আকাশ আর পৃথিবী

আকাশ আর পৃথিবী 

গরমকালে আকাশে তারা দেখা যায় না। সেরিওজা যখন ঘুমোতে যায় আর যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে, দু-বারই বাইরে প্রচুর আলো থাকে। মেঘলা দিন হলে বা অঝোর ধারায় বর্ষা নামলেও দিনের এই আলো একেবারে নিভে যায় না, উপর থেকেই সূর্যের আলো আসে। আকাশটা যখন শুধুই নীল থাকে, এক টুকরো মেঘও তার গায়ে লেগে থাকে না, সেরিওজা তখন অবাক হয়ে লক্ষ করে সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে আর একটা স্বচ্ছ আলোর পিণ্ড, এক টুকরো আয়নার মতো দেখা যায়। ওটা নাকি চাঁদ, দিনের বেলায় ওর কোনো প্রয়োজনই নেই; কিছুক্ষণ আকাশের বুকে ওকে দেখা যায়, তারপর সূর্যের তেজ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে ওটা কোথায় মুখ লুকিয়ে ফেলে। তখন ঐ বিরাট সীমাহীন আকাশের রাজত্বে সূয্যিমামার একচ্ছত্র আধিপত্য চলতে থাকে। 

কিন্তু শীতকালে দিনগুলো কত ছোট হয়ে যায়। দিনের আলো নিভে রাতটা কত তাড়াতাড়ি এসে পড়ে। রাত্রে খাবার সময় হবার অনেক আগেই দানায়া স্ট্রিটের বরফ-ঢাকা বাগান আর বাড়ির শাদা ছাদগুলো তারাভরা আকাশের নিচে কেমন নির্জন নীরব হয়ে একেবারে ঘুমিয়ে পড়ে। আকাশে লক্ষ লক্ষ কোটি তারার দল তখন জেগে ওঠে। ছোট-বড় রকমারি কত তারা, বালুকণার মতো ছোট্ট ছোট্ট তারারাও আকাশের বুকে আলোর রেখা ছড়িয়ে মিটিমিটি তাকিয়ে থাকে যেন। বড় বড় তারার দল কোনোটা নীল, কোনোটা শাদা আবার কোনোটা বা সোনালি রঙের আভা ছড়িয়ে জ্বলজ্বল করছে। লুব্ধক তারার চারধারে চোখের পাতার মতো সুন্দর আলোর ছটা, আকাশভরা ছোট-বড় তারার দল আর ধূলিকণার মতো ক্ষুদে ক্ষুদে তারাগুলো অদ্ভুত বিচিত্র এক রহস্যময় পরিবেশের সৃষ্টি করে রাস্তার উপর সেতুর মতো ‘ছায়াপথ’ তৈরি করে রেখেছে। 

সেরিওজা আগে কোনোদিন এমন করে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখে নি। তারা সম্বন্ধে তার তেমন আগ্রহ এর আগে ছিলই না। সে জানত না যে তারাদেরও আবার এক-একটা নাম রয়েছে। তারপর একদিন মা ওকে ঐ ছায়াপথ, লুব্ধক, সপ্তর্ষিমণ্ডল, লাল মঙ্গল গ্রহ, এইসব চিনিয়ে দিল। মা বলল, বড় তারা আর বালুকণা মতো ছোট তারাগুলোরও নাকি আলাদা আলাদা নাম আছে। আর ওরা অনেক দূরে রয়েছে বলেই নাকি অত ছোট্ট দেখায়, নইলে ওরা নাকি অনেক বড় দেখতে। মঙ্গল গ্রহে তো এখানকার মতো মানুষও নাকি বাস করে। 

সেরিওজা তারাদের প্রত্যেকের নাম জানতে চায়, কিন্তু মা-র নাকি সবার নাম মনে নেই। একদিন মা সব জানত, আজ ভুলে গেছে কিন্তু। তার বদলে চাঁদের বুকে পাহাড় দেখিয়ে দিল। 

শীতকালে প্রত্যেকদিন কী বরফটাই-না পড়ে! লোকে পথ পরিষ্কার করে এক জায়গায় বরফের স্তূপ করে রাখে। কিন্তু আবার আরো বেশি করে বরফ পড়তে শুরু করে আর সমস্ত পথঘাট, বাগান, বাড়ির ছাদ তুলোর মতো শাদা বরফের কুচিতে ভরে যায়। বেড়ার ধারে থামগুলো শাদা বরফের টুপি মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাছগুলোকে বরফ পড়বার পর মনে হয় যেন শাদা ফুলের মালা পরে সেজেছে। 

সেরিওজা সারাদিন বরফ নিয়ে খেলা করে, বাড়ি তৈরি করে, দুর্গ তৈরি করে, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করে। তারপর পাহাড়ের গায়ে বরফের উপর দিয়ে স্লেজে করে পাহাড়ের ঢালুতে নেমে যায়। তারপর যখন বনের ওপাশে দিনের আলো নিবুনিবু হয়ে শেষবারের মতো আকাশকে রাঙিয়ে দিলে একেবারে নিভে যায়, সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে মাটির বুকে তখন স্লেজ গাড়িটাকে টানতে টানতে সেরিওজা বাড়ি ফেরে, বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মাথাটি পেছনে হেলিয়ে সে আকাশের বুকে একটু একটু করে ভেসে ওঠা তারাদের দিকে তাকায়। সপ্তর্ষিমণ্ডল আকাশের মাঝখানে এইমাত্র গুটিসুটি মেরে এসে বসল ওর লম্বা লেজটা ছড়িয়ে। মঙ্গল গ্রহটা ওর লাল চোখ মেলে পিটপিট করে তারই দিকে বার বার তাকাচ্ছে। মঙ্গল গ্রহটা তো বিরাট বড়, তা হলে বুঝি ওখানেও লোক থাকে। সেরিওজা ভাবতে লাগল : ‘আমার মতো একটি ছেলে হয়তো এখন আমারই মতো স্লেজ গাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো তারও নাম সেরিওজা…’ ভাবতে এত ভালো লাগে। তার এই ভাবনার কথা কাকেই-বা বলবে! যে শুনবে সেই হাসবে, ওকে খেপাবে, ঠাট্টা করবে আর তখন তার বেজায় রাগ হবে। কিন্তু কাউকে না বলতে পারলেও যে ভালো লাগে না। একমাত্র করোস্তেলিওভকেই বলা যায়। বাড়ি ফিরে এদিক ওদিক যখন কেউ ছিল না, সেই সুযোগে করোস্তেলিওভকে সে মনের কথা বলে ফেলল। করোস্তেলিওভ কখনো তার কথা শুনে হাসে না, দরদ দিয়ে মন দিয়ে তার সব কথা শোনে। আজও সব শুনে একটুও হাসল না। এক মুহূর্তে কী চিন্তা করে বলল : 

‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।’ 

তারপর কী কারণে কেন জানি সেরিওজার দু-কাঁধ ধরে বেশ গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। সেরিওজা অবাক হয়ে দেখল তার চোখে কেমন একটু দুর্ভাবনার কালো ছায়া ফুটে উঠেছে। 

…শীতের সন্ধ্যায় খেলাধুলো শেষ করে ক্লান্ত হয়ে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে সেরিওজা ঘরে ফিরে দেখে চুল্লি জ্বলছে আর কেমন গরম আমেজে ঘরখানি ভারি আরামের হয়ে উঠেছে। ঘরে এসে বসতেই তার শীত শীত ভাবটা কেটে গিয়ে শরীরটা বেশ গরম হয়ে ওঠে। একটু পরেই পাশা খালা এসে তার বুট জুতো, মোজা, পায়জামা সব খুলে দিয়ে জুতোজোড়াটা গরম হবার জন্য চুল্লির উপর তাকে রেখে দেয়। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে খাবার টেবিলে বড়দের সঙ্গে সে খেতে বসে। গরম দুধে চুমুক দিতে দিতে সে বড়দের গল্প শোনে আর আসছে কালের কথা ভাবে। আজ যে বরফের দুর্গ সে বানিয়েছে কাল আবার কেমন করে সেটা আক্রমণ করে দখল করবে, মনে মনে তাই ভাবতে থাকে…সত্যি, শীতকালটা ভারি মজার। 

কিন্তু একটা ভীষণ অসুবিধা, শীতকালটা যেন আর যেতেই চায় না। মোটা ভারী ভারী পোশাক পরতে কত আর ভালো লাগে! ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়ার জ্বালায় মাঝে মাঝে অতিষ্ঠ হয়ে যেতে হয়। স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে ছোটখাটো জামা-প্যান্ট পরে এক দৌড়ে বাইরে চলে যাও, নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাট, ঘাসের বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাক, মাছ ধরতে যাও মাছ পাও আর না-ই পাও, মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে পোকা বের করে সেগুলো বড়শিতে গেঁথে মাছ ধরতে ধরতে চেঁচিয়ে বলে ওঠ, ‘শুরিক, তোমার টোপ খেয়েছে দেখ! বঁড়শিতে মাছ ঠোকরাচ্ছে দেখ!’ 

শীতকালটায় এসব কিছুই কিন্তু করা যায় না। কেবল ঠাণ্ডা, বিশ্রী বাতাস আর বরফের দৌরাত্ম্য চারদিকে। কত আর ভালো লাগে বল এমন হতচ্ছাড়া শীতকালটাকে… 

… কিছুদিন পর জানালার কাচের গা বেয়ে বেয়ে তেরছা ধারায় বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করে। বরফের বদলে প্যাচপ্যাচে কাদায় রাস্তাঘাট অলিগলি এবড়োখেবড়ো হয়ে ওঠে। শীতের পর বসন্তের আবির্ভাব বুঝি এমনি করেই হয়। নদীতে বরফের স্তূপে একটু একটু করে ফাটল ধরতে থাকে। সেরিওজা অন্য সাথীদের সঙ্গে দল বেঁধে তাই দেখতে ছুটে যায়। বরফের বিরাট স্তূপগুলো একটু একটু করে গলতে শুরু করে নদীর জলের ধারার সঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তারপর নদীর কূল ছাপিয়ে উপচে পড়ে। নদীর একপাশে উইলো গাছগুলোর অর্ধেক জলে ডুবে যায়, ডালপালাগুলো জলের উপর খানিকটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, চারধারে সবকিছুই নীল। উপরে আকাশ, নিচে নদীর জলের ধারা, সব নীলে নীল। টুকরো টুকরো শাদা আর ছাই রঙের মেঘের দল নীল আকাশের বুকে, নদীর নীল জলের স্বচ্ছ আর্শিতে ভেসে ভেসে বেড়ায়… 

…আর ওদের দানায়া স্ট্রিটের ওধারে মাঠে ফসলগুলো কখন এত লম্বা আর ঘন হয়ে বেড়ে উঠল! সেরিওজা তো এতদিন তা লক্ষ করে নি! কখন ওদের রাই ক্ষেতে শীষ বেরুল সে তো চোখ মেলেও দেখে নি! আশ্চর্য! এখন পথের উপর দিয়ে চলতে থাকলে রাই শীষগুলো তার মাথায় চোখে মুখে কোমল স্পর্শ বুলিয়ে জানিয়ে দেয়, ওরা ফুটে উঠেছে, ওরাও আছে। পাখিদের সদ্যোজাত বাচ্চাগুলো কখন কোন ফাঁকে বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে। নদীর ওপারে মাঠে হাসছিল যে ফুলের রাশি সেগুলো সংগ্রহের জন্য ঘাসকাটা যন্ত্রগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের স্কুল বন্ধ হল। এমনি করে বসন্তের পর আবার এসে পড়ল গ্রীষ্ম। সেরিওজা বরফ আর তারাদের কথা নিঃশেষে ভুলে গেল… 

একদিন করোস্তেলিওভ সেরিওজাকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে বলল, ‘শোন, তোমার সঙ্গে একটা জরুরি কথা আছে। আচ্ছা, বল তো বাচ্চা ছেলে, না বাচ্চা মেয়ে, কোনটা আমাদের বাড়ি এলে তোমার ভালো লাগবে?’ 

সেরিওজা চটপট উত্তর দিল, ‘ছোট্ট একটি ছেলে!’ 

‘তুমি ঠিক কথাই বলেছ সোনা। কিন্তু সব দিকই আমাদের ভেবে দেখতে হবে তো। অবশ্য একটি মাত্র ছেলে না থেকে দুটি ছেলে থাকা অনেক ভালো। কিন্তু আর একটা কথা, আমাদের ছেলে তো একটি রয়েছেই। তাহলে এখন ছোট্ট একটি মেয়েরই দরকার আমাদের, তাই না?’ 

সেরিওজা কোনো উৎসাহ না দেখিয়ে শুধু বলল, ‘তুমি যা বলবে তাই হবে। ছোট্ট মেয়েই তা হলে ভালো। কিন্তু ছোট্ট একটি ছেলেকে পেলে আমি ওর সঙ্গে বেশ খেলা করতে পারতাম।’ 

‘আর ছোট্ট মেয়েটিকে তুমি দেখাশুনা করবে। দেখবে কোনো দুষ্টু মেয়ে যেন ওর চুল ধরে না টানে, ওকে না কাঁদায়। তুমি ওর দাদা হবে।’ 

সেরিওজা মন্তব্য করল, ‘মেয়েরাও কিন্তু চুল ধরে টানে আর খুব শক্ত করেই টানে। অনেক সময় তো ওরা এমন হেঁচকা টান মারে যে ছেলেরাও কেঁদে ফেলে।’ লিদা একদিন তার চুল ধরে কেমন টেনেছিল করোস্তেলিওভকে আজ তা বলে দিতে পারত। কিন্তু নালিশ করতে সে চায় না। 

করোস্তেলিওভ জবাব দিল, ‘হাঁ, অনেক মেয়ে বড্ড দুষ্টু হয় সত্যি। কিন্তু আমাদের মেয়েটি তো একেবারে বাচ্চা হবে কি না। তাই কারও চুল ধরে ও টানতেই পারবে না।’ সেরিওজা এক মুহূর্ত কী ভেবে নিয়ে বলল, ‘তা হোক। ছোট্ট একটি বাচ্চা ছেলেই আসুক না। মেয়ের চাইতে ছেলেই কিন্তু ভালো।’ 

‘সত্যি বলছ?’ 

‘হাঁ, ছেলেরা কখনো কাউকে জ্বালাতন করে না। কিন্তু মেয়েরা কেবলই তোমাকে জ্বালাবে দেখ। 

‘ও, হাঁ, তা বটে। আচ্ছা, আর-এক সময় এই নিয়ে আমরা আলোচনা করব, কেমন?’

‘আচ্ছা।’ 

মা এক পাশে বসে একমনে কী সেলাই করছে। ওদের কথাবার্তা শুনে মুচকি হাসছে যেন। সেরিওজা অবাক হয়ে দেখল মা আজকাল কেমন বিশ্রী রকমের চওড়া পোশাক পরতে শুরু করেছে। এ কথাও অবশ্য সত্যি, মা আজকাল দিনকে দিন বড্ড মোটা হয়ে যাচ্ছে। এখন মা ছোট্ট একটা কী হাতে নিয়ে তার চারধারে লেস বুনে যাচ্ছে। 

সেরিওজা এবার মা’কে প্রশ্ন করল, ‘কী বানাচ্ছ ওটা?’ 

‘বাচ্চার জন্য টুপি তৈরি করছি। ছোট্ট ছেলে বা ছোট্ট একটি মেয়ে, তোমরা দু-জনে মন স্থির করে যাকে আনবে তারই জন্য তৈরি করছি এটা।’ 

পুতুলের টুপির মতো খুদে টুপিটার দিকে তাকিয়ে সেরিওজা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল আবার, ‘তার মাথা এত ছোট্ট হবে নাকি?’ (তারপর মনে মনে সে ভাবতে লাগল : কী আশ্চর্য, অত ক্ষুদে মাথা হলে তো চুল ধরে টানলে সমস্ত মাথাটাই উপড়ে চলে আসবে!) 

মা বলল, ‘প্রথম তো অত ছোট্টই থাকবে, তারপর আস্তে আস্তে বড় হবে। দেখছ তো ভিক্তর কেমন একটু একটু করে বড় হচ্ছে। তুমিও তো কেমন বড় হচ্ছ। আমাদের বাচ্চাও তেমনি করে বড় হয়ে উঠবে।’ 

মা ছোট্ট টুপিটা হাতের উপর পেতে রেখে দেখতে লাগল এবার। মা’র মুখখানি আনন্দে কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। করোস্তেলিওভ মা’র কাছে গিয়ে মায়ের কপালে চকচকে চুলের ডগাটায় চুমো খেল… 

সত্যি কিন্তু ওরা একটি ছেলে বা মেয়ে আনবার কথাই খুব করে ভাবছে আজকাল। ছোট্ট একটি বিছানা আর লেপ আনা হল। বাচ্চা ছেলে বা মেয়েটির জন্য ওরা সেরিওজার স্নানের টবটিই ব্যবহার করতে পারবে। অনেক দিন আগে সে ওটার মধ্যে বসে হাত-পা ছুড়ে মজা করে স্নান করত। এখন ওটা তার পক্ষে বড্ড ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু এত ছোট মাথাওয়ালা বাচ্চাটা ঐ ছোট টবের মধ্যে বেশ আরামেই স্নান করতে পারবে। 

সেরিওজা জানে লোকে কোথা থেকে বাচ্চা নিয়ে আসে। হাসপাতাল থেকেই ওদের কিনে আনা হয়। হাসপাতালটাই বাচ্চাদের আস্তানা, আর ওখান থেকেই লোকে পছন্দ করে বাচ্চা বাড়িতে নিয়ে আসে। একবার ওদের পড়শি এক মহিলা হাসপাতাল থেকেই দু-দুটো বাচ্চা নিয়ে এল। একরকম দুটো বাচ্চা কেন আনল সেরিওজা তো ভেবেই অবাক। দুটো বাচ্চাই আবার হুবহু একই রকম দেখতে। শুধু একটি বাচ্চার ঘাড়ে একটি ছোট তিল ছিল, অন্যটির ছিল না। ঐ তিল দেখে তবে ওদের দু-জনকে চিনতে হত। একেবারে একরকম দুটো বাচ্চাই কেন আনল, সেরিওজা ভেবে ভেবে কোনো কূলকিনারা পায় নি। দুটো দুরকম হলে কিন্তু খুব ভালো হত। 

করোস্তেলিওভ আর মা বাচ্চা আনবার সব ব্যবস্থাই করে ফেলেছে বটে, কিন্তু ওরা এত দেরি করছে কেন? বিছানা তো তৈরিই আছে, কিন্তু ঐ বিছানায় শোবে যে বাচ্চা তারই তো দেখা নেই আজ অবধি। 

সেরিওজা একদিন মা’কে বলল, ‘তোমরা হাসপাতালে গিয়ে বাচ্চাটাকে কিনে আনছ না কেন?’ 

ওর কথা শুনে মা খুব হাসতে শুরু করল। উঃ! মা কী ভয়ানক মোটা হয়ে গেছে! সেরিওজা অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। মা একটু পরে হাসি চেপে বলল, ‘ওখানে এখন কোনো বাচ্চা নেই। ওরা বলেছে কয়েকদিনের মধ্যেই আবার বাচ্চা আসবে।’ 

তা ঠিক, এরকম মাঝে মাঝে ঘটেই থাকে। দোকানে গিয়ে দরকারি একটা জিনিস চাও, দেখবে ঠিক সেটাই তখন দোকানে নেই। বেশ, ওরা তাহলে অপেক্ষাই করবে ধৈর্য ধরে। এমন কিছু তাড়া নেই তো। 

তবে মা যাই বলুক না কেন, বাচ্চারা বড্ড আস্তে আস্তে বড় হয়। ভিক্তরকে দেখেই তা বেশ বোঝা যায়। ভিক্তর তো কতদিন হয়ে গেল এসেছে, কিন্তু এখনও ওর বয়স মাত্র আঠারো মাস! বড়দের সঙ্গে খেলতে পারবে কবে, আরো কতদিন পরে? যে নতুন বাচ্চাটি ওদের বাড়িতে আসবে, সে-ও তো ভিত্তরের মতো অমনি একটু একটু করে বড় হবে। সেরিওজার সঙ্গে ও খেলতে পারবে কবে কে জানে! আর যতদিন-না বাচ্চাটা বড়সড় হয়ে ওঠে ততদিন সেরিওজাকেই তো ওকে দেখাশুনা করতে হবে; কাটা অবশ্য একেবারে মন্দ নয়, দরকারি কাজ, কিন্তু করোস্তেলিওভ যতটা ভালো আর সহজ মনে করেছে ঠিক ততটা সহজ আর সুখের নয়। লিদা ভিক্তরকে বড় করে তুলতে বেশ বেগ পাচ্ছে। সারাক্ষণ ওকে কোলে করে কখনো হাসিয়ে কখনো কাঁদিয়ে কখনো শাস্তি দিয়ে ভুলিয়ে রাখা কি সহজ কথা নাকি? কিছুদিন আগে লিদার মা-বাবা একটা বিয়ের নিমন্ত্রণে গিয়েছিল আর ভিক্তরকে নিয়ে লিদাকে বাড়িতে থাকতে হয়েছিল। লিদা সেদিন কেবল কেঁদেছে। ভিক্তরটা না থাকলে তো ও মজা করে মা-বাবার সঙ্গে যেতে পারত। ভিক্তরকে নিয়ে বাড়িতে থাকা যেন ঠিক জেলখানায় বন্দী হয়ে থাকা, লিদা তো তাই বলে। 

তাহলে তো ওকেও…তা বেশ…ও না হয় করোস্তেলিওভ আর মা’কে এদিক দিয়ে একটু সাহায্যই করবে। ওরা কাজে চলে যাবে, পাশা খালা রান্না করবে আর সেরিওজা ঐ অসহায় ছোট্ট পুতুলের মতো ক্ষুদে মাথাওয়ালা বাচ্চাটাকে দেখাশুনা করবে। ওকে খেতে দেবে, বিছানায় শুইয়ে দেবে। লিদা আর সে দুটো বাচ্চাকে নিয়ে এক সঙ্গে এক জায়গায় এসে বসবে। দু-জনে মিলে বাচ্চাদের দেখাশুনা করবে। আর বাচ্চা দুটো ঘুমিয়ে পড়লে ওরা বেশ খেলতেও পারবে। 

একদিন সকালবেলা সে ঘুম থেকে উঠলে ওরা বলল, মা নাকি হাসপাতালে বাচ্চা কিনতে গেছে। তার মনটা আনন্দে আর আশায় নেচে উঠল। আজ সত্যি তার জীবনের একটা বিশেষ দিন, সে ভাবল। মা তো এক্ষুনি একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে ফিরে আসবে আর সে ছুটে ওদের দিকে এগিয়ে যাবে। তাই সে ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে পথের দিকে আকুল আগ্রহে তাকিয়ে রইল…এমন সময়ে পাশা খালা ওকে ডেকে বলল, ‘করোস্তলিওভ তোমাকে ফোনে ডাকছে। 

সেরিওজা এক ছুটে বাড়ির ভিতর গিয়ে টেবিলের উপর থেকে রিসিভারটা তুলে নিয়ে বলল, ‘হ্যালো?’ ওদিক থেকে করোস্তেলিওভের খুশিভরা স্বর শোনা গেল, ‘সেরিওজা, শোন, তোমার একটি ভাই হয়েছে! শুনছ? ভাই! ভারি সুন্দর নীল দুটি চোখ ওর, বুঝলে? তুমি খুশি হয়েছ তো?’ 

‘হাঁ…হাঁ!’ সেরিওজা থতমত খেয়ে উত্তর দিল। টেলিফোনটা আর কথা বলছে না। খালা চোখ মুছে নিয়ে বলল, ‘বাপের মতো নীল চোখ হয়েছে তাহলে! ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আজ সত্যি একটা শুভদিন। 

সেরিওজা এবার প্রশ্ন করল, ‘ওরা এখন বাড়ি আসবে না?’ অবাক হয়ে সে শুনল এক সপ্তাহ বা তারও বেশি মা আর খোকন নাকি হাসপাতালেই থাকবে এখন। মা’র কাছে থাকাটা ওকে অভ্যাস করাতে হবে যে। 

করোস্তেলিওভ প্রতিদিন হাসপাতালে যাতায়াত করছে। কিন্তু তাকে একদিনও নিয়ে যাচ্ছে না। মা-কে নাকি এখন সে দেখতে পারবে না। মা ওকে দু-এক কলম লিখে পাঠায়, ‘আমাদের খোকন ভারি সুন্দর হয়েছে, আর বড্ড চালাক।’ মা নাকি ওর ভালো নাম রেখেছে আলেক্সেই। এমনিতে ডাকবে লিওনিয়া বলে। মা আরো লেখে, ওখানে নাকি তার একটুও ভালো লাগছে না। বাড়িতে চলে আসতে মন চাইছে। ওদের সবার কথা কেবল ভাবছে আর সেরিওজাকে অনেক আদর পাঠিয়েছে। 

…এক সপ্তাহ এবং আরো কয়েকটা দিন কেটে গেল। তারপর একদিন করোস্তেলিওভ বাইরে বের হবার সময় বলে গেল তাকে, ‘আমি এক্ষুনি আসছি। তুমি ঠিক হয়ে থাক। তুমি আর আমি আজ তোমার মা আর বাচ্চাটাকে নিয়ে আসব।’ 

কিছুক্ষণ পর তোসিয়া খালার গাড়ি চেপে করোস্তেলিওভ ফুলের একটা বিরাট তোড়া হাতে ফিরে এল। ওরা সবাই সেই গাড়ি চেপে বড় মা যে হাসপাতালে মারা গিয়েছিল সেখানে এসে হাজির হল। ফটকের কাছেই প্রথম যে বাড়িটা, ওরা তার সামনে আসতেই হঠাৎ সে মায়ের খুশিভরা স্বর শুনতে পেল, ‘মিতিয়া! সেরিওজা!’ 

একটা খোলা জানালা দিয়ে মা ওদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে। সেরিওজাও আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল, ‘মা!’ মা আবার হাত নেড়ে জানালা থেকে চট করে সরে গেল। করোস্তেলিওভ বলল, ‘আর দু-এক মিনিটের মধ্যেই ওরা বেরিয়ে আসবে।’ কিন্তু কোথায় দু-এক মিনিট, মা আসতে এত দেরি করছে কেন? ওরা রাস্তা ধরে পায়চারি করল কতক্ষণ, ক্যাঁচক্যাঁচে-করা স্প্রিং-এর দরজাটার দিকে তাকিয়ে রইল। ছোট একটা গাছের তলায় বেঞ্চে খানিকক্ষণ বসল। করোস্তেলিওভ এবার অধৈর্য হয়ে পড়ছে আর বলছে, ‘তোমার মা আসবার আগে ফুলগুলো সব ঝরেই পড়বে দেখছি।’ তোসিয়া খালা গাড়িটা গেটের বাইরে রেখে এসে বসল ওদের পাশে। তারপর বলল, ‘এরকম দেরি হয়েই থাকে। 

একটু পরে বাগানের দরজা খুলে মা বেরিয়ে এল। মায়ের কোলে দু-হাতে ধরা একটা নীল কাপড়ে জড়ানো বান্ডিল। ওরা দু-জনে এবার মায়ের দিকে ছুটে গেল। মা বলে উঠল : 

‘সাবধান, সাবধান!’ 

করোস্তেলিওভ মায়ের হাতে ফুলের তোড়াটি দিল আর মায়ের বুক থেকে সেই নীল বান্ডিলটা নিজের বুকে তুলে নিল! এবার বান্ডিলটার একদিক থেকে লেসের ঢাকনা তুলে করোস্তেলিওভ সেরিওজাকে ছোট্ট একখানি গোলাপ ফুলের মতো সুন্দর মুখ দেখাল, চোখ দুটি তার বোজা। এই তাহলে লিওনিয়া…ওর ভাই…এতক্ষণ চোখ দুটো ওর ফুলের পাপড়ির মতো বোজাই ছিল। এবার পিটপিট করে একটি চোখ একটু খুলতেই নিবিড় নীল চোখের তারা ঝিকমিক করে উঠল। ছোট মুখখানি কেমন নড়েচড়ে উঠল। করোস্তেলিওভ কোমল সুরে বলল, ‘আঃ! এই যে তুমি জেগেছ!’ তারপর ওকে আদরে জড়িয়ে ধরে ওর তুলতুলে গালে চুমু খেল। 

মা তীক্ষ্ণ স্বরে ধমকে উঠল, ‘মিতিয়া, এ কী করছ?’ 

‘কেন? আদর করব না বুঝি?’ 

‘বাচ্চাদের এতে ক্ষতি হতে পারে জান? হাসপাতালে নার্সরা মুখোশ পরে তবে ওদের কাছে আসে। মিতিয়া লক্ষ্মীটি, আর এমন করে আদর কর না!’ 

‘আচ্ছা, তাই হবে, আর করব না।’ 

বাড়ি ফিরে লিওনিয়াকে মায়ের বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হল। মা তখন ওর গায়ের ওপর থেকে সমস্ত ঢাকনা খুলে ফেলল। সেরিওজা এবার ওকে সম্পূর্ণভাবে দেখতে পাচ্ছে। মা কেন বলেছে ও দেখতে ভারি সুন্দর? ওকে কি সুন্দর বলে নাকি? ওর পেটটা কী রকম ফোলা ফোলা, হাত-পাগুলো তো ছোট ছোট, মানুষের হাত-পা বলে মনেই হয় না। আর ঐ ক্ষুদে হাত-পা অকারণে ও কেবল নাড়ছেই দেখ। ঘাড় তো দেখাই যায় না। মা আবার বলে, খুব নাকি চালাক ও। কিন্তু চালাকির কোনো চিহ্নই নেই কোথাও। দাঁতহীন মুখ হাঁ করে ও এবার ক্ষীণ স্বরে একঘেয়ে কাঁদুনি শুরু করল। 

মা ওকে আদর করে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল, ‘ও আমার সোনা ছেলে, লক্ষ্মী ছেলে, খিদে পেয়েছে বুঝি? এই যে এক্ষুনি তোমাকে খেতে দেব মণি, আর কেঁদো না ধন!’ 

মা এখন আর সে রকম মোটা নেই কিন্তু। বেশ চটপট করে নড়াচড়া করছে, হেসে জোরে কথা বলছে, করোস্তেলিওভ আর পাশা খালাকে এটা-ওটা সেটা করবার জন্য আদেশ করছে। ওরাও তক্ষুনি মায়ের সব হুকুম তামিল করছে। 

লিওনিয়ার জাঙ্গিয়া ভিজে গেছে। মা এবার ভিজে জাঙ্গিয়া খুলে শুকনো জাঙ্গিয়া পরিয়ে ওকে কোলে নিয়ে নিজের জামার বোতাম খুলে ওর ছোট্ট এক ফোঁটা মুখখানি বুকের মধ্যে চেপে ধরল। লিওনিয়ার একটানা কান্না এবার আচমকা থেকে গেল। মায়ের বুকটা ও কেমন কামড়ে ধরল দুটি ছোট্ট ঠোঁট দিয়ে, তারপর লোভীর মতো এমনভাবে চুষতে শুরু করল যেন এক্ষুনি ওর দম আটকে যাবে। 

সেরিওজা মনে মনে ভাবতে লাগল, ‘উঃ! ক্ষুদে বাচ্চাটা একটা রাক্ষস একেবারে!…’ সেরিওজার চোখের দিকে তাকিয়ে করোস্তেলিওভ তার মনের কথা ঠিক বুঝতে পারল যেন। তাই নরম গলায় বলল, ‘ও তো মাত্র ন’দিনের বাচ্চা। মাত্র ন’দিন বয়স, ওর কী করবে বল?’ 

 সেরিওজা লজ্জিত ও অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিল, ‘না, না, আমি কিছু ভাবছি না তো!’ তেমনটি ও কবে হবে, সেরিওজা তো কেবল তাই ভাবছে। 

‘কয়েকদিনের মধ্যেই ও কেমন সভ্যভব্য হয়ে উঠবে দেখ। কবে সে ওকে একটু কোলে নিতে পারবে? এরকম জেলির মতো নরম আর তুলতুলে এই ক্ষুদেটার দেখাশুনা করার দায়িত্ব সে কেমন করে নেবে যদি একটু কোলেই না-নিতে পারে? মা-ও তো কত সাবধানে, কত যত্নে কোলে নিচ্ছে ওকে। 

লিওনিয়া এবার পেট ভরে খেয়ে মায়ের বিছানার একপাশে দিব্যি আরাম করে ঘুমোতে শুরু করল। বড়রা এবার খাবারঘরের টেবিলে বসে ওরই কথা কত কী আলোচনা শুরু করল। 

পাশা খালা বলল, ‘এখন একজন আয়ার দরকার। আমি একা সবদিক কেমন করে সামলাব বল?’ 

মা বলল, ‘না, আয়া দিয়ে কী হবে? আমি একাই ওর সব কাজ করব। এখন তো আমার ছুটিই আছে। তারপর না হয় আরো কিছুদিন পর ওকে নার্সারিতে রেখে যাব। ওখানে সত্যিকারের যত্ন হবে। 

সেরিওজা মায়ের কথা শুনে মনে মনে খুশিই হল। মা ঠিকই বলেছে, সেই বেশ ভালো হবে। ওকে নার্সারিতে দেওয়াই ভালো। ভিক্তরকে কেন নার্সারিতে দেওয়া হয় না, লিদা তো রাত-দিন তা নিয়ে অভিযোগ করে…সেরিওজা এবার ওদের বিছানায় উঠে লিওনিয়ার পাশটিতে চুপ করে বসল, ইচ্ছাটা বেশ ভালো করে দেখবে এবার। বাচ্চাটা এখন শান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে, হাত-পা নাড়ছে না, কাঁদছেও না। বাঃ সত্যিকারের চোখের পাতা, যদিও খুব ছোট, সবই তো ওর রয়েছে! গায়ের চামড়াটা কী নরম আর তুলতুলে, যেন মখমল। সেরিওজা এবার আর ওকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখবার লোভ সামলাতে পারল না… 

ওর গায়ে সবে একটু হাতখানি রেখেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে মা ঘরে ঢুকেই চেঁচিয়ে উঠল, ‘কী, হচ্ছে কী শুনি?’ 

সেরিওজা ভীষণ চমকে উঠে তক্ষুনি হাতটা সরিয়ে নিল… 

মা আবার ধমকে উঠল, ‘বিছানা থেকে নেমে এস দুষ্টু ছেলে! নোংরা হাতে ধরছ কেন ওকে?’ 

সেরিওজা বিছানা থেকে সভয়ে নামতে নামতে বলল, ‘না, নোংরা নয় তো! পরিষ্কার।’ মা এবার বলল, ‘শোন সেরিওজা, ওকে এখন কিছুদিন তুমি একটুও ধরবে না, কেমন? এখনও তো বড্ড ছোট কিনা হঠাৎ যদি তুমি ওকে ফেলে দাও? কত কী হতে পারে…আর একটা কথা, তোমার বন্ধুদেরও হঠাৎ করে এ ঘরে আর নিয়ে এস না, বুঝলে? ওদের থেকে লিওনিয়ার অসুখবিসুখ হতে পারে…এস, আমরা এবার বাইরে যাই,’ মা একটু যেন আদর ঢেলেই কথাগুলো বলল, স্বরটা দৃঢ় কিন্তু। 

সেরিওজা চলল মা-র পেছন পেছন। আনমনে সে ভাবছিল, এমনটি তো হবার কথা ছিল না। মা আবার ঘরে ঢুকে জানালার ওপর একটা চাদর টাঙিয়ে দিল যাতে রোদের ঝলক এসে বাচ্চাটার গায়ে না লাগে। তারপর ঘর থেকে বের হয়ে আস্তে দরজাটা ভেজিয়ে দিল… 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *