০৭. মুশকিল আসানের আগমন
এতবড় একটা ঘটনা জানার পর ইতুরা যে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকবে এ-কথা বলাই বাহুল্য। বড়দির বিয়েতে ওরা কত রকমের মজা করবে ভেবে-ভেবে হদ্দ হয়ে গেছে, সেই বিয়ে পিছিয়ে যাওয়ার দুঃখে মিতু আর রন্টু, ঝন্টুর মন খুবই খারাপ। ইতু আর ছোটন চেয়েছিলো সাইফ ভাইর সঙ্গে বড়দির বিয়ে হোক। সেজন্য বিয়ে পিছিয়ে যেতে পারে শুনে মনে-মনে খুশি হলেও দিদা যে বললেন হীরের নেকলেস না পাওয়া গেলে বংশের অমঙ্গল হবে, শুনে ওদের মনেও ভয় ধরে গেছে।
রন্টু কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, কতদিন এ-বাড়িতে কোনো উৎসব হয় না। অন্যদের বাড়িতে বিয়ে হতে দেখে কতদিন মনে হয়েছে কবে আমাদের বাড়িতে বিয়ে হবে। শেষপর্যন্ত যা-ও হতে যাচ্ছিল–সবকিছু গুবলেট হয়ে গেলো।
মিতু বললো, কী শয়তান চোর! অন্য কিছু নিলেই তো পারতো!
ছোটন শুকনো গলায় বললো, নেকলেসটা যদি সত্যিসত্যি না পাওয়া যায়–কোত্থেকে কোন্ বিপদ আসে কে জানে!
ঝন্টু বললো, এহতেশাম ভাইয়া শুনলে ভারি কষ্ট পাবে।
মিতু বললো, এত বড়লোক যখন ওরকম একটা নেকলেস বড়দিকে কিনে দিলেই তো পারে!
ছোটন বিরক্ত হয়ে বললো, বোকার মতো কথা বলিস না। শুনিস নি দিদা কী বলেছেন? বড়দির বিয়েতে ওই নেকলেসটাই লাগবে, নইলে বংশের অমঙ্গল হবে।
ইতু বললো, বড়রা বড়দের মতো খুঁজুক। কাল থেকে চল আমরাও নেকলেসটার খোঁজে নেমে পড়ি।
কীভাবে? বলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো ইতুর ওপর।
গলাটা এক ধাপ নামিয়ে ইতু ওর পরিকল্পনার কথা সবাইকে বললো। শুনে সবার চোখগুলো চকচক করে উঠলো-। সারাক্ষণ ইতুর বই নিয়ে পড়ে থাকা ছিলো ঝন্টুর দুচোখের বিষ। সবার আগে ও-ই বললো, ডিটেকটিভ বই পড়ে তোর তো দারুণ বুদ্ধি হয়েছে রে ইতু।
ইতু গম্ভীর হয়ে বললো, বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়। কাল ভোরে উঠতে হবে।
দিদা ভেবেছিলেন বাড়ির বাইরে চলে যাচ্ছে বলে কেউ হয়তো নেকলেসটা লুকিয়ে রেখেছে, বিয়ের পর বের করে দেবে। রাতে সবাইকে ডেকে ওভাবে বলার উদ্দেশ্য ছিলো যেই নিয়ে থাকুক যেন ওটা ফেরত দিয়ে দেয়। সেজন্য তিনি ভূপালী জেঠিমাকে নেকলেস হারানোর কথাটা জানাতে চান নি। বিয়ে পিছিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা নিশ্চয় তাঁর পছন্দ হবে না। ভোর না-হতেই ভূপালী জেঠিমা কথাটা জেনে ফেললেন। মোটা-সোটা বেতো শরীর নিয়ে ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে দিদাকে বললেন, হ চাচিজান এসব কী শুনছি?
দিদা ফজরের নামাজ সেরে জায়নামাজে বসে তসবি গুনছিলেন। শুকনো গলায় বললেন, ঠিকই শুনেছো।
ওটা তো বহুত কিমতি জেভর ছিলো চাচিজান। দিল্লির বাদশাহ শাহজাহান না দিয়েছিলেন?
কোনো কথা না বলে দিদা মাথা নেড়ে সায় জানালেন।
কঈ লাখ দুলাখ থেকে কম না হবে!
দিদা আগের মতো মাথা নেড়ে সায় জানালেন।
আপনি কি বলেছেন চাচিজান, ওটা না পেলে জাহানারা বিটিয়ার শাদির তারিখ পিছিয়ে দিবেন?
দিদা আবারও আগের মতো মাথা নাড়লেন।
শাদির তারিখ পাক্কা হয়ে গেছে। এখন পিছানো কি ঠিক হবে চাচিজান? দিদা কোনো কথা না বলে তসবি গুনতে লাগলেন।
আমি বলি কি চাচিজান–ইতস্তত করে ভূপালী জেঠিমা বললেন, আমার নওরতনের জাড়োয়াসেট জো আছে, ওটাও বহুৎ কিমতি আছে। জাহানারা বিটিয়ার শাদীতে আমি ওটা ওকে তোহফা দিব। আপনি শাদির তারিখ পিছাবেন না।
দরুদ পড়া শেষ করে দিদা তসবির ছড়ায় চুমু দিয়ে কপালে চুঁইয়ে জায়নামাজের একপাশে রাখলেন। তারপর শান্ত গলায় বললেন, তোমার নওরতনের সেট তুমি জাহানারাকে দেবে কিনা সেটা তোমার ব্যাপার ভূপালী বউ। আমি চাই আমাদের হীরের নেকলেসটা বিয়ের রাতে জাহানারার গলায় থাকবে।
দিদার কথা বলার ধরন দেখে ভূপালী জেঠিমা মুখ কালো করে চলে গেলেন বড় ফুপির কাছে। দিদার সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে শুনে বড় ফুপি চাপা গলায় বললেন, মার সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি। কাল ভাইজান বললো, আরেকটা হীরের নেকলেস কিনে দেবে, আজ তুমি বলছো নওরতনের সেট দেবে। এরপর কেন বিয়ের তারিখ পেছাতে হবে, আমি কিছুতে বুঝতে পারছি না রাঙাবউ। এহতেশাম কী বলেছে বিয়েতে হীরের ওই নেকলেসটাই দিতে হবে?
ছি ছি, আপনি এসব কী বলছেন! বড় ফুপির কথায় দুঃখ পেলেন ভূপালী জেঠিমা এহতেশাম ওরকম খানদানে পয়দা হয় নি যে জেভরের লালচে শাদি করবে! আপনারা একখানা জেভরও যদি না দেন তবু এহতেশাম শাদি করবে। জেভরাত তো ওই দিবে। ওর কি রুপিয়া দৌলতের কমি আছে?
নিচে রান্নাঘরে যাওয়ার সময় দিদার চোখ পড়লো বড় ফুপির ওপর। ভূপালী জেঠিমার সঙ্গে ওঁর গুজগুজ করাটা মোটেই পছন্দ হলো না। বড় ফুপি সেটা টের পেয়ে উঠে পড়ে শুকনো মুখে সকালের নাশতার ব্যবস্থা করতে গেলেন।
দুপুর নাগাদ মীর্জা এহতেশামও জেনে গেলো নেকলেস চুরির কথা। প্রথমে পুলিসে খবর দেয়ার কথা বললেও দিদার যুক্তি ওর পছন্দ হলো। বললো, দাদিজান সহি বাত বলেছেন। পুলিসে খবর দিলে চোররা ভয় পেয়ে ওটাকে ভেঙে ফেলতে পারে। একটু থেমে এহতেশাম কী যেন ভাবলো। তারপর বললো, পুলিস ছাড়াও দুসরা এক তরিকা আমার জানা আছে।
সেটা আবার কী? জানতে চাইলো বড়দা।
মিরপুর মাজার শরিফে এক মুশকিল আসান ফকির বাবা এসেছেন। বহুত কামেল ফকির। উনাকে খবর দিয়ে আনতে পারলে উনি জরুর বলতে পারবেন নেকলেস কোথায় আছে।
দিদা বললেন, মুশকিল আসান যদি নেকলেস বের করে দিতে পারে আমি হাজার টাকা দেবো।
না দাদিজান, তিনি কোনো রুপিয়া নিবেন না। উনার সামনে রুপিয়ার কথা কভি বলবেন না। রুপিয়ার কথা শুনলে উনি বহুত গুস্সা হন।
তাহলে তো ভালোই মনে হচ্ছে। তুমি ওকে আজই নিয়ে এসো।
দিদার কথা শুনে সবাই আশ্বস্ত হলো। বড় ফুপি তো ভয়ে ভয়ে ছিলেন–মুশকিল আসানের কথা শুনে দিদা না আবার রেগে যান।
বিকেলে মীর্জা এহতেশামের বিশাল ফোর্ড গাড়িতে চেপে লম্বা সাদা চুলদাড়িওলা মুশকিল আসান এলেন। গলায় সাত-আটখানা আকিক পাথরের মালা। দুহাতের বুড়ো আঙুল ছাড়া বাকি সব আঙুলে নানারকমের পাথরের আঙটি। খয়েরি রঙের আলখাল্লা গায়ে, হাতে সাত বাঁকা একখানা শক্ত লাঠি।
গাড়ি থেকে নেমে বারান্দায় উঠতেই মুশকিল আসানের কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়লো। দোতালার টানা-বারান্দার এক মাথায় জাজিম পেতে তাকিয়া বালিশ দিয়ে তার বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাইরের বারান্দায় বড় বালতিতে তাঁর ওজু করার জন্য গোলাপের পাপড়ি ছিটানো পানি রাখা হয়েছে। আগরবাতির সুগন্ধি ধোয়ার বারান্দার বাতাস ভারি হয়ে আছে। এতসব আয়োজন দেখেও মুশকিল আসান প্রসন্ন হলেন না। বেশকিছু সময় নিয়ে ওজু করে তিনি জাজিমে বসে দুরাকাত নফল নামাজ পড়লেন। তারপর চোখ বন্ধ করে অনেকক্ষণ কী যেন ধ্যান করলেন। দিদা, জেঠি, ফুপি আর কাকিরা সব তাঁকে ঘিরে বসেছিলেন। তাঁর ভাবভঙ্গি দেখে সবাই এরই ভেতর ভক্তিতে রীতিমতো গদগদ হয়ে পড়েছে।
মুশকিল আসান চোখ মেলে তাকালেন। সবার মুখের ওপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে ভূপালী জেঠিমার ওপর এসে থামলেন। ঠাণ্ডা মোলায়েম গলায় পরিষ্কার বাংলায় বললেন, তুমি তো মা ভূপালের নবন্দি পীর ঘরানার মেয়ে।
ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে ভূপালী জেঠিমা বললেন, হুজুর সহি বাত বলেছেন। আল্লাপাকের এই গুনাহগার বান্দিকে আপনি হুকুম করুন।
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুশকিল আসান বললেন, আমিও কম গুনাহগার বান্দা নই মা। আমি অবাক হচ্ছি–এ-বাড়ির ওপর এতবড় এক খাবিস জিনের নজর পড়েছে, অথচ তুমি কিছু টের পেলে না! আর কেউ না জানুক তোমার তো জানা উচিত ছিল মা!
আমি পহেলা দিনই বুঝছিলাম হুজুর। ভেবেছিলাম আমি এ-বাড়িতে যতদিন থাকব ততদিন ওরা কেউ ঝুটঝামেলা করবে না। এখন মালুম হচ্ছে বহু নালায়েক আছে জিনটা। ভূপালে গিয়েই দরবারের পাক জনাবকে কথাটা জরুর বলব।
মৃদু হেসে মুশকিল আসান দিদার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমাকে যে আজকের রাতটা সময় দিতে হবে মা সকল। আপনাদের জিনিস ঠিকই পাবেন, তবে এই কমিনা জিনটাকে শায়েস্তা করতে কিছু সময় লাগবে।
বড় ফুপি বললেন, হীরের নেকলেস কি খবিস জিনটা চুরি করেছে?
মেজো ফুপি বললেন, জিনরা কি নেকলেস পরে?
ফুপিদের অর্বাচীন কথায় মুশকিল আসান অমায়িক হাসলেন–না মা, জিনরা নেকলেস কেন, কোনো গয়নাই পরে না। নিজের হাতে চুরিও করে না। তবে কারো ওপর যখন ভর করে তখন সে চুরিও করতে পারে, মানুষও খুন করতে পারে।
মেজো জেঠিমা বললেন, এ-বাড়ির কারো ওপর ভর করলে তো আমরা টের পেতাম। নিশ্চয় বাইরের কেউ হবে।
না মা। হাসিমুখে মাথা নাড়লেন মুশকিল আসান–জিন কারো ওপর ভর করলেই যে টের পাবে এমন কোনো কথা নেই। ওরা যদি জানাতে না চায় তোমরাও বুঝবে না ঠিক কার ওপর ভর করেছে।
সে কী! বলে আঁতকে উঠলেন বড় ফুপি। সন্দেহ-ভরা চোখে ঘাড় ফিরিয়ে সবাইকে দেখলেন। তারপর হতাশ হয়ে বললেন, বোঝার কি কোনোই উপায় নেই হুজুর?
না মা, তোমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এই বলে মুশকিল আসান ভূপালী জেঠিমার দিকে তাকালেন–সবাই না বুঝলেও আশা করি তোমার বুঝতে অসুবিধে হবে না।
ভূপালী জেঠিমা লাজুক হেসে বললেন, এই গুনাহগার বান্দিকে শরমিন্দা করবেন না হুজুর। এখানে কারো ওপর খাবিসটার নজর লাগে নি।
কথাটা শোনার পর ফুপি-জেঠি-কাকিরা সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। মুশকিল আসান কথা না-বাড়িয়ে আবার ধ্যানে বসলেন।
বড়রা যখন মুশকিল আসানকে নিয়ে ব্যস্ত পঞ্চপাণ্ডব তখন ওদের তদন্তের কাজে বিভোর। রিমকি-সিমকিকেও সঙ্গে জুটিয়েছে। বেশ কয়েকবার বাড়ির বাইরে গেছে ওরা। দুখির মা, বনমালী, গিরিবালা আর সব কাজের লোকদের সঙ্গেও কী সব কথা বলেছে। কাউকে কাউকে রীতিমতো জেরাও করেছে। বাড়িতে মুশকিল আসানের আগমন, খবিস জিনের নজর আর সেইসঙ্গে ছোটদের পুলিসি জেরায় কাজের লোকরা সবাই ভয় পেয়ে গেছে। জিনের ভয় সবচেয়ে বেশি দুখির মা আর গিরিবালার। একফাঁকে ওরা ভূপালী জেঠিমার কাছ থেকে পানিপড়া নিয়ে গেছে।
ইতু আবার কোন্ রহস্যের গন্ধ খুঁজে পেয়েছে গলির মোড়ের ওষুধের দোকানে সে-ই জানে। সন্ধের পর ওদিকটায় আমি নজর রাখবো, তোমরা সবাই কাজের লোকদের ওপর নজর রাখবে। –বলে একা বেরিয়ে গেলো। রিমকি-সিমকির কাজ হচ্ছে বনমালী আর তোরাবালীর ওপর নজর রাখা। ওরা কখন বাইরে যায়, কোনদিকে যায়, কখন ফেরে, ওদের কাছে বাইরের কেউ আসে কি না, এ-বাড়ির কেউ ওদের সঙ্গে কথা বলে কি না–সব খাতায় লিখে রাখতে হবে। এমন এক রোমাঞ্চকর কাজ পেয়ে রিমকি-সিমকি দারুণ উত্তেজিত। খুশি চেপে রাখতে না-পেরে রিমকি একবার বলেই ফেললো, ইতুটা একটা জিন্ হয়েছে। ভাগ্যিস কথাটা ইতু শোনে নি।
ইতুদের বাড়িতে মুশকিল আসান এসেছেন শুনে সন্ধ্যের পর রিমকিদের নানি এলেন দেখতে। বড় ফুপি খরখরে চোখে ওঁকে ভালো করে দেখলেন। তারপর তাকালেন ভূপালী জেঠিমার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে। ভূপালী জেঠিমা মাথা নেড়ে ইশারায় না বললেন। আশ্বস্ত হয়ে বড় ফুপি বসতে বললেন রিমকির নানিকে।
মুশকিল আসান ধ্যানের মাঝখানে যেই না একবার চোখ মেলে তাকালেন, রিমকির নানি ব্যস্ত গলায় জানতে চাইলেন, হুজুর বাবা, খাবিস জিনের নজর কি আমাদের বাড়ির ওপরও পড়েছে? এটার একেবারে লাগোয়া বাড়ি যে ওটা!
কয়েক মুহূর্ত রিমকির নানির চোখের দিকে তাকিয়ে মুশকিল আসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, এখনো পড়ে নি, তবে পড়তে বেশি বাকিও নেই। এশার নামাজের পর কেউ যেন বাড়ি থেকে না বেরোয়।
কথাটা শুনে রিমকির নানি আর বসলেন না। মুশকিল আসান একই কথা দিদাকেও বললেন। দিদার অবশ্য ব্যস্ত হওয়ার কিছু ছিলো না। খুব জরুরি কাজ না হলে এ বাড়ির বড়রাও এশার পর কেউ বাড়ির বাইরে থাকে না।
ছোটন আর মিতু বাইরের রোয়াকের এককোণে বসে নজর রাখছিলো কাজের লোকদের ওপর। জায়গাটা অন্ধকার বলে কারো পক্ষে বোঝার উপায় নেই ওরা যে ওখানে বসে আছে। রিমকির নানি ব্যস্ত হয়ে চলে যাওয়ার একটু পরে ঝন্টু এসে বললো, দিদা বলে দিয়েছেন এশার নামাজের পর কেউ বাড়ির বাইরে যেতে পারবে না, মুশকিল আসানের হুকুম।
মিতু বললো, ভালোই হল। এশার আজান পর্যন্ত পাহারা দিলেই চলবে। ইতুটা এর আগে ফিরলে হয়।
মিতুর কথা শুনে ছোটন বিরক্ত হলো–তোর ভালো না লাগলেও ওপরে গিয়ে নাক ডেকে ঘুমোগে। ইতু বলেছে রাত বারোটা পর্যন্ত পাহারা দিতে। আমি তার আগে নড়ছি না।
তোর সবটাতেই বাড়াবাড়ি। বলে হাঁড়িমুখ করে বসে রইলো মিতু। ঝন্টু কাঁধ নাচিয়ে চলে গেলো নিজেদের জায়গায় ।
এশার আজান দিয়েছে সাড়ে সাতটা নাগাদ। চোর-ডাকাত ছাড়া মিতুর অন্য ভয়ও ছিলো। এশার নামাজের পর যদি জিনরা সত্যিসত্যি বেরোয়, ওদের দুজনকে হজমি গুলির মতো গিলে খেতে এক সেকেণ্ডও লাগবে না। ভাবতে গিয়ে আবার খটকাও লাগলো–জিনরা কি মানুষ খায়? কথাটা ছোটনকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না। নির্ঘাত ও কাল সকালে রিমকিদের বলে হাসাহাসি করবে। মিতু যখন একা-একা জিনের কথা ভেবে ভয় পেয়ে ডিসেম্বরের রাতে কুলকুল করে ঘামছিলো, তখনই নজরে পড়লো ছোটকা চোরের মতো পা টিপে টিপে বাইরের বৈঠকখানা থেকে বেরোলেন। মিতু বলতে যাচ্ছিলো–আজান হয়ে গেছে, এখন কারো বেরোনো চলবে না–ছোটন ইশারায় ওকে চুপ থাকতে বললো।
ছোটকা এদিক-ওদিক চেয়ে দেখলেন কেউ তাঁকে দেখতে পেলো কি না। হাতে ধরা ছোট পুঁটলিটা নিয়েই তার ভয়। একবার ভাবলেন আলোয়ানটা গায়ে জড়িয়ে বেরোলেই ভালো হতো। বেরিয়ে যখন পড়েছেনই, আর কেউ যখন দেখে নি, ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। টুক করে সিং দরজার ফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
ছোটকার বাঁ-হাতে ধরা কাপড়ের পুঁটলিটা ছোটনরা পরিষ্কার দেখতে পেয়েছে। মিতু ফিসফিস করে বললো, ছোটকা ওভাবে কোথায় যাচ্ছে?
ছোটন মুহূর্তের ভেতর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। মিতুকে বললো, আমি ছোটকাকে ফলো করতে যাচ্ছি। তুই ওপরে গিয়ে এদিকটায় নজর রাখবি।
মিতু হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো–ফিরতে দেরি করিস না। বলে ও ছাদে গেলো।
এক দৌড়ে সিং দরজা পেরিয়ে রাস্তায় এসে ছোটন দেখলো, ছোটকা অল্প দূরে দাঁড়িয়ে রিকশা ডাকছে।
বুড়ো রিকশাওয়ালা কাছে আসতেই ছোটকা দরদাম না করে উঠে বসলো। ছোটন হালকা পায়ে একরকম দৌড়ে চললো রিকশার পেছন পেছন।
রাত তখন আটটা বাজতে চলেছে। হেমেন্দ্র দাস রোডের সরু রাস্তায় রিকশা আর মানুষের আনাগোনা এতটুকু কমে নি। লোকজনের ভেতর দিয়ে দৌড়াতে সুবিধেই হল ছোটনের। রিকশার গতি বেশি ছিলো না। ছোটকাও দেখতে পেলো না।
বাংলাবাজার পেরিয়ে রিকশা পটুয়াটুলির রাস্তা ধরে এগিয়ে চললো। বুড়ো রিকশাওয়ালা ছোটকার তাড়া খেয়েও জোরে টানতে পারছিলো না। পটুয়াটুলির রাস্তা পেরিয়ে রিকশা ইসলামপুরে ঢুকতেই ছোটনের বুকের ভেতর ঢিবঢিব করতে লাগলো। ইসলামপুরের রাস্তার দুপাশে সব আলো ঝলমলে স্বর্ণকারের দোকান। ও যা সন্দেহ করছিলো তাই হলো। ছোটকা রিকশা থামালেন রাধাচরণ জুয়েলার্স-এর সামনে। রিকশাওয়ালাকে দাঁড়াতে বলে তিনি ভেতরে ঢুকলেন।
ছোটন রাস্তার ওপার থেকে রুদ্ধশ্বাসে দেখতে লাগলো ছোটকার কীর্তিখানা। তিন বছর ধরে চাকরি নেই, ঘরে বেকার বসে আছেন–তাই বলে বাড়ির গয়না চুরি করে এনে বিক্রি করতে হবে– ভাবতে গিয়ে ছোটনের দুঃখের আর সীমা থাকলো না। ছি ছি ছি! কাল রিমকি-সিমকিরা শুনলে কী ভাববে? রাগে অপমানে ছোটনের রীতিমতো কান্না পেলো। দোকানের একেবারে ভেতরে গিয়ে ছোটকা। পুঁটলিটা এগিয়ে দিলেন ম্যানেজার গোছের এক লোককে। সে ওটা নিয়ে ভেতরের এক ঘরে গিয়ে মিনিট তিনেক পরে বেরিয়ে এলো। ছোটকাকে কী যেন বললো, বোঝা গেলো তার পছন্দ হয় নি। পুঁটলিটা গিট বেঁধে ছোটকা দোকান থেকে বেরিয়ে আবার রিকশায় উঠলেন। ছোটন কিছুটা আশ্বস্ত হলো। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে ছোটকার সঙ্গে ওদের দরে বনে নি। রিকশা আবার উল্টোদিকে ঘুরতে ছোটন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। ছোটকা তাহলে অন্য কোনো জুয়েলার্সে যাচ্ছে না। তার মানে গয়নাটা রাতের মতো বাড়িতে থাকছে। ছোটন ঠিক করলো বাড়ি গিয়ে সবার আগে কথাটা দিদাকে বলবে।
এশার নামাজ শেষ হয়ে গেছে, শিংটোলা মসজিদের মুসল্লিরা ঘরে ফিরছে, অথচ ইতু-ছোটন কারো পাত্তা নেই দেখে মিতু-ঝন্টু-রন্টুর মুখ শুকিয়ে গেলো। একটু পরে ওরা ছাদের ওপর থেকে ছোটকাকে দেখলো সিং দরজা দিয়ে চুপিচুপি বাড়িতে এসে ঢুকতে। মিতু বললো, ছোটকা বোধহয় ভেবেছে খাবিস জিন ওকে ধরার জন্য ওঁৎ পেতে বসে আছে। পরে ছোটনকে ঢুকতে দেখে ওরা আশ্বস্ত হলো। সবাই অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ও ওপরে আসে। ছোটকাকে ফলো করার মতো কী হয়েছে–মিতু, রন্টু, ঝন্টু, কেউ কিছু বুঝতে পারছিলো না। ইতু বলেছে কাজের লোকদের ওপর নজর রাখতে। ছোটনের নির্ঘাত মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নইলে কি আর ছোটকাকে কাজের লোক মনে করে!
দিদাকে ওঁর ঘরে একা ডেকে নিয়ে ছোটকার কীর্তির কথা ছোটন খুলে বললো। সব শুনে দিদা চাপা গলায় বললেন, চুপ চুপ, এ-কথা ঘুণাক্ষরেও কাউকে বলিস না। যা করার সব আমি করব। তুই মুখে কুলুপ এটে থাকবি।
ছোটন মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে গুটি গুটি পায়ে ছাদের দিকে গেলো । ভাবলো মুশকিল আসানের ভয়ে বেচারা ছোটকা রাতের বেলা এত দামি জিনিসটা বিক্রি করতে গিয়েছিলো। মুশকিল আসান যদি টের পেয়ে যান নেকলেসটা ছোটকার কাছে আছে–দিদা কীভাবে সামলাবেন ভাবতে গিয়ে। ছোটন কোনো পথই খুঁজে পেলো না। দিদা যেভাবে মানা করেছেন, ইতুকেও কথাটা বলা যাবে না। তবে নেকলেসের সন্ধান যখন পাওয়া গেছে তখন রাত না জেগে আরামে ঘুমোনো যেতে পারে। এই ভেবে ছাদে এসে ছোটন দেখলো ইতু তখনো ফেরে নি। সবাই ওকে দেখে একসঙ্গে বললো, ছোটকাকে ফলো করতে গেলি কেন? ছোটকা কি চাকর?
ছোটন কাষ্ঠ হেসে বললো, মস্ত এক বোকামি করে ফেলেছি। ছোটকা গেছে ওর বন্ধুর বাড়িতে। আমি ভেবেছিলাম অন্য কিছু–
ঘড়িতে তখন রাত নটা। এশার নামাজের সময় মেজো জেঠিমা ছোটদের ডেকে খাইয়ে দিয়েছেন। ছোটনও এসে খেয়ে নিয়েছে। বাড়িতে মুশকিল আসানের উপস্থিতি আর রাতে খাবিস জিনের আগমনের সম্ভাবনায় বড়রা সবাই এত ব্যস্ত আর চিন্তিত ছিলো–ইতু যে খেতে আসে নি এ-কথা কারো মনেই হয় নি।
দূরে দমকল অফিসের পেটা ঘড়িতে যখন ঢং ঢং করে রাত নটার ঘণ্টা বাজলো তখন ছোটন বললো, তোরা শুয়ে পড়। আমি গলির মোড়ে গিয়ে দেখে আসি ইতু এতক্ষণ কী করছে। অন্যদের চেয়ে ইতু আর ছোটনের সাহস বেশি। মিতু মনে মনে খুশি হলো ছোটন ওকে সঙ্গে যেতে বলে নি। বললো, রাত তো মোটে নটা বাজে। এখনই শোয়ার কী আছে! তুই ইতুকে নিয়ে আয়। ওর মাথায় নতুন কোনো প্ল্যান এসেছে কি না কে জানে।
ছোটন পা টিপে নিচে নামলো। মুশকিল আসান বারান্দার আলো নিভিয়ে দিয়েছেন। ওঁর ডানপাশে ঝুলবারান্দায় শুধু একটা হারিকেন জ্বলছে। মুশকিল আসান তখনো ধ্যানে বসে আছেন। পাশে আরো কয়েকজন ছিলেন। লোবানের ধোঁয়ায় ঢাকা হারিকেনের আবছা আলোয় তাদের চেনা গেলো না। ছোটন যে কোন্ ফাঁকে বেরিয়ে গেলো ওরা কেউ টেরও পেলো না।
রাস্তায় নেমে ছোটনের মনে হলো দিদাকে দেয়া কথাটা অন্তত ইতুর কাছে ভাঙতে হবে। নেকলেস চোরকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিয়েছে ইতু। চোর যখন পাওয়া গেছে তখন ওদের দায়িত্ব শেষ। নজর রাখার বুদ্ধিটা ইতুর হলেও চোরের সন্ধান পাওয়ার কৃতিত্বটা ষোলআনাই ওর। নিজের সাফল্যে ছোটন উৎফুল্ল হলেও চোর যে আর কেউ নয়, ওদের ছোটকা–কথাটা ভাবতেই পৃথিবীটা ওর কাছে অসার মনে হলো।
ডিসেম্বর মাসের রাত নটা মানে অনেক রাত। ছোটন গলির মাথায় এসে দেখলো বুড়ো বাকের মিঞার পান-দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বাকের মিঞা ওদের সবাইকে চেনে। ইতুরা ওকে চাচা ডাকে। কাছে গিয়ে। ছোটন জিজ্ঞেস করলো, বাকের চাচা, আমাদের ইতুকে দেখেছো আজ সন্ধ্যার পর?
বাকের মিঞা ভুরু কুঁচকে বলল, হ, দেখছিলাম তো মাগরেবের বাদে। বর্মণ বাবুর লোহার দোকানের ভিতরে বইয়া আছিলো। ক্যা, বাড়িত যায় নাই?
না বাকের চাচা। শুকনো গলায় জবাব দিলো ছোটন।
দোস্ত-উস্তের বাড়িত যাইবার পারে। ছোটনের উদ্বেগকে পাত্তা না দিয়ে বাকের মিঞা বললো, তোমাগো বাড়িত বলে এক মুসকিল আসান হুজুর আইছে? চাচিজানরে কইও কাইল সেলাম করতে যামু।
মাথা নেড়ে সায় জানালো ছোটন। বাড়িতে ফিরলো বিষণ্ণ আর উদ্বিগ্ন এক চেহারা নিয়ে। চিলেকোঠায় এসে ঝন্টুদের বললো, ইতু হারিয়ে গেছে।
.
০৮. দুখির মার রহস্যজনক আচরণ
ছোটনের কথায় যেন ওদের চিলেকোঠার ঘরে পাঁচশ পাউন্ডে বোমা ফাটলো। কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারলো না রন্টু, ঝন্টু আর মিতু। বসে রইলো পাথরের মূর্তির মতো। ইতুকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে ছোটন। ইতুর মতো বুদ্ধিমান আর সাহসী ছেলে ও দ্বিতীয়টি দেখে নি। বাকের চাচার সঙ্গে কথা বলার পর থেকে ওর বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো। ইতু কীভাবে হারিয়েছে? ফিসফিস করে প্রথমে জানতে চাইলো ঝন্টু।
মিতু চাপা গলায় বললো, ও কোথাও যেতেও তো পারে।
রন্টু বললো, কে জানে জাফরদের বাড়িতে গেছে হয়তো বই-টই আনতে।
ছোটন আস্তে আস্তে বললো, ইতু যদি নিজের ইচ্ছায় কোথাও যায়, সবচেয়ে খুশি হবো আমি। বাড়িতে এতবড় একটা বিপদ, আমরা সবাই চোর ধরার জন্য রাত জেগে পাহারা দেবো, আর ও কারো বাড়িতে বসে এতক্ষণ ধরে আড্ডা মারবে–ইতু এরকম ছেলে নয়।
মাথা নেড়ে সায় জানালো ঝন্টু–কিন্তু হারাবে কী করে?
আমার মনে হচ্ছে–চিন্তিত গলায় ছোটন বললো, সন্দেহজনক কাউকে ফলো করতে গিয়ে ও কোথাও আটকে গেছে।
হতে পারে কেউ ওকে আটকে রেখেছে। ভয় পাওয়া গলায় বললো মিতু।
তাও হতে পারে। সায় জানালো ছোটন।
অনেক রাত পর্যন্ত ওরা কেউ ঘুমোতে পারলো না। বারবার ওদের মাথায় ঘুরতে লাগলো–ইতু কি নিজের ইচ্ছায় কোথায় গেছে, নাকি গুণ্ডাদের খপ্পরে পড়েছে!
দমকল অফিসের পেটা ঘড়িতে রাত তিনটার ঘণ্টা বাজলো। মিতু, রন্টু, ঝন্টু একটু আগে ঘুমিয়ে পড়েছে। বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছিলো ছোটন। হঠাৎ ওর মনে হলো, গুণ্ডারা ইতুকে নিশ্চয় আদর করে শোয়ার জন্য বিছানা পেতে দেয় নি। নিশ্চয় ওকে ওদের ফলো করার জন্য খুব মেরেছে। ছেড়ে দিলে যদি বিপদ হয় সেজন্যে ইতুকে ওরা মেরেও ফেলতে পারে। এসব কথা মনে হতেই বালিশে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো ছোটন।
ভোরে দুখির মার ডাকে ওদের ঘুম ভাঙলো। ছোটন দেয়ালঘড়িতে দেখলো আটটা বাজে। দুখির মা বললো, ছোড মায় কইছে তুমাগো জলদি কইরা নাশতা কইরা লইতে। ঘরভর্তি ম্যামান আইছে মুশকিল আসান ফকিরের দোয়া লওনের লাইগা। কেতলিতে কুলান যায় না, ডেকচিতে চা বহাইছি।
ইতুর নিখোঁজ হওয়ার সংবাদটা বাড়িতে কীভাবে জানাবে এ নিয়ে চিন্তিত ছিলো ছোটনরা। দুখির মার কথা শুনে মনে হলো ওরা কে কোথায় আছে এদিকে নজর দেয়ার কেউ নেই। ছোটন ভাবলো সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে বলা যাবেখন।
নাশতা খেতে নিচে নেমে ছোটরা দেখলো দুখির মা মিথ্যে বলে নি। বারান্দায় পাড়ার বয়স্ক মহিলারা মুশকিল আসানকে ঘিরে গোল হয়ে বসেছেন। নিচের ঘরে বড় জেঠু পাড়ার বুড়োদের সঙ্গে গল্প করছেন। মুশকিল আসান অতীতের অনেক কথা বলে আর সেই সঙ্গে দুটো চোর ধরে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
নাশতা করে ছোটনরা ওপরে গিয়ে ছাদের কোণে দেখলো রিমকি-সিমকি বসে আছে। ওদের দেখতে পেয়ে সিমকি ডেকে বলল, তোমরা শুনেছো, মুশকিল আসান বলেছেন তিনদিনের ভেতর খারাপ জিনটাকে দেশছাড়া করবেন!
রিমকি বললো, তোমরা চারজন কেন, ইতু কোথায়?
ছোটন একদিনে বুঝতে পেরেছে লেখাপড়ায় ভালো বলে রিমকি ইতুকে বেশি পছন্দ করে। ওকে ছাদে দেখেই ও বুঝে ফেলেছিলো ইতুর হারিয়ে যাওয়ার কথা লুকিয়ে রাখা যাবে না। গম্ভীর হয়ে বললো, আমাদের ওপর ভীষণ বিপদ রিমকি!
বিপদের কথা শুনে রিমকি-সিমকি দুজনই ঘাবড়ে গেলো। শুকনো গলায় রিমকি জানতে চাইলো–ইতুর কিছু হয় নি তো?
মাথা নেড়ে সায় জানালো ছোটন। নেকলেস চুরি যাওয়া থেকে শুরু করে ইতুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সব খুলে বললো। শুধু বললো না ছোটকার কথা।
সিমীক ঢোক গিলে বললো, নিশ্চয় খারাপ জিনটা ইতুকে কোথাও উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ও জানতো না এশার নামাজের পর যে বাইরে যাওয়া বারণ ছিলো?
না, ইতু জানতো না। জবাব দিলো ঝন্টু–ও বেরিয়ে যাওয়ার পর কথাটা বলেছিলেন দিদা।
তোমরা কী করবে ঠিক করেছো? জানতে চাইল রিমকি।
কিছুই ভেবে পাচ্ছি না কী করবো। বড় জেঠু যদি জানতে পারেন সবাই মিলে প্ল্যান করে ইতুকে গলির মাথায় পাঠিয়েছি–কাউকে আস্ত রাখবেন না।
সিমকি বললো, মুশকিল আসান নিশ্চয় বলতে পারবেন ইতু কোথায় আছে।
ওঁকে বলা মানে সবার জেনে যাওয়া।
রিমকি একটু ভেবে বললো, ভাইয়া বাসায় আছে। ওকে বললে হয়তো একটা বুদ্ধি দিতে পারবে।
ঝন্টু ছোটনকে বললো, রিমকি ঠিক বলেছে। সাইফ ভাই নিশ্চয় আমাদের চেয়ে ভালো বুঝবে।
কথা না-বাড়িয়ে ওরা সবাই রিমকিদের বাড়িতে গেলো। সাইফ নিজের ঘরে বসে বই পড়ছিলো। সবাইকে একসঙ্গে দেখে একটু অবাক হলো–কী ব্যাপার, সবার মুখ ভার কেন? কোনো ঝামেলা বাধাও নি তো!
ছোটনের মুখে সব কথা শুনে সাইফের মুখ শুকিয়ে গেলো–এক্ষুনি থানায় জানানো দরকার। ইতুর কোনো ছবি আছে তোমাদের কাছে?
ঝন্টু কাঁদোকাঁদো গলায় বললো, থানায় জানালে বাড়ির সবাই জেনে যাবে। বড় জেঠু আমাদের মেরে ফেলবেন।
সাইফ গম্ভীর গলায় বললো, তোমাদের গোয়েন্দাগিরির সংবাদ বড় জেঠুকে না দিলেও চলবে। ইতু সন্ধ্যেবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়েছে, আর ফিরে আসে নি। এর বেশি বাড়িতে বলার দরকার নেই।
থানা থেকে ওরা বাড়িতে আসবে না জেরা করতে?
আসতে পারে। তবে বেশি হইচই করতে মানা করে দেবো। এস পির ছোট ভাই আতিক আমার বন্ধু। ওকে নিয়ে আগে এস পির সঙ্গে কথা বলবো। চট করে কেউ গিয়ে ইতুর একটা ছবি নিয়ে এসো।
ছোটন ছবি আনতে গেলো। সিমকি বললো, পুলিসে বলার কী দরকার! ওদের বাড়িতে যে মুশকিল আসান ফকির এসেছেন, ওঁকে বললেই তো হয়। ইতু কোথায় আছে ঠিক বলে দিতে পারবেন।
সিমকির কথা শুনে সাইফ বিরক্ত হলো। বললো, পীর-ফকিররা যদি ছেলেধরা চোর-ডাকাত ধরতে পারতো আর পানিপড়া দিয়ে অসুখ ভালো করতো, তাহলে দেশে পুলিসের দরকার হতো না, ডাক্তারেরও দরকার হতো না।
সাইফের কথা সিমকির পছন্দ হলো না। তবু কিছু বললো না, যদি ও রেগে যায় সেই ভয়ে। ও খেয়াল করেছে কদিন ধরে সাইফ অল্প কথাতেই চট করে রেগে যাচ্ছে। একটু পরে হাঁপাতে হাঁপাতে ছোটন এলো ছবি নিয়ে। বললো, ইতুর একা ছবি নেই। এটাতে ও আর আমি একসঙ্গে, স্টুডিওতে গিয়ে তুলেছিলাম।
ছবি দেখে সাইফ বললো, চলবে। এবার চলল, তোমাদের বড় জেঠুকে কথাটা বলে আসি আতিকদের বাসায় যাবো।
বাইরে বসার ঘরে আসর জমিয়ে গল্প করছিলেন বড় জেঠু। পাড়ায় ওর কাছাকাছি বয়সের যারা ছিলেন তাদের প্রায় সবাই এসেছেন। সাইফ ওঁর কাছে গিয়ে বললো, আপনি একটু বাইরে আসুন। জরুরী কথা আছে।
রানুর দাদু তখন ককাটা ভূতের এক ভয়ংকর গল্প বলছিলেন। এমন একটা রোমহর্ষক গল্পের মাঝখান থেকে উঠে আসাটা বড় জেঠুর পছন্দ হলো না। ডাক্তার ছোঁড়াটার গলা শুনে মনে হলো গুরুত্বপূর্ণ কোনো কথা বলতে চায়, তাই উঠে এলেন। বারান্দায় এসে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে?
ইতু কাল সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছে, রাতে ফেরে নি।
সাইফের কথা শুনে বড় জেঠুর কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়লো। ছোটনের দিকে তাকিয়ে বললেন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় খবর নিয়েছিস?
ছোটন ভয়-পাওয়া গলায় বললো, ইতু কখনো অন্য কারো বাসায় রাতে থাকে না।
হুম। চিন্তিত গলায় বড় জেঠু বললেন, হুজুরকে তাহলে কথাটা বলতে হয়।
সাইফ বললো, আমি পুলিসে খবর দিতে যাচ্ছি। ছোটন আমার সঙ্গে যাবে।
ঠিক আছে যাও। এই বলে ঝন্টুদের দিকে তাকালেন বড় জেঠু—আমাকে না বলে কেউ যদি বাড়ির বাইরে এক পা দিয়েছিস পিঠে আস্ত খড়ম ভাঙবো।
ঝন্টুরা সবাই শুকনো মুখে ওপরে ওদের ঘরে গেলো। রিমকিদের নানি দুপুর পর্যন্ত এ বাড়িতে থাকবেন। ওরাও ঝন্টুদের সঙ্গী হলো।
ছোটনকে সঙ্গে নিয়ে সাইফ সোজা ওর বন্ধু আতিকের বাসায় গেল। হঠাৎ সাইফকে দেখে অবাক হলো ওর বন্ধু। বললো, এই অসময়ে কোত্থেকে এলি? আমি তো একটু পরেই বেরিয়ে যাচ্ছিলাম!
তোকে নিয়ে আমিন ভাইর কাছে যাবো। আমাদের পাশের বাড়ির একটা ছেলে হারিয়ে গেছে।
কথা না-বাড়িয়ে আতিক বললো, দাঁড়া, আমি গাড়ি বের করছি।
সাইফের এই বন্ধুটি ব্যবসা করে বেশ পয়সা বানিয়েছে। ওর গাড়িতে করে সাইফ আর ছোটন এসপির অফিসে এলো। সরাসরি এসপির ঘরে না গিয়ে আতিক ওঁর পিএর ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ভেতরে যাওয়া যাবে শরীফ?
কমবয়সী পি এ আতিকের চেনা। বললো, স্যার একাই আছেন, চলে যান আতিক ভাই।
আতিকের সঙ্গে সাইফকে দেখে এস পি আমিন আহমেদ বললেন, এই যে ডাক্তার এসো এসো। হঠাৎ কী মনে করে?
কোনোরকম ভূমিকা না করে সাইফ এস পি-কে ইতুর নিখোঁজ হওয়া আর ওদের হীরের নেকলেস চুরির কথা জানালো। ছোটনকে দেখিয়ে বললো, এ হচ্ছে ইতুর ভাই ছোটন।
এস পি ছোটনকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেন মনে হলো রাত জেগে গলির মোড়ে পাহারা দিলে তোমরা নেকলেস চোর ধরতে পারবে?
মুশকিল আসান চোর ধরতে পারবে, ইতু আর আমি কখনো বিশ্বাস করতে পারি নি। ছোটন বললো, আমরা ভেবেছি কাজের লোকদের কেউ চুরি করতে পারে। ওদের কারো চলাফেরায় সন্দেহ করার মতো কিছু চোখে পড়ে কিনা, অচেনা কেউ ওদের কাছে আসে কিনা, ওরা কোথাও যায় কিনা–সেসব দেখার জন্য আমরা ভেবেছিলাম রাত জেগে পাহারা দেবো।
তোমরা বুদ্ধিমান ছেলে। এস পি বললেন, মনে হচ্ছে ইতু সন্দেহজনক কাউকে ফলো করতে গিয়ে আটকা পড়েছে, নয়তো ছেলেধরার পাল্লায় পড়েছে।
ছেলেধরার কথা শুনে ছোটনের মুখ শুকিয়ে গেলো। কিছুদিন আগে গিরিবালা ধোপানি খবর দিয়েছে কোথায় এক পাহাড়ী নদীর ওপর পুল বানানো হচ্ছে আর বারবার পুলটা ভেঙে যাচ্ছে। নাকি একশ আটটা ছেলের কাটা মুণ্ডু পেলে সেই নদী শান্ত হবে। গিরিবালাদের এক আত্মীয়ের ছেলের মুণ্ডু-ছাড়া ধড় পাওয়া গেছে মাস দুয়েক আগে।
ছোটনকে ভয় পেতে দেখে এস পি বললেন, ইতু যেখানেই থাকুক, আমরা খুঁজে বের করবো। তোমরা বাড়ি যাও। বিকেলে আমি নিজেই আসবো। এবার বলো ইতুর খুব কাছের বন্ধু কারা আছে যাদের বাড়িতে ও সবসময় যাওয়া আসা করে।
ইতু যে দুই বন্ধুর বাড়িতে মাঝেমাঝে বই আনতে যায় সেখানে আমি ফোন করেছি, যায় নি। নিজের ইচ্ছায় কোথাও গেলে ও সঙ্গে সঙ্গে ফোন করতো।
সাইফের কাছ থেকে ইতুর ছবিটা নিয়ে ভালো করে দেখলেন এস পি । আপন মনে বললেন, চোখ দেখে মনে হয় খুব শার্প ছেলে।
আতিক ওর গাড়িতে করে শিংটোলা গলির মোড়ে সাইফ আর ছোটনকে নামিয়ে দিলো। ছোটন বললো, বর্মণদের লোহার দোকানে একটু খোঁজ করা দরকার, সাইফ ভাই। বাকের চাচা বলছিল ও নাকি এখানে বসেছিলো।
সাইফ কোনো কথা না বলে ছোটনদের সঙ্গে এলো। বর্মণদের দোকানে ফুটফরমাশের কাজ করে নিতাই, ছোটদের বয়সী, ভালো করেই চেনে ওদের। ছোটন ওকে দোকানের বাইরে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করল–কাল সন্ধ্যায় ইতু তোদের দোকানে বসে কী করছিলো রে?
নিরীহ গলায় নিতাই বলল, কিছু তো করে নাই ছোটন দাদা। খালি বইয়া আছিল। দুকান বন্ধ করনের অল্প আগে আকা আমার সাইকল লইয়া বাইর ওইয়া গেলো। কইলো কাইল দিয়া যামু। মনে ওইলো চিনা কাউরে দেখতে বুঝি। ক্যান ইতু দাদা কী করছে?
ছোটন গম্ভীর হয়ে বললো, ইতু রাতে বাড়ি ফেরে নি।
কও কী ছোটনদাদা! ভয় পাওয়া গলায় নিতাই বললো, কই যাইবার পারে কুন হদিশ পাও নাই?
না, মনে হচ্ছে ছেলেধরার পাল্লায় পড়েছে।
হায় ভগমান! অখন কী ওইব?
পুলিসে খবর দিয়েছি। তুই নজর রাখিস আমাদের পাড়ায় অচেনা সন্দেহজনক কোনো লোক ঘোরাফেরা করে কি না। দেখলে সোজা এসে খবর দিবি।
ঠিক আছে। সায় জানালো নিতাই।
বাকের চাচাকেও একই কথা বললো ছোটন। সাইফ বাড়ি যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলো– পাড়ায় তুমি সন্দেহজনক কাকে আশা করছো ছোটন?
ছোটন গম্ভীর গলায় বললো, ইতু যদি ছেলেধরার খপ্পরে পড়ে ওরা নিশ্চয় মুক্তিপণ চাইবে আমাদের কাছে।
মুক্তিপণ কথাটা কিছুদিন আগে ইতুর মুখেই শুনেছে ছোটন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিজেদের ডেরায় নিয়ে আটকে রেখে ছেলেধরারা ওদের বাড়িতে চিঠি পাঠায় টাকা চেয়ে। বলে টাকা না দিলে কিংবা পুলিশে খবর দিলে নাকি মেরে ফেলবে।
ছোটন আশা করছিলো বাড়ি গিয়ে দেখবে ইতু এসে গেছে, না বলে বাইরে রাত কাটানোর জন্য বড় জেঠুর বকুনি খাচ্ছে। যদি তা না হয় তাহলে হয়তো দেখবে রক্তের ছাপমারা চিঠি হাতে চিন্তিত মুখে বসে আছে বাবা, কাকা, জেঠুরা–যে চিঠিতে ইতুর জন্য মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে।
বাড়ি এসে দেখলো বাইরের ঘরের আড্ডা ভেঙে গেছে। শুধু বড় আর মেজ জেঠু চুপচাপ বসে আছেন। ছোটনকে দেখে বড় জেঠু জিজ্ঞেস করলেন–খবর দেয়া হয়েছে?
ছোটন মাথা নেড়ে সায় জানালো–হয়েছে।
কী বললো?
বললো, ইতু যেখানে থাকুক খুঁজে বের করবে।
মেজ জেঠু আপনমনে বললেন, পুলিস সবসময় এরকম কথা বলে।
ছোটন আবার বললো, এস পি সাহেব বিকেলে আসবেন।
এস পি নিজে আসবেন? বড় জেঠু একটু অবাক হলেন।
হ্যাঁ, সাইফ ভাইর খুব পরিচিত।
ঠিক আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বড় জেঠু বললেন, মাকে গিয়ে বল্। মা একেবারে ভেঙে পড়েছেন।
দিদা ওঁর ঘরে একা শুয়েছিলেন। ছোটনকে দেখে উঠে বসলেন–কোনো খবর পাওয়া গেছে?
না দিদা।
কথাটা শুনে দিদা আবার শুয়ে পড়লেন। ছোটন বললো, বিকেলে এস পি সাহেব নিজে আসবেন।
পুলিসকে কি নেকলেস চুরির কথা বলেছিস?
বলেছি দিদা।
বলে দিস নি তো ছোটকা ওটা নিয়েছে?
না দিদা।
দরজাটা টেনে নিয়ে নিজের কাজে যা। গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে দিদা পাশ ফিরে শুলেন।
ছোটন ওপরে এসে দেখলো সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ও চিলেকোঠার ঘরে ঢুকতেই সবাই একসঙ্গে জানতে চাইলো কী হয়েছে।
এসপির সঙ্গে কী কথা হয়েছে, নিতাই আর বাকের চাচাকে কী বলেছে সব ওদের জানালো ছোটন। সিমকি ওকে বললো, বড় জেঠু হুজুরকে ইতুর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন মাগরেবের পর বলতে পারবেন ইতু কোথায় আছে। আমি ঠিকই বলেছিলাম। হুজুর বলেছেন এর পেছনেও নাকি খাবিস জিনটা আছে।
রন্টু বললো, এহতেশাম ভাইয়া এসেছিলো কিছুক্ষণ আগে। ইতুর কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেছে। বলল, পুলিসের ওপর মহলে নাকি ভালো জানাশোনা আছে। কাকে নাকি ফোন করবে।
এস পি আমিন আহমেদ এলেন ঠিক সন্ধ্যের সময়। সঙ্গে সূত্রাপুর থানার দারোগা আর দুজন পুলিস অফিসার। ওঁরা নাকি ডিটেকটিভ ব্র্যাঞ্চের। কাজের লোকদের জেরা করার জন্য ডাকার সময় ধরা পড়ল দুখির মা পালিয়েছে। বাবুর্চি হামিদ আলী আর সেজ কাকির আয়া বশিরন বলল, দুপুরে খাওয়ার সময়ও দুখির মাকে নাকি দেখে নি। ভেবেছে বাড়ি গেছে, ছেলের অসুখ বেড়েছে হয়তো।
দিদা শক্ত গলায় বশিরনকে বললেন, দুখির মা পালিয়েছে আমাকে এতক্ষণ বলিস নি কেন?
বশিরন ঢোক গিলে বললো, আফনের শরীল ভালা না হুইন্যা আমি ছোড মারে কইছি। মনে করছি হাইনঝের আগে আইয়া পড়ব।
দিদা দারোগাকে বললেন, যেখানেই পালাক ওকে খুঁজে বের করা চাই।
দারোগা ব্যস্ত গলায় বললেন, আপনি ব্যস্ত হবেন না, হারামজাদিকে আমি চব্বিশ ঘণ্টার ভেতর এনে হাজির করবো। ওর একটা ছবি দিন মা।
চাকর বাকরের ছবি কোন্ আহ্লাদে রাখতে যাবো শুনি? ছবি-টবি হবে না।
ঠিক আছে মা। ছবি না হলেও চলবে। ওর ঠিকানাটা কি জানা আছে?
কোন্ বস্তিতে থাকে বাবুর্চিকে জিজ্ঞেস করো বাছা। ইতুর তো ছবি দেয়া হয়েছে। ওর কি কোনো হদিস পেয়েছো?
পেয়ে যাবো মা। বজ্জাত বেটিটাকে ধরলে পারলে সব খবর পাওয়া যাবে।
এসপি অন্যঘরে বড় জেঠুর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললেন। একবার দোতালায় গিয়ে ধ্যানে-বসা মুশকিল আসানকেও দেখে এলেন। যাওয়ার সময় দিদাকে বললেন, আপনি ভেঙে পড়বেন না। চোখকান খোলা রাখুন, যেন আর কিছু ঘটতে না পারে। ইতুকে আমরা শিগগিরই খুঁজে বের করবো।
দুখির মা নচ্ছারটার কথাও যেন মনে থাকে। দিদার ধমক খেয়ে এসপি কাষ্ঠ হাসলেন।