মাছ আর মাছখেকো মানুষ

মাছ আর মাছখেকো মানুষ 

মাছ নইলে তোমার তো চলে না। ভাতের পাতে এক টুকরো মাছ যদি না জোটে তা হলে তোমার মুখেই রুচবে না। কিন্তু কেউ কেউ আছে যারা মাছের নামে ওয়াক তুলবে। যেমন ধরো, গুজরাটিদের কথা। বেশির ভাগ বাঙালীরই মাছ নইলে চলে না; বেশির ভাগ গুজরাটিরই মাছের গন্ধে ওয়াক ওঠে। 

কিন্তু বাঙালীই বলে আর গুজরাটিই বলো।—মাছ না হলে কারুর পক্ষেই আর পৃথিবীর মুখ দেখা হতো না। কেননা, মাছই হলো মানুষের একেবারে আদিম পুর্বপুরুষ। তার মানে, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে একদল মাছ নানানভাবে বদলাতে বদলাতে শেষ পর্যন্ত মানুষ হয়ে গিয়েছে। 

কিন্তু মাছই বা এলো কোথা থেকে? আর, মাছ বদলে শেষপর্যন্ত মানুষই বা হলো কেমন করে? মানুষের কথা পরে, আগে বলি, মাছ এলো কোথা থেকে। প্রথমে তো সেই খুদে খুদে প্রাণী। পুরো শরীরটাই যাদের শুধু একটা কোষ দিয়ে গড়া। তারপর, অনেক কোষ মিলে দল পাকিয়ে এক একটা প্রাণীর শরীর গড়তে লাগলো। এইভাবে বদলাতে বদলাতে জলের তলায় দেখা দিল শ্যাওলা আর সবুজ ছোটো ছোটো গাছ, শেষপর্যন্ত এরাই হলো আজকের দিনের এতো রকম গাছ-গাছড়ার আদি পুরুষ। 

কিন্তু অনেক কোষ মিলে ক্রমশ গড়ে তুলতে লাগলো আরো নানান রকম প্রাণীর শরীর। হরেক রকম পোকা, কেঁচো, ঝিনুক, গুগলি, কতোই না। কিন্তু এদের মধ্যে যারা সবচেয়ে সেরা তাদের নাম দেওয়া হয় ট্রাইলোবাইট। প্রায় বিশ কোটি বছর ধরে জলের মধ্যে শুধু এদেরই রাজত্ব। জল থেকে সহজেই এরা খাবার জোগাড় করতে পারে। এদের গায়ের ওপর পুরু একটা খোলস, তাই অল্প বিপদে এরা মরে না। তাছাড়া এরা বাচ্চা পাড়ে দেদার। – তার মধ্যে অনেক বাচ্চা যদিও মরে যায়, তাহলেও ওদের বংশ ঠিক রক্ষা হয়। আজকের দিনেও এদের কিছু কিছু বংশধর পৃথিবীতে টিকে রয়েছে, যেমন ধরে কাঁকড়াবিছে আর মাকড়সা। কিন্তু তবুও বলা যায় এই ট্রাইলোবাইটদের গল্প বহুদিন আগেই ফুরিয়ে গিয়েছে। কেননা প্রায় বিশ কোটি বছর ধরে জলের মধ্যে প্রায় একচেটিয়া রাজত্ব করবার পর ট্রাইলোঝাইটদের বংশ শেষপর্যন্ত লোপ পেলো। 

কিন্তু এই ট্রাইলোবাইটদের বংশ আস্তে আস্তে লোপ পেয়ে গেলেও ইতিমধ্যে পরিস্কার জলের নিচে একরকম নতুন ধরনের প্রাণী গড়ে উঠতে লাগলো। এদের নাম অষ্ট্রকোড্রাম; এদের মুখগুলো ছুঁচোলো মতো, কিন্তু মুখের মধ্যে চোয়াল বলে কিছু নেই, তাই চিবিয়ে খেতে এরা জানে না। কাদার মধ্যে ছুঁচোলো মুখ ঢুকিয়ে দিয়ে খাবার শুষে খায়। কিন্তু চোয়াল না থাকুক, ওদের শরীরে একটা দারুণ দরকারি জিনিস ছিল। সেই জিনিসটার নাম হলো মগজ। মগজ কাকে বলে জানো নিশ্চয়ই। মাথার খুলির মধ্যে নরম মতো একরকম জিনিস থাকে, তাকেই বলে মগজ। শেষ পর্যন্ত এই মগজের দরুনই আমরা কানো শুনতে পাই, চোখে দেখতে পাই ।—মগজ না থাকলে চোখ থেকেও আমরা অন্ধ হতাম, কান থাকলেও কালা হতাম। শুধু তাই নয়। আমাদের মগজের দরুনই আমাদের এতো বুদ্ধিশুদ্ধি। অবশ্য তোমার আমার – তার মানে মানুষদের-মগজগুলো খুব ভালো আর বেশ বড়। তাই আমাদের বুদ্ধিশুদ্ধি এতো বেশি। সেই প্রাচীনকালের অষ্ট্রাকোড্রামদের মগজ দেখা দিলেও, সে-মগজ নেহাতই সামান্য আর আমাদের তুলনায় তুচ্ছ। তাই, ওদের মাথায় যে বুদ্ধিশুদ্ধি খুব ছিল তা মোটেই সত্যি কথা নয়। তবু, মগজ তো দেখা দিলো। আর এই মগজের গুণেই আশপাশের বাকি সব জীবদের তুলনায় এরা হলো অনেক উঁচুদরের জীব। 

তারপর প্রায় সাড়ে সাত কোটি বছর পর এদের একদল বংশধর বদলাতে বদলাতে শেষপর্যন্ত হয়ে গেল আসল আর খাঁটি মাছ। মাছদের শরীরে মগজ ছাড়াও অনেক রকম দারুণ দরকারি জিনিস রয়েছে। যেমন ধরো, একটা শিরদাঁড়া; এরকম পরিস্কার শিরদাঁড়াওয়ালা প্রাণী এর আগে পৃথিবীতে আর দেখা দেয় নি। আজকের দিনে অবশ্য অনেক জানোয়ারের শরীরেই স্পষ্ট শিরদাঁড়া রয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তারা সবাই শেষপর্যন্ত ওই মাছদেরই বংশধর। মাছরাই হলো পৃথিবীর প্রথম শিরদাঁড়াওয়ালা প্রাণী। শিরদাঁড়া ছাড়াও মাছদের মুখের মধ্যে চোয়াল থাকায় ওরা চিবুতে শিখলো। গায়ে পাখনা থাকায় পাখনা নেড়ে আর লেজ নেড়ে জলের মধ্যে ওরা ঘোরাফেরা করতে শিখলো; যেন দেখতে দেখতে সমুদ্র ভরে গেল মাছে মাছে! তারপর প্রায় ছ।-কোটি বছর ধরে জলের বুকে মাছদেরই একচেটিয়া রাজত্ব। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *