ভয় সমগ্র -মঞ্জিল সেন
সম্পাদনা – বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০১৮
সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতিতে
সম্পাদকীয়
বাংলা সাহিত্যে অলৌকিক বা ভৌতিক গল্পের একটা বিশিষ্ট স্থান আছে ঠিকই কিন্তু শুধুমাত্র এই ধরনের লেখা লিখেই সাহিত্যিক পরিচিতি লাভ করেছেন এমন বিশেষ কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
ভূতের গল্পকে অনেক পাঠকই শিশু কিশোর সাহিত্য শ্রেণিভুক্ত বলে মনে করেন যদিও ত্রৈলোক্যনাথ ও শরদিন্দু তাঁদের সৃষ্ট অলৌকিক সাহিত্যসম্ভারকে পরিণত বয়স্ক পাঠকদের উপযুক্ত করেই নির্মাণ করেছেন। ত্রৈলোক্যনাথ তাঁর ভৌতিক রূপকল্পের জগতের মধ্যে ব্যঙ্গবিদ্রূপের যে প্রচ্ছন্ন আবহাওয়া সৃষ্টি করেছেন তা তাঁর কাহিনিগুলিকে একাধারে কৌতুক ও অন্যদিকে ভৌতিক রসে রসায়িত করে এক অপূর্ব সৃষ্টি করে তুলেছে বললে অত্যুক্তি হয় না।
বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বনফুল, প্রমথ চৌধুরী, প্র-না-বি, মনোজ বসু কিংবা গজেন মিত্তির, প্রেমেন মিত্তিররা মাঝে মাঝেই গল্পের মধ্যে ভৌতিক রস সঞ্চার করেছেন।
ব্রাহ্ম আবহাওয়ায় পরিশীলিত লেখকরা সম্ভবত ভৌতিক গল্পকে ছোটোদের মানসিকতার পক্ষে অনুপযোগী বলে মনে করতেন। ব্যতিক্রম ছিলেন মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় এবং হেমেন্দ্রকুমার রায়। মণিলাল ভূতের সঙ্গে আজগুবি আবহাওয়াকেও সম্পৃক্ত করেছেন কিন্তু হেমেন্দ্রকুমার তা করেননি। ভূতের গল্পের প্রকৃত রস নিহিত আছে তার পরিবেশে। হেমেন্দ্রকুমার সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রায় অদ্বিতীয়। যদিও মানতে হয় তাঁর অনেক কাহিনির মধ্যে বিদেশি কাহিনির অনিবার্য প্রভাব এসে পড়েছে। ভৌতিক ও অলৌকিক কাহিনি রচনার পরিবেশ ও বিষয় সৃষ্টির বৈচিত্র্যে শরদিন্দু প্রায় অতুলনীয় কিন্তু তাঁর অলৌকিক গল্পসম্ভারের অধিকাংশই প্রাপ্তমনস্ক (নাকি বয়স্ক?)দের জন্য। বিপরীতে কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত ছোটোদের জন্য ভূতের গল্প লিখেছেন। আশ্চর্য ঘরোয়া পরিবেশ ও পটভূমিতে লেখা গল্পগুলি সব বয়সের পাঠকের ভালো লাগবে। আবার ছোটোদের জন্য অদ্ভুক কৌতুক ও সরস ভৌতিক গল্পের জগৎ সৃষ্টি করেছেন কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর গল্পের ভূতেরা ভয় দেখায় না বরং দুর্বল বা সৎ মানুষদের সাহায্য করে।
মূলত ছোটোদের জন্য যেসব লেখকরা বাংলা সাহিত্যে কলম ধরেছেন তাঁদের মধ্যে মঞ্জিল সেন ভূতের গল্প লেখায় যথেষ্ট মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। নবপর্যায়ের ‘সন্দেশ’কে কেন্দ্র করে তরুণ লেখকদের যে মণ্ডলী গড়ে ওঠে তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মঞ্জিল সেন।
‘সন্দেশ’ সম্পাদনার সমান্তরালে সত্যজিৎ কিশোর সাহিত্যকে সমৃদ্ধতর করতে স্বয়ং কলম ধরেন। সৃষ্টি হয় ‘ফেলুদা’ ও ‘প্রোফেসর শঙ্কু’র মতো চরিত্রদের, এ ছাড়া যে চমকপ্রদ ছোটোগল্পের সম্ভার তিনি সৃষ্টি করেন তাতে বিচিত্র থেকে বিচিত্রতর বেশ কিছু অলৌকিক ও ভৌতিক রসের রচনা ছিল।
মঞ্জিল সেন নানা ধরনের গল্প লিখলেও মূলত ভূতের গল্পের লেখক হিসেবে তাঁর স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে ওঠে। বিষয় ও পরিবেশ সৃষ্টির বৈচিত্র্যে নানা ধরনের ভৌতিক ও অলৌকিক গল্প লিখেছেন তিনি। পরিবেশ সৃষ্টিতে গ্রাম থেকে শহরে, কখনো-বা গৃহকোণ, কখনো-বা হানাবাড়ি, পার্বত্যঅঞ্চল, খনি বা জলপথে তাঁর গল্পের গতি এগিয়ে যায় ও পাঠকের কৌতূহল জাগিয়ে রাখে। গল্পের সমাপ্তিও হয় আশ্চর্য এক সমাপতনের মধ্য দিয়ে। কখনো সরাসরি বিশ্বের নানাপ্রান্তে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাকেও গল্পের স্বাদে পাঠকদের পরিবেশন করেন। এক্ষেত্রেও স্বীকার করতে হয় হেমেন রায়ের মতো তাঁরও বেশ কিছু গল্পে বিদেশি কাহিনির ছায়া এসে পড়েছে। কাহিনিসার বিদেশি গল্পের কিন্তু পাত্রপাত্রী ও পরিবেশে স্বদেশি মাটির গন্ধ পাওয়া যায়।
ভিন্ন থেকে ভিন্নতর বিষয়ে তাঁর গল্পের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে পাঠকদের মনোরঞ্জন করেছে।
প্রাথমিকভাবে তাঁর শ্রেষ্ঠ কাহিনি নির্বাচন করে এই ভৌতিক গল্পসম্ভার প্রকাশ করল বুক ফার্ম। আশা করা যায় সব বয়সের পাঠকরাই তাঁর লেখাকে নতুন করে আবিষ্কার করে সমৃদ্ধ হবেন।
এই সংকলন গড়ে তুলতে যাঁরা নানা দিক দিয়ে সাহায্য করেছেন তাঁদের মধ্যে সোনাল দাস, সুশান্ত রায় চৌধুরী, ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস সেন, অশোক বেরা, রাহুল মজুমদার, সন্দীপ রায়, সুমিত সেনগুপ্ত, কৌশিক মজুমদার, বিশেষভাবে ধন্যবাদের পাত্র। মঞ্জিল সেনের কাহিনি সংকলন প্রকাশের অনুমতি প্রদানের জন্য গৌতম সেন সহ পরিবারের সকলকে জানাই কৃতজ্ঞতা।
বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়
মঞ্জিল সেন, কিশোর সাহিত্যের এক জনপ্রিয় লেখক
একজন লেখক তৈরির পেছনে একজন সম্পাদকের ভূমিকা নিয়ে খুব আলোচনা হয় না। বহু ঘটনাই থেকে যায় নেপথ্যে। মঞ্জিল সেনের সাহিত্যজীবনের সূচনায় ‘সন্দেশ’ সম্পাদক সত্যজিৎ রায়ের পরামর্শ তাঁর সাহিত্য জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করায় একটি বড়ো ভূমিকা নিয়েছিল। মঞ্জিল সেন স্বয়ং স্বীকার করেছেন, ‘সত্যজিৎ রায় ওটার পেছনে অমন করে লেগে না থাকলে আমার বোধ হয় ”সন্দেশ” পত্রিকায় আর লেখা হত না, আমিও লেখক হতে পারতাম না।’
গত শতকের সত্তর দশকের প্রথম দিকের ঘটনা। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক তখন ছিলেন তিনজন নলিনী দাশ, লীলা মজুমদার এবং সত্যজিৎ রায়। পত্রিকার দপ্তরে জমা পড়া কোনো লেখা প্রকাশের জন্য মনোনীত হত তখনই, যখন সেটি তিন সম্পাদকের থেকেই পাস মার্ক পেত। সব লেখা প্রথমে দেখতেন নলিনী দাশ। তাঁর হাতে প্রাথমিকভাবে মনোনীত লেখাগুলি যেত লীলা মজুমদারের কাছে। সেখানে আরেক প্রস্থ ঝাড়াইবাছাইয়ের পর লেখাগুলি যেত সত্যজিৎ রায়ের কাছে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য। প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যেও সত্যজিৎ ছোটো বড়ো সব লেখাই খুঁটিয়ে পড়তেন। প্রয়োজনে লেখা কাটছাঁট করতেন, কখনো-বা পুরোপুরি ‘রি-রাইট’ করতেন। তেমন বুঝলে লেখকদের সঙ্গে চিঠি বা ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিতেন। সুচিত্রা ভট্টাচার্য এবং নবনীতা দেবসেন ‘সন্দেশ’-এ তাঁদের প্রথম জমা দেওয়া গল্পটির ক্ষেত্রে সেইরকম ফোন পেয়েছিলেন। তখন কিন্তু ওঁরা কেউই বিখ্যাত লেখিকা হয়ে ওঠেননি।
ফিরে আসি মঞ্জিল সেনের ঘটনায়।
গত শতকের আটের দশকে বড়োদের জন্য রহস্য কাহিনিকার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মঞ্জিল সেন। সেইসময় মাসিক রহস্য পত্রিকা, রোমাঞ্চ, ক্রাইম ইত্যাদি বেশ কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হত। সেইসব পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন মঞ্জিল সেন। ছোটোদের জন্য ‘মৌচাক’ ও ‘শিশুসাথী’-তে অল্প কিছু গল্প, কবিতা লিখেছিলেন। তবে নিয়মিত শিশু-সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ‘রামধনু’ পত্রিকায়।
‘সন্দেশ’ পত্রিকায় তাঁর আবির্ভাব ১৯৭২-এ। আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনের একটি ঘটনা অবলম্বনে মঞ্জিল সেনের গল্প ‘একটি ঐতিহাসিক বিচার’ পাঠকদের সমাদর পেয়েছিল। এরপরে তিনি ‘সন্দেশ’-এ লিখলেন একটি বড়োগল্প, ‘ঘরছাড়া’। এই গল্পটিতে সম্পাদক সত্যজিৎ কাঁচি চালিয়েছিলেন। গল্পের শেষ অংশটিকে গোড়ায় এনে শেষটাতে নিজের হাতে কিছু সংশোধন করেছিলেন। গল্পটি সম্পাদকের নিজের খুব পছন্দের ছিল, কারণ ‘সন্দেশ’-এর প্রথম কুড়ি বছরের সংকলন গ্রন্থ সেরা সন্দেশ-এ তিনি স্থান দিয়েছিলেন ঘরছাড়াকে।
এরপরে মঞ্জিল সেন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের জন্য ‘ডাকাবুকো’ নামের একটি উপন্যাস জমা দিলেন। প্রথমে লীলা মজুমদার লেখাটির কয়েক জায়গায় অদলবদল করতে বললেন। সংশোধিত পাণ্ডুলিপিটি এরপর গেল সত্যজিৎ রায়ের কাছে।
কিছুদিন পরে মঞ্জিল সেন সত্যজিতের লেখা চার পাতার একটি দীর্ঘ চিঠি পেলেন। সম্পাদক লিখেছিলেন যে লেখাটির মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। পুরো উপন্যাসটি গোড়া থেকে বিশ্লেষণ করে তিনি দেখিয়েছিলেন কেন লেখাটি বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। শুধু তাই নয়, কীভাবে লিখলে লেখাটি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে তার একটি নির্দেশিকাও তিনি দিয়েছিলেন।
কিন্তু নির্দেশিকাটি লেখকের অহং-এ আঘাত করল! তাঁর মতে তিনি যা লিখেছেন সেটাই ঠিক এবং তাঁর সিদ্ধান্তও তিনি জানিয়ে দিলেন সম্পাদককে লেখা একটি চিঠিতে।
এরপরেও কিন্তু সম্পাদক লেখককে অনুরোধ করলেন তাঁর পরামর্শটা দ্বিতীয়বার চিন্তা করার জন্য। আসলে ‘সন্দেশ’-এর পাঠকদের কাছে একটি ভালো লেখা পৌঁছে দেবার তাগিদ সম্পাদকের মাথায় যে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেছিল। ১৯৭৪-এর ১৯ এপ্রিলে লেখা সেই চিঠিতে সত্যজিৎ লিখেছিলেন—
শ্রীমঞ্জিল সেন
সবিনয়ে নিবেদন,
আপনার চিঠি পেলাম। আপনার গল্পের পাণ্ডুলিপি ‘সন্দেশ’ আপিসে পাঠিয়ে দিচ্ছি, আপনি এসে নিয়ে যাবেন। অন্য উপন্যাস অবশ্যই পাঠাতে পারেন এবং আমি সেটা নিশ্চয়ই পড়ব; কিন্তু তার আগে অনুরোধ আপনি ‘ডাকাবুকো’ নতুন করে লিখুন। আপনি যদি চারটির মধ্যে একটি চরিত্রকে যেমন বলেছি তেমনভাবে তৈরি করেন, তাহলে আপনার themeও বজায় থাকবে এবং সেইসঙ্গে অন্য তিনজন গুন্ডা হওয়াতে thrill, suspense ইত্যাদি সবই আসবে। আর চার চারটে embittered চরিত্রের একসঙ্গে reformed হয়ে যাওয়ার অবাস্তবতাও কেটে যাবে। মৌলিকত্বের কথাই যদি বলেন, তাহলে বলব বাচ্চা মেয়েকে kidnap করে, তার সরলতার প্রভাবে kidnapper চরিত্রে পরিবর্তন হওয়ার গল্প কিন্তু বাংলাতেই আগে লেখা হয়ে গেছে। অচিন্ত্য সেনগুপ্তের ‘ডাকাতের হাতে’ পড়েছেন নিশ্চয়ই। আসলে গল্প ষোলো আনা মৌলিক হওয়াটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার এবং ওদিকটা নিয়ে খুব মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।…
পাঠকদের সৌভাগ্য সত্যজিৎ রায়ের দ্বিতীয় চিঠির পর লেখক তাঁর পরামর্শ মেনে নিয়েছিলেন এবং সংশোধিত ‘ডাকাবুকো’ ‘সন্দেশ’-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে পাঠকদের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলেছিল। পরবর্তী দিনে উপন্যাসটি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে গ্রন্থাকারেও প্রকাশিত হয়েছিল। কিশোর সাহিত্যে মঞ্জিল সেনের জনপ্রিয়তার সূচনাও হয়েছিল ডাকাবুকো থেকেই।
১৯২৬-এ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের হাসারায় জন্ম মঞ্জিল সেনের। ছোটোবেলা থেকেই তাঁর তালিকায় থাকত রহস্য গল্প। কৈশোরে তাঁর প্রিয় লেখক ছিলেন সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, সুকুমার দে সরকার। এ ছাড়াও তাঁর আরও দুই প্রিয় লেখক ছিলেন ধীরেন্দ্রলাল ধর ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শৈশবের রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প প্রীতি তাঁর সৃষ্টিতেও প্রভাব ফেলেছিল। সব ধরনের গল্প-উপন্যাস লিখলেও মঞ্জিল সেন জনপ্রিয় ছিলেন রহস্য, রোমাঞ্চ, ভৌতিক গল্প-লেখক হিসেবে।
যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। শুধু লেখালিখি নয়, খেলাধুলাতেও সাফল্য পেয়েছিলেন মঞ্জিল সেন। বক্সিং ছিল তাঁর প্রিয় খেলা। অল বেঙ্গল ইন্টার কলেজ বক্সিং প্রতিযোগিতার ব্যান্টম ওয়েট বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। ওই প্রতিযোগিতার ভারোত্তোলনেও জয়ী হয়েছিলেন মঞ্জিল সেন।
‘সন্দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে আজীবন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন মঞ্জিল সেন। ‘সন্দেশ’-এর পরিচালন সমিতি (সুকুমার সাহিত্য সমবায় সমিতি লিমিটেড)-এর সদস্য ছিলেন। শতবর্ষ অতিক্রান্ত এই ঐতিহ্যমণ্ডিত পত্রিকার সহ-সম্পাদকও ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ‘সন্দেশ’-এ অজস্র গল্প, উপন্যাস লিখেছেন সন্দেশীদের প্রিয় মঞ্জিলদা। কিন্তু শুধু ‘সন্দেশ’ নয়, ‘শুকতারা’, ‘কিশোর ভারতী’, ‘আনন্দমেলা’ সহ ছোটোদের প্রায় সব পত্রিকাতেই তিনি লিখেছেন অসংখ্য গল্প, উপন্যাস এবং শুধু ছোটোদের পত্রপত্রিকা নয়, বড়োদের জন্যও অনেক গল্প লিখেছেন মঞ্জিল সেন।
মঞ্জিল সেনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০-এর বেশি। মূলত রহস্য-রোমাঞ্চ ও ভূতের গল্পের জন্যই পাঠকমহলে তাঁর জনপ্রিয়তা। কিন্তু অন্য ধরনের লেখাতেও মঞ্জিল সেনের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। নিজে একজন বক্সার হওয়ার সুবাদে বিশ্বের বক্সিং-এর হাল-হকিকতে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। বক্সিং-এর সত্যিকারের রোমাঞ্চকর প্রতিযোগিতা এবং ঘটনাবলি নিয়ে অসংখ্য লিখেছেন। এই ধরনের একটি বই দুরন্ত লড়াই। ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকায় একসময় ধারাবাহিক একটি ফিচার লিখতেন। ‘এই আধারে’ শিরোনামে ওই বিভাগটিতে শরীরচর্চার প্রশিক্ষণ নিয়ে লিখতেন মঞ্জিল সেন। চমৎকার ওই বিভাগটিতে শরীর গঠনের নিয়মকানুন শেখাতেন তিনি। বক্সিং এসেছে ওঁর অনেক গল্প উপন্যাসেও এবং স্বাভাবিকভাবে ওই কাহিনিগুলিতে কোনো টেকনিক্যাল ভুল নেই। বক্সিং-এর পটভূমিতে লেখা তাঁর গোরাচাঁদ গ্রন্থটি লাভ করেছিল জাতীয় পুরস্কারও। ঐতিহাসিক (কোঙ্কনের সিংহ) এবং কল্পবিজ্ঞানের (কুরনাবেরী রহস্য) উপন্যাসও লিখেছেন মঞ্জিল সেন। বাংলা কিশোর সাহিত্যের বর্তমান ধারা অনুসরণ করে মঞ্জিল সেও একটি চরিত্র সৃষ্টি করে তাকে নিয়ে একাধিক গল্প লিখেছেন। ওঁর সৃষ্ট সেই কিশোর গোয়েন্দা চরিত্রটির নাম অর্ক। অর্কর সহকারী বালচন্দ্রন। ওরা দুই বন্ধু। দক্ষিণ কলকাতার এক নামকরা স্কুল থেকে পাশ করে পার্ক স্ট্রিটের একটি কলেজে পড়ে। বালচন্দ্রনের বাড়ি কেরালায়, কিন্তু জন্ম থেকেই কলকাতায় থাকার দরুন ও দারুণ ভালো বাংলা বলতে পারে। দু-জনে মিলে অনেক রহস্যের সমাধান করেছে। শুধু রহস্য-রোমাঞ্চই নয়, মানবিক আবেদনে ভরপুর অনেক গল্প উপন্যাস (পরশমণি, নীল পাখির পালক ইত্যাদি) লিখেছেন তিনি। একাধিক গবেষণামূলক গ্রন্থেরও প্রণেতা মঞ্জিল সেন (অদ্বিতীয় সত্যজিৎ, কে এই শার্লক হোমস)।
পাঠকদের ভালোবাসা পেয়েছেন মঞ্জিল সেন। পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি অনেক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। ১৯৯০-৯১-এ গোরাচাঁদ গ্রন্থের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও পেয়েছেন শিশু সাহিত্য পরিষদ প্রদত্ত ‘ভুবনেশ্বরী পদক’ ও ‘ফটিক স্মৃতি পদক’, CBT আয়োজিত সারা ভারত বাংলা শিশু সাহিত্য প্রতিযোগিতার পুরস্কার, শৈব্যা প্রকাশনীর পুরস্কার। ২০১২তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মঞ্জিল সেনকে সমগ্র সাহিত্য জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করেছিল বিদ্যাসাগর পুরস্কার।
লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছিলাম সত্যজিৎ রায় এবং ‘সন্দেশ’-এর। প্রচুর পত্রপত্রিকায় লিখলেও ‘সন্দেশ’-এর সঙ্গে মঞ্জিল সেনের সম্পর্ক ছিল অন্যরকম। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার গ্রাহক, পাঠক, লেখক, শিল্পী, শুভানুধ্যায়ীরা নিজেদের এক পরিবারের সদস্য মনে করেন এবং তাঁদের বলা হয় সন্দেশী। মঞ্জিল সেনও ছিলেন একজন সন্দেশী। বিখ্যাত লেখক হওয়া সত্ত্বেও বইমেলায় ছোটো বড়ো সন্দেশীদের সঙ্গে হইহই করে বই বিক্রিতে মেতে উঠতেন। সন্দেশের সব অনুষ্ঠানে নিয়মিত হাজির হতেন। নিয়মিত আড্ডা দিতে যেতেন কলেজ স্ট্রিটে ‘সন্দেশ’-এর বিক্রয়কেন্দ্র নিউস্ক্রিপ্টের দোকানে।
২০১৬-র ডিসেম্বরে মঞ্জিল সেনের জীবনাবসান হয়। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন পাঠকদের হৃদয়ে।
দেবাশিস সেন
বাংলা সাহিত্যের ভয় ও ভূত
‘ভূত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়?’ বলেছিলেন স্বয়ং সুকুমার রায়। এর পরে আর কথা চলে না। সুতরাং ভূত আছেই। আর সেই ভূতের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি কেউই। রবি ঠাকুর অবধি হানাবাড়ি নিয়ে বাংলায় প্রথম গপ্পোটা লিখেছিলেন। নাম ‘ক্ষুধিত পাষাণ’। বঙ্কিমের পণ্ডিত অবশ্য অন্য ভূত মানতেন। তিনি ছাত্র ভোঁদার কান পাকড়ে বুঝিয়েছিলেন ‘ভূ’ ধাতুর সঙ্গে ‘ক্ত’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নাকি ভূত হয়। সে-ভূত আবার পাঁচরকম। শুনে ভোঁদার মা অবাক। কী বলে ছেলে? মাত্র পাঁচ? কিন্তু তাঁদের সব সম্পত্তি যে ভূতে খেল, তাঁদের সংখ্যা তো বারোর কম না!!
তবে ভূত নিয়ে একেবারে ঠিকঠাক গবেষণা করেছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ। তিনি নিজ চক্ষে দেখেছিলেন জল জমিয়ে যেমন বরফ হয়, তেমনি অন্ধকার জমিয়ে ভূত হয়। তাঁর মতে ভূত বায়বীয়। ঠিক যেমন ছিল শিবু। পরশুরামের ‘ভূশণ্ডীর মাঠ’-এর শিবু। তাঁর বায়ুভূত শরীরের মধ্যে দিয়ে একটা প্রজাপতি উড়ে গেছিল, মনে আছে? আর তাঁরই পরিচিত মহেশ মিত্তির ভূত না মানার কী কঠিন সাজাটাই-না পেয়েছিলেন। মরার পরে মানতে বাধ্য হয়েছিলেন— ‘ও হরিনাথ, আছে আছে, সব আছে, সব সত্যি!’ অবশ্য ভূত দেখতে অবশ্য মরতে হয়নি শরদিন্দুর ধীরেন ঘোষকে। পুরোনো এক গাড়ির কামরায় চড়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে যাবার সময় তিনি সজ্ঞানে তিরিশ বছর আগের টোপর পরা ধীরেন ঘোষকে দেখেছিলেন। তারাশঙ্কর অবশ্য বলেছিলেন ভূত নাকি দুইরকম। মৌলিক আর যৌগিক। মৌলিক মানে যাঁদের স্বয়ং ব্রহ্মা ভূত করেই তৈরি করেছিলেন। ভূত, ভূতের বেটা ভূত এইরকম আর কি! শিবের চ্যালা নন্দিভৃঙ্গিরা হলেন এই শ্রেণির ভূত। আর মানুষ মরে যে ভূত হয় তাঁরা যৌগিক ভূত। রামনামে ভয় খায়। ভূত নিয়ে যিনি পিএইচডি পেতে পারেন, তিনি অবশ্য প্রাবন্ধিক যতীন্দ্রমোহন দত্ত। যম দত্ত নামে ‘যষ্টিমধু’ পত্রিকায় তাঁর জ্ঞানগর্ভ লেখাগুলোতে ভূতের রাজ্যের হালহকিকত জানা যায়। যেমন জানা যায় ভূতের ওজন সাড়ে এগারো থেকে সাড়ে বারো গ্রেন, ৪১% ভূতের রং ঘোর কালো, তাদের নাক চাপা, দেহ লিকলিকে এবং তারা প্রস্রাব করে। লেখক নিজে সেই প্রস্রাবের দুর্গন্ধ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। চেনাজানা ব্রহ্মদত্যি, মামদো, শাঁকচুন্নি ইত্যাদিদের কথা বলে তিনি বলেছেন সবচেয়ে ভয়ানক নাকি ছাপাখানার ভূত। এমনকী, চাই বা না চাই এই বইতেও তাঁদের দুই একজন নাকি ভর করবেনই। তাঁদের বাঁচিয়ে বই প্রকাশ অসম্ভব।
প্রথমদিকে বাংলা সাহিত্যে কিছুদিন ফাজিল ভূতদের বেশ প্রতাপ ছিল। তাদের দেখলে ভয় তো দূরের কথা, হাসিই পায়। জোলা যে বোকা, সেও ‘ভূতকে একটা খাব দুটো খাব, সাত বেটাকে চিবিয়ে খাব’ বলে ভয় দেখিয়ে দিয়েছিল। ভূতেরা কুঁজোর কুঁজ দূর করেছিল। কুঁজোকে শুধু তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘চ্যাং ব্যাং শুঁটকি হ্যায়’ গাইতে হয়েছিল। উপেন্দ্রকিশোর এই ধরনের ভূতের জনক বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। তাঁর পরিবারে একমাত্র লীলা মজুমদারই সেইসব ভূতের দেখা পেয়েছেন। পেনেটিতে থাকতে শিবু, সিজি আর গুজির কথা মনে আছে তো? যারা চোখের সামনে কর্পূরের মতো ঝুরঝুর করে উবে গেছিল। কিংবা আহিরিটোলার বাড়িতে দেখা ঠাকুরদার ঠাকুরদা আর তাঁর খাস খানসামা পরদেশির কথা… অন্যরাও অবশ্য এইসব মজার ভূতদের কথা লিখেছেন। একদিকে লুল্লু বলে সেই ছোকরা ভূত দিল্লির আমিরের বউ নিয়ে পালাচ্ছে, অন্যদিকে মাথা ভাঙার মাঠে মোটা ভূত গান গাইছে,
শোন তবে কান পেতে ওরে দুরাচার
তোকে মোরা খাব করে চাটনি আচার
অবন ঠাকুর নিজের ভূত পরীর দেশে ঘোড়া ভূত, লন্ঠন ভূত, ঘণ্টা ভূত দেখেছিলেন। এর পরেও যাঁরা ভূত বিশ্বাস করবেন না, শরদিন্দু তাঁদের বলেছেন ‘হর্দম’ মানে ‘হাঁদা’। শীর্ষেন্দুর সঙ্গে অবশ্য এদের বেশ ভাব। তিনি আগেই বুঝেছিলেন, ‘গন্ধটা খুব সন্দেহজনক’। তাঁর লেখায় সমগোত্রীয় না হলেও ভূত আর মানুষ বড়ো বেশি কাছাকাছি, পাশাপাশি। তাই যেমন ‘গয়নার বাক্স’ আসলে এক ভূতের উপন্যাস হলেও আমরা ঠিক ঠাহর পাই না। ঠিক যেমন শিবরামের লেখা গুটিকয় ভূতের গল্প। শিবরামের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আউটরামের ভূতের। সেই জাঁদরেল জেনারেলের ভূত এসেছিল নিজের স্ট্যাচুর খোঁজে…
ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে পো আর ল্য ফ্যানু বিদেশে এক সিরিয়াস ভূতের গল্পের চল আনেন। ফলে সাহিত্যে ভূতের গল্পের কিছু ফৰ্মুলা আবিষ্কার হয়। আজ অবধি চেনা সেই ছকের বাইরে খুব বেশি বেরোনো যায়নি।
এক, গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের সঙ্গে একজনের দেখা, আলাপ হবে। শেষে জানা যাবে, আলাপী লোকটি আসলে মৃত। ‘মণিহারা’ অনেকটা এই ধরনের গল্প।
দুই, ফায়ারপ্লেসের ধারে, বা ক্লাবে, বৃষ্টির দিনে এক জমায়েতে একজন তাঁর নিজের শোনা বা দেখা ভৌতিক অভিজ্ঞতা শোনাবেন। শরদিন্দুর ‘বরদা’র গল্পগুলো এই শ্রেণির।
তিন, লেখক নিজেই কোনো ভৌতিক অভিজ্ঞতার শিকার হবেন। হেমেন রায়ের কুমুদিনী চৌধুরী বা মানুষ পিশাচ।
চার, সরাসরি কোনো ভূত নেই, কিন্তু পরিবেশ এক ভয়ের আবহাওয়া তৈরি করবে। সত্যজিতের ‘খগম’ এই ধরনের গল্পের সেরা উদাহরণ।
পাঁচ, মানুষ নয়, এক্ষেত্রে অশরীরী কোনো পশু বা পাখি। শরদিন্দুর ‘কালো মোরগ’, হেমেন রায়ের ‘শয়তান’ বা সত্যজিতের ‘ব্রাউন সাহেবের বাংলো’।
সেই ধারা মেনে একে একে ‘মণিহারা’, ‘নিশীথে’ বা ‘মাস্টারমশাই’ লেখেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলায় সিরিয়াস ভূতের গল্প। সেখান থেকেই হাতে ব্যাটন তুলে নেন হেমেন্দ্রকুমার রায়, দীনেন্দ্রকুমার রায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, নীহাররঞ্জন গুপ্তরা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভয়ের গল্প বেশি লেখেননি, কিন্তু একটা যা ‘হলুদ পোড়া’ লিখেছিলেন, তাতেই ছক্কা হাঁকিয়েছেন। কেন যে আর লিখলেন না!! হইহই করে চলতে থাকে বাংলা সিরিয়াস ভূতের কাহিনি। হেমেন রায় তো বিদেশি সাহিত্য থেকে ভ্যাম্পায়ার, জোম্বি, ওয়ার উলফ কিচ্ছুটি আনা বাকি রাখেননি। আর কী সুন্দর তাঁর ভাষা। পড়তে পড়তে শিউরে উঠতে হয়। তবে সাইকোলজিক্যাল ভূতের কথা যদি বলেন, তার রাজা ছিলেন বিভূতিবাবু। আনমনে গল্প করতে করতে কখন যে মেরুদণ্ডে শীতল হাওয়া বইয়ে দেবেন তার ঠিক নেই। অনেকটা সেই ধাঁচেরই লেখা লিখতেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর কম কিন্তু অসামান্য ভয়ের গল্পগুলো বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। এর পাশাপাশিই আসেন সুধীন রাহা, মনোজ আর মঞ্জিল সেন। গল্পের গড়নে তাঁরা সবাই হেমেনবাবুর উত্তরসূরি। শব্দ দিয়ে পরিবেশের ছবি আঁকতে তাঁদের জুড়ি নেই। ঠিক যেমন কয়েকটামাত্র বাক্যে এক একটা চরিত্রকে এঁকে দেন এক টানে। উপরের প্রতিটা ঘরানাতেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন তাঁরা সবাই। ‘শুকতারা’, ‘নবকল্লোল’-এ প্রকাশিত তাঁদের ভয়ের গল্পরা আমাদের চমকে দিয়েছে কতবার! কত রাত কেটেছে লেপের তলায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে। রাতে জমতে থাকা অন্ধকাররা কখন যেন রূপ নিয়েছে ছায়া কালো কালো-র। কিছু কিছু গল্প তো নামেই ভয় ধরিয়ে দিত। মনোজ সেনের ‘কালরাত্রি’, সুধীন রাহার ‘ফাঁসির পরে অট্টহাসি’, মঞ্জিল সেনের ‘কে হাসে?’… নাম শুনলেই শিরদাঁড়ায় হাই ভোল্টেজ স্পার্ক।
কেন জানি না, এক সময় হারিয়ে গেল সেইসব গল্প… অন্য সব বৌদ্ধিক গল্পের ভারে বাংলার আদি সরল ভূতের গল্পের ধারাটাই কেমন শুকিয়ে গেছিল। কিছুদিন আগে বিভূতিবাবুর লেখা গল্পগুলো নিয়ে ‘ভয় সমগ্র’ বেরোনোতে বেশ আশা জেগেছিল। এখন দেখছি এবার বইমেলায় বাকি তিনজনও হাজির! কমিসকে আবার ফিরিয়ে আনাতে ‘বুক ফার্ম’ যে যুগান্তকারী কাজ করেছে, বাংলা সাহিত্যের ‘ভয়’-কে ফেরাতে যদি একইভাবে সচেষ্ট হয় তবে বাঙালি পাঠক তাঁদের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে।
অলমিতি বিস্তরেণ…
কৌশিক মজুমদার
Leave a Reply