প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড
তৃতীয় খণ্ড

৪০. তন্ত্রের দেহতত্ব

তন্ত্রের দেহতত্ব

সম্প্রদায়-বিশেষের পরিভাষায়, যোগ-সাধনার এই তান্ত্রিক সংস্করণটির নাম কায়াসাধনা(৬৬৩)। অতএব, তান্ত্রিক যোগসাধনার আলোচনা থেকে স্বভাবতই দেহতত্ত্বের আলোচনায় গিয়ে পড়তে হয়। লোকায়তর উৎস সন্ধানে এই দেহতত্ত্বের আলোচনাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আমরা ইতিপূর্বেই দেখেছি, মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লোকায়তিকের সঙ্গে তান্ত্রিক বা কাপালিকাদির যে যোগাযোগের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, তার ভিত্তি বলতে শুধুমাত্র এইটুকুই নয় যে, পুরোনো পুঁথিপত্রে উভয়ের মধ্যে একটা সম্পর্ক স্বীকৃত হয়েছে। তাছাড়াও, দার্শনিক তত্ত্বের দিক থেকেও লোকায়তিক ও তান্ত্রিকাদি ধ্যানধারণার মধ্যে যোগাযোগটা অস্পষ্ট নয়। লোকায়ত বলতে বোঝায় বস্তুবাদ, দেহাত্মবাদ; অর্থাৎ কিনা, আত্মা নেই, ঈশ্বর নেই, পরকাল নেই, পরলোক নেই, দেহই হলো চরম ও সার সত্য। আবার, দেহবাদই হলো তান্ত্রিকাদিবিশ্বাসের প্রাণবস্তু,—যদিও অবশ্যই আধুনিক বিদ্বানের আধুনিক ধ্যানধারণার প্রভাবে ওই দেহতত্ত্বের উপর বস্তুবাদ-বিরোধী —এবং অতএব বিজাতীয়—আধ্যাত্মিক ধ্যানধারণা আরোপ করে বিষয়টিকে কৃত্রিমভাবে রহস্যময় করে তুলেছেন।

দেহতত্ত্বের মূল কথাটা কী? এ-বিষয়ে যোগ্যতম আলোচনা পাওয়া যায় শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়-এর রচনায়। আমরা স্বভাবতই দেহতত্ত্বের মূল কথাটির বর্ণনায় তারই রচনা অনুসরণ করবো। কিন্তু তার আগে আমাদের পক্ষে আদিম কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাসের মূল কথাটুকু মনে রাখবার প্রয়োজন আছে। কেননা, শুধুমাত্র এই বিশ্বাসটির দিক থেকেই তন্ত্রসাধনার অপরাপর দিকগুলির মতোই দেহতত্ত্বকেও বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝতে পারা সম্ভব। তা না হলে, তন্ত্রের দেহতত্ত্ব আমাদের কাছে এক দুর্বোধ্য ও এমনকি উদ্ভট কল্পনা বলে প্রতীয়মান হবে। বস্তুত, শ্রদ্ধেয় পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই অনুভব করেছেন(৬৬৪) যে, তাঁর অমন প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা সত্ত্বেও আধুনিক পাঠকদের কাছে তন্ত্রের দেহতত্ত্ব ‘গাঁজাখোরি’ মনে হতে পারে। আমাদের যুক্তি অনুসারে তার কারণ, প্রাচীন মানুষের সঙ্গে আধুনিক মানুষের অনেক তফাত,—প্রাচীন বিশ্বাসের সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানের অনেক তফাত। এবং তান্ত্রিক দেহতত্ত্বের মধ্যে প্রাচীন বিশ্বাসের স্বাক্ষর রয়েছে বলেই আধুনিক জ্ঞানের মাপকাঠিতে তার মূল্য প্রতিপন্ন করবার বদলে আদিম মানুষদের বিশ্বাস সংক্রান্ত সাধারণভাবে জানতে-পারা তথ্যের দিক থেকেই দেহতত্ত্বের মুল কথাটা বোঝবার আর বিচার করবার চেষ্টা করাই বাঞ্ছনীয়। দুঃখের বিষয়, শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টাটা ঠিক এর বিপরীত। তিনি আধুনিক মনের কাছ থেকে এই আদিম বিশ্বাসটিরই সমর্থন খুঁজছেন এবং যুক্তিতর্কের দিক থেকে এ-সমর্থন অসম্ভব বলেই তিনি “সদ্‌গুরুর কৃপায় সাধনার এবং আরাধনার অপূৰ্ব্ব রসাস্বাদনে ধন্য”(৬৬৫) হবার কথা বলছেন। বলছেন(৬৬৬), “কেবল ভাষার সাহায্যে ঠিকমত দেহতত্ত্ব এবং রসতত্ব বুঝান যায় না; সঙ্গে সঙ্গে সাধনশীল না হইলে উহার মর্ম বুঝা কঠিন।”

পুরাণ তন্ত্রে প্রযুক্ত নানা শব্দের পারিভাষিক অর্থ আমাদের জানা নাই। তাই পুরাণ তন্ত্রের অনেক কথা এখন আমাদের গাঁজাখোরি বলিয়া মনে হয়। উহার যে কোনটাই গাঁজাখোরি নহে–উদ্ভট, অস্বাভাবিক বা অসম্ভব নহে, তাহা দেহতত্ত্ববিদ্‌ পণ্ডিতগণ জানিতেন এবং বুঝাইয়া দিতে পারিতেন(৬৬৭)।

আমাদের মন্তব্য হলো, স্বয়ং পাঁচকড়িবাবু পুরোনো তন্ত্রের পারিভাষিক অর্থ যতোখানি উদ্ধার করেছেন, এবং তারই উপর নির্ভর করে তান্ত্রিক দেহতত্ত্বের যে-বর্ণনা দিয়েছেন, তার মূল্য কম নয় এবং দেহতত্ত্ববিদ্‌ পণ্ডিত হিসেবে তাকে পাওয়াও আমাদের পক্ষে কম সৌভাগ্যের কথা নয়। কিন্তু সেই সঙ্গেই আমরা বলতে চাই, মহাপুরুষদের সাধনালব্ধ গূঢ় অনুভূতির দোহাই দিয়ে তার পক্ষে পুরোনো তন্ত্রকে আধুনিক রুচি আর বুদ্ধির কাছে সত্যগর্ভ বলে প্রতিপন্ন করবার চেষ্টাটাই বরং এক উদ্ভট, অসম্ভব এবং আজগুবি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। “কেবল ভাষার সাহায্যে ঠিকমতো দেহতত্ত্ব এবং রসতত্ত্ব বুঝানো যায় না।” আমাদের যুক্তিও নিশ্চয়ই তাই। কেননা, তন্ত্র প্রাচীন। এবং প্রাচীন বলেই তন্ত্রের তত্ত্বকে বুঝতে হলে ভাষাগত অর্থনির্ণয়ের পরও প্রাচীন মানুষদের বিশ্বাস সংক্রান্ত সাধারণভাবে জানতে-পারা তথ্যের সাহায্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই দেহতত্ত্বের ভাষাগত অর্থ হিসেবে শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের যে-তথ্য দিয়েছেন আমরা তা বোঝবার চেষ্টা করবো প্রাচীন মানুষদের বিশ্বাস-সংক্রান্ত সাধারণভাবে জানতে-পারা তথ্যের আলোয়।

 

তন্ত্রের সাধন-পদ্ধতি এবং তন্ত্রের দেহতত্ত্ব একই সূত্রে বাঁধা। আমরা ইতিপূর্বে কৃষিকেন্দ্রিক জাদুঅনুষ্ঠানের দিক থেকেই তান্ত্রিক সাধনার প্রধান অঙ্গগুলি বোঝবার চেষ্টা করেছি। অতএব, আদিম কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাসের দিক থেকেই আমরা তন্ত্রের দেহতত্ত্বকেও বোঝবার আশা করতে পারি। তাই, শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুসরণ করে দেহতত্ত্বের বর্ণনা দেখবার আগে ওই কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাসের মূল কথাটি মনে রাখা প্রয়োজন।

কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাসের মূল কথাটা কী? মানবীয় প্রজননের সাহায্যে বা সংস্পর্শে প্রকৃতির উৎপাদনকে আয়ত্তে আনবার পরিকল্পনা। তাহলে, এই বিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করলে প্রকৃতি সংক্রান্ত কোন তত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়? স্বভাবতই, সে-তত্ত্ব অনুসারে মানবীয় প্রক্রিয়া আর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া সমজাতীয়, উভয়ের মধ্যে কোনো গুণগত পার্থক্য নেই। কেননা, সন্তান-উৎপাদনের রহস্য আর শস্য-উৎপাদনের রহস্য যদি একই মূল রহস্যের দুটি দিক না হয় তাহলে একটির সাহায্যে অপরটিকে আয়ত্তে আনবার পরিকল্পনা কী করে সম্ভবপর হবে? তাই কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাসের মূলে এই তত্ত্বটি অন্তর্নিহিত থাকতে বাধ্য যে, মানবীয় ব্যাপারকে সম্যকভাবে চিনতে পারলে, বা বুঝতে পারলে, প্রকৃতির রহস্যকেও বুঝতে পারা যাবে, চিনতে পারা যাবে।

কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাসের মধ্যে এ-তত্ত্ব বীজাকারে আছে। এবং ঠিক এই তত্ত্বটিই নানা রকম শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে, নানানভাবে জটিল থেকে জটিলতর হয়ে তন্ত্রের দেহতত্ত্বে পরিণত হয়েছে। তন্ত্রের দেহতত্ত্বের মূল কথা হলো, মানবদেহকে বিশ্লেষণ করেই, মানবদেহ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেই, আমরা বিশ্বপ্রকৃতির রহস্যকেও বুঝতে পারবো, কেননা মানবদেহের রহস্য আর বিশ্বপ্রকৃতির রহস্য আসলে সমজাতীয়—উভয়ের মধ্যে কোনো গুণগত পার্থক্য নেই।

দেহতত্ত্বের ব্যাখ্যায় শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়(৬৬৯) বলছেন :

“যাহা আছে দেহভাণ্ডে, তাহাই আছে ব্ৰহ্মাণ্ডে। অর্থাৎ, “ব্রহ্মাণ্ডে যে গুণা: সন্তি তে তিষ্ঠন্তি কলেবরে”। ইহাই সকল তন্ত্রের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত অবলম্বন করিয়াই সকলে তন্ত্রতত্ত্বের ব্যাখ্যা করিয়াছেন। তন্ত্রের এই ব্যাখ্যা পুরাণাদি নানা শাস্ত্র অবলম্বন করিয়াছে।…
তন্ত্রের প্রায় সকল সাধনা ও আরাধনার দুইটা দিক আছে; একটা বাহিরের বা বিশ্বতত্ত্বের দিক, আর একটা ভিতরের বা দেহতত্ত্বের দিক। সকল সিদ্ধিরই বিকাশের দুইটা দিক আছে, একটা জগতের বা বাহ প্রকৃতির দিক, অপরটা ভিতরের বা দেহগত প্রকৃতির দিক। তুমি আত্মশক্তি বিকাশের দ্বারা সিদ্ধিলাভ করিতে পার, অথবা বাহ্যশক্তি আয়ত্ত করিয়া আত্মশক্তির উন্মেষ ঘটাইতে পার।……তন্ত্র বলিতেছেন যে, যখন ব্রহ্মাণ্ড ও দেহভাণ্ড একই পদ্ধতি অনুসারে, একই রকমের উপাদানের সাহায্যে নির্মিত, উভয়ের মধ্যে একইভাবে নানা শক্তির খেলা হইতেছে, তখন দেহগত শক্তির উন্মেষ ঘটাইতে পারিলে ব্রহ্মাণ্ডের শক্তি তোমার অনুকূল, সহায়ক হইবে।…
এ দেশের সিদ্ধগণ বলেন যে, মনুষ্যদেহের মতন পূর্ণাবয়ব যন্ত্র আর নাই; এমন যন্ত্র আর কেহ গড়িতে পারে না, এমন যন্ত্র নির্মাণ করাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নহে। অতএব এই যন্ত্রস্থ সকল গুপ্ত এবং সুপ্ত শক্তির উন্মেষ ঘটাইতে পারিলে অন্য কোন স্বতন্ত্র যন্ত্র ব্যতিরেকে তোমার সকল বাসন পূর্ণ হইতে পারে।… প্রকৃতির সকল গুপ্ত শক্তিসমূহের সহিত দেহের গুপ্ত বা সম্মূঢ় শক্তির কেমন ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে। কি ভাবে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে বা কি ভাবে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ স্থাপন করিতে পারা যায়, ইহা যে সাধনার ফলে জানা যায় বা আয়ত্তগত করিতে পারা যায়, তাহাই তন্ত্রসাধনা। এই তন্ত্রসাধনার মূল হইল দেহতত্ব। তাই দেহের কথা লইয়া তন্ত্র আগাগোড়া ব্যস্ত”।

আধুনিক বিদ্বানের এ-বিষয়ে দ্বিমত হবেন না যে তান্ত্রিক সম্প্রদায়গুলিতে বিশ্বব্ৰহ্মাওকে মানবদেহের বৃহত্তর সংস্করণ হিসেবেই চেনবার প্রচেষ্ট দেখা যায়। সহজিয়া সাহিত্য-প্রসঙ্গে অধ্যাপক শশীভূষণ দাসগুপ্ত(৬৭০) বলছেন, এ-সাহিত্যে মানবদেহের উপরই অত্যধিক গুরুত্ব আরোপণ করা হয়, ধরে নেওয়া হয় যে, মানবদেহের মধ্যেই ব্ৰহ্মাণ্ড বীজাকারে বর্তমান আছে; তান্ত্রিক যোগসাধনা-প্রসঙ্গে সর্বত্রই এই তত্ত্বের গুরুত্ব দেখা যায় এবং সহজিয়াদের বেলায় যেহেতু ওই সাধনাই হলো প্রধান কথা সেইহেতু সহজিয়া সাহিত্যে প্রধানতম তত্ত্ব বলতে এই দেহতত্ত্বই। অধ্যাপক মণীন্দ্রমোহন বসু(৬৭১) যদিও সহজিয়াদের সাধন-পদ্ধতিকে তান্ত্রিক আখ্যা দিতে সম্মত নন, তবুও তিনি অন্তত এ-কথা মানছেন যে, “শরীরতত্ত্ব ব্যাখ্যা করিতে সহজিয়ারা তন্ত্রের অনুসরণ করিয়াছেন সত্য”। “শরীরের মধ্যে বিবিধ নাড়ী-চক্রাদির কল্পনা করিয়া তান্ত্রিকগণ শরীরতত্ত্ব ব্যাখ্যা করিয়াছেন। সহজিয়ারা তান্ত্রিক মত অনুসরণ করিয়া তদনুরূপ নাড়ী এবং চক্রের স্থানে সরোবরাদির কল্পনা করিয়াছেন। এই বিষয়ে তাহারা মূলত তান্ত্রিকগণের নিকট ঋণী, যদিও সরোবরের কল্পনায় তাহারা কিছু নূতনত্বের সন্ধান দিয়াছেন”। আমরা যেহেতু ইতিপূর্বেই দেখাবার চেষ্টা করেছি যে, একই আদিম বিশ্বাস থেকে শাক্ত তন্ত্র, বৌদ্ধ তন্ত্র, সহজিয়া প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছিলো সেইহেতু এই জাতীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন মৌলিক তত্ত্বের মিল আছে, তাই আমাদের বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য হওয়া উচিত। ওই জাতীয় একটি মৌলিক বিষয় বলতে যে দেহতত্ত্বষ্ট, এ-কথায় আধুনিক বিদ্বানের দ্বিমত হবেন না। অতএব এই দেহতত্ত্ব শাক্ত বা বৌদ্ধ তন্ত্রেরই হোক, কিংবা সহজিয়া-সাহিত্যেরই হোক,—আমাদের যুক্তির দিক থেকে তা একই আদিম বিশ্বাসের বিবিধ প্রকাশমাত্র। বস্তুত, কুলার্ণব প্রভৃতি তান্ত্রিক পুঁথিতে দেহতত্ত্বের যে-পরিচয় পাওয়া যায় তা উত্তরযুগের আধ্যাত্মিক ধ্যানধারণার সংমিশ্রণের ফলে জটিল রূপ ধারণ করেছে। অপরপক্ষে, শ্রমনিরত সরল মানুষদের মুখে লোকসঙ্গীত হিসেবে টিকে থাকবার সময় দেহতত্ত্বের কথাটাও অনেক সরল ও অকৃত্রিমভাবে থাকবার সুযোগ পেয়েছে। সহজিয়ারা বলছে,

সকলের সার হয় আপন শরীর।
নিজ দেহ জানিলে আপনে হবে স্থির ॥(৬৭৩)

কিংবা,

ভজনের মূল এই নর বপু দেহ।
আপন জানিলে তবে সহজ বস্তু জানে ॥(৬৭৪)

কিংবা,

আপন শরীর তত্ত্ব জানে যেই জন।
সেই ত পরম যোগী শাস্ত্রের বচন ॥(৬৭৫)

ইত্যাদি ইত্যাদি।

এ-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, আধুনিক মনের কাছে এ-জাতীয় বক্তব্য অত্যদ্ভূত ও এমন কি অর্থহীন বলেই প্রতীয়মান হয় এবং সন্ধ্যা-ভাষার দুরূহতাই তার একমাত্র কারণ নয়। তাই প্রশ্ন ওঠে, দেহতত্ত্বকে আমরা কী ভাবে বোঝবার চেষ্টা করবো? আধুনিক বিদ্বানদের মধ্যে অনেকেই দেহতত্ত্বের মধ্যে একটা নিগূঢ় আধ্যাত্মিক সত্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিষয়টিকে আরো রহস্যময় করে তুলেছেন। অপরপক্ষে, এর মধ্যে কোনো গৃঢ় সত্যের সন্ধান না করে যদি সহজ সরল অর্থেই একে গ্রহণ করা যায় তাহলে আমাদের কাছে প্রধান প্রশ্ন হবে, কোনো এককালে—বা মানবোন্নতির কোনো এক পর্যায়ে—এ-জাতীয় আপাত-অদ্ভূত ধ্যানধারণাই মানুষের কাছে চরম সত্য বলে কী করে প্রতীত হয়েছিলো? এবং আমাদের যুক্তি হলো, কৃষি-কর্মের অপেক্ষাকৃত প্রাথমিক পর্যায়ের আচার-অনুষ্ঠানগুলি পরীক্ষা করলে যে-বিশ্বাসের পরিচয় পাওয়া যায় তারই দিক থেকে এই দেহতত্ত্বের উপর আলোকপাত হওয়া সম্ভব। কেননা এই বিশ্বাস অনুসারে, মানব-রহস্য ও প্রকৃতি-রহস্যের মধ্যে কোনো গুণগত পার্থক্য নেই।

 

তন্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্বকে পরীক্ষা করলে এই কথাটি আরো স্পষ্টভাবে বোঝবার অবকাশ হতে পারে। প্রথমত মনে রাখা প্রয়োজন, তন্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্ব ও দেহতত্ত্ব একই সূত্রে বাধা। শ্ৰীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়(৬৭৬) যেমন বলছেন, “দেহতত্ত্ব না বুঝিতে পারিলে তন্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্ব বুঝা যায় না। কারণ তন্ত্রের সিদ্ধান্ত এই যে, জীবদেহ—বিশেষত মানবদেহ—যে-পদ্ধতি অনুসারে সৃষ্ট হয়, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডও সেই একই পদ্ধতি অনুসারে উৎপন্ন হইয়া থাকে। বিশ্বসৃষ্টি এবং জীবসৃষ্টির মধ্যে পদ্ধতির কোনরূপ বৈষম্য নাই।” কিংবা(৬৭৭), “সৃষ্টিতত্ত্ব দেহতত্ত্বের সহিত মিলাইয়া লেখা। বিশ্বসৃষ্টি এবং মনুষ্য বা জীবদেহসৃষ্টি যে একই প্রকরণ অনুসারে হইয়া থাকে, ইহা তন্ত্রের সিদ্ধান্ত।”

যদি তাই হয়, তাহলে তন্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্বটা কী রকম হবার কথা? শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়(৬৭৮)বলছেন,

“যে পদ্ধতিক্রমে নরনারীর সংযোগে নূতন জীবের সৃষ্টি হয়, সেই পদ্ধতিক্রমে পুরুষ-প্রকৃতির সংযোগে বিশ্বসংসারের উদ্ভব হইয়াছে। পুরুষের প্রভাবে নূতন জীবে আমিত্ত্বের বোধ ফুটিয়া উঠে, দেহের মধ্যে যাহা কতকটা স্থিতিবাচক, তাহারই সৃষ্টি হয়, আর নারীর প্রভাবে দেহের নাম ও রূপ, যাহা কিছু পরিবর্তনশীল তাহারই সৃষ্টি হয়। তাই তন্ত্র অনুমান করেন যে, মেদ, মজ্জা, অস্থি, নখ, প্রভৃতি পিতৃবীর্যে সৃষ্টি হয়; মাতৃরজে শোণিত, মাংস, চর্ম, কেশ প্রভৃতি উদ্ভূত হইয়া থাকে। তেমনি বিশ্বসংসারে পুরুষপ্রকৃতির প্রেরণায় সৃষ্টির বিকাশ হয়। সৃষ্টির পূর্বে পুরুষ ও মূলাপ্রকৃতির মধ্যে একটা স্পন্দনের—কম্পনের—ভাব অনুভূত হয়। এই স্পন্দন-জন্যই পুরুষপ্রকৃতির মধ্যে বিয়োগ ও মিলন ঘটে। এই মিলনের ফলে বিন্দুর সৃষ্টি বা পতন; আর সেই বিন্দুর মধ্যে সৃষ্টিপ্রকৃতির লীলা হইতে থাকে, সেই লীলার ফলেই বিশ্বসৃষ্টির বিকাশ। এই বিন্দুতে বিলাস করিয়া মহামায়া সৃষ্টি ঘটাইয়া থাকেন বলিয়া তাহার নাম বিন্দুবিলাসিনী।…মহাকাশে যাহা স্পন্দন, নরনারীর মধ্যে তাহা কাম ও মদনের লীলা।…কাম ও মদনজন্য যেমন নতুন জীবের নাম ও রূপের বিকাশ হয়, তেমনি পুরুষপ্রকৃতির মধ্যে কাম ও মদনের স্পন্দনজন্য বিশ্বব্যাপী নাম এবং রূপের বিকাশ হইয়াছে। ইহাই হইল বিশ্বসৃষ্টি এবং জীবস্মৃষ্টির মধ্যে সমতাবিষয়ক গোটা কয়েক মোট কথা। তন্ত্রবিশেষে বিশ্বসৃষ্টির জন্য শিবশক্তির এবং জীবস্মৃষ্টির জন্য নর-নারীর মিলনের একতা পদে পদে খুলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া দেওয়া আছে।”

আমরা একটু পরেই দেখতে পাবো, এইভাবে মানবীয় প্রজনন-পদ্ধতির অনুরূপ হিসেবেই বিশ্বসৃষ্টিকে বোঝবার চেষ্টা শুধুমাত্র আমাদের দেশের তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ নয়। পৃথিবীর পিছিয়ে-পড়ে থাকা মানুষদের আদিম ধ্যানধারণার যে-পরিচয় পাওয়া গিয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে মোটের উপর একই সৃষ্টিতত্ত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়; নানান ক্ষেত্রে প্রাচীন ধর্মবিশ্বাসের মধ্যেও এই আদিম চিন্তাধারার স্মারক টিকে থেকেছে, যদিও আমাদের দেশের তান্ত্রিক সম্প্রদায়গুলির মধ্যে ওই দেহতত্ত্ব শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে যে-রকম জটিল রূপ ধারণ করেছে সে-রকম দৃষ্টান্ত অন্যত্র সত্যিই দুর্লভ। বিশেষ করে সেই কারণেই, তন্ত্রের দেহতত্ত্ব ও সৃষ্টিতত্ত্বের জটিলতায় পথভ্রান্ত হবার বিপদ থেকে নিজেদের বাঁচাবার উদ্দেশ্যে আমাদের পক্ষে ওই আদিম বিশ্বাসটি সম্বন্ধে সচেতন থাকবার প্রয়োজন আছে। দুঃখের বিষয়, আধুনিক বিদ্বানের ঠিক এর বিপরীত পন্থা অবলম্বন করতে চেয়েছেন। শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা থেকেই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখানো যায়। তন্ত্রের দেহতত্ত্ব ও সৃষ্টিতত্ত্বের সমর্থনে সাধনলব্ধ গৃঢ় অনুভূতি প্রভৃতির নজির দেখাবার পর যখন তিনি এই তত্ত্বটিরই অপেক্ষাকৃত আদি-অকৃত্রিম রূপের সম্মুখীন হয়েছেন তখনই তিনি আধুনিক নীতিবোধ ইত্যাদির প্রভাবে পড়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষে অধীর হয়ে উঠেছেন। তন্ত্রের দেহতত্ত্বকে আধুনিক মনের পক্ষে স্বীকারযোগ্য সনাতন সত্য বলে প্রমাণ করবার চেষ্ট না করে তিনি যদি প্রাচীন তন্ত্রকে প্রাচীন চেতনারই পরিচায়ক বলে গ্রহণ করতে সন্মত হতেন তাহলে সে-চেতনার প্রাকৃত রূপটির সম্মুখীন হয়ে তাঁর পক্ষে এ-ভাবে শিহরিত হবার প্রয়োজন হতো না।

“এইখানে আর একটা অবাস্তুর কথা বলিয়া রাখিব। দেহসৃষ্টি এবং বিশ্বসৃষ্টি একই পদ্ধতিক্রমে হইয়াছে, এই সাধারণ সিদ্ধান্তটা বা generalisation বৌদ্ধ তান্ত্রিকগণ কামবজ্রযান নাম দিয়া একটা উপাসক সম্প্রদায় গড়িয়া তুলিয়াছিলেন। যখন পাঠানগণ এদেশে প্রথম আগমন করেন, তখন বাঙ্গালায় এই সম্প্রদায়ের সাধকদিগের বেজায় প্রাবল্য ছিল। মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় এই সম্প্রদায়ের প্রচলিত দুই চারিখানি তন্ত্রগ্রন্থ খুঁজিয়া পাইয়াছেন। সে সকল গ্রন্থ সাধারণ্যে প্রকাশ করিবার যোগ্য নহে, কারণ উহা এতই কুৎসিত ক্রিয়াকাণ্ডের বর্ণনায় পূর্ণ। তাঁহাদের মত এই যে, মনুষ্যদেহ যেমন কামের সাহায্যে সৃষ্ট বা উৎপন্ন, বিশ্বসৃষ্টিও তেমনি কামের সাহায্যে সৃষ্ট বা উৎপন্ন। কামে যেমন রেতঃস্খলন হয় এবং রজঃ ও রেতের সম্মেলনে জীবের সৃষ্টি হয়, তেমনি বিশ্বসৃষ্টি শক্তিসমন্বিত শিবলিঙ্গের রেতঃস্খলন হইতে উৎপন্ন। এই হেতু বিশ্বসৃষ্টিকে তন্ত্রে বিসৃষ্টি বা discharge বলিয়াছে। অর্থাৎ কামান্ধ বিশ্বব্যাপী আত্মা হইতে এই বিশ্বসৃষ্টি একটা স্খলন বা বিসৃষ্টিমাত্র। এই সম্প্রদায়ের তান্ত্রিকগণের মত এই যে, যেমন যুবক-যুবতী সদা রিরংসায় পূর্ণ থাকে, তেমনি বিশ্বব্যাপী শিব ও শক্তি সদাই নিত্যনব সৃষ্টির জন্য রিরংসায় পূর্ণ। তাঁহাদের নিত্যসম্মিলনে ক্ষণেক্ষণে বিসৃষ্টি হইতেছে, ফুটিতেছে, উঠিতেছে, ডুবিতেছে, শুকাইতেছে। বিশ্বসৃষ্টির রিরংসা এবং জীবদেহগত রিরংসার সামরস্য ঘটাইতে পারিলেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করা যাইতে পারে। ইহারা তাই সদাই কামসাধনা করিত। ইহাদের অত্যাচারের প্রভাবে জাতিটা একেবারেই নিবীর্য হইয়া পড়িয়াছিল। সাধনার দোহাই দিয়া ইহার নির্লজ্জভাবে সমাজের সর্বাঙ্গে কামের প্রকট বিকাশ ঘটাইত। মন্দিরে, মঠে, দেবায়তনে, সর্বত্রই রিরংসার ছবি অঙ্কিত করিয়া রাখিত। …আমার মনে হয়, জগন্নাথের শ্রীমন্দির এই কামচক্রযানীদের প্রভাবকালেই নির্মিত হইয়াছিল। বিমলার ক্ষেত্র কামচক্রযানীদের পুণ্যক্ষেত্র ছিল। …বিশ্বসৃষ্টি এবং দেহসৃষ্টির সমরসতা এই শ্রীমন্দিরেই পূর্ণতা লাভ করিয়াছে। অশ্লীল ছবির মধ্যে পুরুষমাত্রেই কামযানী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, নারীমাত্রেই দেবদাসী অথবা ভিক্ষুনী। মন্দিরটা আগাগোড়া বৌদ্ধ কামযানীদের principles বা মতানুসারে নির্মিত। দেশীয় ভাস্কর্য পদ্ধতির উপর সৃষ্টিতত্ত্বের অর্থবাদ পাষাণের লেখায় ফুটান আছে।”(৬৭৯)

বিমলাক্ষেত্রের ভাস্কর্য-প্রসঙ্গে এ-মন্তব্য নিশ্চয়ই লঘুমূল্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ওই কামযানকে বৌদ্ধসম্প্রদায়-মাত্র বলে বর্ণনা করে এবং অতএব বিমলাক্ষেত্রের ভাস্কর্যকে বৌদ্ধ-সম্প্রদায়-বিশেষেরই মতানুসারে নির্মিত বলে ব্যাখ্যা করলেই কি প্রকৃত সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়? আমরা বলতে চাই, তা যায় না। কেননা, এ-ভাস্কর্যের মূল সমস্যাট কামসাধনার বিষয়বস্তু নিয়ে, এবং সে-বিষয়বস্তু শুধু বৌদ্ধ ধ্যানধারণারই নিজস্ব তত্ত্ব নয়, তার বদলে এক আদিম বিশ্বাস, যে-বিশ্বাসের সঙ্গে উত্তরকালে বৌদ্ধ ধ্যানধারণার সংমিশ্রণ হয়ে বৌদ্ধ তন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিলো। আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি, শ্ৰীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই স্বীকার করছেন, ‘অতি পুরাতন একটা শক্তিধর্মের বনিয়াদের উপর বৌদ্ধ মনীষা একটা নতুন ধর্মের প্রাসাদ গড়িয়া তুলিয়াছিলেন, পরে নব্য-হিন্দুর ব্রাহ্মণ্য-প্রতিভা বৌদ্ধের সেই মনীষা-প্রাসাদের উপর ব্রাহ্মণ্যের লেখা গাঢ় করিয়া লিখিয়া রাখিয়াছেন। বিমলাক্ষেত্রে পাষাণের লেখায় ফুটানো অর্থবাদের মৌলিক তাৎপর্যটিকে খুঁজে পেতে হলে সেই আদিম বিশ্বাস—পাঁচকড়িবাবু যাকে অতি পুরাতন শক্তি-ধর্মের বনিয়াদ বলে বর্ণনা করছেন—থেকেই অগ্রসর হতে হবে। আমরা দেখাবার চেষ্টা করেছি, এই আদিম বিশ্বাস বলতে উর্বরতা-মূলক জাদুবিশ্বাসই। তার উপর নিশ্চয়ই বৌদ্ধ এবং তথাকথিত ব্রাহ্মণ্য ধ্যানধারণা আরোপিত হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বাসটি ঢাকা পড়েনি বা তার স্বাতন্ত্র্য নষ্ট হয়নি। ঐতিহাসিকভাবে যদিই বা এ-কথা প্রমাণিত হয় যে, কামচক্রযানী বৌদ্ধরাই বিমলাক্ষেত্রের ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলো, তাহলেও এই ভাস্কর্যকে শুধুমাত্র বৌদ্ধ বললে অতিসারল্যের দোষ হবে। কেননা, ওই কামচক্রযান নামের বৌদ্ধ সম্প্রদায়টিকে নিছক বৌদ্ধ সম্প্রদায় বলা যায় না; তার বদলে এ-হলো বৌদ্ধ কারুকার্যেশোভিত সেই আদিম বিশ্বাসমাত্র। অর্থাৎ কিনা, এ-ক্ষেত্রে আদিম জাদুবিশ্বাসটির উপর বৌদ্ধ পরিভাষা এসে জমলেও, বৌদ্ধ ধ্যানধারণার দ্বারা মূল বিশ্বাসটির পরিবর্তন হওয়ার বদলে আদিম বিশ্বাসটির দ্বারা বৌদ্ধধ্যানধারণাগুলিই জীর্ণ হয়েছে।

কিন্তু তন্ত্রের উপর উত্তরকালে শুধুমাত্র বৌদ্ধ প্রলেপই পড়েনি; তন্ত্রের দেহতত্ত্বের সঙ্গে উত্তরকালের পৌরাণিক হিন্দু ধ্যানধারণার মিশ্রণের ফলও ঠিক একই রকম হতে দেখা যায়—অর্থাৎ কিনা, উক্ত ধ্যানধারণাগুলির নিচে দেহতত্ত্বের কথাটা ঢাকা পড়বার বদলে বরং পৌরাণিক ধ্যানধারণাগুলিই দেহতত্ত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়।

ব্ৰহ্মাণ্ডে যে গুণাঃ সন্তি তে তিষ্ঠন্তি কলেবরে।
পাতালং ভূধরা লোক আদিত্যাদিনবগ্রহাঃ ॥
নাগাশ্চ সৰ্ব্বদেহিনাং পিগুমধ্যে ব্যবস্থিতাঃ ।
পাদাধস্বতলং বিস্তাত্তদুৰ্দ্ধং বিতল তথা ॥
জানুনো: স্বতলঞ্চৈব তলঞ্চ সন্ধিরন্ধ্রকে।
তলাতলং গুল্‌ফমধ্যে লিঙ্গমূলে রসাতলম্ ॥
পাতালং কটিসন্ধৌ চ পাদাদৌ লক্ষয়েদুদ্বুধঃ।
ভূর্লোকো নাভিদেশে তু ভূবর্লোকস্তথা হৃদি ॥
স্বর্লোকঃ কণ্ঠদেশে তু মহলোকশ্চ চক্ষুষি।
জনলোকস্তদুর্দ্ধঞ্চ তপোলোকো ললাটকে ॥
সত্যলোকো মহাযোনে ভূবনানি চতুর্দশ।
ত্রিকোণে চ স্থিতো মে্রূ রুদ্রলোকে চ মন্দরঃ ॥
কৈলাসো দক্ষিণে কোণে বামকোণে হিমালয়ঃ।
বিন্ধ্যো বিষ্ণুস্তদূর্দ্ধে চ সপ্তৈতে কুলপৰ্ব্বতা ॥

এইভাবে পুরাণের ব্রহ্মাণ্ড-বৰ্ণনায় যেখানে যাহা ন্যস্ত হইয়াছে তাহাই যে মনুষ্যদেহে বিদ্যমান, তন্ত্র তাই দেখাইতেছেন।…কেবল তাহাই নহে। তন্ত্র ইহাও ইঙ্গিত করিতেছেন যে, পুরাণে হরগৌরীর কৃষ্ণরাধিকার যে-সব লীলা উপাখ্যানের আকারে বর্ণিত আছে, তাহা দেহগত স্ত্রীত্ব এবং পুংস্তের নানা লীলার বাহ্যিক অভিব্যঞ্জনা মাত্র। এই দেহতেই কৈলাস, এই দেহতেই হিমালয়,—এ দেহতেই বৃন্দাবন, এই দেহতেই গোবর্ধন; এই দেহাভ্যন্তরেই হরগৌরী বা কৃষ্ণরাধিকা নানা লীলানাট্য প্রকাশ করিতেছে(৬৮০)॥ ইত্যাদি ইত্যাদি ॥

তান্ত্রিক দেহতত্ত্ব উত্তরকালে কীভাবে পৌরাণিকাদি চিন্তাকে আত্মসাৎ ও এমন কি পরিপাক করে নিয়েছিলো তার আলোচনা দীর্ঘতর করবার প্রয়োজন নেই। তার বদলে, ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই দেহতত্ত্বের বাস্তব অবদানটা কী রকম, সে-বিষয়ে আমাদের পক্ষে সচেতন হবার প্রয়োজন আছে।

তন্ত্রমতে মানবদেহই ব্ৰহ্মাণ্ডের সংক্ষিপ্তসার, সর্বসত্যের আধার। স্বভাবতই তন্ত্রে এই মানবদেহের রহস্য-উদঘাটন করবার যে-উৎসাহ দেখা দিয়েছিলো তা ভারতবর্ষের আর কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা দেবার কথা নয়। ফলে, প্রাচীন ভারতে এ্যানাটমি-ফিসিওলজি বিজ্ঞান বলতে যেটুকু, তাতে তান্ত্রিকদের অবদান বড়ো কম নয়। এখানে তার একটা ছোট্ট উদাহরন দেওয়া যায়। আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল(৬৮১) দেখাচ্ছেন, এ্যারিস্টটল-এর মতো চরক-ও কল্পনা করেছিলেন যে, হৃৎপিণ্ডই চেতনার কেন্দ্র; চৈতন্য যে মস্তিষ্কেরই এক স্নায়বিক ক্রিয়া এ-কথা সর্বপ্রথম তান্ত্রিকেরাই আবিষ্কার করেন। বলাই বাহুল্য, অনুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হবার আগে পর্যন্ত আধুনিক ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিকদের পূর্বগামীরাও স্নায়ুতন্ত্র সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পাননি এবং এমনকি অতি-আধুনিককালে পাভ্‌লভ্‌-আবিষ্কৃত কণ্ডিশ্যণ্ড-রিফ্লেক্স পদ্ধতির প্রয়োগ করে স্নায়ুতন্ত্র সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান পাবার যে-অসীম সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, আধুনিক ইউরোপের বৈজ্ঞানিক-জগৎ তার মাত্র অসম্পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করতে পেরেছ(৬৮২)। অর্থাৎ, সংক্ষেপে, স্নায়ুতন্ত্র সংক্রান্ত বাস্তব বৈজ্ঞানিক জ্ঞান যতোটা পাওয়া গিয়েছে তা নেহাতই সাম্প্রতিক ও এখনো অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ। কথাগুলি বিশেষ করে মনে রাখা প্রয়োজন এই কারণে যে, দেশপ্রেমের প্রেরণায় আমাদের মধ্যে বিজ্ঞানে ভারতের অবদান সংক্রান্ত একটা সংস্কারগত এবং অতএব অবৈজ্ঞানিক ও ভ্রান্ত উৎসাহ দেখা দিতে পারে। দুঃখের বিষয়, আধুনিক বিদ্বানদের(৬৮৩) মধ্যে অনেকের বেলাতেই এ-জাতীয় অবৈজ্ঞানিক উৎসাহ দেখা দিয়েছে, তন্ত্রের দেহতত্বের মধ্যে তাঁরা আধুনিক অর্থে স্নায়ু-বিজ্ঞানের তত্ত্ব অন্বেষণ করেছেন। বিষয়টি আরো জটিল হয়েছে এই কারণে যে, আমাদের আধুনিক বিদ্বানদের মধ্যে অনেকে নিজেরাই আধ্যাত্মিক সাধন-পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। ফলে, তন্ত্রের ষড়চক্র, কুলকুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগ্রত করবার সাধন ইত্যাদি প্রসঙ্গে তার নিগূঢ় আধ্যাত্মিক সত্যের অনুসন্ধান করে তন্ত্রের দেহতত্ত্বকে রহস্যময় করেছেন। তন্ত্রে বিশ্বাস নিয়ে তান্ত্রিক বিশ্বাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে বোঝবার সম্ভাবনা নেই; তার উপর, উত্তরকালের আধ্যাত্মিক ধ্যানধারণার মোহ নিয়ে তান্ত্রিক বিশ্বাসের মধ্যে সেগুলিকে আবিষ্কার করবার চেষ্টা করলে পরিস্থিতিটি জটিলতায় আরো অসম্ভব হয়ে পড়ে। মনে রাখা দরকার, তান্ত্রিক বিশ্বাস অত্যন্ত প্রাচীন; তাই প্রাচীন বিশ্বাস সংক্রান্ত আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাহায্যেই এর উপর আলোকপাত হতে পারে।

তাহলে, ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাসে তান্ত্রিকদের অবদান বলতে ঠিক কী? স্নায়ুতন্ত্র-বিষয়ে তান্ত্রিক সিদ্ধান্তাবলী নয়, তার বদলে মানবদেহকে জানবার ব্যাপারে তান্ত্রিকদের দৃষ্টিভঙ্গি। অতএব, আমরা এখানে তন্ত্রের নাড়ি, শিরা, চক্র, কুলকুণ্ডলিনী, ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা দেবার চেষ্টা করবো না—তন্ত্রে স্নায়ুতন্ত্রকে কীভাবে বোঝবার চেষ্টা করা হয়েছে সে-বিষয়ে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের(৬৮৪) দক্ষ আলোচনা আছে তা পাঠ করলে উৎসাহী পাঠকেরা দেখতে পাবেন, আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে স্নায়ুতন্ত্র-বিষয়ে তান্ত্রিক ধারণাবলী কী রকম প্রাকৃত ও স্থূল। আমাদের মন্তব্য হলো, তা সত্ত্বেও ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাসে তন্ত্রের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সে-গুরুত্বের প্রকৃত কারণ হলো মানবদেহের প্রতি তান্ত্রিকদের দৃষ্টিভঙ্গি। দেহোত্তর আত্মার কল্পনায় বিভোর হয়ে আমাদের দেশের বেশিরভাগ সম্প্রদায়ই মানবদেহকে অত্যন্ত তুচ্ছ করতে চেয়েছে : বিদেহ-মুক্তিই অনেক সম্প্রদায়ের কাছে পরম পুরুষাৰ্থ। তাছাড়া, শবের সঙ্গে পরিচয় বাদ দিয়ে মানবদেহকে জানবার কোনো উপায় নেই। হাড়ি, ডোম, চণ্ডাল প্রভৃতি একমাত্র যে-শ্রেণীর মানুষদের সঙ্গেই শবদেহের পরিচয়, সমাজের সদরমহল এদের প্রতি শুধু ঘৃণা ও বিদ্বেষই প্রকাশ করেছে। অপরপক্ষে, তন্ত্রে শবদেহের স্পর্শকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়নি। শুধু তাই নয়; ওই হাড়ি, ডোম, চণ্ডাল প্রভৃতি শ্রেণীর মানব-মানবী তন্ত্রসাধকদের কাছে সম্মানের আসন লাভ করেছে। অপরপক্ষে, শবদেহের স্পর্শকে ঘৃণার চোখে দেখতে শেখার দরুন আমাদের দেশে বিজ্ঞানচর্চা কীভাবে বাধা পেয়েছে তার একটি অত্যন্ত সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে : “প্রথম যখন কলিকাতায় মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় তখন শবব্যবচ্ছেদ করার জন্য ছাত্রের অভাব হয়েছিলো ”(৬৮৫)

 

কিন্তু এই আনুষঙ্গিক মন্তব্যের সূত্র ধরে আরো বিক্ষিপ্ত না হয়ে আমাদের মূল যুক্তিতে প্রত্যাবর্তন করা যাক। আমরা দেখাবার চেষ্টা করছি, তন্ত্রের দেহতত্ত্ব আপাতত যতোই অদ্ভুত মনে হোক না কেন, তন্ত্রসাধনার অন্যান্য অঙ্গগুলির মতোই এই তত্ত্বের উপরও কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাসের আলোচনা আলোকপাত করতে পারে। সে-বিশ্বাসের মূল কথা হলো মানবীয় উৎপাদনের সাহায্যে প্রাকৃতিক উৎপাদনকে আয়ত্তে আনা যায়; যদি তাই হয় তাহলে মানবদেহের মধ্যেই প্রাকৃতিক রহস্যের সংক্ষিপ্তসার খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এবং এই হলো দেহতত্ত্বের মূল কথা : যা আছে দেহভাণ্ডে তাই আছে ব্ৰহ্মাণ্ডে। স্বভাবতই, এই তত্ত্বের দিক থেকে বিশ্বের উৎপত্তিকেও মানবীয় সন্তান উৎপত্তির অনুরূপ হিসেবেই কল্পনা করা হয়েছে : তন্ত্রমতে পুরুষ ও প্রকৃতির আদি-মৈথুন থেকেই বিশ্বের উৎপত্তি।

আমাদের যুক্তি যদি ঠিক হয়,—অর্থাৎ, কৃষিকেন্দ্রিক আদিম জাদুবিশ্বাস থেকেই যদি তন্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্ব ও দেহতত্ত্বের উদ্ভব হয়ে থাকে,— তাহলে ওই সৃষ্টিতত্ত্ব ও দেহতত্ত্বের অনুরূপ চিন্তাধারার পরিচয় অন্যান্য কৃষিভিত্তিক সভ্যতার ক্ষেত্রেও খুঁজে পাওয়া উচিত। এবং তা পাওয়া যায়ও।

প্রাচীন চীনের চিন্তানায়কেরা(৬৮৬) সৃষ্টির সূত্রপাত হিসেবে পুরুষপ্রকৃতির মিলনের মতোই ইঅঙ (yang=পুরুষ) এবং ইন (yin=নারী)-এর যৌন মিলন কল্পনা করেছিলেন। শুধু তাই নয়। সে যুগের চীন-চিন্তাধারাতেও মানবদেহকে ব্ৰহ্মাণ্ডের সংক্ষিপ্তসার বলে কল্পনা করবার পরিচয় পাওয়া যায় : he (মানব) is described as a microcosm—a world in miniature(৬৮৭). ব্ৰহ্মাণ্ডের সংক্ষিপ্তসার বলেই প্রত্যেক মানবদেহই তান্ত্রিক সম্প্রদায়গুলির কাছে ব্ৰহ্মাণ্ডের মতোই প্রকৃতি ও পুরুষ উভয় উপাদান দিয়ে সৃষ্ট। সহজিয়ারা(৬৮৮) যে রকম বলেন :

সকল শরীরে হয় অর্ধাঙ্গ অবলা॥
পুরুষ প্রকৃতি দুই দেহমধ্যে আছে,

কিংবা,

একরূপ দুই হয় ভিন্ন দেহ নয়।
প্রকৃতি পুরুষ নাম বাহিরে দেখায়॥

সে-যুগের চীন চিন্তাধারা অনুসারেও তাই :

In some men the Yang predominates; in others the Yin. As in the case of Nature, so man has his seasons of spring, summer etc., and his days and nights…His great business, therefore, is to frame and fashion his life so as to live in conformity with the Tao, or observed order of the universe(৬৮৯).
ইত্যাদি, ইত্যাদি

এই জাতীয় চিন্তাধারার সঙ্গে তন্ত্রের দেহতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব ও এমন কি সাধন-পদ্ধতির সাদৃশ্যও বিস্ময়কর নয় কি? সৃষ্টিতত্ত্বের দিক থেকে পলিনেসিয়ার মাওরিদের চিন্তাধারার সঙ্গেও তন্ত্রের মিল চোখে পড়ে; তাদের ধারণাতেও বিশ্বসৃষ্টির সূত্রপাত মানবীয় প্রজননের অনুরূপ পদ্ধতিতে— অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর মৈথুন থেকেই—হয়েছিলো।

Throughout this cycle of Polynesian cosmogonic myth, one fact, not without parallel in other religions, is clear. O-tepapa, the primal barren earth or rock, represents the female principle, which is fructified and made to give birth to all things living, by the fertilising rain which falls from the superincumbent male Tangaloa, the sky(৬৯০).

মাওরিদের এই বিশ্বাসের সঙ্গে প্রাচীন চীন ও ভারতীয় সৃষ্টিতত্ত্বের সাদৃশ্য দেখে আধুনিক গবেষক বিস্ময় বোধ করছেন।

It is also noteworthy that creation is ascribed to sexual congress in cosmogonies, so diverse as the Hindu, Maori and Taoist(৬৯১).

কিন্তু আদিম পর্যায়ের উৎপাদন-পদ্ধতির দিক থেকে বিষয়টিকে বোঝাবার চেষ্টা করলে, এ-জাতীয় সাদৃশ্যের নিদর্শন দেখে বিস্ময়বোধ করবার কারণ থাকে না। বস্তুত, কৃষিবিদ্যা আবিষ্কারের ভিত্তিতেই যেহেতু মানুষ পুরোনো পৃথিবীর কয়েকটি ক্ষেত্রে সভ্যতা গড়ে তুলতে পেরেছিলো, সেইহেতু ওই প্রাচীন সভ্যতাগুলির পৌরাণিক কাহিনীর তলায় কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাসপ্রসূত এ-জাতীয় কল্পনার পরিচয় পাওয়াই স্বাভাবিক। অধ্যাপক জর্জ টমসনের(৬৯৩) গবেষণা অনুসরণ করলে আমরা দেখতে পাই, এদিক থেকে প্রাচীন চীনের ওই সৃষ্টি-উপাখ্যানের সঙ্গে প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়ার সৃষ্টি-উপাখ্যানের কী আশ্চর্য সাদৃশ্য এবং কেন এই সাদৃশ্য! অবশ্যই, এখানে আমাদের পক্ষে প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়ার ওই সৃষ্টি-উপাখ্যানকে বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করবার অবকাশও নেই, হয়তো প্রয়োজনও নেই। তার বদলে, তন্ত্রের সৃষ্টিতত্ত্বকে বোঝবার জন্যে প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়ার সমজাতীয় সৃষ্টি-উপাখ্যান প্রসঙ্গে অধ্যাপক জর্জ টমসনের(৬৯৩) সংক্ষিপ্ত মন্তব্যটুকু উদ্ধৃত করলেই হবে :

It still moves within the forms of primitive thought, the evolution of the world being expressed in terms of sexual reproduction.
অর্থাৎ, (মেসোপটেমিয়ার সৃষ্টিকাহিনীমূলক) এ-কল্পনা তখনো আদিম চিন্তাধারার কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ, কেননা এখানেও বিশ্বের বিকাশ সন্তান-উৎপাদনের উপমান হিসেবেই পরিকল্পিত।

———————
৬৬৩. S. Dasgupta op. cit. 108, 165,220,226, 262-3 ইত্যাদি।
৬৬৪. পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় : রচনাবলী ২:২৮৭ ৷
৬৬৫. ঐ ২:২৮৮।
৬৬৬. ঐ।
৬৬৭. ঐ ২:২৮৭।
৬৬৮. ঐ ২:২৮৮।
৬৬৯. ঐ ২:২৮৪-৫।
৬৭০. S. Dasgupta op. cit. 103-7.
৬৭১. মণীন্দ্রমোহন বসু : সহজিয়া সাহিত্য, ভূমিকা ॥y০ ।
৬৭২. ঐ ভূমিকা ॥০ ।
৬৭৩. M. Bose PCSCB 44.
৬৭৪. Ibid. 45. ‘
৬৭৫. মণীন্দ্রমোহন বসু : সহজিয়া সাহিত্য, ভূমিকা /• ।
৬৭৬. পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় : রচনাবলী ২:২৯২ ।
৬৭৭. ঐ ২:৩০১।
৬৭৮. ঐ ২:২৯৪-৫।
৬৭৯. ঐ ২:৩০৫-৬।
৬৮০. ঐ ২:২৮৫-৬।
৬৮১. B. N. Seal PSAH 218.
৬৮২. অধ্যাপক জর্জ টমসনের সাম্প্রতিক রচনা এর ব্যতিক্রম FP ch. 1.
৬৮৩. শ্ৰীযুক্ত পাঁচকড়ি বন্ধ্যোপাধ্যায়ের রচনাই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। রচনাবলী ২:২৫৫-৬ ইত্যাদি।
৬৮৪. B. N. Seal op, cit. 218ff.
৬৮৫. প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ , প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস ১০৭ ।
৬৮৬. ERE 4:140.
৬৮৭. Ibid.
৬৮৮. M. M. Bose PCSCB 45.
৬৮৯. ERE 4:140.
৬৯০. Ibid. 4:175.
৬৯১. Ibid. 4:126.
৬৯২. G. Thomson FP 90-1.
৬৯৩. Ibid. 154.