মানুষ যখন ছেলেমানুষ ছিলো

মানুষ যখন ছেলেমানুষ ছিলো 

পশুপালন আর চাষবাস। এই দুটো কাজ শিখতে পারবার পর থেকে মানুষ যেন রীতিমতো সাবালক হয়ে উঠলো। তার আগে পর্যন্ত মানুষ নেহাতই ছেলেমানুষ বুঝি! 

মানুষ যতোদিন ছেলোমানুষ ছিলো ততোদিন বেচারার অবস্থা নেহাতই খারাপ। নেহাতই গরিব যেন। গরিব না হয়ে উপায়ই-বা কি? আজকালকার মতো বাড়ি-গাড়ি তো দূরের কথা, দুবেলা পেট ভরাবার মতো খাবার জোগাড় করাই তখন দারুণ কঠিন কথা। শুধু ওই খাবার জোগাড় করবার চেষ্টাতেই তাকে তার সবটুকু শক্তি খরচ করতে হয়। 

মানুষের যখন এইরকম দীনদরিদ্র অবস্থা তখন নিশ্চয়ই পৃথিবীতে বড়োলোক গরিবলোকের তফাত দেখা দেওয়া সম্ভব নয়। বড়োলোক হয়ে বড়োলোকি করবার মতো অতো জিনিসপত্তর কে পাবে? কোথা থেকে পাবে? সামান্য সম্বল নিয়ে তখন কোনোমতে বেঁচে থাকা। আর তাই একসঙ্গে দল বেঁধে বেঁচে থাকা। বড়োলোক নেই, গরিবলোক নেই; রাজা নেই, প্ৰজা নেই; মালিক নেই, মজুর নেই। সারাটা দল সারা দিনের চেষ্টায় মোট যেটুকু খাবার জোগাড় করতে পারে তার ওপর দলের সবাইকার সমান অধিকার—কেউ বেশি পাবে, কেউ কম পাবে, এমন ব্যবস্থা মোটেই নয়। 

সমানে-সমান হয়ে বেঁচে থাকা। তবু মনে রাখতে হবে এই যে সমানে-সমান ভাব এর আসল কারণ হলো অভাব, দৈন্য। সকলেই গরিব আর তাই সকলেই সমান। নিজস্ব জিনিস বলতে, নিজস্ব সম্পত্তি বলতে, কারুর কিছু নেই। সম্পত্তি বলতে কী আর হতে পারে? শিকার করবার জমিজঙ্গলের ওপর তো কারুর একার দখল নয়; পুরো দল শিকার খুঁজে বেড়াচ্ছে, জমিজঙ্গলগুলোর ওপর পুরো দলের সমান অধিকার। নিজের বলতে তখন শুধু ওই হাতিয়ারগুলো। কিন্তু ওগুলোও তখন এমন ধরনের যে তৈরি করতে পারা খুব সোজা। তীরধনুক, পাথরের মুগুর, পাথরের বল্লম। যে কেউ খুশিমতো তৈরি করে নিতে পারে, আর তাই এগুলোর মালিকানা নিয়ে মারপিট বাধবার কথা নয়। 

বুঝতেই পারছো, মানুষের যখন এই অবস্থা তখন টাকা-কড়ি বা ধনরত্ব বলে কোনো জিনিস থাকতেই পারে না। পৃথিবীর কাছ থেকে তখন মানুষ সবশুদ্ধ যেটুকু জিনিস আদায় করতে পারে তার সবটুকুই তো খরচ হয়ে যায় কোনোমতে বেঁচে থাকবার জন্যে। ফালতু কিছু পড়ে থাকেনা, বাড়তি বলে কিছু নেই। তাই কেনাবেচা করবার কোন কথা ওঠে না, কথা ওঠে না। টাকা পয়সা বা ধনরত্ব জমাবার। 

দলের সবাইকেই তখন প্ৰাণপণ মেহনত করতে হয়। ফাঁকি মারবার যো নেই, আলসেমি করবার যো নেই। কুঁড়েমি করবে কে? যে কুঁড়েমি করবে। সে খাবে কী? যদি এমন হয় যে অন্য কেউ গতির খাটিয়ে খাবার জিনিস জোগাড় করে দিচ্ছে তাহলেই তো কারুর পক্ষে পায়ের ওপর পা দিয়ে হাই তোলা সম্ভব। কিন্তু তখনকার অবস্থায় এ-কথা একেবারেই ওঠে না। হাতিয়ারগুলো নেহাতই বাজে ধরনের, আর সেই হাতিয়ার হাতে একজন মানুষ প্রাণপণ মেহনত করে পৃথিবীর কাছ থেকে যেটুকু জিনিস আদায় করতে পারে তার সবটুকুই তো খরচা হয়ে যায় কোনোমতে তার নিজের প্রাণ বাঁচাবার কাজে। তাই সকলকেই মেহনত করতে হয়, মেহনতের দিক থেকে সকলেই সমানে সমান। তাই বলে সবাই যে ঠিক একই ধরনের কাজ করছে তা অবশ্য বলা যায় না। পুরো দলটার পক্ষে বেঁচে থাকবার জন্যে যতোখানি মেহনত দরকার সে-মেহনত নিয়ে বহুদিন আগে থাকতেই একটা মোটামুটি ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু মেহনতের ভাগাভাগি করতে শিখলেও তখনকার মানুষ এ নিয়ে কোনো ইজতের তফাত করতে শেখে নি। 

কথাটা ভালো করে বুঝতে হবে। আজকের দিনে কী রকম? ও-লোকটা নেহাতই চাষাভুষো, এ-লোকটা নেহাতই কুলি-মজুর-তার মানে এরা সব ছোটোলোক। অমুকবাবু আপিস করেন, ভদ্রলোক। তমুকবাবু মাস্টারি করেন, খাতির করবার মতো লোক। অবশ্য আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি খাতির হলো তার যিনি নিজে বড়ো একটা গতির খাটান না। 

যেমন ধরো, বড় কারখানার মালিক কিংবা গ্রামের জোতদার। এদের কথা না হয় ছেড়েই দাও। যারা সত্যিই মেহনত করে তাদের কথাই ধরে। এক একজন এক এক রকম মেহনত করে আর সেই রকমারি মেহনতের দরুন রকমারি মানুষের রকমারি খাতির। মোটের ওপর, যারা গতির খাটায় তাদের চেয়ে যারা মাথা খাটায় তাদের কদর বেশি। গতির খাটানোটা নেহাতই যে ছোটোলোকমি। কিন্তু মানুষেরা যখন সমানে-সমান তখন একেবারে অন্যরকম। কেউই গায়ে ফু দিয়ে ঘুরতে পারে না, গতর না খাটালে কারুর পক্ষেই বঁচা সম্ভব নয়। তাই, মেহনত করাটা যে মন্দ কাজ এ-কথা তখন কারুর মাথায় আসবে কেমন করে? দলের মধ্যে অবশ্য নানান মানুষের নানান রকম কাজ : কেউ বা শিকার খুঁজতে বেরুচ্ছে, কেউ বেরুচ্ছে মাছ ধরতে, জ্বালানী কাঠ জোগাড় করছে কেউ হয়তো বা। আবার মেয়েরা হয়তো কচি ছেলেপুলে সামলাচ্ছে, জানোয়ারের ছাল থেকে পরনের জিনিস তৈরী করছে, এই রকম নানান রকম। কিন্তু এতো রকমের মধ্যে এটা ভালো ওটা মন্দ, এটা খাতির করবার মতো। ওটা ঘেন্না করবার মতো।— তা মোটেই নয়। 

মানুষ যতোদিন সমানে-সমান হয়ে বাঁচতো ততোদিন পর্যন্ত কারুর পক্ষেই অপরের জিনিস কেড়ে নেবার কথা ওঠে না। তার মানে, তখনো, মানুষ লুটপাট করবার মহিমাটা শেখে নি। কে লুটপাট করবে? কী লুটপাট করবে? দলের সবাই মিলে মেহনত করে সবশুদ্ধু যতোখানি জিনিস জোগায় করতে পারলো তার সবটুকুই তো খরচা হয়ে যায় কোনোমতে দলের সবাইকার জান বাঁচাবার জন্যে। জমাবার মতো ফালতু জিনিস কারুর কাছেই নেই, তাই একজনের পক্ষে আর একজনের জিনিসের ওপর লোভ করবার কথা ওঠে না। 

কিন্তু এই অবস্থা ক্রমশ বদলাতে লাগলো। হাতিয়ারের উন্নতির ফলে মানুষ নিছক বেঁচে থাকবার চেয়ে বেশি উপকরণ তৈরি করতে শিখছে। বাড়তি উপকরণটা জমছে মানুষের ঘরে। প্রথম দিকে অবশ্য এই বাড়তি উপকরণটা দিয়ে দলেরই কয়েকজনকে দক্ষ কারিগর হবার সুযোগ করে দেওয়া গেলো। নিজেদের পেট ভরাবার জন্যে সেই কারিগরেরা আর খাবার জোগাড়ের কাজে আটকে থাকবে না; পুরো সময়টাই কারিগরিতে দিতে পারবে— বাকি সকলের তৈরি বাড়তি জিনিস দিয়ে তাদের পেট চলবে। এইভাবে পুরো সময়টা কারিগরিতে লাগাতে পারলে হাতিয়ারের ঢের ঢের উন্নতি হওয়া সম্ভব। আবার হাতিয়ারের এই উন্নতির ফলে জিনিসপত্র তৈরির কাজও অনেক উন্নত হতে লাগলো; ঢের ঢের বেড়ে যেতে লাগলো। ফলে বাড়তে লাগলো জমানো সম্পদ। 

এইখান থেকে কিন্তু মানুষের গল্পে একটা দারুণ মোড় ফিরতে শুরু হলো। দশজনের জমানো সম্পদ একজন যদি কোনোমতে আত্মসাৎ করতে পারে তাহলে তো সে বাকি সকলের চেয়ে ঢের বেশি নিজের ঘরে তুলতে পারবে। ফলে সে আর বাকিদের সঙ্গে সমান থাকবে না; তুলনায় বড়োলোক হয়ে যাবে। আর হলোও তাই। গায়ের জোরে বা ছলে-বলে-কৌশলে দলেরই কিছু লোক বাকিদের বাড়তি সম্পদটা কেড়ে নেবার আয়োজন শুরু করলো। ফলে ভাঙন ধরলো সমাজে। এখন থেকে দলের সকলে আর সমানে সমান নয়; কারুর ঘরে ঢের বেশি, কারুর ঘরে ঢের কম। 

কিন্তু ব্যাপারটা একটু পর আর একটু ফলাও করে বলবো। মিলেমিশে সমানে-সমান হয়ে থাকবার অবস্থা যখন থেকে শেষ হয়েছে তারপর থেকেই মানুষের মনে জন্মেছে লোভ, মানুষের সামনে খুলেছে। পরের জিনিস লুটপাট করে সহজে সুখভোগ করবার পথ। তখন থেকেই মানুষের শরি হয়েছে মানুষ। তার আগে নয়। তার আগে পর্যন্ত মানুষের সামনে শুধু একটা পথ, মেহনত করবার পথ, পৃথিবীর সঙ্গে লড়াই করবার পথ— মানুষের সঙ্গে মানুষের লড়াই নয়। 

তর্ক করে কেউ হয়তো বলবে, লুটতরাজের মতলব যদি না-ই ছিলো তাহলে তখনকার দিনের মানুষ লড়াই করতে যেতো কেন? উত্তরে বলবো, লড়াই ওরা মাঝে মাঝে করতো, কিন্তু লুটতরাজের মতলবে নয়, নেহাতই জানের দায়ে! জানের দায়ে লড়াই করা মানে? কথাটা বুঝিয়ে বলছি। ধরো, এখানে একদল মানুষ রয়েছে, তাদের দলে হাজার দুয়েক লোক। শ-খানেক মাইল দূরে আর একদল মানুষ, তাদের দলেও ধরে হাজার দুয়েক লোক। মাঝখানের যে একশো মাইল জমি-জঙ্গল তার খানিকটা জায়গা জুড়ে শিকারটিকার খোঁজে প্রথম দলের মানুষ, খানিকটা জায়গা জুড়ে শিকার-টিকার খোজে। দ্বিতীয় দলের মানুষ। জমির মালিক বলতে সত্যি কেউ নয়, খানিকটা করে জায়গা জুড়ে শিকার খোজ করবার অভ্যোস এক একটা দলের। এ-অবস্থায়, দলের লোক বাড়তে বাড়তে হয়তো প্রথম দলটায় তিন হাজার মানুষ হয়ে গেলো। তখন তারা যদি আরো খানিকটা বেশি জায়গা জুড়ে খাবার জোগাড় করবার চেষ্টা না করে, তাহলে তারা বাঁচবে কেমন করে? আর এইভাবে, বাড়তি জায়গা থেকে খাবার জোগাড় করবার চেষ্টা করলে অন্য দলের মানুষদের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লাগবার খুব বেশি সম্ভাবনা। তাই লড়াই। ও-সব লড়াই নেহাতই জানের দায়ে লড়াই, কোনো একজনের পক্ষে দলেরই বাকি কজনের জমানো জিনিস কাড়বার তাগিদে নয়। অপরের জমানো ধনরত্ন লুট করে আনবার লোভে যুদ্ধ নয়। পরের যুগে যে-সব যুদ্ধ সেগুলো কিন্তু জানের দায়ে মোটেই নয়, আসলে সেগুলো হলো মেহনত করবার বদলে লুটপাঠ করে সহজে বড়োলোক হবার মতলবে যুদ্ধ। 

মানুষ যতোদিন ছেলেমানুষ ছিলো ততোদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে শাসনব্যবস্থা বলে কোনো কিছুর দরকার পড়ে নি। রাজা নেই, উজির নেই; পাইক নেই, পেয়াদা নেই; সরকার নেই, চাকুরে নেই; হাকিম নেই, উকিল নেই; কয়েদ নেই, কয়েদী নেই। তখন 

কেউ কাউকে শাসন করে না। দলের মধ্যে যদি কারুর সঙ্গে আর কারুর ঝগড়া-ঝাঁটি হয়। তাহলে দলের সবাই মিলে একটা নিস্পত্তি করে দেবে। মানুষের জীবন তখন এমন সহজ আর এমন স্বাভাবিক যে আইন কাকে বলে, উচিত-অনুচিত মানে কী, এ-সব কথা নিয়ে কারুর পক্ষেই মাথা ঘামাবার কথা ওঠে না। আসলে আইন বলো, উচিত বলো, আদালত বলো।—সব কিছুর পেছনে রয়েছে একটা ব্যাপারঃ সেটা হলো মানুষের দল দুটো দলে ভেঙে যাবার ব্যাপার-একটা দল আর একটা দলকে শাসনে রাখবে, এই রকমের দুটো দল। এইভাবে শাসনে রাখতে পারলে অপরের সম্পাদটুকু আত্মসাৎ করা সহজ হয়ে যায়। মানুষ যতোদিন ছেলেমানুষ ছিলো ততোদিন পর্যন্ত এ-রকম দুটো দলের কথাই ওঠে না। তাই শাসন নেই, আইন নেই, উচিত-অনুচিত নিয়ে মাথা ঘামাবার বালাই নেই।

তাহলে দলের কাজটা চলতো কেমন করে? সকলেরই না হয় সমানে-সমান, তবু সর্দার বলে একজন কাউকে মেনে না নিলে দল তো আর চলে না। তাই রাজা-রাজড়া থাকুক আর নাই থাকুক, অন্তত সর্দারের সর্দারিটুকু তো ছিলো! 

দলের গড়নটা কী করম ছিলো তাই বলি। শুনলে বুঝতে পারবে শাসকের দাপট বাদ দিয়েও মানুষের সমাজ কতো শান্ত আর সরল-ভাবে চলতে পারে। তখন পুরো দলটাকে চালাবার ভার দলের সর্দার আর মোড়লের ওপর—সর্দার চালায় লড়াইয়ের কাজ, মোড়ল বাকি সব কাজ। কিন্তু এই মোড়ল বা সর্দার রাজা-উজির ধরনের কিছু নয়। কেননা, সবাই একসঙ্গে বসে ঠিক করে দেয়, কে হবে মোড়ল, কে হবে সর্দার। নিজেদের মধ্যে থেকেই তারা কাউকে মোড়ল বলে ঠিক করলো, কাউকে সর্দার বলে বেছে নিলো। তারপর, এই বাছাই হবার পর দলের লোক যদি কোনোদিন মনে করে ওই মোড়ল বা সর্দার দলের কাজ ঠিকমতো চালাতে পারছে না, তাদের সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দেওয়া, অন্য কাউকে মোড়ল বা সর্দার হিসেবে নতুন করে বেছে নেওয়া। তাছাড়া, রাজা মরলে রাজার ছেলে রাজা হবার কথা। মোড়ল আর সর্দারের বেলায় মোটেই তা নয়। মোড়ল মরে গেলে দলের মধ্যে থেকে নতুন করে কাউকে সর্দার বলে ঠিক করা হবে। আরো একটা মস্ত বড়ো তফাতের দিক আছে। রাজা নিজে গতির খাটায় না, বাকি সবাই মেহনত করে রাজাকে খাওয়ায়, রাজা বসে বসে আয়েস করে, মজা মারে। মোড়ল আর সর্দারকে কিন্তু মেহনত করতে হয় বাকি সবাইকার মতোই। বরং, বাকি সবাইকার চেয়ে ওদের দায়িত্ব অনেক বেশি, কিন্তু তাই বলে ওদের ভাগে বেশি জিনিস পড়বার, বা ওদের পক্ষে বেশি সুখ ভোগ করবার কোনো কথাই ওঠে না। 

ওরা জানতো মেহনত করতে আর ওরা ভালবাসতো… 

ওরা কী ভালোবাসতো দল বেঁধে একসঙ্গে তালে তালে নাচতে। 

আর, ওরা ভালোবাসতো ছবি আঁকতে। 

কী আশ্চর্য আর সুন্দর ছবিই না। ওরা আঁকতে পারতো! ওদের যে-সব আস্তানা আজ আবিষ্কার হয়েছে সে-সব আস্তানার দেয়াল থেকে আজো ওদের আঁকা ছবি মুছে যায় নি। অপুর্ব সুন্দর ছবি, সেগুলোর দিকে চেয়ে দেখতে দেখতে আজকের মানুষও একেবারে অবাক হয়ে যায়। 

তা হোক। 

মানুষের যতোদিন ওই রকমের আদিম অবস্থা ততোদিন মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা ভারি সুন্দর, ভারি সরল। কিন্তু এই সঙ্গেই যদি আরো একটি কথা স্পষ্টভাবে মনে না রাখো তাহলে মানুষের গল্পটা বোঝবার সময় একেবারে গোড়ায় গলদ থেকে যাবে। কথাটা হলো, মানুষের অবস্থা তখন বড়ো করুণ। সে যে কী অসহ্য, দৈন্য, কী অমানুষিক অভাব-আজকের দিনে তা আমাদের পক্ষে কল্পনা করতে পারাও কঠিন। আর তা তো হবার কথাও। কেননা, মানুষের হাতিয়ারটা তখন নেহাতই যে বাজে ধরনের ওই হাতিয়ার হাতে পৃথিবীর সঙ্গে প্রাণপণে লড়াই করেও মানুষ নিজের জন্যে যেটুকু জিনিস আদায় করতে পারে তা যে নেহাতই তুচ্ছ, নেহাতই সামান্য। তার মানে, ওই সহজসামান সম্পর্কের উল্টো পিঠেই দারুণ হাহাকারের কথা। এই হাহাকারের কথাটা বাদ দিয়ে আদিম মানুষের গল্পটা বোঝা চলবে না। আর তাই, একটু পরেই আরো ভালো করে দেখতে পাবে, ওই আদিম অবস্থাটিকে পেছনে ফেলে আসবার সময় মানুষ একদিকে যেমন সমানে-সমান সম্পর্কের আনন্দটুকু হারালো তেমনিই অন্য দিকে খুঁজে পেলো হাহাকারের হাত থেকে নিস্তার পাবার পথ। 

আপাতত সমানে-সমান ভাবে বাঁচবার কথাটা আরো একটু ভালো করে দেখে নেওয়া যাক। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *