শেষ অশুভ সংকেত – ৬

ছয়

ঝুঁকে নিচু হয়ে বিমানবালা জানাল এবার সিট-বেল্ট খোলা যেতে পারে। মুখ তুলে চেয়ে ডীন একটা মার্টিনির অর্ডার দিয়ে আবার আয়েশ করে গদি আঁটা সিটে হেলান দিল। আড়চোখে দেখল পাশে বসা ডেমিয়েন গভীর মনোযোগ দিয়ে একটা নভেল পড়ছে।

ব্রিফকেসটা কাছে টেনে নিয়ে নিজের সৌভাগ্যের কথাটাই নতুন করে ভাবতে বসল ডীন। জীবন সংগ্রামে আজ পর্যন্ত অনেক উন্নতি করেছে সে। থর্ন-এর নিজস্ব লাক্সারি প্লেনে আমেরিকা থেকে লণ্ডন যাচ্ছে। ব্যবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন তারা ইতিমধ্যেই স্ট্র্যাণ্ড-এর স্যাভয়ে পৌঁছে গেছে।

বিমানবালার ট্রে থেকে মার্টিনির গ্লাস নিয়ে একটা চুমুক দিল ডীন। ঠিক তার পছন্দসই হয়েছে।

নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে ডীন। নিজের দোষ-গুণ সে জানে। আর এই জানাটাই তার একটা বিরাট সম্বল। সবাইকে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মানুষের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় সে আশ্চর্য হয়। কিন্তু যে-কোন ব্যবসার ব্যালেন্স শিট সে চট করে তৈরি করে দিতে পারে। ব্যবসার ক্ষেত্রে তার জুড়ি নেই— এক নজরেই সে বলে দিতে পারে কোথায় লাভের সম্ভাবনা রয়েছে আর কোথায় গোলমাল বাধতে পারে

এই গুণটাই আট বছর আগে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে নিজের স্থান করে নিতে সাহায্য করেছে।

এখনও পল বুহেরের সাথে প্রথম সাক্ষাতের প্রতিটি কথা তার স্পষ্ট মনে আছে। তাকে নিমন্ত্রণ করেছিল বুহের। একরাশ কৌতূহল নিয়ে সেদিন রেস্টুরেন্টে হাজির হয়েছিল ডীন।

সোজা কাজের কথায় চলে এল বুহের। ডীনর প্রশিক্ষণ ধারা দেখে থর্ন কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা মুগ্ধ হয়েছে। তার ফাইলটা বুহেরও দেখেছে এবং এত ইমপ্রেসড হয়েছে যে থর্ন কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট হয়েও সে নিজেই প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছে।

এই অপ্রত্যাশিত সম্মানে খুশি হল ডীন। বুহের-এর ব্যবহারে সে শুরু থেকেই মোহিত হয়েছে। খাবার সার্ভ করার আগেই তার প্রস্তাবে সম্মত হয়ে গেল ডীন পল বুহের সম্পর্কে অনেক কথাই সে শুনেছে। লেগে থেকে শেষ পর্যন্ত থর্ন ইণ্ডাস্ট্রি বাড়িয়ে সার আর সোয়ার ব্যবসায় হাত দিতে রাজি করেছিল বলেই আজ থর্ন ইণ্ডাস্ট্রি ফুলে ফেঁপে থর্ন কর্পোরেশনে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্বের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ যার হাতে থাকবে নিঃসন্দেহে তার পকেটই সবচেয়ে ভারি হবে—কাথাটা বুহেরই প্রথম বুঝেছিল। তার মতে, সমৃদ্ধির সবচেয়ে সহজ পথ…দুর্ভিক্ষ।’

একমাসের মধ্যেই হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল ছেড়ে থর্ন কর্পোরেশনে যোগ দিয়েছিল ডীন। কাজে লাগার দু’সপ্তাহ পর থেকেই ডীনকে মনের মত করে গড়ে তোলায় মনোযোগ দিল বুহের। নিজের নিরিবিলি বাগান-বাড়িতে সে একটা পার্টির ব্যবস্থা করল। সপ্তাহ শেষে ছুটির দুটো দিন আমোদ-প্রমোদে কাটানোর প্রোগ্রাম। ডীনের স্ত্রী বারবারা কিছুদিনের জন্যে বাপের বাড়ি বেড়াতে গেছে। শহরে চাকরিজীবী মানুষের রক্ষিতা রেখে গোপনে উচ্ছৃঙ্খল জীবন উপভোগ করার এটাই উপযুক্ত সময়।

ডীনকে যার সাথে ভিড়িয়ে দিল বুহের তার নাম আয়শা। মেয়েটা আধা ভেনিজুয়েলান আধা ক্রিওল। সারা জীবন কলেজের দেয়ালের নিরাপত্তায় কাটিয়েছে ডীন। আয়শার মত মেয়ের সাথে মেলামেশার সুযোগ তার হয়নি।

ওর প্রবল যৌন ক্ষুধার নমুনায় একটা হোঁচট খেয়েছে ডীন। এমন প্ৰচণ্ড যৌনতা ডীনের কাছে কল্পনাতীত ছিল। কিছুদিন আগেও এসব সে অশ্লীল আর বিকৃত মানসিকতা বলে মনে করত। বেশ কিছু শারীরিক নির্যাতনও এর একটা অঙ্গ।

দ্বিতীয় রাতের পর বাইবেল বের করল মেয়েটা। প্রথমে ডীন ভেবেছিল বুঝি আর একটা অদ্ভুত খেলা শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই তার ভুল ভাঙল। বাইবেলে পাতা থেকে পড়ে গূঢ় অর্থ ব্যাখ্যা করল আয়শা। ডীনের দেহ-মন ড্রাগে আচ্ছন্ন। আগে থেকেই ওকে এর জন্যে তৈরি করে নিয়েছে মেয়েটা। তাই ব্যাখ্যা ‘হজেই বুঝতে পারল সে। আয়শার পদ্ধতি ছিল একেবারে নিখুঁত। ডীন যখন জানাল ডেমিয়েন থর্ন আসলে কে, তার অনেক আগেই সে নিজেকে তার চরণে বিকিয়ে দিয়েছে।

সেদিনের পর থেকেই ডেমিয়েনের বিশ্বস্ত শিষ্যে পরিণত হয়েছে ডীন। দরকার হলে ডেমিয়েনের জন্যে খুশি মনে প্রাণ বিসর্জন দিতেও সে রাজি। স্ত্রী বারবারার কাছে কিছুই লুকায় না ডীন, কিন্তু এই ব্যাপারটা তার কাছেও গোপন রেখেছে সে।

হাত বাড়িয়ে ব্রিফকেসটার ভিতর থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে নিয়ে ওটা পাশে নামিয়ে রাখল ডীন।

‘সোভিয়েত ইউনিয়ন টন প্রতি পঞ্চাশ ডলারে মিশরকে সোয়াবীন সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদের লোন—সাড়ে সাত পারসেন্ট সুদ,’ মেলে ধরা কাগজটা থেকে পড়ে শোনাল ডীন। আমাদের অফার থেকেও আট ডলার কমে দিচ্ছে ওরা। কানাডা অফার করেছে পঁচানব্বই ডলারে; কর্ণ, বিরাশি ডলারে—কিন্তু এই দামে দিয়ে ওরা পোষাতে পারবে না।’

‘আমাদের গুদামে কি পরিমাণ সোয়া মজুদ আছে?’ বই থেকে মুখ না তুলেই প্রশ্ন করল ডেমিয়েন।

আনুমানিক মোট পনেরো কোটি টন।’

‘ঠিক আছে, ওদের যা দরকার, টন প্রতি তিরিশ ডলার ছেড়ে দাও। দশ বছর মেয়াদী ঋণ, পাঁচ পারসেন্ট সুদ,’ বই থেকে মুখ তুলে হাসল ডেমিয়েন। ‘এতে আগামী দশ বছরের জন্য সরকার আমাদের কেনা হয়ে থাকবে।’ নিজের প্যাডে নোট করছে ডীন। ডেমিয়েন বলে চলল, ‘প্রেসিডেন্ট এন. এল. এফ-এর রিপোর্টের জন্যে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমি চাই না সময় পেরিয়ে যাওয়ার আগে ওটা তার হাতে পৌছাক। ইহুদিদের ওপর দোষ চাপাতে হলে আমাদের কতদিন সময় দরকার?’

‘তেল আবিবে আমাদের লোক আছে-শ্রোয়ডার,’ জবাব দিল ডীন। ‘ইসরাইলী ক্যাবিনেটের আণ্ডার সেক্রেটারি। গত রাতে বুহের তার সাথে যোগাযোগ করেছিল। সে জানিয়েছে দলিলপত্র জাল করে এমন অবস্থা করবে যে কারও অস্বীকার করার উপায় থাকবে না।’

আড়চোখে একবার ডীনের দিকে চাইল ডেমিয়েন। ‘এতে আমাদের হাত আছে তা কেউ টের পাবে না তো?’

‘পল বুহের নিশ্চয়তা দিয়েছে-পাবে না।’ দায়িত্বটা আর একজনের ঘাড়ে চাপাতে পেরে একটু নিশ্চিন্ত হল ডীন।

‘ভাল কথা। কতদিন লাগবে?’

‘বড় জোর দু’ইণ্ডা।

‘চমৎকার।’

কোলের ওপর রাখা বইয়ে মনোযোগ দিল ডেমিয়েন। কাগজ গুছানোয় ব্যস্ত হল ডীন। ডেমিয়েন আবার মুখ তুলে চাইল।

‘বারবারা কবে আসছে?’

‘এক সপ্তাহের মধ্যেই লণ্ডনে পৌঁছে যাবে সে। জাহাজে পাঁচ দিন লাগবে। প্লেনেই ওকে আনতে চেয়েছিলাম আমি—কিন্তু আকাশে ওড়ার পথেই বাচ্চা হওয়ার ভয়ে রাজি হয়নি ও।

হাসল ডেমিয়েন। ডীনও হেসে ফাইনানশিয়াল রিপোর্টটায় চোখ রাখল। বাকি পথটা ওর নীরবে আপনমনেই কাটল।

লাউড স্পীকারে ক্যাপ্টেন জানাল লণ্ডনের আকাশে মোটেও মেঘ নেই আজ—যাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। চিরাচরিত গোমড়া মুখ পাল্টে ঝলমলে চেহারায় লণ্ডন ওদের স্বাগত জানাচ্ছে। থর্নের জেটটা যখন লণ্ডনের হীথরো এয়ারপোর্টের আকাশে চক্কর কাটছে সুবিয়াকোতে ফাদার ডি কার্লো তখন তাঁর অনুচরদের একসাথে জড় করতে ব্যস্ত।

সার বেঁধে একে একে সবাই মনাস্টেরির নিচে অন্ধকার ছোট ঘরটায় প্রবেশ করল। শেষ ব্যক্তি ঢোকার পর ফাদার ডি কার্লো হাতদুটো উপরে তুললেন। ওরা বৃত্তাকারে ডি কার্লোকে ঘিরে হাঁটু গেড়ে বসল। বেদীর ওপর রাখা বিশাল বাইলেটা তুলে পাতা উল্টে বুক অভ রেভিলেশন’ থেকে পড়তে শুরু করলেন।

তখন আকাশে এক মহান দৃশ্য দেখা দেবে; সূর্য রশ্মির পোশাক পরা আসন্ন প্রসবা গর্ভবতী নারীর পায়ের কাছে চাঁদ আর মাথায় বারো তারার মুকুট। আর এক আশ্চর্য দৃশ্য ওই সাথে দেখা যাবে; ভয়াবহ বিকট চেহারার লাল ড্রাগন। তার সাত মাথা আর দশ শিঙ। মাথায় আছে সাতটা মুকুট। লম্বা লেজটা আকাশের এক তৃতীয়াংশ তারা ঘুরে পৃথিবী পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। স্বর্গীয় নারীর সামনে বসে আছে ড্রাগন। সন্তান ভূমিষ্ট হলেই তাকে ছিঁড়েকুরে খেয়ে ফেলার অপেক্ষায় আছে সে। এক পুরুষ সন্তানের জন্ম দেবে ওই নারী যে সারা পৃথিবী শাসন করবে শক্ত হাতে। সন্তানটির ওপর থাকবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ। নির্জনে ঈশ্বরের পূর্বনির্বাচিত স্থানে পালিয়ে আশ্রয় নেবে মেয়েটি… ‘

মাথা হেঁট করে নীরবে প্রার্থনা সেরে মুখ তুলে চাইলেন ফাদার ডি কার্লো সবাই সমস্বরে সাড়া দিলঃ এমেন।

বেদির ওপর ক্রুশবিদ্ধ প্রভু যীশুর পায়ের কাছে রাখা চামড়ার থালেটা হাতে নিয়ে এবার নিজেও ক্রুশের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেন ডি কার্লো।

‘হে ত্রাণকর্তা যীশু,’ নিচু গলায় প্রার্থনা করলেন প্রৌঢ় ধর্মযাজক। ‘তোমারই বিশ্বস্ত ভক্ত ফাদার স্পিল্লেট্টো মৃত্যুর আগে ঈশ্বর বিরোধী শয়তানের পরিচয় আমাদের জানিয়ে গেছেন। হে প্রভু, শক্তি দাও, পথ দেখাও আমরা যেন অশুভ ডেমিয়েন থর্নের ধ্বংস সাধন করে তোমার প্রত্যাবর্তন নির্বিঘ্ন করতে পারি।’

থলেসুদ্ধ ছুরিগুলো দু’হাতে উঁচু করে ধরলেন ফাদার।

‘মেগ্যাইডোর এই সাতটি মন্ত্রঃপুত অস্ত্র তোমার ইচ্ছাতেই ঘুরে ফিরে আমাদের হাতে পৌঁছেছে। আশীর্বাদ কর, প্রভু, ‘আলোর দূত’কে শিশু অবস্থায় যে হত্যা করতে চায়, সেই ‘অন্ধকারের যুবরাজ ‘কে যেন এই ছুরি সমূলে বিনাশ করতে পারে।’

সন্ন্যাসীরা সমস্বরে বলে উঠল, ‘এমেন।’

ধীর ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে ফিরলেন ফাদার ডি কার্লো।

একে একে নাম ডাকছি আমি, প্রভুর নামে এগিয়ে এসে অস্ত্রধারণ কর।

‘ব্রাদার মার্টিন।’

ছোটখাট একজন উঠে দাঁড়াল। মাথায় টাক-চোখ দুটো অস্বাভাবিক রকম উজ্জ্বল। আগে বেড়ে হাত পেতে ফাদার ডি কার্লোর কাছ থেকে একটা ছুরি নিয়ে শক্ত মুঠোয় ধরে ধীর পায়ে পিছিয়ে নিজের জায়গায় ফিরে এল সে।

‘ব্রাদার পাওলো…’ কালো ধর্মযাজক ছুরি নিয়ে তার জায়গায় ফিরল।

‘ব্রাদার সায়মন…’ সবচেয়ে কমবয়সী; ছেলেমানুষ ভাবটা এখনও পুরোপুরি কাটেনি।

‘ব্রাদার অ্যান্টোনিয়ো…’ শক্ত কাঠামোর মানুষ, চুলে আর দাড়িতে কিছুটা পাক ধরেছে।

‘ব্রাদার ম্যাটিয়াস…’ শান্ত চোহারা, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি।

‘ব্রাদার বেনিটো…’ তরুণ বয়স, কিন্তু দেখে মনে হয় গোটা পৃথিবীর সমস্যা চেপে বসেছে ওর কাঁধে।

আর মাত্র একটা ড্যাগার বাকি। ফাদার ডি কার্লো ওটা হাতে নিয়ে একে একে সবাইকে দেখে নিলেন।

‘মনাস্টেরি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার আগে আমাদের প্রত্যেককে আলাদা ভাবে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে।’

এক এক করে বেরিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া পাথরের সিঁড়ি বেয়ে নিজের কামরার দিকে এগোল ওরা। কয়েদখানার মত ছোট ছোট ঘর। পাথরের চার দেয়ালের ভিতর একটা চৌকি, একটা ছোট টেবিল আর একটা মাটির কলস। কামরায় ঢুকে প্রত্যেকেই বিছানার পাশে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনায় বসল। একাগ্রতায় বুজে গেছে চোখ—ছুরিটা ক্রুশের মত বুকের কাছে শক্ত মুঠোয় ধরা।

নিচে মাটির তলায় নির্জন ঘরটাতে সবার জন্য প্রার্থনা করছেন ফাদার ডি কার্লো।

‘যে পবিত্র কাজ হাতে নিয়েছি তা সফল ভাবে সমাপ্ত করতে প্রাণ দিতেও পিছপা হব না আমরা। অকস্মাৎ মৃত্যুতে যদি সুযোগ না পাই তাই আমাদের কৃত পাপের জন্যে তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, প্রভু, আমাদের তুমি ক্ষমা কর…

উপরে প্রার্থনারত প্রত্যেকে একই সাথে শিউরে উঠে ছুরিটা আরও শক্ত করে বুকের কাছে আঁকড়ে ধরল।

‘সবার প্রথমে আমরা তোমার আশীর্বাদ চাই, হে ঈশ্বর। শয়াতন আর তার ছেলের বিরুদ্ধে লড়বার মত শক্তি আর সাহস তুমি আমাদের দাও।

‘প্রভু যীশুর প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় আমরা শত শত বছর অপেক্ষা করেছি। সেই দিন আজ আসন্ন, স্বর্গীয় চিহ্নের ভিতর দিয়ে তুমি তা জানিয়েছ। শিশু যীশুর আবির্ভাবের আগেই শয়তানের বিনাশ একান্ত প্রয়োজন, অথচ আমাদের হাতে সময় খুব কম।’

চোখ খুলে উপর দিকে চাইলেন ধর্মযাজক। দিব্যচোখে ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

‘ভায়েরা আমার, তোমরা ভুলো না এই সাতটা ছুরিই কেবল শয়াতনকে ধ্বংস করতে পারে।’

উঠে দাঁড়ালেন ফাদার। ক্রুশের দিকে চেয়ে রবার্ট থর্নের কথা তাঁর মনে পড়ল। শয়তানের সন্তানকে জায়গা করে দেয়ার জন্য পাথরের আঘাতে তার ছেলের মাথা থেঁতলে ফেলা হয়েছিল। আপন সন্তানের পরিবর্তে সেদিন তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল শিয়ালের গর্ভজাত শয়তানের বাচ্চা। তাঁর মনে আছে ফাদার স্পিল্লেট্টো ‘কনফেশনে’ স্বীকার করেছিল সব কথা—তখন তিনি নবীন শিক্ষার্থী ধর্মযাজক। সেসব কথা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।

থর্নের আত্মার শান্তি কামনা করে ছোট একটা প্রার্থনা করলেন ডি কার্লো। থর্নের স্ত্রী, তার দ্বিতীয় সন্তান এবং আরও অনেক মানুষকেই ওই অপবিত্র শয়তান হত্যা করেছে। যাকেই সে পথের কাঁটা মনে করেছে তাকেই নিষ্ঠুর হাতে শেষ করেছে। শেষ পর্যন্ত ওই ছেলেকে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে থর্নকেও মরতে হল।

এর পরে তার ভাই রিচার্ড না জেনে নিজের ছেলের মত তাকে পেলে বড় করেছিল-কিন্তু ডেমিয়েন সাবালক হওয়ার পরই রিচার্ড আর তার স্ত্রী অ্যানকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হল।

অনেক নিষ্পাপ মানুষকেই শয়তানের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। কিন্তু আর নয়। এবারে বিফল হওয়া চলবে না। গোটা পৃথিবীর ভাগ্য নির্ভর করছে ওই সাতজনের ওপর। একজন প্রীস্ট আর ছয়জন মঙ্ক। এরা সবাই নীতিগত ভাবে শান্তির প্রতীক। সংযম, ধ্যান, সহিষ্ণুতা আর ন্যায্য সমাধানে এরা দীক্ষিত। কিন্তু তাদের সামনে এক কঠিন পরীক্ষা উপস্থিত। স্বভাব-বিরুদ্ধ একটা প্রচণ্ড নিষ্ঠুর কাজ করার দায়িত্ব আজ ওদের ওপর পড়েছে। বাইবেলের বদলে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হবে।

এমন একটা গুরু দায়িত্ব তাঁর ওপর আসতে পারে একথা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। ঈশ্বরের গুণগান গেয়ে আর তাঁর শান্তির বাণী প্রচার করেই জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন। তবু তিনি নিজে অনেক ভাগ্যবান। পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরে অনেক দেখেছেন, অনেক জেনেছেন, প্রচুর অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে— কিন্তু আর সবাই…

আলাদা করে প্রত্যেকের কথা ভেবে জলে ভরে উঠল তাঁর চোখ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *