বিংশ অধ্যায় – বিবিধ ব্যস্ততার মধ্যে বাবুর

বিংশ অধ্যায় – বিবিধ ব্যস্ততার মধ্যে বাবুর 

ডিসেম্বর, ১৫২১ থেকে ২০ নভেম্বর ১৫২২ এর মধ্যবর্তী সময়ে বাবুরে ব্যস্ততার বিবরণ এরকম—

বাবুরের বাদাখশান ভ্ৰমণ 

১৫২১ ঈসায়ী সনের শুরু অথবা বিগত বছরের শেষ দিনগুলোতে বাবুর মাহিমের সাথে তাঁর জ্যেষ্ঠ-পুত্র হুমায়ুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাদাখশান গেলেন। বাবুর বাদাখশানের শাসনকার্য হুমায়ূনকে আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন। সেখানে তিনি কিছুদিন হুমায়ূন ও গুলবদনের সঙ্গে অবিবাহিত করেন। 

এই সময়কালে তিনি কান্দাহারের কিছু অবিজিত প্রদেশ জয় করেন এবং রাজ্য বিস্তার করেন। উল্লেখ্য যে, কান্দাহারের শাসক শাহ বেগ ওই সময়ে মারা যান। 

২০ জুলাই ১৯২২ অবধি বাবুর কান্দাহারে ছিলেন। তিনি শাহ হাসানকে কান্দাহারের শাসক নিযুক্ত করেন। শাহ হাসান বাবুরের নামে খুৎবা পড়েন। 

হিঁদুস্তান অভিযানের নয়া পরিকল্পনা 

২০ নভেম্বর, ১৫২২ থেকে ১০ নভেম্বর, ১৫২৩ এর মধ্যে বাবুর হিঁদুস্তান অভিযানের জন্য নয়া পরিকল্পনা করেন। 

মনোযোগের বিষয় হলো এই যে, ওই সময় থেকে বাবুর পূর্বে তিনবার হিঁদুস্তান বিজয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন, তবে প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক কারণে বারবার তাঁকে কাবুলে ফিরতে হয়েছিল। অবশ্যই তিনি বাজৌর ও ভেড়া এবং ইউসুফজাঈদের এলাকা পর্যন্ত জয় করে নিয়েছিলেন। একে হিঁদুস্তান বিজয়ের একটি অংশ বলে ঐতিহাসিকেরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। 

ওই সময়ে হিঁদুস্তান থেকে, দৌলত খাঁ লোদি (ইউসুফ খায়েল), আলাউদ্দীন ‘আলম খাঁ লোদি’র প্রতিনিধিদল এসে বাবুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং হিদুস্ত ানের শাসক ইব্রাহীম লোদির বিরুদ্ধে আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। 

তারপর বাবুর এক বিয়ের দাওয়াতের অবসরে হিঁদুস্তান থেকে দিলাওয়ার খাঁকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দিলওয়ায় খাঁ-ও ইব্রাহীম লোদির বিরোধী ছিলেন। তিনি হিঁদুস্তানের আমিরদের (শাহী পদমর্যাদা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের) মুখিয়া ছিলেন। বিবাহ ভোজের পর দিলওয়ার খাঁয়ের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ বার্তালাপ করেছিলেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন—

‘তোমরা (আমির) চল্লিশ বছর যাবৎ ইব্রাহীম লোদির নেমক খেয়েছ, এখন বিরোধী কেন হয়ে গেলে?’ 

দিলওয়ার খাঁ যেন বাবুরের প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন। তিনি বললেন—

‘বাদশাহ! আপনার প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক। আমরা আমিরেরা লোদি খানদানের নেমক খেয়েছি, তবে এখন আমরা নেমক হারামির কাজে নেমে পড়িনি। আমরা আমাদের শাহের জুলুম-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। আজ হিঁদুস্তানের কোনো আমিরের মান-সম্মান-ইজ্জত-সম্ভ্রমের আর কোনো নিরাপত্তা নেই। আমাদের শাহ ইব্রাহীম আজ কিছু কুমন্ত্রণাদাতার ষড়যন্ত্রের জালে ফেঁসে গেছেন। তিনি আমাদের ন্যায় পুরনো আমিরদের ঝাড়ে বংশে নিপাত করে আমাদের জায়গায় নতুন লোক রাখতে চাচ্ছেন। আমাদের শাহ বিগত দিনগুলোতে ২৫ আমিরকে অকারণে রুষ্ট হয়ে হয় শূলে চড়িয়েছেন নতুবা তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছেন। এসবই হয়েছে মিথ্যা কানভাঙানির ফলে। কোনো আমিরের বিরুদ্ধে কোনো দোষারোপ করা হলো, শাহ কোনো তদন্ত করা কিংবা তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই তাঁকে মৃত্যুর কোলে পৌঁছে দেওয়ার আদেশ দিচ্ছেন। আজ হিঁদুস্তানের আমির তাঁদের জান-মাল-ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে আর নিরাপত্তা বোধ করছেন না।’ 

দিলওয়ার খাঁ পরে বললেন—‘আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো আলোর কিরণ রূপে আপনাকেই আমাদের সাহায্যকারী রূপে দেখতে পাচ্ছি। এ জন্য আমি অন্যান্য আমিরদের নিয়ে আপনার খিদমতে হাজির হয়েছি। আপনি আমাদের প্রাণ রক্ষায় জন্য হিঁদুস্তানে আসুন… ‘ 

বাবুর কর্তৃক নজরানার দাবি 

দিলওয়ার খাঁ-র কথা শুনে বাবুর বললেন—

‘এ কথা আমি তখনই বিশ্বাস করব যখন সেখানকার আমিরদের পক্ষ থেকে পান, আম, ফল এবং এরকম কিছু বস্তু তাদের নামসহ আমাকে উপহার হিসেবে পাঠানো হবে। 

এমন উপহারের পরই আমি বিশ্বাস করব যে, সেখানকার আমিররা আমাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। 

বাবুরের কথা শুনে দৌলত খাঁ সেখান থেকে খুশি-মনে প্রস্থান করলেন।

কিছুদিন পরই বাবুরের কাছে আধপাকা আমের ঝুড়ি, পানের টুকরি, অন্যান্য ফল এবং মধুর মটকা আমিরদের আলাদা-আলাদা নামসহ আসতে লাগল। 

এবার বাবুর বিশ্বাস করলেন যে, এটাই হিঁদুস্তান আক্রমণের উপযুক্ত সময়।

এরই মধ্যে আলম খাঁ কাবুলে এসে, নিজে সাক্ষাৎ করে ইব্রাহীম লোদির বিরুদ্ধে আক্রমণের আমন্ত্রণ জানালেন। আলম খাঁ সুবেদার পদমর্যাদার ব্যক্তি ছিলেন। 

গুলবদনের জন্ম 

বাবুর হিঁদুস্তান বিজয়াভিযানে রওনা হওয়ায় প্রস্তুতির মধ্যে ছিলেন এমন সময় তিনি খবর পেলেন তাঁর পত্নী দিলদার বেগম তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ওই শিশুর অপত্য স্নেহে পড়ে বাবুর কিছুদিনের জন্য বিজয়াভিযান স্থগিত রাখলেন। ওই কন্যা শিশুর নাম রাখা হলো ‘গুলবদন’। 

হিঁদুস্তানের উদ্দেশে বাবুরের চতুর্থ অভিযান 

১০ নভেম্বর, ১৫২৩ থেকে ২৯ অক্টোবরের ঈসায়ী পর্যন্ত সময় কালটি ছিল বাবুরের হিঁদুস্তান অভিযানের চতুর্থ কার্যকাল। এবার তিনি ইব্রাহীম লোদির বিরুদ্ধে কাবুল থেকে সসৈন্যে রওনা হয়ে চিনাব ও ঝিলাম নদী পেরিয়ে লাহোর সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছালেন। যেখানে তিনি শিবির ফেললেন সেখান থেকে লাহোরের দূরত্ব ছিল মাত্র কয়েক মাইল। 

লাহোর ছিল দৌলত খাঁ-র প্রধান কার্যালয়। সেখানকার শাসনভার ইব্রাহীম লোদি তাঁকে দিয়েছিলেন, তবে বাবুরের সেনা যখন লাহোরে প্রবেশ করে তখন তার আগেই তিনি সসৈন্যে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন। 

লাহোর বিজয় 

লাহোরে বেলুচ সৈনিকদের একটি শক্তিশালী বাহিনী ছিল। তারা ইব্রাহীম লোদির পক্ষ থেকে লাহোর রক্ষায় জন্য নিযুক্ত ছিল। 

বাবুর ও বিহার খাঁ লোদির মধ্যে রক্তাক্ত যুদ্ধ হলো। অবশেষে বিহার খাঁ পরাজয় বরণ করলেন। বিহার খাঁ বাবুরের সামনেই রণক্ষেত্র ত্যাগ করে পলায়নপর হলেন। বাবুর পুরো লাহোরে তাঁকে ধাওয়া করলেন। তার জন্য তিনি অনেক নগরে আগুন লাগিয়ে দিলেন। 

দীপালপুর বিজয় 

২২ জানুয়ারি, ১৫২৪ এ বাবুরের সেনা দীপালপুরে প্রবেশ করল। সেখানে তাঁকে বিরোধিতার মুখে পড়তে হলো না। দীপালপুর সহজেই বাবুরের অধিকারে এসে গেল। 

তারপর বাবুরের সেরহিন্দ অভিমুখে রওনা হওয়ার কথা শুনল সেখানকার বসিন্দারা। পরে, স্পষ্ট হলো যে, বাবুর সেরহিন্দে না গিয়ে সেনা অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। 

উল্লেখ্য যে, পরে দীপালপুরে দিলওয়ার খাঁ বাবুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি তার পক্ষে সাফাই দিয়েছিলেন যে, লাহোরে আক্রমণের সময় সেখানে থাকার সাহস তাঁর ছিল না, সেজন্য সেখান থেকে তিনি চলে গিয়েছিলেন। 

এ কথাও বলা হয় যে, ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগে বাবুর তাঁকে গ্রেফতার করেছিলেন। তারপর, কিছুদিন বাদে তাঁকে সুলতানপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাড়া পাওয়ামাত্রই দৌলত খাঁ পাঞ্জাব থেকে দূরে চলে যাওয়াটাই মঙ্গল ভেবেছিলেন। তরপর পার্বত্য এলাকা ধরে চলে গিয়েছিলেন। 

লাহোরে কিছুদিন অবস্থানের পর বাবুর শাসন ব্যবস্থা সংক্রান্ত কিছু রদবদল করেন। তিনি দীপালপুরে তাঁর অশ্বারোহী সেনার প্রধান আবদুল আজিজ-কে প্রশাসক নিযুক্ত করে আলম খাঁ ও বাবা কহকশাঁ মোগলকে তার অধীনস্ত করে দেন। শিয়ালকোটে খুসরো কুকুলদাসকে, কালানৌরে মুহম্মদ আলী তাজিককে নিযুক্ত করেছিলেন। 

এই বছরের ঘটনাবলির বিবরণে ঐতিহাসিকেরা একথাও লিখেছেন যে, বাবুর হিঁদুস্তান থেকে কলাগাছ নিয়ে গিয়েছিলেন, যা তিনি আদলনাপুরে লাগিয়েছিলেন। কলার বাগানকে তিনি ‘বাগ-এ-ওয়াফা’ নাম দিয়েছিলেন। 

২৯ অক্টোবর, ১৫২৪ থেকে ১৮ অক্টোবর, ১৫২৫ ঈসায়ীর মধ্যেকার, ঘটনাবলি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে পাওয়া যায় যে, বাবুর দীপালপুর থেকে অগ্রসর হওয়ার পর, ইব্রাহীম লোদির পক্ষ থেকে ৫,০০০ সেনা শিয়ালকোটে পাঠানো হয়েছিল, যাদের অগ্রগতিকে লাহোরের বেগরা বাবুরের পক্ষ থেকে রুখে দিয়েছিল। 

দীপালপুরের শাসক আলম খাঁর বিষয়ে বলা হয় যে, তিনি ইব্রাহীম লোদির পক্ষ থেকে হামলার ফলে ভয়াক্রান্ত হয়ে পালিয়ে সোজা কাবুলে গিয়ে পৌঁছান। তিনি বাবুরের কাছে আরো বেশি সেনা দাবি করেন। বাবুর তাঁর সাহায্য বাবদ শর্ত দিয়েছিলেন যে, তিনি সেনা অবশ্যই দেবেন তবে তিনি যখন দিল্লির শাসক ইব্রাহীমকে হারিয়ে দেবেন তখন তাকে সেখানকার শাসন ব্যবস্থা সামলানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। 

আলম খাঁ তাতে রাজি হয়ে যান। তারপর তিনি বাবুরের পক্ষ থেকে বেগদের থেকে একটি পত্র পেয়েছিলেন, যাতে বলা হয়েছিল আলম খাঁকে পুরো সাহায্য দেওয়া হোক। 

হিঁদুস্তানে বাবুরের পঞ্চম অভিযান 

কাবুল, বলখসহ অন্যান্য এলাকায় সুব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর বাবুর আরো একবার হিঁদুস্তান বিজয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। এ তাঁর পঞ্চম এবং শেষ ভারত অভিযান ছিল। বাবুর হিঁদুস্তান অভিমুখে অগ্রসরই হচ্ছিলেন তখন বাদাখশান থেকে তাঁর পুত্র হুমায়ূন পিতার সাহায্যের জন্য বেরিয়ে পড়লেন। তিনি তাঁর পিতার একদিন পিছনে থেকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, একই পথ ধরেই তাঁরা এগুচ্ছিলেন।[১] 

[১. ১৮ অক্টোবর, ১৫২৫ থেকে ৮ অক্টোবর ১৫২৬ এর মধ্যে বাবুর তাঁর বাবারনামার প্রাপ্ত পৃষ্ঠায় যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন পরে তা প্রস্তুত করা হচ্ছে।– অনুবাদক]

১১ ডিসেম্বর, ১৫২৫ ঈসায়ীতে দৌলত খাঁ ও গাজী খাঁর পক্ষ থেকে আমার কাছে খবর পাঠানো হলো যে, তাঁরা কুড়ি থেকে ৩০ হাজার সেনাসহ কিলানপুরে পৌঁছে গেছেন, তাঁরা লাহোরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। 

১৪ ডিসেম্বর দুই রাতের শিবির সিন্ধুনদের তটে ফেলার পর আমাদের সেনা নৌ-যোগে নদী পার হলো। নৌযোগে নদী পার হওয়া সৈন্যের সংখ্যা ছিল বারো হাজার। 

শিয়ালকোট অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সময় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সেখানকার পুকুর-দিঘি মাঠঘাট পানিতে টই-টম্বুর হয়ে ছিল। ওই পুকুরগুলোর পানি এত ঠান্ডা ছিল যে, পানির উপরে বরফের পাতলা স্তর পড়ে যাচ্ছিল। 

২৪ ডিসেম্বর আমরা ঝিলাম নদী পার হলাম। 

ওই দিন, জায়গায় জায়গায় আলোচনা চলছিল যে, গাজী খাঁ ও দৌলত খাঁ-র পক্ষ থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার সেনা আসছে। তবে, এ কথা আমি বিশ্বাস করছিলাম না। আমার শুধু নিজের শক্তির উপরেই ভরসা ছিল যা ওই সময়ে আমার সঙ্গে ছিল, অথবা আমি আমার নিজের তরবারির উপরেই ভরসা করছিলাম। ২৬ ডিসেম্বর আমাদের সেনা চেনাব তটে পৌঁছে গেল। 

জাঠ ও গুর্জরদের মুখোমুখি 

সামনে এগোনোর সাথে সাথে কিছু পাহাড়ি ও কিছু সমতল এলাকায় লুটতরাজকারী ও হানাদার পাহাড়ি জাতির লোকেদের সঙ্গে আমাকে যুঝতে হলো। তাদের জাঠ ও গুর্জর বলা হতো। তাদের আক্রমণকে দমন করার জন্য আমাকে বিশেষ প্রয়াস নিতে হলো। 

ডিসেম্বরের শেষ তারিখে আমরা কলাভার পৌছে গেলাম। সেখানে জানী বেগ ও শাহ হাসানের সেনাদল এসে আমাদের সঙ্গে মিশে গেল। মাহমুদ মির্জা ও আদিল শাহও বেগ সৈনিকদের নিয়ে ওখানেই মিলিত হলো। 

১ জানুয়ারি, ১৫২৬ আমাদের সেনা অগ্রসর হয়ে মেওয়াত পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাল। আমি গাজী খাঁ-র নেতৃত্বাধীন সেনার অপেক্ষায় ছিলাম। অন্য কিছু সেনানায়ক-মুহম্মদ, আহমদ, কতলক কদমেরও সেখানে এসে মিলিত হওয়ার আশায় ছিলাম। 

মেওয়াত বিজয় 

২-৩ জানুয়ারি, ১৫২৬ বেগ সরদারের সঙ্গে এসে মিলিত হবার পর আমাদের সেনা ব্লাহ-ওয়াটার পার হলো, যা খানুয়া পাহাড়ের নিচে অবস্থিত। সেখান থেকে পদাতিক সেনাসহ আমি মেওয়াত উপত্যকায় অবস্থিত কেল্লার দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম। 

ওই পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের দুদিন সময় লাগল। সেখানে কিছু বেগ সরদার আমার আগে সেনা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল। আমি ওই পর্যন্ত পৌঁছে পরবর্তী রণনীতি প্রস্তুত করি। আমি সেনাকে আদেশ দিলাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না চলে সোজাভাবে পরস্পরের মধ্যে নৈকট্য রেখে অগ্রসর হতে। দৌলত খাঁ-র জ্যেষ্ঠ পুত্র আলী খাঁ-র ছেলে ইসমাঈল খাঁ মেওয়াতে আমার শরণ গ্রহণ করে। সে আনুগত্যের শপথ নিল। শেষ রক্তবিন্দুটুকু দিয়েও সে আমার জন্য লড়বে বলে প্রতিশ্রুতি দিল। আমি আমার বিজয়াভিযানে তাকে সাথে নিয়ে নিলাম। 

৫ জানুয়ারি, শুক্রবারের দিন কেল্লা থেকে এক মাইল আগে আমি শিবির ফেলার আদেশ দিলাম। লোকেরা কাজে নেমে পড়ল তো সেই ফাঁকে আমি ডাইনে-বামে সামনের সমস্ত এলাকা নিরীক্ষণ করার উদ্দেশ্যে বেরুলাম। কিছুক্ষণ পর দৌলত খাঁর পক্ষ থেকে খবর এল যে, মেওয়াতের কিলেদার (কেল্লারক্ষক) গাজী খান কেল্লা ছেড়ে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে গেছেন। তিনি তাঁর বার্তায় পরে বললেন যে, যদি তাঁর দোষ-ত্রুটি মার্জনা করে দেওয়া হয় তাহলে সে নিজে আপনার সামনে আত্মসমর্পণ করতে চায়। 

আমি খাজা মীর ইমরানকে তাকে নিয়ে আসার জন্য পাঠালাম। আমি বলে পাঠালাম তাকে সর্বপ্রকারে অভয় দিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসা হোক। 

আমার সৈনিকেরা তাঁকে ঘিরে আমার কাছে নিয়ে এল। আমি তার গর্দানে তলোয়ার রাখার আদেশ দিলাম। আমার আদেশ শুনতেই দৌলত খাঁ হাঁটু গেড়ে আমার পায়ে এসে পড়লেন। 

আমি আমার পা ছেড়ে দাঁড়াবার আদেশ দিলাম। আমি তাঁকে আমার সামনে বসালাম। এক দোভাষীকে ডাকলাম যিনি আমার ভাষা দৌলত খাঁকে বোঝাতে পারেন। 

আমি তাকে বললাম—

‘আমি তোমাকে পিতৃতুল্য জ্ঞান করি। আমি তোমাকে এত মান-সম্মান দিয়েছি যা তুমি কল্পনাও করোনি। আমি তোমার পরিবারের সদস্যদের, তোমাদের হেরেমকে তোমাদের শত্রুদের কবল থেকে রক্ষা করেছি। ইব্রাহীমের কারাগারে ঢোকার কবল থেকে তোমাকে রক্ষা করেছি। তাতার খানের ভূমির একটা বড় অংশ তোমাকে দিয়েছি। এ বিষয়ে কী তুমি কিছু বলবে? তা সত্ত্বেও তুমি তোমার কথার উপর কায়েম থাকোনি। আমি তোমাকে সেনা দিয়েছি, রাজকাজের জন্য ভূমি দিয়েছি, এরপর তোমার কী কষ্ট ছিল যে, আমাকে তুমি ধোঁকা দিতে বাধ্য হয়েছ। আমার থেকে দূরে দূরে থাকছ? [১] 

[১. আসলে বাবুরের দৃষ্টিতে দৌলত খাঁ বিশ্বাসঘাতক ছিলেন। যেখানে ঐতিহাসিকদের মত যে, দৌলত খাঁ লোদি ও আলম খাঁ লোদি বাবুরকে ভারত আক্রমণের জন্য আমন্ত্ৰণ জানিয়েছিলেন। 
বাবুর তাঁদের নিমন্ত্রণের সুযোগে পাঞ্জাব আক্রমণ না করেই কোনো বাধা ছাড়াই লাহোর অধিকার করে নিয়েছিলেন। তারপর, তিনি দীপালপুর জয় করেন। দীপালপুর অধিকার করতে দৌলত খাঁ বাবুরকে এই আশায় সহযোগিতা করেছিলেন যে, বাবুর তাঁকে পাঞ্জাব দিয়ে দেবেন। কিন্তু বাবুর জলন্ধর ও সুলতানপুর জেলাই তাঁকে দেন। অবশিষ্ট পাঞ্জাব নিজের অধিকারে রাখেন। 
বাবুর এটা করাতে দৌলত খাঁ বড়ই হতাশ হন। তিনি বাবুরের ফিরে আসার পর সুলতানপুর অধিকার করে নিয়েছিলেন। 
বাবুর ১৫২৫-এ পঞ্চম অভিযানের রূপে যখন আসেন তখন তাঁর সঙ্গে ১২,০০০ সৈনিক এবং ৭০০ কামান ছিল। বাবুরের এই শক্তি দেখে দৌলত খাঁ-র মাথা ঘুরে গিয়েছিল। তিনি বাবুরের সামনে আত্মসমর্পণ করে দিয়েছিলেন। তাঁর সাথে সাথে আলম খাঁ-ও আত্মসমর্পণ করেন। এইভাবে পুরো পাঞ্জাব অধিকার করার পর বাবুর সামনে অগ্রসর হন। অনুবাদক ১ বাবুর সম্ভবত এই কারণেই ক্রুদ্ধ ছিলেন যে, দৌলত খান মেওয়াতের কিলেদারকে কেন পালিয়ে যাবার খবর শুনিয়েছিলেন? তাঁর উচিত ছিল গাজী খাঁকে বন্দী করে তাঁর সামনে হাজির করে তাঁর বিশ্বস্ততা প্রমাণ করা।—অনুবাদক]

আমার কথার উত্তর ওই বুড়ো মানুষটি (দৌলত খাঁ)-র জানা ছিল না। তিনি বোবার মতো হয়ে রয়ে গেলেন। সে কোনো উত্তর দিতে না পারায় আমি খাজা মীর ইমরানকে তাকে সামলাবার আদেশ দিলাম। দৌলত খাঁ-র প্রতি রাগ ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। আত্মসমর্পণের জন্য আসা লোকেদের আমি ক্ষমা করে এসেছি আমার জন্য খুশির কথা ছিল এটাই যে, মেওয়াতের কিলেদার গাজী খাঁ কেল্লা ছেড়ে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল। 

কেল্লা অবরোধের পর আর কোনো বিরোধিতার সম্ভাবনা ছিল না। পরদিন, কেল্লার প্রধান দ্বারে গিয়ে সৈন্যরা দরওয়াজা খুলল। কোনো রকমের বিরোধিতা সামনে এল না। পারিবারিক স্ত্রী-পুত্র-পরিজন-চাকর-নোকররা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। আমি তাদের সবাইকে বাইরে পাঠালাম। কারো সঙ্গে যাতে দুর্ব্যবহার না হয়-এ আদেশ সৈনিকদের কঠোরভাবে দিয়ে দিলাম। 

মুহম্মদী, আহমদী, জুনাইদ, আবদুল আজিজ, মুহম্মদ আলী জংগ ও কুতল কদমকে, আমি মহলকে সম্পূর্ণরূপে খালি করার পর কবজা করে নিতে আদেশ দিলাম। 

ওই সময়কালে আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র হুমায়ূন আমার সঙ্গে এসে মিলিত হয়েছিল। আমি গাজী খাঁ-র কিতাবঘর (গ্রন্থাগার)-এ গেলাম। সেখানে অতি মূল্যবান সব গ্রন্থের সংগ্রহ ছিল। সমস্ত কিতাব অধিকার করার পর আমি হুমায়ূনের পছন্দের কিছু কিতাব তাকে উপহার দিলাম। কিছু পুস্তক কামরানের জন্য সংরক্ষিত করে নিলাম। ওই সময়ে কামরান কান্দাহারে ছিল। আমি কান্দাহার শাসনের ভার কামরানের হাতে দিয়ে রেখেছিলাম। 

মেওয়াতকে মুহম্মদ আলী জঙ্গের দায়িত্বে এবং দু’আড়াইশো আফগান সৈনিকের সংরক্ষণে রেখে আমি জাসওয়ান উপত্যকার দিকে অগ্রসর হবার আদেশ দিলাম। 

শস্য-শ্যামল-সবুজ প্রান্তর পেরিয়ে আমি হিঁদুস্তানে প্রবেশ করলাম। রাস্তায় অনেক গ্রাম দেখা গেল, যেগুলো জাসওয়াল পরগনার অন্তর্গত ছিল। সেখানকার বিষয়ে জানা গেল যে, সেটি দিলওয়ার খাঁ-র মামার শাসনাধীনে ছিল। তবে সে বিরোধিতার জন্য সামনে এল না। এই এলাকায় ময়ূর ও বানরের রমরমা ছিল। কিছু লোকের পাখি মারা পেশা ছিল। কেননা, স্থানটি রঙ-বেরঙের পাখিতে ভরে ছিল। 

উপত্যকার পাহাড় এলাকায় একটি শক্তিশালী দুর্গ উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত ছিল, সেটি কুটিলা দুর্গ নামে পরিচিতি ছিল। সেটি ৭০-৮০ গজ বর্গক্ষেত্র জুড়ে ব্যাপ্ত ছিল। তার দ্বার ছিল ৭-৮ গজ। তবে ওই সময়ে দুর্গটি বিরান হয়ে পড়ে ছিল। 

বাবুর ইব্রাহীম লোদির সঙ্গে যুদ্ধের পথে 

এবার আমার সেনা সিকান্দার লোদির পুত্র ইব্রাহীম লোদির এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ইব্রাহীম লোদি দিল্লিকে তাঁর ক্ষমতার কেন্দ্র বানিয়ে রেখেছিলেন। 

আমি শুনেছিলাম যে, তার সৈন্য সংখ্যা এক লক্ষ (১,০০,০০০) এবং তাঁর বিশালকায় এক হাজার হাতির একটি বাহিনী আছে। 

আমি রাতে শিবির ফেললাম। পরদিন প্রভাতের পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল। শাহ মীর হুসাইন ও জানবেগের সেনাপতিত্বে আমি সেনাকে রণক্ষেত্রে নামানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। 

আমি খাকর এলাকা পার হলাম। ওই সময় পর্যন্ত আমার কাছে খবর ছিল যে, ইব্রাহীম লোদি দিল্লি থেকে সসৈন্যে রওনা হয়ে গেছেন। 

আমি কিন্তা খাঁকে ৩০-৪০ মাইল আগে পাঠালাম, যাতে সে ইব্রাহীম লোদির সেনার সঠিক অবস্থার সংবাদ নিয়ে আসতে পারে। 

আমি হুমায়ূনকে শত্রু-সেনার প্রতিরোধের জন্য আগে পাঠালাম। ২৬ ফেব্রুয়ারি, সোমবারের দিন হুমায়ূনের সঙ্গে পাঠানো সেনার হামিদ খাঁ-র সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ হলো। 

হামিদ খাঁ হিসারের রাজস্ব আধিকারিক ছিলেন। তিনি ইব্রাহীম লোদি কর্তৃক হিসারে নিযুক্ত ছিলেন। আমি এ খবর পেয়ে গিয়েছিলাম যে, ইব্রাহীমের পক্ষ থেকে হামিদ খাঁর প্রতি আদেশ ছিল যে, তিনি যেন আমার অগ্রসরমান সেনাকে রুখে দেন। 

অনতিবিলম্বেই আমি হামিদ খানের পরাজয় ও হুমায়ূনের বিজয়ের সংবাদ পেলাম। এটা ছিল হুমায়ূনের প্রথম যুদ্ধজয় ও যুদ্ধের প্রথম অভিজ্ঞতা। 

হুমায়ূনের সেনা হামিদ খাঁ-র হস্তীবাহিনীর ৭-৮টি হাতি ও ১০০ সেনা বন্দী করে নিয়ে এল। 

হাতি ও যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে হুমায়ূন আমার সঙ্গে মিলিত হলো তো আমার আর আনন্দের সীমা-পরিসীমা রইল না। তবে, আমি তাঁকে যুদ্ধের নিয়ম শেখানোর জন্য উস্তাদ আলী কুলি তোপচিকে হুকুম দিলাম যে, যুদ্ধবন্দিদের কামান দেগে উড়িয়ে দেওয়া হোক। 

যুদ্ধবন্দিদের তোপের মুখে উড়িয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়ে আমি হুমায়ূনকে শেখাতে চাচ্ছিলাম যে, এই অবসরে, যখন কোনো বড় যুদ্ধ সামনে থাকে তখন দুশমন বন্দীদের সাথে করে নিয়ে চলাটা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

আমি পরবর্তী শিবির সাহফিবাদে ফেললাম। আমার এক সৈনিককে হুমায়ূনের বিজয়-বার্তা দিয়ে আমি কাবুলে পাঠিয়ে দিলাম। 

ওই রাতেই আমার কাছে খবর এল যে, ইব্রাহীমের সেনা দু-চার মাইল আগে এসে তাঁর শিবির ফেলেছেন। 

এ খবরও এল যে, ইব্রাহীমের এই সেনা-শিবির সেখানে দুই-তিন দিন থাকবে। তারপর, তিনি যমুনা নদী অভিমুখে রওনা হয়ে যাবেন। 

আমি ইব্রাহীমের প্রতীক্ষা ছাড়াই সসৈন্যে সারসাওয়ার দিকে অগ্রসর হলাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃষ্টিতে সারসাওয়া খুব সুন্দর ক্ষেত্র ছিল। 

আমাকে দোয়াব পেরিয়ে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হওয়ার কথা। নৌকার ব্যবস্থা করা হলো। 

নদীর ওপারে আমার সেনার অবতরণ মাত্রই হায়দার কুলের দিক থেকে খবর এল যে, ইব্রাহীম, দাউদ খাঁ লোদি ও হাতিম খাঁ লোদির নেতৃত্বে দোয়াব তটে ৫-৬ হাজার সেনা রওনা করিয়ে দিয়েছেন। 

নদী পার হতে থাকা আমার সেনাকে রোখার জন্য অগ্রসরমান দাউদ খাঁ ও হাতিম খাঁ যিনি তাঁর সহোদর ভাই ছিলেন তাদের সঙ্গে মোকাবিলার জন্য জুনাইদ শাহ, মীর হুসাইন, কুতল কদম, আবদুল ও কিস্তা বেগের নেতৃত্বে আমার সেনাদল অগ্রসরমান শত্রুসেনার উপর হামলা চালিয়ে দিল। 

দাউদ খাঁ ও হাতিম খাঁ সহ ৬০-৭০ যুদ্ধবন্দি এবং ৬-৭টি হাতি আমাদের হাতে এসে গেল। অবশিষ্ট সৈন্যদের হয় শেষ করা হলো নতুবা কোথাও পালিয়ে গেল। 

আমি আমার সেনাকে নতুন ঢঙে সাজালাম। ডান ও বাম দিককার দলের সঙ্গে মধ্যবর্তী দলে বিশেষভাবে অভিজ্ঞ যোদ্ধাদের শামিল করলাম। 

পরবর্তী তাঁবু ফেলার পূর্বে আমি দু’চাকা ওয়ালা গাড়ির ব্যবস্থা করলাম। এরকম ৭০০ গাড়ির ব্যবস্থা করা হলো। 

আমি উস্তাদ আলী কুলিকে নিযুক্ত করলাম যে, তিনি এই গাড়িগুলো দড়ি দিয়ে এমনভাবে বাঁধাবেন যেন তার দড়িগুলো ভিতরের দিকে যাকে। ওই গাড়িগুলোর পিছনে কামান বসানো হলো। বারুদ ও মশাল প্রস্তুত রাখা হলো। 

গাড়িগুলোর পিছনে সেনা শিবির ফেলা হলো। 

ওই সেনা শিবিরকে ৫-৬ দিন পর্যন্ত জমিয়ে রাখা হলো। তবে ইব্রাহীম লোদির সেনা অগ্রসর হয়ে সে পর্যন্ত এল না। 

আমি ১২ এপ্রিল তাঁবু গুটিয়ে নেওয়ার আদেশ দিলাম। এবার আমাকে আক্রমণের জন্য সামনে এগুতে হবে। 

এবার আমাদের অভিমুখ পানিপথের দিকে ছিল। 

শত্রু সেনাদের সম্পর্কে বড়-বড় কথা আসছিল যে, এক লাখের সেনা সহ এক হাজার হাতির বাহিনী রয়েছে। এ সব শুনে আমার সৈনিকদের মনোবল নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। 

কিন্তু সাহস অটুট ছিল। আমি সৈনিকদের মনোবল বাড়ানোর জন্য বললাম–

‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের বিজিত ভূমি পুনরুদ্ধার করতে যাচ্ছি। আমরা হক (ন্যায়ধর্ম)-এর উপরে আছি। ধর্মের জয় সর্বত্রই।’ 

৭-৮ দিন ধরে পানিপথের প্রান্তরে শিবির ফেলে বসে আছি। ইব্রাহীম লোদির সেনাও ময়দানে অবস্থান নিয়েছিল। 

আমি আমার রণনীতিতে গাড়ির সারিকে সামনে রাখা, তার পিছনে কামান সাজিয়ে রাখার নীতি ওই ময়দানেও অবলম্বন করলাম। আমি হুমায়ূনকে দু-তিন মাইল সামনে পাঠালাম, যাতে সে শত্রু-বাহিনীর সঠিক অবস্থাটা বুঝে আসতে পারে। 

ইব্রাহীম লোদির সেনা ময়দানে জমা হয়ে ছিল। আগে বাড়ছিল না। যুদ্ধনীতি কী ছিল আমার বোধগম্য হচ্ছিল না। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *