নবম অধ্যায় – প্রাচীন অভিলেখ ও লিপিসাহিত্য

নবম অধ্যায় – প্রাচীন অভিলেখ ও লিপিসাহিত্য

সংস্কৃত সাহিত্যের সমালোচক হিসাবে চিরকালই পাশ্চাত্য-পণ্ডিতেরা অগ্রগণ্য। সেহেতু তাঁদের মূল্যবান মতামতকে অগ্রাহ্য করা যায় না। কিন্তু পণ্ডিত Maxmuller কর্তৃক প্রচারিত যে বাণী’ উত্থিত হয়েছিল সংস্কৃত সাহিত্যাকাশে নবজাগরণের, তা কিন্তু বেশীদিন সমাদর পায়নি। তিনি প্রচার করেছিলেন যে রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের যুগ পেরিয়ে বহুদিন সংস্কৃত সাহিত্য বন্ধ্যা ছিল, অতঃপর মহামতি কালিদাসের যাদুদন্ডের স্পর্শে রাতারাতি সাহিত্যে জোয়ার এসেছিল। কিন্তু কালিদাস স্বয়ং এর বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তাঁর পূর্ববর্তী সাহিত্যিকগণকে সম্মান জানিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেছেন। ভাস, সৌমিল্ল, কবিপুত্রের কথাই শুধু নয় বৈয়াকরণ পাণিনির জাম্ববতী বিজয় ও পাতালবিজয় নামক গ্রন্থদ্বয়, পিঙ্গলের ছন্দঃসূত্রে কাব্য নিদর্শন উল্লেখ্য; সেই ছন্দের অনুসরণে সে যুগেই অনেক কাব্য রচিত হয়েছিল। ইহা ব্যতীত বিভিন্ন প্রাচীন শিলালেখ গুলিও সাহিত্যের নিদর্শন রূপে বিবেচিত হয়। সেই হেতু Lassen, Buhler, Fleet, kielhorn প্রভৃতি পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণই Maxmuller এর মতকে দৃঢ়তার সাথে খণ্ডন করেছেন। তাঁদের মতে প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শন স্বরূপ শিলাখণ্ড, শিলাস্তম্ভ, মাটির পাত্র, গুহাগাত্র, বিভিন্ন স্তূপ, তামার পাত ও মুদ্রাব উপর যে সকল লেখ উৎকীর্ণ হত তা কখনই ন্যূন নহে। তন্মধ্যে শিলালেখ গুলিই অধিক মর্যাদা পেত, তার দ্বারা তৎকালীন প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক সামাজিক বহু মূল্যবান তথ্য পরিবেশিত হয়েছে একথা স্বীকার করতে কোন বাধা নেই। এই সমস্ত শিলালেখ অধিকাংশ পদ্যে রচিত হলেও গদ্য সাহিত্যের নিদর্শনও বিরল নয়।

বিষয়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন অভিলেখগুলি নানা ভাগে বিভক্ত। যেমন—ধর্মচর্যা, ধর্মের মহিমা প্রচার ও ধর্মপ্রসঙ্গে উপদেশাবলী যে সমস্ত লেখতে উৎকীর্ণ হত তা ধর্মীয় লেখ। রাজাদেশ, রাজবিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত লেখ আজ্ঞাবিষয়ক লেখ বলে পরিচিত ছিল। রাজরাজাদের প্রশস্তি বা স্তবস্তুতি মূলক লেখা বেশী চোখে পড়ে এবং সেগুলির সাহিত্যের দাবীও বেশ জোড়াল, তা হল প্রশস্তিমূলক লেখ। তৎকালীন ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে স্মরণীয় করে রাখা হত যে সমস্ত লেখ এর মাধ্যমে তা স্মারকলিপি। এর বাইরেও ছিল ভূমিদান, অর্থদান, কন্যাদান ইত্যাদি বহু প্রকার দানপত্র সংক্রান্ত লেখ। ভূমিসংক্রান্ত দানপত্র গুলি সাধারণত তাম্রপত্রে উৎকীর্ণ হত। মহেঞ্জোদড়ো ও হরপ্পার শিলালেখগুলির সঠিক পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি। হাজার হাজার অভিলেখ বা লিপি সাহিত্যের সন্ধান পেতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কালের ক্ষয়জনিত কারণে। তথাপি যে সমস্ত লিপিসমূহ উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়েছে তদ্বারা সেযুগের বহু ঐতিহাসিক সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে এবং সেই সাথে সংস্কৃত সাহিত্যে উন্মোচিত হয়েছে একটা নতুন দিগন্ত। তন্মধ্যে ১৪টি প্রধান শিলালেখ ও ৭টি স্তম্ভলেখ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রাজা অশোক কর্তৃক লিখিত গুহালেখ এবং বৌদ্ধ জৈন ভিক্ষুক ও শ্রমণ দিগের পার্বত্য বিহার কালীন লিখিত গুহা ও পর্বত গাত্রের অভিলেখগুলি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ভারতীয় ইতিহাসের যে গৌরবময় কাহিনী ও শিল্প সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক আমাদের সম্মুখে উদ্ঘাটিত হয়েছে তা এই সমস্ত লেখগুলির মাধ্যমে, এক্ষণে কয়েকটি অভিলেখ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

মহাক্ষত্রপ রুদ্রদামনের গির্ণার প্রশস্তি (Girnara inscription) :— (১৫০- ৫২ খ্রিঃ) ওজরাটের জুনাগর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে গির্ণার পাহাড় অবস্থিত। সেখানকার শিলাস্তম্ভে উৎকীর্ণ উক্ত লেখটি জুনাগড় শিলালেখ নামেও পরিচিত। ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা এই শিলালেখ রুদ্রদামার মন্ত্রী সুবিশাখ দ্বারা অতীব সুন্দর জলাশয় নির্মাণের ইতিহাস জানা যায় এবং সেইসাথে রুদ্রদামনের প্রশস্তিও পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই লেখটি আগাগোড়া গদ্যছন্দে রচিত কিন্তু সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই লেখ প্রসঙ্গে একটা কথা বলা যায় যে—এক্ষেত্রে প্রাকৃতের সামান্য পরিচয়ও পাওয়া যায়। ব্যাকরণের সামান্য ভুলত্রুটি থাকলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়, দীর্ঘ সমাসবদ্ধ পদের প্রয়োগ সত্ত্বেও ভাষার সাবলীলতা ক্ষুণ্ণ হয়নি। বর্ণনার ঘনঘটায় শিলালিপিটিকে সাহিত্যের মর্যাদা দান করেছে। দণ্ডীর বৈদভী রীতির সাথে সাথে সুবন্ধু ও বাণভট্টের গদ্য শৈলীর প্রভূত পূর্বাভাষ এখানে লক্ষ্যণীয়। পরবর্তী সাহিত্য রচয়িতাগণ যথা- হরিষেণ, বৎসভট্টি সকলেই কমবেশী এই রচনাদ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। এককথায় একটি শিলালেখ যে কতখানি সাহিত্যের মর্যাদা পেতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই গির্ণার প্রশস্তি। কবি হিসাবে সত্যই সার্থক। তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী গুণী ব্যক্তি।

এই প্রশস্তি থেকে রুদ্রাদামনের বিদ্যাবত্তারও পরিচয় পাওয়া যায়। বিদেশী শক হয়েও তিনি ছিলেন গভীর সংস্কৃতানুরাগী। ব্যাকরণ, ছন্দ, জ্যোতিষ, দর্শন, তর্কশাস্ত্র, সাহিত্য সকল বিষয়ের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল। তিনি কেবল রাজাই ছিলেন না একজন সুদক্ষ শাসক ছিলেন, প্রজারঞ্জক ও প্রজাহিতৈষী রাজা ছিলেন। সেইহেতুই সুদর্শন হ্রদের নির্মাণ ও রক্ষার মত কাজ সম্ভবপর হয়েছিল। বিষয়টি ছিল এইরূপ যে—মৌর্যরাজ চন্দ্রগুপ্তের সময়ে মহারাজ চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক এই হ্রদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, পরবর্তীকালে মহারাজ অশোকের নির্দেশে গ্রীকরাজা তুষাঙ্ক প্রণালী দ্বারা এই হ্রদের অলংকরণ করেন। আলোচ্য রাজা রুদ্রদামনের রাজত্বকালে বিধ্বংসী ঝড়ে ও-দূর্বার বন্যায় বাঁধ ভেঙে যায়, প্রজাদের মধ্যে হাহাকার রব ওঠে। প্রজাদিগের এ-হেন দুর্দিনের সময়ে প্রজাহিতৈষী রাজা রুদ্রদামন সকল পরামর্শদাতাদের কথা নাকচ করে দিয়ে নিজসিদ্ধান্তে অটল থেকে অকাতরে রাজকোষ থেকে অর্থব্যয় পূর্বক উক্ত হ্রদের সংস্কার করেন। রুদ্রদামনের প্রশস্তিতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর সদ্-গুণাবলীর বর্ণনা ছাড়াও বহু মূল্যবান ঐতিহাসিক তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে। পরবর্তীকালের ঐতিহাসিক ও সমালোচকগণের মতে রুদ্রদামনের প্রশস্তি অতিকথন দোষে দুষ্ট নয়। এবং ইতিহাসও সেখানে অবিকৃত রয়েছে।

প্রয়াগ স্তম্ভলেখ :— প্রয়াগ স্তম্ভলেখকে Allahabad stone pillar inscrip- tion বা এলাহাবাদ প্রশস্তিও বলা হয়। হরিষেণ কর্তৃক রচিত গুপ্তব্রাহ্মী লিপির এই প্রশস্তিতে গুপ্তসম্রাট সমুদ্রগুপ্তের বংশাবলী, গুণাবলী ও দিক্ বিজয়ের নানান কাহিনী লিপিবদ্ধ রয়েছে। ৩৫০খ্রিঃ এর রচনাকাল বলে চিহ্নিত হয়েছে। বাস্তবিক উক্ত লেখটি এলাহাবাদস্থিত—কোশাম্বী গ্রামে প্রোথিত ছিল কিন্তু মোগলসম্রাট আকবর সেটিকে তুলে আনেন এবং এলাহাবাদে একটি দূর্গের মধ্যে স্থাপন করেন। রাজা অশোকও এই লেখ-এর অংশীদার।

গদ্য পদ্য মিশ্রিত আলোচ্য লেখটি রচনার গুণমানের দিক দিয়ে কাব্যের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। কিছু কিছু পদ্যাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গদ্যাংশ কিন্তু অবিকৃত রয়েছে। উপযুক্ত শব্দচয়ন, বাক্‌বিন্যাস, ছন্দ-অলঙ্কারের প্রয়োগ বিশেষত : উপমা, রূপক, স্রগ্ধরা, শার্দূলবিক্রিড়িত, মন্দাক্রান্তা ও পৃথ্বী, প্রভৃতি ছন্দ, সর্বোপরি কবিকল্পনার অসাধারণ কুশলতা সমস্ত প্রশস্তিটিকে জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্যই নয় উপরন্তু শিক্ষিণীয়ও করে তুলেছে। রাজা সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন বিশেষ বিদ্যানুরাগী। কবি ও শিল্পীদের বিশেষ গুণগ্রাহী। বিজ্ঞ ব্যাক্তিরা তাঁকে ‘কবিরাজ’ উপাধিতে ভূষিত করে ছিলেন। তার পাশাপাশি—বীর, সাহসী, ধার্মিক, বিচক্ষণ এবং দিগ্বীজয়ী রাজা হিসাবেও তাঁর যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল। বহুরাজা যেমন আর্যাবর্ত থেকে শুরু করে দক্ষিণাবর্ত্য প্রদেশ, পার্বত্য প্রদেশ এমনকি বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাজরাজাড়াও তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেছেন। এই লেখ তাঁর সাহিত্যিক মূল্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক মূল্যেরও মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখেছে।

বীরসেন কর্তৃক লিখিত একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। এই শিলাখণ্ডে রাজাদ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের প্রশস্তিমূলক লেখা উদ্ধার করা হয়েছে। গুপ্তবংশের রাজগণের মধ্যে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। কবি বীরসেন ছিলেন এই দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রী। তাঁর রচনা আমাদের দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি, তাঁর ব্যক্তিত্বের পরিচয়ও দেয়। রাজা হিসাবে তিনি যেমন দক্ষ ছিলেন। তার সাথে সাথে পরধর্ম—সহিষ্ণুতা ও অন্যান্য মানবিক মূল্যবোধেরও অধিকারী ছিলেন। এককথায় সে যুগের মানুষ অসাধারণ এক ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হতে সক্ষম হয়েছেন। শিলালিপিটির ঐতিহাসিক মূল্যের পাশাপাশি কাব্যিক দিকটিও সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। রচনা পরিপাট্যে, কাব্যমাধুর্যে শিলালিপিটি এক অনন্যসাধারণ মাত্রা লাভ করেছে।

যশোধর্মনের মন্দসোর প্রশস্তি :—দশপুর (বর্তমান-মন্দসোর) নামক নগরে সূর্যমন্দির নির্মাণের ঘটনাকে অবলম্বন করে মোট ৪৪টি শ্লোকে অপূর্ব ছন্দে রচিত হয় মন্দসোর প্রশস্তি আনুমানিক ৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে। এর রচয়িতা বৎসভট্টি নামক জনৈক কবি। খুব সম্ভব অর্থ প্রাপ্তির আশায় নিজগোষ্ঠিভুক্ত লোকেদের অনুরোধ ক্রমে রাজার আদেশানুযায়ী এইরূপ মন্দির নির্মাণের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। যদিও তিনি গুপ্ত বংশীয় কোন রাজার সভাকবি ছিলেন বলে জানা যায় না। প্রশস্তিমূলক রচনা যেহেতু, সেহেতু তৎকালীন রাজাদের যথা বিশ্ববর্মা ও বন্ধুবর্মার প্রশংসা সূচক কাহিনী থাকা স্বাভাবিক। সেইসাথে দশপুরের মনোরম প্রাকৃতিক বর্ণনা সকলকে মুগ্ধ করে। বৎসভট্টি কবি হিসাবে এতটাই সার্থক ছিলেন যে তার রচনায় রীতিমত মহাকবি কালিদাসের প্রতিভার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। গৌড়ী রীতির এই কবি আর্যা, মালিনী, বংশস্থবিল, ইন্দ্রবজ্রা, উপেন্দ্রবজ্রা, উপজাতি, দ্রুতবিলম্বিত প্রভৃতি ছন্দে এবং উপমা, রূপক, অনুপ্রাস স্বভাবোক্তি প্রভৃতি অলঙ্কারের যথাযথ ব্যবহারে শিলালেখটিকে তৎকালীন শিলালেখ সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান প্রদান করেছেন। যশোধর্মনের মন্দসোর লিপি থেকে জানা যায় যে তিনি অত্যাচারী মিহিরকুলকে পরাজিত করে খ্যাতিমান হয়েছিলেন। পূর্বঘাট পর্বতমালা পর্যন্ত তার রাজ্যকে বিস্তৃত করেছিলেন।

আইহোল শিলালেখ (Aihole inscription) ৬৩৪খ্রিঃ রচিত এই শিলালেখটি জৈনকবি রবি কীর্তির। এতে দ্বিতীয় পুলকেশীর প্রশস্তিমূলক বাণী খোদিত রয়েছে। আইহোল শিলালিপিটিও অপূর্ব কাব্য নিদর্শন। এখানে কালদাসের পাশাপাশি কবি ভারবিরও যথেষ্ট প্রশংসা করা হয়েছে।

শ্লোকটি নিম্নরূপ—

যেনাযোজি ন বেশ্ম স্থিরমর্থবিধো
বিবেকিনা জিনবেশ।
স বিজয়তাং রবিকীৰ্ত্তি কবিতাশ্রিত
কালিদাসভারবিকীর্তিঃ।।

এতদ্ব্যতীত রবিকীর্ত্তি কর্তৃক রচিত এই দ্বিতীয় পুলকেশীর প্রশংসা খোদিত হয়েছে এক শিবমন্দিরের গাত্রে। এই মন্দির চালুক্যরাজবংশের কোন রাজা কর্তৃক মেগুটিতে নির্মিত হয়েছিল ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে।

নাসিক শিলালিপি (Nasic Inscription ) -গির্নার শিলালিপির সমসাময়িক কালে সিরী পুলোময়ীর নাসিক শিলালিপিটি প্রাচীন প্রাকৃত ভাষার এক অন্যতম উদাহরণ। অনুমান করা হয়ে থাকে রচয়িতা সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন—এবং সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই লিপি সকলের বোঝার উপযোগী করেই পরবর্তীকালে প্রাকৃত ভাষায় অনুদিত হয়।` সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তির সাথে তুলনীয় এই লিপির ঐতিহাসিক মূল্যও অপরিসীম। গৌতমী পুত্রের মৃত্যুর বেশকয়েকবছর পরে পুত্রহারা মাতা দেবী গৌতমী কর্তৃক রচিত এই লিপিটি ঐতিহাসিকগণের দৃষ্টিতে পুত্রহারা মাতার পুত্রের সমাধি ভাষণ রূপেই বিবেচিত হয়েছে। নাসিক প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে—গৌতমীপুত্র শকদের থেকে সৌরাষ্ট্র, মালব, গুজরাট, উত্তরকঙ্কণ প্রভৃতি দখল করে নেন। পুলোময়ির রাজত্বকালে রচিত এই লিপিতে কিন্তু পুলোময়ীর কথা বিশেষ নেই; শক্ষত্রপ রুদ্রদামন কয়েকবার পুলোময়িকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। কিন্তু আত্মীয়তাবশতঃ রুদ্রদামন পুলোময়ির সরাসরি ক্ষতি সাধনে বিরত ছিলেন। এইরূপ বহুতথ্য সম্বলিত প্রশস্তিমূলক শিলালেখগুলি তৎকালীন ইতিহাস সম্বন্ধে আমাদের অবহিত করে।

আলোচ্য শিলালেখ গুলি ছাড়াও আদিত্যসেনের অফসড় শিলালেখ, মিহির কুলের গোয়ালিয়র শিলালেখ, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মথুরাস্তম্ভলেখ, ধনৈদহ তাম্রলেখ-এর নাম উল্লেখ্য। এই সমস্ত অভিলেখগুলিরই কম বেশী ঐতিহাসিক ও কাব্যিক মূল্য রয়েছে।

পাদটীকা – প্রাচীন অভিলেখ ও লিপি সাহিত্য

১. Maxmuller-এর Theory of renaissance-এর মূল বক্তব্য হল নিম্নরূপ :—’The Indians did not show any Literary activity during the first and second centuries of our era, in consequence of the in- roads of the different foreign races….” এবং “ ….. That the period the bloom of artifical poetry is to be placed in the middle of sixth century A.D. of the chrisht” : – India what canit teach us?

২. “There can be no dout of the familiarity of the writer with sanskrit, it is even possible that he wrote his text in that language and then, in order to comply with the usage of the day, rendered it in to prakrit for purposes of puleticatian.”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *