চোদ্দ
পুরানো শিষ্য ফ্র্যাঙ্ক হাচিন্স। সে-ই প্রথম পৌঁছাবে, এটাই চেয়েছিল সে। গত তিন ঘন্টা অন্ধকারে পথ চলেছে ফ্র্যাঙ্ক। জায়গামত পৌঁছে আর কাউকে না দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। হয়ত তার এই নিষ্ঠার জন্যে প্রভু ডেমিয়েনের কাছ থেকে স্বীকৃতি সে একদিন পাবে।
একে একে অন্যান্য ভক্তরা এসে পৌঁছতে শুরু করল। পরের দিকে একসাথে তিন-চারজন করে হাজির হতে শুরু করল। নিজের পরিচয় দিয়ে ওদের সুশৃঙ্খল ভাবে লাইনে দাঁড় করাল ফ্র্যাঙ্ক।
সময় হয়ে এসেছে। একজন নার্সের পাশে দাঁড়িয়ে আবার চারদিকে চেয়ে দেখল সে। প্রায় এক হাজার মানুষের সমাবেশ হয়েছে বীচের ওপর। সবাই সমুদ্রের দিকে চেয়ে রয়েছে।
‘ওই যে!’ ফিসফিস করে বলল নার্স ল্যামন্ট। দিগন্তের দিকে চাইল ফ্র্যাঙ্ক ল্যাণ্ডিং লাইট জ্বলে ওঠার আগেই রোটর ব্লেডের আওয়াজ তার কানে এল উত্তেজনায় প্রায় আড়ষ্ট হয়ে আছে সে। মাত্র পঞ্চাশ গজ দূরে আকাশে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে হেলিকপ্টারটা নামার আয়োজন করছে। এগিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার—কিন্তু আদেশ অমান্য করার উপায় নেই। জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইল সে। লাফিয়ে নেমে স্থির হয়ে দাঁড়াল ডেমিয়েন। হেলিকপ্টারটা আবার আকাশে উঠে অদৃশ্য হল।
আবার নীরবতা। একটু অপেক্ষা করে হাত তুলে চিৎকার করল সে, ‘বন্ধু শিষ্যবৃন্দ, সত্যিকার প্রভুর প্রতিনিধি হয়ে আমি তোমাদের সামনে হাজির হয়েছি আজ। স্বর্গ থেকে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল তাকে, কিন্তু আমার মাধ্যমে সে আবার জীবন লাভ করেছে।
একটু চুপ করে থেকে সে জিজ্ঞেস করল, ‘শুনছ আমার কথা?’
সমবেত প্রত্যেকটা নারী-পুরুষ সমস্বরে বলে উঠল, ‘শুনছি। আদেশ করুন, প্ৰভু।’
মুহূর্তের জন্যে বাতি ঘরের (l।ght house) আলোটা ক্লিফের ওপর প্রতিফলিত হল। নার্সের উত্তেজিত মুখভাব ফ্র্যাঙ্কের নজরে পড়ল। চোখ দুটো উজ্জ্বল-ঠোঁট ভেজা।
‘আমি তোমাদের হুকুম দিচ্ছি,’ বলল ডেমিয়েন। ‘নাজারীন সন্তানকে খুঁজে বের করে হত্যা কর।
নার্স আরও কাছে সরে এসে হাচিন্সের হাত ধরল।
‘নাজারীনকে হত্যা করলেই আমি অনন্তকাল রাজত্ব করতে পারব। ব্যর্থ হলে, ‘ধ্বংস হব।’
‘না!’ ফিসফিস করে উচ্চারণ করল নার্স। আমি ব্যর্থ হব না।’
‘নাজারীনকে হত্যা কর—তাহলে এই পৃথিবী কেবল তোমাদের হবে। ব্যর্থ হলে তোমরাও চিরতরে নিশ্চিহ্ন হবে। নাজারীনকে হত্যা করলে তবেই তোমরা প্রভু ইবলিসের স্বর্গের স্বাদ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবে।’
হাচিন্সের হাতের ওপর নার্সের মুঠির চাপ বাড়ল। উষ্ণ দেহের একটা চাপ সে টের পাচ্ছে।
‘শুনতে পাচ্ছ আমার কথা?’ আবার চিৎকার করল ডেমিয়েন।
‘আপনার আদেশ আমরা পালন করব,’ জোর গলায় জবাব শোনা গেল এবার।
ডেমিয়েন দাঁড়িয়ে আছে স্থির হয়ে। ওর সামনে ভক্তদের মধ্যে রব উঠল, ‘নাজারীনকে হত্যা কর। নাজারীনের রক্ত চাই…’ সমস্বরে সেই চিৎকার খোলা সমুদ্রের উপর দিয়ে রাতের আকাশে মিলিয়ে গেল।
চিৎকারের সাথে সাথে নার্সকে কাছে টেনে নিল হাচিন্স। সেও উন্মত্ত ভাবে খামচে ধরল ওকে। অন্ধকার বীচের ওপর ডেমিয়েনের শিষ্যদের মধ্যে চলল নারকীয় খেলা। উত্তেজনার চরম মুহূর্তে নার্স চিৎকার করে উঠল, ‘ডেমিয়েন! তোমাকেই আমি ভালবাসি।’ কথাটা হাচিন্সের কানে গেল, কিন্তু ওর মনে একটুও হিংসা জাগল না—সেও ওই একই কথা উচ্চারণ করছে।