শেষ অশুভ সংকেত – ১৬

ষোলো

বান্ধবী ক্যারলের সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর থেকে নিজের ছেলের ব্যাপারে এখন অতি মাত্রায় সাবধানী হয়েছে বারবারা। প্রামটাকে গ্যারাজে নির্বাসন দিয়েছে। সর্বক্ষণ ছেলেটাকে কোলে নিয়েই ঘোরে।

ইদানীং বাচ্চাদের অনেক রকম দুর্ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে।

বাচ্চাকে খাইয়ে নিজেদের ডিনার সেরে টেলিভিশন ছেড়ে বসল বারবারা। কেট রেনল্ডসের ‘ওয়ার্ল্ড ইন ফোকাসে’ বাচ্চাদের ওপর কি যেন একটা বিশেষ প্রোগ্রাম দেখানোর কথা আছে।

‘গুড ইভনিঙ,’ হাসি মুখে স্ক্রীন থেকে ওদের দিকে চেয়ে বলল কেট। ‘আজ প্রথমেই সপ্তাহ জুড়ে যে অদ্ভুত রহস্য পুলিশ এবং ডাক্তারদের বিভ্রান্ত করছে সে বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধানের ফলাফল আপনাদের সামনে পেশ করব…’

টেলিভিশন বন্ধ করার জন্যে উঠল হারভি।

…কয়েক ডজন পুরুষ শিশুর রহস্যময় মৃত্যু…

সুইচের দিকে হাত বাড়াল হারভি ডীন।

‘বন্ধ কর না!’ চেঁচিয়ে উঠল বারবারা। আমি দেখব।’ বারবারা খেয়াল করেছে ওই কেট মেয়েটাকে কেন যেন সহ্য করতে পারে না ডীন!

‘…মৃত্যুগুলোর কারণ আর পরিবেশ পরীক্ষা এবং অনুসন্ধান করে করোনাররা (coroner) ওগুলোকে দুঃখজনক দুর্ঘটনা বলেই আখ্যায়িত করেছেন।’

‘বসো, হারভি,’ অনুরোধ করল বারবারা। ‘তোমার জন্যে আমি দেখতে পাচ্ছি না।’ সরে গিয়ে নিজের মদের গ্লাসটা তুলে নিয়ে চুমুক দিল হারভি।

‘শুধু গ্রেটার লণ্ডনেই,’ বলে চলল কেট। ‘গত সাত দিনে সাতটা ছেলে মারা গেছে। অন্যান্য এলাকার মধ্যে বারমিংহামে ছয়জন, লিভারপুলে তিনজন, ম্যানচেস্টারে চার, লীডসে দুই আর গ্লাসগোতে আটজন মারা গেছে।‘

মুখ বিকৃত করে স্ক্রীনের দিকে চেয়ে রয়েছে বারবারা।

‘সংখ্যাগুলো শুনতে বেশি মনে না হলেও সারা দেশে এর ফলে শতকরা শিশু মৃত্যুর হার পনেরো ভাগ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত সব তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি যা থেকে পরিষ্কার কোন ছবি পাওয়া যায়, কিন্তু একটা ব্যাপার অবশ্যই লক্ষণীয়, যেসব শিশু মারা গেছে তারা প্রত্যেকেই ছিল পুরুষ।

আড়ষ্ট হল বারবারা। গলার ভিতর শ্বাসটা যেন আটকে গেছে। মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ করে ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সে। স্ত্রীর আঁতকে ওঠার শব্দ শুনে ফিরে চাইল ডীন। ওর অবস্থা দেখে বলতে ইচ্ছে করছেঃ আমিই সব কিছুর চার্জে আছি, আমাদের খোকার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু লাভ নেই-বললেও বিশ্বাস করবে না বারবারা। টেলিভিশনের দিকে মুখ ফেরাল ডীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রকে ক্যামেরার সামনে হাজির করল কেট

‘ডক্টর ফিলমোর,’ বলল সে। ‘এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে আপনার কি বক্তব্য?’ লোকটা অস্বস্তিভরে নিজের আসনেই একটু নড়েচড়ে বসে কাঁধ ঝাঁকাল। ‘আসলে এ ব্যাপারে এত শীঘ্র জোর দিয়ে কিছু বলা…’

সামনে ঝুঁকে ওকে বাধা দিয়ে কেট বলল, ‘কিন্তু আপনি কি স্বীকার করছেন যে গত সপ্তাহে বাচ্চা ছেলেদের মৃত্যুর হার অপ্রত্যাশিত রকম চড়া?’

‘একটা বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে বটে, কিন্তু এটা তেমন কিছু বেশি নয়। একটা ফু এপিডেমিকেও মৃত্যুর হার এর চেয়ে বেশি হয়।

কেট-এর দিকে ফিরল ক্যামেরা। ওর চেহারায় ঘৃণার ভাব ফুটে উঠেছে।

‘এপিডেমিকের ব্যাপারে আলোচনা করছি না আমরা, তীব্র প্রতিবাদ করল সে। ‘আমরা আলাপ করছি…’ একটা একটা করে আঙুল বের করে গুনে চলল…’পানিতে ডুবে মরা, আগুনে পোড়া, সড়ক দুর্ঘটনা, শ্বাস বন্ধ হয়ে মরা, বিষাক্ত খাবার, বৈদ্যুতিক শক…’ একটু থামল কেট। মাত্র দশ মিনিট আগে পড়া স্ক্রিপ্টটা মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই সুযোগে বলতে আরম্ভ করল ফিলমোর।

‘কথাটা একটু শক্ত হলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি,’ বলল সে। ‘কিন্তু এই ধরনের ভয়ঙ্কর রিপোর্টিং বিবিসির জন্য অসম্মানজনক আর জনগণের জন্য ভীতিপ্রদ 1 একটা খবর খাড়া করার উদ্দেশ্যে সত্যকে বিকৃতি করে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পরিবেশন করা চরম দায়িত্বহীনতার নিদর্শন। যে-কোন সস্তা দরের সাপ্তাহিক কাগজও এমন একটা খবর ছাপার আগে দু’বার চিন্তা করবে।

আবার কেট-এর ওপর ফোকাস করা হল ক্যামেরা। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ওর চেহারা। মুখ দিয়ে কথা সরছে না।

.

নিজের প্রতি বিরক্তি নিয়েই বাড়ি ফিরল কেট। সাধারণত পাশের ফ্ল্যাট থেকে পিটারকে ডেকে নেয়, কিন্তু আজ রাত হয়েছে ফিরতে, এতক্ষণে পিটার নিজের বিছানায় ঘুমাতে চলে গেছে। গাড়ি পার্ক করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চাবি বের করার জন্যে হ্যাণ্ডব্যাগ খুলল সে।

‘মিস রেনল্ডস।’

ভারি গলার স্বরে চমকে উঠল সে। ঘুরে দেখল একজন প্রীস্ট দাঁড়িয়ে।

‘তোমার সাথে আমার বিশেষ জরুরি কথা আছে, রেনল্ডস…’

বিরক্তি প্রকাশ করে শ্বাস ছাড়ল কেট। নিশ্চয়ই ফোন গাইড থেকে নাম জোগাড় করেছে লোকটা। টেলিভিশন প্রোগ্রাম করে খুব পরিচিত হয়ে উঠছে—এবার টেলিফোন গাইড থেকে নাম কাটিয়ে নিতে হবে-নইলে যে কেউ রাস্তা থেকে উঠে এসে আলাপ করতে চাইবে।

‘….তোমার প্রোগ্রামের ব্যাপারে।

‘একজনের একক প্রতিবাদ মিছিল,’ শ্লেষের সাথে বলল সে।

ঠিক বিপরীত,’ বললেন ফাদার ডি কার্লো। ‘আমি তোমাকে অভিনন্দন জানাতে এসেছি।

দরজায় হেলান দিয়ে চাবিটা বের করল কেট।

‘বেশ ভাল কথা। আর কিছু?’ কেট খেয়াল করল লোকটা আগাগোড়া রাস্তার ওপর নজর রাখছে। এর পরে কি আসবে কে জানে?

‘আমরা ভিতরে বসে এটু কথা বলতে পারি?’

মাথা নাড়ল কেট। ‘দুঃখিত…’

‘আমার নাম ফাদার ডি কার্লো। আমি একজন প্রীস্ট।’

‘আমি অত্যন্ত ক্লান্ত, ফাদার,’ সতর্কতার সাথে বলল কেট। ‘সারাটা দিন ঝামেলায় কেটেছে। আপনি স্টুডিওতে আমার সেক্রেটারিকে ফোন করে একটা অ্যাপয়েন্ট…

‘ব্যাপারটা খুবই জরুরি, মিস রেনল্ডস।’

ভাল করে লোকটার চেহারা খুঁটিয়ে দেখল কেট। দেখে তো খারাপ লোক মনে হয় না, ভাবল সে। নিষ্ঠাবান লোক বলেই মনে হয়। যা বলার আছে সেটা না বলা পর্যন্ত ওর শাস্তি হবে না।

দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে সরে দাঁড়িয়ে লোকটাকে ভিতরে আসতে বলল। ‘নিচু স্বরে কথা বলতে হবে,’ বলল সে। ‘আমার ছেলে ঘুমাচ্ছে।’

ভদ্রলোককে বসার ঘরে নিয়ে বসাল কেট। ঘরের অবস্থা সাধারণত যা থাকে তেমনি অগোছাল। কাগজপত্র, ফাইল, বই, সব সারা ঘরময় ছিটানো রয়েছে। কেট নিজেও একটা চেয়ারে বসে প্রশ্ন করতে যাবে এই সময়ে উপর দিকে চেয়ে বাইবেল থেকে একটা কোটেশন বলতে আরম্ভ করলেন ডি কার্লো।

“লোক পাঠিয়ে হেরড বেথলেহেমের সব শিশুকে হত্যা করল। জ্ঞানী লোকের মারফত যীশুর জন্মের সময় সম্পর্কে আগেই জেনেছিল সে।”

ককিয়ে উঠল কেট। ‘এইসব ধর্মকথা…’

ফাদার ডি কার্লো হাত তুলে ওকে শান্ত করে বলে চললেন, ‘তুমি তোমার প্রোগ্রামে উল্লেখ করেছ যে পুরুষ শিশুরাই কেবল মারা পড়েছে।‘

মাথা ঝাকাল কেট।

আরও একটা ব্যাপারে অদ্ভুত একটা মিল রয়েছে, রেনল্ডস। প্রত্যেকটা শিশুই চব্বিশে মার্চের রাত বারোটা থেকে ভোর ছ’টার মধ্যে জন্ম নিয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে যাদের জন্ম ইতিমধ্যেই মৃত্যু না হয়ে থাকলে তাদেরও বধ করা হবে।

‘বধ করা হবে?’ চমকে উঠল কেট। আপনি কি ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে ওই সব শিশুকে হত্যা করা হয়েছে?’

‘ইঙ্গিত দিচ্ছি না, যা সত্যি তাই বলছি।’

‘কার মাথা খারাপ হয়েছে যে এমন একটা কাজ করতে যাবে?’

একটু সামনে ঝুঁকে এলেন ডি কার্লো। তাঁর ভিতরকার চাপা উত্তেজনা টের পাচ্ছে কেট। হাত দুটো কাঁপছে, চোখ দুটো উজ্জ্বল, মনে হয় যেন গত একমাস ঘুম হয়নি তাঁর। এবার ভয় পেল কেট। হয়ত লোকটা উন্মাদ।

‘আবার জন্ম হয়েছে তাঁর, মিস রেনল্ডস। শয়তানের পুত্র পাপ-পুরুষও রেভিলেশনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীতে বিরাজ করছে।’

‘আমি দুঃখিত, ফাদার,’ বলে উঠে দাঁড়াল কেট। ‘যার যার ধর্ম তার তার কাছে-আমি ওসবে বিশ্বাস করি না।’ এই পাগল লোকটাকে ঘরে ঢুকতে দেয়াই তার ঠিক হয়নি।

‘তুমি কি খ্রিস্টান নও?’

‘আমি প্রথমে সাংবাদিক—পরে খ্রিস্টান,’ জবাব দিল সে। ‘আর সাংবাদিকদের ধর্ম হচ্ছে অবিশ্বাস। নিজের চোখে দেখা প্রমাণ ছাড়া আমি কিছুই বিশ্বাস করি না।

এই কথায় প্রীস্টকে আর একটা সুযোগ করে দেয়া হল, কথাটা বলার পরে এটা বুঝল কেট। ব্রিফকেস খুলে এক গাদা কাগজ কেট-এর হাতে ধরিয়ে দিলেন ডি কার্লো।

‘এই যে তোমার প্রমাণ। নিজেই চেক করে দেখ।’

অনিচ্ছাসত্ত্বেও কাগজগুলো নিয়ে টেবিলের ওপর বিছাল সে। কতগুলো বার্থ সার্টিফিকেট। নামগুলো চিনতে পেরে তার আগ্রহ বাড়ল।

‘এগুলো সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সংগ্রহ করেছি আমি,’ ব্যাখ্যা দিলেন ফাদার।

চোখ তুলে চেয়ে তাঁকে এগিয়ে যাবার সুযোগ দিল কেট।

‘ধর্মে বিশ্বাস না থাকলেও এটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবে যে একই তারিখে যাদের জন্ম কেবল তারাই যখন মরছে-এটা একটা বিশেষ শিশুকে হত্যার উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে?’

কেমন যেন একটা খটকা লাগছে তার। কিন্তু খুন—বিশ্বাস হয় না। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা বলছে ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখা দরকার।

‘আর এই পাপ-পুরুষটা কে?’ প্রশ্ন করল সে।

‘আমেরিকান অ্যামব্যাসেডর, ডেমিয়েন থর্ন।’

ওঁর দিকে চেয়ে খিকখিক করে হাসি চাপার চেষ্টা করল কেট।

‘ডেমিয়েন,’ নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে বলল সে। কারও কথায় তার মুখের ওপর হাসাটা চরম অভদ্রতা—তার উপর ইনি আবার একজন সিরিয়াস লোক-খ্রীষ্ট। কিন্তু ডেমিয়েনকে তো আমি চিনি।’

‘উপর থেকে মানুষটাকে তুমি চেনো,’ বললেন ডি কার্লো। কিন্তু তার আত্মার খবর জানো না।’ সামনে ঝুঁকে কেট-এর হাত ধরলেন তিনি। ‘মিস রেনল্ডস, ‘ যেন ছোট বাচ্চাকে বোঝাচ্ছেন এইভাবে বললেন, ‘আমি একজন ধার্মিক লোক, ধর্মান্ধ নই। আমার ধর্মের দশটা আদেশের মধ্যে একটা হচ্ছে আমরা কখনও কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেব না.. আমার মনে যদি কণামাত্রও সন্দেহ থাকত, আমি তাহলে ডেমিয়েনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতাম না। ধর্মই আমার মুখ রোধ করত।’

সম্মোহিতের মত ডি কার্লোর মুখের দিকে চেয়ে কথা শুনছে কেট। দু’জনের কেউই টের পায়নি কখন পা টিপে টিপে করিডোর দিয়ে এগিয়ে এসে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়েছে পিটার।

‘আমি সাতাশ বছর থর্নের ওপর নজর রেখেছি,’ বলে চললেন তিনি। ‘ওর বাবা আমাদের মনাস্টেরিতে এসেছিল সাহায্যের আশায়। ওকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সে–কিন্তু পারেনি। ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠেছে ডেমিয়েন—চলার পথে যারাই তার পথের কাঁটা হয়েছে সবাইকে সে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।’

দরজাটা সামান্য ফাঁক করে উঁকি দিয়ে আবার পিছনে সরে দাঁড়াল পিটার।

তুমি কেবল থর্নের বাইরেটা চেনো, মিস রেনল্ডস। উঠে দাঁড়িয়ে ব্রিফকেস থেকে একটা ফাইল বের করলেন ডি কার্লো। ‘ওর ওপর আমাদের রিসার্চের ফলাফল আমি তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি—নিজে সব পড়ে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিও। সিদ্ধান্তে পৌঁছে তুমি আমার সাথে এই ঠিকানায় যোগাযোগ কোরো…’ ফাইলের ওপর ঠিকানা লিখলেন ডি কার্লো। দিন বা রাত্রি, যত শীঘ্রি সম্ভব আমার সাথে তুমি যোগাযোগ কোরো।

ফাইলটা হাতে নিয়ে মুখ তুলে চাইল কেট। ‘এখনও আমি কোন কথা দিচ্ছি না, ফাদার,’ বলল সে। ‘আপনি বলেছেন আমি ডেমিয়েন মানুষটাকেই চিনি, আত্মা চিনি না। কিন্তু আমি যখন নিজের আত্মাকেই চিনি না অন্যেরটা চিনব কিভাবে?’

‘ঈশ্বরই কেবল তোমাকে সেই পথ দেখাতে পারেন,’ বলে হাসলেন ফাদার। মহিলার প্রাথমিক অবজ্ঞা দূর হয়েছে দেখে অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছেন। হঠাৎ তাঁর একটা কথা মনে পড়ল। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন—একটা চিহ্ন আছে যা বাইরে থেকেও দেখা সম্ভব।

‘পাপ-পুরুষকে চেনার একটা উপায়ের কথা রেভিলেশনস-এর অধ্যায়ে লেখা আছে। ডেমিয়েনের দেহেও সেটা তুমি দেখতে পাবে-তার চুলের নিচে একটা জন্ম-দাগ আছে-৬৬৬-ওটাই ইবলিসের পরিচয় চিহ্ন।

হাত বাড়িয়ে হ্যাণ্ডশেক করে কেটকে শুভরাত্রি জানালেন ডি কার্লো।

‘ঈশ্বর তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবেন,’ বলে দরজার দিকে এগোলেন ডি কার্লো। তাড়াতাড়ি নিঃশব্দে নিজের ঘরে ফিরে গেল পিটার

প্রীস্ট চলে গেলে ফাইলটা নিয়ে নিজের শোবার ঘরে চলে এল কেট। অবিশ্বাস আর কৌতূহলের মাঝে দোল খাচ্ছে ওর মন। লোকটা যা বলে গেল তা নির্ঘাৎ পাগলের প্রলাপ। তবু নিজের মনের কৌতূহল মেটাতে ফাইলটা তার পড়ে দেখতে হবে। বিছানায় শুয়ে পাতা উল্টে চলল কেট।

ইয়ুথ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ হবার খবরটার নিচে দাগ দিয়ে একটা মন্তব্য করা হয়েছে। ওগুলো পড়ার সময়ে ডেমিয়েন তরুণ সমাজকে সাহায্য করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার কাঁধে নিতে দেয়ার কথা কতখানি আবেগ দিয়ে বলেছিল মনে পড়ল তার। একটা পুরানো চলতি কথাও একই সাথে মনে পড়লঃ ছোট বাচ্চাকে আমার সাথে কয়েক বছর থাকতে দাও-চিরজীবন সে আমারই থাকবে—এই ধরনেরই একটা কিছু। পিটারের শিকারে যাওয়া আর রক্ত মাখার কথা মনে করে শিউরে উঠল সে।

টানটান হয়ে শুয়ে মাথাটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করল কেট। ধোঁকা খাওয়া একজন সাংবাদিকের জন্যে সবচেয়ে বড় অপরাধ।

ডেমিয়েন থর্ন-পাপ-পুরুষ-শয়তানের ছেলে? কিন্তু তা কি করে হয়? ওই লোকটাই তার ক্লান্তির সুযোগ নিয়ে তাকে আবোল-তাবোল বুঝিয়েছে।

সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পাশ ফিরে জামাকাপড় না ছেড়েই ঘুমিয়ে পড়ল কেট। পিটার যে কখন চুপিচুপি তার ঘরে ঢুকে ফাইলের ওপর লেখা ঠিকানাটা দেখে গেল টেরই পেল না সে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *