ঊনবিংশ অধ্যায় – হিঁদুস্তান বিজয়ের পথে বাবুর

ঊনবিংশ অধ্যায় – হিঁদুস্তান বিজয়ের পথে বাবুর 

ফেব্রুয়ারি, ১৫১৯ ঈসায়ী ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে আমি বাজৌর থেকে ভেড়া অভিমুখে সেনা অভিযানের আদেশ দিয়ে দিয়েছিলাম। [১]

[১. ভেড়া বর্তমানে ঝিলাম নদীর তটে শাহপুর জেলার মধ্যে অবস্থিত।—অনুবাদক] 

এবার আমার মন-মস্তিষ্কে হিঁদুস্তান বিজয়ের কথা পুরোপুরিভাবে দৃঢ় হয়ে গিয়েছিল। ভেড়া সম্পর্কে আগে আমি শুনে রেখেছিলাম। সেটি হিঁদুস্তানের সীমা রেখায় অবস্থিত। আমার হাতে বিশাল সংখ্যক সেনা এসে গিয়েছিল। আফগানদের খুব বড় সহযোগিতা পাচ্ছিলাম। আমি আমার সেনার শীর্ষ-অধিকারীদের সঙ্গে পরামর্শ করলাম। এক অধিকারী পরামর্শ দিতে গিয়ে বললেন—

‘যদি হিঁদুস্তান বিজয়ের জন্য রওনা হতে হয় তাহলে পিছনে কাবুলে সেনা শক্তি মজবুত হতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হলো সেনার একটা শক্তিশালী অংশ কাবুলে রেখে যাওয়া। পর্যাপ্ত সংখ্যক সৈনিক বাজৌরে, আপতকালীন অবস্থার জন্য রেখে যাওয়া হোক, প্রয়োজন পড়লেই যেন দ্রুত ডেকে নেওয়া যায়। লামঘানে অশ্বারোহী সেনার শক্তিশালী দল সংরক্ষিত রাখা হোক, কেননা, কাবুল থেকে রওনা হয়ে লামঘান পৌঁছানো অবধি অশ্বারোহী সৈনিক ও অশ্ব এতটা ক্লান্ত হয়ে পড়বে যে, তাদের পক্ষে পরবর্তী সফর জারি রাখা কষ্টদায়ক হয়ে পড়বে।’ 

আমার সামনে যে পরামর্শ এল তা খুবই তথ্যপূর্ণ ছিল। আমি তার উপর পুরো গাম্ভীর্যের সঙ্গে আমল করার ব্যবস্থা করলাম। 

১৫ ফেব্রুয়ারি আমরা দরিয়া-এ-সিন্দ (সিন্ধুনদ)-এর তটে গিয়ে পৌঁছালাম। 

মীর মুহম্মদ ও তার বড় ভাই, যে অনুসন্ধানী দলের সৈনিকদের মধ্যে খুবই চোস্ত দুরুস্ত ও সাহসী সৈনিক ছিল, তাকে আমি সিন্ধু তটের উপরের ও নিচের অংশের পুরো জানকারি নেওয়ার জন্য পাঠালাম। 

১৬ ফেব্রুয়ারি আমাদের সেনা শিবিরগুলো থেকে বেরিয়ে এল। সিন্ধুনদের ওই ক্ষেত্রটি সোয়াত নামে পরিচিত ছিল। সোয়াত উপত্যকা ছিল ঘন জংলি এলাকা। ওখানকার লোকেরা এই এলাকাকে ‘কর্গখানা’ (গণ্ডারদের বিচরণক্ষেত্র) বলত। 

গণ্ডার সন্ধানে সৈনিকদের একটি দল পাঠানো হলো, কিন্তু ঘন জঙ্গলের মধ্যে তাদের দেখতে পাওয়া গেল না। তবে সন্ধান ব্যর্থ হলো না। একটি বাছুর দেখতে পাওয়া গেল। তাকে আক্রমণাত্মক অবস্থায় দেখে সৈনিকেরা তীর ছুড়ল, তবে লাগল না। কিছুক্ষণ পর আরেকটা দেখা গেল। এবার অগ্নি-উদ্গীরণকারী অস্ত্র দিয়ে নিশানা করা হলো। তাকে মারা হলো। সৈনিকদের আনন্দ ও আবেগের আর সীমা-পরিসীমা রইল না। যে কেউ তাকে দৌড়ে দেখতে যাচ্ছিল। তাকে উঠিয়ে সেনা-শিবির পর্যন্ত নিয়ে আসা হলো! 

সন্ধা নেমে ছিল। নামাজের পর শোওয়ার সময় এসে গেল। ওই সময়ে অনুসন্ধানী দলের লোক ফিরে এল। উৎসাহব্যঞ্জক বার্তা বয়ে এনেছিল সে। 

জুমআ রাতের দিন, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৫১৯ ঈসায়ী সনে ঘোড়া ও উটের পিঠে সৈনিকদের কাফেলা সিন্ধু নদ পার হওয়ার জন্য অগ্রসর হলো। পদাতিক বাহিনী সবার পিছনে ছিল। 

নদী পার করতে কিছুটা সমস্যা দেখা দিল, তবে বাধা হলো না। আমাদের সেনা দুপুরের পর সিন্ধু নদ পার হয়ে গেল। জোহরের নামাজের পর অর্ধেক রাত পর্যন্ত সফর জারি রইল। নিশ্চিত রূপে এটা দীর্ঘ সফর ছিল। এই সফরে বহু ঘোড়া অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারা আর অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। ওখানেই তাদের সড়কের কিনারে ছেড়ে দেওয়া হলো। 

নেমক (লবণ) পর্বতমালা 

ভেড়ার উত্তরে চৌদ্দ মাইল দীর্ঘ নেমক পর্বতমালা ছিল, যার সম্পর্কে কোহ-ই-জুদ নামক পুস্তকে আমি আগেই পড়ে রেখেছিলাম। এই পবর্তমালার নিচের অংশে দুটি উপজাতি বসবাস করত, এদের একটি জুদ ও অপরটি জনজুহা নামে পরিচিত ছিল। 

এই দুই উপজাতির স্ব-স্ব এলাকায় বাদশাহী ছিল। তাদের রাজ্য সীমা ভেড়া ও নিয়াবের মধ্যবর্তী অংশ পর্যন্ত ছিল। উভয় জাতির লোকই মৈত্রীপূর্ণ ব্যবহার রাখত। হুকুমতের ক্ষেত্রের বিষয়ে তাদের মধ্যে একটি চুক্তি ছিল যে, কারো ক্ষেত্রের উপর না কম, না বেশি, কেউ দখল করবে না। তাদের রাজ্যে বলদ ও ইয়াক প্রধানত সওয়ারি রূপে ব্যবহৃত হতো। তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সৈনিক ও ছিল। জুদ ও জনজুহা উভয় জাতিই কয়েকটি গোত্রে বিভক্ত হয়ে ছিল। 

চৌদ্দ মাইল বিস্তৃত সেই পাহাড়ি উপত্যকা ভেড়া দেশ থেকে হিন্দুকুশ পবর্তমালায় গিয়ে মিলত, তবে মধ্যে দিনকোট উপত্যকা পড়ত, যেখানে সিন্ধু নদের উৎসমুখ ছিল। 

জুদ উপজাতির সর্বপ্রধান ব্যক্তি হতেন তাদের মুখিয়া। তাঁর ছোট ভাই এবং পুত্র ‘মালিক’ উপাধি ধারণ করতেন। 

জনজুহার মুখিয়া লংগর খানের মামা ছিলেন। সুহানের পানি বাহিত পথ এলাকার শাসক ছিলেন মালিক হাস্ত। এমনিতেই তাঁর আসল নাম অন্য কিছু ছিল। হিঁদুস্তানের লোকেরা কিছু উচ্চারণে স্বর লুপ্ত করে দিতেন-যেমন তারা খায়বরের উচ্চারণকে খবর করে দিত। আসাদ-এর উচ্চারণ করত আস্স্। এই রকমই আমি জেনেছিলাম যে, হাস্ত নামে কিছু বিকৃতি ঘটে থাকবে। 

লংগার খান মালিক হাস্ত-র কাছে আমার বিষয়ে জানকারি দেওয়ার জন্য তাঁর দূত আগেই পাঠিয়েছিলেন। এ জন্য তাঁর এলাকায় পৌঁছাতেই মালিক হাস্ত আমার সামনে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে উপস্থিত হলেন। আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে কথাবার্তা বললাম। সন্ধ্যা নামতেই তিনি ফিরে গেলেন। পরদিন সকালে এলেন তো এক পাল উত্তম জাতের ঘোড়া সাথে করে নিয়ে এলেন। তাঁর বন্ধুত্ব আমার জন্য বেহদ লাভদায়ক ও আমার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সহায়ক বলে প্রমাণিত হলো। 

তিনি হিঁদুস্তানের কয়েকটি দেশের বিষয়ে পূর্ণ জানকারি দিলেন-ভেড়া, খুশআব, চেনাব এবং চিনুট। ওই দেশগুলোতে তুর্কি শাসন কায়েম ছিল। [১]

[১. ভেড়া ঝিলাম তটে, খুশআব ওই নদীতটে ৪০ মাইল দূরে এবং চিনুট ভেড়া থেকে ৫০ মাইল দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ছিল। চেনাব একটি নদীর নাম ছিল। ওই যুগে ওটা একটি বসতযোগ্য ভূমি ছিল না।—অনুবাদক]

আমি ওই ক্ষেত্রগুলোর নিজের অধিকার কায়েমের জন্য সূদৃঢ় অঙ্গীকার করে নিয়েছিলাম। তিনি ওই এলাকার লোকেদের জন্য সতর্কতামূলক বার্তা লিখে দিলেন—

এই কাফেলার কোনো প্রকারের ক্ষতি করার চেষ্টা যেন করা না হয়। কাপড় থেকে নিয়ে সুতা পর্যন্ত ক্ষতি হওয়াও উচিত নয়।’ 

২০ ফেব্রুয়ারি আমাদের বাহিনী কালদা-কহারের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল। কালদা-কহার ভেড়া থেকে উত্তর দিকে ২০ মাইল দূরে অবস্থিত ছিল। এই স্থানটি জুদ পার্বত্য এলাকার মধ্যে ছিল। ওখানে ছয় মাইল বৃত্তাকারের একটি ঝিল ছিল। পার্বত্য এলাকার চারদিক থেকে ওই ঝিলে এসে পানি জমা হতো। 

এই ঝিলের উত্তরে একটি সুন্দর উপত্যকা ছিল। 

ওই স্থানে আমি একটি বাগ (বাগান) লাগানোর ব্যবস্থা করালাম। আমি ওই বাগের নাম রাখলাম বাগ-এ-সাফা। 

ওই বাগের বিষয়ে পরে আমি জানতে পারি সেটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও শান্তি দায়ক আবহাওয়া মণ্ডিত এলাকায় পরিণত হয়েছে। কালদা কহার থেকে পরদিন আমাদের সেনা-কাফেলা আগে বাড়ল। পথিমধ্যে হামতাতু নামক স্থান পড়ল। সেখানে কিছু স্থানীয় লোক আমাদের প্রতীক্ষায় ছিল। তারা তাদের হাতে সম্মানজনক উপহার নিয়ে রেখেছিল। 

তাদের মধ্যে পৌঁছানোর পর আমি জানতে পারিয়ে ভেড়ার মুখিয়া আবদুর রহিম নামক ব্যক্তি তাদের মধ্যে লোক পাঠিয়ে আমার আগমন বার্তা জানিয়েছিলেন। বার্তায় লেখা ছিল—’এ কাফেলা তুর্কিদের, যারা পূর্বেই এই এলাকা অতিক্রম করেছেন। এদের নির্ভয় হয়ে অগ্রসর হওয়ার পথ দেওয়া হোক, স্বাগত জানানো হোক, তাহলে তাঁরা তোমাদের জন্য কোনো প্রকারের ক্ষতির কারণ হবেন না…।’ 

এখানে কিছুক্ষণ থেমে আমাদের সেনা আগে বাড়ল। চির্খের কুরবান নামক স্থানে খাস্তের আবদুল মালিক, তাঁর ভৃত্য মীর মুহম্মদ ও মুহম্মদ খাজা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তাঁরা সাত-আটজন ছিলেন। এঁরা সবাই মুখিয়া। তাঁরা লংগর খানকে তাঁদের সঙ্গে করে রেখেছিলেন এবং তাঁরা ভেড়ার লোকেদের সঙ্গে বাক্যালাপ করে অগ্রবর্তী হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলেন। 

জঙ্গল পার হওয়ার পর আমাদের সেনা ভেড়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল। আমি ভেড়ার নিকট পৌঁছাতেই কিছু প্রধান ব্যক্তি হিঁদুস্তান থেকে আমার সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। 

বাহলুল লোদির পক্ষ থেকে বাবুরকে আমন্ত্রণ 

তাঁরা হিঁদুস্তান থেকে এসেছিলেন। আগতদের মধ্যে প্রধান নাম ছিল দিলওয়ার খাঁয়ের। তিনি বাহলুল লোদির পুত্র ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দৌলত খাঁ এবং আরো কিছু ‘খান’ উপাধিধারী যুবক ছিলেন। তাঁরা আমাকে হিঁদুস্তান আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন। তাঁরা সঙ্গে করে কিছু উত্তম জাতের ঘোড়া ও উট আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। 

জোহরের নামাজের পর আমি ভেড়ার পূর্ব এলাকা পার হয়ে বিলাম যা বহত (ঝিলাম) তটে উপস্থিত হলাম। আমরা ভেড়ার ওই এলাকার লোকেদের কিছুই বললাম না। তারাও আমাদের ক্ষতি করার মানসে আমাদের সেনার ধারে-কাছে আসেনি।[১] 

[১ ভেড়ার ইতিহাস : তাইমুর বেগ ভারত-অভিযানকালে ওই এলাকা অতিক্রম করেছিলেন। ভেড়া, খুশআব, চেনাব ও চিট তাঁর যাত্রাপথে পড়েছিল। তিনি ওখানকার অধিবাসীদের লুট করেছিলেন। তাদের নিজের অধীন করে নিয়েছিলে। মাসুদ মির্জা ও তাঁর পুত্র আসগর মির্জার মৃত্যুর পর ওই এলাকা আবার স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল। মাসুদ মির্জা শাহরুখ মির্জার পুত্র এবং তাইমুরের পৌত্র ছিলেন। মাসুদ মির্জা সম্পর্কে একথাও প্রচলিত আছে যে, নিজেকে মাসুদ কাবুলি বলে অভিহিত করতে তিনি বেশি পছন্দ করতেন। 
দৌলত খান ইউসুফ খায়েল, তাতার খান, দৌলত খানের পিতা ছিলেন। এই খানেদের সংখ্যা ছিল ছয়-সাত জন। তারা হিঁদুস্তানের বাদশাহ বাহলুল লোদির অধীনস্ত এলাকাগুলোর সরদার নিযুক্ত ছিলেন। বাহলুল লোদির হুকুমত হিঁদুস্তানের উত্তর এলাকায় সতলহের উত্তর এবং সেরহিন্দে কায়েম ছিল। তাতার খানের মৃত্যুর পর সিকান্দার লোদি সালতানাত দেখভাল করেছিলেন। তিনি তাতার খানের পুত্রদের কাছ থেকে হুকুমত ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। লাহোরকে দৌলতখানের জন্য দিয়ে দিয়েছিলেন। 
ঐতিহাসিকদের মতে, বাবুরের হিঁদুস্তান আক্রমণের সময় বাহলুল লোদির ইব্রাহীম লোদির পক্ষে রাজ্যপাল নিযুক্ত দিলেন। বাহলুল লোদি ও ইব্রাহীম লোদির মধ্যে মনোমালিন্য হয়ে গিয়েছিল। বাহললু লোদির নজর ইব্রাহীম লোদির হুকুমতের উপর পড়ে গিয়েছিল। 
বাহলুল লোদির পুত্র দিলওয়ার খাঁ বাবুরকে ভারত আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন।–অনুবাদক]

বাবুরের পরবর্তী সফর 

২২ ফেব্রুয়ারি আমি অনুসন্ধানী দলের সৈনিকদের পরবর্তী এলাকার জানকারি নেওয়ার জন্য পাঠালাম। ওইদিন আমি ভেড়ায় পৌঁছালাম। ওই দিন সংগুর খান জিনজিহা আমার কাছে অধীনতা স্বীকার করতে এলেন। তিনি একটি ভালো জাতের ঘোড়া উপহার দিলেন। ওই দিন পাহাড়ি উপজাতিদের মুখিয়া যিনি ভেড়ার চৌদর্থ বলে অভিহিত হতেন, তিনি চার লাখ শাহরুখী মুদ্রার সমপরিমাণ ধন মৈত্রীর উপহার স্বরূপ নিয়ে এলেন। 

দুদিন পরে আমরা খুশাবে পৌঁছে গেলাম। শাহসুজা, ঔরংগের পুত্র শাহ হুসাইনকে খুশাবের অবস্থার খবরাখবর নিতে আগে পাঠিয়ে দিলেন। 

২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৫১৯, শনিবার শাহ হুসাইনের নেতৃত্বে খুশাব অভিমুখে সৈন্যরা এগিয়ে চলল। 

বর্ষা ও তুফানের মুখোমুখি 

২৬ ফেব্রুয়ারি আমাদের সেনা সম্পূর্ণরূপে সমতল এলাকার মধ্যে ছিল। তখন অবস্থাৎ এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি পড়তে হলো। তারপর, বৃষ্টির কহর নাজিল হলো, এমন তুমুল বর্ষণ হলো যে, স্থলভূমি পানির নিচে তলিয়ে গেল। জোহরের নামাজের সময় অবস্থা এমন হলো যে, দূরদূরান্ত পর্যন্তও কোথাও এক ইঞ্চি পরিমাণ ভূমি দর্শনও দুর্লভ হয়ে গেল। সর্বত্র হাঁটু সমান পানিতে ভরে উঠল। সৈন্যদের পায়ে হেঁটে চলা অপেক্ষা সাঁতার কেটে এগিয়ে যেতে হচ্ছিল। 

দুপুরের পরে আমি ঘোড়াকে সাঁতার কাটিয়ে পানি কোথা থেকে আসছে দেখার জন্য এগিয়ে গেলাম। পানি কিরকুন-সু পাহাড়ি এলাকার দিক থেকে প্রবল বেগে ধেয়ে আসছিল। আমি ঘোড়াকে সাঁতার দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে সেনাকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাতে লাগলাম। এই বিপদের আশঙ্কায় আমার শঙ্কা বাড়ছিল যে, শিবির ফেলার জিনিসপত্র না জানি কোথায় পানি-স্রোতে ভেসে যায়। তাহলে খাওয়া-দাওয়া সহ যাত্রা-সামগ্রী থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়ে যেতে হবে। 

সাঁতার কাটার সময় সৈন্যদের কাঁধের চাপানো বোঝা সামলাতে বড়ই কষ্টদায়ক হয়ে পড়ছিল। জিনিসপত্র তাঁদের হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল। তারপর তো, সামরিক সরঞ্জাম সামলানো অনেক দূরের কথা ছিল। 

সমস্ত পানি ও তুফান ওই সমতল ক্ষেত্রেই আটকা পড়ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঝিলাম নদীর তট থেকে নৌকার ব্যবস্থা করা হলো। সৈনিকদের হারানো সামগ্রীর সন্ধানে নৌকা পাঠানো হলো। 

সৈনিকরা তাদের হারিয়ে যাওয়া সফরের এবং শিবিরের সরঞ্জামগুলো আধা বেলার মধ্যে খুঁজে নিয়ে এল। ওই দিন বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল। পানি-স্তর অনেক নেমে এসেছিল। জিনিসপত্র সহজে পাওয়া যাচ্ছিল। 

কুজ-বেগদের দলটি সামনে দু’মাইল পর্যন্ত গিয়ে শুকনো রাস্তার সন্ধান করে এল। সেখানে পৌঁছে সেনা আগে বাড়তে পারল। 

১ মার্চ ভেড়া কেল্লায় রাত কাটানোর পর সেনা আগে বাড়ল। সামনের জন্যও এ চিন্তা ছিল যে, বৃষ্টি ও বন্যার মুখোমুখি ভেড়ার উত্তর এলাকায় আর যেন না হতে হয়। 

ভেড়া চার জেলায় বিভক্ত ছিল। ওই রাজ্যকে তুর্কিরা প্রথমে নিজেদের অধীনস্ত করে নিয়েছিল। ওখানকার অধিবাসীরা তুর্কি-অধীনতা স্বীকার করতে অভ্যস্ত ছিল। 

যেহেতু গত দিনে বৃষ্টি ও তুফানের ফলে সেনাদের খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ঘাটতি পড়ে গিয়েছিল, সেহেতু তার ব্যবস্থা আবশ্যিক ছিল। ব্যবস্থার জন্য হাতে ধন থাকা জরুরি ছিল। ভেড়ার শাসক রূপে আমি ভেড়ার চার জেলা থেকে ধন সংগ্রহের ঘোষণা দিয়ে দিলাম। এরকম ধনকে তকাব্বুল বলা হয়। আমি তকাব্বুলরূপী ধন উসুলের জন্য খলিফাকে এক জেলায়, কুজবেগদের দ্বিতীয়টিতে, নাসির দোস্তকে তৃতীয়টিত ও সৈয়দ কাশিম ও মুহিব্ব আলী খানকে চতুর্থ জেলায় পাঠালাম। ভেড়ার জনতা পুরো সহযোগিতা করল। যে যে লোকেদের যেখানে-যেখানে পাঠানো হয়েছিল, সে সব স্থান থেকে তারা কাজ পুরো করে কেল্লায় ফিরে এলেন। 

দিল্লি দরবারে বার্তাবাহক পাঠানোর সিদ্ধান্ত 

৩ মার্চ আমার সাথিরা রায় দিলেন—

‘এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, দিল্লি দরবারে বার্তাবাহক পাঠিয়ে শান্তি পূর্ণভাবে রাজ্য সমর্পণের জন্য বলা হোক।’[১] 

[১. এ প্রসঙ্গে আরো একবার স্পষ্টভাবে জেনে-বুঝে নেওয়া দরকার যে, বাবুর হিঁদুস্তানকে তাঁর রাজনৈতিক অধিকার বলে মনে করতেন। তাইমুর বেগ ভারত জয় করেছিলেন। তিনি ফেরার পথে এই ভূ-ভাগ শাসনের জন্য প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলেন, যাঁরা পরে শাসক হয়ে বসে গিয়েছিলেন। এই শাসকেরা পরস্পরে দলাদলির শিকার হতো এবং অভ্যন্তরীণ কলহে লিপ্ত হতো। বাবুর তাঁর পূর্ব পুরুষের রাজ্য হস্তগত করার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিলেন।—অনুবাদক ]

পরিকল্পনা কার্যকর করার উদ্দেশ্যে পয়লা রবিউল আউয়াল, ৩ মার্চেই মোল্লা মুরশিদের জিম্মায় এ দায়িত্ব অর্পণ করা হলো যে, তিনি হিঁদুস্তানে ইব্রাহীম লোদির কাছে গিয়ে, বাবুরের বার্তা হস্তান্তর করবেন। ইব্রাহীম লোদি ৫-৬ মাস পূর্বে ইস্কান্দার মির্জার মৃত্যুর পর ক্ষমতাসীন হন। মোল্লা মুরশিদ আমার লিখিত আদেশ নিয়ে রওনা হয়ে গেলেন। 

সর্বপ্রথম, মোল্লা মুরশিদ লাহোরে পৌঁছালেন। যা ছিল হিঁদুস্তান থেকে প্ৰথম দেশ। ওখানকার ক্ষমতা দৌলত খাঁর হাতে ছিল। দৌলত খাঁ জবাব দেওয়ার জন্য মোল্লা মুরশিদকে কিছুদিনের জন্য ঝুলিয়ে রাখলেন। টালবাহানা করতে থাকলেন। 

লাহোর থেকে মোল্লা মুরশিদ ইব্রাহীম লোদির কাছে বার্তা পৌঁছে দিলেন। 

কয়েক মাস পরে মোল্লা মুরশিদ আমার কাছে ফিরে এলেন তবে কোনো উত্তর ছাড়াই। 

হিন্দালের জন্ম 

মোল্লা মুরশিদকে হিঁদুস্তানে রওনা করানোর পরের দিন ৪ মার্চ সায়ক-আল-দরবেশ নামক সৈনিক দ্বারা, কাবুল থেকে আমার কাছে সুসংবাদ নিয়ে আনা হলো যে, আমি একটি পুত্র সন্তান লাভ করেছি। যেহেতু আমি ওই সময়ে হিঁদুস্তান বিজয়াভিযানে ছিলাম, সেহেতু সেই অভিযানের সঙ্গে মিলিয়ে আমি তার নাম রাখলাম হিন্দাল। 

পুত্র জন্মের পর আনন্দোৎসব ও দাওয়াত চলল। সেখানে চাল ও খেজুরের মিশ্রণে এক বিশেষ রকমের পেয় আমাদের জন্য প্রস্তুত করানো হলো। ওখানকার লোকে একে বলত রাউশ। বাস্তবিকই এ খুব সুস্বাদু ছিল। কিছু লোক একে আরকও বলত। 

৫ মার্চ, সোমবার, ভেড়ার শাসনভার হিন্দু বেগের হাতে তুলে দিয়ে আমি অগ্রবর্তী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। 

সেনা চেনাব অভিমুখে চলতে লাগল। ওই সময়ে সৈয়দ আলী খানের পুত্র শুনাচির খান চেনাব তটে তাঁর নিজের সেনাদলসহ আমাদের সেনার আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওখান থেকে তার পথ প্রদর্শনের কথা ছিল। 

খাখর জাতিদের উপর বিজয় 

পরবর্তী এলাকা ছিল খাখর উপজাতিদের। খাখরদেরও জুদ ও জনজুহা জাতিগুলোর মতো মুখিয়া ছিল। খাখররাও দুই উপজাতি দলে বিভক্ত ছিল, একটি তাতার খাখর, ও অন্যটি হাতী খাখর। এ দুই উপজাতি পরস্পরে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। 

হাতী উপজাতির লোকেরা পর্বতমালার নিচু-নিচু এলাকায় বসবাস করত।

তাতার খাখর গোত্রগুলোর মুখিয়া দৌলত খাঁর অধীনতা স্বীকার করত। তাদের গর্ব ছিল যে তারা দৌলত খাঁ-র পুরো অনুগত ছিল। 

হাতী গোত্রের সরদারের তখনও পর্যন্ত দৌলত খাঁ-র সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। 

হাতী গোত্রের লোকেদের উপর যখন তাতাররা হামলা চালায় তখন তার মোকাবিলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা তাদের দ্বারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। তাদের প্রাণ দিতে হয়, নিজেদের রাজ্যও হারাতে হয় এবং স্ত্রীদেরও। তাতাররা তাদের সুন্দরী স্ত্রীদেরও সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল। 

হাতী গোত্রের লোকেদের বহিরাগমনের অভিজ্ঞতা ছিল। সে জন্য তারা আমাদের সেনার মোকাবিলায় অবতীর্ণ হওয়ায় মতো ভুল করেনি। তারা অধীনতা স্বীকার করে নেয়। 

হাতী গোত্রের রাজ্যে অবস্থান করে আমাদের সৈনিকেরা খুব আনন্দ ফুর্তি করেছিল। আমি সেখানে বেশ কিছুদিন যাবৎ সেনা শিবির ফেলে রাখি, যাতে তারা সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ-দুরুস্ত থাকার অবসর পায়। 

৯ মার্চ আমাদের সেনা নৌকা যোগে ঝিলাম নদী পার হলো। ঝিলাম পারের এলাকা ছিল বাগান সদৃশ। এখানে বৃক্ষ ছিল খুব ছায়াদার এবং ঘন। ওখানকার ভূমিতে খুব আখের চাষ হতো। সেখানে আমি সেচের কাজে পায়াওয়ালা বালতি ব্যবহার হতে দেখেছিলাম। চক্রাকার ঘেরার মধ্যে দিয়ে নিচে থেকে উপরে বালতি ভরে পানি তোলা হচ্ছিল, উপরে তুলেই বালতি উপুড় করে পানি ঢেলে দেওয়া হচ্ছিল। এইভাবে সেচের জন্য পানি সামনে বয়ে যাচ্ছিল। একই ক্রিয়া বারবার করা হচ্ছিল। 

১২ মার্চও আমাদের সেনা খুব আনন্দোৎসব করল। ওই দিন শাহ হাসান খুশাব থেকে ফিরে আসেন। তাকে ধন উসুলের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ ধন উসুলি রাজকর স্বরূপ ছিল। খুশাবের লোকেরা স্বেচ্ছায় ও সানন্দে রাজকর (বা রাজস্ব) আদায় করেছিল। সে অনেক ধন নিয়ে ফিরেছিল। 

অন্য তিন এলাকা থেকে রাজকর উসুলে পূর্ণ সাফল্য পাওয়া গেল। হাতী গোত্রগুলোর একটি এলাকার নাম ছিল পরহাল। ওখান থেকে কুজবেগদের দ্বারা খবর আনা হলো যে, ওখানকার লোকেরা অধীনতা স্বীকারে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 

পরহালা, উপত্যকা স্থিত এলাকা ছিল। সেখানে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে পৌঁছানো যেত। আমি একটি সেনাদল পাঠালাম পরহালাদের দমনের জন্য। এক মাইলের পর রাস্তা পাঁচটি ভাগ হয়ে চলে যেত। আমাদের সেনা সেখানে পৌঁছাতেই পরহালার আদিবাসীরা তীর-ধনুক নিয়ে তাদের সামনে এসে গেল। তারা পাহাড়ের প্রতিটি চাতালে দল বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিল। 

সৈনিকেরা অগ্নি-উদ্গীরণকারী অস্ত্র চালিয়ে তাদের নিধন করল। আরো সামনে হাতীদের প্রধান তখবাদীর দিকে অগ্রসর হলে ত্রিশ-চল্লিশ জন ধনুর্ধরের সঙ্গে মোকাবিলা হলো। তাদের কিছু অশ্বারোহী ছিল আর ছিল পদাতিক। 

দোস্ত বেগ আমাদের সেনার নেতৃত্ব দিচ্ছিল। সে হাতীদের উপর জবরদস্ত হামলার হুকুম দিল। 

কিছু তীরন্দাজের লাশ পড়তেই তাদের মধ্যে ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল। উত্তর-পশ্চিমে তাদের একটা কেল্লা ছিল। কেল্লা পর্যন্ত ধাওয়া করে সৈনিকেরা তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করল। আমাদের সেনা কোল্লা অধিকার করল। 

পিছে-পিছে আমিও তাতার খাখরদের এলাকা যখন পার হচ্ছিলাম তখন অনেক খাখর যোদ্ধা আমাদের কাছে এসে অধীনতা স্বীকার করে নিল। তাদের মধ্যে আমীন মুহম্মদ তরখান, আরঘম ও করাচা নামক ব্যক্তিরা প্রধান ছিলেন। তাঁরা সরুপা-কে স্বেচ্ছায় আমাদের কাছে সমর্পণ করলেন। সেখানে কিছু গুর্জর জাতির লোকও বসবাস করত। 

মাগরিবের নামাজের পর আমরা খাখরদের সম্পূর্ণভাবে নিপাত করে দিয়েছিলাম। 

ওই দিন কালকা-কোহাত নামক স্থানটিও আমি অধিকার করে নিয়েছিলাম। এখানকার সরদার যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি আমাকে সম্মান প্রদর্শন মূলক খিলআত পেশ করলেন। তিনি সম্মুখবর্তী হাতী উপজাতিদের পত্র লিখে আমার অধীনতা স্বীকার করার পরামর্শ দিলেন। তিনি এক ভৃত্যকে মুহম্মদ অকশি জংগের কাছে পাঠালেন। 

আমি ওখানকার হাজারা এলাকাটিকে আমার পুত্র হুমায়ূনকে উপহার দিলাম (হুমায়ূনের বয়স তখন ১২ বছর ছিল)। তার সাহায্যের জন্য নিজের কিছু বিশ্বস্ত ভৃত্যকে বাবা দোস্ত বেগের সরপরস্তিতে রেখে গেলাম। হলাহিলের দারোগার পদ দিয়ে তাকে সেখানকার সাথে সম্পর্কিত রাজ্য ব্যবস্থা বিষয়ক কিছু বিশেষ অধিকার দিলাম। 

১৯ মার্চ আমি সসৈন্যে অগ্রবর্তী হলাম। ওই সময় আমার কাছে ৫৭০ উট ছিল। তাদের পিঠে করে সেনা শিবিরের সরঞ্জামাদি সহজে বহন করা যেত। 

আমি নীল-আব যেখানে দুই নদীর সঙ্গম রয়েছে, নৌ-যোগে পার হলাম। 

ওই সময় মুহম্মদ আলী জংগ আমার কাছে আবেদন জানাল, ভেড়া দেশটিকে শাসনের জন্য তাকে দিয়ে দেওয়া হোক। তার আবেদন স্বীকার করা সম্ভব ছিল না, কেননা, সেখানকার শাসন-ব্যবস্থা আমি হিন্দু বেগকে আগেই দিয়েছিলাম। আমি পরবর্তীকার রাজ্যটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার উৎসাহ বাড়িয়ে রাখলাম। 

২৬ মার্চ শাইকিমে পৌঁছানোর পর, প্রদেশের ১০০ মুখিয়া হাঁটু গেড়ে বসে আমার অধীনতা স্বীকার করার রসম আদায় করলেন। তাঁরা রুপা ও বস্ত্র একটি গরুর গাড়িতে এবং একটি মহিষের পিঠে চাপিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। হিঁদুস্তানের মাটিতে তাঁরা আমাকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যেকার ছয় ব্যক্তি মুখ্য ভূমিকা পালনের জন্য সামনে এলেন। একজনের নাম ছিল দিলজাক আফগান-তিনি বললেন; তাঁকে মালিক বুখান ও মালিক মূসার পক্ষ থেকে আমাকে আপনার খিদমতে পাঠানো হয়েছে। 

অন্যরাও তাঁদের পাঠানো লোকেদের নাম বললেন। 

২৭ মার্চ ‘আলী মসজিদ’ এলাকা পার হওয়ার পর ইয়াকুর খায়েল নামক ব্যক্তি এসে মিলিত হলেন। তাকে মারুফ নামক এলাকেদারের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি ১০ ভেড়া ও দুই গাধার বোঝা পরিমাণ চাল আমাকে নজরানা স্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। এইভাবে প্রতিদিন আমার সফর জারি রইল এবং নির্বিরোধে এলাকেদারদের দ্বারা অধীনতা স্বীকার করা হতে লাগল আর উপহার আসতে লাগল। 

এই সফরে যদিও কোনো বড় যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হলো না তা সত্ত্বেও আমার কিছু বিশ্বস্ত, অনুগত যোদ্ধা সাথি মৃত্যুবরণ করে আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। তাদের মধ্যে দোস্ত বেগও ছিলেন। পথিমধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তিনি তরবারি চালাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত হলাম। অকশা থেকে এখান পর্যন্তকার সফরের মধ্যে দোস্ত বেগসহ আট যোদ্ধা সাথি আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। 

দোস্ত বেগের অকাল মৃত্যুর পর আমি পারহালার হাকিম নিযুক্ত করলাম তার ছোট ভাই নাসির মুহম্মদকে। 

৩০ এপ্রিল মঙ্গলবারের দিনে খাজা শিহায়ারানকে আমি সামনের রাস্তায় জানকারির জন্য পাঠালাম। তিনি নিজের কাজ সম্পন্ন করে দুপুরের সময় ফিরে এলেন। ওই দিন আমি রোজা রেখেছিলাম।[১] আমার রোজা রাখা নিয়ে ইউনুস আলী, যাকে আমি বন্ধু বলতে পারি, সে রসিকতা করে বলল—

‘মঙ্গলবারের দিন! যাত্রাবসর, তার উপর রোজা রাখা, এটা কি অলৌকিক কিছু?’ 

[১. ওই দিন বাবুরের রোজা রাখার কথা শুনে ইউনুস আলীর আশ্চর্য হওয়াটা স্বাভাবিক, না অস্বাভাবিক ছিল ঠিক বোঝা যায় না। ইউনুস জানতেন যে, মুসলমানরা রমজানের রোজা ছাড়াও বারো চাঁদের কোনো-কেনো দিনে রোজা রাখেন। কেউ বা শুক্রবারেও রোজা রাখেন, কেননা, ওই দিনটিকে মুসলিমরা একটি বিশেষ দিন হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তাঁরা ঈদের নামাজের মতো বড় জামায়াতের সাথে দুপুরের নামাজ পড়েন। তবে, হিঁদুস্তানে মঙ্গলবারে উপবাসী থাকার একটা ধর্মীয় ভাবধারা পৌত্তলিকদের মধ্যে থাকার কথা জানা যায়। ইউনুস সম্ভবত, ওই দিন বাবুরের রোজা রাখায় আশ্চর্য হয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, হিদুদের উপবাস ও মুসলমানের রোজা কি সমপর্যায়ের? নিশ্চয়ই নয়। তবে কেন ইউনুস ওই দিকে ইঙ্গিত করলেন? তা ছাড়া হিদুদের হনুমান দেবতাকে খুশি করার জন্য তাঁরা মঙ্গলবারে উপবাস করেন বলে শোনা যায়। তো, বাবুরের রোজা রাখার সঙ্গে হুনুমান দেবতার কী সম্পর্ক? তিনি তো মুসলিম। তাঁর আমল, ইবাদত সবই তো পরম প্রভু আল্লাহর জন্য। সবদিন আল্লাহর দিন। সুতরাং মুসলিমের রোজাও আল্লাহর খুশি নিমিত্ত।—অনুবাদক] 

সফর জারি রেখে আমাদের সেনা বিহজাদী নামক নগরে গিয়ে পৌঁছাল। ওখানকর কাজির বাড়িতে আমি আমার আগমন বার্তা পূর্বেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কাজি আমাকে তাঁর বাড়ির দরজায় পেয়ে গদগদস্বরে নিজের ভাব ব্যক্ত করলেন—

‘আমার বাড়িতে আপনার আগমন। আল্লাহর শান! আমার বাড়িতে পাদশাহ (বাদশাহ) এসে রওনক বাড়িয়েছেন।’ 

তিনি অত্যন্ত সুন্দর দাওয়াতের ব্যবস্থা করলেন। 

পরদিন আমরা খাজায় সিহ-ইয়ারান (তিন খাজার সমাহার)-র উদ্দেশে রওনা হলাম। এ হলো বাগিচার নগর। বাগিচাও পর্বতমালার সঙ্গে নিচে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। 

শুক্রবারের দিন যখন আমরা একটি পুলের রাস্তা অতিক্রম করছি তখন ওখানকার চিড়িমার (পাখি ধরা)-রা আমাদের স্বাগত জানাতে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। তারা অদ্ভুত একটা পাখি সঙ্গে নিয়ে রেখেছিল। তারা তার নাম বলল, ‘ডাংগ’। তার আকৃতি ছিল ঘণ্টার মতো। ওই জাতের পাখি এর আগে আমি আর কখনো দেখিনি। পাখিটকে বুড়ো দেখাচ্ছিল। সম্ভবত সেটি হিঁদুস্তানে প্রাপ্য কোনো বিশিষ্ট পাখি ছিল। 

শনিবারের দিন জোহরের নামাজের জন্য শিবির ফেলা হলো। নামাজের পর মদিরা ভোজের আনন্দ করা হলো। 

আমাদের মধ্যে খাজা হাসান আবদুল্লাহ নামক একজন মাতালও ছিল। সে এত বেশি মদিরা পান করেছিল যে, নেশায় মত্ত হয়ে সে বহমান নদীর ধারায় নিজেকে ফেলে দিল। সে নদী বরফাবৃত পাহাড় থেকে বয়ে আসত। পানি এত ঠান্ডা ছিল যে, মানুষের রক্ত জমিয়ে দিত। পানিতে পড়ার পর সে তার নিজের চেষ্টায় উঠে আসতে ব্যর্থ হলো। অন্য সাথিরা তাকে কোনো রকমে তুলে আনল। সে আর কিছুক্ষণ পানিতে থাকলে নিশ্চিতভাবে মারা যেত। 

তার এই মূর্খতাপূর্ণ হরকত দেখে আমি তার উপর খুব অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলাম। আমি এও বললাম যে, তাকে এখানেই রেখে যাব। 

সে ভবিষ্যতে কোনো দাওয়াতের উপলক্ষ ছাড়া আর কখনো মদিরা পান করবে না বলে কসম খেল। তখন আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে রাজি হলাম। 

সে কয়েক মাস যাবৎ কসম পালন করল, তবে অধিক দিন পর্যন্ত তার মাতাল স্বভাব থেকে সে দূরে থাকতে পারল না। 

পরের দিন হিন্দু বেগ কিছু সৈন্য নিয়ে পেরেশান অবস্থায় এসে মিলিত হলো। সে বলল, ভেড়া ও বাজৌরে ইউসুফজাঈ উপজাতিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। 

ভেড়া ও বাজৌরের পুনৰ্বিজয় 

আমি অগ্রবর্তী বিজয়াভিযান স্থগিত করে ভেড়া ও বাজৌরে বিদ্রোহ দমনের জন্য রওনা করিয়ে দিলাম। এই অভিযানে অগ্নি-উদ্গীরণকারী অস্ত্রও তাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলাম।[১]

[১. ঐতিহাসিকেরাও মত প্রকাশ করেন যে, বাবুর কামানের প্রয়োগ সর্বপ্রথম ভেড়া ও বাজীরে করেছিলেন। পরেও, হিঁদুস্তানে জোরালো সংঘর্ষের জন্য বাবুর যুদ্ধগুলোতে কামান ব্যবহার করেছিলেন। ওই সময় পর্যন্ত সারা হিঁদুস্তানের লোক কামানের ব্যবহার জানত না। মধ্য এশিয়ার শাসকদের মধ্যে বাবুরের পূর্বে কেউ কামান ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায় না।—অনুবাদক]  

ইতোমধ্যে আমি নিজে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। প্রচণ্ড জ্বরে শরীর উত্তপ্ত হয়ে উঠতে লাগল। জ্বরের তীব্রতা এতই ছিল যে, মনে হতো শরীরের রক্তে আগুন লেগে গেছে। 

তার আগে আমি জ্বরে যখনই আক্রান্ত হয়েছি, তা খুব জোর দু-তিন দিন থাকত। কিন্তু ইতোমধ্যে দশ-বারো দিন পেরিয়ে গেল। আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হলো না। মোল্লা খাজা আমাকে মদিরায় মিশিয়ে দিনে দু-তিন বার করে ওষুধ খাওয়ালেন, তা সত্ত্বেও কোনো ফায়দা হতে দেখলাম না। 

ইতোমধ্যে খোয়াস্ত থেকে খাজা মুহম্মদ আমার কুশলবার্তা জানতে এলেন। তিনি নজরানা স্বরূপ ঘোড়া নিয়ে এলেন। মুহম্মদ শরিফ নামক জ্যোতির্বিদ ও খোয়াস্ত থেকে এলেন। তিনি আমার গ্রহ-নক্ষত্রের চাল-চলনের বিচার করে আমার দ্রুত আরোগ্য লাভের ভবিষ্যদ্বাণী করলেন। 

কাশগড় থেকে মোল্লা কবীর আমার স্বাস্থ্যের খবর নিতে এলেন। তিনি আন্দিজান ও কাবুল হয়ে এসেছিলেন। তিনি আমাকে সেখানকার অবস্থার সান্ত্বনামূলক জানকারি দিলেন। 

২৩ মে, সোমবার দিন সওয়াদ থেকে ছয়-সাত মুখিয়াসহ মালিক শাহ মনসুর ইউসুফজাঈও আমাকে দেখতে এলেন। 

মালিক শাহ মনসুর তার সঙ্গে করে ইউসুফজাঈ উপজাতির মুখিয়াদের নিয়ে আসা আমার জন্য খুব নিশ্চিন্ততার বিষয় ছিল। আমি তাঁদের সবাইকে সম্মানিত করার এবং পদমর্যাদা প্রদানের কথা ভাবলাম। 

মালিক শাহ মনসুরকে আমি রেশমি লবাদা এবং তার নিচে পরিধানের লবাদা এবং তার বোতামের স্থলে তাকে আমার দ্বারা প্রদত্ত সম্মানচিহ্ন প্রদান করলাম। সঙ্গে আসা মুখিয়াদেরও কোমরবন্দ ও রেশমি জামা উপহার দিয়ে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির কাজ করে দিলাম। 

তাদের সবার মধ্যেকার বার্তায় আমি সওয়াদ দেশের শাসন কার্য চালানোর ভারও তাদের উপর অর্পণ করলাম। প্রত্যেককে আলাদা-আলাদা এলাকার এলাকেদারের নিয়োগ পত্র দিয়ে আমি তাদের এই অধিকার দিলাম যে, আফগানদের উর্বর এলাকা-বাজৌর ও সওয়াদসহ অন্য এলাকায় রাজস্ব রূপে ৬,০০০ গাধার বোঝা সমান চাল উসুল করবে। 

সবাই সম্পূর্ণভাবে প্রসন্ন ও সন্তুষ্ট হয়ে আমার কাছ থেকে প্রস্থান করলেন। যেতে-যেতে তারা সম্পূর্ণরূপে আশ্বস্ত করে গেলেন যে, ইউসুফজঈয়েরা আমাকে সম্পূর্ণরূপে তাদের বাদশাহ বলে মেনে নিয়েছে। এবার ইউসুফজাঈ আফগানদের পুরো নিষ্ঠা ও আনুগত্য আমার প্রতি থাকবে। এখন আর সেখানে কোনো বিরোধ বা বিদ্রোহ হবে না। যদি কোনো বিদ্রোহী মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে এবার আর বাদশাহি ফৌজের তাদের বিরুদ্ধে নামার আর প্রয়োজন হবে না। তাঁরা স্বয়ং নিজেরা মিলে বিদ্রোহীদের দফা রফা করবেন। 

আমি তাঁদের আশ্বাসে সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট হলাম। 

২ জুন, বুধবার আমি হাকিমের পরামর্শে জোলাব নিলাম। ৫ জুন নিজে সুস্থবোধ করতে লাগলাম। 

৭ জুন, সোমবারের দিন কাশিম বেগের ছোট পুত্র হামজা বেগের বিবাহ খলিফার বড় মেয়ের সঙ্গে হওয়ার খবর শুনলাম। ওই অবসরের জন্য উপহার রূপে ১,০০০ শাহরুখী (শাহ মুদ্রা) ও কিছু সুসজ্জিত ঘোড়া পাঠালাম। 

৮ জুন, মঙ্গলবারের দিন শাহ বেগ শাহ হাসান আমার স্বাস্থ্য লাভের খুশিতে মদিরা ভোজের অনুমতি চাইলেন। তাদের প্রস্তাব পেশ হতেই খাজা মুহম্মদের পক্ষ থেকে কয়েকজন বেগও তাদের পিছনে সমর্থনের কাতারে দাঁড়িয়ে গেল। তাদের মধ্যে ইউনুস আলী ও গদল তগাইয়ের মতো আমার প্রিয় পাত্ররাও ছিল। তাদের প্রস্তাব আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারতাম না। আমি সবিনয়ে বললাম—

‘আমার জন্য শরাব এখনও নিষিদ্ধ…।’ আমি পরে বললাম, ‘কিন্তু, দাওয়াত হবে, তবে এইভাবে হবে যে, আমি তোমাদের মধ্যে থেকে শুধুমাত্র পানি পান করব, শরাব নয়। তোমরা সবাই প্রাণ ভরে শরাব পান করে আনন্দ করবে, কিন্তু সব কিছু শালীনতার সঙ্গে হতে হবে। নেশায় মাতাল হওয়ার অনুমতি হবে না…।’ 

সবার চেহারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। ছোট একটা তাঁবু ওই মদিরা উৎসবের জন্য আলাদাভাবে ফেলা হলো। তাঁবুকে সাজানো হলো। তাঁবু সেখানে ফেলা হয়েছিল তার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সবুজ বাগ-বাগিচার নজর কাড়া দৃশ্য বিরাজমান ছিল। 

তাঁবুর একটি পথ গিয়াসের বাড়ির সামনের দিকে ছিল। পানাহারের সমস্ত বস্তু ওই বাড়ি থেকে আনা হচ্ছিল। 

কিছু সময় পর্যন্ত তো উৎসব ঠিকঠাক চলছিল। তবে, ওই লোকেরা তর্কি মুহম্মদ কুল বেগকেও উৎসবে শামিল হওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিয়েছিল, মোল্লা কিতরবঘরকেও ডেকে নিয়েছিল। 

ওই দুজনের শামিল হওয়ার পর আমার মনে চিন্তা এসেছিল—

‘যদি তুমি তোমার ফুলশয্যায় কম্বল পরিহিত বন্ধুদের শামিল করে নাও তাহলে কী পরিণাম হবে?’ 

এই চিন্তা আমার মনে এজন্যই এসেছিল, কেননা, ওই দুই ব্যক্তি ছিল ‘চরম মদখোর’। খেয়ে মত্ত হয়ে যাওয়াটা তাদের স্বভাবের অংশ ছিল। 

এ রকমের দাওয়াতগুলোতে কেউ মদ খেয়ে মাতাল হোক এ চলন আমাদের মধ্যে ছিল না। মাতাল ব্যক্তি তা সে যতই জো হুজুরকারী হোক, তাদের এ মাতলামো আমার পছন্দ ছিল না। 

তবে, আল্লাহর শোকর যে, তারা দুজন মাতাল হয়নি, দাওয়াতের কার্যক্রম সাধারণভাবে চলতে থাকল। 

ইব্রাহীম চুহরার দ্বারা জোহরের নামাজের খবর পাঠানোর পর দাওয়াত কার্যক্রম থামিয়ে দেওয়া হলো। 

আমি কিছুদিন যাবৎ মদ স্পর্শ করিনি। আমার চিকিৎসক মদ খাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ রেখেছিলেন। 

কয়েক দিন পরে চিকিৎসকের কাছ থেকে অনুমতি মেলার পর আমি আবারও শরাব পান করতে শুরু করি। তখন আরো একবার ওই রকমই মদিরা উৎসবের ব্যবস্থা করা হলো। এবার তালার বাগিচায় যা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল, সেখানে আপেল গাছের নিচে উৎসবের আয়োজন হলো। 

২৮ জুলাইয়ের দিন, যখন আমি আমার বিশেষ সৈনিকদের উপত্যকার দিকে পাঠিমে দিয়েছিলাম। আমি পরবর্তী সফরের পরিকল্পনা করছিলাম তখন কিছু সৈনিক দৌড়ে পালিয়ে আমার সামনে চলে এল। তারা আমাকে একটি দুঃসংবাদ ছিল। খবর ছিল, চল্লিশ-পঞ্চাশ জন আফগান-বিদ্রোহীর একটি দল তাদের সেনা শিবিরে হামলা চালিয়েছে। বলল, হুসাইন হাসান নামক অশ্বারোহী সৈনিক ওই বিদ্রোহী আফগানদের দূর থেকে দেখতেই তাদের তাড়া করতে ঘোড়া ছুটিয়ে দিয়েছিল। সে একাই বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল। তাকে ঘিরে ফেলে আফগানরা তরবারির আঘাতে আঘাতে তাকে ঘোড়া থেকে ফেলে দেয়। তারা ঘোড়াটিকেও হত্যা করেছে এবং ছুরি দিয়ে তাকে টুকরো টুকরো করেছে। 

হয়রান হওয়ার মতো কথা এইটাই ছিল যে, শিবিরের কোনো সৈনিক হুসাইন হাসানের সাহাযার্থে এগিয়ে যায়নি। 

এ খবর পেতেই আমি অতি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছালাম। তখন পর্যন্ত বিদ্রোহী আফগানরা শিবিরে হামলা চালিয়ে চলে গিয়েছিল। তবে, তখনও তারা বড় কোনো ক্ষতি করতে পারেনি, কেননা, আমার সহযোগিতার জন্য গদল তোগাই, পায়েন্দা মুল্ক, আবুল হাসান ও তীরন্দাজ মোমিন আতাকা এসে সেখানে ধমকাল। তারা সবাই উপত্যকার দিক থেকে ফিরে এসেছিল। হামলার খবর তারাও পেয়ে গিয়েছিল। 

মোমিন আতাকা দূর থেকেই দৌড়ে আসতে আসতে দুশমনদের উপর তীরন্দাজি শুরু করেছিল। সে দ্বিগুণভাবে তীর চালিয়ে দুশমনদের মুণ্ডু উড়িয়ে দিচ্ছিল। সে কিছু দুশমনকে দেখতে-দেখতেই মাটিতে ফেলে দিয়ে তাকে মৃত্যুমুখী হতে বাধ্য করল। 

আমি ও আমার বাহাদুর সাথিরা দুশমন আফগানদের তরবারির ঘেরার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেললাম। 

তাদের মুণ্ডুপাত হতে লাগল। তারা আমাদের শিবিরের সাথিদের সামান্যতম ক্ষতিও করতে পারেনি, এর জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ ছিলাম। দেখতে দেখতেই ৪০-৫০ আফগানের সবার মাথাকাটা দেহ শিবিরের চারপাশে পড়ে ছিল। যাদের সবাইকে নিপাত করার পর আমি শিবিরের সকল সৈনিককে বাইরে বেরিয়ে আসতে আদেশ করলাম। ওই সময়ে আমি ভীষণ ক্রুদ্ধ ছিলাম। আমি চিৎকার করে ওই সৈনিকদের লজ্জাম্বিত করতে গিয়ে বললাম—

‘কী লজ্জায় কথা, তোমাদের ভাগ্য ভালো যে, তোমরা এখনও এই মাটির উপরে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছো আর দুশমনদের লাশ তোমাদের সামনে পড়ে আছে। 

যে দুঃসাহসিক ঢঙে এই শিবিরে তারা পৌঁছেছে, সেখানে আমরা যদি দ্রুত তোমাদের সাহায্যের জন্য এসে না পড়তাম তাহলে তাদের পরিবর্তে তোমাদের লাশ এখানে পড়ে থাকত। তারা তোমাদের দেহ টুকরো-টুকরো করে ফেলে যেত। 

তোমাদের বাহাদুরি ওই সময়ে কোথায় গিয়েছিল যখন আমাদের বাহাদুর শহীদ হুসাইন হাসান দুশমনদের তাড়া করে নিয়ে গিয়ে তাদের মধ্যে গিয়ে ঢুকে পড়েছিল… সে তোমাদের রক্ষার জন্যই তো তাদের উপর সিংহের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সে যখন অবরুদ্ধ হয়ে গেল তখন কি তোমরা দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিলে? তোমাদের সংখ্যা আক্রমণকারী আফগানদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। বাহাদুরিতে তোমরা তাদের তুলনায় কিছুমাত্র কম ছিলে না… তোমাদের কাছে অস্ত্রেরও ঘাটতি ছিল না তা সত্ত্বেও তোমরা কেন দাঁড়িয়ে ছিলে? 

তোমাদের পদ ও পরগনা (জীবিকার জন্য প্রদত্ত এলাকা) ফিরিয়ে নেওয়া উচিত…।’ ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে তাদের প্রতি কুপিত হতে থাকলাম-“তারা তোমাদের দাড়ি কামিয়ে দিত, তোমাদের নির্মমভাবে মেরে বেহাল অবস্থায় নগরীর আবাদির দিকে খেদিয়ে দিত। যাতে নগরবাসী দেখে যে, বাবুর বাহিনীর বাহাদুর সিপাই কেমন কাপুরুষ। নিশ্চিতভাবে ওই অবস্থায় তোমাদের পদ ও পরগনা কেড়ে নেওয়া হতো…। তোমাদের দিকে কি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারত?’ 

সৈনিকেরা মাথা ঝুঁকিয়ে তাঁদের বাদশাহের কুপিত ভর্ৎসনা শুনতে লাগল।

আমি কিছুক্ষণ যাবৎ তাদের ভর্ৎসনা করার পর, নিজের ক্রোধ সামলে নিলাম। ক্রোধ সামলানোর জন্য ওই লাশগুলো দেখাই যথেষ্ট ছিল, যারা আক্রমণকারী বিদ্রোহী আফগান ছিল। যাদের ইচ্ছাকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মৃত্যুর কোলে চির-নিদ্রায় শায়িত করে দেওয়া হয়েছিল। 

আমাকে ধনুর্ধর মোমিন আতকার জ্ঞান-বুদ্ধির প্রশংসা করতে হলো, যে দূর থেকে তীরন্দাজি করে দুশমনদের কাবু করে ফেলেছিল, বাকি কাজগুলো আমি আমার সরদারদের সঙ্গে করে পৌঁছে গিয়ে পুরো করে দিয়েছিলাম। 

বাক্য-বিদ্ধ সৈনিকেরা ক্ষমা প্রার্থনা করল। তারা বলল যে, হুসাইন হাসানকে ঘোড়া হাঁকিয়ে দুশমনদের দিকে ছুটে যাওয়ার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বুঝতে পারছিল না যে, তাদের কী করা উচিত। ক্ষণেকের জন্য সঠিক সিদ্ধান্তটা না নিতে পারাটাই তাদের ভয়াবহ ভুল প্রমাণ হয়েছে। 

আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। তারা আন্তরিক, বিশ্বস্ত ও সুদক্ষ সৈনিক ছিল। তাদের মধ্যে যেহেতু কোনো সরদার ছিল না, তারা অনুগত স্বভাবের হওয়া সত্ত্বেও নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছিল। 

এ কথা অনুভব করে পর আমি তাদের এরকম অবস্থায় সৈনিকদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে দিলাম। 

কাবুলে পুনঃপ্রত্যাবর্তন 

ইতোমধ্যে আরো একবার খবর এল যে, কাবুলে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। খবর পেতেই আমি সামনে না এগিয়ে কাবুলের দিকে মুখ করলাম। আমি চাচ্ছিলাম যে, ফারগানা ও সমরখন্দ, দুটিই যেভাবে আমার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, সেরকম পরিস্থিতি যেন সামনে আর না আসে। যদিও এখন শুধু কাবুলই নয়, কাবুল থেকে হিঁদুস্তানের মধ্যে আমার অধীনে ছোট বড় অনেক রাজ্য ছিল। প্রথমকার অবস্থা তো আসতে পারত না, তা সত্ত্বেও সামান্যতম গালিফতিও করা সম্ভব ছিল না। কাবুলে পৌঁছানোর পর আমার বিশেষ কোনো প্রয়াস করতে হলো না, অবস্থা আপনিই নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে ষড়ন্ত্রকারীরা যেইমাত্র আমার কাবুল প্রত্যাবর্তনের খবর পেল, অমনি তারা কাবুল ছেড়ে পালিয়ে গেল। 

কাবুল পৌঁছানোর পর আমি একদিনও আরামে কাটাতে পারিনি। কাবুলের অবশিষ্ট উপজাতি আফগানদের এলাকাগুলোকে আমার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রয়াস শুরু করলাম এবং যে এলাকাগুলো প্রথমেই নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল তার নিয়ন্ত্রণ মজবুত করার জন্য আমি সেখানকার সরদারদের কাজে লাগালাম। তাদের পদমর্যাদা বাড়ালাম এবং শাহী ফরমান দিয়ে রাজস্ব উসুলের কাজে লাগালাম। 

এর লাভ আমার সাম্রাজ্যেরও ছিল এবং রাজস্ব উসুলকারী সরদারদেরও ছিল। শাহ ফরমান দিয়ে তাদের এলাকেদারের পদ দেওয়া হয়েছিল। এবার তারা কোনো এলাকায় মুখিয়া মাত্র না থেকে গিয়ে আমার বিশাল সাম্রাজ্যের এক ওহদেদার হওয়ার গর্ব করতে পারত! তারা যে রাজস্ব উসুল করত তার একটা ভালো অংশ তাদের ভাগে আসত। অবশিষ্ট কিছু না কিছু কাবুলের রাজকোষ বৃদ্ধি করত। 

এ ব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর সিদ্ধ হলো। এবার আফগান উপজাতি সরদাররা নিজেদের হিতের স্বার্থে সাম্রাজ্যের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল। তাতে তাদের নিজস্ব অস্তিত্বের প্রতি নিশ্চিত্ততার ভাব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। এ নিশ্চয়তা পরেও কার্যকর থাকুক, এর জন্য একই লাভ প্রাপকরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারা নিজেরা এ জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে লাগল যে, না কোনো বহিঃশত্রু যেন কাবুলে ঢুকতে না পারে আর না কোনো ছোট-বড় অসভ্য উপজাতির বিদ্রোহী হতে পারে। তাদের সম্মিলিত শত্রু যে কোনো রাজ্যের সঙ্গে সংঘর্ষের শক্তি লাভ করে নিয়েছিল, তারা ছোট-বড় যেকোনো উপজাতির সঙ্গে হওয়া অরাজকর্তা দমনের জন্য তারা নিজেরাই সম্পূর্ণরূপে সক্ষম হয়ে উঠেছিল। 

এলাকেদার বানানোর পরে তাদের এ অধিকারও ছিল যে নিজের এলাকায় সুরক্ষা-ব্যবস্থার জন্য তারা প্রয়োজনীয় সৈনিকও রাখতে পারবে। প্রয়োজন পড়লে তারা শাহী সৈন্যের জন্যও দরখাস্ত করতে পারবে। 

৮ সেপ্টেম্বর, ১৫১৫ ঈসায়ী সনে আরো একবার আমি ইউসুফজাঈ আফগানদের প্রতি মনোযোগ দিলাম। আমি তাদের এলাকায় একটি বড় ফৌজ নিয়ে ভ্রমণ করলাম। প্রত্যেক এলাকায় থেমে থেমে সেখানকার আফগান সরদারদের কাছ থেকে ব্যবস্থা সম্পর্কিত প্রতিবেদন তলব করলাম। 

আমি যে ভ্রমণ করলাম, তা প্রয়োজন ছিল। কাবুলে ইউসুফজাঈ আফগানরাই এমন ছিল যাদের পক্ষ থেকে আমার সাম্রাজ্যকে বারবার সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো। যদিও এখন আর আগের মতো অবস্থা ছিল না, আমার বিশাল সেনাবাহিনী প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে আফগানদের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি ছিল। ওই আগমন সেনাই ইউসুফজাঈদের বিদ্রোহ দমনের জন্য যথেষ্ট সক্ষম ছিল। তবে আমি চাইতাম না যে, ইউসুফ জাইদের পক্ষ থেকে এরকম কোনো অবস্থা ফের কখনো পয়দা হোক, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। 

২৬ সেপ্টেম্বর আমার সেনা অগ্রসর হয়ে কিরিক-অরিক নামক স্থানে গিয়ে পৌঁছাল। এই স্থানটি নূর ঘাটে অবস্থিত। সেটি দরবেশদের একটি মশহুর এলাকা। খাজা মুহম্মদ ওই সময়ে সেখানে থেকে দূর-দূরান্ত অবধি মশহুর দরবেশ ছিলেন। 

আমি সেখানে পৌঁছে দীনের দাওয়াতের ব্যবস্থা করলাম। আমার অহলদার খুনতুল নামক বড় একটি ফল নজরানা রূপে নিয়ে এল। ওই ফলের বিষয়ে তো আমার জানা ছিল, কিন্তু খাজা মুহম্মদ ওই ফল কখনো দেখেননি। 

আমি তাঁকে বললাম—

‘এটি হিঁদুস্তানের খরবুজা।’ 

তা টুকরো-টুকরো করে তাঁকে খেতে দেওয়া হলো। তিনি ফলকে মুখে দিয়ে দাঁতে কাটতেই তার স্বাদের ভূরি ভূরি প্রশংসা করতে লাগলেন। 

পরদিন খায়বরের পথ ধরে আমি বাজৌর পৌঁছালাম। ওখানকার খাজা কলাকে আমি আগেই খবর পাঠিয়েছিলাম। তিনি আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। আমি সান্ত্বনা পেলাম যে, বাজৌরে এখন আর আমার কোনো বিরোধী অবশিষ্ট নেই। 

আমি বিবি পুবারকাকে বাজৌরের প্রশাসক বানিয়ে দিলাম, যার অধীনে খাজা কলার বাজৌরের প্রশাসন সামলানোর কাজ ছিল। 

আমি এই দিনগুলোতে বাদাখশান ভ্রমণও করি। সেখানকার প্রশাসক লংগর খানের ব্যবস্থার খোঁজ-খবর নিই। 

খায়বর উপত্যকার নিচের এলাকায় খিজির খায়েলের আফগানদের মধ্যে পৌঁছে আমি তাদের বিশ্বস্ততার প্রশংসা করি। তাদের বিশ্বস্ততার পুরস্কার স্বরূপ সেখানকার নও-জওয়ানদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি করে তাদের প্রতি বিশ্বস্ততা আরো পোক্ত করি 

অক্টোবর ১৫১৯ এর মাসটি আমি কুর্শল ভ্রমণে কাটিয়ে দিই। সেখানকার আবহাওয়া এ সময় বড়ই মনোরম ছিল। 

২৬ অক্টোবর, বৃহস্পতিবারের দিন, আমার কাবুল প্রত্যাবর্তনের পর আমি হিঁদুস্তানের কিছু সওদাগরকে আমার প্রতীক্ষায় পেলাম। তাদের মুখিয়া ছিল ইয়াহিয়া নুমানি নামক ব্যক্তি। সে আমার কাছ থেকে কাবুলে তার ব্যবসায়ী দ্রব্য বিক্রি করার অনুমতিপত্র নেওয়ার জন্য অবস্থান করছিল। আমি তাকে সানন্দে অনুমতি দিয়ে দিলাম। 

২৯ ডিসেম্বর, শক্রবারের দিন আমি তাজিকের নিজরৌ এলাকায় গিয়ে পৌঁছালাম। যেখানে আমার শিকারে যাওয়ার ইচ্ছে হলো। ওই এলাকায় হরিণ, শিকারিদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র ছিল। আমি সৌখিন শিকারিদের সঙ্গে নিলাম। আমি অন্য শিকারিদেরও শিকার করতে দেখলাম। আমি নিজে কোনো শিকার করলাম না, কেননা, ওই দিন আমার হাতে চোট লেগেছিল। আমি ধনুক থেকে তীর ছোড়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। 

১৫২০-র জানুয়ারিতে আমি লমঘান গেলাম। ১৪ দিন পর আমি সেখানকার মন্দরাবার নামক এক নতুন ক্ষেত্র অধিকার করে নিলাম। ওখান থেকে চলার সময় আমি নিংগনজর কাইয়ুম নামক এক ব্যক্তিকে সেখানকার সুবেদারি প্রদান করলাম। নিংগনজকে কাইয়ুমের জন্য সুপারিশ লংগর খান করেছিল। সে আমাকে বলেছিল যে, সে আমার বিশ্বস্ত অনুগতদের অন্যতম। 

২৪ জানুয়ারি, ১৫২০, মঙ্গল বারের দিন আমি কাবুলের দিকে য়াংগ বুলগা সড়ক ধরে রওনা হলাম। আমি সকাল বেলা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করলাম। তারপর ঔলংগনুর পাহাড়তলি ও নদী এলাকা পার হলাম। মাগরিবের নামাজের সময় আমি কারাতু এলাকায় পৌঁছালাম। সেখানকার লোকেরা আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাল। ঘোড়াদের খাওয়ার জন্য মক্কার পাত্র সামনে নিয়ে রাখল। সান্ধ্য ভোজনে আমার জন্য উত্তম আহারের ব্যবস্থাও তারা করে রেখেছিল।[১] 

[১. ২৪ জানুয়ারি, ১৫২০-র পর, ৫ম বর্ষ ১০ মাস পর্যন্তকার বাবুরনামার অংশ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণে হয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে নতুবা বাবুর তাঁর রোজনামচা লেখেননি। তবে, পরবর্তী সম্ভাবনাটা বেশি পোক্ত নয়, কেননা, বাবুর ওই সময়ে কোনো যুদ্ধ বা কোনো পেরেশানিতে ছিলেন না। অতএব, লুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই এখানে বেশি, পরের সময়কার ঘটনাবলি ঐতিহাসিক বিবরণ নির্ভর। পাঠকদের, বাবুর বিষয়ে জানকারির জন্য ২৪ জানুয়ারি থেকে ১৫২৫ ঈসায়ী পর্যন্তকার বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।—অনুবাদক] 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *