প্রসঙ্গ: সত্যজিৎ

প্রসঙ্গ: সত্যজিৎ

সত্যজিতের ছবি দেখলে বোঝা যায় জীবনধর্মী ছবি করা কত কঠিন ব্যাপার… বাংলা সাহিত্য ভারতীয় সাহিত্যের প্রতিনিধিমূলক, সুতরাং বাংলা থেকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ পরিচালকের উদয় আশ্চর্যের নয়।

—ইলিয়া সুকভ

.

সত্যজিৎ রায় তাঁর দেশ ও জনগণের ধ্রুব সত্যটা খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশের লেখকদের খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন— তাঁদেরই একজন হয়ে গেছেন। উনি কাগজ-কলমের বদলে ছবির মাধ্যমে লিখে গেছেন।

—জন রাসেল

.

এ হচ্ছে সেই জাতের ছবি, সংগীত বা কাব্যের মতো, যা বার বার আস্বাদ করলে নতুন নতুন রসের সন্ধান দেয়, উন্মোচিত হয় নতুন দিগন্ত। সত্যজিৎ রায়ের চিত্রকর্ম রুদ্ধশ্বাস সাসপেন্স বা উত্তেজক ক্রাইম ছবি নয় যে, একবার দেখলেই তার আকর্ষণ ফুরিয়ে যাবে।

 ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ সম্বন্ধে

 —নিউ ইয়র্ক পোস্টের আর্চার উইনস্টন

.

ছবি তৈরির সব কাজে, এমনকি ক্যামেরার কাজেও একজন পরিচালকের মোটামুটিভাবে ওয়াকিবহাল থাকা দরকার। পরিচালকই একমাত্র লোক যিনি জানেন কখন কোনটা দরকার। আমি যতদূর সম্ভব নিজেই সব কাজ দেখাশোনা করি। তার মানে অবশ্য এ নয় যে, আমার ইউনিটে বিশেষজ্ঞের অভাব আছে।

—সত্যজিৎ রায়

সেই চিরাচরিত ভঙ্গিমা, ‘অ্যাকশন!’
সেই চিরাচরিত ভঙ্গিমা, ‘অ্যাকশন!’

অনেকে বলেন, সত্যজিৎ রায় অপু-ত্রয়ীর মতে ভালো ছবি করেন নি। ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ আমাকে সে কথা বিশ্বাস করতে দেয় না।

—জন রাসেল

.

অগাধ বিস্ময়ে এই বিশাল প্রতিভার সামনে এসে আমি নীরব হয়ে গেছি। জাঁ রেনোয়া যাঁকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের পিতৃতুল্য বলেছেন, গদার ও আন্তোনিওনির সমতুল্য পরিচালক বলেছেন, সেই বিখ্যাত মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে এল।

—চার্লস হিগাম

.

‘অপুর সংসার’ প্রমাণ করেছে, সত্যজিৎ যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পরিচালকদের অন্যতম। এ ছবি বিশ্বমানবতা ও সৌন্দর্যের ছবি।

—রবার্ট হকিন্স

.

কথাটা খুব আশ্চর্য শোনাবে, কিন্তু এটা ঘটনা যে, ‘পথের পাঁচালী’ লন্ডন ফিলম অ্যাকাডেমিতে দেখতে গিয়ে বই শেষ হবার পর দেখলাম, দর্শক হতবাক হয়ে গেছে। পশ্চিমের অপরাধমূলক শিশু চলচ্চিত্রের জগতে এটা বিস্ময়কর ব্যাপার।

—ডিলিস পাওয়েল

.

অপুর ট্রিলজি তাঁকে জগৎবিখ্যাত করেছে। এ ছবিগুলোতে আমেরিকান দর্শক পেল আনন্দ ও বেদনায় মথিত নিটোল ভারতীয় সামাজিক জীবনের একটি আলেখ্য। শুধু তাই নয়, তাঁরা আরও দেখলেন, চিরাচরিত হলিউড প্রথায় নাচ, গান, হল্লা, আর খ্যাতনামা চিত্রতারকা ছাড়া কত ভালো ছবি করা যায় তার নিদর্শন।

—পল গ্রিম

.

যন্ত্রপাতির এই দৈন্য দূর না হলে বাংলা ছবির উৎকর্ষ শুধুমাত্র একটি সঙ্কীর্ণ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকবে এবং এই গণ্ডির বাইরে বিচরণের স্পর্ধা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এই দৈন্য দূর না হলে অনেক কাহিনি, অনেক ভাব, অনেক রস চলচ্চিত্রে ব্যক্ত হতে পারবে না।

—সত্যজিৎ রায়

.

এটা আজ প্রমাণিত হয়েছে যে, ভারতীয় চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায় বস্তুতান্ত্রিক চলচ্চিত্রের সার্থক পুরস্কার। খুব সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে এমন এপিক সৃষ্টি চলচ্চিত্রে এক দুর্লভ সংযোজন।

—পল. ভি. বেকলি

.

সত্যজিতের যে কোনো ছবি দেখা যাক না কেন, দেখা যাবে প্রত্যেকটি ছবিতে ভারতবর্ষের চিরকালীন সংগীতের প্রতীক ব্যবহার ও বিষয়বস্তুর সঙ্গে এক আশ্চর্য আত্মীয়তা ছোটো ছোটো কিছু ঘটনা, কিছু কিছু কথাকে বিলম্বিত লয়ের মধ্যে ফেলে তিনি নিপুণভাবে গল্পের পরিবেশ ও মেজাজ গড়ে তুলতে পারেন।

—ফিলিপ স্ট্রিক

.

সত্যজিতের ছবি ডকুমেন্টারি ছবির মতো নয়, সত্যজিতের ছবিতে এক আশ্চর্য মানসিকতা প্রতিবিম্বিত হয়, যে প্রতিবিম্বে আমরা নিজেদের ভেতরটা দেখতে পাই।

—ডগলাস ম্যাকভে

.

রায়ের ছবিতে গাঁথা এক নতুন বিষয়, যা তিনি এমন সোজাসুজি বর্ণনা করেন যে প্রতীয়মান হয় সেই বিষয়বস্তু সম্বন্ধে তিনি বিশেষ পারদর্শী। তাই অপর্ণার অচিন্তনীয় মৃত্যুর বর্ণনাও সমানভাবে সহজবোধ্য হয়ে ওঠে। দম্পতির প্রথম মিলনের ভীরুতা এমন আবেশে রূপান্তরিত হয় যা একমাত্র স্বল্পতম বর্ণনার মধ্যেই বিকশিত হতে পারে।

—মাইকেল সেমেঁৎ

.

সত্যজিৎ ছবির সংগীত রচনার অধিকারী। তিনি জানেন তিনি কি চান। পাশ্চাত্য সংগীতে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান, পেশাদার শিল্পীদের মতোই তিনি পিয়ানো বাজাতে পারেন। ছবি ও সংগীতে সমান নৈপুণ্য এবং অপরিসীম জ্ঞান লক্ষ্য করেছি চার্লি চ্যাপলিনের মধ্যেও। ‘লাইম লাইট’ ছবিতে চ্যাপলিনের রচিত সংগীত অসাধারণ।

—রবিশঙ্কর

.

বাইবেলের গল্প নিয়ে হলিউডের যে পরিচালক তিনবার, ছ-বার কিংবা ন-বার ছবি করেছেন, তিনিও সত্যজিতের কাছে নিষ্প্রভ, তা যত অর্থব্যয়েই তিনি ছবি করে থাকুন না কেন। রেনোয়া ও ডি সিকার মতো সত্যজিৎ জীবনকে দেখেন, সে জীবন খারাপই হোক আর ভালো হোক।

—রবার্ট স্টিল

.

আমাদের দেশের অশিক্ষিত, মুর্খ সমালোচকরা বলেছিলেন, ছবিগুলো বড়ো ধীর গতি, একঘেয়ে এবং বিরক্তিজনক। এঁরা মুখ লুকোবার জায়গা পাননি, যখন দেখা গেল, নিউ ইয়র্ক শহরে ‘পথের পাঁচালী’ দীর্ঘ সাত মাস ধরে চলল।

—রবার্ট স্টিল

অর্থবল, লোকবল আর উপযুক্ত যন্ত্রপাতির আনুকূল্যে হলিউডের পক্ষে ‘স্পার্টাকাস’ অথবা সোভিয়েত রাশিয়ার পক্ষে ‘ওয়ার অ্যান্ড পীস’-এর মতো ব্যয়বহুল ছবি তোলা কঠিন কাজ নয়। ভারতবর্ষে, বিশেষ করে আমাদের পশ্চিমবাংলায় অমন এপিক ধরনের ছবি করার দুঃসাহস আমাদের নেই। প্রথমত আমাদের অত টাকা নেই। এমনকি টাকা থাকলেও ওই ছবির বাজার আমরা পাব না। হলিউডের সঙ্গে পাল্লা দেবার মতো প্রযুক্তিবিদ্যা তো নেই-ই।

.

—সত্যজিৎ রায়

.

আগেই বলা হয়েছে, সত্যজিৎ রায়ের ছবির সমালোচনা করা এ বইয়ের বিষয়বস্তু নয়। তা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। বড়ো বড়ো চলচ্চিত্র সমালোচকরা তা নিয়ে গবেষণা করেছেন ও করবেন। এই বইতে মানুষ সত্যজিৎকে আমরা খুঁজতে চেয়েছি, কিন্তু সৃষ্টিকে বাদ দিয়ে স্রষ্টার মূল্যায়ন সম্ভব নয়, কারণ সেটাই তাঁর সাম্রাজ্য, সেখানেই তাঁর অবাধ বিচরণ। সেই সাম্রাজ্যে সামান্য প্রবেশের চেষ্টা না করলে স্রষ্টার জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। লেখকের এটা অক্ষম স্বীকারোক্তি, কারণ সত্যজিৎ রায়কে বিশ্লেষণ করার মতো জ্ঞানবুদ্ধি এই অধমের নেই, সেটা অকপটে স্বীকার করাই ভালো।

সারা পৃথিবীতে যিনি এখন বরেণ্য, তাঁকে নিয়ে কিছু লেখা সামান্য ব্যাপার নয়। যতই গভীরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছি, ততই যেন তলিয়ে গেছি, এটাও এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। একজন মানুষের জীবন এত বহুমুখী সৃজনশীল হতে পারে তা সত্যিই গবেষণার বস্তু।

.

সত্যজিৎ রায় সারা বিশ্বের সম্মান কুড়োবার পরেই বোম্বের এক নামজাদা অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক উদ্ধত স্পর্ধায় বলেছিলেন, ‘হু ইজ সত্যজিৎ রায়?’১৪ তার শুধু একটাই জবাব, ‘হি ইজ ওয়ান অফ দ্য নাইন গ্রেটেস্ট ফিলম মেকার্স অফ অল টাইমস’— এটা আমার কথা নয়, ১৯৭৯ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল।

সত্যজিৎ-তনয় সন্দীপের প্রসঙ্গ নিয়ে এই পরিচ্ছেদের যবনিকা টানব। বাবার গল্প ‘ফটিকচাঁদ’ নিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর কর্মজীবন, এখন তিনি ভীষণ ব্যস্ত মানুষ, টি. ভি. সিরিয়ালের ছবি তুলতে এত ব্যস্ত যে নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। পঁচাশির মাঝামাঝি থেকে ছিয়াশির মার্চের মধ্যে তেরোটি দূরদর্শন-ধারাবাহিক ছবি শেষ করেছেন। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করলেও নিজের পায়ে দাঁড়াবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উপেন্দ্রকিশোরের চতুর্থ পুরুষ।

তথ্যচিত্র সুকুমার রায় (১৯৮৭) শুটিংয়ে সত্যজিৎ রায়ের সহকারী পুত্র সন্দীপ রায়।
তথ্যচিত্র সুকুমার রায় (১৯৮৭) শুটিংয়ে সত্যজিৎ রায়ের সহকারী পুত্র সন্দীপ রায়

ইতিমধ্যে সিরিয়াল [সত্যজিৎ রে প্রেজেন্টস-টু] সমাপ্ত। এবার তেরোটি কাহিনি নয়। মোট তিনটি কাহিনি তেরো পর্বে দেখানো হয়েছে। এই তেরো পর্বের সিংহভাগ জুড়ে আছে ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’— বিখ্যাত ফেলুদার কাহিনি। এই হিন্দি সিরিয়ালের ফেলুদা শশীকাপুর। বাংলায় সৌমিত্রকে আমরা এ চরিত্রে দেখতে অভ্যস্ত তাই শশী কাপুরের নির্বাচন দারুণ উৎসাহের সৃষ্টি করেছিল। সৌমিত্র না শশী কে বেশি উপযুক্ত এই চরিত্রে, তাই নিয়ে কাগজে কাগজে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। জটায়ুর ভূমিকায় আছেন মোহন আগাসে। বাঙালি দর্শক জটায়ু বলতে সন্তোষ দত্ত ছাড়া আর কারও কথা চিন্তা করতে পারেন না, তাই এখানেও লড়াইটা খুব জমজমাট। এছাড়া অন্য দুটি কাহিনির একটি হল ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’। ইতিমধ্যে সন্দীপ আরও এগিয়ে গেছেন। দ্বিতীয় দফা সিরিয়াল [সত্যজিৎ রে প্রেজেন্টস-টু] টি.ভি.-তে দেখানো হয়ে গেছে। তিনটি কাহিনি তেরো পর্বে দেখানো হয়েছিল। এই তেরো পর্বের সিংহভাগ জুড়ে ছিল ‘যতকাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’— বিখ্যাত ফেলুদার কাহিনি। শশীকাপুর হয়েছিলেন ফেলুদা আর জটায়ুর ভূমিকায় মোহন আগাসে। বাঙালি দর্শকের কাছে কিন্তু এই দুটি চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর সন্তোষ দত্ত জুটিই সেরা। অন্য দুটি কাহিনির একটি হল ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ যেটা হলিউড থেকে প্রযোজিত হবার কথা ছিল,১৫ হিন্দি এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই। হিন্দি ছবির নাম ঠিক হয়েছিল ‘অবতার’। পিটার সেলার্স চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন অভিনয়ের জন্য। শেষপর্যন্ত এই পরিকল্পনা পরিত্যক্ত হয়েছিল।

বিখ্যাত অভিনেতা পিটার সেলার্সের সঙ্গে কথোপকথন
বিখ্যাত অভিনেতা পিটার সেলার্সের সঙ্গে কথোপকথন

টেলিফিল্ম ‘শেষ দেখা হয়নি’-র শুটিং শেষ করেছেন সন্দীপ রায়। ‘শেষ দেখা হয়নি’-র কাহিনি নীললোহিতের। চিত্রনাট্য সন্দীপ নিজেই লিখেছেন। প্রায় দু-ঘণ্টার এই টেলিফিল্মের নিবেদক কলকাতা দূরদর্শন।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর তৃতীয় পর্ব ‘গুপী বাঘা ফিরে এল’ পরিচালনা করেছেন সন্দীপ রায়। এই ছবির জন্য রাজ্য সরকার ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর দ্বিতীয় পর্ব ‘হীরক রাজার দেশে’, ছবিটিও বামফ্রন্ট সরকার প্রযোজনা করেছিলেন। এই তৃতীয় পর্বের কাহিনি চিত্রনাট্য ও সংগীত সত্যজিৎ রায়ের হলেও ছবিটি পরিচালনা করেছেন সন্দীপ রায়। এই তৃতীয় পর্বের গুপী বাঘার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তপেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রবি ঘোষ। গায়ক অনুপঘোষাল। গুপী গাইন বাঘা বাইন ট্রিলজির প্রথমটি পুত্র সন্দীপের জন্য করেছিলেন সত্যজিৎ, এবারের পর্বটি পরিচালনা করেছেন সেই ছেলেই। বক্স অফিস হিট করেছে ‘গুপী বাঘা ফিরে এল’।

***

১৪. ‘হু ইজ সত্যজিৎ রায়?’ সম্ভবত এই মন্তব্য করেছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেতা তথা পরিচালক এবং প্রযোজক রাজ কাপুর (১৯২৪—১৯৮৮)। ‘পথের পাঁচালী’ দেখে প্রাথমিকভাবে মুগ্ধ হলেও সত্যজিৎ রায়ের আকাশচুম্বী আন্তর্জাতিক খ্যাতি স্বভাবতই উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজ কাপুরকে খানিকটা বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। এমনকী সত্যজিৎ ভারতবর্ষের দারিদ্র্যকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করছেন, এমন মন্তব্যও রাজ কাপুর কিছু সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।

.

১৫. ‘…একটি হল ”বঙ্কুবাবু বন্ধু” যেটা হলিউড থেকে প্রযোজিত হওয়ার কথা ছিল’— তথ্যটি সঠিক নয়। ১৯৬৭ নাগাদ মাইক উইলসন নামক এক প্রতারক প্রযোজকের প্ররোচনায় এবং প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করে সত্যজিৎ একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রনাট্য রচনা করেন ‘দ্য এলিয়েন’ নামে। একটি গ্রামের পুকুরে উলটানো বাটির মতো ভিনগ্রহী মহাকাশযান নামে, তারপর সেই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে তুমুল প্রতিক্রিয়া হয় এবং বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে একটি আর্থসামাজিক প্রহসন প্রতিষ্ঠা পায়। ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ সত্যজিৎ রায়ের লেখা প্রথম বাংলা ছোটোগল্প, এক ভিনগ্রহীর আগমন অংশটুকু ছাড়া তার সঙ্গে ‘দ্য এলিয়েন’-এর মিল সামান্যই। হলিউডের প্যারামাউন্ট স্টুডিয়োতে সত্যজিতের লেখা সেই চিত্রনাট্যের একাধিক কপি সে সময় বহু পরিচালকের হাত ঘুরেছিল। তবে দুঃখের বিষয়, বিভিন্ন গোলযোগের কারণে সে ছবি আর সত্যজিতের করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে স্টিভেন স্পিলবার্গ-এর ‘ই. টি.’ ছবিটি দেখে সত্যজিৎ বুঝতে পারেন যে, তাঁর চিত্রনাট্য এবং খসড়া থেকে অনেক কিছুই স্রেফ বিনা অনুমতিতে ব্যবহৃত করেছেন স্পিলবার্গ তাঁর ছবিতে। কৃতিত্বের এহেন কারচুপিতে ব্যথিত হয়েছিলেন সত্যজিৎ। সত্যজিৎ রায়ের ‘Original English Film Scripts’ এবং ‘Travails with the Alien’ বইতে ‘দ্য এলিয়েন’-এর চিত্রনাট্য সংযুক্ত হয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *