শেষ অশুভ সংকেত – ১২

বারো

বছরের প্রথম সুন্দর একটা দিন। ঠাণ্ডা নেই। ডেমিয়েনের বৈঠকখানায় রোদ ঝলমল করছে। টেলিভিশনের লোকজন তাদের যন্ত্রপাতি সেট করছে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরে মাঠের দিকে চেয়ে আছে কেট। এখানে আসার আগে বই খুলে পেরিফোর্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণে চোখ বুলিয়ে নিয়েছে সে। পেরিফোর্ডঃ-১৭ দশকে তৈরি, তেষট্টিটা কামরা, দুটো উইং আর একটা আধুনিক সংযোজন; চারশো একর জমি।

সামনের বাগানে দাঁড়িয়ে বিতৃষ্ণা নিয়ে বসন্তের ফুল দেখছে ডীন আর ডেমিয়েন। ওদের দু’জনেরই শরৎ-অর্থাৎ ক্ষয় পছন্দ। নীরবে পায়চারি করছে ওরা। আবার কবে স্বাভাবিক হবে ডেমিয়েন?—ভাবছে ডীন। তার নিজেরও ক’দিন হল ভাল ঘুম হচ্ছে না। অল্পেই চটে ওঠে—বিরক্ত হয়। ওই রেনল্ডস বেটিকে মোটেও দেখতে পারে না সে। ছুঁড়িটা কেবল ডেমিয়েনের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। অনর্থও কম ঘটায়নি মেয়েটা। যাক, এসব তার ব্যাপার নয়। নীরবতা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নিল ডীন।

‘তাহলে চারটার হিসাব পাওয়া গেছে,’ বলল সে।

মাথা ঝাঁকাল ডেমিয়েন। ‘তিনটে ছুরি বাকি রইল-কিন্তু আর সময় নষ্ট করব না আমি।’ একটু চুপ করে থেকে সে আবার বলে চলল, ‘নাজারীনকে শেষ করার একটাই নিশ্চিত উপায়। ২৪ মার্চ মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত যত ছেলে-শিশুর জন্ম হয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’ রডোডেনড্রন ফুলের একটা কুঁড়ি ছিঁড়ে নিল ডেমিয়েন।

নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না ডীন। বিংশ শতাব্দীতে এও কি সম্ভব? ডেমিয়েনের দিকে চেয়ে বুঝল ঠাট্টা করছে না সে।

বারবারা কেমন আছে?’ হঠাৎ কথার মোড় ঘোরাল ডেমিয়েন।

‘ভাল।’

‘আর তোমার ছেলে?’

ডীনের বুকের ভিতরটা ছ্যাৎ করে উঠল একটা অশুভ আশঙ্কায়।

‘সেও ভাল আছে।‘

একটা চিৎকার শুনে ঘুরে দেখল পিটার ওদের দিকে ছুটে আসছে। জীবনে কাউকে দেখে এতটা খুশি হয়নি ডীন। কিন্তু পিটারকে মোটেও পাত্তা দিল না ডেমিয়েন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ডীনের দিকেই চেয়ে আছে সে।

‘চব্বিশে মার্চ জন্মেছে, তাই না?’

‘কে?’ বুঝেও না বোঝার ভান করল ডীন।

‘তোমার ছেলে।’

‘না।’ এই প্রথম ডেমিয়েনকে মিথ্যা বলল সে। এর আগে কখনও মিথ্যা বলার প্রয়োজন পড়েনি। ‘না, না,’ আবার বলল সে, ‘তেইশ মার্চ। মাঝ রাতের আধঘন্টা আগে।’

পিটার এসে পৌছে জানাল ওদিকের আয়োজন শেষ। তার মা ডেমিয়েনের জন্য অপেক্ষা করছে।

‘তাকে বল আমি এখনই আসছি,’ ডীনের ওপর থেকে চোখ না সরিয়েই বলল ডেমিয়েন। মা’কে খবর দিতে ছুটে চলে গেল পিটার। রডোডেনড্রনের পাঁপড়ি—গুলো ছেঁড়া শেষ করে কুঁড়িটাকে আঙুল দিয়ে পিষে ফেলল সে।

‘অঙ্কুরেই নাজারীনকে ধ্বংস কর,’ মোলায়েম স্বরে বলল ডেমিয়েন।

উত্তেজিত ভাবে কাঁধ ঝাঁকাল ডীন। কথাটা মুখে বলা সহজ।

‘কিন্তু কিভাবে?’ প্রশ্ন করল সে।

‘শিষ্যেরা কি জন্যে আছে?’ ছোট বচ্চাকে বোঝাবার সুরে বলল ডেমিয়েন। ‘রোববার সবাইকে দ্বীপে জড় কর। শনিবার পিটার আর কেটকে কর্নওয়াল নিয়ে যাচ্ছি শিকারে—ওখান থেকে দ্বীপে পৌঁছবার ব্যবস্থা আমি নিজেই করব।’

বৈঠকখানার দরজা থেকে চেঁচাচ্ছে পিটার। যাবার আগে আবার ডীনের দিকে ফিরে, হেসে ওকে সাহস রাখতে বলে গেল ডেমিয়েন।

ডীনের রাগ গিয়ে পড়ল কেট-এর ওপর। ওই মেয়েটাই অপয়া। ওর সাথে জানাশোনা হবার শুরু থেকেই সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে। পল বুহের ওকে ছুটি কাটাতে নিয়ে যাওয়ার পর আজই প্রথম তার কেমন একটু ভয় করছে। মনে হচ্ছে যেন সে একটা বিশ্রী ভুল করেছে। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে ডেমিয়েনের স্টাডির দিকে এগোল সে। ওখানেই সব ফাইলপত্র রাখা হয়। ফাইল দেখে একে একে সব শিষ্যকে খবর দিতে হবে। অনেক দেরি করে ফেলেছে সে। এখন ফেরার সব পথ বন্ধ…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *