হোল্‌মোগোরি

হোল্‌মোগোরি 

হোলমোগোরি… মা আর করোস্তেলিওভ আজকাল কথা বললেই সেরিওজা কেবল এই অদ্ভুত শব্দটাই শুনতে পায়। 

‘হোমোগোরিতে চিঠি দিয়েছ তো?’ 

‘ওখানে কাজের চাপ কম থাকলে আমি ভাবছি পলিটিক্যাল ইকনমিস্কের পরীক্ষাটা দিয়ে নেব। 

‘হোলমোগোরি থেকে একটা চিঠি পেয়েছি। স্কুলের একটা কাজ খালি আছে লিখেছে।’

‘হোলমোগোরিতে সব ব্যবস্থাই ঠিক হয়ে গেছে।’ 

‘এটা আবার ‘হোলমোগোরিতে নেওয়া কেন? পোকায় কেটে তো ঝাঁজরা করে দিয়েছে।’ (দেরাজের কথা বলছে।) 

হোলমোগোরি…হোলমোগোরি … 

‘হোল্‌মোগোরি এই একটা শব্দ শুনে শুনে ওর কান ঝালাপালা হয়ে গেল যে! জায়গাটা কোথায়? হয়তো অ-নে-ক দূরে, অ-নে-ক উঁচুতে পাহাড়ের উপর, যেমনটি ছবিতে দেখা যায়। কত লোক পাহাড় বেয়ে বেয়ে একেবারে চুড়োয় উঠে যাচ্ছে। একটা পাহাড়ের উপর ইস্কুল। বাচ্চারা দল বেঁধে পাহাড়ের নিচে স্লেজগাড়িতে চড়ে যাচ্ছে। 

সেরিওজা একটা ছবিও এঁকে ফেলল লাল পেনসিল দিয়ে। তারপর হোলমোগোরি, হোল্‌মোগোরি বলে একটা গানের সুর গুনগুন করে ভাঁজতে লাগল। 

ওরা দেরাজের কথা বলছে, আমরা তাহলে ওখানে গিয়েই থাকব বুঝি 

চমৎকার হবে কিন্তু! পৃথিবীতে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। জেঙ্কা, ভাস্কা চলে গেছে। এখন আমরাও যাচ্ছি। সব সময় একটা জায়গায় পড়ে না থেকে এরকম অন্য জায়গায় গেলে সবাই বেশ ওদের হোমরাচোমরা লোকও ভাবে। 

পাশা খালাকে সে প্রশ্ন করল একদিন, ‘হোলমোগিরি অনেক দূর তাই না?’

‘হাঁ, অনেক দূরের পথ,’ খালা কেমন একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলল।

‘আমরা ওখানে থাকতে যাচ্ছি, তাই না?’ 

‘আমি ঠিক বলতে পারি না-সেরিওজা। কী ব্যবস্থা হয়েছে আমি জানি না…’

‘আচ্ছা, ওখানে কি ট্রেনে চড়ে যেতে হয়?’ 

‘হাঁ, ট্রেনে।’ 

তারপর মা আর করোস্তেলিওভকে প্রশ্ন করল, ‘আমরা হোল্‌মোগোরিতে যাচ্ছি, তাই না?’ ওকে ওদের অনেক আগেই এ কথা বলা উচিত ছিল, হয়তো বলতে ভুলে গেছে। ওরা কোনো উত্তর না দিয়ে দু-জনের দিকে আড়চোখে তাকাল, তারপর দু-জনেই ওর দৃষ্টি এড়াবার জন্য অন্যদিকে তাকিয়ে রইল, সেরিওজা চেষ্টা করেও ওদের চোখের দিকে চাইতে পেল না। 

একটু অবাক হয়ে সে আবার প্রশ্ন করল, ‘আমরা তো যাচ্ছি? তাই না?’ এ কী, এরা উত্তর দিচ্ছে না কেন? 

একটু পরে মা কী ভেবে নিয়ে উত্তর দিল, ‘তোমার বাবা ওখানে বদলি হয়েছে, সেরিওজা। 

‘আমরা কি বাবার সঙ্গে ওখানে যাচ্ছি?’ 

তার প্রশ্নটা খুবই সোজা আর সোজা উত্তর পাবার জন্যই সে অস্থির হয়ে উঠল। কিন্তু মা যথারীতি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে লাগল, ‘ওকে একা যেতে দিই কেমন করে বল? একা গেলে ওর কত কষ্ট হবে বোঝ তো? কাজের শেষে বাড়ি ফিরে দেখবে শূন্য বাড়ি…সব অগোছালো…কেউ খাবার দেবার জন্য বসে নেই…কেউ কথা বলবার নেই…তোমার বাবার অবস্থাটা তাহলে কি হবে বল তো?’ 

কিছুক্ষণ নীরব থেকে মা শেষ পর্যন্ত আসল কথাটা বলে ফেলল, ‘তাই আমি তোমার বাবার সঙ্গে যাচ্ছি।’ 

‘আর আমি?’ 

করোস্তেলিওভ কেন কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে অমন চুপ করে আছে? মা আর কোনো কথা না বলে তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে শুধু তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছে কেন? সে এসবের অর্থ কিছুই বুঝতে পারছে না যে! 

এবার কেমন একটা অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠে দু-পা আছড়ে চিৎকার করে উঠল, ‘আর আমি!! আমি যাব না?’ 

তাকে আদর করা থামিয়ে মা এবার থমকে উঠল, ‘আঃ, এভাবে পা আছড়াবে না বলছি! এরকম করলে লোকে অসভ্য অভদ্র বলে, বুঝলে? আর এরকম কর না যেন। তোমার যাওয়ার কথা বলছ? কিন্তু এখনই কেমন করে যাবে বল? এই তো সবে এতবড় একটা অসুখ থেকে উঠলে, এখনও একেবারে সুস্থ হও নি। একটু কিছু অনিয়ম হলে এখনও তোমার গায়ে জ্বর উঠছে। ওখানে আমরা নতুন একটা জায়গার মধ্যে গিয়ে পড়ব। কী করব কিছুই জানি না। তাছাড়া, এখানকার আবহাওয়া তোমার সহ্য হবে কিনা তা-ও সন্দেহ। ওখানে গেলে আবার তোমার অসুখ হবে নির্ঘাত। আর তুমি ওখানে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে বাড়িতে তোমাকে কার কাছে রেখে আমরা কাজে যাব? ডাক্তারও বলেছে তোমাকে ওখানে নিয়ে যাওয়া চলবে না।’ 

মা’র কথাগুলো শেষ হবার আগেই সেরিওজা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে, ওর বড় বড় চোখ দুটো থেকে টপটপ করে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে। ওরা নিজেরাই কেবল যাবে, ওকে সঙ্গে নেবে না! কাঁদতে কাঁদতে ও মায়ের শেষের দিকের কথাগুলো শুনতে পেল না। মা তখনো বলে চলেছে। ‘তুমি এখানে পাশা খালা ও লুকিয়ানিচের কাছে থাকবে। যেমনটি আছে ঠিক তেমনটি থাকবে। কিছু ভেব না লক্ষ্মী ছেলে। 

কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি থাকতে চায় না। করোস্তেলিওভ আর মায়ের সঙ্গে যেতে চায়। 

কাঁদতে কাঁদতে অস্ফুট স্বরে সে আবার বলল, ‘আমি হোমোগোরি যাব!’ 

‘শোন সোনা ছেলে, আর কেঁদ না, চুপ কর এবার। হোল্মোগোরিতে গিয়ে কী হবে? ওখানে নতুন কিছুই নেই….’ 

‘হাঁ, আছে!’ 

‘মায়ের সঙ্গে এমনি করে কথা বলে নাকি? মা কি কখনো মিথ্যে কথা বলে?… এখানে কি তুমি চিরদিন পড়ে থাকবে নাকি? বোকা ছেলে, চুপ, চুপ। আর কেঁদ না… অনেক হয়েছে। শীতকালটা এখানে থাক! তারপর বসন্তে বা গরমে বাবা বা আমি এসে তোমায় ওখানে নিয়ে যাব। আবার আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব। তোমাকে ছেড়ে আমরাই-বা অনেক দিন থাকব কেমন করে বল? তুমি তো সবই বোঝ সোনা।’ 

হাঁ, সে সব বোঝে। কিন্তু আসছে গরম কালের মধ্যে যদি সে সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়ে ওঠে! তাছাড়া, সারাটা শীত অপেক্ষা করে থাকা কি সহজ কথা! শীত তো সবে শুরু হল। এর শেষ হতে অ-নে-ক দেরি এখনও…ওরা চলে যাবে আর সে এখানে পড়ে থাকবে একথা যে ও ভাবতেই পারে না। অনেক দূরে কোথায় ওরা তাকে ছেড়ে থাকবে আর একটিবারও তার কথা ভাববে না, একটুও ভাববে না! ওরা ট্রেনে চড়ে ওখানে যাবে কিন্তু ওকে সঙ্গে নেবে না! কেমন একটা অপমান, দুঃখ আর নিরাশার অনুভূতি তাকে ছেয়ে ফেলল। মাত্ৰ একটা কথার মধ্যে দিয়েই তার মনের এই গভীর দুঃখ প্রকাশ করবার চেষ্টা করল। বার বার বলতে লাগল, ‘আমি হোমোগোরি যাব! আমি হোমোগোরি যাব!’ 

মা করোস্তেলিওভের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মিতিয়া, এক গ্লাস জল দাও না। এই যে সেরিওজা, জলটা খেয়ে নাও। না, না, আর কাঁদতে পারবে না বলছি। কাঁদলে কিছুই লাভ হবে না। ডাক্তার বলেছে, তোমাকে আমরা সঙ্গে নিচ্ছি না এটা ঠিক। বোকার মতো আর কেঁদ না। চুপ, চুপ, এবার চুপ কর…মনে নেই কতবার তো তোমাকে রেখে আমি পরীক্ষা দিতে বাইরে গেছি! আমাকে ছেড়ে তখন তো তুমি বেশ থাকতে। মনে নেই সে সব কথা? এখন এমন করছ কেন বল তো? এখন তো কত বড় হয়েছ! তোমারই ভালোর জন্য মাত্র কয়েকটা দিন আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে না?’ 

কী করে মা তার মনের কথা বুঝবে? তখন যে সব অন্যরকম ছিল। তখন সে কত ছোটটি আর কত বোকাই-না ছিল! তখন মা না থাকলে সে মায়ের কথা ভুলেই যেত। তা ছাড়া, মা তো তখন একাই যেত। আর এখন মা করোস্তেলিওভকেও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে…তারপর আচমকা তার মনটা আর একটি ভাবনার ব্যথায় মুচড়ে উঠল, ওরা কি লিওনিয়াকেও নিয়ে যাবে নাকি? এ কথাটা তো এতক্ষণ তার মনে হয় নি! কান্নাজড়ানো স্বরে এবার প্রশ্ন করল, ‘আর লিওনিয়া? …’ 

মা একটু রেগে আর কেমন লাল হয়ে উত্তর দিল, ‘ও তো একেবারে বাচ্চা, ওকে না নিয়ে গেলে চলে? একথা তুমি বোঝ না? আমাকে ছেড়ে ও থাকবে কেমন করে! তাছাড়া, ও তো তোমার মতো অতবার অসুস্থ হয়ে পড়ে না, ওর টনসিল ফোলে না, জ্বরও হয় না।’

সেরিওজা মাথা নিচু করে আবার কাঁদতে লাগল। এবার নীরবে অসহায় ভঙ্গিতে কেঁদে চলল। 

লিওনিয়া থাকলেও-না হয় সে সব সহ্য করতে পারত। শুধু তাকেই ওরা এখানে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে। তাহলে শুধু তাকেই ওরা চায় না। 

রূপকথার গল্পটা সে শুনেছে, ‘অদৃষ্টের হাতে ছেড়ে দিল।’ ওরা তাকে তো ঠিক তাই করে যাচ্ছে। 

তার প্রতি মায়ের অবিচারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তার সঙ্গে এসে মিলল হীনতাবোধ। এই বিচিত্র অনুভূতি সারাজীবন তাকে ব্যথিত করবে। সে যে অনেক বিষয়ে লিওনিয়ার চেয়েও খারাপ, মা তা তো বলেই দিল। তার গলা ফোলে, জ্বর হয়, তাই ওরা লিওনিয়াকে সঙ্গে নিচ্ছে আর তাকে এখানে ফেলে রেখে যাচ্ছে। 

করোস্তেলিওভ এবার, ‘ওঃ! বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েই আবার তক্ষুনি ফিরে এসে বলল, ‘সেরিওজা, এস আমরা একটু বেড়িয়ে আসি।’ 

মা চেঁচিয়ে উঠল, ‘এই ঠাণ্ডার মধ্যে? আবার ও বিছানা নেবে দেখছি।’ 

করোস্তেলিওভ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘অসুখ তো লেগেই আছে, কী আর করা! এস সেরিওজা, চলে এস।’ 

কাঁদতে কাঁদতেই সে করোস্তেলিওভকে অনুসরণ করল। তার গলায় স্কার্ফটা জড়িয়ে কোট পরিয়ে তারপর তার ছোট্ট হাতখানি তার সবল হাতের মুঠোয় চেপে ধরে বাগানের দিকে চলল। 

যেতে যেতে করোস্তেলিওভ বলল, ‘তুমি তো জান সেরিওজা, ইচ্ছে না থাকলেও মানুষকে অনেক সময় অনেক কিছু করতে হয়। আমি কি হোলমোগোরিতে যেতে চাই নাকি? তোমার মা-ই কি যেতে চায়? আমরা কেউই যেতে চাই না। ওখানে যাওয়া মানে আমাদের জীবনের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়া, কিন্তু ইচ্ছে না থাকলেও আমাদের যেতে হচ্ছে। তাই আমরা যাচ্ছি। কতবার আমার জীবনে এরকম ঘটেছে। 

‘কেন যেতে হচ্ছে?’ 

‘জীবনটা যে এমনিই সোনা’, করোস্তেলিওভ দুঃখভরা গম্ভীর স্বপ্নে কথাটা বলল। সেরিওজা এবার যেন অনেকটা সান্ত্বনা পেল মনে। করোস্তেলিওভও তা হলে একটু দুঃখ পাচ্ছে। 

করোস্তেলিওভ আবার বলতে শুরু করল, ‘ওখানে আবার নতুন করে আমাদের ঘর সংসার গোছাতে হবে। তাছাড়া, লিওনিয়া তো আছেই। ওকে একটা নার্সারিতে দিতে হবে। আর নার্সারি যদি অনেক দূরে হয় তাহলে তো ওর জন্য একজন আয়া রাখতেই হবে। সেটাও চাট্টিখানি কথা নয়। তাছাড়া, আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে। জীবনে উন্নতি করতে হলে পরীক্ষা না দিয়ে উপায় নেই। দেখছ তো আমাদের জীবনে কত বাধ্যবাধকতা! তোমার তো মাত্র একটা কথা মানতে হবে—কিছু দিনের জন্য তোমাকে এখানে থাকতে হবে। আমাদের সঙ্গে গেলে তোমাকে এখন অনেক কষ্ট পেতে হবে, আবার তুমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়বে…’ 

তাকে কেন ওরা এসব বলে ভোলাচ্ছে! সে তো ওদের সঙ্গে সব দুঃখকষ্ট সমান ভাবে ভোগ করতেই চায়। ওরা যা করবে সে-ও তাই করতে চায়। করোস্তেলিওভের দরদভরা কথাগুলোও তাকে এই ভাবনা থেকে রেহাই দিল না যে ওরা তাকে কেবল অসুস্থ বলেই এখানে ফেলে রেখে যাচ্ছে না, সে একটা বোঝা হবে বলেই ওকে ফেলে রেখে যাচ্ছে। কিন্তু সে তো সমস্ত মন দিয়ে এটা বুঝতে পারে যে কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসলে সে কখনো বোঝা হয়ে ওঠে না। তাহলে ওরা তাকে সত্যিই ভালোবাসে কিনা এই সন্দেহই এখন তাকে দোলা দিতে শুরু করেছে। 

এবার ওরা বাগানে এল। বাগানটা কেমন নিরালা, নিঝুম। গাছের পাতাগুলো সব মাটিতে ঝরে পড়েছে, নেড়া গাছের ডালে পাখির বাসাগুলো কালো উলের বলের মতো দেখাচ্ছে। ঝরা পাতার উপর দিয়ে সেরিওজার জুতো মচমচ শব্দ করে চলেছেছ। করোস্তেলিওভের হাত ধরে সে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ দু-জনেই একেবারে নিশ্চুপ। হঠাৎ সেরিওজা চাপা একটা নিঃশ্বাস ফেলে আপন মনে বলে উঠল, ‘ও একই কথা।’ 

‘কী এক কথা?’ 

করোস্তেলিওভ একটু থেমে অপ্রস্তুত স্বরে বলে উঠল, ‘মাত্র আসছে গরমকারণ পর্যন্ত, সোনা!’ 

সেরিওজা কোনো কথা বলতে পারল না। কিন্তু ওর মনটা বলে উঠতে চাইল–আমি যা খুশি ভাবতে পারি, অঝোর ধারায় কেঁদে ভাসাতে পারি, কিন্তু কিছুতেই কিছু লাভ হবে না। তোমরা বড়, তোমাদের হাতে যখন ক্ষমতা রয়েছে তোমরা তোমাদের খুশিমতো যা ইচ্ছে তাই করবে। আমাকে এখানে ফেলে রেখে যাবে স্থির করলে তোমরা তা-ই করবে, আমার কোনো কথাই শুনবে না। তার মুখ দিয়ে স্বর ফুটলে সে একথাগুলোই বলতে পারত। কিন্তু বড়দের অসীম ক্ষমতার কাছে সে যে কত অসহায়, নিরুপায় তা মনে মনে অনুভব করতে পারছে বলেই তার স্বর ফুটল না… 

সেদিন থেকে সেরিওজা একেবারে নীরব, নির্বিকার হয়ে গেল ‘কেন?’ এই প্রশ্নটি এখন আর সে করে না কাউকে। আজকাল সে একা একা পাশা খালার ঘরে গিয়ে সোফায় বসে পা দোলায় আর বিড়বিড় করে আপন মনে কী বলে। তাকে এখনো খুব বেশি বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। স্যাঁতসেঁতে বিরক্তিকর হেমন্তকালটার সঙ্গে সঙ্গে ওর অসুস্থতাও চলেছে। 

করোস্তেলিওভ আজকাল প্রায় সারাদিন বাড়িতে থাকে না। তার কাজ অন্যকে বুঝিয়ে দেবার জন্য খুব সকালবেলাতেই সে ফার্মে চলে যায়। কিন্তু তার মধ্যেও সে সেরিওজাকে ভোলে না। একদিন ঘুম থেকে জেগেই ও বিছানার পাশে টেবিলের উপর একটা বাড়ি বানাবার সরঞ্জাম দেখতে পেল, আর একদিন একটা বাদামি রঙের বাঁদরি। সেরিওজা বাঁদরিটাকে বড্ড ভালোবাসে। এটা যেন তার ছোট্ট মেয়ে। সত্যি কিন্তু সে রাজকুমারীর মতোই সুন্দর দেখতে। দু-হাতে ওটাকে জড়িয়ে ধরে সে বলে, ‘তা হলে সোনা। মনে মনে সে হোলমোগোরিতে গেল এবং ওকেও সঙ্গে নিয়ে গেল। ওকে চুমু দিয়ে আদর করে, ওর কানে কানে ফিস ফিস করে কী বলে, রোজ রাত্রিবেলা ওকে তার বিছানার পাশটিতে শুইয়ে দেয়। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *