দৃশ্যপটে। ভুল কিছু বললে বেয়াদবী মাফ করবেন।”
তোফায়েলের একটা ভ্রু উঁচু হয়ে গেছে, “দলের স্বার্থ আর সাধারণ ছাত্রের স্বার্থ দুটোকেই সফল করা হলো সফল রাজনীতি। তুমি হয়তো তেমন খোঁজ খবর রাখো না, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমনটাই চলে। কোথাও কোথাও এক কাঠি সরেস। দলের প্রয়োজনে সাধারণ ছাত্রছাত্রিদের স্বার্থও ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হয়। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা কিন্তু তা করি না।”
ওয়েটার খাবার সাজিয়ে দিয়ে গেলো। পুরো সময়টা তারা চুপ থাকলো। বেশ দামি ডিশ। ইলোরা সঙ্গে থাকলে তোফায়েল কখনও দেড় হাজারের নিচে কোনো ডিশ অর্ডার করে না। খাবারগুলোর দিকে প্রাণহীন চোখে তাকিয়ে থাকলো ইলোরা।
“তুমি যেটা চাইছো, সব কিছু ফেলে শুধু সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থ দেখাই হবে আমাদের লক্ষ্য? ওরকমটা আসলে সম্ভব না। কোনো কিছু না পেলে তোমার জন্য কাজ করবে কেন একজন মানুষ, কিংবা একটা আস্ত প্রতিষ্ঠান? এখন তো ধর্মের নামে দাঁড়ানো দাতব্য প্রতিষ্ঠানও তোমাকে কিছু দেবে না নিজেদের লাভ না থাকলে। একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কি করে তোমাকে বিনা লাভে সেবা দেবে, বলো?”
মুখ কুঁচকে মাথা দোলালো ইলোরা, “গুড পয়েন্ট। আমি নির্বোধ না, তোফায়েল ভাই। এই বিষয়গুলো এমন হচ্ছে কেন আমি জানি। কিন্তু, আপনাকে আমি যেটা বোঝাতে চেয়েছি একই প্রসঙ্গ নিয়ে নিজেদের গ্লোরিফাই না করলেও পারেন। অথবা নিজেকে। দরকার কি। ইউ ডু হোয়াট ইউ হ্যাভ টু ডু। আমি আপনাকে জাজ করি না। আমি আসলে কাউকেই জাজ করি না।”
চামচ হাতে তুলে নিলো ইলোরা। তোফায়েলকেও ইশারা করলো শুরু করার জন্য। সে না শুরু করলে তোফায়েল খাবারে চামচ ঠেকায় না।
“তোমার ব্যাপারে আমার যে আগ্রহ, এটায় কারও সায় ছিল না। আমার বন্ধুদের কথা বলতেছি।” খানিক বাদে তোফায়েল বলল, “রেদোয়ান আমারে বলছিলো, এই কাজটা যদি আমি করি ক্যাম্পাসে আমার ওয়েইট পইড়া যাইবো। ক্যাম্পাসের ভেতর কোনো মাইয়ার সাথে খাতির করতে দেখবা না আমাদের। এইটা আমরা করি না দলের কথা ভাইবা।”
সিরিয়াসনেস কেটে গেছে সম্ভবত। তোফায়েল তার মাতৃভাষায় কথা বলছে আবারও। ইলোরা যথারীতি হুঁ-হাতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো। অযথা তোফায়েলের প্রথম বর্ষের সিএসই কেলেঙ্কারি মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার কি?
“কিন্তু রেদোয়ানকে আমি বিশ্বাস করতে পারি নাই। আমার মনে হয় আমি যদি তোমার দিকে আগ্রহ না দেখাইতাম, ওই হারামজাদাই তোমার পিছে ঘুরতে শুরু করতো।” হাহা করে হাসলো তোফায়েল, ইলোরার মুখের কুঞ্চন টের পেয়েছে, “ফাইজলামি করতেছি। ফাইজলামি বোঝো না?”
ইলোরা অবশ্য এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না। মনোযোগ সে সরিয়ে নিয়েছে দেড় হাজার টাকার ডিশে।
“আমার নামে অনেক গুজব শুনবা। চাইলে তোমাকে আমি মিথ্যা বলতে পারি, কিন্তু তোমার সাথে মিথ্যা আমি বলবো না। আমি খুব ধোয়া তুলসী পাতা না। তোফায়েল এই কথা কাউকে বলছে এমন রেকর্ড নাই, বুঝতেছো? আমি কনফেস করি না। কিন্তু তোমাকে বলতেছি, কারণ তোমার সাথে আমি ক্লিন থাকতে চাইতেছি।”
তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে থাকলো ইলোরা। জানে, ওর সুন্দর চোখজোড়ার আকর্ষণ এই ছেলেটা এড়াতে পারবে না।
“এর আগেও দুই একটা প্রেম আমি করছিলাম। কিন্তু কোনোবারই মেয়ের মতামত আমি নেই নাই। মিশছি আমার যেমনে ইচ্ছা হইছে মিশতে। মেয়ের পছন্দ হোক আর না হোক, আমি পাত্তা দেই নাই। তোমার কেসটা আলাদা। তোমার দিকে আমি একটা ইঞ্চিও আগাবো না, যদি তুমি না চাও। সোজাসুজি বলি, তোমাকে আমি জয় করতে চাইতেছি। তোমার সাথে স্রেফ থাইকা দেখতে আসি নাই কেমন লাগে।”
সত্যবাদী যুধিষ্ঠির! মুখ বাঁকালো ইলোরা।
“তোমার কেসটা অবশ্য আমি বুঝি না।” সামনে ঝুঁকে এলো তোফায়েল, “এই ক্যাম্পাসে তোমার মতো সুন্দরি আমি আগে দেখি নাই, ট্রলি স্পিকিং। এতো সুন্দর হইয়াও তুমি আমাকে এখনও বিদায় হইতে বলো নাই। এই বিষয়টা আমি বুঝি না। অন্য কোনো মাইয়া হইলে বুঝতাম আমারে ভয় পাও দেইখা বলতেছো না। কিন্তু তুমি আমারে ভয় পাও না। এইটা আমি ভালো বুঝতে পারি। মানুষের ভয়টা আমি সেন্স করতে পারি খুব ভালো।” আবার চেয়ারে হেলান দিলো সে, “আমিও গাধা না, জানি আমার জন্য তোমার কোনো ফিলিংস নাই। থাকার কথা তো না। সেইক্ষেত্রে আমার সাথে তুমি এখনও চলতেছো, মিশতেছো, এইটার কারণ কি?”
টিস্যু দিয়ে মুখের কোণটা মুছলো ইলোরা। তারপর নিচু গলায় বলল, “আমি আপনাকে দেখতে আসছি।”
“আমাকে দেখতে আসছো?” অবাকই হলো তোফায়েল। এমন উত্তর সে আশা করেনি।
“হ্যাঁ। আমি এতোদিন শুনেছি আপনি কোন স্তরের জানোয়ার। শোনা কথায় আমি বিশ্বাস করি না। তাই নিজের চোখে সেইটা দেখতে আসছি।”
তোফায়েলের হাত থেকে কাঁটা চামচ পড়ে গেলো। ক্রোধে না বিস্ময়ে তা বোঝার উপায় নেই। সরাসরি তার দিকে আবারও তাকালো ইলোরা।
“পারলে আমার জানাশোনাকে ভুল প্রমাণ করেন।”