• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

অদ্বিতীয় সত্যজিৎ : সত্যজিতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী – মঞ্জিল সেন

লাইব্রেরি » মঞ্জিল সেন » অদ্বিতীয় সত্যজিৎ : সত্যজিতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী – মঞ্জিল সেন
figure.entry-image-single{{min-width:200px!important; height:300px;float:right}

অদ্বিতীয় সত্যজিত : সত্যজিতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী – মঞ্জিল সেন

অদ্বিতীয় সত্যজিৎ : সত্যজিতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী – মঞ্জিল সেন

সম্পাদনা ও টীকা – স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও নামাঙ্কন : স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়

.

প্রকাশকের কথা

সারা পৃথিবী বর্তমানে এক গভীর সংকটের মধ্যে। এক মারণ-ভাইরাসের কবলে পড়ে বিপদগ্রস্ত বিশ্বের লক্ষাধিক মানুষ। এমতাবস্থায় ২ মে, ২০২০ থেকে, প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রকার এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ শুরু । সেই উপলক্ষে শত প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে বুক ফার্মের নিবেদন : বাংলা ভাষায় সত্যজিতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী, মঞ্জিল সেন রচিত ‘অদ্বিতীয় সত্যজিৎ’ (পরিমার্জিত, পরিবর্ধিত এবং সটীক সংস্করণ)। টীকা রচনা, সম্পাদনা এবং সত্যজিতের জীবনীপঞ্জি সংযোজন করার কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন তরুণ সত্যজিৎ গবেষক স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়। উৎসাহী পাঠকের কাছে প্রাসঙ্গিক তথ্যের চাহিদা পূরণ করতে এটি সমর্থ হবে আশা করা যায়। এই সংস্করণে সংযুক্ত হল বেশ কিছু আলোকচিত্র যা বইটিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। ব্যবহৃত ছবিগুলির স্বত্বাধিকারী সেগুলির আলোকচিত্রীরা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : মার্ক রিবু, ডেরি মুর, আমানুল হক, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্জিল সেনের পরিবার-কে বইটির স্বত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে অনুমতির জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই সন্দীপ রায় ও রায় সোসাইটি-কে। সত্যজিৎ জন্মশতবর্ষের সূচনায় বিশ্বে, তথা ভারতে এবং বাংলায় সরাসরি ই-বুক আকারে প্রকাশিত এটি সম্ভবত একমাত্র সত্যজিৎ বিষয়ক বই। ‘অদ্বিতীয় সত্যজিৎ’, এমনই এক প্রচেষ্টা যা একমাত্র পাঠকের সমাদর লাভেই সার্থক বিবেচিত হবে।

.

সম্পাদকের কথা

২ মে, ২০২০, এক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। বিশ্ববরেণ্য সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ শুরু সেই দিন থেকে। অথচ বর্তমানে এক ভয়াবহ করোনা- ভাইরাসের কবলে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব, ত্রস্ত জনজীবন। সারা বিশ্বের নানা দেশে, নানা প্রান্তে সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের আয়োজন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্ব, ভারত তথা বাংলায় সম্ভবত একমাত্র সময়োচিত শ্রদ্ধার্ঘ্য এই বই: ‘অদ্বিতীয় সত্যজিৎ’। সত্যজিৎ রায় ও তাঁর বিপুল কর্মকান্ড-কে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষায় অদ্যবধি বহু বই লেখা হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রাথমিক কয়েকটি বইয়ের নাম: দিলীপকুমার ভট্টাচার্য রচিত ‘জীবনশিল্পী সত্যজিৎ রায়’ (হরফ প্রকাশনী, ১৯৬৯), জানকীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘সত্যজিৎ, ফেলিনি, গদার’ (ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, ১৯৭৫), রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী’র লেখা ‘সোনার কেল্লার সন্ধানে’ (নিউ বুক স্টল, ১৯৭৭), শীতলচন্দ্র ঘোষ ও অরুণকুমার রায় সম্পাদিত ‘সত্যজিৎ রায়: ভিন্ন চোখে’ (ভারতী বুক স্টল, ১৯৮০), অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘চলচ্চিত্র, সমাজ ও সত্যজিৎ রায়’ (আসানসোল ফিল্ম স্টাডিজ সেন্টার, ১৯৮০), মানসী দাসগুপ্ত’র বই ‘ছবির নাম সত্যজিৎ’ (আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৮৪), দিলীপ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘সত্যজিৎ’ ( বাণীশিল্প, ১৯৮৬) প্রভৃতি।এই বইগুলির সবকটিই সত্যজিৎ-চর্চা’র পথ যে প্রশস্ত করেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু বাংলা ভাষায় লেখা পূর্ণাঙ্গ সত্যজিৎ-জীবনী ছিল অধরা। ১৯৮৬ সালে নন্দিতা পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ‘অদ্বিতীয় সত্যজিৎ’ বইটি রচনা করে সেই অভাব অনেকাংশেই পূর্ণ করলেন লেখক মঞ্জিল সেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যান্ড্রু রবিনসন রচিত সত্যজিতের জীবনী, ‘সত্যজিৎ রায়: দ্য ইনার আই’ প্রকাশিত হয়, সেই নিরিখে ইংরাজি ভাষায় মারি সিটন রচিত ‘পোর্ট্রেট অফ আ ডিরেক্টর: সত্যজিৎ রায়’ (১৯৭১)-এর পরে মঞ্জিল সেন-ই সত্যজিতের পূর্ণাঙ্গ জীবনচিত্রের রচয়িতা। ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ এ সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণের অব্যবহিত পরেই কিছু তথ্য এবং পরিশিষ্ট ঘটনাবলী যুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয় ‘অদ্বিতীয় সত্যজিৎ’-এর তৃতীয় সংস্করণ (মে, ১৯৯২)। কাজেই সময়কাল এবং তথ্য সংযোজনের নিরিখে, সত্যজিতের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী: ‘অদ্বিতীয় সত্যজিৎ’। এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকদিন, বইটিও মুদ্রিত নেই দীর্ঘকাল যাবৎ।

২০২০ তে সত্যজিতের জন্মশতবর্ষে আবারো ফিরে আসছে সেই বই, নতুন আঙ্গিকে, পরিমার্জিত, সম্পাদিত এবং সটীক সংস্করণে। নিবেদনে বুক ফার্ম।

এই নতুন সংস্করণে কী কী সংযুক্ত হয়েছে, সে বিষয়ে বলবার জন্যই পূর্বের নাতিদীর্ঘ প্রাক-কথনের অবতারণা। সম্পাদনার কাজটি এমনিতেই কঠিন, তার উপর সেটি আরো দুরুহ হয়ে পড়ে যখন লেখক কোনো নির্দিষ্ট ধারা মেনে রচনা করেন না। মঞ্জিল সেন তাঁর এই বই’তে অন্যান্য জীবনী’র মতো সময়ের নিরিখে বর্ণনা করেননি, বরং সমগ্র সত্যজিৎ-জীবনের ছোট ছোট খন্ড-চিত্রের বিবরণ দিয়ে একটি নিটোল মালা গেঁথেছেন। যেখানে ক্রমানুযায়ী ঘটনাপ্রবাহের অপেক্ষা ঘটনাগুলিই অধিক প্রাধান্য পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে লেখকের নিজের বক্তব্য উল্লেখ করা মোটেই অপ্রাসঙ্গিক হবে না: ‘‘সত্যজিৎ রায়ের ছবির আলোচনা এ বইয়ের বিষয়বস্তু নয়, স্রষ্টা সত্যজিৎ-ই আসল উপজীব্য, কিন্তু তার সম্বন্ধে কিছু লিখতে গেলেই ….ঘুরে ফিরে একই ছবির পুনরাবৃত্তি’র ব্যাপারটাও এড়ানো যায় না, কারণ… নির্দিষ্ট এলাকায় ধরে রাখা যায় না তাঁর চিত্র কথা। …তাঁর সৃষ্টির গভীরতায় ডুব দিয়ে কিছু মণি-মাণিক্য আহরণ করতে গেলেই তা ইতস্তত ছড়িয়ে পড়বেই।’’

ঠিক এই যুক্তির উপর ভর করেই, লেখকের রচনাকে সম্পূর্ণ অবিকৃত রেখে, কিছু ব্যক্তি, বেশ কিছু অনুল্লিখিত প্রাসঙ্গিক ঘটনা, কিছু তথ্যবিভ্রান্তি সংশোধন; সেগুলির সম্বন্ধে বিস্তারিত টীকা, এবং সত্যজিতের জীবনী ও কীর্তিপঞ্জির সংযোজিত, পরিমার্জিত সংস্করণ বইয়ের পরিশিষ্ট অংশে সংযুক্ত করে এই নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হতে চলেছে। বেশ কিছু আলোকচিত্র ও যুক্ত হয়েছে এই নব-কলেবরে।

‘বুক ফার্ম’ প্রকাশনা কে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এই বইটির সম্পাদনা ও টীকা রচনার দায়িত্ব দেওয়ার জন্য। মূল লেখাটির প্রসাদগুণ অক্ষুণ্ন রেখে উৎসাহী পাঠকের জন্য বিস্তারিত তথ্য ও ঘটনা সাজিয়ে দেওয়াই ছিল এর একমাত্র লক্ষ্য। সত্যজিৎ জন্মশতবর্ষে পাঠকের কাছে এই বই সমাদর পেলে তবেই পরিশ্রম সার্থক।

 স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়

.

ভূমিকা

রবীন্দ্রনাথ একবার একটি ছোটো মেয়েকে চিঠিতে লিখেছিলেন যে হিমালয়ের মতো কোনো বিশাল জিনিসকে দেখতে হলে, তার বুকের উপর চড়ে কিছু বোঝা যায় না। শুধু যেটুকু নাগালের মধ্যে পাওয়া যায়, তাকেই চেনা যায়। বৃহৎ সমগ্রটা দৃষ্টির বাইরে থেকে যায় আর মুঠোর মধ্যে যে ক্ষুদ্রটুকু ধরা পড়ে, তাকে দেখেই আমরা ভাবি নগাধিরাজকে খুব জেনে ফেলেছি।

যে কোনো মহৎ ব্যক্তিত্বের বেলাও এই কথা খাটে। শুধু কাছে থেকে দেখলেই হল না। খানিকটা সরে গিয়ে, তার মোহময় স্বকীয়তা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে গুণাগুণ বিচার করতে হবে। যুক্তিযুক্ত মূল্যায়ন করতে হলে ওই দূরত্বের নৈর্ব্যক্তিক পরিবেশটুকু দরকার হয়। আবার শুধু তাও যথেষ্ট নয়। মধ্যিখান থেকে রক্তমাংসে গড়া, গৌরবময় ভ্রান্তিময়, স্নেহপ্রীতির উত্তরাধিকারী মানুষটি বাদ পড়ে যাবার ভয় থাকে। বড়ো বড়ো পণ্ডিতদের লেখা অনেক কীর্তিমান মহাপুরুষদের বেলায় যেমন হয়েছে।

জীবনীকার হওয়া খুব সহজ কাজ নয়। গুণীর কীর্তিসমূহ তো চিরদিন ভক্ত দেশবাসীরা রক্ষা করবেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশেও তাঁরা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। খালি মানুষটি কেমন ছিলেন তাই লোকে ভুলে যাবার ভয় আছে। ছবিতে তো শুধু চেহারাটাই ধরা থাকে। এমনকি জীবনীতেও ঘটনাবলি ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। এমনি নশ্বর মানবজীবন। ছোটোখাটো, আপাতদৃষ্টিতে অকিঞ্চিৎকর খুঁটিনাটিগুলি ধুয়ে মুছে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যদি বা তাঁর মুখের কথা রেকর্ড করে রাখা সম্ভব, মনের কথা ধরে রাখবার একমাত্র উপায় হল যদি তাঁর ডায়েরি লেখার অভ্যাস থাকে। কাজের মানুষদের সাধারণত সে অভ্যাস বা সময় থাকে না।

এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, উত্তরকালে তাঁর কীর্তি দিয়েই গুণীর মূল্যায়ন হবে এবং হয়তো বা তাঁর জীবনের কয়েকটি যুগান্তকারী ঘটনাও সেইসঙ্গে স্থায়িত্ব পাবে। কিন্তু রক্তমাংসে গড়া, সব পার্থিব জিনিসের মতো মধুর ভঙ্গুর অন্তরঙ্গ ব্যক্তিটিকে তাঁর প্রিয়জনরা, নিকট বন্ধুরা অন্য একরকম অমরত্ব দিতে পারেন। তাই বলে বসওয়েল যেমন তাঁর উপাস্য ড. জনসনকে দোষগুণ সহ নিরাবরণভাবে লোকচক্ষুর সামনে দাঁড় করিয়ে অনেক সময় তাঁকে হাস্যকর করেছেন তেমন নয়। এখানে মনে রাখতে হবে এ ডায়েরি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত হবে, এ-কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। মানুষ মাত্রই একটা গোপন দিক থাকে, যা একান্ত তার নিজের এলাকা। সেখানে কারো হস্তক্ষেপের অধিকার নেই।

মঞ্জিল সেনের এই সময়োপযোগী বইখানিতে দুই সত্যজিৎ রায়ের দর্শন পাওয়া যায়। একদিকে অসাধারণ গুণাধিকারী চিত্রনির্মাতা, অতিশয় প্রতিভাসম্পন্ন শিল্পী, সাংগীতিক ও শক্তিধর লেখককে পাই। আবার অন্যদিকে কলকাতার এক বিশিষ্ট বংশের সন্তান, একটা বিশেষ অঞ্চলবাসী, সংস্কৃতিবান অথচ সরল, সহৃদয়, সততাপূর্ণ, গুণগ্রাহী, মায়ামমতাময় অন্তরঙ্গ এবং নিরহংকার একজন মানুষকেও পাই।

সত্যজিতের আরেকটি দিকও আছে যা এদেশে ততটা আলোচিত হয় নি। একসময় বিবেকানন্দ, জগদীশ বসু, রবীন্দ্রনাথ নিজের নিজের ক্ষেত্রে ভারতের অবদান সম্বন্ধে বিশ্বসমাজকে সচেতন করে দিয়েছিলেন। বর্তমান কালে পণ্ডিত রবিশঙ্করের মতো, সত্যজিৎও জগৎসভায় স্বদেশের সম্মান আরও উজ্জ্বল করেছেন।

শুধু ভূমিকা দিয়ে বইয়ের সম্যক পরিচয় হয় না; সহানুভূতিশীল পাঠকেরও কিছু দেয় আছে, তবেই লেখা সার্থক হবে।

লীলা মজুমদার
১৯৮৬

.

লেখক পরিচিতি – অজানা মঞ্জিল সেন

একজন লেখক তৈরির পেছনে একজন সম্পাদকের ভূমিকা নিয়ে খুব আলোচনা হয় না। বহু ঘটনাই থেকে যায় নেপথ্যে। মঞ্জিল সেনের সাহিত্যজীবনের সূচনায় ‘সন্দেশ’ সম্পাদক সত্যজিৎ রায়ের পরামর্শ তাঁর সাহিত্য জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করায় একটি বড়ো ভূমিকা নিয়েছিল। মঞ্জিল সেন স্বয়ং স্বীকার করেছেন, ‘সত্যজিৎ রায় ওটার পেছনে অমন করে লেগে না থাকলে আমার বোধ হয় ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় আর লেখা হত না, আমিও লেখক হতে পারতাম না।’

গত শতকের সত্তর দশকের প্রথম দিকের ঘটনা। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক তখন ছিলেন তিনজন নলিনী দাশ, লীলা মজুমদার এবং সত্যজিৎ রায়। পত্রিকার দপ্তরে জমা পড়া কোনো লেখা প্রকাশের জন্য মনোনীত হত তখনই, যখন সেটি তিন সম্পাদকের থেকেই পাস মার্ক পেত। সব লেখা প্রথমে দেখতেন নলিনী দাশ। তাঁর হাতে প্রাথমিকভাবে মনোনীত লেখাগুলি যেত লীলা মজুমদারের কাছে। সেখানে আরেক প্রস্থ ঝাড়াইবাছাইয়ের পর লেখাগুলি যেত সত্যজিৎ রায়ের কাছে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য। প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যেও সত্যজিৎ ছোটো বড়ো সব লেখাই খুঁটিয়ে পড়তেন। প্রয়োজনে লেখা কাটছাঁট করতেন, কখনো-বা পুরোপুরি ‘রি-রাইট’ করতেন। তেমন বুঝলে লেখকদের সঙ্গে চিঠি বা ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিতেন। সুচিত্রা ভট্টাচার্য এবং নবনীতা দেবসেন ‘সন্দেশ’-এ তাঁদের প্রথম জমা দেওয়া গল্পটির ক্ষেত্রে সেইরকম ফোন পেয়েছিলেন। তখন কিন্তু ওঁরা কেউই বিখ্যাত লেখিকা হয়ে ওঠেননি।

ফিরে আসি মঞ্জিল সেনের ঘটনায়।

গত শতকের আটের দশকে বড়োদের জন্য রহস্য কাহিনিকার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মঞ্জিল সেন। সেইসময় মাসিক রহস্য পত্রিকা, রোমাঞ্চ, ক্রাইম ইত্যাদি বেশ কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হত। সেইসব পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন মঞ্জিল সেন। ছোটোদের জন্য ‘মৌচাক’ ও ‘শিশুসাথী’-তে অল্প কিছু গল্প, কবিতা লিখেছিলেন। তবে নিয়মিত শিশু-সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ‘রামধনু’ পত্রিকায়।

‘সন্দেশ’ পত্রিকায় তাঁর আবির্ভাব ১৯৭২-এ। আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনের একটি ঘটনা অবলম্বনে মঞ্জিল সেনের গল্প ‘একটি ঐতিহাসিক বিচার’ পাঠকদের সমাদর পেয়েছিল। এরপরে তিনি ‘সন্দেশ’-এ লিখলেন একটি বড়োগল্প, ‘ঘরছাড়া’। এই গল্পটিতে সম্পাদক সত্যজিৎ কাঁচি চালিয়েছিলেন। গল্পের শেষ অংশটিকে গোড়ায় এনে শেষটাতে নিজের হাতে কিছু সংশোধন করেছিলেন। গল্পটি সম্পাদকের নিজের খুব পছন্দের ছিল, কারণ ‘সন্দেশ’-এর প্রথম কুড়ি বছরের সংকলন গ্রন্থ সেরা সন্দেশ-এ তিনি স্থান দিয়েছিলেন ঘরছাড়াকে।

এরপরে মঞ্জিল সেন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের জন্য ‘ডাকাবুকো’ নামের একটি উপন্যাস জমা দিলেন। প্রথমে লীলা মজুমদার লেখাটির কয়েক জায়গায় অদলবদল করতে বললেন। সংশোধিত পাণ্ডুলিপিটি এরপর গেল সত্যজিৎ রায়ের কাছে।

কিছুদিন পরে মঞ্জিল সেন সত্যজিতের লেখা চার পাতার একটি দীর্ঘ চিঠি পেলেন। সম্পাদক লিখেছিলেন যে লেখাটির মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। পুরো উপন্যাসটি গোড়া থেকে বিশ্লেষণ করে তিনি দেখিয়েছিলেন কেন লেখাটি বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। শুধু তাই নয়, কীভাবে লিখলে লেখাটি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে তার একটি নির্দেশিকাও তিনি দিয়েছিলেন।

কিন্তু নির্দেশিকাটি লেখকের অহং-এ আঘাত করল! তাঁর মতে তিনি যা লিখেছেন সেটাই ঠিক এবং তাঁর সিদ্ধান্তও তিনি জানিয়ে দিলেন সম্পাদককে লেখা একটি চিঠিতে।

এরপরেও কিন্তু সম্পাদক লেখককে অনুরোধ করলেন তাঁর পরামর্শটা দ্বিতীয়বার চিন্তা করার জন্য। আসলে ‘সন্দেশ’-এর পাঠকদের কাছে একটি ভালো লেখা পৌঁছে দেবার তাগিদ সম্পাদকের মাথায় যে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেছিল। ১৯৭৪-এর ১৯ এপ্রিলে লেখা সেই চিঠিতে সত্যজিৎ লিখেছিলেন—

শ্রীমঞ্জিল সেন

সবিনয়ে নিবেদন,

আপনার চিঠি পেলাম। আপনার গল্পের পাণ্ডুলিপি ‘সন্দেশ’ আপিসে পাঠিয়ে দিচ্ছি, আপনি এসে নিয়ে যাবেন। অন্য উপন্যাস অবশ্যই পাঠাতে পারেন এবং আমি সেটা নিশ্চয়ই পড়ব; কিন্তু তার আগে অনুরোধ আপনি ‘ডাকাবুকো’ নতুন করে লিখুন। আপনি যদি চারটির মধ্যে একটি চরিত্রকে যেমন বলেছি তেমনভাবে তৈরি করেন, তাহলে আপনার themeও বজায় থাকবে এবং সেইসঙ্গে অন্য তিনজন গুন্ডা হওয়াতে thrill, suspense ইত্যাদি সবই আসবে। আর চার চারটে embittered চরিত্রের একসঙ্গে reformed হয়ে যাওয়ার অবাস্তবতাও কেটে যাবে। মৌলিকত্বের কথাই যদি বলেন, তাহলে বলব বাচ্চা মেয়েকে kidnap করে, তার সরলতার প্রভাবে kidnapper চরিত্রে পরিবর্তন হওয়ার গল্প কিন্তু বাংলাতেই আগে লেখা হয়ে গেছে। অচিন্ত্য সেনগুপ্তের ‘ডাকাতের হাতে’ পড়েছেন নিশ্চয়ই। আসলে গল্প ষোলো আনা মৌলিক হওয়াটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার এবং ওদিকটা নিয়ে খুব মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।…

পাঠকদের সৌভাগ্য সত্যজিৎ রায়ের দ্বিতীয় চিঠির পর লেখক তাঁর পরামর্শ মেনে নিয়েছিলেন এবং সংশোধিত ‘ডাকাবুকো’ ‘সন্দেশ’-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে পাঠকদের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলেছিল। পরবর্তী দিনে উপন্যাসটি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে গ্রন্থাকারেও প্রকাশিত হয়েছিল। কিশোর সাহিত্যে মঞ্জিল সেনের জনপ্রিয়তার সূচনাও হয়েছিল ডাকাবুকো থেকেই।

১৯২৬-এ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের হাসারায় জন্ম মঞ্জিল সেনের। ছোটোবেলা থেকেই তাঁর তালিকায় থাকত রহস্য গল্প। কৈশোরে তাঁর প্রিয় লেখক ছিলেন সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, সুকুমার দে সরকার। এ ছাড়াও তাঁর আরও দুই প্রিয় লেখক ছিলেন ধীরেন্দ্রলাল ধর ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শৈশবের রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প প্রীতি তাঁর সৃষ্টিতেও প্রভাব ফেলেছিল। সব ধরনের গল্প-উপন্যাস লিখলেও মঞ্জিল সেন জনপ্রিয় ছিলেন রহস্য, রোমাঞ্চ, ভৌতিক গল্প-লেখক হিসেবে।

যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। শুধু লেখালিখি নয়, খেলাধুলাতেও সাফল্য পেয়েছিলেন মঞ্জিল সেন। বক্সিং ছিল তাঁর প্রিয় খেলা। অল বেঙ্গল ইন্টার কলেজ বক্সিং প্রতিযোগিতার ব্যান্টম ওয়েট বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। ওই প্রতিযোগিতার ভারোত্তোলনেও জয়ী হয়েছিলেন মঞ্জিল সেন।

‘সন্দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে আজীবন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন মঞ্জিল সেন। ‘সন্দেশ’-এর পরিচালন সমিতি (সুকুমার সাহিত্য সমবায় সমিতি লিমিটেড)-এর সদস্য ছিলেন। শতবর্ষ অতিক্রান্ত এই ঐতিহ্যমণ্ডিত পত্রিকার সহ-সম্পাদকও ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ‘সন্দেশ’-এ অজস্র গল্প, উপন্যাস লিখেছেন সন্দেশীদের প্রিয় মঞ্জিলদা। কিন্তু শুধু ‘সন্দেশ’ নয়, ‘শুকতারা’, ‘কিশোর ভারতী’, ‘আনন্দমেলা’ সহ ছোটোদের প্রায় সব পত্রিকাতেই তিনি লিখেছেন অসংখ্য গল্প, উপন্যাস এবং শুধু ছোটোদের পত্রপত্রিকা নয়, বড়োদের জন্যও অনেক গল্প লিখেছেন মঞ্জিল সেন।

মঞ্জিল সেনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০-এর বেশি। মূলত রহস্য-রোমাঞ্চ ও ভূতের গল্পের জন্যই পাঠকমহলে তাঁর জনপ্রিয়তা। কিন্তু অন্য ধরনের লেখাতেও মঞ্জিল সেনের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। নিজে একজন বক্সার হওয়ার সুবাদে বিশ্বের বক্সিং-এর হাল-হকিকতে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। বক্সিং-এর সত্যিকারের রোমাঞ্চকর প্রতিযোগিতা এবং ঘটনাবলি নিয়ে অসংখ্য লিখেছেন। এই ধরনের একটি বই দুরন্ত লড়াই। ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকায় একসময় ধারাবাহিক একটি ফিচার লিখতেন। ‘এই আধারে’ শিরোনামে ওই বিভাগটিতে শরীরচর্চার প্রশিক্ষণ নিয়ে লিখতেন মঞ্জিল সেন। চমৎকার ওই বিভাগটিতে শরীর গঠনের নিয়মকানুন শেখাতেন তিনি। বক্সিং এসেছে ওঁর অনেক গল্প উপন্যাসেও এবং স্বাভাবিকভাবে ওই কাহিনিগুলিতে কোনো টেকনিক্যাল ভুল নেই। বক্সিং-এর পটভূমিতে লেখা তাঁর গোরাচাঁদ গ্রন্থটি লাভ করেছিল জাতীয় পুরস্কারও। ঐতিহাসিক (কোঙ্কনের সিংহ) এবং কল্পবিজ্ঞানের (কুরনাবেরী রহস্য) উপন্যাসও লিখেছেন মঞ্জিল সেন। বাংলা কিশোর সাহিত্যের বর্তমান ধারা অনুসরণ করে মঞ্জিল সেও একটি চরিত্র সৃষ্টি করে তাকে নিয়ে একাধিক গল্প লিখেছেন। ওঁর সৃষ্ট সেই কিশোর গোয়েন্দা চরিত্রটির নাম অর্ক। অর্কর সহকারী বালচন্দ্রন। ওরা দুই বন্ধু। দক্ষিণ কলকাতার এক নামকরা স্কুল থেকে পাশ করে পার্ক স্ট্রিটের একটি কলেজে পড়ে। বালচন্দ্রনের বাড়ি কেরালায়, কিন্তু জন্ম থেকেই কলকাতায় থাকার দরুন ও দারুণ ভালো বাংলা বলতে পারে। দু-জনে মিলে অনেক রহস্যের সমাধান করেছে। শুধু রহস্য-রোমাঞ্চই নয়, মানবিক আবেদনে ভরপুর অনেক গল্প উপন্যাস (পরশমণি, নীল পাখির পালক ইত্যাদি) লিখেছেন তিনি। একাধিক গবেষণামূলক গ্রন্থেরও প্রণেতা মঞ্জিল সেন (অদ্বিতীয় সত্যজিৎ, কে এই শার্লক হোমস)।

পাঠকদের ভালোবাসা পেয়েছেন মঞ্জিল সেন। পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি অনেক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। ১৯৯০-৯১-এ গোরাচাঁদ গ্রন্থের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও পেয়েছেন শিশু সাহিত্য পরিষদ প্রদত্ত ‘ভুবনেশ্বরী পদক’ ও ‘ফটিক স্মৃতি পদক’, CBT আয়োজিত সারা ভারত বাংলা শিশু সাহিত্য প্রতিযোগিতার পুরস্কার, শৈব্যা প্রকাশনীর পুরস্কার। ২০১২তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মঞ্জিল সেনকে সমগ্র সাহিত্য জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করেছিল বিদ্যাসাগর পুরস্কার।

লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছিলাম সত্যজিৎ রায় এবং ‘সন্দেশ’-এর। প্রচুর পত্রপত্রিকায় লিখলেও ‘সন্দেশ’-এর সঙ্গে মঞ্জিল সেনের সম্পর্ক ছিল অন্যরকম। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার গ্রাহক, পাঠক, লেখক, শিল্পী, শুভানুধ্যায়ীরা নিজেদের এক পরিবারের সদস্য মনে করেন এবং তাঁদের বলা হয় সন্দেশী। মঞ্জিল সেনও ছিলেন একজন সন্দেশী। বিখ্যাত লেখক হওয়া সত্ত্বেও বইমেলায় ছোটো বড়ো সন্দেশীদের সঙ্গে হইহই করে বই বিক্রিতে মেতে উঠতেন। সন্দেশের সব অনুষ্ঠানে নিয়মিত হাজির হতেন। নিয়মিত আড্ডা দিতে যেতেন কলেজ স্ট্রিটে ‘সন্দেশ’-এর বিক্রয়কেন্দ্র নিউস্ক্রিপ্টের দোকানে।

২০১৬-র ডিসেম্বরে মঞ্জিল সেনের জীবনাবসান হয়। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন পাঠকদের হৃদয়ে।

দেবাশিস সেন

Book Content

আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার
বংশ পরিচয়
ছেলেবেলা
যৌবন ও কর্মজীবন
স্রষ্টা সত্যজিৎ
রসে-বশে
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকার
সত্যজিৎ ও জাঁ রেনোয়া
সত্যজিৎ ও আকিরা কুরোসাওয়া
মারি সিটনের একটি চিঠি
প্রসঙ্গ: সত্যজিৎ
লেখক সত্যজিৎ
মানুষ সত্যজিৎ
চিত্র পরিচিতি
অস্কার এবং অন্যান্য
জলসাঘর (চিত্রনাট্য)
সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তথ্যপঞ্জি
লেখক: মঞ্জিল সেনবইয়ের ধরন: আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা

ভয় সমগ্র ২ – মঞ্জিল সেন

উপন্যাস সমগ্র ১ - মঞ্জিল সেন

উপন্যাস সমগ্র ১ – মঞ্জিল সেন

ভয় সমগ্র ১ - মঞ্জিল সেন

ভয় সমগ্র ১ – মঞ্জিল সেন

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.