৬. মার্কিন দূতাবাস

২৭.

মার্কিন দূতাবাস। ম্যারি বাবলরুমের টেলিফোন ধরলেন। স্টানটন রজার্সের অফিসে ফোন করতে হবে। এখন রাত একটা বুখারেস্টে, সকাল সাতটা ওয়াশিংটনে। স্টানটন রজার্সের সেক্রেটারী একটু আগেই আসেন।

মিঃ রজার্সের অফিস?

–অ্যাম্বাসাডর অ্যাসলে, মি. রজার্স চিনে গেছেন।

 প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে হবে। খুব জরুরি। কীভাবে কথা বলব?

–ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর, এখন বলা সম্ভব নয়। তিনি নানান জায়গায় ঘুরছেন। কোনো টেলিফোন নাম্বার দিয়ে যাননি।

ম্যারি বুঝতে পারলেন, হৃদয় উথলে উঠেছে শেষ কখন তার সঙ্গে দেখা হয়েছে?

–ঠিক বলা, যাচ্ছে না। হয়তো স্টেট ডিপার্টমেন্টে ফোন করলে আপনি সাহায্য পাবেন।

না, দরকার নেই।

 ম্যারি ফোনটা নামিয়ে রাখলেন। তাকিয়ে থাকলেন শূন্য দৃষ্টিতে। কী করা যাবে? কীভাবে যোগাযোগ করা যায়? মাইক শ্লেট আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করছেন। এখনই লুইস ভেসফরগেসের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।

ম্যারি আবার ফোন করলেন স্টানটনের বাড়িতে। ফোনটা বেজেই চলেছে। কিন্তু এখনই স্টানটনের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

ম্যারি অফিসে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। স্টানটনকে একটা ছোট্ট চিঠি লিখলেন। সেটা ইলেকট্রনিক যন্ত্রে পুরে দিলেন। তাকিয়ে থাকলেন। চিঠিটা ঠিক জায়গায় পৌঁছোবে তো?

করিডর দিয়ে এগিয়ে এলেন তথ্যকেন্দ্রের দিকে।

খাঁচার মধ্যে সিআইএ এজেন্ট এডি মালজ বসেছিলেন।

শুভ সন্ধ্যা ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর, এত রাতে আপনি কাজ করছেন?

–একটা খবর পাঠাতে হবে।

 –আমি পাঠাচ্ছি।

-ধন্যবাদ।

–ম্যারি ভাবলেন, এক্ষুনি বাড়িতে ফিরতে হবে। ছেলেমেয়ের মুখ মনে পড়ে গেল।

.

তথ্যকেন্দ্র, এডি মালজ মেসেজটা ডিকোড করছিলেন। কাজটা শেষ হয়ে গেল। তিনি এটা দুবার করলেন। ভুভঙ্গিতে বিরক্তি এবং কৌতূহল।

ফ্রায়েড বেকারকে খবর দিতে হবে। কোড নাম্বার দেওয়া আছে।

.

দু-মাস সময় লেগেছে লেফ পাসটেরনাফের কাজটা শেষ করতে। বুয়েন্সআয়ার্সে গেছেন। সিকিউরিটি এজেন্সিকে কাজে লাগিয়েছেন। অ্যাঞ্জেলকে ধরতেই হবে। নেউসা মুনেজের পরিচয় পাওয়া গেছে। অ্যাঞ্জেলের উপপত্নী, লেফ পাসটেরনাফের কাছে অ্যাঞ্জেল একটা না ধরা স্বপ্ন। এক্ষেত্রে পরাজয় হলে পাসটেরনাফ হয়তো চাকরি ছেড়ে দেবেন। মারিন গ্রোজার মৃত্যু হয়েছে। পাসটেরনাফ নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না।

নেউসা মুনেজের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে না। যে অ্যাপার্টমেন্টে নেউসা থাকেন, সেখানে নজর রাখা হয়েছে। নিশ্চয়ই অ্যাঞ্জেল একবার না একবার সেখান হাজির হবেন। পাঁচদিন কেটে গেছে। অ্যাঞ্জেলের পাত্তা নেই। পাসটেরনাফকে এবার যেতে হবে। ভদ্রমহিলা বেরিয়ে গেলেন। পাসটেরনাফ ধীরে ধীরে তার ফ্ল্যাটের কাছে এসে দাঁড়ালেন। নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে ফেললেন। ভেতরে ঢুকলেন। সব কিছু খুঁটিয়ে দেখলেন। কোনো ফটোগ্রাফ নেই, কোনো ঠিকানা নেই, অ্যাঞ্জেলের পাত্তা কী করে পাওয়া যাবে? তিনি ক্লোসেটের দিকে তাকালেন। একটা জ্যাকেট দেখা গেল। ছকটা মনে মনে এঁকে নিলেন।

এক মিনিট কেটে গেছে। অত্যন্ত দ্রুত তিনি ঘর থেকে বাইরে চলে গেলেন।

.

পরের দিন সকালবেলা। লেফ পাসটেরনাফ পৌঁছে গেছেন নির্দিষ্ট দোকানে।

ম্যানেজার বললেন- সিনর, আপনাকে কী করে সাহায্য করব?

 লেফ পাসটেরনাফ বললেন, গতরাত থেকে প্রচণ্ড মদ পান করেছি।

আপনি আমাকে সাহায্য করবেন? একজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল, ওই ভদ্রলোক তার, জ্যাকেটটা আমার ঘরে ফেলে গেছেন।

লেফ জ্যাকেটটা তুলে ধরলেন-এই জ্যাকেটে আপনার দোকানের লেবেল মারা আছে। এই জ্যাকেটটা ওঁনাকে ফেরত দিতে হবে। কী করে পাব বলতে পারবেন?

ম্যানেজার বললেন-হ্যাঁ,এই জ্যাকেটটা আমরাই তৈরি করেছিলাম। রেকর্ড দেখতে হবে।

আমার কার্ড রেখে দিন। আমি আপনাকে ডাকব।

ম্যানেজারের হাতে কার্ডটা তুলে দিলেন।

লেফ কণ্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত মদিরতা এনে বললেন– এই জ্যাকেটটা তাড়াতাড়ি পাঠাতে হবে।

লেফ হাতে হাত দিলেন- ঠিক আছে, আজ বিকেলে আপনাকে ফোন করব।

.

বিকেলবেলা, লেফ হোটেল থেকে ফোন করলেন।

ম্যানেজার বললেন- যে নামটি আমরা পাচ্ছি, সেটা এইচ আর মেনডোজা। আউরোরা হোটেলে তার একটা সুইট আছে। ৫১৭ নম্বর।

লেফ পাসটেরনাফ দরজাটা বন্ধ করলেন। হাতে একটা সুটকেস নিলেন। ভেতরে একটা পিস্তল ছিল। সাইলেন্সার লাগানো। পাসটেরনাফ সব কিছু দেখে নিলেন। এবার ঘুমোতে যেতে হবে।

.

সকাল পাঁচটা। লেফ পাসটেরনাক আউবোরা হোটেলে পৌঁছে গেছেন। ৫১৭ নম্বর ঘরের সামনে এলেন। কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। তিনি দরজাটা খুলে ফেললেন। ছোট্ট একটুকরো তার দিয়ে।

হাতে পিস্তল, মনে হল কে যেন কথা বলে উঠল।

অ্যাঞ্জেল জবাব দিলেন, কেউ আমাকে অনুসরণ করুক, আমি তা চাই না।

লেফ পাসটেরনাফ পিস্তলের শব্দ পেলেন। ট্রিগার টিপল কেউ। এক সেকেন্ডের মধ্যে তার মাথাটা দু টুকরো হয়ে গেল।

.

অ্যাঞ্জেল ভেবেছিলেন, পাসটেরনাফের সাথে হয়তো আরও কেউ আছেন। অথবা পাসটেরনাফ কারও হয়ে কাজ করতে এসেছেন। কিন্তু আর কেউ নেই?

অ্যাঞ্জেল হাসলেন, বোঝা গেল, ব্যাপারটা ভালোভাবেই শেষ হয়েছে।

.

সেরাটেন হোটেল, এল আলজেরা। বুয়েন্স আয়ার্সের অন্যতম অভিজাত হোটেল। অ্যাঞ্জেল টেবিলের একধারে বসে আছেন। টেবিলের ওপর একটা নতুন ব্রিফকেস রেখেছেন।

ওয়েটার এগিয়ে এসে বললেন- শুভ সন্ধ্যা।

–আমি পারগো দিয়ে শুরু করব। তারপর একেএকে অন্য পানীয় আনবে। রেস্টরুম আছে তো?

-হ্যাঁ, স্যার। একেবারে শেষের দিকে।

অ্যাঞ্জেল উঠে দাঁড়ালেন। ব্রিফকেসটা টেবিলের ওপর পড়ে রইল। ছোট্ট অলিন্দপথ। এগিয়ে গেলেন তিনি। একটা দরজা খুললেন। এখানে কিছুক্ষণ থাকতে হবে।

পেছনের দরজা দিয়ে অলিন্দ পথে চলে গেলেন। কেউ তাকে অনুসরণ করছে না।

 ট্যাক্সি থামালেন। ঠিকানাটা দিলেন।

 লন্ডনে যেতে হবে। এখনই, খুবই তাড়াতাড়ি।

.

দু-ঘন্টা কেটে গেছে। অ্যাঞ্জেল বুয়েন্স আয়ার্সের দিকে তাকিয়ে আছেন। আহা, আকাশে মেঘের ভেলা।

ওদের সবাইকে মরতে হবে, মরতেই হবে, তারপর স্বপ্নবিহীন একটি সুখনিদ্রা।

.

লন্ডনের হিথরো এয়ারপোর্ট। অসংখ্য টুরিস্টের ভিড়। ট্যাক্সি এগিয়ে চলেছে মে ফেয়ারের দিকে। ঘন্টা খানেক লাগল। চার্চিল লবিতে মানুষের ভিড়।

বেলবয় এগিয়ে এসেছে। অ্যাঞ্জেলের দিকে তাকিয়েছে।

–এগুলো আমার ঘরে পৌঁছে দাও।

অ্যাঞ্জেল হোটেল এলিভেটরের কাছে এসে দাঁড়ালেন।

এলিভেটর চলতে শুরু করেছে। অ্যাঞ্জেল ত্রিতলে গিয়ে থামলেন।

পাঁচমিনিট কেটে গেছে, অ্যাঞ্জেল ট্যাক্সি ধরেছেন। আবার হিথরোতে ফিরে এলেন।

.

পাসপোর্টে লেখা আছে এইচ আর ডি মেনডোজা। ট্যারম এয়ারলাইন্সের টিকিট। বুখারেস্ট যেতে হবে। অ্যাঞ্জেল একটা টেলিগ্রাম পাঠালেন বুধবার পৌঁছোচ্ছি, এইচ আর ডি মেনডোজা।

তলায় লেখা আছে। এডি মালজ।

 পরের দিন সকালবেলা, ডরোথি স্টোন বললেন– স্টানটন রজার্সকে পাওয়া গেছে।

ম্যারি উৎসাহের সঙ্গে জবাব দিলেন- ঠিক আছে, আমি দেখছি।

সেক্রেটারির কণ্ঠস্বর– মিঃ রজার্স আপনাকে ফোন করতে বলেছেন ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর। তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ব্যস্ত আছেন। টেলিফোন ধরতে পারছেন না। আপনার কিছু প্রয়োজন আছে কী? আপনি আমাকে সব জানাতে পারেন।

না, ম্যারি অসহিষ্ণুতা ঢাকার চেষ্টা করলেন, আমি তার সঙ্গেই কথা বলব।

কাল সকালের আগে ওঁনাকে ফোনে পাবেন না। উনি জানিয়েছেন, সময় হলেই আপনাকে কল করবেন।

ধন্যবাদ। আমি ওঁনার টেলিফোনের জন্য অপেক্ষা করব।

 ম্যারি রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন। এখন অপেক্ষা করতে হবে।

লুইসকে বাড়িতে ফোন করার চেষ্টা করলেন। কোনো উত্তর নেই। ফরাসি এমব্যাসিতে ফোন করলেন। তারাও বলতে পারলেন না, লুইস এখন কোথায় আছেন?

–বলবেন, উনি এসে যেন আমাকে অবশ্যই ফোন করেন।

.

ডরোথি স্টোন বললেন- আপনার জন্য ফোন আছে, কিন্তু উনি নাম বলতে চাইছেন না।

–আমি দেখছি। ম্যারি রিসিভারটা তুলে নিলেন, হ্যালো। আমি অ্যাম্বাসাডর অ্যাসলে কথা বলছি।

একটা মহিলা কণ্ঠস্বর, রোমানিয়া টান আছে- করিনা সোনাকেল।

নামটা মনে পড়ে গেল। বছর কুড়ি বয়স, অসাধারণ রূপবতী এক নৃত্যশিল্পী, রোমানিয়ার সবথেকে নামজাদা ব্যালে নর্তকী।

–আমি আপনার সাহায্য চাইছি।

মেয়েটির গলায় অসহায়তা।

ব্যাপারটা আজ আমি সমাধান করতে পারব না। ম্যারি ভাবলেন। ম্যারি বললেন, কীভাবে আপনাকে সাহায্য করব?

এটা কি সোভিয়েত দেশের কোনো বিষয়? ঠিক বোঝা, যাচ্ছে না।

করিনা কাঁদতে শুরু করেছেন আমি এখানে থাকতে চাইছি না। আপনি কি একবার আসবেন? আমাকে উদ্ধার করতে হবে।

ঠিক বুঝতে পারা যাচ্ছে না, এটা ফাঁদ কি না? এভাবে কত জনই তো অপহরণের মিথ্যে গল্প করে থাকে।

আপনি কোথায় আছেন? ম্যারি জানতে চাইলেন।

কিছুক্ষণের নীরবতা আপনাকে বিশ্বাস করব কী? আমি মলডাভিয়ার রসকো ইনে আছি। আপনি কি এখানে আসবেন?

-না, আমি পারব না। কিন্তু কাউকে পাঠাচ্ছি। এই নাম্বারে আর ফোন করবেন না। একটু অপেক্ষা করুন, কেমন?

দরজা খুলে গেল। মাইক শ্লেট প্রবেশ করেছেন। ম্যারি তাকালেন। মাইক ধীরে ধীরে ম্যারির দিকে এগিয়ে আসছেন।

ফোনটা তখনও আর্তনাদ করছে- হ্যালো, হ্যালো!

মাইক জানতে চাইলেন- কার সঙ্গে কথা বলছিলেন?–

–ডাঃ ভেসফরগেসের সঙ্গে। এই নামটাই ম্যারির প্রথম মনে এল। তিনি ভয়ে ভয়ে রিসিভারটা রেখে দিলেন।

ব্যাপারটা হাস্যাস্পদ হয়ে গেল কী?

ম্যারি আবার বললেন, ডাঃ ভেসফরগেস?

-হ্যাঁ, উনি আমাকে দেখতে আসবেন।

ব্যাপারটা সত্যি হবে কী?

মাইকের চোখে অদ্ভুত চাউনি। ম্যারির ডেস্কে আলো জ্বলছে। মাইকের ছায়া পড়েছে। দেওয়ালের ওপর। মস্ত বড়ো সেই ছায়া।

–আমরা কাজ শুরু করব?

–হ্যাঁ, এবার শুরু করতে হবে।

ম্যারি একটু একা থাকতে চাইছিলেন। কিন্তু থাকা সম্ভব নয়।

মাইক আরও কাছে এগিয়ে এলেন–কী হয়েছে বলুন তো? আপনি বরং ছেলেমেয়েদের নিয়ে লেকডিস্ট্রিক্টে চলে যান।

এত সহজে আমি হার মানব না।

 ভয়–শুধু ভয়-ভয়ের বাতাবরণ। ইন্টারকমের ফোনটা বাজছে।

অনুগ্রহ করে আমাকে ছাড়বেন কী? আমি ফোনটা ধরব।

মাইক উঠে দাঁড়ালেন। কঠিন কঠোর চোখে ম্যারিকে পর্যবেক্ষণ করলেন। আস্তে আস্তে ঘর থেকে বাইরের দিকে চলে গেলেন। ম্যারি টেলিফোনটা ধরলেন। বললেন, হ্যালো?

জেরি ডেভিস, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কনস্যুলার।

ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর, আপনাকে বিরক্ত করছি বলে দুঃখিত। একটা ভয়ংকর খবর আছে। আমরা এইমাত্র একটা পুলিশ রিপোর্ট পেলাম, ডাঃ লুইস ভেসফরগেসকে হত্যা করা হয়েছে।

সমস্ত পৃথিবী বুঝি দুলে উঠল– আপনি কি ঠিক খবর পেয়েছেন?

–হুঁ, ম্যাডাম। তার মৃতহেদটা পাওয়া গেছে।

অনেক স্মৃতির উদ্বেল আলোড়ন। এক লহমার মধ্যে। টেলিফোন তখনও বাত্ময় আমি শেরিফ মুনস্টার, আপনার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে।

পুরোনো স্মৃতি, পুরোনো দুঃখ সব কিছু ঘুরে আসছে কেন?

গলার স্বর আটকে গেছে– কীভাবে এই ঘটনাটা ঘটল?

–ওঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

কে করেছে কোনো অনুমান?

না, ম্যাডাম, সিকিউরিটির লোকেরা এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে। ফরাসি এমব্যাসিও উঠেপড়ে লেগেছে।

রিসিভারটা হাত থেকে পড়ে গেল। মনটা শূন্য হয়ে গেছে। ম্যারি চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন। শূন্য দৃষ্টিতে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। চারদিকে এত ভাঙন কেন? না, আমাকে সব ঠিক করতে হবে। আমার এই দূতাবাসে আমি কোনো ধ্বংসের গান শুনব না। কিন্তু পারব কী? সব ভেঙে যাচ্ছে, এডওয়ার্ড মারা গেছে, লুইস মারা গেল, এত শোক? এত যন্ত্রণা? কিন্তু কেন? কে বা কারা লুইসকে হত্যা করল?

একটা নাম ভেসে এল, মাইক শ্লেট। লুইস বুঝতে পেরেছিলেন, শ্লেট ম্যারিকে আর্সেনিক বিষ প্রয়োগ করছেন। তাই শ্লেট এই সাক্ষীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেন।

নতুন সম্ভবনা, তা হলে? আমি মিথ্যে কথা বলেছি। ধরা পড়ে গেছি।

সারাদিন ম্যারি অফিসে ছিলেন। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছিলেন মনে মনে। অমি এখনই কিছু বুঝতে দেব না। কিন্তু ওঁর কাছে আমি হার মানব না। রাগ, ঘৃণা এবং হতাশা সব কিছু মিলেমিশে একাকার। যে করেই হোক মাইক শ্লেটকে ধ্বংস করতেই হবে।

স্টানটন রজার্সকে ফোন করলেন।

–ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর, আপনার মেসেজ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। উনি সময় পেলেই আপনাকে ফোন করবেন। আপনি এত উতলা হবেন না।

.

লুইসের মৃত্যুর ঘটনাটা ম্যারি মন থেকে মানতে পারছেন না। এমন সুন্দর স্বভাবের এক ভদ্রলোক, এখন মর্গে শুয়ে আছেন। জীবনবিহীন? আমি কানসাসে ফিরে যাব? আহা, লুইস কি আবার বেঁচে উঠবে না?

ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর?

ডরোথি স্টোনের হাতে একটা এনভেলাপ।

–একজন গার্ড এটা আপনাকে দিতে বলেছে।

এনভেলাপের ওপর লেখা আছে ব্যক্তিগত, শুধুমাত্র অ্যাম্বাসাডরের জন্য।

ম্যারি এনভেলাপটা খুললেন, পরিষ্কার হাতের লেখা প্রিয় ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর, আজই আপনার জীবনের শেষ দিন।

তলায় অ্যাঞ্জেল নামটা দেখা গেল।

মাইকের আর একটা কারসাজি। ম্যারি ভাবলেন। না, যে করেই হোক এই যুদ্ধে আমাকে জিততেই হবে।

.

কর্নেল ম্যাককিনি নোটের ওপর তাকিয়ে আছেন। তিনি ম্যারির দিকে তাকালেন– কী ব্যাপার বলুন তো? আজ বিকেলে একটা অনুষ্ঠান ছিল। আমি কি সেটা বাতিল করব?

না।

–ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর ব্যাপারটা আপনার পক্ষে খুবই বিপদজ্জনক হয়ে উঠবে।

না, আমি ভালোই থাকব। মাইক শ্লেট কোথায়?

 উনি অস্ট্রেলীয় দূতাবাসে গেছেন। একটা মিটিং আছে।

 ওঁনার সঙ্গে এখুনি কথা বলতে হবে। আপনি খবর পাঠান।

.

–আপনি আমায় ডেকেছেন ম্যাডাম?

–হ্যাঁ, আমি আপনার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাইছি।

বলুন, কী বলবেন?

 –একটা টেলিফোন পেয়েছি।

কী বলা হয়েছে?

 –সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি একটু সাহায্য চাইছি।

মাইকের ভুরু কুঁচকে উঠেছে– এটা কি এখানকার স্থানীয় ব্যাপার?

— হ্যাঁ।

এক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাব কী?

-আপনি রসকো ইন হোটেলে যাবেন, মলডাভিয়াতে, বছর কুড়ির একটি মেয়ে আটকে আছে। তাকে উদ্ধার করে আনতে হবে।

মাইকের মুখে বিস্ময়।

–আমি কাউকে পাঠাব?

–না, আপনি যাবেন। সঙ্গে দুজনকে দিচ্ছি।

দুজন রক্ষীকে পাঠানো হল। ম্যারি মাইককেই পাঠাতে চাইছেন।

গানিকে বলা আছে, মাইক শ্লেট যেন চোখের বাইরে যেতে না পারেন।

মাইক ম্যারিকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন সারাদিন অনেক কাজ আছে। কাল গেলে চলবে না?

না, আপনি এখনই চলে যান। গানি আপনার জন্য অফিসে অপেক্ষা করছে।

 মাইক মাথা নেড়ে বললেন- ঠিক আছে।

 ম্যারি দেখলেন, একটা আত্মবিশ্বাস, ফিরে এল মনের মধ্যে।

মাইক চলে গেছেন আমি কি এখন নিরাপদ?

ম্যারি কর্নেল ম্যাককিনির নাম্বারে ডায়াল করলেন– আমি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেব।

–আমি কিন্তু এখনও বারণ করছি ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর। আপনি কেন বিপদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে চলেছেন?

–আমার সামনে আর কোনো বিপদ নেই। মনে রাখবেন, আমি একটা বিরাট দেশের প্রতিনিধি। আমি কি লুকিয়ে থাকব নাকি? কেউ আমাকে ভয় দেখিয়েছে বলেই আমি সব কাজ বন্ধ করে দেব? না, তাহলে আমার বেঁচে থাকাটাই বৃথা হবে কর্নেল ম্যাককিনি। আমি বাড়ি যাব না। আমি সোজা ওই অনুষ্ঠান মঞ্চে চলে যাব।

.

২৮.

অনুষ্ঠানটা জমজমাট, চারটের সময় শুরু হয়েছে। আলেকজানডুর শাহিয়াস স্কোয়ারে। আমেরিকান লাইব্রেরির পাশে এক বিরাট মাঠের ওপর। বিকেল তিনটের মধ্যেই অনেক মানুষের জমায়েত। কর্নেল ম্যাককিনি ক্যাপ্টেন আউরেনের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন।

ক্যাপ্টেন বললেন- হ্যাঁ, অ্যাম্বাসাডরের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। 

ভদ্রলোক চমৎকার মানুষ। তিনি স্কোয়ার থেকে সমস্ত অটোমোবাইলকে বের করে দিলেন। তার মানে, গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের আশঙ্কা নেই। চারদিকে পুলিশ বসিয়ে দেওয়া হল। এমনকী লাইব্রেরি বাড়িটির মাথায় পুলিশের প্রহরা।

চারটে বাজতে কয়েক মিনিট বাকি আছে। সকলেই তটস্থ। ইলেকট্রনিক প্রশিক্ষকরাও এসে গেছেন। না, খুঁজে খুঁজে দেখা হল, এখানে কোনো বিস্ফোরক নেই। ক্যাপ্টেন আউরেন বললেন- আমরা প্রস্তুত।

কর্নেল ম্যাককিনি বললেন তাহলে অ্যাম্বাসাডরকে আসতে বলছি।

.

ম্যারির লিমুজিন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। চারজন প্রহরী, তিনি গাড়ি থেকে নামলেন। ফ্লোরিয়ান বললেন- শুভ সন্ধ্যা ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর। কী বিরাট একটা লাইব্রেরি, দেখুন।

ম্যারি কোনো কথাই শুনছিলেন না। আহা, লুইসের ভালোবাসা, আমার সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমি কাঁদব না, কেঁদে কিছু হবে কী?

লিমুজিনটা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে গেছে। দুজন প্রহরী গাড়ি থেকে নামল।

–শুভ সন্ধ্যা ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর।

ম্যারি এগিয়ে গেলেন। সিকিউরিটির লোকেরা চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে।

ম্যারি জনগণের দিকে তাকালেন। আমি কীভাবে বক্তৃতা দেব? আমি তো কখনও এখানে আসিনি।

কর্নেল ম্যাককিনি বললেন– ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসাডর এখানে এসেছেন।

জনগণ হাততালি দিল। ম্যারি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বলতে শুরু করলেন– আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

গত সপ্তাহের ঘটনাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। বক্তৃতা তৈরি হয়নি। কী বলা যায়? শেষ পর্যন্ত তিনি বলতে শুরু করলেন– আজ আমরা একটা ছোট্ট পদক্ষেপ রেখেছি। কিন্তু এইভাবে পূর্ব ইউরোপের দেশের সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক সেতু বন্ধন শুরু হল। নতুন এই বাড়িটা আমরা তথ্যসমৃদ্ধ পৃথিবীর কাছে উৎসর্গ করছি। এখানে এলে আপনারা মহান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা জানতে পারবেন। আমাদের পুরোনো ইতিহাস আপনাদের উদ্বুদ্ধ করবে। সেখানে ভালোমন্দ দুটি দিকই আছে।

কর্নেল ম্যাককিনি জনগণের দিকে এগিয়ে গেছেন।

 ম্যারির মনে পড়ছে। সেই শব্দগুলো– আজই এই পৃথিবীতে আপনার শেষ দিন।

কখন এই মুহূর্তটা সূচিত হবে? ছটা, রাত্রি নটা অথবা মধ্যরাত? 

ম্যারি তখনও বলে চলেছেন– আমরা এই দেশের জন্য গর্বিত। এই দেশের গৌরবগাথা আমাদের মনকে উদ্দীপ্ত করে।

স্কোয়ারের একদিকে একটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। চট করে সেটা পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে ঢুকে পড়েছে ভেতর দিকে।

একজন পুলিশ সেদিকে ছুটে গেল। ড্রাইভার গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করছে। পকেট থেকে একটা বস্তু বের করল সে। গাড়িটায় বিস্ফোরণ ঘটে গেল। জনগণের মধ্যে ধাতুর টুকরো ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যারি যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানে অবশ্য একটাও যায় নি। জনগণ পালাতে শুরু করেছে। ভয়ের পরিবেশ। তারপর? একজন প্রহরী ওই ছুটন্ত লোকটিকে গুলি করেছে। আরও একবার মৃত্যুটাকে ত্বরান্বিত এবং অবশ্যম্ভাবী করতে।

.

রোমানিও পুলিশ খুব তাড়াতাড়ি আলেকজানডুর স্কোয়ারকে ফাঁকা করে দিয়েছে। ওই মৃতদেহটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখনও আগুন জ্বলছে। ভীত সন্ত্রস্তা ম্যারিকে এমব্যাসিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আপনি রেসিডেন্সে গিয়ে বিশ্রাম করুন। ভয়ংকর অনুভূতি। কর্নেল ম্যাককিনি জানতে চাইলেন।

ম্যারি বলেছিলেন–না, এখন আমি দূতাবাসে যাব।

দূতাবাসে থাকলেই তিনি বোধহয় স্টানটন রজার্সের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। এখনই তার সঙ্গে আলোচনা করা দরকার।

পারা যাচ্ছে না, এই অসহনীয় যন্ত্রণা। মাইক শ্লেট চোখের বাইরে, তাতে কী হয়েছে? ষড়যন্ত্র কাজ করছে।

ম্যারি আবার চেষ্টা করলেন স্টানটন রজার্সের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে।

.

ছটা বেজেছে। মাইক ম্যারির অফিসে ঢুকলেন। তিনি খুবই রেগে গেছেন।

করিনাকে ওপরের ঘরে রেখে এসেছি। আপনি আমাকে দিয়ে কী কাজ করাতে চাইছেন? করিনার পরিচয় জানেন? রোমানিও সরকার এই কাজটা মেনে নেবে? না, ব্যাপারটা অন্যায় হয়েছে।

 কর্নেল ম্যাককিনি ম্যারির অফিসে চলে এসেছেন।

ওই মৃত মানুষের পরিচয় পাওয়া গেছে। উনি বোধহয় অ্যাঞ্জেল, ওঁনার আসল নাম

এইচ আর ডি মেনডোজা।

মাইক তাকিয়ে থাকলেন অবাক চোখে– কার কথা বলছেন?

কর্নেল ম্যাককিনি বললেন আপনি তো সারাদিন অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আপনি কি জানেন যে, অ্যাম্বাসাডরকে ফোন করে ভয় দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে কেউ তাকে আজই হত্যা করবে।

মাইক বললেন না তো!

–অ্যাঞ্জেলের কাছ থেকে এই মৃত্যু আহ্বান এসেছিল। অ্যাঞ্জেল অ্যাম্বাসাডরকে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই কাজে সফল হননি।

মাইক উঠে এলেন। ম্যারির দিকে তাকালেন।

কর্নেল ম্যাককিনি বলতে থাকেন-তাহলে আমরা একটা বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছি?

মাইক জানতে চাইলেন– বডিটা কোথায় আছে?

পুলিশ হেড কোয়াটারের মর্গে।

.

নগ্ন দেহটা শোয়ানো ছিল। পাথরের বেদির ওপর। সাধারণ চেহারার মানুষ। মাঝারি উচ্চতা, চেহারার মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। একহাতে উলকি করা। পাতলা সরু কাঁধ। ঘন মুখ, ছোটো ছোটো দুটি পা। পাতলা চুল। তার জিনিসপত্রগুলো টেবিলে জড়ো করা হয়েছে।

–আমি কি একবার দেখব?

 পুলিশ সার্জেন্ট ঝাঁকিয়ে বললেন- এগিয়ে যান। মনে হয় লোকটা বাধা দেবে না।

এই কৌতুকে তিনি নিজেই হেসে উঠলেন।

মাইক জ্যাকেটটা দেখলেন। লেবেলটা পরীক্ষা করলেন। বুয়েন্স আয়ার্সের একটা দোকান থেকে কেনা হয়েছে। চামড়ার জুতো, আর্জেন্টিনার লেবেল মারা। কিছু খুরচো পয়সা। রোমানিও টাকাও চোখে পড়ল। ফরাসি ফ্রাঙ্ক, ব্রিটিশ পাউন্ড, আর্জেন্টিনার দশহাজার ডলার, পেসোতে। নতুন দশ পেসোর নোট।

মাইক সার্জেন্টের দিকে তাকালেন এবার বলুন তো কী জানা গেছে?

–এই লোকটা দুদিন আগে লন্ডন থেকে এখানে এসেছে। ট্যারম এয়ারলাইন্সে চেপে। সে ইন্টার কনটিনেন্টাল হোটেলে উঠেছিল। মেনডোজা ছদ্মনামে। তার পাসপোর্টে লেখা আছে বাড়ির ঠিকানা বুয়েন্স আয়ার্স, তবে পাসপোর্টটা জাল।

পুলিশ ভদ্রলোক দেহটার দিকে তাকালেন। লোকটাকে দেখে আন্তজাতিক সুপারি কিলার বলে মনে হচ্ছে কী?

মাইক বললেন– না, মনে হয়, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।

.

একটু দূরে অ্যাঞ্জেল রেসিডেন্সের কাছে পৌঁছে গেছেন। কারোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন না। ছবিটা চমৎকার। কিন্তু আরও সুনিশ্চিত হতে হবে। ডোভারম্যান কুকুর তাকিয়ে আছে। সব বাধা অতিক্রম করতে হবে।

অ্যাঞ্জেল ভাবলেন, এখন টাউন স্কোয়ারে কী হল? সব কাজ ভালোভাবে করতে হবে।

চৌঠা জুলাই। রেসিডেন্সে আনন্দোৎসব। বেলুন টাঙানো হবে। মেরিন ব্যান্ড বাজবে। কৌতুক অভিনেতারা আসবে। অ্যাঞ্জেল হাসলেন– পঞ্চাশ লক্ষ ডলার!

ডরোথি ছুটে এসেছেন ম্যারির অফিসে– ম্যার্ডাম অ্যাম্বাসাডর, আপনি এখনই বাবলরুমে আসুন। ওয়াশিংটন থেকে স্টানটন রজার্সের ফোন।

ম্যারি, আবার নতুন করে কাজ শুরু করুন। ব্যাপারটা কষ্টকর আমি বুঝতে পারছি।

ম্যারি ভাবলেন, আর কী সম্ভব? ভয়, প্রচণ্ড ভয় আমাকে আঁকড়ে ধরেছে।

ম্যারি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন– আমি দুঃখিত স্টান, আপনি কি আমার কেবল পেয়েছেন?

–এখনও পাইনি, কী হয়েছে বলুন তো?

 ম্যারি ভাবলেন, কী করে শুরু করব?

 ম্যারি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন– মাইক শ্লেট আমাকে হত্যা করতে চাইছেন।

–ম্যারি, আপনি কী বলছেন? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।

–এটা একেবারে সত্যি। ফরাসি দূতাবাসের এক ডাক্তারের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। লুইস ভেসফরগেস। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, আমার খাবারে আর্সেনিকের বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মাইক একাজটা করেছেন।

স্টানটন রজার্সের কণ্ঠস্বরে তীক্ষ্ণতা– আপনি কী করে নিঃসন্দেহ হলেন?

লুইস এটা বের করেছিলেন। মাইক প্রতিদিন সকালে আমার জন্য কফি নিয়ে আসেন। তার মধ্যেই আর্সেনিক মেশানো ছিল। আমি বুঝতে পেরেছি, তিনি কোথা থেকে আর্সেনিক এনেছিলেন। গতরাতে লুইসকে হত্যা করা হয়েছে। আজ বিকেলেও শ্লেটের এক অনুচর আমাকে মারতে চেয়েছে।

কিছুক্ষণের নীরবতা।

স্টানটন রজার্স আবার কথা বলতে শুরু করলেন– আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব, ম্যারি? মাইক শ্লেটের সাথে আর কেউ আছে কী?

জানি না, মাইক চাইছেন, আমি যেন রোমানিয়া থেকে চলে যাই। প্রথম থেকেই তিনি এই কথা বলে আসছেন।

স্টানটান রজার্স বললেন– আমি এক্ষুনি প্রেসিডেন্টের কাছে সব খবর পৌঁছে দিচ্ছি। শ্লেটের ব্যাপারটা আমরা বুঝে নেব। এর মধ্যে আপনি একটু সাবধানে থাকবেন। আমি আপনার নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরও সতর্ক করে দিচ্ছি।

-স্টান, চৌঠা জুলাইতে পার্টি আছে। অতিথিদের বলা হয়েছে। আমি কি এটা বাতিল করব?

দীর্ঘক্ষণের নীরবতা সত্যি কথা বলতে কী, পার্টিটা একটা ভালো অনুষ্ঠান। অনেকের সাথে পরিচয় হবে। ম্যারি বৃথা ভয় পাবেন না। তবে ছেলেমেয়েদের চোখের বাইরে রাখবেন না। এক মিনিটের জন্যও নয়। শ্লেট হয়তো তাদের নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারেন।

–ঠিকই বলেছেন, ম্যারি বললেন, আচ্ছা আমি দেখছি।

ম্যারি ফোনটা নামিয়ে দিলেন। মনে হল, পিঠ থেকে বিরাট বোঝা নেমে গেছে। তারপর? ছেলেদের চোখে চোখে রাখতে হবে। এটাই ওপরওয়ালার নির্দেশ।

.

এডি মালজ প্রথমেই উত্তর দিলেন।

 দশ মিনিট ধরে কথা হল।

–সব কিছু ঠিক আছে?

অ্যাঞ্জেল ফোনটা রেখে দিলেন।

এডি মালজ ভাবলেন, আর কতটা সময় আছে? কতক্ষণ পরে সেই প্রহরটা আসবে?

.

স্টানটন সঙ্গে সঙ্গে কর্নেল ম্যাককিনিকে ফোন করলেন।

–বিল, আমি স্টানটন বলছি।

–বলুন স্যার, আপনার জন্য কী করতে পারি?

–মাইক শ্লেটের ওপর কড়া নজর রাখতে হবে। ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

–মাইক শ্লেট?

অবিশ্বাস থরথর করে কাঁপছে।

-হ্যাঁ, ওঁনাকে আলাদা করে রাখুন। ওঁনার হাতে অস্ত্র থাকতে পারে। উনি যেন কারও সাথে কথা বলতে না পারেন।

-ইয়েস, স্যার।

–মাইক শ্লেটের সাথে যোগাযোগ হওয়া মাত্র হোয়াইট হাউসে ফোন করবেন, কেমন?

ইয়েস স্যার।

.

স্টানটন রজার্সের ফোন বেজে উঠল দু-ঘণ্টা বাদে।

-হ্যালো।

কর্নেল ম্যাককিনি, মিঃ রজার্স।

–পাওয়া গেছে?

না, পাওয়া যাচ্ছে না।

–কী হয়েছে?

–মাইক শ্লেট হাওয়ায় ভর দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছেন।

.

২৯.

সোফিয়া বুলগেরিয়া। ৩রা জুলাই।

একটা ছোট্ট বাড়ি, ইস্টার্ন সমিতির সদস্যরা ব্যস্ত আছেন একটা অধিবেশনে। টেবিলে রাশিয়া, চিন, চেকোশ্লোভাকিয়া, পাকিস্তান, ভারত এবং মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা বসে আছেন।

চেয়ারম্যান বললেন– আমরা ইস্টার্ন কমিটির সমস্ত সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা একটা কথা ঘোষণা করতে চাইছি, যা শুনে আপনারা সকলেই আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠবেন। আমাদের পরিকল্পনাটা এখন শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কাল রাতে বুখারেস্টে আমেরিকান অ্যাম্বাসাডরের রেসিডেন্সে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা আসবেন। টেলিভিশনেও দেখানো হবে।

কালী নামের এক সংকেত চিহ্ন বলে ওঠেন- আমেরিকান অ্যাম্বাসাডর এবং তার দুই ছেলেমেয়ে?

তাদের হত্যা করা হবে। এবং আরও একশোজন আমেরিকানকে। ব্যাপারটার মধ্যে বিরাট বিপদের সম্ভবনা আছে। কিন্তু কাজটা করতেই হবে।

তিনি একদিকে তাকালেন। বললেন–ব্রহ্ম?

–হ্যাঁ।

 –বিষ্ণু?

হ্যাঁ।

–গণেশ?

–হ্যাঁ।

–যম?

–হ্যাঁ।

ইন্দ্র।

–হ্যাঁ।

—কৃষ্ণ?

–হ্যাঁ।

রাম?

–হ্যাঁ।

—কালী?

–হ্যাঁ।

 এই সবই ছদ্মনাম।–সকলকেই আমি আন্তরিক অভ্যর্থনা জানাচ্ছি।

তিনি একজন আমেরিকানের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।

 মাইক শ্লেটের মুখে দুষ্ট হাসি।

.

চৌঠা জুলাইয়ের জন্য প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। শনিবার সন্ধেবেলা। চারদিকে সাজ-সাজ রব পড়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উপহার পাঠানো হয়েছে। এক হাজার লাল, সাদা এবং নীল বেলুন। বড়ো বড়ো বাক্স বন্দি হয়ে সেগুলো এসেছে। তিনটে সিলিন্ডারের মধ্যে আছে হিলিয়াম, যা এই বেলুনগুলোকে ফুলিয়ে দেবে। আড়াইশো রোল আইসক্রিম আনা হয়েছে। আতসবাজি, অনেক ধরনের আমেরিকার ফ্লাগের ছোটো ছোটো প্রতিকৃতি। ওয়ার হাউসে রাত আটটার সময় এই জাহাজের মালগুলো নামানো হবে। দুঘণ্টা কেটে গেছে। একটা জিপ এসে দাঁড়াল। দুটো অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। মার্কিন আর্মির চিহ্ন আঁকা। ড্রাইভার সেগুলো ভেতরে রেখে দিল।

রাত একটা, ওয়ারহাউস একেবার ফাঁকা হয়ে গেছে। অ্যাঞ্জেলকে দেখা গেল। ওয়ারহাউসের দরজাটা খোলা অবস্থায় রয়েছে। অ্যাঞ্জেল সিলিন্ডার অব্দি পৌঁছে গেলেন। ভালোভাবে পরীক্ষা করলেন। কাজ শুরু হল। এখনই তিনটে হিলিয়াম ট্যাঙ্ককে খালি করতে হবে। ব্যাপারটা কি খুব সোজা?

.

চৌঠা জুলাই, সকালবেলা, রেসিডেন্সে হৈ-হৈ শুরু হয়ে গেছে। সবকিছু পরিষ্কার করা হচ্ছে। ঝাড়বাতি সাফ করা হচ্ছে। চাদর কাঁচা হল। প্রত্যেকটা ঘরে উত্তেজনা।

বলরুমকেও সাজানো হল।

.

চারটে বেজেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ট্রাক ঢুকে পড়েছে। গার্ড থামিয়ে দিয়ে বলেছে- কী আছে?

–পার্টির জন্য নানা জিনিস।

একবার দেখতে হবে।

–বাক্সে কী আছে?

হিলিয়াম বেলুন আর ফ্ল্যাগ।

 –এগুলো খুলুন।

 পনেরো মিনিট কেটে গেল, ট্রাকটা ভেতরে ঢুকে গেছে। প্রহরীরা এসে ট্রাকটা খালি করতে শুরু করছে, বলরুমে জিনিসগুলো নিয়ে যাওয়া হল।

প্রহরীদের মধ্যে থেকে একজন বলল- বেলুনের দিকে তাকাও? কীভাবে এগুলোকে ফোলানো হবে?

এডি মালজকে দেখা গেল। এক ভদ্রলোক তার সঙ্গে রয়েছে।

এডি মালজ বললেন- এখন এত ভাববার কী আছে? কর্নেল ম্যাককিনি আদেশ দিয়েছেন, বেলুনগুলো ওড়াতে হবে।

এডি মালজ ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিটাকে বললেন– অনেকগুলো বেলুন ফোলাতে হবে। এখন থেকেই কাজ শুরু করলে কেমন হয়?

সিলিন্ডার খোলা হল। একজন জানতে চাইল সিলিন্ডারে কী আছে?

হিলিয়াম। অজানা আগন্তুক বলে উঠলেন।

 করপোরেল সব কিছু দেখছিলেন। আগন্তুক একটা বেলুন নিয়েছেন। সিলিন্ডারের ভেতর বেলুনের মুখটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বেলুনটা পরিপূর্ণ হয়ে গেল। সেটা আপনা থেকেই ছাদে চলে গেল। এক সেকেন্ডের মধ্যে কাজটা হল।

করপোরেলের মুখে হাসি বাঃ, চমৎকার!

এমব্যাসির অফিসে বসে ম্যারি অ্যাসলে শেষ মুহূর্তের কাজ সারছিলেন। এক্ষুনি পার্টিটা বাতিল করলেই ভালো হয়। দুশোর বেশি অতিথি আসবেন। মাইক শ্লেটকে কি তার আগে ধরা সম্ভব হবে?

রেসিডেন্সে টিম আর বেথকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মাইক শ্লেট কি ওদের কোনো ক্ষতি করতে পারেন?

ঠিক বুঝতে পারা যাচ্ছে না।

একটুবাদে একটা অভাবিত দৃশ্য দেখে ম্যারির মন কেঁপে উঠল।

ম্যারি কয়েক টুকরো কাগজ নেবার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। মাইক শ্লেটকে শান্ত মনে তার অফিসে ঢুকতে দেখা গেল। পাশের দরজা দিয়ে।

মাইককে আসতে দেখে ম্যারি চিৎকার করে উঠেছিলেন।

তীব্র রাগ ঝরে পড়ছে তার কণ্ঠস্বর থেকে কর্নেল ম্যাককিনির লোকেরা আপনার ওপর নজর রেখেছেন। আপনি এখানে এলেন কী করে? আপনি কি ভাবছেন, আমাকে মেরে ফেলবেন? কিন্তু ওরা আপনাকে শাস্তি দেবে।

–আপনি এসব গুজবে কান দেবেন না। অ্যাঞ্জেলকে ভাড়া করা হয়েছিল আপনাকে মারবার জন্য।

–না, আপনি মিথ্যুক। অ্যাঞ্জেল মরে গেছে। আমি দেখেছি।

-আর্জেন্টিনা থেকে অ্যাঞ্জেল এখানে এসেছিল। যাকে পুলিশ মেরেছে, সে এক অ্যামেচার। অ্যাঞ্জেলের মতো পোশাক পরেছে।

–আপনার একটা কথাও আমি বিশ্বাস করছি না। আপনি লুইস ভেসফরগেসকে মেরেছেন, একথা অস্বীকার করতে পারেন? আমাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন, একথাও অস্বীকার করতে পারেন?

মাইক জবাব দিলেন না, আমি কোনোটাই অস্বীকার করছি না। আসুন, আপনার সঙ্গে আমার এক বন্ধুর আলাপ করানো যাক।

দরজার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন-বিল, এবার ভেতরে এসো। মুখোশটা খুলে ফেলল।

কর্নেল ম্যাককিনি ঘরের ভেতর ঢুকে বললেন- ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর, এবার সকলে মিলে আলোচনায় বসতে হবে। কেমন?

.

রেসিডেন্সের স্টোরেজ রুম। ওই অজানা আগন্তুক কাজ করতে ব্যস্ত। মেরিন করুপোরেলের চোখের সামনে তিনি একটির পর একটি বেলুন ফোলাতে শুরু করেছেন।

করপোরেল বুঝতে পারছেন না, কেন সাদা বেলুনগুলোকে একটা সিলিন্ডার থেকে ফোলাতে হচ্ছে, লালগুলোকে দ্বিতীয় এবং নীলগুলোকে তৃতীয় সিলিন্ডার থেকে।

করপোরেল একটু অবাক হয়ে গেছেন। তিনি প্রশ্ন করার চেষ্টা করেছিলেন। এখন আর কথা বলে কী লাভ?

দরজা দিয়ে তারা বলরুমে এলেন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আহা, করপোরেল ভাবলেন, আজকের রাতটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

.

 ম্যারি অফিসে বসে আছেন। উলটোদিকে মাইক এবং কর্নেল ম্যাককিনি।

কর্নেল ম্যাককিনি বলতে শুরু করলেন– আমি শুরু করছি। যখন প্রেসিডেন্ট বললেন, তিনি লৌহযবনিকার অন্তরালে থাকা দেশগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে চান, মনে হল একটা বোমা বোধহয় বিস্ফোরিত হয়েছে। আমাদের সরকারের এক পক্ষ মনে করেন, রোমানিয়া, রাশিয়া, বুলগেরিয়া, আলবানিয়া, চেকোশ্লোভিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত। আবার অনেকে মনে করেন, না, এমনটি করলে কমিউনিস্টরা আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দেবে। প্রেসিডেন্ট যে পরিকল্পনাটা করেছিলেন, তার মধ্যে অনেক ভুল ছিল। দুদিকেই গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা আছেন। তাঁরা তর্ক-বিতর্ক শুরু করে দিয়েছেন। কেউ কেউ চেয়েছেন, প্রেসিডেন্টের এই পরিকল্পনাটাকে ধ্বংস করতে। এইভাবেই তার ভাবমূর্তিকে ছোটো করা হবে। আপনার দুভার্গ ম্যাডাম, আপনি না জেনেই এই বিপদের মধ্যে জড়িয়ে পড়লেন।

–কিন্তু আমাকে কেন নির্বাচিত করা হল?

মাইক বললেন আপনার প্যাকেজিংটা অসাধারণ। আপনার কোনো দোষত্রুটি নেই। মধ্য আমেরিকা থেকে আপনার উদ্ভব। দুটি সন্তান আছে। তাই বোধহয় আপনার ভাবমূর্তিটা প্রেসিডেন্টের ভালো লেগেছিল। শ্রীমতী আমেরিকা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবনযাত্রার প্রতীক।

হায় ঈশ্বর, আমি কেন এই কাজে যোগ দিলাম?

এবার আপনাকে তৈরি করা হবে। আপনার ভাবমূর্তিটাকে আরও উজ্জ্বল করা হল। পৃথিবীর সর্বত্র আপনার নাম ছড়িয়ে পড়ল। বলা হল, আপনি বিশ্বকে শান্তির পথ দেখাবেন।

-এখন কী হবে?

–আপনাকে সকলের সামনে হত্যা করা হবে। আপনার ছেলেমেয়েদেরও জীবন কেড়ে নেওয়া হবে। এই ঘটনাটা আমরা নির্মমতার সঙ্গে করব, যাতে শান্তির পক্ষের মানুষেরা শিউরে ওঠে।

ম্যারি চুপ করে বসে রইলেন। ভয়ে কথা বলতে পারছেন না।

কর্নেল ম্যাককিনি বলতে থাকলেন– মাইক সিআইএ-র সঙ্গে যুক্ত। আপনার স্বামী এবং মারিন গ্রোজাকে হত্যা করা হয়েছে। মাইক এবার নতুন একটা পথের পথিক। মাইক চাইছে, আমেরিকার এই পরিকল্পনাকে নষ্ট করতে। বুঝতে পারছেন, সিআইএ-র হাত কত দূর প্রসারিত।

ম্যারির মাথা ঘুরতে শুরু করেছে। ম্যারি বললেন– মাইক, আপনি আমাকে মারবেন?

মাইক জবাব দিলেন– আমি আপনাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আর সম্ভব নয়।

–আপনি আমাকে বিষ দিয়েছিলেন?

মারতে নয়, আপনাকে আবেশে আচ্ছন্ন করে রাখতে। আমাদের ডাক্তাররা আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত ডেসফরগেসই আপনাকে বাঁচিয়ে তুললেন। আপনাকে আরও অনেক সত্যি কথা শোনাব? আপনি অবাক হয়ে যাবেন।

লুইস?

 লুইসকে হত্যা করতে হল, আর কোন উপায় ছিল না।

 ম্যারির অনেক কথা মনে পড়ে গেল। কিন্তু এখন উপায় কী?

–আমার কোনো উপায় নেই। এই ঘটনাটা ঘটাতেই হবে। কী করব? আমার দলের। কাছে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ম্যারি চুপ করে বসে আছেন। মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা বুঝি এখনই টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

স্টানটন রজার্স? তাকে কি বিশ্বাস করা যায়?

ম্যারি শেষবারের মতো জানতে চাইলেন– স্টানটন? তিনিও কি…

–না, উনি আপনাকে বারবার বাঁচিয়ে গেছেন। কর্নেল ম্যাককিনির কণ্ঠস্বরে নিরাপত্তা তা না হলে আপনি কবেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতেন। উনি বলেছেন, মাইককে এখনই গ্রেপ্তার করতে।

ম্যারি মাইকের দিকে তাকালেন– কী আশ্চর্য, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

মাইক, আপনি কেন মিথ্যে বলেছেন? আপনি বলেছেন, লুইস বিয়েও করেন নি, তাঁর সন্তান ছিল না।

..এডি মালজের কাছ থেকে আমি সব খবর পেয়েছি। লুইস বিয়ে করেছিল, দুটি মেয়ে ছিল তার।

মাইক এবং কর্নেল ম্যাককিনি চোখ চাওয়াচাওয়ি করলেন।

ম্যাককিনি বললেন- তাতে কী হয়েছে? এমন কত মিথ্যেই তো বলতে হয়।

ম্যারি জানতে চাইলেন অ্যাঞ্জেল কে?

মাইক বললেন অ্যাঞ্জেল এক ভাড়াটে খুনি। দক্ষিণ আমেরিকাতে থাকে। এই ব্যাপারে পৃথিবীতে তিনি এক নম্বর। তাঁকে পঞ্চাশ লক্ষ ডলার দেওয়া হবে। শুধু আপনাকে হত্যা করার জন্য।

ম্যারি বিশ্বাস করতে পারছেন না, পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে।

মাইক বলতে থাকেন অ্যাঞ্জেল এখন বুখারেস্টে আছে। আমি জানি, সে তার কাজ ঠিক মতো করবে। সে কারও সাথে কথা বলে না। তার এক রক্ষিতা নেউসা মুনেজের সঙ্গে কথা বলতে হয়।

–আমাকে কি মরতেই হবে?

–হ্যাঁ, রোমানিও সরকারের সামনে আমরা এই ঘটনাটা ঘটাব।

–তাহলে এখন কী হবে?

–তৈরি হোন। অ্যাঞ্জেলের হাতে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরও বোধহয় আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। তবে একটা কথা বলতে পারি, আপনি আর আপনার ছেলেমেয়েরা যদি পার্টি থেকে দুরে থাকেন…

–তাহলে? তাহলে কি আমরা বেঁচে যাব?

তাহলে হয় তো আর মরতে হবে না। কিন্তু অ্যাঞ্জেল আবার চেষ্টা করবে। আগামীকাল অথবা পরশুদিন।

কী করা যায়? ফ্যালফ্যাল করে ম্যারি মাইক এবং কর্নেল ম্যাককিনির মুখের দিকে তাকালেন।

কিন্তু সমস্যা সমাধানের পথ বুঝতে পারলেন না।

.

৩০.

কর্নেল ম্যাককিনির অফিস, এমব্যাসিতে। কয়েকজন রক্ষী দাঁড়িয়ে আছে, নির্দেশের অপেক্ষায়।

–আমি চাইছি, রেসিডেন্সের চারপাশে আরও বেশি প্রহরীর ব্যবস্থা করা হোক। রোমানিয়ানরা এ ব্যাপারে খুবই সচেতন। আওনেকে জানানো হয়েছে। সরকারি সেনারা এসে পড়বে। পাস ছাড়া কেউ ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। বোঝা গেল।

.

বাতাসে উত্তেজনা। স্পটলাইটের উজ্জ্বল আলো। আকাশ আলোকিত। অনেক বিশেষ প্রতিনিধি এসেছেন। পুলিশের প্রহরা। প্রেস থেকে সাংবাদিক এবং আলোকচিত্রীদের ভিড়। ফটো ভোলা হচ্ছে। প্রত্যেককে ভালোভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে।

একজন মেরিন অফিসার বললেন একটা আরশোলাও বোধহয় ভিড়ের মধ্যে ঢুকতে পারবে না।

স্টোরেজ রুম। কতক্ষণ ধরে আর বেলুন ফোলানো দেখা যায়। করপোরেল সিগারেট ধরাবার চেষ্টা করলেন।

অ্যাঞ্জেল চিৎকার করে বললেন- আগুনটা ধরাবেন না।

মেরিন তাকালেন। বললেন– কী হয়েছে? আপনি তো হিলিয়াম দিয়ে বেলুন ফোলাচ্ছেন, হিলিয়াম তো বিস্ফোরক নয়।

-কর্নেল ম্যাককিনি বলেছেন, এখানে আগুন জ্বালানো হবে না।

 মেরিন বললেন–ঠিক আছে, তিনি সিগারেট ফেলে দিলেন। জুতো দিয়ে ঘষে দিলেন।

অ্যাঞ্জেল সব ব্যাপারটা দেখছিলেন। যে-কোনো মুহূর্তেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারত। হিলিয়াম জ্বলে না, কিন্তু সিলিন্ডারে তো হিলিয়াম নেই। প্রথম ট্যাঙ্কে প্রোপেন আছে। দ্বিতীয়টাতে সাদা ফসফরাস, তিন নম্বর ট্যাঙ্কে আছে অক্সিজেন-অ্যাসিটিলিনের মিক্সচার। তবে অ্যাঞ্জেল কিছুটা হিলিয়ামও ভরেছেন। যাতে বেলুনগুলো ওপরে উঠতে পারে।

বাকিটুকু পোপেন, আর অন্যান্য মিশ্র পদার্থ। যখন বেলুনগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটবে, সাদা ফসফরাস ঝরে পড়বে। মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাবে। পঞ্চাশ গজের মধ্যে দেখা দেবে মৃত্যুর বিভীষিকা। ফসফরাস সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হতে শুরু করবে। গড়িয়ে পড়বে চারধারে। তাপ বাড়তে থাকবে। ফুসফুঁসে আঘাত লাগবে। গলা কাঁপতে থাকবে। আঃ, কী সুন্দর মৃত্যুর দৃশ্য!

অ্যাঞ্জেল তাকিয়ে থাকলেন ওই বর্ণোজ্জ্বল বেলুনগুলোর দিকে।

তারপর বললেন- আমার কাজ শেষ হয়ে গেছে।

করপোরেল জবাব দিলেন- ঠিক আছে, আমরা কী করব? বেলুনগুলো বলরুমে নিয়ে যাব? তাই তো?

চারজন গার্ডকে ডাকা হল। বলা হল, বেলুনগুলো বলরুমে নিয়ে চলো তো।

 বলরুমের দরজা খোলা হয়েছে।

অ্যাঞ্জেল বললেন- বাঃ, কী সুন্দর এই ঘরটি। অ্যাঞ্জেল চোখ বন্ধ করলেন। এক ঘণ্টা বাদে এই ঘরটার কোনো চিহ্ন থাকবে না।

অ্যাঞ্জেল বললেন- আমি কি একটা ছবি তুলব?

 করপোরেল বললেন– ঠিক আছে তুলুন।

 অ্যাঞ্জেল শেষবারের মতো তাকালেন। খুব সহজ, ছেড়ে দিন, আপনা থেকে উঠে যাবে।

–আমরা আপনার বেলুন ফাটাব না?

অ্যাঞ্জেল দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। রঙের খুনখারাপি লেগে গেছে। আহা, বুঝি এক রামধনু উড়ছে। ঠোঁটে হাসি। কী সুন্দর? এক হাজারটি বেলুন।

অ্যাঞ্জেল পকেট থেকে ক্যামেরা বের করলেন। বলরুমে এগিয়ে গেলেন।

করপোরেল বললেন- না, ভেতরে ঢুকতে পারবেন না।

–আমার মেয়েকে একটা ছবি দেখাব।

তাড়াতাড়ি করতে হবে।

 অ্যাঞ্জেল প্রবেশ পথের কাছে এসে দাঁড়ালেন। আহা, অ্যাম্বাসাডর ম্যারি অ্যাসলের দুটি সন্তান এগিয়ে আসছে। সময়টা চমৎকার হয়েছে।

করপোরেল তাকালেন অ্যাঞ্জেল তাড়াতাড়ি ক্যামেরাটাকে ঢাকা দেওয়া টেবিলে রেখে  দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে না। একটু বাদে কী হবে? প্রচণ্ড বিস্ফোরণ।

অ্যাঞ্জেল বললেন আমার কাজ হয়ে গেছে।

-ঠিক আছে। তাহলে চলুন।

পাঁচ মিনিট কেটে গেছে। অ্যাঞ্জেল রেসিডেন্সের বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। আলেকজানড্রু শাহিয়া স্ট্রিট ধরে এগিয়ে চলেছেন।

.

রাতটা ছিল গরম এবং অস্বস্তিকর। আমেরিকান এমব্যাসির রেসিডেন্স, এক উন্মত্ত গর্জনে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার উৎসাহী রোমানিও ঢোকার চেষ্টা করছে। পুলিশ তাদের আটকে দিচ্ছে। আলোগুলো জ্বলে উঠছে। অন্ধকার রাতের বুকে হাজার হাজার আলোর দীপ জ্বলছে বুঝি।

.

পার্টি শুরু হবে, ম্যারি ছেলেমেয়েকে ওপরতলায় নিয়ে গেলেন।

ম্যারি বললেন- এসো, কিছু কথা আছে।

ছেলেমেয়েরা বসে পড়েছে–চোখে ঔৎসুক্য। কী ঘটতে চলেছে তা এখনই বলা হবে।

ম্যারি বললেন– কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমাদের এখনই এখান থেকে চলে যেতে হবে।

বেথ জিজ্ঞাসা করল– মা, শুনেছি, কেউ তোমাকে মারতে চাইছে। তুমিও কি আমাদের সঙ্গে যাবে?

না ডার্লিং, ওই লোকটাকে ধরতে হবে।

 টিম কাঁদবার চেষ্টা করছিল- মা, তুমি একা কী করে ধরবে?

ম্যারি নিজেও জানেন না, শেষ পর্যন্ত কী হবে।

বেথ এবং টিমের মুখ সাদা হয়ে গেছে। ভীষণ ভয় পেয়েছে তারা। না, ওদের বয়স বড্ড কম, এখনই এই কঠিন বাস্তবের মুখে এনে কী লাভ?

ভালোভাবে সাজলেন ম্যারি, মনে হচ্ছে, যেন তার মৃত্যু পোশাক। পা অব্দি ঝালর দেওয়া লাল সিল্কের সিফন গাউন পরেছিলেন। হাই হিল লাল স্যান্ডাল। আয়নাতে প্রতিফলন। মুখখানা খড়ির মতো সাদা। বলল, বলল, হে আয়না, আজ রাতে আমি বেঁচে থাকব তো?

.

পনেরো মিনিট কেটে গেছে। ম্যারি, বেথ এবং টিম বলরুমে প্রবেশ করলেন। তারা এগিয়ে চলেছেন অতিথিদের দিকে। ম্যারি ছেলেমেয়ের দিকে ফিরে বললেন– হোমওয়ার্ক এগিয়ে আছে। ঘরেতেন। হায়, লাফিয়ে উদিকে ছড়িয়েতের চিহ্ন ও

ঘাড়ে হাত দিলেন। হায়, আমি জানি না। শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে?

হঠাৎ একটা সংঘর্ষ। ম্যারি লাফিয়ে উঠলেন। একজন ওয়েটার ট্রে ফেলে দিয়েছে। কাঁচের গ্লাস ভেঙে গেছে। কাঁচের টুকরো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এটাও কি অ্যাঞ্জেলের কোনো পরিকল্পনা? ম্যারি তাকালেন বলরুমের দিকে, মৃত্যুর চিহ্ন কোথায়?

ছেলেমেয়ে বলরুম থেকে চলে গেল। কর্নেল ম্যাককিনির হেপাজতে।

দুজন প্রহরীকে ডাকা হল। বলা হল, এখনই ওদের দূতাবাসে নিয়ে যাও। কখনও চোখের বাইরে রাখবে না।

বেথ জানতে চেয়েছিল– মা ভালো থাকবে তো?

 ম্যাককিনি অভয় দিয়েছেন- হ্যাঁ, ওঁনার কোনো ক্ষতি হবে না।

 মাইক শ্লেট তাকিয়ে থাকলেন বেথ আর টিমের দিকে।

এবার কিছু পরীক্ষা করতে হবে।

 আমাকে ছেড়ে যাবেন না, আমি আপনার সঙ্গে যাব।

–কেন?

 –আপনার সঙ্গে গেলে নিরাপদে থাকতে পারি।

মাইক বললেন- ঠিক আছে, আসুন।

অর্কেস্ট্রা বাজতে শুরু করেছে। অতিথিদের মধ্যে অনেকে আনন্দে নাচছেন। রিপোর্টাররা হাজির। আমেরিকান গান গাওয়া হচ্ছে। ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল। ওকলাহামা এবং সাউথ প্যাসিফিক। মাই ফেয়ার লেডি। উৎসাহ এবং উদ্দীপনা।

ম্যারি ঘাড় তুলে তাকালেন। চারপাশে শুধুই বেলুন, অন্তত এক হাজার। লাল-সাদা নীল। গোলাপি রঙের সিলিং-এ ঝুলছে। আহা, এত আনন্দ? মৃত্যু কি এর উন্মাদনা কাড়তে পারে?

আর্তনাদ করা উচিত? কেউ একজন সামনের দিকে এগিয়ে এসেছেন। তিনি দেখতে পেলেন, ওই ভদ্রলোকের হাতে একটা ছোট্ট সঁচ। অথবা? সকলের সামনে অ্যাঞ্জেল কি আমাকে হত্যা করবে? আমাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করবে? কী হবে আমি বুঝতে পারছি না।

সহসা ম্যারির মনে হল, তিনি উলঙ্গ হয়ে পড়েছেন। অ্যাঞ্জেলের ছবি সর্বত্র দেখা যাচ্ছে।

 ম্যারি জানতে চাইলেন– অ্যাঞ্জেল কি এখানে আছেন?

মাইক বললেন আমি জানি না, আপনি কি চলে যাবেন?

–না, আমাকে এই বাজিটা খেলতেই হবে।

কর্নেল ম্যাককিনিকে সামনে দেখা গেল– আমরা ভালোভাবে পরীক্ষা করেছি মাইক। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেলাম না। ব্যাপারটা আমাকে অবাক করেছে।

মাইক বললেন- আরও একবার পরীক্ষা করুন।

স্নিফার ডগকে কাজে লাগানো হয়েছে। ওপরতলা থেকে এমব্যাসি রুম পর্যন্ত তারা এঁকে এঁকে দেখছে।

মাইক বললেন– না, সন্দেহজনক কিছুই নেই।

–ওই দিকে কিছু থাকতে পারে? পেছনের সিঁড়ির দিকে তাকালেন ম্যাককিনি।

না, স্যার, ওখানে কেউ থাকবে না।

মাইকের মনে হল ওখানেও একবার যাওয়া দরকার

চারপাশে সশস্ত্র প্রহরা। তারা সকলেই কর্নেলকে স্যালুট করল। করিনা সাঁকোলি বিছানাতে শুয়ে আছেন। রোমানিয়া ভাষায় কী বই পড়ছেন। অসাধারণ সুন্দরী। আহা, এই মেয়েটি কি অ্যাঞ্জেলকে সাহায্য করছেন।

করিনা বললেন আমি পার্টিতে যোগ দিতে পারছি না, ব্যাপারটা অবাক লাগছে, তাই তো? আমায় এখানে থাকতে হবে। বইটা শেষ করব।

মাইক দরজা বন্ধ করলেন।

–ঠিক আছে তাই করুন।

তারা কিচেনে এলেন।

কর্নেল ম্যাককিনি জানতে চাইলেন- পয়জনের ব্যাপারটা ভাবতে হবে। অ্যাঞ্জেল কি বিষ প্রয়োগ করতে পারে?

মাইক মাথা নাড়লেন না, বুঝতে পারছি না।

–মাইক, অন্য জায়গাতে বিস্ফোরক রয়েছে? ব্যাপারটা অবাক লাগছে।

নিশ্চয়ই কোনো পন্থা আছে।

 ম্যাককিনি জানতে চাইলেন- কী?

–আমি জানি না, কিন্তু অ্যাঞ্জেল নিশ্চয়ই জানেন।

.

লাইব্রেরিতে খোঁজা হল, অফিসঘরে আসা হল, কিছুই পাওয়া যায়নি। তারা স্টোরেজ রুম পার হয়ে গেলেন। বেলুনগুলো সিলিং-এ উঠে গেছে।

করপোরেল বললেন- বাঃ, সুন্দর!

 মাইক দাঁড়ালেন করপোরেল, এই বেলুন কোথা থেকে এসেছে?

–ফ্রাঙ্কফুটের ইউ এস এয়ার, বেস থেকে স্যার।

 মাইক হিলিয়াম সিলিন্ডারের দিকে তাকিয়ে বললেন– এগুলো?

–একই জায়গা থেকে। আপনার অনুমতি নিয়ে তবেই আনা হয়েছে।

 মাইক কর্নেল ম্যাককিনির দিকে তাকিয়ে বললেন– চলুন, একবার ওপরে যাওয়া যাক।

তারা যাবার জন্য পা বাড়িয়েছেন।

করপোরেল বললেন- কর্নেল, যে ভদ্রলোককে আপনি পাঠিয়েছিলেন, সে টাইম ভুলে গিয়েছিল।

কর্নেল ম্যাককিনি অবাক হয়ে জানতে চাইলেন- কোন্ ভদ্রলোক?

–কেন, যিনি এসে বেলুনগুলোতে গ্যাস ভরলেন?

কর্নেল ম্যাককিনি মাথা নেড়ে বললেন- আমি তো কাউকে পাঠায়নি?

–কিন্তু এডি মালজ, উনি যে বললেন…

কর্নেল ম্যাককিনি বললেন– এডি মালজ? আমি তো তাকে ফ্রাঙ্কু যেতে বলেছি।

 মাইক করপোরেলের দিকে তাকালেন।

–লোকটাকে দেখতে কেমন?

–সত্যি কথা বলতে কী, সে এক ভদ্রমহিলা। মোটা বিচ্ছিরি মুখ। বিচ্ছিরি ভাষায় কথা বলছিল।

মাইক ম্যাককিনির দিকে তাকালেন। মনে হচ্ছে নেউসা মুনেজ।

-তাহলে?

মাইক চিৎকার করলেন নেউসা মুনেজই অ্যাঞ্জেল!

তিনি সিলিন্ডারের দিকে তাকালেন ওই ভদ্রমহিলা বেলুনগুলো ফুলিয়েছেন, তাই তো?

–হ্যাঁ, স্যার। ব্যাপারটা খুবই মজার। আমি সিগারেট ধরাতে চেয়েছিলাম, ভদ্রমহিলা চিৎকার করলেন। আমি বলেছিলাম, হিলিয়ামে তো আগুন ধরে না। উনি বলেছিলেন..

মাইক চিৎকার করে উঠলেন- বেলুন, বিস্ফোরক বেলুনের মধ্যে আছে।

কী করা যায়?

 –রিমোট কনট্রোলের সাহায্যে এগুলো ফাটানো হবে। কতক্ষণ আগে সে চলে গেছে?

–ঘণ্টা খানেক হবে।

.

 টেবিলের তলায় ঘড়িটা পড়ে আছে। শব্দ করে এগিয়ে চলছে। আর ছ-মিনিট, তারপরেই সেই সাংঘাতিক মুহূর্ত।

.

মাইক পাগলের মতো ছুটাছুটি করছেন। তিনি বলছেন– মেয়েটা কোথাও এটা রেখেছে। যে-কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটে যাবে। হায়, আমরা কেন খুঁজে পাচ্ছি না?

ম্যারি এগিয়ে এসেছেন।

মাইক বললেন– এই ঘরটা খালি করতে হবে। তাড়াতাড়ি। ঘোষণা করুন। আপনি ঘোষণা করবেন।

ম্যারি বললেন- কী হয়েছে?

–একটা ছোট্ট খেলনা, আমরা খুঁজছি।

–ওই বেলুনগুলো সাংঘাতিক। ওইদিকে তাকাবেন না।

 ম্যারির সমস্ত চোখে মুখে আতঙ্ক।

–আমরা ওগুলোকে নামাতে পারব না?

মাইকের চিৎকার– এক হাজার, একটি একটি করে নামিয়ে আনার আগেই ঘটনা ঘটে যাবে।

মাইক, আমি একটা পন্থা জানি। দুজন ম্যারির দিকে তাকালেন।

–এই ছাদটাকে খুলে ফেলা যায়।

কীভাবে?

 –একটা সুইচ আছে।

–না, এখন বিদ্যুতের যন্ত্রপাতিকে হাত দেওয়া যাবে না। আগুন জ্বলে উঠতে পারে। আমরা কি হাতে হাতে খুলতে পারি না?

–এই ছাদটাকে মাঝামাঝি ভাগ করা যায়। প্রত্যেক ভাগে আলাদা আংটা লাগানো আছে।

দুজন মানুষ পাগলের মতো ওপরের সিঁড়ির দিকে উঠে চলেছেন। দেখলেন, হ্যাঁ, খোলার ব্যবস্থা আছে। একটা কাঠের মই ছিল। সেটার মাধ্যমে কাজ করতে হবে।

আর একটা নিশ্চয়ই আছে।

কাজ শুরু হল। কীভাবে এই ভয়ংকর বেলুনগুলোকে বাইরে আনা যায়, বুঝতে পারা যাচ্ছে না। যে-কোনো মুহুতে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। পড়ে যাবার সম্ভাবনা।

মাইক কর্নেলকে বললেন– শুরু করতে হবে, আস্তে আস্তে, খুব ধীরে সুস্থে কিন্তু?

–ঠিক আছে।

.

আর দু মিনিট, দু মিনিট বাদেই বিস্ফোরণ ঘটবে।

.

মাইক কর্নেল ম্যাককিনিকে দেখতে পাচ্ছেন না। শুধু বেলুন আর বেলুন। ধীরে ধীরে, খোলা গেল, একটুখানি মুখ। কয়েকটা বেলুন বাইরে বেরিয়ে এসেছে। আরও একটু মুখ খোলা গেল। বেলুনগুলো বাতাসে ভাসতে শুরু করেছে। নাচতে নাচতে এগিয়ে চলেছে নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকে। আঃ, এবার বোধহয় মুক্তির আনন্দ।

মানুষজন রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে।

পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড বাকি আছে। আর দুটো-একটা এখনও আছে। মাইক এগিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন। কতটুকু সময় আছে কে জানে?

শেষ বেলুনটা বেরিয়ে গেল। উঁচু থেকে আরও উঁচুতে সেগুলো চলে গেছে। আকাশের বুকে অসাধারণ জলছবি।

চিৎকার, আকাশের বুকে আলোর খেলা। চৌঠা জুলাইয়ের আনন্দ। এর আগে কখনও এভাবে হয়নি। নীচে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা আনন্দে হাততালি দিয়েছে।

মাইক তাকিয়ে থাকলেন। নিঃশেষ হয়ে গেছেন তিনি। ক্লান্ত। ব্যাপারটা তাহলে এইভাবে শেষ হল।

.

শুরু হল, শুরু হল উৎসবের শেষ প্রহর।

ফ্রয়েড বেকার, সেক্রেটারি অফ স্টেটস, রক্ষিতার সঙ্গে বিছানাতে শুয়ে ছিলেন। দরজাটা খুলে গেল। চার জন প্রবেশ করেছে।

কী হচ্ছে কী?

বলা হল–মিঃ সেক্রেটারি, আপনাকে গ্রেপ্তার করা হল।

 ফ্রওয়েড বেকার অবিশ্বাসের চোখে তাকালেন– তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো? কে পাঠিয়েছে?

ফর!

.

জেনারেল অলিভার ব্রুকস ওডিন, ক্লাবে বসে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছিলেন। এফ বি আই এর দুজন এজেন্ট তার কাছে এলেন–তাকে গ্রেপ্তার করলেন।

.

স্যার আলেক্স।

 হোয়াইট ক্লাবে বসে পার্লামেন্টের ডিনারে ব্যস্ত ছিলেন।

বলা হল- স্যার আলেক্স, কয়েকজন ভদ্রলোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার সঙ্গে কথা আছে।

.

প্যারিসে আর একজনকেও ধরা হল।

 কলকাতা। বিষ্ণু লিমুজিনে বসে ছিলেন। তাকে জেলে পাঠানো হল।

রোম, ক্যামেরা ডেই ডেপুটি ফায়ার, তুর্কিক্সবার্গে ব্যস্ত ছিলেন, তিনি গ্রেপ্তার হলেন।

এইভাবে কাজ এগিয়ে চলল। মেস্কিকো, আলবানিয়া, জাপান, পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন।

শেষ অব্দি আমরা কি জিততে পারব?

.

এডি মালজকে গুলি করে হত্যা করা হল। তিনি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন।

.

পেট কোনরস আত্মহত্যা করলেন। এফবিআই এজেন্টরা তার ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন।

.

ম্যারি এবং মাইক শ্লেট, বাবল রুমে বসে আছেন। সারা পৃথিবী থেকে সংবাদ আসছে। উত্তেজিত সংবাদ। হৃদয়বিদারক সংবাদ।

মাইক টেলিফোনে কথা বলছেন ভিলেন, উনি দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের একজন এম পি।

রিসিভার নামিয়ে রাখলেন। ম্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন- সকলকেই ধরা সম্ভব হয়েছে। কনট্রোলার আর অ্যাঞ্জেল অর্থাৎ নেউসা মুনেজ এখনও ধরা পড়েনি।

–কেউ কি জানত যে অ্যাঞ্জেল একজন ভদ্রমহিলা? ম্যারি অবাক হয়ে গেছেন।

–না, সে সবাইকে বোকা বানিয়েছে।

কনট্রোলারের খবর কী? কেউ তাকে চোখে দেখেনি। কনট্রোলার টেলিফোনের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়ে থাকেন। অসাধারণ সংগঠক।

.

অ্যাঞ্জেল অবাক হয়েছেন। প্রচণ্ড রেগে গেছেন তিনি। আহত রক্তাক্ত জন্তুর মতো ঘোরাফেরা করছেন। কোথাও একটা গোলমাল হয়েছে।

ওয়াশিংটনে প্রাইভেট নাম্বারে ফোন করলেন। ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর- অ্যাঞ্জেল এত রাগ করার কী আছে? কোথাও ভুল হয়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

-না, আর কিছুই ঠিক হবে না। ব্যাপারটা শেষ হয়ে গেল।

 তার মানে কী হবে এখন?

.

বাবলরুমে প্রাইভেট ফোন বেজে উঠেছে। ম্যারি ধরলেন, স্টানটন রজার্স।

–মারি, তুমি ভালো আছো তো? তোমার ছেলেমেয়ে?

–স্টান, আমরা সবাই ভালো আছি।

–ভগবানকে ধন্যবাদ। কী হয়েছিল বলো তো?

 –অ্যাঞ্জেল, অ্যাঞ্জেল রেসিডেন্সটা উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল।

তার মানে?

না, অ্যাঞ্জেল এক মহিলা, তার আসল নাম নেউসা মুনেজ।

দীর্ঘক্ষণের নীরবতা নেউসা মুনেজ? অ্যাঞ্জেলের ওই মোটা পৃথুলা উপপত্নীটি?

— ম্যারির মনে হল, ঠিক কথা স্টান।

ম্যারি, তোমার জন্য আমি কী করতে পারি?

–না, আমি এখন আমার ছেলেমেয়েকে দেখতে যাচ্ছি। পরে কথা বলব।

 ম্যারি ফোনটা নামিয়ে দিলেন। মাইক তাকিয়ে আছেন– কী হয়েছে?

ম্যারি মাইকের দিকে তাকালেন। তিনি বললেন- হ্যারি লানজ-ই একমাত্র জানতেন নেউসা মুনেজ কেমন দেখতে, তাই তো?

-হ্যাঁ।

 –এইমাত্র স্টানটন রজার্স বলে দিলেন, মুনেজের চেহারাটা কেমন?

.

অ্যাঞ্জেলের প্লেন ডালাস এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করছে। উনি টেলিফোন বুথের দিকে ছুটে গেলেন। কনট্রোলারের প্রাইভেট নাম্বারে ফোন করলেন।

পরিচিত কণ্ঠস্বর, আমি স্টানটন রজার্স বলছি।

.

দু-দিন কেটে গেছে। মাইক, কর্নেল ম্যাককিনি এবং ম্যারি বসে আছেন এমব্যাসির কনফারেন্স রুমে। এইমাত্র এক ইলেকট্রনিক্স এক্সপার্টের কাজ শেষ হয়েছে।

মাইক বললেন- কনট্রোলার আর স্টানটন রজার্স একই ব্যক্তি।

-কিন্তু উনি আমাকে হত্যা করতে চাইবেন কেন? উনি তো প্রথমেই চেয়েছিলেন, আমি যেন এই পদে না বসি। একথা উনি নিজে আমাকে বলেছেন।

মাইক বলতে থাকলেন, যখন উনি দেখলেন, ব্যাপারটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন এমন বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন।

ম্যারি কাঁধ ঝাঁকিয়ে চললেন কীভাবে উনি এই ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন?

-স্টানটন রজার্স তার প্রিয় বন্ধু পল এলিসনকে ক্ষমা করতে পারেন নি। স্টানটনের মনে হয়েছিল তাকে ঠকানো হয়েছে। তিনি প্রথমে উদারনৈতিক হিসেবে তার রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেন। এক প্রতিক্রিয়াশীল মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। মনে হয় তার ওপর ওই মহিলার প্রভাব ছিল অপরিসীম।

–ওঁনাকে পাওয়া গেছে কী?

না, উনি কোথায় যে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। কিন্তু বেশিদিন এইভাবে লুকিয়ে থাকতে পারবেন না।

স্টানটন রজার্সের কাটা মাথাটা পাওয়া গেল ওয়াশিংটনের এক আবর্জনার স্তূপের মধ্যে। দুদিন বাদে। তার চোখদুটো বীভৎসভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

.

৩৩.

প্রেসিডেন্ট পল এলিসন হোয়াইট হাউস থেকে বললেন- আমি আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করব না।

–আমি দুঃখিত মিঃ প্রেসিডেন্ট, কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি আর পারছি না।

–ম্যারি, আমি জানি কী ভীষণ সংকটের মধ্যে দিয়ে আপনার সময় কেটেছে। কিন্তু আমার একান্ত অনুরোধ আপনি রোমানিয়াতে গিয়ে আবার যোগ দিন।

না, আমি কখনোই তা করব না। ম্যারি ভাবতে থাকেন। এবার শান্ত জীবন চাই।

মনের মধ্যে ভাবনা, অনেক কথা মনে পড়ে গেল। এডওয়ার্ডের কথা, কীভাবে এডওয়ার্ডকে হত্যা করা হয়েছে। লুইসের কথা, তার মৃত্যু। অ্যাঞ্জেলের কথাও মনে পড়ে গেল।

যদি আমি রোমানিয়াতে যাই তাহলেও আগের মতো কাজ করতে পারব না। ম্যারি ভাবলেন, প্রথম যখন এসেছিলাম, তখন আমি ছিলাম একেবারে অনভিজ্ঞ। অভিজ্ঞতা আমাকে আরও প্রাজ্ঞ করেছে। না, আমি অনেক ভালো কাজ করেছি। হানা মারফিকে জেলখানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। আওনেস্কুর ছেলেকে বাঁচিয়েছি। কয়েক হাজার ইহুদির কাছেও নতুন জীবনের ঠিকানা পৌঁছে দিয়েছি।

-হ্যালো, আপনি এসেছেন?

 মাইক শ্লেট চেয়ারে বসে আছেন।

অসাধারণ কাজ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বললেন, আমরা সকলে আপনার জন্য গর্বিত। আপনি কাগজ দেখেছেন?

না তো, কী হয়েছে?

তিনি তাকালেন প্রেসিডেন্টের দিকে মিঃ প্রেসিডেন্ট, আমি হয়তো কাজ করতে রাজী আছি, কিন্তু আপনি কথা দিন করিনা সোকোলিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবেন।

–আমি দুঃখিত ম্যারি, এটা আমরা করতে পারি না। এই ব্যাপারটা করলে আওনেস্কু রাগ করবেন।

–আমি আওনেস্কুকে চিনি, আওনেস্তু ওই মহিলাকে নানাভাবে ব্যবহার করছেন। দীর্ঘক্ষণের নীরবতা- কীভাবে আপনি ওকে রোমানিয়া থেকে এখানে আনবেন।

–আমি কারগো প্লেনের সাহায্যে।

 –ঠিক আছে। আমি দেখছি।

ম্যারি তাকালেন মাইক শ্লেটের দিকে না, এটা করতেই হবে। আর মাইক শ্লেট এখানে আমার সঙ্গে থাকবেন, ওঁনাকে আমার দরকার আছে।

মাইকের মুখে হাসির টুকরো।

প্রেসিডেন্ট আবার বললেন- শ্লেটকে আমেরিকায় পাঠাতে হবে, ওর জন্য অন্য কাজ আছে।

ম্যারি ফোনে হাত দিলেন, কোনো কথা বলতে পারছেন না।

প্রেসিডেন্ট বললেন- অন্য কাউকে পাঠাব। আপনি বলুন, ওঁর বদলে কাকে দরকার। নীরবতা।

—-ম্যারি, মাইকের এখানে কাজ আছে।

ম্যারি মাইকের দিকে তাকালেন।

 প্রেসিডেন্ট বললেন– ম্যারি, হ্যালো, এটা কিন্তু একধরনের ব্ল্যাকমেল। ম্যারি তখনও কথা বলতে পারছেন না।

শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বললেন- ঠিক আছে, আমি কথা দিচ্ছি মাইককে আবার পাঠিয়ে দেব। কিন্তু কিছুদিন বাদে।

ম্যারির মনে হল, তার হৃদয়ে আলো জ্বলে উঠেছে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মিঃ প্রেসিডেন্ট। আমি অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করতে রাজি আছি।

প্রেসিডেন্ট বললেন ম্যাডাম আম্বাসাডর, আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা আছে। সমস্যার বাইরে থাকার চেষ্টা করবেন।

লাইনটা কেটে গেল।

 ম্যারি রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন, মাইকের দিকে তাকালেন।

–আপনি এখানেই থাকবেন, আমার সামনে আর কোনো সমস্যা নেই।

-বাঃ! হ্যাঁ, প্রেসিডেন্ট বলেছেন! আমি অনেক কথাই আপনাকে বলেছিলাম, তার জন্য দুঃখিত।

ম্যাডাম অ্যাম্বাসাডর। আসুন, আমরা কফি খেতে খেতে আলোচনা করি।

.

 শেষ পর্ব

অ্যালিস পাহাড়ে বসন্ত, অস্ট্রেলিয়া।

চেয়ারম্যান বলছিলেন– হ্যাঁ, একটা ক্ষতি হয়ে গেছে। কিন্তু ঘটনা আমাদের অভিজ্ঞ করেছে। আমাদের সংস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। পৃথিবীর নানা জায়গাতে আমরা অফিস খুলব। দেখা যাক, আপনারা কে কে আমাদের সঙ্গে আছেন। আমি সংকেত নামগুলো ডাকছি। আপনারা হাত তুলবেন।

–অ্যাপ্রোডাইট?

 ইয়েস।

এথেনে?

–ইয়েস।

সাইবেলে?

ইয়েস।

-সেলেনে?

আমাদের আগের কনট্রোলারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

–হ্যাঁ অথবা না বলুন।

না।

মাইক?

–ইয়েস।

 –নেমেসিস?

–ইয়েস।

–তাহলে এই প্রস্তাব পাশ করা হল। এবার আমরা আরও সতর্ক হয়ে উঠব। আজ থেকেই আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। হ্যাঁ, অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে। এবার আমরা সফল হবই, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।