সিংহ-মূষিক কাহিনী

সিংহ-মূষিক কাহিনী

চল্লিশ বৎসর বয়সের ঘাটের থেকে যৌবনতরী বিদায় দেওয়ার পরও কখনও আশা করতে পারিনি, স্বপ্নেও সে আকাশ-কুসুম চয়ন করতে পারিনি যে এ অধমের জীবদ্দশাতেই স্বরাজ আসবে, স্বাধীন জীবন কাকে বলে তা এই চর্মচোখেই দেখে যেতে পারব।

কিন্তু প্রভু যখন দেন, তিনি তখন চাল-ছাত চৌচির করে ঐশ্বর্য-বৈভব (নিয়াম গণীমৎ) ঢেলে দেন। হঠাৎ একদিন হুড়মুড়িয়ে স্বরাজ এসে উপস্থিত–বন্যার প্লাবনের মতো। ফলে আমরা সবাই যে কহাঁ হাঁ মুল্লুকে ভেসে গেলুম এবং এখনও এমনই যাচ্ছি যে তার দিকচক্রবালও দেখতে পাচ্ছিনে। আমি ইচ্ছে করেই এই অতিশয় প্রাচীন, সাদামাটা তুলনাটি পেশ করলুম, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তুলনা তিন ঠ্যাঙের উপর ভর করে দাঁড়ায়, কিন্তু এস্থলে তুল্য ও তুলনীয় এমনই টায়-টায় মিলে গেছে- স্বরাজ এবং বন্যা, যে এটি সত্যি চার ঠ্যাঙের উপর দাঁড়িয়েছে। তুলনাটি যে কীরকম মোক্ষম ড্রেনপাইপ পাতলুনের মতো টাইটফিট তার আরেকটি নিদর্শন দিই। এই প্রলয়জলধিতে যেসব কর্তাব্যক্তিরা নৌকো ভেলা পেয়ে গেলেন তারা বানে ভেসে-যাওয়া বেওয়ারিশ মাল (দেশের সম্পদ, কোম্পানি কা মাল, যদি বেওয়ারিশ না হয় তবে বেওয়ারিশ আর কারে কয়!) আঁকশি দিয়ে ধরে ধরে আপনআপন ভল্টে বোঝাই করলেন। এখানে আরও একটা মিল রয়েছে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, গুটিকয়েক অ্যাভূরি ইয়ং টার্ক-এর অবিমৃষ্যকারিতার ফলে ব্যাঙ্ক ভল্ট বাবদে এমনসব ব্যবস্থা নেওয়া হল যে সেগুলো সেই বানের জলে উৎক্ষিপ্ত প্রক্ষিপ্ত হয়ে ভেসে ভেসে চলেছে। কোন কূলে ভিড়বে– আমরা তো অনুমান করতে পারছিনে। তবে মাভৈঃ! এসব ঘড়েল কুমিরগুষ্টি যখন জলের অতল থেকে নির্বিচারে অবলা কুমারী থেকে গোবর-গামার ঠ্যাং কামড়ে ধরে বদান্ন ভক্ষণ করতে পারেন, তখন এইসব বেওয়ারিশ প্রাণহীন তল্ট কামড়ে ধরে সেগুলোকে নদীর অর্ধনিমজ্জিত গহ্বরে নিয়ে যাওয়া তো এদের কাছে শনির অপরাহ্নের পিকনিকের মতো নির্দোষ সহজ সরল, কিংবা বলতে পারেন অত্যাবশ্যকীয় রাজকার্যের অনুরোধ হাওয়াই দ্বীপে বসন্তযাপন অথবা শীতে মন্তে কার্লো ভ্রমণ।

সন্দেহপিচেশ পাঠক হয়তো ভাবছ, আমি নিজে সেই হালুয়ার কোনও হিস্যে পাইনি বলে বন্ধ্যা রমণীর ন্যায় শতপুত্রবতীদের অভিসম্পাত দিচ্ছি। মোটেই না। আমার কপালেও ছিটেফোঁটা জুটেছে! ইরানের প্রখ্যাত কবি মৌলানা শেখ সাদি বলেছেন, ইহ-সংসারে মহাজন ব্যক্তি মাত্রই (সাদি গুণীজ্ঞানী অর্থে বলেছেন এস্থলে কিন্তু আপনাকে যখ সম্প্রদায়ের বেনেদের কথা ভাবতে হবে যেন আতরের ব্যবসা করেন। তোমাকে মিন-পয়সায় আতর না দিলেও তাবৎ আতরের বাক্সে ডবল তালা মেরে বন্ধ রাখলেও বাড়িময় যে আতরের খুশবাই ম-ম করছে এবং তোমার নাসিকা-রন্ধ্রে প্রবেশ করছে, সেটা ঠেকাবেন কী প্রকারে? এস্থলে তাই। এ মহাজনরা যদ্যপি বাইশ বৎসর ধনদৌলত ব্রা গোটা আষ্টেক লোহার সিন্দুকের উপর ডবল ডানলোপিলোতে বিচ্ছি যামিনী যাপন করেছেন তথাপি এগুলো বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে এদের খুলতে হয় তখন পাকা বেল ফেটে গিয়ে যে কাককুল প্রবাদানুযায়ী এ রস থেকে বঞ্চিত তারাও তার হিস্যে পেয়ে যায়।

এই ধরুন কিছুদিন আগেকার কথা। এক টাকার-কুমিরের উচ্চাশা হয়েছে তিনি সমাজেও যেন গণ্যমান্য ব্যক্তিরূপে উচ্চাসন লাভ করেন। হঠাৎ একদিন আমার কুটিরের সম্মুখে এসে দাঁড়াল এক বিরাট মোটরগাড়ি। তার দৈর্ঘ্য এমনই যে সেটার ন্যাজামুড়ো করতে হলে হঠাৎ পিছনের লাগেজ কেরিয়ার থেকে সম্মুখের বনেটের নাক অবধি সেখানে পদাধিকারলব্ধ পতাকা পৎ পৎ করে, এর গাড়িতে অবশ্য পতাকা ছিল না যেতে হলে আরেকটা মোটরগাড়ি ভাড়া করতে হয়! তা সে যাই হোক, যাই থাক, যেই যক্ষ (অবশ্য ইনি কালিদাসের একদারনিষ্ঠ বিরহী যক্ষ নন–এর নাকি ভূমিতে আনন্দ; থাক শঙ্করের চৌরঙ্গী পশ্য) এসে এই অধমকে আলিঙ্গন করে একখানা চেয়ারে আসনপিড়ি হয়ে বসলেন।

নিম্নলিখিত রসালাপ হল :

যক্ষ ॥ আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় হওয়াতে বড় আনন্দিত হলাম। আমি বহুকাল ধরে আপনার একনিষ্ঠ পাঠক। আপনার অগ্নিবীণা আপনার বিদ্রোহী উপন্যাস আমি পড়েছি, কতবার পড়েছি বলে শেষ করতে পরব না। ওহ। কী করুণ, কী মধুর!

হরি হে, তুমিই সত্য।

আমি ॥ (মনে মনে) সর্বনাশ! ইনি আমাকে কবিবর নজরুল ইসলামের সঙ্গে গোবলেট করে ফেলেছেন! যে ভুল পাঠশালার ছোকরাও যদি করে তবে সে খাবে ইস্কুলের বাদবাকি পড়ুয়াদের কাছে বেধড়ক প্যাদানি। তদুপরি যক্ষবর বলছেন, বিদ্রোহী কবিতাটি নাকি উপন্যাস এবং সেটি নাকি বড়ই করুণ আর মধুর! এস্থলে আমি করি কী! যে ব্যক্তি গাধাকে (এস্থলে আমি) দেবে বলে এটা রেসের ঘোড়া (এস্থলে কাজী কবি কবি-পরিবার যেন অপরাধ না নেন, আমি নিছক রূপকার্থে নিবেদন করছি) সে ব্যক্তি গাধাকে তো চেনেই না, ঘোড়াকেও চেনে না। ইতোমধ্যে পুনরপি,

যক্ষ ॥ (স্মিতহাস্য করে) আপনার বড় ভাই সৈয়দ মুস্তাফা শিরাজ এই যিনি তালতলার খ্যাতনামা পুস্তক প্রকাশক- তিনিও আমার ছোট ভাইয়ের কাছে প্রায়ই আসেন। বড় অমায়িক বৃদ্ধ। শুনেছি আমাদের বাড়ির পাশেই তার বিরাট তেতলা বাড়ি।

হরি হে, তুমিই সত্য! তুমিই সত্য।

আমি ॥ (মনে মনে) এই আমার জীবন সর্বপ্রথম আমার পিরামিড-দৃঢ় হরিভক্তিতে চিড় ধরল। হরি যদি সত্যই হবেন তবে তাঁকে সাক্ষী রেখে এই লোকটা মিথ্যার জাহাজ বোঝাই করে যাচ্ছে আর তিনি টু ফুঁ করছেন না, এটা কী প্রকারে হয়? ওদিকে শিরাজ মিঞা খাঁটি বিদগ্ধ রাঢ়ের ঘটি, আর আমি সিলট্যা খাজা বাঙাল। ওর সঙ্গে আমার কোনও আত্মীয়তা নেই– থাকলে নিশ্চয়ই শ্লাঘা অনুভব করতুম। অবশ্য আমরা সবাই আদমের সন্তান; সে হিসেবে তিনি আমার আত্মীয়। তদুপরি বেচারি পুস্তক প্রকাশক নয়, ঢাউস বাড়িও তার নেই, যদুর জানি আমারই মতো দিন-আনি-দিন-খাই চাকরিতে পুরো-পাক্কা-পার্মানেন্ট। এবং বাচ্চা শিরাজ– যে আমার পুত্রের বয়সী সে নাকি আমার অগ্রজ এবং বৃদ্ধ! বৃদ্ধ! বুঝুন ঠ্যালা। আশা করি এ লেখন বাবাজির গোচর হলে তিনিও সব্যসাচীর ন্যায় আমাকে মাফ করে দেবেন। ইতোমধ্যে পুনরপি,

যক্ষ ॥ (তার দেওয়া বিবিধ-ভারতীর মতো বিবিধ সংবাদ যে আমাকে একদম হতবাক করে দিয়েছে সেইটে উপলব্ধি করে, পরম পরিতোষ সহকারে আচ্ছা, আপনি কি শান্তিনিকেতনে লেখাপড়া করেছিলেন?

আমি ॥ (মনে মনে, যা মিথ্যের জাহাজ সত্যের চড়াতে এসে কিছুটা ঠেকেছে) আজ্ঞে হ্যাঁ। তবে বিশেষ ফলোদয় হয়নি সে তো দেখতেই পাচ্ছেন।

– আহা কী যে বলেন! আচ্ছা, আপনার হাতের লেখা নাকি রবিঠাকুরের মতো

— অনুকরণ করেছিলুম। সে সুন্দর লেখার কাছে আমার লেখা কি কনিকালেও পৌঁছতে পারে।

–আচ্ছা, কিন্তু আপনি নাকি হুবহু তাঁর নাম সই করতে পারেন? একবার নাকি তার নাম সই করে ভুয়ো নোটিশ মারফত আশ্রমকে একদিনের ছুটি দেন। পরে নাকি আপনি নিজেই সেটা ফাঁস করে দেন।

আমি কীর্তিটি অস্বীকার করলুম না। কিন্তু যক্ষরাজ কোনদিকে নল চালাচ্ছেন সেঁটে বসে, তখনও বুঝিনি। জানালা-দরজার দিকে ঘুরে এবারে চেয়ার ছেড়ে তক্তপোশে আমার গা সেঁটে বসে, জানালা দরজার দিকে ঘোর সন্দিগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ফিসফিস করে আমার কানে কানে বললেন, বাবু, তোমার হাল তো দেখতে পাচ্ছি। তোমার দু-পয়সা হবে : আমারও ফায়দা হবে। কিন্তু কাককোকিল পোকাপরিন্দায়ও যেন জানতে না পায়।

আমার প্রয়োজন রবীন্দ্রনাথের একখানা সার্টিফিকেট। আমি যে তার জীবিতাবস্থায় গোপনে গোপনে দেশসেবা, পলিটিক্যাল কাজ এবং বিশ্বভারতাঁকে সাহায্য করছিলাম সেই মর্মে একখানা চিঠি। শেষ বয়েসে তার প্রায় সব চিঠিই ইংরেজিতে টাইপ হতো, তিনি শুধুমাত্র সই করে দিতেন।

আপনাকে কিছুটি করতে হবে না। আমি সেই জরাজীর্ণ টাইপরাইটার মেলা জাঙ্কের সঙ্গে নিলামে কিনেছি, অবশ্যই দালাল মারফত। আমার কপাল ভালো। ওইসব হাবিজাবির ভিতর তাঁর প্রাচীন দিনের একগুচ্ছ লেটারহেড সমেত হলদে ফ্যাকাসে নোটপেপারও পেয়ে গিয়েছি। টাইপরাইটারটা সযতে মেরামত করেছি। এখন এটা ঠিক ১৯৩৮/৩৯/১-এর মতোই ছাপা ফোঁটায়। আমি পাকা লোককে দিয়ে সার্টিফিকেটের মুশাবিদা করাব, টাইপ করাব। তার পর কবির দস্তখতটি হয়ে গেলে দলিলটি রেখে দেব আঁকাড়া চালের বস্তার ভিতর। ব্যস! আর দেখতে হবে না। টাইপের কালি, দস্তখতের কালি সব ম্যাটমেটে মেরে গিয়ে ১৯৪১ সালের চেহারা নিয়ে বেরুবে সেই খানদানি চেহারা নিয়ে।

এই চূড়ান্তে পৌঁছে যক্ষ হঠাৎ থেমে গিয়ে আমার দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে রইলেন।

সাংসারিক বুদ্ধি আমার ঘটে আছে, এহেন অপবাদ যেসব পাওনাদারদের আমি নিত্যি নিত্যি ফাঁকি দিয়ে অদ্যাবধি বেঁচেবর্তে আছি তারাও বলবেন না। তৎসত্ত্বে এ নাটকের শেষাঙ্কে আমি যেন অকস্মাৎ অর্জুনের দিব্যদৃষ্টি প্রসাদাৎ কৃষ্ণাবতারের বিশ্বরূপ দেখতে পেলুম।

সংক্ষেপে বলিতে গেলে হিং টিং ছট! অর্থাৎ পূর্বোক্ত দলিলে আমাকে জাল করতে হবে কবির সিগনেচর, স্বাক্ষর, দস্তখত। দস্ত কথা শব্দটির অর্থ হাত (যার থেকে দস্তানা এসেছে); আমাকে দস্তখত করতে হবে না, করতে হবে দক্ষত অর্থাৎ জাল করে হাতে ক্ষত আনতে হবে।

আমার মুখে কোনও কথা যোগাল না।

যক্ষ বললেন, আপনার দক্ষিণা কী পরিমাণ হবে?

আমার মাথায় তখন নলজিদেহনির্গত কলি ঢুকেছে, অর্থাৎ দুষ্টবুদ্ধি চেপেছে। দেখিই না, শ্রাদ্ধ কতদূর গড়ায়।

ব্ৰীড়াময়ী কুমারীর মতো কিংবা ধোয়া তুলসীপাতাটির মতোও বলতে পারেন ক্ষিতিলে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিবেদন করলুম, আপনি বলুন।

সঙ্গে সঙ্গে না তাকিয়েই অনুত্ব করলুম যক্ষের সর্বাঙ্গে শিহরণ রোমাঞ্চন উত্তাল তরঙ্গ তুলেছে। এত সহজে যে নিরীহ একটা লেখক এহেন ফেরেব্বাজিতে রাজি হবে, এ দুরাশা তিনি আদপেই করেননি। ভেবেছিলেন আমাকে বহুং উলাইমলাই করতে হবে। সোল্লাসে বললেন, পাঁচশো।

আমি তুলসীপাতার কোমল রূপটি সঙ্গে সঙ্গে ত্যাগ করে সুতীক্ষ্ণ তালপাতার আকার ধারণ করে বললুম, আপনি কি ছাগীর দরে হাতি কিনতে চান তার চাইতে যান না যে কোনও আদালতের সামনে বটতলায়। পাকা জালিয়াত পাঁচটি টাকায় ওই কর্মাট করে দেবে!

আমার চাই পাঁচ হাজার।

আমি বেশ বুঝে গিয়েছিলুম, যক্ষ প্রফেশনাল জালিয়াতের কাছে যেতে চান না। সেটা মোস্ট ডেনজরস।

ইতোমধ্যে এই প্রথম তার পরিপূর্ণ সপ্রতিভ ভাব কেটে গিয়ে তিনি হয়ে গেছেন স্তম্ভিত হতভম্ব। কিছুক্ষণ পরে রাম ইডিয়টের মতো বিড়বিড় করে বললেন, পাঁচ হাজার

আমি সঙ্গে সঙ্গে বললুম, বড়বাজারের নাপিতকে দিয়ে আপনার কান সাফ করাতে হবে না। ঠিকই শুনেছেন।

অতঃপর গৃহমধ্যে সূচিভেদ্য নৈস্তব্ধ।

খানিকক্ষণ পর আমিই বললুম, আপনি বাড়ি গিয়ে চিন্তা করুন, স্লিপ ওভার ইট। আমিও তাই করব।

আমি জানতুম, এসব ঘড়েলদের সবচেয়ে বড় গুণ এদের ধৈর্য। তাই এই ধৈর্য কাজে লাগাবার ফুরসত-মোকা পেলেই এরা সোল্লাসে রাজি হয়। ধৈর্য দ্বারা ঘষতে ঘষতে এরা অন্যপক্ষের প্রস্তরও ক্ষয় করতে পারে।

আর আমারও তো কোনও স্টক নেই। এদের ধৈর্য যদি অফুরন্ত হয়, তবে আমার ধৈর্য অনন্ত। দেখাই যাক না, শ্রাদ্ধ কদ্দুর গড়ায়।

.

তাই গোড়াতেই বলছিলুম আমাদের মতো নগণ্যগণও এসব ছিটেফোঁটার সুযোগ পায়, কিন্তু হায়, যার অদৃষ্টে অর্থ নেই তার কপালে স্বয়ং মা-লক্ষ্মী ঠাকুরানিও ফোঁটা আঁকতে এলে সে মূর্খ তখন যায় নদীতীরে, কপাল ধুতে। ফিরে এসে দেখে, লক্ষ্মী অন্তর্ধান করেছেন। তাই তার নাম চপলা!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *