সে এক তুমুল কান্ড

সে এক তুমুল কান্ড

ঠিক কোনদিনটা পৃথিবীর জন্মদিন তা কিন্তু বলা যাবে না। আজকের আকাশের গ্ৰহ তারাদের অবস্থা দেখে পৃথিবী কি করে জন্মেছিল তা খানিকটা আঁচ করা যায় শুধু। পৃথিবীর জন্মের আগে এই বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের অবস্থাটা কেমন ছিল? তুমি-আমি যাকে আকাশ বলি, তাকেই পণ্ডিত ভাষায় বলে মহাশূন্য। পৃথিবীর জন্মের অনেক আগে থেকেই এই মহাশূন্য জুড়ে ছিল ধুলোবালির জঞ্জাল আর হালকা কিছু গ্যাস, যে-রকম গ্যাস ভরে মেলার দিনে তোমরা বেলুন ওড়াও। তবে এ-কথাটা মনে রাখতে হবে যে এই মহাশূন্যের বেশিরভাগটাই ছিল বিলকুল ফাঁকা। ধুলোবালি আর গ্যাস যা ছিল, তাও ছিল এতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যে তাদের টের পাওয়ার জো ছিল না। এবার হলো কি, ওই ধুলোবালির কণাগুলো আলাদা আলাদাভাবে একেক জায়গায় জমা হতে লাগলো, আর তাদের মাঝামাঝি জায়গাগুলোতে ঘন হয়ে জমতে থাকলো ওই পড়ে থাকা গ্যাসগুলো। এই জমতে থাকা ধুলোবালির অবস্থা হলো ঠিক মেঘের মধ্যে বৃষ্টির কণার মতো। বৃষ্টির কণাগুলো যেমন আস্তে আস্তে বড় হতে হতে ভরি হয়ে বাতাস থেকে আলাদা হয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে, ঠিক তেমনি ওই জমাট ধুলোবালির পিণ্ডগুলো আকারে বাড়তে বাড়তে ভরি হয়ে জমাট-বাঁধা গ্যাস থেকে আলাদা হয়ে সরে গেল। এরপর, ওই পিণ্ডগুলো সবাই মিলে ঠেলা দিয়ে জমাট-বাঁধা গ্যাসের গোলাটাকে নিয়ে গেল তাদের মাঝখানে, আর তাকে মাঝখানে রেখেই তার চারপাশে সবাই মিলে ঘুরতে শুরু করলো। এদিকে ঠেলা আর ঘষাঘষির চোটে গ্যাসের গোলা তো আস্তে আস্তে হয়ে উঠল বেজায় গরম, আর তার ফলেই আবার ফুলতে শুরু করলো আর ঠেলে সরিয়ে দিল ওই ধুলোবালির পিণ্ডগুলোকে আরো দূরে। ওই যে গ্যাসের গোলা, সেটা গরম হতে হতে হয়ে উঠলো। গনগনে এক আগুনের গোলা। ওই আগুনের গোলাটা হলো আসলে আমরা রাতের আকাশে যে অসংখ্য তারা মিটমিট করতে দেখি তারই একটা কিন্তু এরা আমাদের চেয়ে এতো কোটি কোটি মাইল দূরে রয়েছে যে দেখতে একেবারে ছোট্ট ছোট্ট লাগে, মনে হয় মিটমিটে জোনাকি যেন। এ-রকমই একটা তারা হলে আমাদের সুর্য। আর ওই যে ধুলোবালির জমাট পিণ্ডগুলোর কথা বলছিলাম, যারা ওই আগুনের গোলাটাকে ঘিরে ঘুরছে, তারাই হয়ে গেল। আজকের দিনের গ্রহ। তারই মধ্যে একটা হলো আমাদের পৃথিবী।

তাহলে দেখতে পাচ্ছ, পৃথিবীর জন্ম একা একা হঠাৎ একদিনে হয় নি, তাই তার জন্মদিনটাও নিখুঁত হিসেব করে বলা যাবে না। সূর্য, পৃথিবী আর তার অন্যান্য গ্ৰহ ভাইয়েরা, এমনকি চাঁদও জন্মেছিল প্রায় একই সময়ে। কে যে কার আগে পরে জন্মেছে সেটা এখনও বোঝবার উপায়ই নেই। তবে এটুকু বলা যায়, এই একসঙ্গে সবাই মিলে জন্মের ঘটনাটা ঘটেছিল আজ থেকে কমবেশি ৪৬০ কোটি বছর আগে।

এই যে গ্রহগুলো সেগুলো কিন্তু তারার চেয়ে অনেক অনেক ছোটো আর হালকা আর মোটেও তারার মতো অতো গরম নয়। এই গরম ঠান্ডার ফারাকের জন্যই তারারা তারা, আর গ্রহরা গ্ৰহ-ই থেকে যায়। কতো ছোটো আমাদের এই পৃথিবী সূর্যের তুলনায়? শুনলে অবাক হবে, সুর্য এতো বিরাট যে তার মধ্যে অন্তত তেরো লক্ষ পৃথিবী-র হেসেখেলে ধরে যাবার কথা।

৪৬০ কোটি বছরেরও আগে থেকে সেই যে শুরুতে গ্যাসের গোলাটাকে ঘিরে ধুলোবালির পিণ্ডরা-মানে, আজকের গ্ৰহরা—ঘুরতে শুরু করেছিল, সেটা কিন্তু আজও একইভাবে চলেছে। আবার সূর্যের মেজাজটা-যত গরমই হোক না কেন, পৃথিবীকে তার দারুণ টান। আবার তার দিকেও পৃথিবীর টান কম নয়। কেবল কাছে যাবার উপায় নেই, কাছে গেলেই যে পুড়ে ছাই হয়ে যাবার ভয়। তাই প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে থেকে টান আর পালটা টানে পড়ে পৃথিবী অষ্টপ্রহর লাট্টুর মতো ঘুরছে আর ঘুরপাক খাচ্ছে সুর্যের চারপাশে।

আকাশে তো অমন কতোশত কোটি কোটি সুর্য। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে কতই না গ্ৰহ। তবু এই ছোট্ট একটা টুকরোর মধ্যে—আমাদের এই পৃথিবীতে-এমন এক অবাক কাণ্ড ঘটেছে যা সারা আকাশের আর কোথাও ঘটেছে বলে জানা যায় নি। এই পৃথিবীর বুকে জন্মেছে এক আশ্চর্য জীব, তারই নাম মানুষ। মাথায় তার বুদ্ধি, হাতে তার হাতিয়ার। আর, মাথার বুদ্ধি খাটিয়ে, হাতের হাতিয়ার মজবুত করে ধরে মানুষ পণ করেছে পৃথিবীকে জয় করবার। দিনের পর দিন আর যুগের পর যুগ ধরে মানুষ জয় করে চলেছে পৃথিবীকে। এই দিগ্বিজয়ের কোনো শেষ নেই। শেষ নেই তাই মানুষের গল্পের।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *