তোমার যখন লেজ

তোমার যখন লেজ 

এইবারে তুমি নিশ্চয়ই রীতিমতো ক্ষেপে উঠবে। শিম্পাঞ্জীই হোক, গরিলা হোক, ওরাঙ ও টাঙই হোক আর বানরই হোক, ওদের গাগুলো তো লোমে ভর্তি। আবার কারুর লেজও আছে। আর ওদের সঙ্গে তোমার কি না খুব কাছেপিঠের সম্পর্ক। এ কথা শুনলে মেজাজ বিগড়ে যায় না কি? 

তা হয়তো যায়। কিন্তু কথা হলো, মেজাজ বিগড়ে লাভ নেই। কেননা লেজই বলো আর লোমই বলো-এ সবকে ঘেন্না করেই বা কী হবে? এককালে, তোমার গায়েও লোম ছিল, তোমার পেছনেও একটি ছোট্ট লেজ ছিল। কবে জানো? তুমি যখন তোমার মায়ের পেটের মধ্যে ছিলে। তাই তখনকার কথা কিছুই তোমার মনে নেই। কিন্তু ছিল। লেজও ছিল, লোমও ছিল। তখন তোমার চেহারাটা এত্তোটুকু-এক ইঞ্চির তিন ভাগের একভাগ মাত্র। কিন্তু এইটুকু চেহারার তুলনায় তোমার লেজটি বেশ বড়সড়োই। পুরো শরীরটা লম্বায় যতোখানি, তার ছ-ভাগের এক ভাগ হলো তোমার লেজ! পেটের মধ্যে যখন তোমার পাঁচ সপ্তাহ বয়েস তখন এই লেজটি দেখা দিয়েছে, কিন্তু বড় হতে হতে তুমি যখন আট সপ্তাহের হলে তখন ওই লেজটা মিলিয়ে গেল। 

শুধু লেজ নয়। লোমও ছিল। মার পেটের মধ্যে যখন তোমার সাতমাস বয়েস তখন তোমার সারা গা লোমে ভরতি। সোনালী রেশমি লোম। তারপর জন্ম হবার ঠিক মুখোমুখি সময়েই গা থেকে এই সব লোম ঝরে গিয়েছে। 

শুধু লেজ আর লোম কেন? মাছদের কানুকো কাকে বলে জানো তো? মাথার দুপাশে দুটো যন্ত্র যা দিয়ে মাছরা নিঃশ্বাস নেয়। তুমি কি জানো যে এককালে তোমার নিজের শরীরেও এই রকমের কানকো ছিল? কী করে জানবে বলো? তখনো যে তুমি তোমার মায়ের পেটের মধ্যে! 

আসলে, যে-সব জানোয়ারের পূর্বপুরুষ এক আর যাদের মধ্যের সম্পর্কটা বেশ কাছেপিঠের, তারা যখন তাদের মায়ের পেটের মধ্যে কিম্বা ডিমের মধ্যে থাকে, তখন তাদের চেহারায়ও আশ্চর্য মিল। এই মিল থেকেই প্রমাণ হয় তাদের পুর্বপুরুষ এক। তার মানে, একই জানোয়ার পৃথিবীর বুকে নানানভাবে বদলাতে বদলাতে নানান রকমের জানোয়ার হয়ে গিয়েছে! মার পেটের মধ্যে কিম্‌বা ডিম ফুটে বেরুবার আগে কার কী রকম চেহারা তা আগের পাতার ছবিটা থেকেই আন্দাজ করতে পারবে। ছবিতে দেখো : মাছ, মুরগি, আর মানুষের ছানা-পৃথিবীতে পা দেবার আগে কার কেমন চেহারা। এবার তুমি নিজেই বলো, খুব কিছু তফাত আছে কি? 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *