একবিংশ অধ্যায় – বহুমুখী শাস্ত্ৰ সমূহ
ধনুর্বেদ বা যুদ্ধবিষয়ক শাস্ত্র :—যুদ্ধের মাধ্যমে বা ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যের কাছ থেকে সাম্রাজ্য ছিনিয়ে নেওয়া, রাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রধান কথা ছিল। এছাড়াও দুষ্টের দমন ও প্রজাদিগের যথাযথ প্রতিপালনের নিমিত্ত, দস্যুতস্করের হাত থেকে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের নিমিত্ত ক্ষাত্র রাজার প্রধান কর্তব্যই ছিল যুদ্ধ। অর্থশাস্ত্রের তত্ত্বানুযায়ী রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত ছিল—সন্ধি, যুদ্ধ, যান, আসন, দ্বৈধীভাব ও আশ্রয়ের উপরে। মহাভারতের বিধ্বংসী যুদ্ধ, রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ড থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস যুদ্ধেরই ইতিহাস বলা চলে। সেই হেতু সুদূর বৈদিক যুগেই যুদ্ধবিদ্যার পরিচয় মেলে। প্রাচীন যুগে যুদ্ধের প্রধান অস্ত্রই ছিল ধনুর্বাণ। ব্রহ্মা ও মহাদেব সর্ব প্রথম এই শাস্ত্র প্রণয়ন করেন বলে মনে করা হয়। পরবর্তী কালে বিশ্বামিত্র এই ধনুর্বেদ নামে উপবেদের জন্ম দেন। যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বলা হয়েছে—’দুষ্টস্য দণ্ডঃ চৌরাদিত্যঃ প্রজাপালনং চ ধনুর্বেদস্য প্রয়োজনম্।’ দুষ্টকে দমন করার জন্য দণ্ড, চৌরাদির হাত থেকে প্রজাসাধারণকে রক্ষা করার জন্য ধনুর্বেদের প্রয়োজন। অতএব ক্ষত্রিয়দিগের পক্ষে যুদ্ধবিদ্যা একান্ত শিক্ষণীয় বিষয় বলে পরিগণিত হত।
ধনুর্বেদ চারটি পাদে বিভক্ত, যথাক্রমে দীক্ষা, সংগ্রহ, সিদ্ধি ও প্রয়োগ। প্রথম পাদে অস্ত্রাদির ভেদ বর্ণিত আছে—মুক্ত, অমুক্ত, মুক্তামুক্ত ও যন্ত্রযুক্ত। চক্র প্রভৃতি হল মুক্ত— সেগুলি দূরে নিক্ষেপ করা যায়। খড়গ প্রভৃতি অস্ত্র অমুক্ত কারণ এগুলি হস্ত থেকে নিক্ষিপ্ত হয় না। যে সকল হাতে রেখেও যুদ্ধ করা যায়, আবার প্রয়োজনে নিক্ষেপও করা যায় তা হল মুক্তামুক্ত যেমন শূল। যন্ত্রযোগে যে সকল অস্ত্র নিক্ষেপিত হয় তা যন্ত্রযুক্ত যেমন শরাদি। মুক্তায়ুধ এবং অমুক্তায়ুধ অর্থাৎ অস্ত্রশস্ত্র। যুদ্ধকালীন বল হল যথাক্রমে হস্তী, অশ্ব, রথ, ও পদাতিক এই চার প্রকার একত্রে চতুরঙ্গ বলে পরিচিত। ধনুর্বেদ নামে একটি গ্রন্থের পুঁথিও পাওয়া যায়। বিক্রমাদিত্য, সদাশিব, শাঙ্গদত্ত প্রমুখ যুদ্ধবিদ্যা বিশরদ ছিলেন এবং তাদের রচিত গ্রন্থও একসময়ে বিদ্যমান ছিল।
অশ্বশাস্ত্র বা অশ্বায়ুৰ্বেদ :—অশ্বচিকিৎসার প্রাচীন আচার্য শালিহোত্র। তৎকর্তৃক রচিত ‘অশ্বায়ুর্বেদ’ বর্তমানে বিলুপ্ত। আলোচ্য গ্রন্থ থেকে অমরকোষের টীকাকার রঘুনাথ চক্রবর্তী তাঁর টীকায় উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এই শাস্ত্রে অশ্বচিকিৎসা ছাড়াও অশ্বের প্রজনন বিষয়ে আলোচনা দৃষ্ট হয়। শালিহোত্র কেবল অশ্বই নয়, বিভিন্ন জীবজন্তুর বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি অশ্ববৈদ্য নামেও পরিচিত ছিলেন। নকুল রচিত অশ্বচিকিৎসা, গণ কর্তৃক রচিত অশ্বায়ুর্বেদ, শাঙ্গধর প্রণীত তুঙ্গ পরীক্ষা, ও বাজিচিকিৎসা নামক গ্রন্থগুলি অশ্বচিকিৎসা শাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ।
গজায়ুর্বেদ বা হস্তিবিদ্যা :——শালিহোত্র, নকুল ও পালকাপ্য এই তিন ব্যক্তিই পশুশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন। তন্মধ্যে পালকাপ্য হস্তিবিশারদ ছিলেন। তিনি প্রাচীন ব্যক্তি। পুরাণ বিখ্যাত রোমপাদ রাজার সমকালীন। তাঁর রচিত গ্রন্থ বহু পূর্বেই বিলুপ্ত, মধ্যযুগের কোন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি সেই রচনার অবলম্বনে গজায়ুর্বেদ বা গজশা রচনা করে তার নামে প্রচার করেছিলেন। গজায়ুর্বেদ শাস্ত্রে কেবল হাতির চিকিৎসাই নয়, হাতি ধরার কৌশলও আলোচিত হয়েছে। এতদ্ব্যতীত নীলকণ্ঠ ও নারায়ণ রচিত মাতঙ্গলীলা, নারায়ণ দীক্ষিত রচিত গজগ্রহণ প্রকার বিখ্যাত।
রত্নবিদ্যা :—সুপ্রাচীন কাল থেকে দেশের রাজন্যবর্গ, উচ্চবিত্ত ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রকার রত্ন পরিধানের প্রতি ঝোঁক লক্ষ করা যায়। রত্নরাজির বিশাল সম্ভার বা সংগ্রহ শালার পরিচয় রাজাদের রাজকোষে মিলত। শুধুমাত্র অলঙ্করণের নিমিত্তই নয়, ফলিত জ্যোতিষ অনুযায়ী লোক বিশ্বাসের কলে মানব- জীবনের বিভিন্ন অমঙ্গল নাশের জন্য বা সুখবিধানের নিমিত্ত রত্নধার ণর প্রচলন আজও চলে আসছে। ফলিত জ্যোতিষের কতিপয় গ্রন্থে এই বিষয়ে আলোচনা দৃষ্ট হয়। পরবর্তীকালে রত্নবিদ্যা বিষয়ে পৃথক শাস্ত্রের প্রয়োজন অনুভূত হলে বিভিন্ন গ্রন্থের জন্ম হয়। প্রাচীন ঋষি অগস্ত্যেব নাম এই বিষয়ে অগ্রগণ্য। মাঘের শিশুপাল বধে অগস্ত্যের রত্নশাস্ত্রে যে নীলার ১১ প্রকার বর্ণভেদ উক্ত হয়েছে তার উল্লেখ রয়েছে। রত্নবিশারদ ব্যক্তির নামও উল্লেখ্য। ভোজরাজের যুক্তি কল্পতরুতেও রত্নের আলোচনা দৃষ্ট হয়। এছাড়াও পরবর্তী কালে রত্নবিদ্যার বিখ্যাত গ্রন্থ যেমন—বুদ্ধভট্ট রচিত ‘রত্নপরীক্ষা’ খ্রিঃ ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতকে নারায়ণ রচিত ‘নবরত্নপরীক্ষা’ এবং চন্দ্রেশ্বর কর্তৃক রচিত ‘রত্নদীপিকা’ খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতকে। এতদ্ব্যতীত লঘুরত্ন পরীক্ষা, মান মাহাত্ম্য, ইত্যাদি গ্রন্থের রচনাকার তথা রচনাকালও অজ্ঞাত। পরিশেষে বলা প্রয়োজন সে যুগে রত্নের এতই সমাদর ছিল এবং রত্ন অমূল্য বলেও বিবেচিত হত সেই কারণেই বোধকরি বিক্রমাদিত্যের সভায় কালিদাস প্রভৃতি নয় জন পণ্ডিতের সমাবেশ ও তাদের পান্ডিত্য অমূল্য বিবেচিত হওয়ায় সেই সভা ‘নবরত্ন’ নামে অভিহিত ছিল।
ধাতুবিদ্যা :—ভারতবর্ষে প্রাচীন কালেই বিভিন্ন ধাতুর আবিষ্কার হয়েছে। সেই সমস্ত ধাতুর ব্যবহার ও তদগত বিদ্যারও বিশেষ উন্নতি সাধিত হয়েছিল। ধাতুনির্মিত অস্ত্র শস্ত্র, ধাতু নির্মিত মুদ্রা, অলঙ্কার, মূর্ত্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। লৌহাৰ্ণব, লৌহপ্রদীপ ও খড়গ শাস্ত্র নামে তিনখানি গ্রন্থের নাম দৃষ্ট হয়।
এই প্রসঙ্গে বলা যায় সে যুগে কিমিয়াবিদ্যা-রও প্রচলন ছিল। সুবর্ণের প্রতি আকাঙ্খা চিরকালই মানুষের ছিল, আমরা জানি স্বর্ণ খনিজ দ্রব্য কিন্তু রাসায়নিক পদ্ধতি প্রয়োগে পারদ প্রভৃতির দ্বারা অন্যান্য ধাতুকে সোনায় পরিণত করার এক কৌশল আবিষ্কৃত হয়। তারই নাম কিমিয়াবিদ্যা। প্রাচীন ও মধ্যযুগে এই বিদ্যার প্রচলন ছিল। বৈজ্ঞানিক ক্ষমতা অপেক্ষা মন্ত্রতন্ত্রের অলৌকিক ক্ষমতাও এই বিদ্যার অন্যতম অঙ্গ ছিল।
এই প্রসঙ্গে কাকচন্ডেশ্বরীমত ও সুবর্ণতন্ত্র নামে গ্রন্থ পাওয়া যায়। মাধবীয় সৰ্ব্বদর্শন সংগ্রহ গ্রন্থে কিমিয়াবিদ্যার প্রাচীন আচার্যদের নাম দৃষ্টি হয়। এঁরা হলেন আচার্যসর্বজ্ঞ, কামেশ্বর ভট্টারক প্রভৃতি। গোবিন্দ ভাগবৎপাদ রচিত রসহৃদয় খ্রিঃ ১১শতকের গ্রন্থ। নাগার্জুনের নামে প্রচলিত কিমিয়াবিদ্যার গ্রন্থ রসরত্নাকব খ্রিঃ ৭ম- ৮ম শতকে রচিত।
সুরাপাতন বিদ্যা :—প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে সোমরস পানের ইতিহাস বহুল চর্চিত একটি বিষয়। পরবর্তীকালে যুগে যুগে সুরাপান বা মদ্যপানের উল্লেখ ও আলোচনা দৃষ্ট হয়। সুরা বা মদিরার বহু নাম করণ, তার প্রকার ভেদ, মান ভেদ এবং সুরাপানের সুফল ও কুফল বিষয়ে বহু আলোচনা হত। শ্লোক-সংকলন গ্রন্থ সমুহে ‘মধুপান-ব্রজ্যা’ বলে একটি বিভাগ ছিল সেখানে সুরাবিষয়ক শ্লোকগুলি সঙ্কলিত হয়েছে। চরকসংহিতায় ৮৪ প্রকার মদ্যের নাম ও তার প্রকার ভেদ করা হয়েছে। সুরা বা মদিরা প্রস্তুত প্রণালীর উপরে কোন গ্রন্থ বর্তমানে পাওয়া যায় না, কিন্তু ‘মদিরার্ণব’ নামক একটি গ্রন্থের উল্লেখ মল্লিনাথের টীকায় পাওয়া যায়।
মৃগয়া ও ক্রীড়াবিদ্যা :—মৃগয়া বলতে সাধারণত পশুপক্ষী শিকার করাকেই বুঝায়। আদিমকাল থেকে মানুষ তার প্রয়োজনে এবং শখে পশু শিকার করে আসছে। সংস্কৃত সাহিত্যের আগাগোড়াই রাজরাজাদের মৃগয়ার নিদর্শন মেলে। অতএব এই বিদ্যা শিক্ষার প্রয়োজনও সুপ্রাচীন কালেই মানুষ অনুভব করেছিল। এছাড়া মল্লযুদ্ধ (কুস্তি), দ্যূতক্রীড়া (পাশাখেলা) শতরঞ্জ (দাবা) খেলার বহুল প্রচলন দৃষ্ট হয়। মহাভারতের পাশাখেলার ঘটনা বিখ্যাত। মৃগয়া, পাশা, দাবা, মল্লযুদ্ধ এই সবই ছিল সে যুগের বিনোদনের বিষয়। আলোচ্য বিষয়ে দুই-একটি গ্রন্থ উপলব্ধ হয় যথা খ্রিঃ ১৭শ শতকে রাজা রুদ্রদেবের আনুকূল্যে শ্যৈনিকশাস্ত্র এবং বর্তমানকালে সংস্কৃত সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত চিন্তাহরণ চক্রবর্তী কর্তৃক রচিত দাবা খেলার উপরে একটি গ্রন্থ শতরঞ্জকুতুহল দৃষ্ট হয়।
গন্ধ ও প্রসাধন বিদ্যা :—দেব দেবীদিগের ও মহাপুরুষদের পূজা অৰ্চনাতেও গন্ধ মাল্য বিলেপন, মার্জন ইত্যাদি ষোড়শ উপচারের কথা প্রসিদ্ধ আছে। যুগে যুগে মানব-মানবী নিজ নিজ রূপের প্রতি যত্নশীল ছিলেন। রূপচর্চা মানুষের দৈনন্দিন জীবনেরই এক বিশেষ অঙ্গ। ভারতবর্ষীয় শিল্পকলা ও নান্দনিকতত্ত্বে রূপচর্চার ব্যবহারিক দিকের উল্লেখ দৃষ্ট হয়। দেহ সৌষ্ঠব, কেশ বিন্যাস, বস্ত্র বিন্যাস, প্রসাধন দ্রব্যের প্রয়োগ এই সব রকম কলা-কৌশল প্রথম থেকেই বিদ্যমান ছিল। কালে কালে, যুগে যুগে তা বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহণ করেছে মাত্র। বরাহ মিহির তার বৃহৎসংহিতার ‘গন্ধযুক্তি’ অধ্যায়ে বিভিন্ন প্রসাধন দ্রব্যাদি প্রস্তুতির বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। সমস্ত প্রকার গাছ-গাছড়া বা ভেষজ দ্রব্যাদি থেকে প্রসাধনী তৈরীর কৌশল বহু প্রাচীন কাল থেকেই সুপ্রসিদ্ধ। প্রসঙ্গক্রমে ‘নাবনীতক’ বলে একখানি গ্রন্থ পাওয়া যায়, যা চুলের কল্প প্রস্তুতি বিষয়ে লিখিত। শাঙ্গধরের শাঙ্গধর পদ্ধতি’ তে কল্প, সুগন্ধি তেল তৈরীর প্রণালী লিপিবদ্ধ রয়েছে। ১৩শ শতক গঙ্গাধরের ‘গন্ধসাব’ এবং ১৪শ শতকে নিত্যনাথের রসরত্নাকর আলোচ্য বিষয়ের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
চৌর্যবিদ্যা :—চৌর্যবৃত্তি বা চৌর্যবৃত্তি বারকরা হল মানুষের একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক বৃত্তি। দোষাবহ হলেও এটি শিল্পরূপে পরিগণিত হয়ে আসছে। প্রাচীন যুগে কোষাগারের ধন-রত্ন চুরির নিদর্শন রয়েছে। সংস্কৃত সাহিত্যের বহু রচনায় এর পরিচয় মেলে। মৃচ্ছকটিক রচনায় মহাকবি শূদ্রক চৌর্যশিল্পের বর্ণনা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে সন্ধিভেদ অর্থে সিঁধকাটার বিষয়ে বর্ণনা পাওয়া যায়। সিঁধকাটার উপযুক্ত স্থান, কৌশল সব আলোচিত হয়েছে। ‘মত্তবিলাস’ নামক প্রহসনটিতে চৌর্যশিল্পের বর্ণনা দৃষ্ট হয়। চৌর্যবিদ্যা বিষয়ে কর্ণিসূক এবং মূলদেবকে প্রধান বলে উল্লেখ করা হয়ে তাকে। ‘সম্মুখকল্প’ নামে একটি গ্রন্থে চৌর্যবিদ্যার বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
পাকশাস্ত্র :—পাক বা রন্ধন প্রণালী ও খাদ্য দ্রব্যের উপকরণ সম্পর্কিত মালোচনা পাকশাস্ত্রের বিষয়বস্তু। মহাভারত খ্যাত রাজা নল ছিলেন এই শাস্ত্রের প্রবঙ্গ। প্রাচীন কালেই ‘নলপাক’ নামে একটি গ্রন্থ ছিল, অনেকে এটি নলের বলে মনে করেন। পাক সক্রান্ত গ্রন্থ সেইভাবে উপলব্ধ না হলেও সংস্কৃত সাহিত্যের বিবিধ স্থানেই বিক্ষিপ্ত ভাবে পাকসম্পর্কিত নানা আলোচনা দৃষ্ট হয়। রসনাতৃপ্তিই শুধু উদ্দেশ্য নয়, খাদ্যদ্রব্যের মান নির্ণয়, সুষম আহার ও সুস্বাস্থ্যও এই শাস্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
বৃক্ষায়ুৰ্বেদ :—বৃক্ষ আমাদের প্রাণ ধারণের অন্যতম কারণ স্বরূপ। পরিবেশের ভারসাম্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রতিটি প্রয়োজনের সাথে বৃক্ষ তথা উদ্ভিদ জগৎ ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীনকালে বৃক্ষের প্রতি মানুষের মমত্ত্ববোধ ও সখ্যতা ছিল তুলনাহীন। মানব জীবনে বৃক্ষের অপরিহার্যতার কথা চিন্তা করেই কেবলমাত্র বৃক্ষরোপনই নয়, বৃক্ষের পালন পোষণ করতেন অত্যন্ত যত্নের সাথে, পুত্রস্নেহে। গাছেরও জীবন রয়েছে, অতএব তাদের রোগ-নিবারণ ও বাঁচিয়ে রাখার বিষয়টিও অবশ্যম্ভাবী। সেই কারণে, চিকিৎসা শাস্ত্র তৈরী হয়েছিল। সুরপাল রচিত ‘বৃক্ষায়ুর্বেদ’। বৃক্ষের নানাপ্রকার রোগ, তার প্রতিকার ও চিকিৎসাপদ্ধতি আলোচ্য গ্রন্থে বিস্তারিত ভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। যা যুগে যুগে মানুষকে বৃক্ষের সযত্ন লালন পালনে সাহায্য করে আসছে।