অষ্টাদশ অধ্যায় – বাবুরের বাজৌর বিজয়

অষ্টাদশ অধ্যায় – বাবুরের বাজৌর বিজয় 

মুহররম-উল-হারাম মাসের পয়লা তারিখ, সোমবার, চন্দাবল উপত্যকায় এক প্রবল ভূমিকম্পের সংবাদ পাওয়া গেল। 

ভূকম্পের ধ্বংসলীলার খবর পেতেই আমি সসৈন্যে ভূমিকম্প-পীড়িতদের সাহায্যের জন্য রওনা হয়ে গেলাম। 

উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছানোর পথেই বাজৌর কেল্লা পড়ত। সেটি খাহর গোত্রের লোকেদের অধিকারে ছিল। তারা আমার অধীনতা পাশে আসতে পারেনি। বাজৌর কেল্লায় অধিপতি খাহরদের সরদার নিজেকে সুলতান বলতে পছন্দ করতেন। 

আমি আমার এক বিশ্বস্ত সৈনিক দিলাজক আফগানকে কেল্লা অভিমুখে পাঠালাম যাতে সে সুলতানকে বলে কয়ে অধীনতা স্বীকার করানোর জন্য রাজি করাতে পারে। 

সুলতান নামক ব্যক্তিটি ছিল একেবারেই অসভ্য, মূর্খ। সে দিলাজক আফগানের কোনো কথাই শুনল না। দুর্ব্যবহার করল। অত্যন্ত হিংস্রতার সঙ্গে দিলাজক আফগানকে ফিরে আসার রাস্তা দেখিয়ে দিল। 

এবার ওই আদিবাসীদের উপর আক্রমণ চালিয়ে কেল্লা অধিকার করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ভূমিকম্প পীড়িতদের উপত্যকা পর্যন্ত লোকেদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওই রাস্তাটাই শুধুমাত্র অবশিষ্ট ছিল। ওই রাস্তা দিয়ে এগুনোর পথে খাহর উপজাতিরাই একমাত্র বাধা ছিল। তাদের বিজিত করেই তবে মাত্র এগিয়ে যাওয়া যেত, নইলে তাদের আক্রমণে আমার সৈন্যদের ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যেত। 

বৃহস্পতিবার, চার মুহররম তারিখে আমি কাবুল থেকে তীরন্দাজ ও ঘোড়সওয়ারদের একটি বড় সেনা আনিয়ে নিলাম। আগত সৈন্যদের আমি বাজৌর কেল্লার বাম দিকের পাহাড়ি অংশের দিকে পাঠালাম। 

আমি পদাতিক সৈন্যদের উত্তর দিকে নামালাম। ওই রাস্তাটি চারদিক থেকে পানিতে ভরা ছিল। উত্তর-পশ্চিমের পথ ধরে কেল্লা অবধি পৌঁছানোর রাস্তা নেহাত এবড়ো-খেবড়ো ছিল। 

কেবলমাত্র দক্ষিণ দিককার রাস্তাটি সমতল ছিল, যেখানে কেল্লার প্রধান দ্বার ছিল। পাহাড়ের দিক থেকে অবরোধ করার জন্য দোস্ত বেগের নেতৃত্বে সৈনিকদের পাঠানো হলো। তারা তখনও পর্যন্ত কেল্লা পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেনি, এমন সময় পানি বাহিত পথ ধরে চলমান সৈনিকদের সামনে এক-দেড়শো তীর-ধনুক সজ্জিত জংলি লোক এসে গেল। তারা হই-হল্লা করতে করতে সৈনিকদের উপর তীর বর্ষণ শুরু করে দিল। 

মোল্লা আবদুল মালিক, যাকে আমরা মজা করে ‘সিরফিরা’ সৈনিক বলতাম, সে ওই সময় তার সিরফিরা হওয়ারই পরিচয় দিল। আমার সৈনিকদের উপর জংলিদের তীর বর্ষণ হতে দেখেই সে ঘোড়ায় লাগাম পরাল এবং তাকে এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা দিয়ে ছুটিয়ে দিল। 

কোনো সাধারণ মানুষ এমন বিপজ্জনক কাজ করতে পারত না। একজন সিরফিরাই তা পারত। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা ধরে ঘোড়া ছোটানোর এই পথে প্রতি পদে-পদে মৃত্যু অপেক্ষা করছিল। তবে সে পলক ফেলতেই পাহাড়-সংলগ্ন কেল্লার প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তীরন্দাজদের তীর ঢাল দিয়ে রুখতে রুখতে সে লাফ গিয়ে কেল্লায় প্রাচীরে উঠে পড়ল। তারপর তরবারি দিয়ে তীরন্দাজদের মাথা নামিয়ে দিতে লাগল। 

তাঁর এই অকস্মাৎ বীরত্ব দেখে ওই রাস্তায় অগ্রসরমান সৈনিকদের উৎসাহ বেড়ে গেল। পদাতিক সৈনিক, যারা সিঁড়ি ও দড়িতে সজ্জিত ছিল, দ্রুত দৌড়ে কেল্লার প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছে গেল। দড়ি কমন্দ ফেলে, সিঁড়ি লাগিয়ে কেল্লার দেওয়ালে উঠে গেল। 

মোল্লা তির্কি আলী ও তার এক অধীনস্ত তিংরি বিদিও তরবারি ও ঢালের শক্তি দেখাতে দেখাতে কেল্লায় দাখিল হয়ে শত্রুদের মুণ্ডুপাত করতে লাগল। 

উস্তাদ আলী কুল পাঁচ জনকে কেল্লা প্রাচীরের উপর থেকে মেরে ফেলে দিল। দুজনকে জীবিত ধরে নিচে টেনে আনল। ওর দিককার অন্য সবাই পুরো জোশের সঙ্গে নিজেদের কর্তব্য পুরো করল। দাস বাজৌরিয়াদের অগ্নি-উদ্গীরণকারী অস্ত্র দিয়ে মারা হলো। 

এ সবের মধ্যেই সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। রাত হয়ে আসছিল। বাজৌর কেল্লা সম্পূর্ণ রূপে অধিকৃত হতে পারল না। আমার সেনাকে আক্রমণ বন্ধ করার আদেশ দিলাম। 

মুহররম মাসের পঞ্চম তারিখ, শুক্রবার ভোরেই যুদ্ধের নাকাড়া বাজানো হলো। সেনা যুদ্ধের জন্য রণাঙ্গণে নেমে পড়ল। প্রত্যেক সৈনিককে নিজ-নিজ দলে থেকে যুদ্ধ করার কথা জানিয়ে দেওয়া হলো। 

কেল্লার মধ্য ভাগ্যের বাম দিককার অবরোধের নেতৃত্ব খলিফা শাহ হাসান অধিম’ এবং ‘ইউসুফ আহমদ’ এর হাতে অর্পণ করা হলো। 

দোস্ত বেগের নেতৃত্বাধীন দলকে উত্তর-পশ্চিম দিকে হাঁটা পথে রওনা করানো হলো। 

উস্তাদ আলী কুলকে পূর্বের দিনেরই নেতৃত্ব দেওয়া হলো। ওই দিনও তিনি খুব বীরত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেন। 

অবশিষ্ট সৈনিকদের সিঁড়ি ও অগ্নি উদ্গীরণকামী অস্ত্রসহ ডান দিকের মোর্চার সঙ্গে রওনা করা হলো। 

মধ্য অংশে মুহম্মদ আলী জংগ ও তাঁর ছোট ভাই নৌরোজকে লাগানো হলো। 

বাজৌরিয়া বিজয় ও যুদ্ধ এতটা সহজ ছিল না যেমনটি আমি পূর্বে মনে করেছিলাম। এই এলাকা আমার জন্য নতুন ছিল। তাদের শক্তি ও রণকৌশল সম্পর্কে সঠিক জানকারি আমার ও আমার সৈন্যদের ছিল না। 

পরদিনের যুদ্ধে আমার সৈনিকেরা পুরো শক্তি প্রয়োগ করল। তারা কুড়াল, তীর-ধনুক, অগ্নি-উদ্গীরণকারী অস্ত্র, তলোয়ার, বর্শাও ভালার মতো সকল যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার করছিল। 

দু-তিন ঘণ্টার পর দোস্ত বেগের নেতৃত্বাধীন দল উত্তর-পূর্বের মিনারে পৌঁছে যেতে সমর্থ হলো। বাজৌরিয়ার ওই দিককার রক্ষণভাগ সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেওয়া হলো। 

অন্য অংশ থেকে সৈনিক, সিঁড়ি ও কমন্দ ফেলে কেল্লায় উপর উঠে পড়তে লাগল। 

আল্লাহর অসীম কৃপায় পরবর্তী দু-তিন ঘণ্টার পর কেল্লার উপরি অংশটি পুরোপুরি আমার সৈনিকদের কবজায় এসে গেল। কেল্লার নিচের অংশ ও কেল্লার মূল ফটকে তখনও যুদ্ধ চলছিল। 

সেখানেও তারা সুদক্ষ যোদ্ধার পরিচয় দিয়ে যুদ্ধ জিতে নিল। বাজৌর কেল্লা পুরো অধিকৃত হয়ে যাবার পর বাজৌরি জাতির বিষয়ে আমি জানতে পারলাম যে, ইসলামের সঙ্গে কোনো দূরতম সম্পর্কও তাদের ছিল না। তাদের রসম-রেওয়াজ সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতিবাদী ও অসভ্য ছিল। 

প্রায় ৩,০০০ বাজৌরি যুদ্ধে মারা গেল। তাতে তাদের সুলতান ও তার নিকটতম লোকেরাও ছিল। 

কেল্লা নিরীক্ষণ করার জন্য যখন আমি প্রবেশ করলাম তখন চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ দেখলাম। বাজৌর সুলতানের সুরক্ষিত কক্ষটিও নিরীক্ষণ করলাম। 

আমি বাজৌর রাজ্যকে, খাজা কলার রাজ্যের অংশ বলে ঘোষণা করলাম। মাগরিবের নামাজের পর আমি সেনা ছাউনিতে ফিরে এলাম। 

বাজৌর ভ্রমণ 

৬ মুহররম তারিখে আমি বাজৌরের বাবা কলার উপত্যকায় অবতরণ করলাম। উপত্যকার ভূকম্প-পীড়িতদের কাছে গিয়ে তাদের উপর আসা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতি আমার সমবেদনা প্রকাশ করলাম এবং তাদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করলাম। 

তারপর আমি খাজা কলায় ফিরে এলাম, তখন বাজৌরির কয়েদিরা ক্ষমা চেয়ে বলল, তাদের বউ-বাচ্চাদের মুক্ত করে দেওয়া হোক। কেউ কেউ তাদের বউ-বাচ্চাদের নিয়ে বাজৌর ছেড়ে চলে যাবার প্রার্থনা জানাল তো কেউ-কেউ তাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনদের অন্তিম সৎকার করার জন্য অনুমতি চাইল। 

আমি তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করে নিলাম। 

তবে সুলতানের আত্মীয়-পরিজন ও তার পদাধিকারীদের মুক্ত করে দেওয়াটাকে আমি উচিত বলে মনে করলাম না। এরকম কিছু বন্দীকে আমি কাবুলের দিকে, বাজৌর বিজয়ের সুসংবাদ সহ রওনা করিয়ে দিলাম। কিছু কয়েদিকে বাদাখশান, কুন্দুজ ও বলখের দিকে বিজয়পত্রসহ পাঠিয়ে দিলাম। “শাহ মনসুর ইউসুফজাঈ’ নামক ব্যক্তি, যিনি ওই বাজৌরিয়া উপজাতির সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতেন পরে কিছুকাল যাবৎ সুলতানের বিরোধী ছিলেন, তিনি সুলতানের বিরুদ্ধে অভিযানে আমার সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি আমার বিজয়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন। 

যুদ্ধ জয়ের পর আমি তাঁকে চলে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলাম। তাঁকে আমি সম্মান এবং বিশেষ পরিচিতির জন্য আমার ‘তূন’-এর এক বিশেষ প্রকারের পরিচিতি-বিশিষ্ট আংরাখা পরিয়েছিলাম এবং লিখিত অধিকার-পত্র দিয়ে দিয়েছিলাম যে, ইউসুফজাঈকে আমি ওখানকার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছি। ওখানকার অধিবাসীরা যেন তাঁর হুকুম মেনে চলে। 

৯ মুহররম থেকে ১০ মুহররম পর্যন্ত আমি বাজৌর কেল্লাতেই রইলাম। সেখানকার ব্যবস্থা আমি উপযুক্ত লোকেদের হাতে অর্পণ করলাম। আমার সম্মানে খাজা কলার বহুসংখ্যক লোক ও আমির-উমরা এসে গিয়েছিলেন। তাঁরা আমার জন্য মূল্যবান দাওয়াত সামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন। নিজেদের সঙ্গে করে নিয়ে আসা উপহার-সামগ্রীর মধ্যে ছাগল ও শরাবের মশকও ছিল। 

বাজৌরের চারদিকে সীমা সংলগ্ন এলাকায় কাফিরিস্তানিদের বস্তি ছিল। লোকেরা ওখান থেকে এই উমদা কিসিমের শরাব প্রস্তুত করে নিয়ে এসেছিল। 

বাজৌর কেল্লায় বিজয়োৎসব করার পর ১১ মুহররম আমি সেনা শিবিরে ফিরে এলাম। ১২ মুহররম আমার সেনাদল খাজা খিজিরের স্রোত ধারার তটে যাত্রা বিরতি করে ক্লান্তি নিবারণ করল। 

১৪ মুহররম আমি খাজা কলার দরবারে গিয়ে, সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি নিলাম। 

বিজয়ানন্দে পরিপূর্ণ থেকে ওই রাতে কিছু কবিতা আমার মনে জেগে ওঠে। তার কয়েকটি পঙক্তি এরকম—

‘আমার বন্ধু সেনাদের সাথে রয়েছে যেমন আত্মীয়তা।
এই দুনিয়ার অন্য কোথাও কখনো দেখা মিলবে না তা। 
আমার সেনা যুদ্ধ করে, অস্ত্রে নয়, মনে ও প্রাণে।
শক্তিতেও, সামর্থ্যেও, বুদ্ধিতেও লড়তে জানে ॥
তারা যেমন যুদ্ধ-কুশলী, তেমনই তারা শক্তিমান। 
বাজোর বিজয় করল তারা, জুড়াল আমার মন ও প্রাণ ॥’ 

১৭ মুহররম সাওয়াদের ওয়াইসের কট্টর-বিরোধী আলাউদ্দীন নামক ব্যক্তি আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। আমি সাক্ষাৎ করলাম। তাঁকে আশ্বাস দিলাম যে, অনতিবিলম্বেই তাঁর শিকায়তের নিদান দেওয়া যাবে। 

১৯ মুহররম আমার সেনা সাওয়াদ অভিমুখ রওনা হয়ে গেল! আমি ইউসুফজাঈর আফগানদের বিদ্রোহ দমনের জন্য ওই দিকে অগ্রসর হলাম। পকলা ও চন্দাবলের নদীপথ শাহ ইউসুফজাঈয়ের পথ-নির্দেশনায় পার হলাম। 

ইউসুফজাঈ আফগানরা বিনা যুদ্ধে আমার অধীনতা স্বীকার করে নিল। তারপর, কহরোজ ও পাশগড়ের বিদ্রোহীদের দমন করা হলো। 

ওই সময়ে পায়ের গিরা সমান তুষারপাতে ওই উপত্যকা ঢেকে গিয়েছিল। চারদিকে শুধু বরফ-আর-বরফই ছিল, কোথাও মাটি দেখা যাচ্ছিল না। 

সাওয়াদের হাকিম ছিলেন ওয়াইস নামক ব্যক্তি। তিনি অত্যন্ত বিনয়-ভাব প্রকাশ করলেন। তিনি কহরোজ গোত্রের লোকেদের কাছে আমার পরিচয় করাতে নিয়ে গেলেন। সেখানকার লোকেরা তাদের হাকিমের হুকুমে, বাদশাহের খিদমতে নজরানার জন্য ৪,০০০ ঘোড়ার বোঝার সমান উমদা কিসিমের চাল আমার সেনার জন্য উপহার দিল। ওই এলাকায় খুব উন্নত মানের ফসল ফলত। ওখানকার লোকেরা আমার সঙ্গে ওয়াদা করে যে, তারা প্রতি বছর বাদশাহের নজরানা স্বরূপ ৪,০০০ গাধার বোঝা পরিমাণ চাল আমার সৈন্যদের জন্য পাঠিয়ে দেবে। 

২৩ মুহররম আমি পন্জাকুরা অধিকারের জন্য সেনা পাঠালাম, যাতে কোনো প্রকারের বিরোধিতার মোকাবিলা করতে হলো না। সেখানকার লোকেরা বাদশাহের নজরানা স্বরূপ বস্তা বস্তা মক্কা পাঠাল। 

তৃতীয় পুত্র সন্তান লাভ 

আমার সেনাদল সাম্রাজ্যের ক্ষেত্র বাড়াতে বাড়াতে লাগাতারভাবে এগিয়ে চলেছিল। ইউসুফজাঈ জাতির লোকেদের উপর জয় এবং বাজৌরের মতো শক্তিশালী দুর্গ হাতে এসে যাওয়ার পর আমার সাম্রাজ্যের শক্তি অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল। 

আমার এগিয়ে চলার অভিযান তখনও জারি ছিল। এবার আমার লক্ষ্য ভেড়া অধিকার। যেখানে তাদের একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। ভেড়া বিজয়ের পর আমার জন্য হিঁদুস্তান বিজয়ের পথ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। 

তখনও আমি রাস্তাতেই ছিলাম, পথিমধ্যে কাবুল থেকে মাহম দ্বারা লিখিত সুসংবাদের বার্তা এল—

‘২৬ জানুয়ারি ১৫১৯ ঈসায়ী সনে জুমআর দিন মহলে তাঁর জন্য আরো এক সৌভাগ্য প্রাপ্তি ঘটেছে।’ 

বাবুর তাঁর নাম রাখলেন। ‘হিন্দাল’। [১]

[১. বাবুর তাঁর ওই পুত্রের নাম হিন্দাল সম্ভবত এই চিন্তাধারা অনুযায়ী রেখেছিলেন যে, হিদু + আল = হিন্দাল। কেননা তিনি বছরের পর বছর ধরে হিঁদুস্তান জয়ের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন এবং অভিযানও শুরু করে দিয়েছিলেন।—অনুবাদক]

বিবি মুবারকার সঙ্গে বাবুরের বিবাহ 

ইউসুফজাঈ আফগানরা বাবুরের প্রতি তাদের নিষ্ঠা জ্ঞাপন করতে গিয়ে তাদের নিজেদের ঘরানার সুন্দরী যুবতি বিবি মুবারকার সঙ্গে বাবুবের বিয়ে দিলেন। বিবি মুবারকার বিষয়ে কথিত আছে যে, তিনি আফগানি অগাচা রক্তধারার সঙ্গে সমন্বিত ছিলেন এবং আফগানদের মধ্যে তাঁর নাম ছিল গুলবদন। তিনি শাহ মনসুরের কন্যা ছিলেন। 

আমি খাজা কলা এলাকা থেকে অগ্রসর হওয়ার সময় বিবি মুবারকাকে ওখানেই তাঁর পিতৃগৃহে থাকার অনুমতি দিয়েছিলাম। 

শাহ ওয়াইস, শাহ আলাউদ্দীন, শাহ মনসুর, শাহ ইউসুফজাঈ এবং মুহম্মদী কুলের সমস্ত আফগান এখন আমার প্রতি পূর্ণ নিষ্ঠাবান এবং তাদের সৈনিকেরা আমার সেনার অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *