শেষ অশুভ সংকেত – ১৮

আঠারো

সকালে টুকরো টুকরো স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে কেটের ঘুম ভাঙল। প্রথমে সে কোথায় আছে বুঝতেই কিছুটা সময় লেগে গেল। তারপর তার মনে পড়ল পাগল প্রীস্ট আর তার উদ্ভট থিওরির কথা। নাস্তা খেতে বসে কাগজ আর ভোরবেলার খবরে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করে বিফল হল। ফাদার ডি কার্লোর কথাগুলোই ঘুরে ফিরে মনে পড়ছে বারবার।

নিজের টেবিলে বসেই এব্যাসিতে ফোন করল কেট। কি যে বলবে তা সে নিজেও জানে না। কিন্তু সমস্যাটা আপনাআপনিই মিটে গেল—ওখানে ডেমিয়েনকে পাওয়া গেল না। একটা মেসেজ রেখে ওর চিন্তা মন থেকে দূর করার চেষ্টা করল। চিঠিপত্রগুলো দেখে ডায়েরীতে লেখা অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেক করল।

কিন্তু কোন কিছুতেই মন বসছে না—মগজের ভিতরটা জাম হয়ে রয়েছে। আধঘন্টা পরে বৃথা চেষ্টা ছেড়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে ডেমিয়েন থর্নের ফাইল চাইল সে।

ছেলেবেলা থেকেই পড়া শুরু করল কেট। ডেমিয়েনের দেখাশোনা করার জন্যে রাখা ন্যানি চেসার ব্যাপারে ছোট একটা খবর রয়েছে। পেরিফোর্ডে ডেমিয়েনের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত গার্ডেন পার্টিতে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল। গলায় দড়ির ফাঁস পরে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েছিল সে। ডেমিয়েনের বয়স তখন চার। কাগজের কাটিংটা হলুদ হয়ে এসেছে। পাতা উল্টাল কেট। মিসেস ক্যাথি থর্ন, অ্যামব্যাসেডরের স্ত্রী তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়। অন্তঃসত্ত্বা ছিল সে পড়ে যাওয়ায় গর্ভপাত হয়ে বাচ্চাটা মারা যায়।

ভুরু কুঁচকে পাতা ওল্টালঃ ক্যাথি থর্নের মৃত্যু, রহস্যজনক দুর্ঘটনায় হাসপাতালের জানালা দিয়ে নিচে পড়ে তার মৃত্যু হয়।

রবার্ট থর্ন। অবশ্য এই ঘটনার কথা সে আগেই জানত। এরপরে থর্ন কোম্পানির বিস্তার সম্পর্কে কিছু তথ্য রয়েছে, তারপরেই আবার মৃত্যু। রিচার্ড থর্নের চীফ এক্সিকিউটিভ উইলিয়াম অ্যাদারটন থর্ন ম্যানশনে ছুটি কাটাতে গিয়ে ডুবে মারা যায়। ডেমিয়েনের বারোতম জন্মদিন উপলক্ষে বরফে জমাট বাঁধা নদীর ওপর আইস হকি খেলতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে। এরপরে ডেভিড প্যাসারিন, থর্ন কোম্পানির কৃষি গবেষণার চীফ গ্যাসের বিষে মারা যায়। ডেমিয়েনের স্কুলের ছাত্রদের ওই দিনই কারখানাটা ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছিল।

হঠাৎ ব্যথা পেয়ে আঙুলের দিকে চেয়ে দেখল দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বেখেয়ালে রক্ত বের করে ফেলেছে সে।

নেশায় পেয়েছে ওকে, আবার পড়ে চললঃ ডেমিয়েনের চাচাতো ভাই মার্ক তেরো বছর বয়সে মারা যায়। হঠাৎ লুটিয়ে পড়ে মৃত্যু। ময়না তদন্তে জানা যায় মগজের একটা শিরা ছিঁড়ে তার মৃত্যু হয়।

আর পড়া যায় না—যথেষ্ট হয়েছে।

মুখ কুঁচকে আঙুল মুছে বাথরূমে গিয়ে হাত ধোওয়ার জন্যে উঠল কেট। মৃত্যু আর ধ্বংস, ভাবল সে, সবগুলোই রহস্যময় কোন যুক্তি বা কারণ নেই। তার স্টুডিওতে যে লোকটা পুড়ে মরল তাকেও সনাক্ত করা যায়নি

‘কেট!’

ঘুরে দেখল দরজার কাছে তার অ্যাসিস্টেন্ট দাঁড়িয়ে আছে।

আমেরিকান এমব্যাসি থেকে হারভি ডীন বলে এক ভদ্রলোক ফোন করেছিলেন। বললেন অ্যামবাসেডর তোমাকে আজ বিকেলে তাঁর বাসায় দেখা করতে বলেছেন।

ধন্যবাদ জানিয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছল কেট। ভিতরে উত্তেজনা জমাট বেঁধে উঠছে। অশোভন। জীবনে প্রথম নাচে যাওয়ার সময়ে স্কুলের মেয়েরা যেমন শিহরণ বোধ করে তারও তেমনি লাগছে। জিভ বের করে আয়নায় নিজেকে ভেঙাল। তারপর গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিজের ডেস্কে ফিরে এল।

আবার ডায়েরী দেখল, দুটো অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, ক্যানসেল করতে হবে। ওগুলো পরে হলেও চলবে। প্রডিউসারকে বললেই হবে সে ডেমিয়েনের ওপর আর একটা প্রোগ্রামের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। কিন্তু নিজেকে কিভাবে ফাঁকি দেবে? সে তো জানে কাজের জন্যে তাকে ডাকেনি ডেমিয়েন। ডেকেছে বিনোদনের জন্যে।

গেটের দারোয়ান হাতের ইশারায় ওকে ভিতরে যেতে বলল। গাড়ি থামতেই দরজায় জর্জকে দেখা গেল। কুর্নিশ করে বাটলার কেটকে পথ দেখিয়ে ভিতরে নিয়ে গেল।

‘অ্যামব্যাসেডর আপনার জন্যে স্টাডিতে অপেক্ষা করছেন,’ জানাল জর্জ

‘ধন্যবাদ।’ একজন বাটলার থাকলে মন্দ হয় না, ভাবল সে। বাটলার একটা বাঁধুনী, একটা ফুটম্যান আর একটা গা-হাত-পা টেপার মানুষ, আর একটা সোফার আর…

‘কেট! এসেছ দেখে খুশি হলাম।’ ডেস্কের পিছন থেকে উঠে এসে আলতো ভাবে ওর গালে চুমু খেল ডেমিয়েন। ‘তোমার জন্যে একটা ড্রিঙ্ক তৈরি করে দেব?’

‘না, এতক্ষণ গাড়ি ড্রাইভ করে মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে।‘

‘চল, তোমাকে তাহলে এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখাই। মুক্ত হাওয়ায় তোমার ভাল লাগবে,’ বলল ডেমিয়েন।

‘সেই ভাল।‘

কেট তাকিয়ে আছে; সোয়েড জ্যাকেটটা চড়িয়ে নিল ডেমিয়েন। সত্যিই সুদর্শন লোকটা, ভাবল কেট। অতীতে কত মেয়ে যে ওর কাছে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে জানতে ইচ্ছে করে ওর। কোটের জিপ টেনে একটা হাই চাপল ডেমিয়েন। অ্যামব্যাসেডরের কাজ তেমন কিছু পরিশ্রমের নয়, তবু তাকে এত ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন?

‘রেডি?’ ফ্রেঞ্চ উইনডোর কপাট খুলে ধরল ডেমিয়েন। ওর পাশ দিয়ে গলে বাগানে বেরিয়ে এল কেট। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে ছেলেবেলায় সে কোথায় খেলত সেসব জায়গা একে একে কেটকে দেখাল ডেমিয়েন। পিছন ফিরে বাড়িটার দিকে চেয়ে চেসা মেয়েটার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার দৃশ্য কল্পনায় দেখল কেট।

ওকে বাড়িটার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে ডেমিয়েন বলল, ‘‘আমি যদি কোনদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হই তাহলে প্রথম কাজটা কি করব জানো? আমার সব স্মৃতি সহ ওই বাড়িটা আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব।’

হেসে উঠল কেট। ‘তোমাদের ওই এক দোষ, পৃথিবীর যেখানে যা কিছু সুন্দর আছে সব তোমরা দেশে নিয়ে যেতে চাও।’ ডেমিয়েনকে এই প্রথম ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করল সে। মুক্ত হাওয়া ওর মনে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে—কোন বাধাই সে মানবে না আজ!

ওর দিকে চেয়ে ডেমিয়েনও প্রশ্রয়ের হাসি হাসল।

ইংল্যাণ্ড তোমার এত ভাল লাগে কেন?

‘জানি না,’ কাঁধ ঝাঁকাল সে। হয়ত ছেলেবেলাটা এখানে কাটিয়েছি বলেই এত আপন মনে হয়।’

কূটনীতিবিদের ডিপ্লোম্যাটিক চাল, নাকি মনের কথা, বোঝার জন্যে কেট ওর দিকে চাইল। সতৃষ্ণ চোখে প্রাসাদের দিকে চেয়ে রয়েছে ডেমিয়েন।

‘আমার মনে হয় বাবা যদি গ্রীনল্যাণ্ডের অ্যামব্যাসেডরও হতেন তবে আমিও স্মৃতির পিছনে ধাওয়া করে ওখানেই গিয়ে হাজির হতাম।’ একটু থেমে কেটের দিকে চেয়ে হেসে আবার বলল, ‘হয়ত ঈগলুতে বাসও করতাম।’ একটা হাত বাড়িয়ে কেটের কোমর জড়িয়ে ধরে নদীর দিকে এগোল সে। ‘আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনগুলো এখানেই কাটিয়েছি আমি,’ মৃদু স্বরে বলল সে। তখনও জানতে পারিনি আমি…’ কথার মাঝেই হঠাৎ সচেতন হয়ে থেমে গেল ডেমিয়েন ওর দিকে চেয়ে হাসল—একটু আগের ভাবনা এখন কেটে গেছে।

‘চল, ওল্ড নিক [Old N।ck) কোথায় থাকে তোমাকে দেখিয়ে আনি।’

‘ওল্ড কে?’

কিন্তু ততক্ষণে লাফিয়ে বেড়া পার হয়ে ছুটে অনেকটা এগিয়ে গেছে ডেমিয়েন।

ঈশ্বর, ভাবল কেট। ওন্ড নিক (কথ্য ভাষায় শয়তানের আর এক নাম), ডেভিলের ছেলে…এর পরে কি? হোঁচট খেতে খেতে ওকে অনুসরণ করল কেট এতক্ষণেও কিন্তু পিটারের কথা একবারও মুখে আনেনি ডেমিয়েন। বেশ অবাক হল কেট, কিন্তু পরক্ষণেই আবার কি ভেবে মনে মনে নিজেই লজ্জা পেল।

একটা কাঠের সেতুর ওপর গিয়ে দাঁড়িয়েছে ডেমিয়েন। কাঠের রেলিঙে হাত রেখে নিচে গভীর পানির দিকে চেয়ে আছে। ঝর্নাটা এসে নদীর সাথে মিশেছে— তারই ওপর ব্রিজ। দৌড়ে এসে কেটের হাঁপ ধরে গেছে, রেলিঙে ভর দিয়ে দাঁড়াল সে। উঁকি দিয়ে নিচের দিকে চাইল—ভাবছে, কী এমন অদ্ভুত জিনিস দেখাতে নিয়ে এসেছে, শিঙওয়ালা রাক্ষস, দুটো লেজ, খুরে ধারালো নখ? কি?

‘এত বড় পাইক (P।ke) কেউ দেখেনি,’ বলল ডেমিয়েন।

‘ও, একটা মাছ,’ বোকার মত বলল কেট।

‘ওর বয়স এখন প্রায় চল্লিশ হবে। ওকে যখন প্রথম দেখি তখন আমার বয়স চার। সেই সময় থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব।

‘ইংল্যাণ্ডে ইবলিসকে ওন্ড নিক নামে ডাকা হয় জানো তো?’ কিছু না ভেবেই কথাটা বলে ফেলল কেট।

‘জানি—পাইকের জন্যে ওটা চমৎকার নাম।’

ভুরু কুঁচকে ডেমিয়েনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছে সে। ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস কর তুমি?’ প্রশ্নটা ওর কানে গেলেও কোন জবাব দিল না সে। একটু হেসে আরও ঝুঁকে নিচের দিকে চাইল।

‘ওই দেখ নিক যাচ্ছে।’

‘কোথায়?’ আরও নিচু হয়ে ঝুঁকে ডেমিয়েনের আঙুল লক্ষ্য করে দেখতে চেষ্টা করল কেট।

‘ওই যে…দেখেছ?’

একটা ডাল মটকানোর মত শব্দের সাথে সাথে টের পেল ডিগবাজি খেয়ে উল্টে যাচ্ছে সে। চিৎকার করারও সময় পেল না কেট, ঝপাৎ করে পানিতে পড়ল। মুহূর্তে তার মনে হল পাইকটা বুঝি তাকে গিলে খেতে আসছে। ঠাণ্ডা পানির ধাক্কায় শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হল। পানির নিচে তলিয়ে গেল সে। একটু পরেই পানির উপর ভেসে উঠে মুখ দিয়ে তিমি মাছের মত পানি ছিটাল। ঝাপসা চোখে পঞ্চাশ গজ দূরে নদীর বাঁধটা দেখতে পাচ্ছে। নদীর পানি বাঁধের উপর দিয়ে গড়িয়ে বিশ ফুট নিচে পড়ে পাক খেতে খেতে ওর দিকে ছুটে আসছে। আবার তলিয়ে গেল সে, মাটিতে পা ঠেকল-শেওলায় পা জড়িয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে লাথি মেরে দু’হাতে পানি কেটে উপরে উঠতে চেষ্টা করল।

আবার ভেসে উঠে দেখলো ডেমিয়েন ওর দিকেই চেয়ে আছে। চোখে পানি থাকায় পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে না তবু মনে হল যেন সে হাসছে। হাতের সামনে ব্রিজ থেকে ভেঙে পড়া খুঁটিটা পেয়ে ওটা আঁকড়ে ধরল কেট। ঠাণ্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে, কিছু পানিও খেয়েছে, তবু এখন সে নিরাপদ।

হাঁটু গেড়ে বসে হাত বাড়িয়ে ওর কব্জি ধরল ডেমিয়েন। খুঁটি ছেড়ে দিল সে—ডেমিয়েন ডাঙায় টেনে তুলল ওকে। কানে পানি ঢুকেছে—কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। কুকুরের গা ঝাড়ার মত ঝাড়া দিয়ে কানের পানি বের করে শুনতে পেল ডেমিয়েন বলছে তার শুকনো পোশাক দরকার। জড়িয়ে ধরে ওকে নদীর পাড় থেকে ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে সাহায্য করল ডেমিয়েন। বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত ডেমিয়েনকে আঁকড়ে ধরেই থাকল কেট।

.

আগুনের ধারে বসে জোর করে চিরুনি টেনে ভেজা চুল আঁচড়াচ্ছে কেট। টের পাচ্ছে স্নান করে এক পেগ ব্র্যাণ্ডি খাওয়ার পর সে চমৎকার বোধ করছে এখন। ডেমিয়েনের ড্রেসিং গাউনটা অবশ্য তার কোমল চামড়ায় একটু খসখসে ঠেকছে— তবু ভাল লাগছে।

মনের চোখে এখনও ডেমিয়েনকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতে দেখছে-কি বোঝাতে চেয়েছিল সে— পারলে নিজেকে বাঁচাও? জানে না ও। লোকটা যে কখন কি ভাবছে বোঝা দায়। কেটের কাছে ডেমিয়েন থর্ন সম্পূর্ণ রহস্যময়। ওর সান্নিধ্য কেটের মনে কামনার আগুন জ্বেলে তোলে। নিজেকে মিথ্যা বুঝিয়ে লাভ নেই, ডেমিয়েনের হাতে নিজের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে ইচ্ছা করে। জ্ঞান হবার পর থেকে কোন পুরুষের প্রতি এতটা টান সে অনুভব করেনি। পিটারের বাবা ফ্র্যাঙ্ক খুব ভাল লোক ছিল কিন্তু সেও তাকে এমন আকর্ষণ করেনি।

ডেমিয়েন ঘরে ঢোকার আওয়াজ পেয়েও মুখ তুলল না সে।

‘দেখ এর মধ্যে কোন্‌টা তোমার গায়ে লাগে,’ বলল সে। তবু আগুনের দিক থেকে মুখ ফেরাল না কেট। টের পেল ডেমিয়েন তার পাশে এসে দাঁড়াল।

‘এইটা ঠিক হবে বলে মনে হয়।

এবার ফিরল কেট। আগুনের তাপে ওর গাল গোলাপী দেখাচ্ছে। একটা সবুজ শার্ট বাড়িয়ে ধরেছে ডেমিয়েন।

‘সবুজ বা সাদা,’ বলল সে। ‘তোমার মুডের ওপর নির্ভর করে।’

শার্টটা নিয়ে মেঝেতে ঝেড়ে দিয়ে ওর হাত ধরল কেট। তারপর ফিসফিস করে বলল, ‘মথের (Moth) মত আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মুডে আছি আমি।’

ওর দিকে চেয়ে হেসে তর্জনী দিয়ে হাতের ওপর একটা গোল চিহ্ন আঁকল ডেমিয়েন।

*

রাতের অন্ধকারে কেটের ঘুম ভাঙল। পাশের মানুষটার উষ্ণ ছোঁয়া পাবার জন্যে হাত বাড়াল সে কিন্তু পাশে কেউ নেই। উঠে বসে নগ্ন অবস্থাতেই বিছানা ছেড়ে নেমে দরজার কাছে গেল। আয়নায় তার গলার কাছে চুমোর দাগগুলো দেখা যাচ্ছে। ড্রেসিং গাউনটা গায়ে চাপিয়ে করিডোরে বেরিয়ে এল কেট।

ওর নাম ধরে ফিসফিসিয়ে ডাকল। কোন জবাব নেই। শুধু আছে নীরব শূন্যতা। রাতের অন্ধকারে ঘুরে ফিরে ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কেট।

প্রার্থনা-ঘরটা খুঁজে বার করতে পাঁচ মিনিট সময় লাগল। দরজাটা ঠেলে প্রথমে অন্ধকারের ভিতর ওকে দেখতে পায়নি কেট। ক্রুশে বিদ্ধ যীশুর সাদা মূর্তিটাই কেবল দেখা যাচ্ছে। মূর্তিটা উল্টো করে বসানো। ওই দৃশ্য দেখে শিউড়ে উঠল সে। চোখে অন্ধকার কিছুটা সয়ে এলে দেখল ক্রুশের তলায় উলঙ্গ অবস্থায় কুঁকড়ে শুয়ে আছে সে।

‘ডেমিয়েন?’ এবারও খুব আস্তে করে ডাকল, কিন্তু নড়ল না সে!

পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল কেট। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখল ওর পিঠটা ঠাণ্ডা হয়ে রয়েছে। আদর করে চুলের ভিতর আঙুল চালিয়ে আড়চোখে আবার ক্রুশের নির্যাতিত মূর্তিটার দিকে চাইল। চোখ ফিরিয়ে দেখল হাতের ছোঁয়ায় ডেমিয়েনের চুল সরে গিয়ে পশুর চিহ্নটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

৬৬৬

চোখ বুজে এক মুহূর্ত স্থির থেকে উঠে হাঁটা দিল কেট। একবারও ফিরে চাইল না ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সময়ে আর নিজেকে সংযত রাখতে পারল না, ফুঁপিয়ে উঠল। গাল বেয়ে চোখের জল গড়াচ্ছে।

অন্ধকারে চোখ খুলল ডেমিয়েন বিন্দুর মত দুটো হলুদ আলো জ্বলে উঠল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *