2 of 3

মা

মা

একসময় আমি কেশবতী ছিলাম। কেশের কিছু দুর্লভ ছবি পেয়েছি। ছবিগুলো আমাদের ময়মনসিংহের বাড়িতে তোলা। মা আমার কেশ নিয়ে মেতে থাকতেন দিন রাত। নারকেল তেল লাগাতেন, আচড়াতেন, উকুন থাকলে বেছে দিতেন, সাদা কালো ফিতে দিয়ে কলাবেণী করে দিতেন। কেশ চিরকালই আমার জন্য ছিল ভীষণ এক ঝামেলা। স্নান করে ভেজা কেশ কী করবো বুঝে না পেয়ে হাতখোঁপা করে ইস্কুলে যেতাম। আমার দুতিনটে কেশ মাটিতে পড়লো কী পড়লো না, মা কেঁদে বুক ভাসাতেন। মূলত আমার চুল গুলো আমার জন্য আমার মাথায় ছিল না, ছিল মার জন্য। একদিন একটুখানি বড় হওয়ার পর মার আবেগের নিকুচি করে কোমর অবধি লম্বা চুলকে ঘাড়ের কাছে ঘচাং। মা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিলেন।

মাকে সারাজীবন কম কষ্ট দিইনি। মার আবেগ নিয়ে কত মশকরা করেছি। এখন মা নেই। এখন দুঃখ হয়। এখন আমার চুলের যা ইচ্ছে তাই হোক, কেউ আহা উঁহু করবে না। মা তাঁর নিজের চুলগুলো অযত্নে অযত্নে নষ্ট করেছেন। কিন্তু আমার চুলের যত্ন তিনি নিরলস করে গেছেন। ভালোবাসা ছাড়া মার দেবার আর কিছু ছিল না। এই ভালোবাসাই সম্পূর্ণ উপুড় করে ঢেলে দিয়েছেন। আমার অনেক কিছু ছিল। আমি আর কাউকে দিতে কার্পণ্য না করলেও মাকে দিতেই করেছি। ভেবেছি, মা ই তো। মাকে আবার দিতে হবে কেন। মাকেই যে দিতে হয়, বুঝিনি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *