৪. কেলি এবং ডায়ানা

৩১.

কেলি এবং ডায়ানা একই সঙ্গে ভয় পেলেন। তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছেন।

-ঘুম কেমন হয়েছে?

বাজে স্বপ্ন দেখেছি।

ডায়ানা একটু চিন্তা করলেন- আমিও। কেলি, কীভাবে বেঁচে গেলাম বলুন তো?

-হ্যাঁ, ভাগ্য আমাদের সহায় হয়েছে।

কেলি ডায়ানার মুখের দিকে তাকালেন।

 ডায়ানা বললেন– এতদিন পর্যন্ত ভাগ্য সাহায্য করেছে, শেষ পর্যন্ত করবে তো?

কেলির চোখে বিস্ময় হ্যাঁ, মনে হচ্ছে, কেউ বোধহয় অদৃশ্যে থেকে আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

কেলি শান্তভাবে বললেন- ডায়ানা, আমি কতগুলো ব্যাপারে বিশ্বাস করি।

 ডায়ানা বললেন আমাকেও বিশ্বাস করতে হয়।

-এবার বোধহয় ব্রেকফাস্ট খেতে হবে। ভীষণ খিদে পাচ্ছে।

কেলি বললেন– ঠিক আছে, আমরা কি বিপদের বাইরে এসে গেছি? বোর্ডিং হাউসের ব্রেকফাস্ট কেমন? দেখাই যাক। এসো, আমরা পোশাক পরে নিই। আমরা কোণের টেবিলে বসে খাব।

ডায়ানা বললেন একটা ফোন করতে হবে।

একজন অপারেটর বলল- কে আই জি।

–বেটি বারকারের সঙ্গে কথা বলব?

 –এক মুহূর্ত ধরুন।

 ট্যানার দেখলেন নীল আলো জ্বলে উঠেছে। মিস বারকার এখন তার ডেস্কে নেই। আমি কি কোনো খবর রাখব?

না, ধন্যবাদ।

ট্যানারের মুখে হাসি, এবার বোধহয় একটা চিহ্ন পাওয়া যাবে।

.

ডায়ানা কেলির দিকে তাকালেন বেটি বারকার কাজ করছেন এখনও। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেই হবে।

বাড়ির নাম্বারটা কোথায়?

–টেলিফোন ডাইরেক্টরিতে পাওয়া যেতে পারে।

–হ্যাঁ, হতে পারে। ডায়ানা ডাইরেক্টরিটা তুলে নিলেন। খোঁজার চেষ্টা করলেন। ডায়ানা একটা নাম্বার ডায়াল করলেন। রিসিভারটা নামিয়ে নিলেন।

কী বলল?

 লাইনটা কেটে দেওয়া হয়েছে।

কেলি বললেন- আমাকে এবার স্নান করতে হবে।

.

কেলির স্নান শেষ হয়ে গেল। বাথরুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। বুঝতে পারলেন, তোয়ালেটা মেঝেতে পড়ে আছে। এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলেন। তারপর তোয়ালে নিয়ে এলেন। বেডরুমে ঢুকে পড়লেন। কোনো সমস্যার সমাধান?

ডায়ানা তাকিয়ে আছেন।

ডায়ানা এবার বাথরুমে যাবেন।

তিনি শাওয়ারের তলায় দাঁড়ালেন, উষ্ণ জল শরীরটাকে শান্ত করে দিল। হ্যাঁ, অনেকক্ষণ ধরে স্নান করতে করতে তিনি শুধু রিচার্ডের কথা ভাবছিলেন। একে অন্যকে কতখানি ভালোবাসতেন।

স্মৃতিরা কেন বারবার ফিরে আসে।

.

ফুলের গোছা।

-ফুলগুলো সুন্দর, ডার্লিং, কবে আমরা এই ব্যাপারটাকে উদযাপন করব?

–সেন্ট সুইডিনস ডে? আরও ফুল?

ওয়াশিংটন ক্রশিং ডিলা ওয়ারে ডে?

ন্যাশনাল প্যারাকিড ডে?

আরও কত কী?

গোলাপেরা গল্পকথা বলে, প্রিয়তমা তুমি কত সুন্দরী?

 রিচার্ড হাতে হাত রেখে বলছেন- হ্যাঁ, আমি তোমাকে আরও ভালোবাসি।

ফুলের মাধ্যমে কত কবিতা লেখা হয়। ডায়ানা পোশাক পরলেন। জুতোটা কোথায়? অথবা অন্যান্য পোশাক? অন্তর্বাস? জ্যাকেট?

এখনই ও বাড়ি ফিরে আসবে। ডায়ানা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন। কিন্তু কোনো পোশাক থাকবে না তার শরীরে। সম্পূর্ণ নগ্নিকা। হাই হিল জুতো থাকবে। ডায়ানা বলবেন, ডার্লিং, তুমি কি জুতোজোড়া পছন্দ করছ?

তার পোশাক খুলে দেওয়া হবে। বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হবে। তারপর?

কেলির কণ্ঠস্বর ভেসে এল আমরা কী ব্রেক ফাস্ট, নাকি ডিনার খাব?

.

তারা রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে চলেছেন। দিনটা ঠাণ্ডা এবং শীতল। আকাশ স্বচ্ছ নীল।

ডায়ানা বললেন– নীল আকাশ কীসের প্রতীক?

 কেলির ঠোঁটে হাসি, যাক ডায়ানার কুসংস্কার এখনও বজায় আছে।

 ডিনারের আসর। ডায়ানা এবং কেলি বুফের পাশে চলে গেলেন, একে অন্যের দিকে তাকালেন।

খাওয়া শুরু হল। খেতে খেতে বিপদ সম্পর্কে আলোচনা।

সত্যিই তো কীভাবে তারা বেঁচে গেছেন।

.

কোণে একটা দোকান, কেলি বললেন- এখানে সেলফোন পাওয়া যাচ্ছে।

কেলি এবং ডায়ানা ভেতরে গেলেন। দুটো সেলফোন কিনলেন।

এক হাজার মিনিট কথা বলার ব্যবস্থা করা হল।

কেলি বললেন- এসো, আমরা নাম্বার বিনিময় করি।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটা করা সম্ভব হল।

 ডায়ানা টাকা দিতে গিয়ে বললেন- এবার আর ক্যাশ হাতে থাকবে না।

কেলিও বললেন- আমারও সেই অবস্থা।

ডায়ানা বললেন এবার বোধহয় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হবে।

হ্যাঁ, খুব সাবধানে।

.

ডিনার শুরু হয়েছে। ওয়েট্রেস এসে বলল- আপনাদের কী দেব?

কী কী খাওয়া যেতে পারে? অরেঞ্চ জুস আছে? শুয়োরের মাংস? ডিম? টোস্ট আর কফি?

কেলির দিকে তাকিয়ে সে জানতে চাইল আপনাকে কী দেব?

–আমাকে ফলের রস ছাড়া আর কিছু দিও না।

ওয়েট্রেস চলে গেল।

তারা দুজন বসে অনেক কথা আলোচনা করলেন।

.কেলি এবং ডায়ানার খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। তারা দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। সকালের কাগজ দেওয়া হয়েছে। ডায়ানা এগিয়ে গেলেন। কেলিকে বললেন, একটু অপেক্ষা করুন। তিনি একটা কাগজ হাতে নিলেন। ডায়ানা কেলিকে বললেন দেখুন।

সামনের পাতায় খবরটা ছাপা হয়েছে। কিংসলে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ একটা স্মরণসভার আয়োজন করেছে। যেসব কর্মচারীরা সাম্প্রতিককালে মারা গেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। আগামীকাল এগারোটা বেজে পনেরো মিনিটে, কে আই জি-র হেডকোয়ার্টার ম্যানহাট্টানে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

তার মানে আগামী কাল, কেলি ডায়ানার দিকে তাকালেন। বললেন- শেষ অব্দি মিটিংটা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

না, মনে হচ্ছে, আমাদের ধরে ফেলার একটা ফাঁদ।

কেলি বললেন– ঠিকই বলেছ, কিংসলে বোধহয় ভেবেছেন, আমরা একেবারে বোকা।  

কেলি ডায়ানার অভিব্যক্তি লক্ষ্য করে বললেন, আমরা কি যাব?

না, আমরা যাব না।

আমাদের যেতেই হবে, আমাদের মনে হচ্ছে বেটি বারকার সেখানে থাকবেন। তার সাথে কথা বলতে হবে।

না, ওখান থেকে বেঁচে আমরা ফিরতে পারব না।

ডায়ানা কেলির দিকে তাকালেন আমাকে বিশ্বাস করুন।

কেলি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি এক মুহূর্ত কী যেন চিন্তা করলেন। তার মুখে হঠাৎ আশার আলোর প্রজ্বলন। তিনি বললেন, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। ব্যাপারটা আমি সমাধান করব।

বুদ্ধিটা কী, জানতে পারব?

–ওটা উহ্য থাক।

ডায়ানা বললেন–সত্যি আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি?

কেলি বললেন- হ্যাঁ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

.

সেদিন রাতে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুমোতে যাবার আগে কেলি শেষবারের মতো ভাবছেন, আমার পরিকল্পনাটা যদি শেষ পর্যন্ত কার্যকরী না হয়, তাহলে কী হবে? তাহলে নিশ্চিন্ত মৃত্যু। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় নেই, জীবনের সাথে শেষ লড়াইতে অবতীর্ণ হতেই হবে। আর কতদিন আমরা ইঁদুরের মতো গর্তে মুখ লুকিয়ে বসে থাকব।

শুতে যাবার আগে ডায়ানা শেষবারের মতো রিচার্ডের সঙ্গে কথা বললেন, অবশ্যই মনে মনে।

তিনি বললেন রিচার্ড কাল তোমার স্মরণসভায় যোগ দিতে চলেছি। জানি না তোমাকে হ্যালো অথবা গুডবাই, কীভাবে সম্বোধন করব। যদি আর দেখা নাও হয় তবুও একটা কথা তুমি জেনে যাও, তা হল তোমাকেই আমি একমাত্র ভালোবাসি। তুমি যেখানেই থাকো, আমার ভালোবাসার উষ্ণ আদর গ্রহণ করো।

চোখে ঘুম জড়িয়ে এসেছে। সকালটা আমি দেখতে পাব কি?

.

৩২.

স্মৃতিসভা অনুষ্ঠিত হবে একটা বিশাল পার্কের মধ্যে। কে আই জি কমপ্লেক্সের মধ্যেই এই পার্কটির অবস্থিতি। এখানে মাঝে মধ্যে নানা প্রমোদ অনুষ্ঠানের আসর বসে। পার্কে অনেক মানুষের ভিড়। দুটো দরজা দিয়ে পার্কে ঢুকতে পারা যায়।

পার্কের কেন্দ্রস্থলে একটি ডায়ার্স তৈরি করা হয়েছে। কে আই জি-র বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেখানে ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়েছেন। রিচার্ড স্টিভেন্সের সেক্রেটারি বেটি বারকারকে দেখা গেল। তিনি এক আকর্ষনীয় চেহারার রমণী, বছর তিরিশ বয়স।

ট্যানার মাইক্রোফোন ধরে বলছেন– এই কোম্পানি তার সদস্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে চায়। চিরকাল আমি আমার কোম্পানির তরফে সদস্যদের কাছে আমার সহানুভূতি এবং শুভ কামনা জানিয়ে এসেছি। আমরা সবাই একটা পরিবার হিসেবে কাজ করি। একই আদর্শ গ্রহণ করার চেষ্টা করি।

ট্যানারের কণ্ঠস্বর শোনা গেল। তিনি দর্শকদের দিকে তাকিয়ে আছেন। উৎসুক চিত্তে কিছু একটা খুঁজছেন। তিনি আবার বললেন- এই কোম্পানিতে আমরা নানা সমস্যার সমাধান করি। আমরা নিত্য নতুন ভাবনা বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিই। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল, মানুষের জীবন আরও আরামপ্রদ করে তোলা। এর জন্য অবশ্য আমরা কখনও সন্তুষ্ট হই না।

পার্কের একেবারে শেষে ডায়ানা এবং কেলি প্রবেশ করেছেন। ট্যানার তার ঘড়ির দিকে তাকালেন। এগারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। মুখে পরিতৃপ্তির হাসি। তিনি বলে চললেন এই কোম্পানির যত কিছু সাফল্য তার অন্তরালে আপনাদের উদয়াস্ত পরিশ্রম আছে।

ডায়ানা প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালেন, কেলির দিকে তাকিয়ে বললেন- বেটি বারকারকে দেখা যাচ্ছে। যে করেই হোক ওনার কাছে পৌঁছোতে হবে।

সাবধানে যাবো কিন্তু।

 ডায়ানা চারিদিকে তাকালেন।

–হ্যাঁ, আমি ঠিক পৌঁছে যাব।

 তিনি সামনে এবং পেছন দিকে তাকালেন। হ্যারি ক্লিন্ট এবং তার দুজন লোককে দেখা গেল। একজন গেটে এসে গেছে। ডায়ানার চোখ পড়েছে দ্বিতীয় গেটের ওপর। কারবালো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আরও দুজন।

ডায়ানার গলা শুকনো– কী করব?

 কেলি দেখতে পেলেন, ছজন মানুষ পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে।

অন্য কোনো রাস্তা আছে কি?

মনে হচ্ছে আছে।

ট্যানার বলে চলেছেন- কতগুলো ঘটনা আমাদের মনকে শোকাচ্ছিন্ন করে তুলেছে। আমাদের পরিবারের কজন সদস্যের রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা আমাদের সকলকেই আক্রান্ত করেছে। কে আই জি আততায়ীর জন্য ৫০ লক্ষ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। যে করেই হোক দেখতে হবে এই জঘন্য ঘটনার অন্তরালে কে বা কারা আছে।

কেলি শান্তভাবে বললেন– এক পকেট থেকে অন্য পকেটে ৫০ লক্ষ ডলার চলে যাবে।

ট্যানার দর্শকদের দিকে তাকিয়ে আছেন কেলি এবং ডায়নার দিকে নজর পড়েছে। তার চোখ ঠাণ্ডা- আমরা দুজন শোকস্তব্ধা রমণীকে আমাদের মধ্যে পেয়েছি। শ্রীমতী মার্ক হ্যারিস এবং শ্রীমতী রিচার্ড স্টিভেন্স। আমি তাদের মঞ্চে আহ্বান করছি।

না, আমরা কিছুতেই ওখানে যাব না। আমরা জনতার মধ্যে মিশে থাকব। এখন আমরা কী করব?

কেলি অসহায় হয়ে জানতে চাইলেন।

ডায়ানা কেলির দিকে তাকিয়ে আছেন। অবাক হয়ে গেছেন। এবার আপনার পরিকল্পনাটা শুরু করুন।

কেলি আমতা আমতা করে বললেন- তাহলে আমার কাজটা যে কিছুতেই সফল হচ্ছে না।

ডায়ানা চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করলেন আর একটা পরিকল্পনা?

–ডায়ানা?

–হ্যাঁ।

আর কোনো পরিকল্পনা নেই।

ডায়ানার চোখ বড়ো বড়ো হয়েছে তার মানে? এখান থেকে বেরোবার পথ সব বন্ধ।

–তাই তা মনে হচ্ছে।

ট্যানারের কণ্ঠস্বর আরও উচ্চকিত, লাউডস্পিকার গমগম করছে। মিসেস স্টিভেন্স এবং মিসেস হ্যারিস এক্ষুনি এখানে আসবেন কি?

কেলি ডায়ানার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি দুঃখিত।

–এটা আমারই ভুল। আমার আসা উচিত হয়নি। জনগণ অস্থির হয়ে উঠেছেন। হ্যাঁ, তাদের ফাঁদে ফেলা হয়েছে।

মাইকে আবার শোনা গেল- মিসেস স্টিভেন্স এবং শ্রীমতী হ্যারিস?

কেলি বললেন এবার আমরা কী করব।

ডায়ানা বললেন– এখন করার কিছু নেই। ওখানে যেতেই হবে। চলো, আমরা এগিয়ে যাই।

দুজন ভদ্রমহিলা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। ডায়ানা বেটি কারবারের দিকে তাকিয়ে আছেন। বেটি বারকারের চোখে আলো জ্বলে উঠেছে। কিন্তু মুখে অদ্ভুত আতঙ্কের ছাপ।

ডায়ানা এবং কেলি বেদির ওপর উঠে গেলেন। হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়েছে।

ডায়ানা চিন্তা করছেন, রিচার্ডের কথা। হ্যাঁ, আমি চেষ্টা করেছি, কী হবে, কিছু বুঝতে পারছি না।

হঠাৎ একটা শব্দ শোনা গেল। কী ঘটেছে?

 বেন রবার্টস ঢোকার চেষ্টা করছেন। তার সাথে অনেক আলোকচিত্রী এবং সহকারী।

দুজন মহিলা তাকালেন। কেলি বললেন- হ্যাঁ, প্রথম পরিকল্পনাটা সফল হয়েছে। বেন এসে গেছেন।

ডায়ানা বললেন– ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ রিচার্ড।

কেলি বললেন– কী? তার হঠাৎ মনে পড়ে গেল, হ্যাঁ, বেন এসে গেছেন, এসো, আমরা কাজটা শুরু করি।

.

ট্যানার স্ক্রিনের ওপর দেখলেন, তার মুখ সাদা হয়ে গেছে। তিনি বললেন, আমি দুঃখিত মিঃ রবার্টস, এটা একটা ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান। আপনারা অনুগ্রহ করে এখান থেকে বেরিয়ে যান।

বেন রবার্টস বললেন– সুপ্রভাত মিঃ কিংসলে। আমি মিসেস হ্যারিস এবং মিসেস স্টিভেন্সের সঙ্গে যুক্ত আছি। আমি যখন এখানে এসেছি, কিছুতেই চলে যাব না। আমি এই শোকসভাটাকে টেলিভিশনের মাধ্যমে সকলের সামনে তুলে ধরব।

ট্যানার মাথা নেড়ে বললেন না, আমি আপনাকে অনুমতি দেব না।

-খুবই খারাপ, তাহলে আমি মিসেস হ্যারিস এবং মিসেস স্টিভেন্সকে এখান থেকে নিয়ে যাব। স্টুডিওতে। তাদের ইন্টারভিউ নিতে হবে।

না, আপনি এটা করতে পারেন না।

 ট্যানারের কণ্ঠস্বরে কর্কশতা।

 বেন বললেন- কী করতে পারব না?

ট্যানারের সমস্ত শরীর রাগে কাঁপছে– আপনি কিছুই করতে পারবেন না।

দুজন ভদ্রমহিলা বেনের কাছে এগিয়ে গেছেন।

বেন শান্তভাবে বললেন- দেরী হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত। আজকে একটা সাংঘাতিক খবর বেরিয়েছে। খবরটা শুনলে সকলে অবাক হয়ে যাবে।

কেলি বললেন– আর একটা ভয়ংকর খবর এক্ষুনি রাষ্ট্র হত। দুজনের মৃত্যু হত। চলুন, এখান থেকে চলে যাই।

ট্যানার তাকিয়ে আছেন। হতাশ হয়েছেন। কেলি, ডায়ানা এবং বেন রবার্টস ধীরে ধীরে এগিয়ে চললেন। ট্যানারের লোকজন হতভম্ব।

হ্যারি ফ্লিন্ট তাকিয়ে থাকলেন, ট্যানারের মুখের দিকে, কোনো নির্দেশ আসবে কি?

ট্যানার মাথা নাড়লেন না, ব্যাপারটা এখনও হাতের বাইরে চলে যায়নি।

.

ডায়ানা এবং কেলি বেন রবার্টসের গাড়িতে উঠে পড়েছেন। সঙ্গের লোকেরা আবার দ্রুত ভ্যানে চড়ে বসেছেন।

রবার্টস কেলির দিকে তাকিয়ে বললেন- এবার সব কথা গুছিয়ে বলতে হবে।

–হ্যাঁ, কিন্তু এখন আমি সব কিছু বলতে পারব না।

-কেলি, আমি একজন সাংবাদিক, সত্যি কথা জানতে না পারলে আমি কী করে সবাইকে তা জানাব?

-হ্যাঁ, আজকে তুমি আমার বন্ধু হিসেবে এসেছ।

 রবার্টস দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কোথায় যাবে?

 ডায়ানা বললেন আমাদের ৪২ নম্বর স্ট্রিটে নিয়ে চলুন। টাইম স্কোয়ার।

-ঠিক আছে, ওখানে আমরা যাচ্ছি।

.

কুড়ি মিনিট কেটে গেছে, কেলি এবং ডায়ানা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন।

কেলি বেন রবার্টসের হাতে হাত রাখলেন। বললেন- অনেক ধন্যবাদ, বেন, আমি, এটা কখনও ভুলতে পারব না। তোমায় ভবিষ্যতে ডাকব, কেমন?

সাবধানে থেকো।

 দুই মহিলা সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।

 কেলি বললেন খুবই খারাপ লাগছে।

কী?

–ডায়ানা, একটা অস্ত্র জোগাড় করতে হবে। বন্দুক থাকলে ভালো হত।

বন্দুকের কী দরকার? আমাদের তো সচল মস্তিষ্ক আছে।

–না, একটা বন্দুক চাই। এখন আমরা কী করব।

এবার ছুটে বেড়ানো বন্ধ করতে হবে। আমরা এবার একটু পিছিয়ে খেলব।

 কেলি অবাক, তার মানে কী বোঝাতে চাইছেন?

–আর পারছি না। এবার ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব কেলি।

 কেলি অবাক– তার মানে? কে আই জি-র সঙ্গে লড়া?

-হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন।

–অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে তোমার মধ্যে। কীভাবে এই লড়াইটা শুরু হবে। আমরা দুই অসহায় মহিলা লড়ব কী করে?

–আমরা সমস্ত সদস্যের নাম জোগাড় করব। গত কয়েক সপ্তাহে যাদের মৃত্যু হয়েছে।

–তারপর? এইভাবে কি আমরা সফল হব।

হ্যাঁ, খবরের কাগজে বলা হয়েছে, অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তার মানে শুধু মার্ক আর রিচার্ড নয়, আরও অনেকে আছেন।

হা, সেই নামগুলো আমরা কীভাবে পাব?

ডায়ানা বললেন- ওই ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দিয়ে দেখো।

.

ইন্টারনেট কাফেতে ওঁরা দুজন ঢুকে পড়েছেন। বিরাট একটা কম্পিউটার আছে। ডায়ানা কার্ড মেশিনের সামনে গেলেন। এক ঘণ্টার জন্য তাকে ইন্টারনেট সার্চ করতে হবে।

তিনি ফিরে এলেন। কেলি জিজ্ঞাসা করলেন কীভাবে শুরু করব?

–এসো, কম্পিউটারের সাহায্য নেওয়া যাক।

 তাঁরা একটা ফাঁকা কিউবিকল পেয়ে গেলেন।

কেলি দেখলেন, ডায়ানা ইন্টারনেট ব্লক করতে শুরু করেছেন, বললেন দেখা যাক কী হয়?

–আমরা সবকিছু সার্চ করব। দেখব কে আই জি-র কারা কারা মারা গেছেন।

ডায়ানা টাইপ করতে শুরু করলেন ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ গুগুল ডট কম।

তারপর আবার টাইপ করলেন- শোক। তারপর কে আই জি।

অনেকগুলো নাম বেরিরে আসছে। ডায়ানা তাকিয়ে থাকলেন। খবরের কাগজে কিছু বেরিয়েছে কি? আর কোনো সূত্র? কে আই জি বার্লিন সম্পর্কে একটা প্রবন্ধ বেরিয়েছে। ওয়েবসাইটে আছে।

বাঃ, এটা তো খুবই উল্লেখযোগ্য। ফ্রানজ ভারব্রুগ…

উনি কে?

উনি কোথায়?

-উনি বোধহয় হারিয়ে গেছেন। উনি কে আই জি বার্লিনে কাজ করতেন। ওনার স্ত্রী সোনঝা ভারব্রুগ। তার আকস্মিক মৃত্যু হয়।

ডায়ানা আর একটা লিঙ্ক পাবার চেষ্টা করলেন।

-হ্যাঁ, এই তো লেখা আছে ফ্রানজ মার্ক হ্যারিস।

কেলি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এগিয়ে যান।

ডায়ানা আরও অনেকগুলো চাবিতে হাত দিলেন। ডেনভার, গ্যারি রেনল্ডস, ম্যানহাট্টান, ডায়ানার কণ্ঠস্বর ভেঙে গেল রিচার্ড।

ডায়ানা বললেন- এইভাবে কাজটা শুরু হবে।

 কেলি জিজ্ঞাসা করলেন তারপর?

-হ্যাঁ, দেখাই যাক না কী হয়।

.

ব্লকের মাঝামাঝি কেলি এবং ডায়ানা একটা কম্পিউটার দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেন। কেলি বললেন- এখনই দেখা যায় না।

কেলিকে অনুসরণ করে ডায়ানা দোকানে ঢুকে পড়লেন। ম্যানেজারের কাছে এগিয়ে বললেন আমার নাম কেলি হ্যারিস, আমি ট্যানার কিংসলের সহকারিনী। আমাদের তিন ডজন খুব দামী কম্পিউটার চাই। এটা কি দেওয়া সম্ভব?

ম্যানেজার অবাক– কেন? মিসেস হ্যারিস। মিঃ কিংসলের জন্য কি? হ্যাঁ, আমি দিতে পারব।

–ঠিক আছে।

ম্যানেজার বললেন- কখন লাগবে?

 ডায়ানা বললেন আমি ঠিক সময়ে জানাব।

.

ক্যাথি অরডোনেট বলেছেন– এই খবরের কাগজের কাটিংগুলো কি দেখবেন মিঃ কিংসলে?

অস্ট্রেলিয়াতে টরনেডোর আক্রমণ।

 বারোটি গ্রাম টরনেডোর আক্রমণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা কত, এখনও জানা সম্ভব হয়নি।

ট্যানার বললেন- সেনেটর ভ্যান রুবেনকে কাটিংগুলো পাঠিয়ে দিন।

–ঠিক আছে, পাঠাচ্ছি।

 ট্যানার কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকালেন। একটা সংকেত ধ্বনি বেজে উঠেছে। কেন? ইনফরমেশন টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে।

ট্যানার তার পদ্ধতিটাকে চালু করলেন। স্পাইডার উঠে পড়েছে। হাইটেক সফটওয়্যার কোম্পানি। নাম দেখা যাচ্ছে, রিচার্ড স্টিভেন্স, মার্ক হ্যারিস। তিনি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।

তিনি একটা বোম টিপে বললেন, অ্যানড্রু, এখানে চলে এসো।

অ্যানড্রু অফিসে ছিলেন। তিনি দিনের বেলা স্বপ্ন দেখছেন। অ্যাকসিডেন্টের কথা মনে : পড়ে যাচ্ছে। তিনি ওয়াড্রোব রুমে বসে আছেন। বেস্ট স্যুটটা পছন্দ করতে হবে। তিনি কাজ করতে শুরু করলেন। ট্যানারের সঙ্গে দেখা হবে কি? ট্যানারের কণ্ঠস্বর- অ্যানড্রু এখানে এসো।

.

অ্যানড্রু ওই শব্দটা শুনতে পেলেন। ধীরে ধীরে ট্যানারের অফিসে প্রবেশ করলেন।

বসো।

–হ্যাঁ, ট্যানার।

–ওয়েব সাইটকে আক্রমণ করা হয়েছে। তুমি কি জানো, এর অর্থ কী?

না, আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

 ট্যানারের সেক্রেটারি বললেন- কম্পিউটার এসে গেছে, মিঃ কিংসলে।

–কোন কম্পিউটার?

–কেন আপনি যেগুলো অর্ডার দিয়েছিলেন।

 ট্যানার অবাক হয়ে গেছেন। তিনি রিসেপশন রুমে পৌঁছে গেলেন। তিন ডজন। কম্পিউটার জড়ো করা আছে। স্টোর ম্যানেজার এবং তিনজন লোককে দেখা গেল। তারাও পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

ম্যানেজারের মুখে আশার আলো। তিনি ট্যানারকে দেখে খুবই খুশি হয়েছেন। তিনি বললেন– মিঃ কিংসলে, আমি নিজেই এলাম। আপনাকে আর কোনো সাহায্য করব কি?

 ট্যানার সেই কম্পিউটারের স্তূপের দিকে তাকিয়ে বললেন- কে এই কাজ করেছে?

–আপনার সহকারিনী কেলি হ্যারিস, তিনি বলেছেন, আপনার কম্পিউটারগুলো খুব দরকার।

ট্যানার বললেন– এগুলো আপনি নিয়ে যান। কাজ হয়ে গেছে, আর কাজে লাগবে না।

তিনি অফিসের বাইরে এলেন।

অ্যানড্রু এই ব্যাপারটার কী করা যায় বলো তো? আমাদের ওয়েব সাইটের মধ্যে ভাইরাস ঢুকে পড়েছে। তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি। কীভাবে ভাইরাস তাড়াব? আমরা কি ইওরোপে চলে যাব?

অ্যানড্রু শান্ত কণ্ঠস্বরে বললেন না।

-তাহলে?

অ্যানড্রু বললেন– বন্ধ করতে হবে।

ট্যানার ভাইয়ের দিকে তাকালেন। বললেন কীভাবে বন্ধ করব? আঃ, তোমার মতো মাথা যদি আর কারও থাকত?

অ্যানড্রু ট্যানারের দিকে এগিয়ে এলেন। বললেন- সব কিছু একেবার মুছে ফেলল। সমস্ত আসেট, আমাদের সোস্যাল সিকিউরিটি নাম্বার আছে।

তিনি তখনও কথা বলে চলেছেন– ডায়ানা স্টিভেন্স, কে আই জি এই ব্যাপারে আরও তৎপর হয়ে উঠবে।

অ্যানড্রু আবার বললেন- ট্যানার এছাড়া কোনো উপায় নেই।

 ট্যানার বললেন তার মানে? এগুলো হারিয়ে গেলে আমরা কিছু করতে পারব না? কেলি হ্যারিস এখন যা খুশি তাই করতে পারে। আমরা ডায়ানার ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইট দেখব নাকি?

তিনি ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইট টিপলেন তারপর একটা লিঙ্ক দেখা গেল। লেখা আছে, নিজের অ্যাকাউন্ট নিজে করার চেষ্টা করুন।

এবার ট্যানার ডায়ানা স্টিভেন্সের অ্যাকাউন্ট নাম্বারের মধ্যে ঢুকে গেলেন। চারটে শেষ সংখ্যা নিলেন। সোস্যাল সিকিউরিটি নাম্বার। হ্যাঁ, ঢোকা সম্ভব হয়েছে। তিনি সমস্ত ব্যালেন্সকে বাঁদিকে নিয়ে গেলেন। এবার কেলির ডাটাকে নষ্ট করতে হবে।

এবার কী করব?

অ্যানড্রুর কথা মতো কাজ চলছে। হ্যাঁ, ডায়ানা স্টিভেন্সকে রাস্তার ভিখারি করে দেওয়া হয়েছে।

ট্যানার এই কাজটা সুন্দরভাবে করলেন। এবার সত্যিকারের খেলা শুরু হবে।

অ্যানড্রু বললেন– গতকাল রাতে আমি টেলিভিশনে একটা সিনেমা দেখেছি।

ট্যানার ঘুষি মারলেন টেবিলের ওপর, আক্রোশে, ভাইয়ের গালে থাপ্পড় মারলেন। অ্যানড্রু চেয়ার থেকে পড়ে গেলেন। দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খেলেন। চিৎকার করলেন। আঃ, আমার কথা কেন শুনছ না তুমি? এই কণ্ঠস্বর ট্যানারের।

 দরজা খুলে গেল। ক্যাথি অরডোনেট প্রবেশ করেছে। তিনি বললেন– মিঃ কিংসলে, সব কিছু ঠিক আছে তো?

-হ্যাঁ, আহা অ্যানড্রু পড়ে গেছে।

আহা, কী খারাপ লাগছে।

অ্যানড্রুকে তুলে ধরা হল।

আমি কি পড়ে গিয়েছিলাম?

ট্যানার জানতে চাইলেন- দাদা, তুমি এখন কেমন আছো?

ক্যাথি অরডোনেট বললেন মিঃ কিংসলে, আপনার ভাই কি বাড়িতে ভালো থাকেন?

–হ্যাঁ, ট্যানার জবাব দিলেন। কিন্তু কাজ না করলে মাথাটা আরও খারাপ হয়ে যাবে। আমি ওনার দেখাশুনার দায়িত্ব নেব।

ক্যাথি অরডোনেট ট্যানারের দিকে তাকিয়ে বললেন- আঃ, মিঃ কিংসলে আপনার গুণের কোনো তুলনা নেই।

কিংসলে ঘাড় ঝাঁকিয়ে বললেন- হ্যাঁ, আমাদের কাজ তো করতেই হবে।

.

দশ মিনিট কেটে গেছে। ট্যানারের সেক্রেটারি ফিরে এসেছে।

–ভালো খবর আছে মিঃ কিংসলে। সেনেটর ভ্যান রুবেনের অফিস থেকে একটা ফ্যাক্স এসেছে।

–আমি দেখছি, ট্যানার কিছু ভাববার চেষ্টা করলেন।

ডিয়ার মিঃ কিংসলে, আমি আপনাকে জানাচ্ছি যে সেনেটর সিলেক্ট কমিটি এই ব্যাপারটাকে অনুমতি দিয়েছে, পরিবেশের জন্য কিছু অর্থ দেওয়া হবে। যাতে সারা পৃথিবীর মানুষ সুখে শান্তিতে বাস করে তার জন্য আমাদের এই প্রয়াস।

আপনার একান্ত বিশ্বস্ত।

 সেনেটর ভ্যান রুবেন।

.

৩৩.

ডায়ানা জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার কি পাশপোর্ট আছে?

–হ্যাঁ, অন্য কোনো দেশে হলে সব সময় পাশপোর্ট আমি সঙ্গে রাখি।

 ডায়ানা জানতে চাইলেন আমার পাশপোর্ট ব্যাঙ্ক ভল্টে আছে। আমি সেটা পেয়েছি। আমার কিছু টাকার দরকার।

.

তারা ব্যাঙ্কে ঢুকলেন। ডায়ানা নীচের দিকে নেমে গেলেন। ভল্টটা খুললেন। সেফ ডিপোজিট বাক্সটা খুললেন। পাশপোর্ট বের করলেন। পার্সে পুরলেন। ওপরে উঠে গিয়ে ট্রেলারের ডেস্কের সামনে চলে গেলেন।

–আমি অ্যাকাউন্টটা বন্ধ করতে চাইছি।

–ঠিক আছে। আপনার নাম?

–ডায়ানা স্টিভেন্স।

 ট্রেলার মাথা নাড়লেন এক মিনিট। তিনি একটা ফাইলিং ক্যাবিনেট খুললেন। ড্রয়ার বের করলেন, কার্ডগুলো দেখলেন। একটা কার্ড বের করে বললেন

মিসেস স্টিভেন্স, আপনার অ্যাকাউন্ট তো বন্ধ হয়ে গেছে।

ডায়ানা মাথা নেড়ে বললেন- না, কোথাও কোনো ভুল হয়েছে।

ট্রেলার আবার কার্ডটা ডায়ানার সামনে এনে বললেন- এখানে লেখা আছে দেখুন অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ মৃত্যু।

ডায়ানা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

–আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে, আমি মারা গেছি?

না, আমি অত্যন্ত দুঃখিত আমি কি ম্যানেজারকে ডাকব?

ডায়ানা চিৎকার করে বললেন–ম্যানেজারকে ডাকতে হবে না। তিনি বুঝতে পেরেছেন কী হয়েছে।

ডায়ানা বাইরের দিকে চলে গেলেন। কেলি দাঁড়িয়ে ছিলেন।

টাকা আর পাশপোর্ট পেয়েছ, আমি পাশপোর্ট পেয়েছি, বেজন্মাটা বলছে, আমার অ্যাকাউন্ট নাকি বন্ধ হয়ে গেছে।

-কী করে?

খুবই সহজ, কে আই জি থেকেই এই ব্যাপারটা ঘটানো হয়েছে। ডায়ানা বললেন। হায় ঈশ্বর।

–এখন কী হবে?

 –আমাকে একটা ফোন করতে হবে।

ডায়ানা টেলিফোন কিউবিকলে ঢুকে পড়লেন। ক্রেডিট কার্ড দিলেন। কয়েক মুহূর্ত বাদে তিনি একজন ক্লার্কের সঙ্গে কথা বললেন– ডায়ানা স্টিভেন্সের নামে একটা অ্যাকাউন্ট আছে। এটা কি ঠিক আছে?

মিসেস স্টিভেন্স, আমাদের রেকর্ড দেখাচ্ছে যে, আপনার কার্ডটা হারিয়ে গেছে। আপনি যদি নতুন করে কার্ড করতে চান, তাহলে পুলিশের খাতায় নাম লেখাতে হবে।

ডায়ানা বললেন ঠিক আছে, আমি পরে ফোন করছি।

কেলির কাছে গিয়ে বললেন তিনি। ওরা আমার ক্রেডিট কার্ডটাও নষ্ট করে দিয়েছে।

 কেলি বললেন আমি এখন কয়েকটা ফোন করব।

কেলি টেলিফোনে গিয়ে প্রায় আধঘণ্টা ধরে কথা বললেন। তারপর ফিরে এলেন। খুব রেগে গেছেন।

–অক্টোপাস আমাকে আক্রমণ করেছে। কিন্তু প্যারিসে আমার একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে।

-কেলি, অত সময় নেই, যে করেই হোক এখান থেকে বেরোতে হবে। টাকা কোথায় পাওয়া যাবে?

ব্রুকলিনে যাওয়া যেতে পারে? তুমি কী করবে?

–আমি নিউ জার্সিতে যাব।

 –তাহলে কি আমরা ফাঁদের বাইরে বেরোতে পারব? কিছুই বুঝতে পারছি না।

–হ্যাঁ, আমরা সফল হবই। ওরা কি জানে আমরা কোথায় যাব?

–কিন্তু কীভাবে? আমরা কি আকাশযানের সওয়ার হব?

.

জোসেফ বেরি, ফিফথ এভিনিউ জুয়েলারি স্টোরের মালিক। কেলি এবং ডায়ানাকে দেখলেন। দুই ভদ্রমহিলা সামনে এগিয়ে আসছেন। উনি পেশাগত হাসি হেসে বললেন কীভাবে সাহায্য করব?

কেলি বললেন- আমি আমার অংটিটা বিক্রি করতে চাইছি।

উনি ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে দিলেন। বললেন– আমরা এই ধরনের জিনিস কিনি না।

ব্যাপারটা খুবই খারাপ।

জোসেফ বেরি তাকালেন। কেলি তার হাত থেকে মরকত মণিটা খুলে দিয়েছেন। এটাতে সতেরো ক্যারেটের মরকত আছে, তিন ক্যারেট ডায়মন্ড আছে, প্লাটিনামেরা ওপর গাঁথা।

জোসেফ বেরি তাকালেন। খুশি হয়েছেন। তিনি ভালোভাবে পরীক্ষা করলেন। হ্যাঁ, খুবই সুন্দর, কিন্তু আমরা নিয়ম করেছি…

কুড়ি হাজার ডলার চাই।

কুড়ি হাজার ডলার?

–হ্যাঁ, ক্যাশ চাই।

ডায়ানা তাকিয়ে আছেন কেলি?

 বেরি তাকাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি না, একটু অপেক্ষা করুন।

 তিনি ব্যাক অফিসে চলে গেলেন।

ডায়ানা বললেন তুমি কী করছ? তোমার সব কিছু খিচুড়ি হয়ে গেল।

–আমার সব হারিয়ে গেল? আমরা মরতে বসেছি। ভেবে দেখো তো, জীবনটা কী আরও দামী নয়?

ডায়ানার মুখে কোনো কথা নেই।

জোসেফ বেরি ব্যাক অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছেন। মুখে হাসি আমি ব্যবস্থা করছি।

ডায়ানা তখনও বলছেনএকাজ কখনও করবে না।

কেলি বললেন- না, এটা তো শুধু একটা গয়না।

 উনি চোখ বন্ধ করলেন।

.

এটা তার জন্মদিন। টেলিফোনটা বাজছিল।

সুপ্রভাত ডার্লিং, মার্কের গলা।

সুপ্রভাত।

 –হ্যাপি বার্থডে।

তারপর? এই কথাটা কিন্তু কেলি শোনেননি। বলা হয়েছিল, আজ তুমি কোনো কাজ করবে না। তোমাকে আমি আজ অপহরণ করব।

কেলি অবাক, কেলির মধ্যে একটা অদ্ভুত মাদকতা। হ্যাঁ, এক সপ্তাহ আগে এই নিয়ে কথা হয়েছিল। মার্ক হয়তো ভুলে গেছেন।

কী ব্যাপার?

কতক্ষণ সময় লাগবে?

 –আধ ঘণ্টা।

–আমি আসছি।

.

–আমরা কোথায় যাব, কেলির প্রশ্ন।

ওঁরা গাড়িতে বসে আছেন।

-সত্যি, এমন সুন্দর দিন খুব একটা আসে না।

–আমরা উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়াব।

–সত্যি?

–হ্যাঁ, কিন্তু কোথায়?

— জানি না, জীবন থেকে ছুটি নেব।

একটুখানি চিন্তা, নিঃসঙ্গতা। নিঃসঙ্গতা চাই। এমন একটা জায়গা যেখানে আমরা নিঃসঙ্গত থাকতে পারব।

মার্ক কেলির দিকে তাকিয়ে হেসেছিলেন। বলেছিলেন- তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমি কখনও সেখানে যেতে পারিনি।

.

 ফনটেন বেলেউ হল একটা সুন্দর রাজকীয় প্রাসাদ। চারপাশে অরণ্যের আচ্ছাদন। প্যারিস শহরের দক্ষির-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত।

দূরে ওই অঞ্চলটা দেখা যাচ্ছে। মার্ক বললেন, লুইস নামের অনেক রাজা এখানে বসবাস করেছেন। লুইস চতুর্থ থেকে তাদের জয়যাত্রা শুরু হয়েছে।

দারুণ, কেলি মার্কের দিকে তাকালেন। আঃ, কত সুন্দর সেই দিনগুলো ছিল। মনে হচ্ছে, আমি বোধহয় স্কুলবালিকার জীবনে ফিরে গিয়েছি।

তারা রাজকীয় প্রাসাদের উদ্যানে এসে পৌঁছোলেন। মার্ক গাড়িটাকে পার্কিং করে রাখলেন।

তারা গাড়ি থেকে নেমে বাগানের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। মার্ক বললেন- তুমি কি একমাইল হাঁটতে পারবে?

কেলির মুখে হাসি হ্যাঁ, আমি অনেক বেশি হাঁটতে পারব।

মার্ক হাতে হাত রেখে বললেন- তাহলে, শুরু হোক।

-হ্যাঁ, আমি তোমার সঙ্গে আছি।

তারা অনেকগুলো বড়ো বড়ো বাড়ি পার হলেন। এবার বোধহয় আসল জায়গায় এসে পৌঁছোলেন। সেখানে আর কেউ ছিল না। শুধু প্রাকৃতিক নিরাপত্তা। সবুজের সীমাহীন সমারোহ। পুরোনো গাছের গল্পকথা। সূর্যদীপ্ত একটি গ্রীষ্মকাল। বাতাস উষ্ণ। বেপরোয়া ভাব আছে। আকাশের কোথাও কালো মেঘের কান্না নেই।

মার্ক প্রশ্ন করেছিলেন তোমার কী ভালো লাগছে সোনা?

দারুণ ভালো লাগছে মার্ক।

–ছুটিটা দারুণভাবে কাটছে, কী বল?

 কেলি অবাক আজ তুমি কাজ করবে না?

না, আজ সারাদিনের ছুটি।

 বাঃ, ব্যাপারটা দারুণ আনন্দের।

 তারা ওই রহস্যাবৃত অরণ্যের আরও ভেতরে প্রবেশ করলেন।

পনেরো মিনিট কেটে গেছে।

কেলি জানতে চাইলেন- আমরা আর কত দূর যাব?

সামনে একটা সুন্দর জায়গা আছে। আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি।

কয়েক মিনিট পরে তারা একটা বিরাট ওক গাছের তলায় এসে দাঁড়ালেন।

 মার্ক বললেন- এই তো সেই জায়গাটা।

সত্যি, শান্তির পারাবার।

 কে যেন গাছের গায়ে কিছু লিখে দিয়েছে। কেলি আরও কাছে এগিয়ে গেলেন। অবাক হয়ে গেলেন। লেখা আছে হ্যাপি বার্থডে, কেলি।

কেলি মার্কের দিকে এক মুহূর্ত তাকিয়ে ছিলেন। কথারা হারিয়ে গিয়েছিল। কেলি শেষ পর্যন্ত বলেছিলেন- মার্ক ডার্লিং, তোমাকে আবার ধন্যবাদ।

তাহলে মার্ক আমার জন্মদিনটা ভোলেনি!

আমার মনে হয়, এই গাছের মধ্যে কিছু একটা আছে।

কী আছে? কেলি আরও কাছে এলেন। একটা ছোট্ট গর্ত দেখা যাচ্ছে। কেলি হাত ঢুকিয়ে দিলেন। দেখলেন, সেখানে একটা প্যাকেট আছে। সেটা বের করলেন। এটা একটা গিফট বক্স। আশ্চর্য!

–এটা খুলে ফেলো।

 কেলি খুললেন। চোখ দুটো আরও বড়ো হয়ে গেল। এর মধ্যে সাত ক্যারেটের একটা মরকতের আংটি আছে। তার পাশে তিন ক্যারেটের ডায়মন্ড। প্লাটিনাম দিয়ে সাজানো। কেলি কোনো কথা বলতে পারছেন না। তিনি এগিয়ে এসে মার্ককে জড়িয়ে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, মার্ক, আমি অবাক হয়ে গেছি।

তুমি, যদি বলতে, আমি আকাশের চাঁদটা এনে তোমার হাতে তুলে দিতাম। কেলি, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।

কেলি মার্ককে আরও জোরে আদর করলেন। একটা অদ্ভুত আবেগের মধ্যে হারিয়ে গেলেন। এবার কেলি কিছু বলতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু এই অবস্থায় কথা বলা কী অত সহজ? কথারা সব হারিয়ে গেছে।

মার্কের চোখে একটা অদ্ভুত দ্যুতি। মার্ক বললেন- এসো, আমরা এখনই বিয়ে করি।

না, কেলির কণ্ঠে ফিসফিসানি আর্তনাদ।

মার্ক কেলির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন –কেন?

না, এখন সম্ভব নয়।

কেলি, আমি বিশ্বাস করি, তুমি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসো, তাই তো?

–হ্যাঁ।

–আমিও তোমাকে ভালোবাসি?

–হ্যাঁ।

–তাহলে কেন বিয়ে করতে চাইছ না?

– না

কেলি অথৈ জলে পড়ে গেছেন বুঝি। কথা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

–তোমার এই অদ্ভুত আচরণটা আমি বুঝতে পারছি না।

মার্ক কেলির মুখের দিকে তাকালেন। কিছু বোঝার চেষ্টা করলেন। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কেলি জানেন, যখনই মার্ক তার ফেলে আসা জীবনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা শুনবে, তখন থেকে আর কেলিকে বিয়ে করতে চাইবে না।

কেলি শেষ পর্যন্ত বলেছিলেন-না-না, আমার ভয় হচ্ছে, আমি কখনও তোমার উপযুক্ত সহধর্মিনী হতে পারব না।

তার মানে তুমি কী বোঝাতে চাইছ?

এখনই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিরক্তিকর মুহূর্ত।

কেলি কোনরকমে বলেছিলেন–মার্ক, আমরা কখনও সুস্থ সহজ স্বাভাবিক যৌনজীবন যাপন করতে পারব না। আট বছর বয়সে আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে কেলি অবাক চোখে মার্কের দিকে তাকালেন। আঃ, শান্ত সমাহিত এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে জীবনের বিষাক্ত বিভীষিকা!

কেলি আবার বলতে থাকলেন– আমি এমন একটি মানুষের দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছি, যাকে আমি কোনো দিন ভালোবাসিনি। আমি তাই যৌনজীবন যাপন করতে ভয় পাই। যৌনতা ব্যাপারটাই আমার কাছে লজ্জা এবং আতঙ্কের প্রতীক। আমি অর্ধেক মানবী, বাকিটা বোধ হয় এক ক্লীবলিঙ্গ।

কেলি জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন, কান্না চাপবার চেষ্টা করছেন।

কেলি বুঝতে পারলেন, মার্ক তার হাতে হাত রেখেছেন কেলি, আমি খুবই দুঃখিত। হ্যাঁ, ব্যাপারটা সত্যি ভয়ঙ্কর।

কেলি কোনো কথা বলতে পারেননি!

দাম্পত্য জীবনে যৌনতাকে অস্বীকার করা যায় না। মার্ক শান্তভাবে বললেন।

কেলি মাথা নাড়লেন। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে আবেগ সংবরণ করার চেষ্টা করছেন। তিনি জানেন এবার কী বলতে হবে। তিনি বলেছিলেন, আশা করি তুমি আমাকে ভুল বুঝবে না।

মার্ক বলেছেন কিন্তু বিয়ে কি শুধুই যৌনতার? না, বিয়ে হল যৌনতা ছাড়া আরও অন্য কিছু। এমন একজনের সঙ্গে তোমাকে জীবন কাটাতে হবে, যার ভালোবাসায় কোনোদিন ভাটার টান পড়বে না। যার সঙ্গে কথা কোনোদিন ফুরোবে না। জীবনের সব সুখ দুঃখকে যার সঙ্গে তুমি ভাগ করতে পারবে ভালো সময়ে এবং খারাপ সময়ে।

 অবাক বিস্ময়ে কেলি শুনছিলেন। তিনি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।

শেষ পর্যন্ত যৌনতা চলে যায়, কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা থেকে যায়, তোমার আত্মাকে আমি ভালোবাসি। আমি আমার জীবনের সমস্ত প্রহর তোমার সঙ্গে কাটাতে চাই। এটা আমি যৌনতা ছাড়াও করতে পারব।

কেলি তার কণ্ঠস্বর সহজ সোজা রাখার চেষ্টা করে বললেন- না, মার্ক। আমি পারব না।

-কেন?

–একদিন তোমাকে আপসোস করতে হবে। তুমি অন্য কারও প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে, যে তোমাকে একটা নিস্কলঙ্ক জীবন দেবে। আমি তা পারব না। আমার জীবনটা কোথায় হারিয়ে গেছে, দোহাই মার্ক, তুমি এভাবে আমাকে ডাক দিও না। তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি কেন আমার মনে এত কষ্ট দিচ্ছো?

মার্ক আরও সামনে এগিয়ে এলেন। কেলিকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন– আমি তোমাকে কখনওই ছাড়তে পারব না। তুমি আমার জীবনের সব ভালো মুহূর্তের প্রতীক। আমরা বিয়ে করবই।

মার্কের চোখের দিকে তাকিয়ে কেলি বলেছিলেন, তুমি কি ইচ্ছে করে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বে?

মার্কের মুখে হাসি হ্যাঁ, এটাই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য এবং অঙ্গীকার।

কেলি হেসে মার্ককে আদর করে বললেন- ঠিক আছে, তাই হবে।

 মার্কের চোখে আলোর দ্যুতি– আমি জানি, তুমি না বলতে পারবে না।

শেষ পর্যন্ত আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল কেলির গালে। কেলি চিৎকার করে বলেছিলেন- আমি তোমাকে ভালোবাসি মার্ক।

মার্ক সেই সুন্দর মরকত আংটিটা কেলির আঙুলে পরিয়ে দিলেন। একে অন্যের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। প্রকৃতির সেই নিরালা দেশে এক নারী এক পুরুষকে ভালোবাসল। পুরুষও ভালোবাসার প্রত্যুত্তর দিল। নাই-বা চার্চের ঘণ্টা ধ্বনি শোনা গেল। ল্যাটিন মন্ত্র, ধর্মযাজকের উদাত্ত কণ্ঠস্বর, বন্ধু-বান্ধবদের সমবেত হাততালি! এই যে বিয়ের আসর অনুষ্ঠিত হল, স্বর্গ থেকে বোধহয় পূষ্পবৃষ্টি হয়েছিল।

কেলি বললেন- আমি কাল সকালে তোমাকে সেলুনে নিয়ে যাব। আমি যেসব মডেলদের সাথে কাজ করি, তাদের সঙ্গে পরিচয় করাব।

-না-না, এ ব্যাপারে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে।

 –নিয়ম পাল্টাতে হবে।

 মার্ক বলেছেন রোববার বিয়ের আসরটা বসবে। আমার পরিচিত একজন বিচারক আসবেন।

.

পরের দিন সকালবেলা কেলি এবং মার্ক সেলুনে এসে গেছেন।

কেলি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন- দেখো, যে কোনো মুহূর্তে বৃষ্টি হবে। সকলেই বৃষ্টির কথা বলছে। কিন্তু কেউ আমাদের কথা বলছে না।

মার্ক কেলির দিকে তাকিয়ে রহস্যপূর্ণ হাসি হাসলেন।

কেলি মার্কের মুখের অভিব্যাক্তি দেখে বললেন আমার কথা শুনে তুমি কি বুঝতে পারছ? কথাটা কি বাসি হয়ে গেছে? পুরোনো হয়ে গেছে?

মার্ক কোনো উত্তর দিলেন না।

.

জনা ছয়েক মডেল ড্রেসিং রুমে বসে আছেন। কেলি ঢুকলেন।

–আমি আজ একটা ঘোষণা করব, আমি আগামী রোববার বিয়ে করতে চলেছি। তোমাদের সকলকে নিমন্ত্রণ জানানো হল।

হাততালির ঝড় বুঝি থামতে চাইছে না।

তোর বর কে? তার সঙ্গে আলাপ করাবি না? খিলখিলে হাসি এবং কলকলে কণ্ঠ।

–আমরা কি তাকে চিনি? তাকে দেখতে কেমন? রাজপুত্তুর।

 কেলি গর্বিত কণ্ঠস্বরে বললেন- কমবয়সের গ্যারি এ্যান্টের মতো।

–আর, কখন তাকে আমরা দেখব?

–এই তো সে এখানে।

 কেলি দরজাটা খুলে দিলেন- এসো ডার্লিং।

মার্ক ভেতরে ঢুকলেন। ঘরটা শান্ত হয়ে গেল। একজন মডেল মার্কের মুখের দিকে তাকালেন, তারপর বললেন- তুই কি ঠাট্টা করছিস?

হয়তো তাই।

মার্ক হ্যারিস কেলির থেকে এক ফুট বেঁটে। সাধারণ চেহারার মানুষ। মাথার চুল ধূসর।

প্রথম বিস্ময়টা কেটে গেল। মডেলরা এবার হবু বর এবং বউকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য এগিয়ে এল।

-খুব ভালো খবর।

খবরটা শুনে আমরা সবাই খুব আনন্দ পেয়েছি।

 আশা করি তোরা ভালোভাবেই জীবন কাটাবি।

অভিনন্দনের পালা শেষ হয়ে গেল। কেলি এবং মার্ক বেরিয়ে গেলেন। যখন তারা, হল দিয়ে চলে যাচ্ছেন, মার্ক জানতে চাইলেন তোমার কি মনে হল ওঁরা আমাকে পছন্দ করেছে?

কেলির মুখে হাসি। নিশ্চয়ই করেছে। তোমাকে কেউ কী অপছন্দ করতে পারে?

–কিছু একটা হয়েছে।

কেলি বললেন– আঃ, কী হয়েছে? –এই মাত্র যে ফ্যাশান ম্যাগাজিনটা এসেছে, আমার ছবিটা প্রচ্ছদে ছাপা হয়েছে। মার্ক তুমি কি দেখবে? আমি এক্ষুনি আসছি।

কেলি মডেলদের ড্রেসিং রুমের দিকে ছুটে গেলেন। দরজায় পৌঁছে গেলেন। ভেতর থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এল কেলি কি সত্যি সত্যি ওই লোকটাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে নাকি?

কেলি থমকে থেমে শোনবার চেষ্টা করলেন।

–কেলির বোধহয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

–আমি ওকে পৃথিবীর সবথেকে বড়োলোকদের সাথে ঘুরতে দেখেছি। সুন্দর সব যুবা পুরুষদের দল। এই বেঁটে লোকটার মধ্যে কেলি কী দেখতে পেল, কে জানে?

এতক্ষণ পর্যন্ত একটি মেয়ে চুপ করে বসেছিল। সে বলল ব্যাপারটা খুবই সহজ।

–কী?

–তোরা শুনলে হাসবি।

বলে যা।

–তোরা কী সেই শব্দগুচ্ছের কথা জানিস। প্রেমের চোখে সব কিছুই ভালো হয়ে ওঠে।

এই কথা শুনে কেউ কিন্তু হাসল না।

.

বিয়ের আসরটা বসেছিল প্যারিসের মিনিস্ট্রিয়াল জাস্টিসে। সব মডেলরা সেখানে গিয়েছিল। তারা নিত বোনের আসরে অবতীর্ণ হয়েছিল। অনেক মানুষ মডেল কেলির বিয়ে দেখার জন্য উপস্থিত হয়েছিল। হলুদ সাংবাদিকদের দলও সেখানে হাজির ছিল।

স্যাম মিরোজ মার্কের সব থেকে কাজের মানুষ। স্যাম মিরোজ বললেন- তোমরা হনিমুনে কোথায় যাবে?

মার্ক এবং কেলি পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনো চিন্তা-ভাবনা করা হয়নি।

মার্ক বললেন- ঠিক আছে, আমি এই কাগজগুলোর ওপর হাত দিচ্ছি, যেখানে আমার আঙুল ঠেকবে, আমাদের কিন্তু সেখানে যেতে হবে।

বাঃ, ভারী মজার খেলা তো! কেলি ভাবলেন।

সেন্ট মরটিজ।

কেলি চিৎকার করলেন- হ্যাঁ, সেন্ট মরটিজ।

এর আগে তাদের কেউ কখনও সেন্ট মরটিজে আসেননি। অসাধারণ দৃশ্যপট, রাজকীয় পর্বত এবং সবুজ-উপত্যকা, প্যালেস হোটেলটার অবস্থিতি ভারী সুন্দর জায়গায়। অনুচ্চ একটা টিলার ওপর। মার্ক এগিয়ে গেলেন। এবার বোধহয় মধুচন্দ্রিমা যাপনের সময় হয়েছে।

 ম্যানেজারের মুখে হাসি শুভ সন্ধ্যা, মিস্টার এবং মিসেস হ্যারিস। হনিমুন স্যুট কিন্তু তৈরি আছে।

মার্ক হাসলেন আমরা কি পাশাপাশি দুটো শয্যা পেতে পারি?

ম্যানেজার অবাক হয়ে গেছেন। পাশাপাশি শয্যা? কেন?

–এটা আমার একান্ত অনুরোধ।

 নিশ্চয়ই দেব।

ধন্যবাদ। মার্ক কেলির দিকে তাকালেন। এখানে অনেক কিছু দেখার আছে। তিনি পকেট থেকে একটা লিস্ট বের করলেন। আমরা মিউজিয়ামে যাব, পাথরের মূর্তি দেখব। আমরা ঝর্নার কাছে যাব। আরও কত কী!

.

মার্ক এবং কেলি তাদের স্যুটে এখন একা।

মার্ক বললেন– ডার্লিং, আমি এমন কোনো আচরণ করব না, যাতে তুমি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারো। আমরা সব গুজবকে বন্ধ করে দেব। আমরা জীবনের বাকি দিনগুলো এক সঙ্গে কাটাতে চলেছি। শারীরিক সম্পর্কের থেকে মানসিক বন্ধনকে আমি বেশি সম্মান দিয়ে থাকি। আশা করি, তুমি আমার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পেরেছ।

কেলি এগিয়ে এসে মার্ককে আদর করে বলেছিলেন- আমি জানি না, তুমি কী বলছ?

 মার্কের মুখে হাসি তোমার কিছু বলার আছে?

.

নীচ থেকে তারা ডিনার খেয়ে এলেন। স্যুটে ফিরে এসেছেন। পাশাপাশি দুটো খাট পাতা হয়েছে।

–আমরা কিটস করব?

কেলির মুখে হাসি না, যেটা তোমার ভালো লাগবে, তুমি সেই খাটে শুতে পারো।

কেলি বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন। পনেরো মিনিট কেটে গেছে। মার্ক বিছানাতে বসে আছেন।

কেলি আস্তে আস্তে মার্কের দিকে এগিয়ে গেলেন। মার্কের বিছানার এক কোণে বসে বললেন- মার্ক, ব্যাপারটা কি শেষ পর্যন্ত কার্যকরী হবে।

-হ্যাঁ, এই ব্যাপারে আমি আর কোনো ভুল করব না। শুভ রাত্রি, আমার রূপসী তন্বীনববধূটি।

শুভরাত্রি।

কেলি তার বিছানাতে গেলেন। অনেকক্ষণ চুপচাপ শুয়ে রইলেন। অনেক কথাই তার মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই ভয়ঙ্কর রাত্রিটা, যে রাত তার জীবনের গতি-প্রকৃতিকে একেবারে পাল্টে দিয়েছে। কে যেন বলেছিল, চুপ, চুপ, এই ব্যাপারটা মাকে জানালে আমি তোমার জীবন দুর্বিসহ করে দেব। আমি ফিরে এসে তাকে মেরে ফেলব।

ওই দস্যটা কী করেছে? আমার সমস্ত জীবনে একটা কলঙ্ক। সে আমাকে মেরে ফেলেছে। আমি অন্ধকারকে ভয় পাই। পুরুষ দেখলে আমার হৃদয় কেঁপে ওঠে। ভালোবাসাকে আমি ঘৃণা করি। সে আমাকে এভাবে নষ্ট করল কেন?

এখন সমস্ত আবেগ আর অভিমান কেলির মনে এসে জমা হয়েছে। অনেক বছর ধরে তিনি একভাবে নিঃসঙ্গ যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। মনে হল, এখনই বোধহয় কোথাও বিস্ফোরণ ঘটে যাবে। কেলি ঘুমন্ত মার্কের মুখের দিকে তাকালেন। হঠাৎ মনে একটা তীব্র আকাঙ্খা। ভালোবাসার আকুল অভিব্যক্তি। মার্ককে কাছে পেতে চাইলেন তিনি। তিনি এগিয়ে গেলেন, মার্ককে বললেন আমার কাছে এসো।

মার্ক উঠে বসেছেন, অবাক একী কেলি? এমন কেন করছ? তুমিই তো বলেছিলে তুমি তোমার শয্যায় কোনো পুরুষকে অনুমতি দেবে না। আমি তোমার ব্যবহারটা বুঝতে পারছি না।

কেলি শান্তভাবে বললেন কিন্তু আমি এমন কথা তো বলিনি যে, আমি তোমার পাশে শোবো না।

মার্কের মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে যাচ্ছে। কেলি তার নাইট গাউনটা ছেড়ে ফেললেন। সেটা বিছানার তলায় পড়ে গেল।

কেলি চোখ বন্ধ করে বললেন– মার্ক, তুমি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসো।

–ওঃ কেলি, আমি তো সেজন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।

মার্কের কণ্ঠস্বর শান্ত এবং ঠাণ্ডা ভীষণ শান্ত এবং ভীষণ ঠাণ্ডা। কেলির মনে হল, ফ্লাডগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। অশান্ত উন্মত্ত জলরাশি এখন ছুটে আসবে। কেলি পাগলের মতো ভালোবাসতে শুরু করলেন। এমন শুভ মুহূর্ত তার জীবনে এর আগে কখনও আসেনি।

একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন।

কেলি বললেন- তুমি আমাকে কী কী দেখাবে?

–আমি জানি।

 কেলির মুখে হাসি কাগজটা ছিঁড়ে দাও।

 মার্ক অবাক।

–আমি কী বোকা।

কেলি আবার বললেন–ভালোবাসার কত জিনিস দেখব আমরা। দেখতে দেখতে হনিমুন ফুরিয়ে যাবে। পাহাড় কিংবা ঝর্নার সাথে মিতালী পাতাবার সময় আর পাওয়া যাবে না।

শেষ পর্যন্ত তারা দুজনে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন।

মার্ক বললেন আমি কী আলো নিভিয়ে দেব?

কেলি চোখ খোলা রাখতে পারছেন না। মনে হচ্ছে, এই প্রহর যেন অনন্তকাল বজায় থাকে।

কেলি কোনো কথা বললেন না। মার্ক আলো নিভিয়ে দিলেন। কেলি চোখ খুললেন, হায় ঈশ্বর, কী আশ্চর্য, কেলি কিন্তু এখন আর অন্ধকারকে ভয় পাচ্ছেন না!

.

-কেলি? কেলি?

হ্যাঁ, স্মৃতির সমুদ্রে আলোড়ন। কেলি তাকালেন। তিনি ফিথ এভিনিউর একটা জুয়েলারি দোকানে দাঁড়িয়ে আছেন। নিউইয়র্ক। জোসেফ বেরি একটা খাম তার হাতে তুলে দিয়েছেন।

কুড়ি হাজার ডলার, যেমন আপনি বলেছিলেন।

 কেলি ভাবলেন। মুখে বললেন- ধন্যবাদ।

কেলি খামটা খুললেন, ঠিক মতো দেওয়া হয়েছে। তার থেকে দশ হাজার ডলার বের করে ডায়ানার হাতে তুলে দিলেন।

ডায়ানা তাকালেন, অবাক হয়ে গেছেন।

–এটা কী?

–এটা আপনার প্রাপ্য।

–কেন?

–আপনি আমাকে পরে ফেরত দেবেন। কেলি কঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন- আমরা এখন কী করব? আমরা এখান থেকে বেরোবার একটা পথ খুঁজব, তাই তো!

.

৩৪.

লেক্সিংটন এভিনিউ, ডায়ানা একটা ট্যাক্সি ডাকলেন।

–এখন আমরা কোথায় চলেছি?

লা গারডিয়া এয়ারপোর্টে।

 কেলি অবাক হয়ে ডায়ানার দিকে তাকালেন- তুমি জানো না ওরা সব কটা এয়ারপোর্টের দিকে কড়া নজর রেখেছে?

–আমি জানি।

—তাহলে? এটা কি সঠিক পরিকল্পনা?

 ডায়ানা কেলির হাতে হাত রেখে বললেন- দেখো না, আমি কী করি?

.

লা গারডিয়া– কেলি ডায়ানাকে অনুসরণ করছেন। তারা টারমিনালে ঢুকে পড়েছেন। ইউ এস এয়ারওয়েজের টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

এজেন্ট কাউন্টারের ওদিকে বসেছিলেন। তিনি বললেন- বলুন, কী করতে পারি?

 ডায়ানা হেসে বললেন- আমরা লস এঞ্জেলসের টিকিট চাইছি।

কখন উড়তে চাইছেন?

 পরবর্তী উড়ানে। আমাদের নাম ডায়ানা স্টিভেন্স এবং কেলি হ্যারিস।

কেলি অবাক হয়ে গেছেন।

টিকিট এজেন্ট বললেন- দুটো বেজে পনেরো মিনিটে ফ্লাইটটা উড়বে।

-ঠিক আছে। ডায়ানা ঘড়ির দিকে তাকালেন।

 কেলি কোনো রকমে একটা দুর্বল হাসি হেসে বললেন- ঠিক আছে।

–আপনারা কি ক্যাশে দেবেন, নাকি ক্রেডিট কার্ডে?

ক্যাশ। ডায়ানা টাকাটা তুলে দিলেন।

 তারা বেরিয়ে আসছেন। কেলি বললেন- তুমি তো কিংসলের হাতে সব খবর পৌঁছে দিলে। নিয়ন আলো জ্বেলে তাকে অভ্যর্থনা জানালে।

ডায়ানা বললেন- তুমি কেন অত চিন্তা করছ?

তাঁরা আমেরিকান এয়ারলাইন্স বুথের কাছে এগিয়ে এসেছেন, ডায়ানা আবার টিকিট এজেন্টের কাছে গিয়ে বললেন- আমরা মিয়ামি যাব, পরবর্তী ফ্লাইটে।

-ঠিক আছে, এজেন্ট সব কিছু দেখে বললেন, এই ফ্লাইটটা তিন ঘণ্টা পরে ছাড়বে।

–আমাদের নাম কেলি হ্যারিস এবং ডায়ানা স্টিভেন্স।

কেলি চোখ বন্ধ করলেন।

–ক্রেডিট কার্ড অথবা ক্যাশ?

ক্যাশ।

 ডায়ানা টাকাটা তুলে দিলেন। টিকিটটা পেয়ে গেলেন।

কেলি বললেন- এইভাবে তুমি ওদের বোকা বানাতে পারবে? তুমি কী ওদের দশ বছরের বাচ্চা ছেলে ভেবেছ নাকি?

ডায়ানা এয়ারপোর্টের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। কেলি তাকে অনুসরণ করতে করতে বললেন– আমরা কোথায় যাব?

আমরা কোথাও যাব না।

না, তোমার এই ব্যাপারটা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

.

ট্যাক্সিগুলো এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুজন ভদ্রমহিলা টারমিনাল থেকে বেরিয়ে এলেন। একটা ট্যাক্সি লাইন থেকে বেরিয়ে এল। সেটা প্রবেশ পথের সামনে এসে দাঁড়াল। কেলি এবং ডায়ানা ট্যাক্সিতে গিয়ে বসলেন।

-কোথায় যাব, প্লিজ?

–কেনেডি এয়ারপোর্ট।

 কেলি বললেন আমি জানি না, এভাবে ওদের বোকা বানানো যাবে কিনা? কিন্তু মনে হচ্ছে, অন্য কোনো অস্ত্র থাকলে ভালো হত।

আমি জানি না, কোথায় ওই ধরনের বন্দুক কিনতে পাওয়া যায়।

টাক্সিটা প্রবল বেগে ছুটে চলেছে। ডায়ানা ঝুঁকে পড়ে ড্রাইভারের ফটো কার্ডটা দেখলেন। নাম লেখা আছে মারিও সিলভা।

–মিঃ সিলভা, আপনি কি মনে করেন কেনেডি এয়রেপোর্টে আমরা নিরাপদে পৌঁছোতে পারব?

আয়না দিয়ে ড্রাইভারের মুখ দেখা গেল। আপনারা ঠিক পথেই এগোচ্ছেন।

হঠাৎ তিনি অ্যাক্সিলেটরে চাপ দিলেন। ইউটার্ন নিলেন। অনেকটা ছুটে এসে একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়লেন।

দুই ভদ্রমহিলা পেছনের আয়না দিয়ে তাকালেন-না, কোনো গাড়ি অনুসরণ করছে না।

মারিও সিলভার মুখ আনন্দে প্রসারিত- ঠিক আছে?

কেলি বললেন- হ্যাঁ, ঠিক আছে।

 তিরিশ মিনিট ধরে মারিও সিলভা আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি চালাতে থাকলেন। না, কেউ অনুসরণ করছে না। শেষ পর্যন্ত ট্যাক্সিটা কেনেডি এয়ারপোর্টের মূল প্রবেশ পথে ঢুকে পড়ল।

–এখানে আমরা পৌঁছে গেছি, মারিও সিলভা যুদ্ধ জয়ের ভঙ্গিতে বললেন।

ডায়ানা পার্স থেকে টাকা বের করে ড্রাইভারের হাতে দিয়ে বললেন- আপনার প্রাপ্যটাও এখানে আছে।

ড্রাইভার টাকাটা নিয়ে মুখে হাসি এনে বললেন- ঠিক আছে। উনি গাড়িতে বসে থাকলেন।

দুজন যাত্রী কেনেডি টারমিনালের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। যখন তারা চোখের বাইরে বেরিয়ে গেলেন, উনি সেলফোন বের করে বললেন- ট্যানার কিংসলে…।

.

ডেলটা এয়ার লাইন্সের কাউন্টার। টিকিট এজেন্ট বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বললেন হ্যাঁ, দুটো টিকিট আছে। বিকেল ৫-৫৫ মি. ফ্লাইটটা ছাড়বে। আপনারা মাদ্রিদ যাবেন তো? নাকি বার্সিলোনা? মাদ্রিদে প্লেনটা এক ঘণ্টা থাকবে। বার্সিলোনাতে পৌঁছোবে ৯-২০ মিনিটে।

ডায়ানা বললেন ঠিক আছে। আপনারা কি নগদ দেবেন, নাকি ক্রেডিট কার্ড?

নগদ? ডায়ানা টাকাটা দিয়ে টিকিট নিলেন। তারপর কেলির দিকে তাকিয়ে বললেন এসো, আমরা লাউঞ্জে অপেক্ষা করি।

.

তিরিশ মিনিট কেটে গেছে, হ্যারি ফ্লিন্ট সেলফোনে ট্যানারের সঙ্গে কথা বলছেন।

একটা খবর পেলাম, তারা ডেলটা এয়ারলাইন্সে বার্সিলোনা যাচ্ছে। কেনেডি এয়ারপোর্ট থেকে ৫-৫৫ মিনিটে ছাড়বে। মাদ্রিদে প্লেনটা এক ঘণ্টা থাকবে। তারা ৯-২০ মিনিটে বার্সিলোনাতে পৌঁছে যাবে, সকালবেলা।

-ঠিক আছে, তুমি একটা কোম্পানির জেট নিয়ে বার্সিলোনাতে চলে যাও। সেখানে গিয়ে ওদের সঙ্গে দেখা করো। আমি আশা করি, ওরা তোমার কাছ থেকে উষ্ণ স্বাগত সম্ভাষণ পাবে।

ট্যানার ফোনটা রেখে দিলেন। অ্যানড্রু ঘরে এসে ঢুকেছেন।

 তিনি বললেন- এইতো সব কিছু লেখা আছে।

কী নিয়ে এসেছ?

অ্যানড্রু অবাক তুমি যে আমাকে এটা আনতে বললে?

–আমি এগুলো আনতে বলেছি? আমি তো তোমার ওই ফুলগুলোর কথা বলেছি।

অ্যানড্রুর মুখে হাসি– এটা আমি তোমার বিয়ের দিনে পরেছিলাম। আমি তোমার সবথেকে কাছের মানুষ হয়েছিলাম মনে আছে? বলতে পারো নিতবর।

ট্যানার রেগে গেছেন– আঃ, তোমার মাথায় কিছু ঢুকবে না কি? ঘটনাটা সাত বছর আগে ঘটেছিল। এখনও তুমি সেটা মনে রেখেছ? আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যাও। বোকা গাধা কোথাকার।

 অ্যানড্রু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। কথা বলতে পারছেন না। কী ঘটেছে বোঝার চেষ্টা করলেন।

বেরিয়ে যাও।

অ্যানড্রু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। না, ট্যানার ভাবছেন, পাগলটাকে অন্য কোথাও রেখে আসতে হবে।

.

বার্সিলোনার উড়ান খুব সুন্দর, মনে রাখার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

কেলি জানলা দিয়ে তাকিয়ে থাকলেন। নিউইয়র্ক শহরটা দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস। শেষ পর্যন্ত আমরা ভয়ঙ্কর জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পারলাম।

ডায়ানা মাথা নাড়লেন না, তারা নিশ্চয়ই আমাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করবে। বলতে পারো, আপাতত সমস্যার সমাধান হয়েছে।

পার্স থেকে ডায়ানা একটা কম্পিউটার প্রিন্ট আউট বের করে পড়তে থাকলেন। সোনঝা ভারব্রুগ, বার্লিন। তার মৃত্যু হয়েছে। তার স্বামীকে পাওয়া যায়নি। গ্যারি রেনল্ডস, ডেনভার, মার্ক এবং রিচার্ড।

কেলি প্রিন্ট আউটের দিকে তাকালেন তার মানে? আমরা প্যারিস, বার্লিন, ডেনভার সব জায়গায় যাব, শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কে ফিরে আসব।

–হ্যাঁ, আমরা সান সেবাসটিয়ানা দিয়ে ফরাসি সীমান্তে প্রবেশ করব।

.

কেলি প্যারিসে যাবার জন্য উদগ্রীব। স্যাম মিরোজের সঙ্গে কথা বলতে হবে। না, অ্যাঞ্জেল নিশ্চয়ই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

-তুমি আগে কখনও স্পেনে গেছে?

–মার্ক আমকে সেখানে একবার নিয়ে গিয়েছিল। অসাধারণ একটা জায়গা। কেলি এক মুহূর্তের জন্য নীরব হয়ে গেলেন।

তুমি কি আমার সমস্যাটা বুঝতে পারছ? কীভাবে আমি চলব কিছুই বুঝতে পারছি না। মার্ককে ছাড়া বাঁচব কী করে? যখন আমরা ছোটো থাকি, তখন বুঝতে পারি, প্রহরটা কত সুন্দর, হঠাৎ সেই জগতটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। মার্ক এবং আমার মধ্যে যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল, সেটা স্বর্গীয় মোড়কে ঢাকা।

তিনি ডায়ানার দিকে তাকিয়ে বললেন- রিচার্ডের কথা নিশ্চয়ই মনে পড়ে।

 ডায়ানা শান্তভাবে বললেন- হ্যাঁ। তারপর জানতে চাইলেন, মার্ক কেমন ছিলেন?

কেলির মুখে হাসি মার্কের মধ্যে একটা শিশুমন লুকিয়ে ছিল। আমার কেবলই মনে হত, ও বোধহয় বালকের মন আর প্রতিভাশালী মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মেছে।

তার মানে?

–ও যেভাবে পোশাক পরত, শুনলে তুমি হেসে উঠবে। যেদিন প্রথম আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, সেদিন একটা ঢলঢেলে ধূসর স্যুট পরেছিল। পায়ে ছিল বাদামী জুতো। সবুজ শার্ট আর টকটকে লাল টাই। বিয়ের পর আমি তাকে ঠিক মতো সাজতে শিখিয়েছিলাম।

কিছুক্ষণের জন্য কেলি নিশ্চুপ, তারপর আবার ভাঙা গলায় বলতে শুরু করলেন মার্ককে ফিরে পাবার জন্য আমি জীবনের সবকিছু দিতে রাজী আছি। আমি চাই, আবার মার্ক যেন সেই ঢলঢলে সুট, বাদামী জুতো, সবুজ শার্ট আর টকটকে লাল টাই পরে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।

কেলির চোখ দুটো জলে পরিপূর্ণ।

…মার্ক যখন তখন আমার জন্য উপহার নিয়ে আসত। কিন্তু সে আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছিল, কীভাবে ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসা শব্দটার মধ্যে যে একটা আলাদা মানে আছে, মার্কের সঙ্গে দেখা না হলে আমি সেই মানেটা জানতে পারতাম না।

রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছে কেলি প্রশ্ন করলেন এবার রিচার্ড সম্বন্ধে কিছু বলবে কি?

ডায়ানার মুখে হাসি রিচার্ড ছিল এক রোমান্টিক পুরুষ। যখন আমরা রাতে শুতে যেতাম, রিচার্ড বলত, আমার গোপন বোতামটা টিপে দাও। আমি হাসতাম। এই হাসির একটা আলাদা অর্থ ছিল।

কেলির দিকে তাকিয়ে ডায়ানা বললেন– রিচার্ডের গোপন বোম ছিল টেলিফোনের ওপর বিরক্ত করো না– এই চাবিটা টিপে দেওয়া।

…রিচার্ড বলেছিল, আমরা একদিন একটা দুর্গের ভেতর সারাদিন একা থাকব। ফোনটাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে।

পুরোনো দিনের কোনো কথা ডায়ানার মনে পড়ে গেছে। তিনি হঠাৎ বালিকার মতো হেসে উঠলেন। তারপর বললেন– রিচার্ড, এক নামকরা বিজ্ঞানী ছিল, সে বাড়ির জিনিসপত্র নিজেই সারাতে পারত। ইলেকট্রিকের কাজে ছিল খুবই দক্ষ। রিচার্ড যেসব জিনিস সারাত, সেগুলো ঠিক করার জন্য আবার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ডাকতে হত। এই ব্যাপারটা আমি কিন্তু কখনও তাকে বলিনি।

মধ্যরাত পর্যন্ত তারা এভাবেই কথা বলেছিলেন।

ডায়ানার প্রথম মনে হল, স্বামীর সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়ে গেছে। তাদের দুজনের মধ্যে একটা অদৃশ্য পাঁচিল ছিল, কে যেন সেই পাঁচিলটা ভেঙে দিয়েছে।

কেলি বললেন- এবার একটু ঘুমোতে হবে। কাল সারা দিনটা উত্তেজনার মধ্যে কাটবে।

বেচারী কেলি জানেন না, তার এই উত্তেজনার আসল অর্থ কী?

হ্যারি ক্লিন্ট বার্সিলোনা এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছে। সে গ্লাস উইন্ডোর দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মধ্যে রানওয়ের দিকে তাকাচ্ছে। একটা মস্ত বড়ো তালিকাতে আগমন এবং নির্গমন সংকেত ফুটে উঠছে। নিউইয়র্ক থেকে যে প্লেনটা আসছে, সেটা নির্দিষ্ট সময়ে এসে পৌঁছোবে। তিরিশ মিনিট সময় আছে। সব কিছুই, পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে চলেছে। ফ্লিন বসল এবং অপেক্ষা করতে থাকল।

আধঘণ্টা বাদে নিউইয়র্কের প্লেনটার আগমন বার্তা ধ্বনিত হল। হ্যাঁ, ধীরে ধীরে যাত্রীরা নেমে আসছে। হৈ হুল্লোড়বাজ পর্যটকদের দল। ট্রাভেলিং সেলসম্যান। শিশুদের মুখে আনন্দ। নব বিবাহিত দম্পতি এসেছে মধুচন্দ্রিমা যাপনে। ফ্লিন্ট সবার দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ, সে ভাবল, আমি নির্গমন পথের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। এখানে শুধু পর্যাটকদের ভিড়। হু-হু করে তারা আসছে। কেউ কেউ কিছুক্ষণ দাঁড়াচ্ছে। ডায়ানা আর কেলি কোথায়? ফ্লিন্ট আরও পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করল। তারপর বোর্ডিং গেটের দিকে এগিয়ে গেল।

-স্যার, আপনি এখান দিয়ে বেরোতে পারবেন না।

 ফ্লিন্ট অবাক হল– আমি ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইনফরমেশনের কাছে একটা খবর দেব। এই প্লেনের ল্যাবোরেটরিতে একটা প্যাকেট পাওয়া গেছে। সেটাকে পরীক্ষা করতে হবে এখনই।

ফ্লিন্ট টারম্যাকের দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছিল। যখন সে প্লেনের কাছে পৌঁছে গেল, ক্রু তখন প্লেনটা ছাড়বার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট জিজ্ঞাসা করল– কী হয়েছে?

–পরীক্ষা করতে হবে। ফ্লিন্ট জবাব দিল।

ফ্লিন্ট প্লেনের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করল। ঢুকেও পড়ল। না, কোনো প্যাসেঞ্জারকে দেখা যাচ্ছে না।

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট জানতে চাইলেন- কোনো সমস্যা?

একটা উড়ো ফোন এসেছে, এই প্লেনে নাকি বোমা আছে।

 ভদ্রমহিলা ফ্রিন্টের দিকে তাকালেন। ফ্লিন্ট কেবিনের দিকে চলে গেল। রেস্টরুমের দরজাগুলো খুলে দিল- না, সবকিছু একে বারে ফাঁকা।

এই ভদ্রমহিলাকে আর কোথাও দেখা গেল না।

.

–মিঃ কিংসলে, ওরা কিন্তু এই প্লেনে আসেনি।

ট্যানারের কণ্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত নিরাপত্তাহীনতা– ফ্লিন্ট, তুমি প্লেনের সবকিছু দেখেছ?

-ইয়েস, স্যার।

তার মানে, কী আশ্চর্য? যখন প্লেনটা ছাড়ল, তখন ওরা ওখানেই ছিল, তাই তো?

–হ্যাঁ, স্যার।

–তাহলে? ওরা কি আটলান্টিক সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ল? প্যারাশুট নিয়ে? নাকি মাদ্রিদে নেমে গেছে? তোমার কী মনে হয়?

–আমি কিন্তুই বলতে পারছি না, মিঃ কিংসলে। আমার মাথাটা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।

–তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তার মানে ওরা মাদ্রিদে নেমে গেছে। সান সেবাসটিয়ানা দিয়ে ফ্রান্সে ঢোকার চেষ্টা করবে।

এক মুহূর্তের নীরবতা– তোমাকে আমি চারটে বিকল্প পথের সন্ধান দিচ্ছি। ওরা বিভিন্ন ফ্লাইট ধরে বার্সিলোনাতে আসতে পারে। ট্রেনে আসতে পারে, বাস কিংবা গাড়িতে। ট্যানার কী যেন চিন্তা করে আবার বললেন- না, ওরা বাসেই যাবার চেষ্টা করবে। প্লেন কিংবা ট্রেনে হয়তো যাবে না। বুদ্ধি আমাকে বলছে, ওরা সান সেবাসটিয়ানা সীমান্তে যাবে। সেখান থেকে ফরাসি দেশে প্রবেশ করবে।

যদি…

–না, আমাকে বাধা দিও না মিঃ ফ্লিন্ট, মাদ্রিদ থেকে সান সেবাসটিয়ানাতে যেতে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগবে। তুমি এখনই মাদ্রিদে উড়ে যাও। সব কটা রেন্টাল কারের অফিসে যাও। দেখো, কী ধরনের গাড়ি ওরা ভাড়া করেছে। গাড়ির রং কী? কোন সালে তৈরি? সবকিছু।

-ইয়েস, স্যার।

-বার্সিলোনাতে ফিরে এসো। একটা গাড়ি ভাড়া করো। বড়ো একটা গাড়ি। সান সেবাসটিয়ানার হাইওয়েতে অপেক্ষা করো। ওদের কিছুতেই সীমান্ত পার হতে দিও না। ঠিক আছে?

–হ্যাঁ, স্যার।

-মনে রেখো, ব্যাপারটা এমনভাবে ঘটাতে হবে, মনে হবে এটা বুঝি নেহাতই একটা দুর্ঘটনা।

.

৩৫.

ডায়ানা এবং কেলি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন। মাদ্রিদ এয়ারপোর্ট। তাঁরা হারটজ থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করলেন। এ্যভিস। এবার তারা অ্যালেসাকে নিলেন। অন্য একটা রেন্টাল এজেন্সি থেকে।

কীভাবে সান সেবাসটিয়ানাতে যাওয়া যেতে পারে? ডায়ানা প্রশ্ন করেছিলেন।

-এটা খুবই সহজ সিনোরা, এক নম্বর ন্যাশনাল হাইওয়ে দিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। সাড়ে চার ঘণ্টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগবে।

কেলি এবং ডায়ানা তখন গাড়িতে চড়ে বসেছেন।

.

কে আই জি-র প্রাইভেট জেট মাদ্রিদে এসে পৌঁছে গেছে। এক ঘণ্টা পরে দেখা গেল হ্যারি ফ্লিন্ট একটা রেন্টাল কারবুথ থেকে আর একটার দিকে ছুটোছুটি করছে।

–আমাকে আমার বোন এবং তার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে হবে। তার গার্লফ্রেন্ড অসাধারণ রূপবতী। আফ্রিকান আমেরিকান। আমি তাদের সঙ্গে দেখা করবই। তারা ডেলটা এয়ার লাইন্সে নিউইয়র্ক থেকে এসেছে। তারা কি এখানে কোনো গাড়ি ভাড়া করেছে?

না, সিনর।

না, সিনর।

শেষ পর্যন্ত অ্যালেসা বুথে ফ্লিন্ট তার হারানো ভাগ্য খুঁজে পেল।

-হা, সিনর। আমি স্পষ্ট মনে করছি, তারা…

–তারা কী গাড়ি ভাড়া করেছিল?

–এটা হল একটা ফেবর।

রংটা কী?

 লাল, আমাদের এখানে একটাই লাল গাড়ি আছে।

 নাম্বার দিতে পারবেন? লাইসেন্স প্লেট নাম্বার?

 –অবশ্যই, এখনই দিচ্ছি।

 ফ্লিন্ট দেখল, ক্লার্ক একটা বই বের করে কী যেন দেখল। সে ফ্লিন্টের হাতে নাম্বারটা তুলে দিল।

–আশা করি এতেই হবে।

-হ্যাঁ।

দশ মিনিট কেটে গেছে। ফ্লিন্ট বার্সিলোনাতে উড়ে গেল। তাকে এখন একটা গাড়ি ভাড়া করতে হবে। ওই লাল ফেবরটার দিকে নজর রাখতে হবে। রাস্তার এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যেখানে ট্রাফিকের ভিড় নেই। তারপর? তারপর আর কী? ছোট্ট একটা অ্যাকসিডেন্ট। এতে তার বাঁ হাতের খেলা।

.

ডায়ানা এবং কেলি এখন সান সেবাসটিয়ান সীমান্ত থেকে তিরিশ মিনিট দূরত্বে অবস্থান করছে। ভারী সুন্দর নীরবতার মধ্যে দিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলেছে। হাইওয়েতে বিশেষ মানুষের ভিড় নেই। গাড়ির সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। সময়টা ভালোই যাচ্ছে বলতে হবে। দুপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি অসাধারণ। ফলে ফুলে ঢাকা পরিবেশ। ফসল পেকেছে, ফলের সুবাস ভেসে আসছে। আহা, কত কী। কমলালেবুর গন্ধ। কিছু দূরে পুরোনো বাড়ি চোখে পড়ছে। বাড়ির চারধারে ছোটো ছোটো বাগান। কিছুক্ষণ বাদে তারা দুর গজের মধ্যে একটা মধ্যযুগীয় শহর ছাড়িয়ে গেল। এখানকার অসাধারণ দৃশ্যবলি মনকে অধীর করে দেয়। পিরানিজ পাহাড় চূড়া দূর থেকে দেখা যাচ্ছে।

ডায়ানা বললেন আমরা প্রায় এসে গেছি।

উনি সামনের দিকে তাকালেন। দুশো ফুট দূরে একটা জ্বলন্ত গাড়ি। কিছু মানুষের ভিড়। হাইওয়েটা বন্ধ হয়ে গেছে। ইউনিফর্ম পরা পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।

কী হয়েছে? ডায়ানা অসহিষ্ণু।

আমরা বাকসের দেশে ঢুকে পড়েছি। এখানে একটা গৃহযুদ্ধ চলছে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে বাকসরা স্পেনীয় সরকারের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে।

সবুজ ইউনিফর্ম পরা একজন মানুষ সামনে এগিয়ে এল। তার পায়ে কালো জুতো, হাইওয়েতে সে দাঁড়িয়ে আছে।

কেলি নিঃশ্বাস চেপে বলল- এটা তো ই টি এ। আমরা থামব না। যদি ধরা পড়ে যাই তাহলে ভাগ্যে কী লেখা আছে কে জানে।

অফিসার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, আমি ক্যাপ্টেন ইয়াদি। আপনারা কি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসবেন?

ডায়ানা তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন– আপনাকে সাহায্য করতে পারলে ভালোই হত। কিন্তু আমরা এখন আমাদের নিজস্ব যুদ্ধের জন্য খুবই ব্যস্ত।

তিনি পা দিয়ে অ্যাকসিলেটরে চাপ দিলেন। খুব তাড়াতাড়ি জ্বলন্ত গাড়ির পাশ দিয়ে সেই গাড়িটা বেরিয়ে গেল। আরও আরও বেশি গতিসম্পন্ন হয়ে উঠল। জনগণ আর্তনাদ করে উঠেছে। ডায়ানা সেদিকে তাকাবার মতো সময় দিতে পারেননি।

কেলি চোখ বন্ধ করেছেন। কিছু কি আঘাত করেছে আমাদের?

না, আমরা এগিয়ে চলেছি।

 তিনি চোখ খুললেন। তিনি জানলা দিয়ে দেখলেন একটা কালো রঙের সিটোনে তাড়া করে আসছে।

–গরজিলা, কেলি চোখ বন্ধ করলেন, ও আমাদের অনুসরণ করছে।

কী? সে কী করে এত তাড়াতাড়ি আসবে? ডায়ানা অ্যাকসিলেটরে চাপ দিলেন।

সিটোরেনটা আরও কাছে এগিয়ে এসেছে। ডায়ানা স্পিডোমিটারের দিকে তাকালেন। ডায়াল ক্রমশ উঠে যাচ্ছে, ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার।

তার মানে? আর একটাকেও লেখা আছে ১১০ কিলোমিটার। প্রতি ঘন্টায়।

কেলি খুবই চিন্তিত। কেলি বললেন– মনে হচ্ছে, তুমি ইন্ডিয়ানা পুলিশ রেসট্রারে গাড়ি চালাচ্ছো।

এক মাইল দূরে ডায়ানা দেখতে পেলেন, কাস্টমস চেক আউট অফিসটা। স্পেন এবং ফ্রান্সের সীমান্তের মধ্যে।

ডায়ানা বললেন আমাকে আঘাত করো।

কেলি হেসে উঠেছেন– না, আমি শুধু তোমার সাথে লাগতে চেয়েছিলাম।

–আমাকে আঘাত করো। ডায়ানার কণ্ঠস্বরের ভেতর কী একটা কর্তৃত্ব।

 সিটোরেনটা আরও কাছে এগিয়ে গেছে।

কী, হচ্ছে কী? এক্ষুনি এটা করতে হবে।

কেলি ডায়ানার মুখে একটা চড় কষিয়ে দিলেন।

না, আরও বেশি আঘাত।

এখন এখানে মাত্র দুটো গাড়ি। তারপরেই সিটোরেন।

তাড়াতাড়ি, ডায়ানা চিৎকার করছেন।

 কেলি ডায়ানাকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকলেন।

–জোরে, আরও জোরে।

কেলি আরও জোরে আঘাত করতে থাকলেন তার হাতে যে হিরের আংটিটা ছিল, সেটা দিয়ে ডায়নার মুখ ক্ষত-বিক্ষত করে দিলেন, হু-হু করে রক্ত বেরিয়ে আসছে।

কেলি ডায়ানার দিকে তাকিয়ে আছেন, অবাক হয়ে গেছেন।

–ডায়ানা, আমি এভাবে মারতে চাইনি। কিন্তু এটা হয়ে গেছে।

তারা কাস্টমস চেক আউটের কাছে পৌঁছে গেছেন। ডায়ানা এক মুহূর্তের জন্য থামলেন।

বর্ডার গার্ড এগিয়ে এসে প্রশ্ন করছেন– শুভ সন্ধ্যা, ভদ্রমহিলারা, আপনারা কোথায় যাবেন?

ডায়ানা কোনোরকমে মাথা তুলে তাকালেন, যাতে ওই গার্ড রক্ত দেখতে পান।

 উনি অবাক হয়ে গেছেন সিনোরা, কী হয়েছে?

ডায়ানা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে বললেন আমার প্রাক্তন স্বামী, সে আমাকে মারতে ভালোবাসে। আমি তার বিরুদ্ধে কোর্টে কেস করেছি। কিন্তু কিছুতেই তাকে থামাতে পারছি না। সে আমাদের দিকে উন্মাদের মতো ছুটে আসছে। ওই দেখুন, সে এসে পড়ল প্রায়। আমি জানি না কীভাবে আপনার কাছে সাহায্য চাইব। কেউ কি তাকে বাধা দিতে পারবে?

প্রহরী তাকিয়ে দেখলেন- হ্যাঁ, একটির পর একটি গাড়ি আসছে। তার মুখ কেমন যেন হয়ে গেছে। তিনি বললেন কোন গাড়িতে উনি আছেন?

–ওই কালো সিটোরেন। দেখুন ওইখানে। সে হয়তো আমাকে মেরেই ফেলবে।

হা, সত্যি? প্রহরী চিৎকার করছেন। আপনারা এগিয়ে যান। আমি ওনাকে বেরোতে দেব না।

ডায়ানা তাকালেন কান্না কান্না চোখে এবং বললেন, অনেক-অনেক ধন্যবাদ।

একটু বাদে তারা শান্তভাবেই সীমান্ত পার হয়ে গেলেন। এখন ফ্রান্সে পৌঁছে গেছেন।

ডায়ানা?

বলো।

কেলি ডায়ানার হাতে হাত রেখে বললেন আমার ব্যাপারটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। তিনি ডায়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।

ডায়ানা হেসে বললেন- শেষ পর্যন্ত আমরা বোধহয় গরজিলার কাছ থেকে বেঁচে এসেছি। তিনি বললেন, কেলির দিকে তাকিয়ে তুমি কাঁদছ কেন?

কেলি বললেন- না, আমি কাঁদছি না। এটা বোধহয় ওই মাসকারা, আমার চোখ কেমন হয়ে গেছে। তুমি তো আর কখনও সুন্দর মুখ ফেরত পাবে না। কী, পাবে কি?

কেলি ডায়ানার মুখে একটা টিসুপেপার দেবার চেষ্টা করলেন।

 ডায়ানা বললেন– না, এখন নয়, পরে দেখা যাবে।

.

হ্যারি ফ্লিন্ট বর্ডার চেক পয়েন্টে পৌঁছে গেছে। পেট্রল গার্ড দাঁড়িয়ে ছিল। সে বলল, গাড়িটা ওখানে রেখে দিয়ে এগিয়ে আসুন।

–আমার এত সময় নেই, আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

–আমি বলছি, গাড়িটা রেখে এগিয়ে আসুন।

ফ্লিন্ট তাকাল- কী হয়েছে? কোনো সমস্যা?

–আমার হাতে একটা খবর এসেছে, এই গাড়ির লাইসেন্স নাম্বারটা পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এখানে চোরাই ড্রাগস আছে। আমরা গাড়িটাকে আলাদা করে রাখব।

ফ্লিন্ট তাকিয়ে আছে অসহায় হয়ে আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন? আমি বলেছি না, আমার তাড়াতাড়ি আছে। আমি চোরাই চালান সম্পর্কে কিছুই জানি না।

ফ্লিন্ট গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল এবং হাসল– এই দেখুন, সে তার পকেট থেকে একটা একশো ডলারের বিল বের করল। এই তো, আপনার হাতে তুলে দিচ্ছি, এবার ব্যাপারটা ভুলে যান।

বর্ডার গার্ড চিৎকার করে ডাকল জো?

 ইউনিফর্ম পরা ক্যাপ্টেন বেরিয়ে এসেছেন। বর্ডার গার্ড ওই একশো ডলারের টাকাটা তার হাতে দিয়ে বলল, দেখুন, আমাকে ঘুষ দেবার চেষ্টা করা হয়েছে।

ক্যাপ্টেন ফ্লিন্টকে বললেন- গাড়ি থেকে নেমে আসুন। আপনাকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হল।

-না, আপনারা আমাকে অ্যারেস্ট করতে পারেন না। আমি একটা…

ফ্লিন্ট কথা হারিয়ে ফেলেছে।

–আবার আর একটা অপরাধ আপনি করলেন। আমাদের আদেশ অমান্য করছেন।

ফ্লিন্ট হাইওয়ের দিকে তাকাল। নিঃশ্বাস নিল। না, ওই গাড়িটা চোখের বাইরে চলে গেছে।

ফ্লিন্ট বলল- আমি কী একটা ফোন করতে পারি?

.

ডায়ানা এবং কেলি ফরাসি দেশে পৌঁছে গেছেন। আহা, অসাধারণ দৃশ্যপট। যতদূর চোখে পড়ছে, সমতল ভূমি, তারপর পার্বত্য উঁচু টিলা। দূর দিগন্তে পিরানিজ পাহাড় চূড়া।

ডায়ানা বললেন তুমি বলেছ, ফরাসি দেশে তোমার এক বন্ধু আছে।

–হ্যাঁ, স্যাম মিরাজ। উনি মার্কের সঙ্গে কাজ করতেন। উনি আমাদের সাহায্য করতে পারবেন।

কেলি পার্সটা খুললেন। নতুন সেলফোনের নাম্বারটা বের করলেন। প্যারিসের একটা নাম্বারে ফোন করলেন।

একজন অপারেটর বললেন- কে আই জি।

–আমি কি স্যাম মিরোজের সঙ্গে কথা বলতে পারি?

একটু বাদে কেলি শুনতে পেলেন– হ্যালো?

স্যাম, আমি কেলি। আমি প্যারিসের দিকে আসছি।

–হায় ঈশ্বর, আমি তোমার জন্য কত ভাবছি, তুমি ভালো আছে তো?

 কেলি একটু চিন্তা করে বললেন- এখনও পর্যন্ত।

–এটা একটা দুঃস্বপ্ন, স্যাম মিরোজ বললেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।

আমিও না, কেলি ভাবলেন স্যাম, তোমাকে কিছু কথা বলব। আমার মনে হচ্ছে মার্ককে হত্যা করা হয়েছে।

স্যাম মিরোজের উত্তরটা তীক্ষ্ণ বাতাসের মতো হা, সেটা আমারও ধারণা।

কেলি কথা বলতে পারছেন না আমি জানি কী করে ঘটনাটা ঘটেছে– তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?

আমার মনে হচ্ছে, এটা ফোনে আলোচনা করা উচিত নয়।

 এবার ভদ্রলোক তার কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক করলেন।

–আমি বুঝতে পারছি।

–আজ রাতে আমরা কথা বলব। তুমি কি আমার ঘরে আসবে?

–ঠিক আছে, আমি সাতটার সময় আসছি।

–আমি থাকব।

কেলি কথা বলা শেষ করে বললেন- আজ রাতে আমি একটা উত্তর পাব।

যখন তুমি এটাতে ব্যস্ত থাকবে, আমি বার্লিনে তখন ফিরে যাব। ফ্রানজ ভারব্রুগের সাথে যারা কাজ করতেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।

কেলি কোনো কথা বলছেন না।

 ডায়ানা তার দিকে তাকিয়ে বললেন– কী হল?

-না, আমরা দুজনে এতদিন ছিলাম, আমি আলাদা হতে চাইছি না। আমি চাইছি, তুমি আমার সঙ্গে থাকো।

ডায়ানার মুখে হাসি কেলি, আমরা তো আলাদা হচ্ছি না। তুমি যখন স্যাম মিরোজের সঙ্গে কথা বলবে, তুমি আমাকে ডাকতে পারো। আমরা বার্লিনে যোগাযোগ করতে পারি। এর মধ্যে কিছু খবর সংগ্রহ করতে হবে। সময় সংক্ষিপ্ত। আমাদের দুজনের হাতে সেলফোন আছে। আমরা সবসময় কথা বলতে পারব। আজ রাতে তুমি কী খবর পেলে তা জানতে আমি উদগ্রীব চিত্তে অপেক্ষা করে থাকব।

অবশেষে তাঁরা প্যারিসে এসে পৌঁছোলেন।

গাড়ির আয়না পথে ডায়ানা তাকিয়ে থাকলেন। না, সিটোরেন গাড়িটাকে আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে আমরা শেষ পর্যন্ত লোকটাকে হারাতে পেরেছি।

এবার আমরা কোথায় যাব? কেলি জানলা দিয়ে তাকালেন। তারা কনকর্ডের কাছে পৌঁছে গেছেন।

–ডায়ানা, তুমি গাড়িটা তোমার মতো চালিয়ে নিয়ে যাও। আমি একটা ট্যাক্সি নিচ্ছি।

–ঠিক আছে, বন্ধু।

–হ্যাঁ, বন্ধু।

ভালো থাকবে।

–থাকার চেষ্টা করব।

.

দু-মিনিট কেটে গেছে। কেলি একটা ট্যাক্সিতে উঠেছেন। তিনি তার অ্যাপার্টমেন্টের দিকে চলেছেন। আবার বাড়ি, ভাবতে পারছেন না। কিছুক্ষণ বাদে তিনি স্যাম মিরোজের অ্যাপার্টমেন্টে যাবেন, ডিনারের আসরে।

ট্যাক্সিটা কেলির অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে থেমে গেল। আঃ, নিরাপত্তা। অবশেষে বাড়ি। দারোয়ান এসে দরজাটা খুলে দিল।

কেলি তাকালেন– আমি ফিরে এসেছি মারটিন…থেমে গেলেন। এই লোকটাকে তো আগে কখনও দেখা যায়নি।

–শুভ সন্ধ্যা, ম্যাডাম।

শুভ সন্ধ্যা, মারটিন কোথায়?

মারটিন অনেক দিন আগে কাজ ছেড়ে দিয়েছে।

কেলি বললেন- আমি দুঃখিত।

–আমি আমার পরিচয় দিই। আমার নাম জেরোমে মালো।

 কেলি মাথা নাড়লেন।

কেলি লবির দিকে হেঁটে গেলেন। লম্বা রোগা এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। রিসেপশন ডেস্কে নিকোলো পারাডিসের পাশে।

ওই ভদ্রলোক হেসে বললেন।

শুভ সন্ধ্যা, মাদাম হ্যারিস। আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আমি আলফানজো, আপনার সাহায্যকারী।

কেলি ঢোক গিলে জানতে চাইলেন- ফিলিপ্পে সেনড্রে কোথায়?

–ফিলিপ্পে তার পরিবার নিয়ে স্পেনের কোথাও চলে গেছেন। কোনো ব্যবসায়িক কাজে আমার মনে হচ্ছে।

কেলির মনে হল, সব ব্যাপারটাই কেমন যেন গোলমেলে।

 মরিয়া হয়ে কেলি জানতে চাইলেন– ওর মেয়ে?

-সেও ওদের সঙ্গে গেছে।

তা কখনও তো হতে পারে না, কেলি ভাবলেন, কথায় কথায় একবার ফিলিপ্পে বলেছিলেন, আমি কি বলেছি আমার মেয়ে সরবোনে যাবে? শেষ পর্যন্ত স্বপ্নটা সফল হয়েছে।

কেলি তার কণ্ঠস্বর শান্ত এবং স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললেন– ওঁরা কখন চলে গেছেন?

কদিন আগে, চিন্তা করবেন না ম্যাডাম, আমরা আপনাকে সব রকম সাহায্য করব। আপনি অ্যাপার্টমেন্টে যেতে পারেন।

নিকোলো পারাডিস ডেস্কে বসে আছেন, তাকালেন, বাড়িতে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু চোখের ভাষা অন্য কিছু বলছে।

অ্যাঞ্জেল কোথায়?

–আপনার সেই ছোট্ট কুকুরছানা? ফিলিপ্পে তাকে সঙ্গে নিয়ে গেছে।

 এই কথা শুনে কেলি আর থাকতে পারলেন না। মনের ভেতর আতঙ্কের পরিবেশ। হ্যাঁ, বিভীষিকার গন্ধ বাতাসে ভাসছে।

–আমরা কি এখন যাব ম্যাডাম? অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে যান, সেখানে আপনার জন্য দারুণ কিছু অপেক্ষা করছে।

কেলির মন এবার ছুটে চলেছে- হ্যাঁ, আমি আসছি, একটা জিনিস আনতে ভুলে গেছি।

 আলফানজো কিছু বলার আগেই কেলি এক দৌড়ে রাস্তায় পৌঁছে গেছেন।

জেরোমে মালো এবং আলফানজো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। না, কেলিকে বোধহয় থামাল গেল না। কেলি একটা ট্যাক্সির মধ্যে উঠে পড়লেন।

হায় ঈশ্বর, ফিলিপ্পে এবং তার পরিবারের কী হল? অ্যাঞ্জেল কোথায় গেল? কেলি ভাবতে থাকলেন।

-কোথায় যাব মাদমোজায়েল?

–শুধু গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে যান।

এইসব রহস্যের আড়ালে কী আছে, সেটা আমাকে বার করতেই হবে। কেলি মনে মনে ভাবলেন।

.

স্যাম মিরোজ তার অ্যাপার্টমেন্টে বসে আছেন। এইমাত্র একটা টেলিফোনে তিনি কথা বলা শেষ করলেন।

–হ্যাঁ, আমি জানি ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে এখানে ডিনার খেতে আসবে।…হ্যাঁ, আমি ব্যবস্থা করে রেখেছি। মৃতদেহটা সাবধানে সরিয়ে দেব, আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। …মিঃ কিংসলে, আপনার সাহায্য এবং সহযোগিতার কথা আমি কখনও ভুলতে পারব না।

স্যাম মিরোজ টেলিফোনের রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন। ঘড়ির দিকে তাকালেন। কাটা একটু একটু করে ইঙ্গিত প্রহরের দিকে এগিয়ে চলেছে। রাতের অতিথি যে কোনো সময় এসে পড়বে।

.

৩৬.

ডায়ানা বার্লিনের এয়ারপোর্টে এসে নামলেন। পনেরো মিনিট অপেক্ষা করার পর একটা ট্যাক্সি পাওয়া গেল।

ড্রাইভার হেসে বলল- কোথায় যাব?

–আপনি ইংরাজি বলতে পারেন?

ফয়লান, অবশ্যই পারি।

–আমি কেমপিনোসটি হোটেলে যাব।

.

পঁচিশ মিনিট বাদে ডায়ানা হোটেলে পৌঁছে গেছেন।

–আমি একটা গাড়ি নেব, ড্রাইভার চাই।

ক্লার্ক প্রশ্ন করল- ফয়লান, আমি ব্যবস্থা করছি। আপনার লাগেজ কোথায়?

লাগেজ আসছে।

.

গাড়িটা এসে গেছে।

 ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করল- ফয়লান, কোথায় যাব?

ডায়ানা মাথা নেড়ে জবাব দিলেন- বার্লিন শহরের আশেপাশে ঘুরে বেড়াব।

ঠিকই বলেছেন, এখানে দেখার অনেক জিনিস আছে।

.

বার্লিন সত্যি এক চমৎকার শহর। ডায়ানা শুনেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই শহরটাকে বোমায় বিধ্বস্ত করে ফেলা হয়েছে। তারপর এই শহরটা আবার নতুনভাবে নিজেকে সাজিয়েছে। রাস্তার দুপাশে আকাশছোঁয়া বাড়ি। বাতাসে সফলতার গন্ধ।

রাস্তার নামগুলো বড়ো খটমটে। পড়তে গেলে দাঁত ভেঙে যাবে বুঝি।

গাড়ি এগিয়ে চলেছে। ড্রাইভার প্রাচীন ইতিহাস বলে চলেছেন অনর্গল। ডায়ানা কোন কিছুই শুনছেন না। তার মনে এখন একটাই চিন্তা, কী করে ফ্রানজ ভারব্রুগ সম্পর্কে আরও খবর জানা যায়। ফ্রানজ ভারব্রুগ যেখানে কাজ করতেন, সেখানে গেলে কেমন হয়? ইন্টারনেট অনুসারে বলা হয়েছে, ফ্রানজ ভারব্রুগের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। ফ্রানজ তখন থেকেই অদৃশ্য হয়ে গেছেন।

ডায়ানা ড্রাইভারের দিকে ঝুঁকে পড়ে বললেন- এখানে কোনো কম্পিউটার কাফে আছে?

–অবশ্যই আছে ফয়লান,

–আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে প্লিজ?

–হ্যাঁ, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় কাফে। সেখানে গেলে আপনি সব খবর পাবেন।

ডায়ানা ভাবলেন, হয়তো আমি পাব।

.

সাইবার লিন কাফে, খুব একটা বড়ো নয়। ম্যানহাট্টানে তার আর একটা ব্রাঞ্চ আছে। সেটা খুবই বড়ো। কাফেতে অনেক মানুষের ভিড়।

ডায়ানা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। এক ভদ্রমহিলা ডেস্কের পাশ থেকে বেরিয়ে এসে প্রশ্ন করলেন– দশ মিনিটের মধ্যে আমি একটা কম্পিউটার ছাড়তে পারব।

–আমি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।

–আমিই ম্যানেজার।

–ঠিক আছে।

বলুন কী জানতে চাইছেন?

 –আমি সোনঝা ভারব্রুগ সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন করব।

 ভদ্রমহিলা মাথা নেড়ে বললেন- সোনঝা ভারব্রুগ তো এখানে নেই।

–আমি জানি, ডায়ানা বললেন, উনি মারা গেছেন। আমি জানতে চাইছি, কীভাবে উনি মারা গেছেন।

ভদ্রমহিলা ডায়ানার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন– এটা একটা দুর্ঘটনা। পুলিশ ওনার কম্পিউটারটা বাজেয়াপ্ত করেছিল। তারা পেয়েছিল..

ভদ্রমহিলার মুখে একটা অদ্ভুত অভিব্যাক্তি। উনি বললেন- যদি আপনি এখানে একটুখানি দাঁড়ান, তাহলে আমি আর একজনকে ডেকে আনব, যে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। আমি এক্ষুনি আসছি।

ডায়ানা দেখতে পেলেন, ভদ্রমহিলা অত্যন্ত দ্রুত পাশের ঘরে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ডায়ানা বুঝতে পারলেন, বাতাসে কেমন একটা বারুদের গন্ধ। ভদ্রমহিলা যখন চোখের বাইরে বেরিয়ে গেলেন, ডায়ানা বাইরে চলে এলেন। না, একজনের সাহায্য নিতেই হবে। কার সঙ্গে কথা বলব? ফ্রানজ ভারব্রুগের সেক্রেটারি?

পাশেই একটা টেলিফোন বুথ। ডায়ানা কে আই জি-র নাম্বারে ফোন করলেন।

-কে আই জি বার্লিন।

ডায়ানা বললেন আমি কি ফ্রানজ ভারব্রুগের সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলতে পারি?

-কে বলছেন?

 –আমি সুসান বলছি।

–একটু অপেক্ষা করুন ম্যাডাম।

 ট্যানারের অফিসের নীল আলোটা জ্বলে উঠেছে। ট্যানার তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলেন। ডায়ানা স্টিভেন্স কথা বলছে, দেখা যাক, ওকে আমরা সাহায্য করতে পারি কিনা।

উনি স্পিকার ফোনটা চালিয়ে দিলেন।

কে আই জি অপারেটরের কণ্ঠস্বর সেক্রেটারি এখন এখানে নেই। আপনি কি তাঁর সহকারীর সঙ্গে কথা বলবেন?

–হ্যাঁ, প্লিজ।

 –একটু অপেক্ষা করুন।

এক মহিলার কণ্ঠস্বর– আমি হেইজি ফ্রঙ্ক বলছি। আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করব?

ডায়ানার হৃৎস্পন্দনের গতি দ্রুততর– আমি সুসান, আমি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হয়ে কাজ করি। আমরা একটা বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন লিখতে চলেছি। কে আই জি-র কয়েকজন সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এর ওপর একটা অন্ততদন্তমূলক রিপোর্টিং করতে চাইছি। আমি কখন কোথায় আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারি?

–আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।

কয়েকটা খবর, আর কিছু না।

ট্যানার উত্তীর্ণ হয়ে শুনছেন সবকিছু।

লাঞ্চের সময় দেখা হবে কি? আপনি কি ফাঁকা আছেন?

–না, তখন আমার অনেকগুলো কাজ আছে।

 –তাহলে ডিনার?

 গলায় একটুখানি কিন্তু-কিন্তু ভাব- ঠিক আছে আমি সময় করে নেব।

-কোথায় গেলে আপনাকে পাব?

রকেনডরফ নামে একটা সুন্দর রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা সেখানে যাব।

 –অনেক ধন্যবাদ।

সাড়ে আটটা।

ডায়ানা রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন। তাঁর মুখে সাফল্যের হাসি।

.

ট্যানার অ্যানড্রুর দিকে তাকিয়ে বললেন- তাহলে? এবার বোধহয় গ্রেগ হলিডেকে ডাকতে হবে। ব্যাপারটা ও ভালোভাবেই ম্যানেজ করতে পারবে। ও কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। আজ অব্দি কোনো কাজে অসফল হয়নি।

উনি অ্যানড্রুর দিকে তাকালেন। ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত পৈশাচিক প্রবৃত্তি কাজ করে। ও টাকাপয়সা নেয় না, একটা কাটা হাত কিংবা কাটা পা নেয় পারিশ্রমিক হিসেবে। আহা, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাটা ঘটবে, ভাবতে আমার ভালো লাগছে অ্যানড্রু।

.

৩৭.

কেলি স্যাম মিরাজের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে এগিয়ে চলেছেন। একটুখানি থামলেন, অভিযানের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছেন। এবার উত্তর পাবেন। কিন্তু এই উত্তরটা কী? শুনতে কি আমার ভালো লাগবে?

কেলি ডোরবেলে হাত রাখলেন। সুমিষ্ট শব্দ– দরজা খুলে গেল। স্যাম মিরোজকে দেখে তার সমস্ত ভয় দূরাকাশে উড়ে গেল। মনে এল আনন্দ। এলো নব উন্মাদনা। হ্যাঁ, এই মানুষটি মার্কের কত কাছের মানুষ ছিলেন। একে সবভাবে বিশ্বাস করা যায়।

কেলি?

ভদ্রলোক এগিয়ে এসে হাতে হাত রাখলেন।

–ওহ স্যাম?

হাতে হাত রেখে স্যাম বললেন- ভেতরে এসো।

কেলি ভেতরে ঢুকে গেলেন। ভারী সুন্দর সাজানো অ্যাপার্টমেন্ট। এই বাড়িটা একসময় এক ফরাসি দম্পতির ছিল।

ড্রয়িংরুমটাও ভারী সুন্দর। সুন্দরভাবে সাজানো। ফরাসি দেশের ফার্নিচার দিয়ে। একটা ওক কাঠের বার রয়েছে। দেওয়ালে বেশ কয়েকটা সুন্দর ছবি ঝোলানো আছে।

-মার্কের ব্যাপারে আমার খুব খারাপ লাগে, স্যাম শান্তভাবে বললেন।

কেলি স্যামের হাতে হাত রেখে বললেন আমি জানি ব্যাপারটা খুবই শোকাবহ।

–অবিশ্বাস্য।

–আমি আসল সত্যিটা জানতে চাইছি, কেলি বললেন, তাই আমি এখানে এসেছি। আমি আশা করি, তুমি এব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে পারবে।

কেলি একটা কৌচের ওপর বসলেন। কিন্তু কী একটা চিন্তা তার মনে। মনে হচ্ছে এখানেও বোধহয় বিপদের গন্ধ আছে।

স্যামের মুখ হঠাৎ অন্ধকার পুরো গল্পটা আমরা কেউ জানি না। মার্ক একটা গোপন পরিকল্পনার ওপর কাজ করছিল। সে বোধহয় আরও দু-তিনজনের সাথে এই ব্যাপারটা ভাগ করে নিয়েছিল। সকলে বলছে, মার্ক নাকি আত্মহত্যা করেছে।

কেলি চিৎকার করে বললেন আমি বিশ্বাস করি না।

-আমিও বিশ্বাস করি না, কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক এবং সাধারণ। আসল কারণটা তুমি কি জানো? তোমার জন্যে?

কেলি মার্কের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেছেন আমি বুঝতে পারছি না।

–তোমার মতো কাউকে ছেড়ে দেওয়া মার্কের উচিত হয়নি।

আরও কাছে এসে স্যাম বলতে থাকলেন- যেটা ঘটেছে, সেটা একটা বিরাট ট্রাজেডি। কেলি, জীবন তত তার নিজের পথে এগিয়ে যাবে।

স্যাম কেলির হাতে হাত রেখে বললেন- সে চলে গেছে, কিন্তু আমি তো এখানে আছি। তোমার মতো মেয়েকে সব পুরুষই পছন্দ করবে, করবে নাকি?

–আমার মতো?

–মার্ক তোমার সম্পর্কে সব কথা বলেছে। তুমি কত আবেদনি আমি জানি। তুমি নাকি এই ব্যাপারটা করতে খুবই ভালোবাসো?

কেলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন- মার্ক, এই ধরনের কথা কী করে বলেছে? আমি তো এ ব্যাপারটা নিয়ে কারও সঙ্গে কোনোদিন আলোচনা করিনি।

স্যাম কেলির কাঁধে হাত রেখে বললেন–হ্যাঁ, মার্ক বলেছে, তুমি এটা কত ভালোবাসো। তোমরা বিছানায় শুয়ে কী কী করতে, মার্ক সব কিছু আমাকে বলেছে।

কেলির হঠাৎ মনে হল, চারপাশে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।

স্যাম বললেন- কেলি, যদি এটা করলে তুমি আরও সাহসী এবং স্বাচ্ছন্দ্য হয়ে ওঠো, তাহলে ক্ষতি কী? মার্কের আত্মা হয়তো খুশিই হবে।

কেলি স্যাম মিরাজের চোখের দিকে তাকালেন। চোখের ভাষা তিনি পড়তে পারলেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ডিনার খাব। স্যাম বললেন, এসো তার আগে বিছানাতে গিয়ে খাওয়ার ইচ্ছেটা বাড়িয়ে ফেলি।

কেলির মনে হল, তিনি হয়তো অচেতন হয়ে যাবেন। তিনি কোনো রকমে ঠোঁটের কোণে হাসি এনে বললেন- বাঃ, ব্যাপারটা সুন্দর।

মনটা অত্যন্ত দ্রুত কাজ করছে। এই লোকটার সাথে কী করে লড়াই করব? লড়াই করার কোনো অস্ত্র আমার হাতে নেই।

স্যাম ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে বললেন- হ্যাঁ, এসো, আমি তোমার জন্য ক্ষুধার্ত।

কেলির ঠোঁটে হাসি- সত্যি সত্যি? আমিও, ভালো কিছুর গন্ধ পাচ্ছি।

–আমাদের ডিনার।

কীভাবে বন্ধ করা যায় এই অন্যায় অত্যাচার? কেলি কিচেনের দিকে চলে গেলেন। ডিনার টেবিলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে তিনি হঠাৎ অবাক হয়ে গেলেন। টেবিলে একজনের খাবার কেন? 

কেলি ঘুরে দাঁড়ালেন। ড্রয়িংরুমের দিকে তাকালেন। স্যাম ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন। হাতে চাবি। হ্যাঁ, দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবে। হ্যাঁ, তাই হল।

কেলি কিচেনে চলে গেলেন। যে কোনো একটা অস্ত্র খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু কী? কোথাও কোনো ছুরি পাওয়া যাবে কি? নিদেন পক্ষে বঁটি।

কাউন্টারে কী আছে? চুলের কাটা, হা, স্টোভের ওপর ফুটন্ত জল। তার পাশে একটা ছোটো পট। সেখানে লাল সস টগবগ করে ফুটছে।

স্যাম কিচেনে এসে ঢুকেছেন। কেলির পিঠে হাত রেখেছেন।

কেলি যেন এই ব্যাপারটায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি স্টোভের ওপর বসানো সসের দিকে তাকিয়ে আছেন। আহা, কী অসাধারণ!

 কেলির শরীরের অসভ্য জায়গায় হাত রেখে স্যাম বললেন- এসো বেবি, আমরা বিছানাতে গিয়ে খেলাটা খেলব।

কেলির মন এখন দুরন্ত, ছুটে চলেছে। তিনি বললেন- এসো, আমি একটা ব্যাপার করি। মার্ককেও ঠিক এইভাবে সাজিয়ে দিতাম। তাহলে দেখবে উন্মাদনা আকাশ ছোঁবে।

স্যামের মুখে আলো এটা কী?

এর ফলে কী হবে বলো তো? সমস্ত শরীরের উষ্ণ অনুভূতি। আমি তোমাকে দেখাচ্ছি। প্যান্টটা খুলে দাও।

হাতে একটা ভেজা কাপড়ের টুকরো নিয়ে কেলি বললেন।

স্যাম কিন্তু-কিন্তু করছিলেন। প্যান্টের বেল্টটা আলগা করে দিলেন। সেটা মেঝেতে পড়ে গেল। ভেতরে বক্সার শর্ট পরা আছে।

-এবার শর্টও খুলতে হবে।

 শর্ট খুলে দিলেন। তাঁ, পুংদণ্ডটা খাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেলি বললেন– এসো, এসো আমার খোকাবাবু। তিনি ওই ঠাণ্ডা কাপড়টা বাঁ হাতে নিয়েছে, কাছে এগিয়ে গেলেন। ডান হাতে আছে ফুটন্ত জল। হুড়হুড় করে জল ঢেলে দিলেন অন্ডকোষ আর পুংদন্ডের ওপর।

শোনা গেল কেলির শেষ চিৎকার- হ্যাঁ, এবার এখান থেকে পালাতে হবে, কোনো মতে দরজা ঠেলে বাইরে এসে কেলি তখন ছুটছেন!