মরিয়ার শেষ কামড়

মরিয়ার শেষ কামড় 

কথা উঠেছে, মানুষ কি সত্যিই আরো অতোদিন বাঁচবে? পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী গড়বার বদলে পুরো পৃথিবীটাই না ছাই হয়ে যায়! যারা প্ৰভু, যারা মালিক-তারা কি সাধারণ মানুষকে এগিয়ে চলার পথ সহজে ছেড়ে দেবে? 

নিশ্চয়ই নয়। মরণ সুনিশ্চিত জানলে জানোয়ারও একটা মরণ কামড় দিতে কসুর করে না। মালিকের দলও তার কসুর করে না; করবে না কি? 

আধুনিক বিজ্ঞানকে কব্জায় এনে মানুষ যে-সব মারণাস্ত্র তৈরি করছে তাই নিয়ে একবার স্বার্থরক্ষার শেষ চেষ্টা করবে না 

এই তো সেদিনের কথা। আজ থেকে বছর চল্লিশও পুরো হয় নি। বিতীয় মহাযুদ্ধ তখন শেষ হবো হবো। জাপানের রাজনৈতিক আর সামরিক শক্তি তখন ফুরিয়ে এসেছে। বড়ো রকমের নরহত্যার সত্যিই তেমন দরকার নেই। এ-হেন অবস্থায় আমেরিকা উড়োজাহাজ থেকে জাপানের দুটো শহরের ওপর অ্যাটম বোমা ফেললো; ফলে, হিরোসিমা শহরে চোখের নিমেষে প্রায় ষাট হাজার মানুষ পুড়ে খাক হয়ে গেল, নাগাসাকি শহরে পুড়ে খাক হয়ে গেল। হাজার ৎৰিশ মানুষ! এই হলো মালিক শ্রেণীর মরণ কামড়ের একটা নমুনা। দুনিয়ার মানুষকে যেন সমঝে দেওয়া, কী ভয়ংকর মারণাস্ত্ৰ ওদের হাতে। 

কিন্তু সেদিনের অ্যাটম বোমার তুলনায় আজকের তৈরি বোমাগুলোর তেজ ঢ়ের ঢ়ের জটিল। প্রথমত, এ-হেন মারণাস্ত্র আজ আর শুধু একটা দেশের মধ্যে আটকে নেই; যে-সব দেশে উৎপাদনের উপায়গুলোর ওপর মুষ্টিমেয় মালিকের দখল খতম করার প্রয়াস, সে-সব দেশেও এ-হেন অস্ত্র তৈরি হয়েছে। 

পাশের ঘরে পিস্তলধারী ডাকাত ঢুকেছে শুনলে আমার পক্ষেও একটা পিস্তল খোজার দরকার পড়ে। কিন্তু সে-কথা না হয় বাদই দিলাম। বিজ্ঞানের আর একটা হিসেব রয়েছে। এ-হেন মারণাস্ত্র শুধু ব্যবহার করলেই হলো না; তার ফলাফল আসলে অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। এই পরমাণু বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হয় তেজস্করিয় বস্তুর মেঘ; সে-মেঘ পৃথিবীতেই নেমে আসে। ওই তেজস্করিয় বস্তুর মধ্যেও নিশ্চিত মৃত্যুর স্বাক্ষর। তাই কোনো একটা দেশ এ-হেন অস্ত্র ব্যবহার করলে তা থেকে তৈরি মেঘের তেজস্করিয় বস্তুর সেই দেশের ওপরেও নেমে আসবার সম্ভাবনা।

সোজা কথায়, মারতে গেলে আজ মরতেও রাজি হতে হবে। কথাটা শুধু সাধারণ মানুষদের বেলায় নয়।–মালিকদের বেলাতেও সত্যি। 

তাহলে কি বলবো, দেশে-দেশে মানুষে-মানুষে যে ভ্রাতৃভাবের স্বপ্ন প্রাচীন কাল থেকে জ্ঞানীগুণীরা দেখে এসেছেন প্রচার করতে চেয়েছেন।–তাকে আজ বাস্তবে সফল করতে নিয়ে যেতে চায় সব চেয়ে মারাত্মক মারণাস্ত্ৰই? প্রশ্নটির উত্তর আসলে খুব সোজা নয়। কেননা, আজো পৃথিবীতে অনুন্নত দেশের সংখ্যা বড়ো কম নয়। সে-সব দেশ তীবে রাখবার জন্যে আমন ভয়ংকর মারণাস্ত্র দরকার পড়ে না; সাবেক কালের বন্দুক-বেয়নেটই যথেষ্ট। তাছাড়া, উন্নত দেশগুলিতেও প্রচার মাধ্যমের শক্তি এমনই প্রবল যে নিঃস্ব শ্রমিকদের মনে রকমারি কিভূতকিমাকার মিথ্যা প্রচারের বিপুল আয়োজন। ফলে তাদের পক্ষেও এক হওয়া—সংগঠিত হওয়া-বড়ো সহজ কথা নয়। 

সহজ নয়। কিন্তু হতেই হবে। এ-হেন একটা চেতনা দিনের পর দিন বেড়ে চলুক। তা চললে মানুষের গল্পে একটা দারুণ নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে। 

দেখা যাক, মানুষের গল্প সত্যিই কতোটা বাধা পাবে। দেখা যাক, আধুনিক কালের নতুন পৃথিবী কতদিনে পূর্ণ বাস্তবে পরিণত হবে। তবে একটা কথা কিছুতেই ভোলা চলবে না। এই গল্পের আসল নায়ক-নায়িকা বলতে তুমি, আমি, আমরা সকলে! তাই গল্পটা শুধু শোনবার বা জানিবার ব্যাপার নয়। আগামীকালের অবস্থাটা নির্ভর করছে তুমি আমি-আমরা সকলে-কতোটা সার্থকভাবে এই গল্পেরই পরের অধ্যায় রচনা করবার জন্যে কোমর বাঁধতে পারি।–বুঝতে পারি, জানতে পারি; আর সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যিই হাত লাগাতে পারি। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *