১৮
ফাত্তাহ তার মতো বলে চলেছে। প্রফেসরের অবস্থা দেখার বা বোঝার মতো মনমানসিকতা নেই এখন।
“কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে পুরো চোখটা ওরা তুলে ফেলেনি। কিন্তু ওরা থামেওনি। আর আমার অবস্থা তখন এমন, বুঝতে পেরেছিলাম আমার বাঁচার আর কোনো সম্ভবনা নেই। তাই অমি বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এরপরে কী হয়েছিল সঠিকভাবে আমার মনে নেই,” এই পর্যন্ত বলে ফাত্তাহ একটা আঙুল তুলল প্রফেসরের দিকে।
“বিশ্বাস করো প্রফেসর, আমি যতদিন বেঁচে আছি,” বলে সে একটু থেমে হেসে উঠে যোগ করল, “আমার এই অবস্থাকে যদি আদৌ তুমি জীবিত বলে স্বীকার করতে চাও আর কি,” বলে সে জোরে জোরে হেসে উঠল। শুষ্ক কাঠ ফাটা ফ্যাসফ্যাসে শূন্য হাসি। “যাই হোক, আমি যতদিন বেঁচে আছি ওই সাত দিনের হাত থেকে মুক্তি নেই আমার। সেই চিৎকার, সেই কান্না, সেই রক্ত, প্রতিটি যন্ত্রণার স্তর পরিষ্কার মনে পড়বে আমার। কিন্তু ওই সাত দিনের ভেতরে ওই একটা সময় আর মোটেই খেয়াল নেই। কী হয়েছিল ঠিক মনে নেই আমার। সম্ভবত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিংবা আমাকে অজ্ঞানও করা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু যখন জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম এক অদ্ভুত অবস্থায়। একেবারে ছোট্ট একটা টুলের ওপরে কোনোমতে আমার শরীরটা দাঁড়িয়ে আছে। হাত-পা বাঁধা। গলায় এঁটে বসেছে শক্ত একটা ফাঁস। জ্ঞান না থাকার কারণে শরীরটা একটু বাঁকা হয়ে ছিল একটা দন্ডের ওপরে। আমার অজ্ঞান শরীরটাকে ঠেস দিয়ে রেখেছিল ওরা দন্ডটা দিয়ে। জ্ঞান ফিরে পেয়ে সোজা হতেই ওটা পড়ে গেল ঠাস করে। সাথে সাথে টান লাগল গলার ফাঁসে, সেই সাথে পিছলে যেতে শুরু করল পায়ের নিচের টুলটা। কোনোমতে সামলে নিলাম আমি। অবস্থাটা এমন যে পায়ের ভারসাম্য ঠিক করতে গেলে গলায় টান লাগে। আবার গলার টান কমাতে গেলে পায়ের নিচ থেকে টুলটা সরে যাওয়ার উপক্রম হয়। তবে খেলাটা এখানেই শেষ নয়,” বলে সে একটা হাত নেড়ে আবারও বলতে শুরু করল।
“একটু খেয়াল করে দেখলাম আমার পায়ের নিচে যে টুলটা আছে সেটা থেকে সরু একটা তার বেরিয়ে গিয়ে লেগেছে গুদামঘরের দরজার সাথে। সেটার হাতলের সাথে আরও অনেকগুলা তার প্যাচানো। প্রথমে এই ফাঁস আর টুলের টানাটানিতে বিষয়টা ভালোভাবে খেয়াল করিনি কিন্তু একটু ভালোভাবে দেখতেই বুঝতে পারলাম ওটা আসলে একটা বোমা। কোনোভাবে আমার টুলটা স্থানচ্যুত হয়ে গেলেই ওটা বিস্ফোরিত হবে। এমনকি যদি ওটাকে কেউ বাইরে থেকে খোলার চেষ্টা করে তাহলেও ওটা বিস্ফোরিত হবে,” এই পর্যন্ত বলে ফাত্তাহ হাসতে লাগল। “ফাটা বাঁশে বানরের লেজ আটকে যাওয়ার গল্পটা শুনেছ প্রফেসর। আর এখানে বানরটা হলো সাত দিনের নির্যাতিত, প্রায় না খাওয়া আহত ক্লান্ত বিধ্বস্ত। অবস্থাটা অনুভব করতে পার?”
প্রফেসর মুখে কিছু বলল না। না হাসল বা কোনো অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাল। কিন্তু সে মন থেকেই মানুষটার জন্য সহানুভূতি অনুভব করল। কতটা কষ্ট হতে পারে এই অবস্থায় সেটার একটা আন্দাজ সে করতে পারে। বিশেষ করে যে মানুষটা ওই অবস্থা থেকে বেঁচে ফিরেছে তাতে বোঝা যায় কতটা কষ্ট সহ্য করে সে ফিরে এসেছে ওখান থেকে।
“ওই অবস্থায় প্রফেসর আমি প্রায় এগারো ঘণ্টা ছিলাম, এগারো ঘণ্টা, বলে সে জোরে জোরে হেসে উঠল। “মানুষের প্রাণ বড় অদ্ভুত জিনিস। প্রকৃতি প্রতিটি জীবিত প্রাণীর মাঝে এই সত্তাটা এমনভাবে সেট করে দিয়েছে যে সে মরতে চাইবে না। এই কারণে আত্মহত্যাকে সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয় প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে। কেন জানো? কারণ এটা প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ হলো এমন এক তাগিদ যার টানে মানুষ তার প্রাণের ওপরেই সবেচেয়ে বেশি অত্যাচার করে। অদ্ভুত না ব্যাপারটা। প্রকৃতিরই নিয়ম কিন্তু কেমন জানি প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলে মনে হয়।”
“প্রকৃতির প্রকৃতি বিরুদ্ধতা,” মৃদু হেসে উঠল প্রফেসর।
“একদম ঠিক। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ, বড় তাগিদ। এরপর যখন চেতনা আর স্বাভাবিকতার শেষ প্রান্তে তখন শুনতে পাই গুদামঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করছে কেউ। যদিও শক্তি বলতে গেলে প্রায় অবশিষ্ট নেই, তবুও প্রাণপণে চিৎকার করতে থাকি ওটা না খোলার জন্য। কিন্তু হয় তারা আমার কথা শুনতে পায়নি আর না হয় তারা বুঝতে পারেনি। বাইরে থেকে দরজায় সামান্য ধাক্কা লাগতেই আমার পায়ের নিচ থেকে টুলটা সরে গেল। গত এগারো ঘণ্টার প্রাণপণ চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো এক সেকেন্ডের ধাক্কায়। আমি শূন্যে ঝুলে পড়লাম। প্রায় মিনিটখানেক ওভাবেই ঝুলে থেকে আমি খুব ধীরে ধীরে মৃত্যুর স্বাদ পাচ্ছিলাম। জীবন আর মৃত্যুর মাঝের সুতোটা একটু একটু করে কেটে যাচ্ছিল গলায় চেপে বসতে থাকা দড়ির চাপে। একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম মৃত্যুর দিকে,” এটুকু বলে ফাত্তাহ নিজের কভারওলের ওপরে গলার বিকৃত সাদা দাগটার ওপরে হাত বুলাতে লাগল।
“দড়িটা গলায় চেপে বসছিল আর নিজের গলার ছোট ছোট হাড়গুলো টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে পরিষ্কার টের পাচ্ছিলাম। খেলা শেষ হতে যখন আর অল্প সময় বাকি তখন তীব্র বিস্ফোরণের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে জ্ঞান হারালাম আমি।”
ফাত্তাহ থামতেই প্রফেসর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। বীভৎস এই বিবরণ আর সহ্য করতে পারছিল না সে। মুখটাকে ওপরের দিকে তুলে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ফাত্তাহ তাকে থামিয়ে দিল।
“আরও বাকি আছে প্রফেসর। আমার কৌতুকের পাঞ্চ লাইন এখনও বাকি। শুনতে যেহেতু চেয়েছ পুরোটাই শুনতে হবে,” বলে সে নিভু সিগারটাকে আবারও লাইটার দিয়ে ধরিয়ে নিল। “বিস্ফোরণের পর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরল হাসপাতালে। জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে মনে হলো সারা শরীর বিশেষ করে মুখে আগুন জ্বলছে। যদিও চোখে দেখতে পেলাম না কিন্তু মুখের ওপরে কিছু একটার অস্তিত্ব পরিষ্কার অনুভব করলাম। ব্যথার চোটে মনে হলো মুখের ওপরে কেউ গলন্ত লাভা ঢেলে দিয়েছে। তীব্র ব্যথায় হার্ট ফেইলিওরেই মারা যেতাম ওরা যদি আমাকে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান না করে ফেলত। এগুলো অবশ্য পরে শুনেছি,” সে আবারও ঘনঘন টান দিল সিগারে।
“এরপর আমার জ্ঞান ফেরে সাত দিন পর। প্রায় সমস্ত শরীরেই ব্যান্ডেজ মোড়ানো অবস্থায় আবিষ্কার করি নিজেকে। তবে সেটা মজার ব্যাপার ছিল না। মজার ব্যাপার হলো আমার একটা হাতহ্যান্ড কাফ দিয়ে বিছানার খাটের সাথে আটকানো। জ্ঞান ফেরার পর একজন ডাক্তার, দুজন নার্স আর দুজন পুলিশ অফিসার রুমে প্রবেশ করে যা বলল আমাকে সেটা ছিল আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে বড় কৌতুক,” বলে ফাত্তাহ জোরে হেসে উঠল। “অন্তত এখন মনে পড়লে তাই মনে হয়।”
“আপনি এগুলোকে কৌতুক বলছেন,” প্রফেসরের গলা খানিকটা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে।
“আমরা এই বিষয়ে পরে কথা বলব। কেন এটাকে কৌতুক বলছি সেটা আগে বলে নেই। প্রথমেই ডাক্তার আমার শারীরিক অবস্থার কথা বর্ণনা করল। আমার শরীরের প্রায় নয়টা হাড় ভেঙে গিয়েছিল ভোকাল কর্ডের একটা অংশসহ। অনেকগুলো নার্ভ স্থায়ীভাবে ড্যামেজ হয়ে গেছে। ভোকাল কর্ডটা মোটামুটি ঠিক করে কথা বলার মতো অবস্থায় আনতে পারলেও ডাক্তাররা নার্ভগুলো কোনোভাবেই পুরোপুরি ঠিক করতে পারেনি। সেইসাথে বিস্ফোরণের ফলে একটা লোহার টুকরো এসে আমার বাম চোয়ালে আটকে গিয়েছিল,” বলে ফাত্তাহ ভালো বাম চোখের নিচ থেকে যে কাটা দাগটা সেটা দেখাল। “ওটা এমনভাবে হাড়ের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল সেটা ওখানে ছিল প্রায় চারদিন। ডাক্তাররা কিছুতেই ওটাকে সরাতে পারছিল না। মোদ্দা কথা আমি শরীরিকভাবে আর কোনোদিনই আগের মতো ফাংশন করতে পারব না,” বলে ফাত্তাহ মুখটাকে সামনের দিকে নিয়ে এলো। সিগারটা টেবিলের ওপরে রেখে নিজের শক্তিশালী দুই হাতের মুঠো এক করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠল, “প্রকৃতির নিয়ম প্রফেসর, যেটা তোমাকে ধ্বংস করতে পারে না, সেটাই তোমাকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী করে তোলে। আমার ভেতরেও সেটাই ঘটছিল, তবে সেটা আমি টের পেয়েছি অনেক পরে,” বলে সে থেমে একটু পিছিয়ে গেল।
“ডাক্তার থামতেই এবার তার পাশ থেকে পুলিশ অফিসার বলা শুরু করল। আমি যখন গুদামঘরে আমার ফাঁস আর টুল নিয়ে যুদ্ধরত তখন ওসামা বিন লাদেন নামে এক লোক ডিনামাইট ভরতি ট্রাক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বেইজমেন্টে ঢুকিয়ে সেটাকে ব্লাস্ট করে পুরো বিল্ডিং ধসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে সফল হতে পারেনি। এটা তিরানব্বই সালের ঘটনা আর সেই ঘটনার সন্দেহভাজনদেরই একজন ছিল আমার টিমের সেই মেম্বার- যাকে এফবিআই ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ওরা জানাল আমাকেও একই সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, যে ডিনামাইটগুলো দিয়ে কাজটা করার চেষ্টা করা হয়েছে সেটা বাজারে প্রচলিতগুলোর মতো নয় এবং এগুলো বসানোর ক্ষমতা খুব কম লোকেরই আছে। সেদিন রাতে এফবিআইয়ের কাস্টাডি থেকে বের হওয়ার পর আমার টিমের সেই লোকটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা আরও সন্দেহ করে ওই গুদামঘরে আমিই সেই লোকগুলাকে ডিনামাইটের স্যাম্পল তৈরি করে দিয়েছি এবং যখন এনএপিডি ওখানে অপারেশন চালাতে যায় আমি ওদেরকে বোমা মেরে উড়িয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছি। আমি সুস্থ হওয়ার পরই সিভিল কোর্টে উঠবে মামালা এবং সে হিসেবে আমার বিচার হবে। আমি কোনো কথা বলতে পারিনি। কারণ আমার পুরো মুখ ব্যান্ডেজে ঢাকা ছিল। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর এই ফ্যাসফ্যাসে গলা নিয়ে কত চিৎকার করেছি, বলার চেষ্টা করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি কোনো কাজ হয়নি। আমার সুস্থ হতে দুই মাসের ওপরে লেগে যায়। এরপর আদালতে মামলা ওঠার পর সেখানে আমাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিজনে। এত কম জেল হওয়ার পেছনে কারণ ছিল সরাসরি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি আমার বিরুদ্ধে। কিন্তু সাজা ঠিকই হয়েছিল বিনা দোষে। তুমি কি এখন জোকটা ধরতে পারছ প্রফেসর?”
প্রফেসর মাথা নেড়ে বোঝাল সে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। “যে আরোপটা মেটানোর জন্য আপনার এত কষ্ট সহ্য করা, এত যন্ত্রণা, এত ত্যাগ স্বীকার, সবই বৃথা হয়ে গেল এই এক ঘটনায়। আপনি যে কারণে আপনার পরিবার-কমিউনিটিকে রক্ষা করার জন্য, তাদেরকে দাগমুক্ত রাখার জন্য সাত দিনের এই অত্যাচার সহ্য করলেন সবই শেষ হয়ে গেল।”
“একদম ঠিক প্রফেসর,” বলে ফাত্তাহ তালি দিয়ে উঠল। “আগেই বলেছি, বুদ্ধিমান মানুষের সাথে কথা বলার মজাই আলাদা। আমার পুরো পৃথিবী ভেঙে পড়ল এই কথায়। যে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য আমার এই ত্যাগ, সেই পৃথিবীই আমাকে ভুল বুঝল। আমার চাকরি গেল, এতদিনের গবেষণা গেল, পরিবার, ব্যবসায়, স্ত্রী-সন্তান সব দূরে সরে গের। জেল হয়ে গেল, অথচ আমার কোনো দোষই ছিল না। কেউই বুঝল না আমাকে, কেউই শুনল না আমার কথা,” বলে ফাত্তাহ জোরে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ল। “এই যন্ত্রণা যে পার না করেছে সে কোনোদিনই বুঝতে পারবে না এই যন্ত্রণার গভীরতা, কোনোদিনই না,” বলে আনমনেই মাথা নাড়তে লাগল সে। “শরীর- সমাজ-পরিবার-ক্যারিয়ার, এত দিনের সব অর্জন সবই বৃথা হয়ে গেল এক মুহূর্তের মধ্যে,” বলে ফাত্তাহ প্রায় শেষ হয়ে আসা সিগারটাকে আঙুলের টোকায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের হাত দুটো রাখল টেবিলের ওপরে।
তারপর হাতের ওপর মুখটা রেখে অনেকটা ছোট বাচ্চাদের মতো ভঙ্গিতে বলে উঠল, “তুমি কি একটা জিনিস জানো প্রফেসর, ফিলোসফি, মেডিটেশন থেকে শুরু করে স্পিরিচুয়ালিটির ক্ষেত্রেও ম্যাক্সিমাম স্পিরিচুয়াল লেভেলে বলে একটা ব্যাপার থাকে। সঠিক টার্মটা আমার এই মুহূর্তে মনে নেই। কিন্তু এরকম একটা ব্যাপার আছে, প্রায় সব ধর্মেও এমনকি ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত ওটা থেকেই এসেছে ‘নো দাইসেল্ফ’…
“ইন আর ইয়ান….“
“ঠিক। আমি তো ওই লাইনের লোক নই, তবে এটা বুঝতে পারি এরকম কিছু একটা অবশ্যই আছে। আর আমি সেটা আবিষ্কার করি কোথায় জানো?” বলে আবারও সে মুখ তুলে তাকাল। “আমেরিকান সরকারের ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিজন সেলের টর্চার চেম্বারে। তুমি ব্যাপারটা খেয়াল করো। সমাজ-সিস্টেম-আইন একটা মানুষের সাথে কী করতে পারে। যে ব্যাপারগুলো এড়ানোর জন্য আমি এতটা কষ্ট সহ্য করলাম, সিস্টেম আমাকে সেই ব্যাপারটার জন্যই দোষারোপ করল। যাদের জন্য আমি কষ্ট সহ্য করলাম এবার তাদের হাতেই আমাকে নির্যাতিত হতে হচ্ছে সেই একই কারণে যা আমি জানি না। সেই টর্চার চেম্বারেই আমি আবিষ্কার করলাম আমাকে যাই করা হচ্ছে আমার কোনো অনুভূতি নেই। না ব্যথার, না কষ্টের, না যন্ত্রণার; কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না আমার ভেতরে।”
“এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে,” প্রফেসর হাত তুলে জানতে চাইল। “হাসপাতালে যখন আপনার জ্ঞান ফিরল তখন কিন্তু আপনি ব্যথা অনুভব করছিলেন। পরে কী হলো?”
“এই ব্যাপারটা নিয়ে আমিও ভেবেছি পরে। যখন আমি হাসপাতালে ছিলাম সম্ভবত তখনও আমার নার্ভাস সিস্টেম পুরোপুরি অচল হয়নি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেটা আরও ড্যামেজ হতে থাকে। যে কারণেই এই অবস্থা দাঁড়ায়। ওরা অনেক কিছু করল, অনেক টর্চার করল, কোনো কাজ হলো না। প্রথমত, আমি তো কিছু জানিই না আমি কী বলব। দ্বিতীয়ত, আমি তো কোনো কষ্টই অনুভব করতে পারছিলাম না। এভাবেই কেটে গেল পাঁচটা বছর। পাঁচ বছর পর মুক্তি পেলাম। কিন্তু আগের পৃথিবী আর পরের পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। জেলে থাকতেই খবর পেয়েছিলাম আমার স্ত্রী মারা গেছে, তাই পরিবারমুখো হইনি আমি। পথেঘাটে ঘুরিফিরি কী করব কিছুই বুঝতে পারি না। কোথায় যেন শুনেছিলাম কারাগারে ঢোকে সাধারণ অপরাধী, বেরিয়ে আসে পাকা অপরাধী হয়ে। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ওরকম না হলেও সমাজের টিপ্পনী আমি ঠিকই টের পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে আমার এই বিকৃত চোহারা নিয়ে কোথাও বেরোতেও ভয় পেতাম। কাজ তো দূরে, রাস্তাঘারে বেরোলে লোকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকত, বাচ্চারা ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলত, আর না হয় ঢিল মারত। যে কষ্ট আর যন্ত্রণা আমাকে ভেঙে ফেলতে পারেনি, সেই আমি জেল থেকে বেরিয়ে স্রেফ সমাজের চাপে মাঝেমধ্যেই ভাবতাম মরে যাওয়ার কথা। যে জীবন ধরে রাখার জন্য এগারো ঘণ্টা আমি নরকের ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলাম মাঝেমধ্যেই মনে হতো নিজেই সেই জীবনটা শেষ করে দেই। হয়তোবা দিতামও কিন্তু ওই সময়ে আমার জীবনে ফিরে এলো অতীত থেকে হারিয়ে যাওয়া একজন মানুষ।”
“আপনার গবেষণার টিমের সেই ছাত্র, যাকে এফবিআই ধরে নিয়ে গিয়েছিল এবং যে ওদের কাস্টাডি থেকে বেরোবার সাথে সাথেই গায়েব হয়ে গিয়েছিল। একভাবে বলতে গেলে এই লোকটার কারণেই আপনার ওই বেহাল দশা। বিশেষ ডিনামাইটগুলো সম্ভবত সে বানিয়ে দিয়েছিল ওদের কিন্তু সাজা ভোগ করতে হয়েছে আপনাকে। সেই লোকটা দেখা করল আপনার সাথে। তাই না?” প্রফেসর প্রশ্ন করল।
“আমি জানি না তুমি কীভাবে বুঝলে প্রফেসর, কিন্তু ঠিক তাই,” ফাত্তাহ আনমনেই বলে উঠল। “তখন তীব্র শীত পড়েছে নিউইয়র্কে। ক্রিসমাসের সময়। পুরো শহর ক্রিসমাসের সাজে সজ্জিত। চারপাশে উৎসবের আমেজ, কিন্তু আমার যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। একটা মানুষ নেই যার সাথে মন খুলে দুটো কথা বলতে পারব। তখন প্রায়ই মরে যাওয়ার কথা ভাবি। আমি এখনও ভাবি জাবের নামের মানুষটা যদি সেই রাতে আমার ওখানে না আসত তবে কি আমি সেই রাতেই সুইসাইড করতাম?” ফাত্তাহর গলায় এক মহাশূন্য পরিমাণ শূন্যতা।
“জাবের যখন এসে দরজায় কড়া নাড়ল আমি দরজা খুলে ওকে দেখে প্রথমে ওকে খুন করে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। আমার সকল যন্ত্রণার মূলে এই লোকটা। তুমি ঠিকই বলেছ, এর কারণেই আমার তখন ওই দশা। জাবেরও সেটা জানত। আমি ভেবেছিলাম সে এসেছিল আমার সাথে কথা বলতে, আমার কাছে মাফ চাইতে। কিন্তু তার পরিবর্তে সে আমাকে একটা প্রস্তাব দেয়। আমাকে তাদের সাথে কাজ করতে বলে…”
“আর আপনি তাই করলেন?” প্রফেসর ভুরু উঁচিয়ে জানতে চাইল।
ফাত্তাহ চোখ তুলে তাকাল প্রফেসরের দিকে। তার দৃষ্টিতে সেই পুরানো উত্তাপ-তাচ্ছিল্য আর সমস্ত পৃথিবীর দিকে ছুড়ে দেওয়া সেই চ্যালেঞ্জ। “আমার জায়গায় তুমি হলে কী করতে প্রফেসর?” তীক্ষ্ণ আর তরল গলায় জানতে চাইল সে।
প্রফেসর সামান্য চিন্তা করল, তারপর সাবধানে উত্তর দিল, “আপনার জায়গায় আমি হলেও হয়তো তাই করতাম,” তার গলায় কোনো তাপ-উত্তাপ নেই।
ফাত্তাহ ঝুঁকে থাকা অবস্থা থেকে সোজা হলো, “অনেক ধন্যবাদ প্রফেসর, সৎ উত্তর দেওয়ার জন্য। ওই মুহূর্তে আমার জন্য আর কোনো উপায়ও ছিল না। হয় আমাকে একা একা পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হতো অথবা এই একটাই উপায় ছিল। দুনিয়াটা এভাবেই চলে প্রফেসর। যদিও ব্যাপারটা আমি অনেক পরে উপলব্ধি করেছি। আজ যারা ভয়াবহ শত্রু কাল তারা সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতেই পারে। যে আমেরিকা আর ভিয়েতনাম সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল বর্তমানে সেই আমেরিকার সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট এরিয়াগুলোর একটা হলো ভিয়েতনাম দেশটা,” বলে ফাত্তাহ ভুরু নাচাল। “দুনিয়া এভাবেই চলে। যদিও তখন নিরুপায় হয়েই আমি জয়েন করেছিলাম কিন্তু যারা আমাকে ধ্বংস করেছিল তারাই হয়ে উঠল আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়। ওদের হাত ধরেই আমি জীবনে সবচেয়ে ভালো যেটা পারতাম সেটাকে আরও যাচাই- বাছাই আর পরীক্ষা করতে করতে হয়ে উঠলাম বিশ্বের সেরাদের একজন। ধীরে-ধীরে গড়ে তুললাম নিজের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক, ওদের কাছ থেকেই পেলাম দুনিয়ার সেরা ট্রেনিং,” ফাত্তাহর গলায় অহংবোধের ছোঁয়া।
“এখন আমি বুঝতে পারলাম, ইন্টারপোল কেন আপনাকে নিয়ে এতটা আগ্রহী,” প্রফেসর ঠান্ডা গলায় কথাটা বলে উঠতেই কানের ভেতর থেকে আফসারের সতর্ক গলা ভেসে এলো, “স্যার এই ব্যাপারটা সাবধানে হ্যান্ডেল করবেন প্লিজ।”
প্রফেসর আনমনেই একবার কাচের দিকে তাকাল। আফসার যদি তাকে দেখতে থাকে এই মুহূর্তে সেদিকে’ এই তাকানোতে ধরতে পারবে প্রফেসর এখন কিছু একটা করতে যাচ্ছে। ওদিকে একবার তাকিয়েই প্রফেসর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনল ফাত্তাহর দিকে। ফাত্তাহ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফাত্তাহ কি কিছু বুঝে ফেলল? বুঝে ফেললেও তেমন কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু প্রফেসর কিছু না বললেও ফাত্তাহ তার কথার জবাবে বলে উঠল, “ওরা আমার ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড অনেকগুলো কারণেই প্রফেসর। শুধু ফান্ডামেন্টালিস্ট গ্রুপ নয় আরও অনেক অনেক বিষয়ে এমন অনেক তথ্য আছে আমার এখানে,” বলে সে নিজের মাথায় টোকা দিল। “যা শুধু তাদের জন্য নয়, অনেকের জন্যই মূল্যবান,” বলে সে মৃদু হেসে উঠল।”
মুহূর্ত খানেকের জন্য বুঝতে না পারলেও লোকটার সেন্স অভ হিউমারের প্রশংসা করল প্রফেসর মনে মনে। নিজেও হেসে উঠল সে। তারপর খানিকটা কৌতুকের সুরেই বলে উঠল, “তারপর আপনার আশ্রয়দাতাদের সাথে আপনার ডিভোর্স হলো কখন?”
“ডিভোর্স হতে যাবে কেন!” ফাত্তাহ খুব অবাক হয়ে জানতে চাইল। “ওরা এখনও আমাকে ডাকলে এবং যথেষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে, সেইসাথে আমার শর্তে রাজি থাকলে এখনও আমি ওদের জন্য কাজ করতে রাজি। ওরা কেন যে-কারো হয়েই কাজ করতে রাজি,” বলে সে খুব ইঙ্গিতপূর্ণ একটা ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল প্রফেসরের দিকে। লোকটা কি তাকে কোনো ইশারা দিল, প্রফেসর মনে মনে বলে উঠল, আরও বাজিয়ে দেখতে হবে।
কিন্তু সে কিছু বলার আগেই ফাত্তাহ আবারও বলতে লাগল। “যখন আমি অনুভব করলাম ওদের কাছ থেকে আমার পাওয়ার মতো আর বেশি কিছু নেই, ধীরে ধীরে আমি সরে আসতে থাকি ওদের থেকে। এবং—”
“ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে শুরু করেন, তাই না?” ফাত্তাহর অসম্পূর্ণ বাক্য সম্পূর্ণ করে দিল প্রফেসর।
“একদম ঠিক বলেছ প্রফেসর। যখন তুমি নিজেই নিজের মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটতে শিখে গেছ তখনও যদি তুমি আরেকজনের ওপর ভর দিয়ে হাঁটতেই থাকো তবে নিজে জীবনেও আর সিধে হতে পারবে না। হয় তুমি আধা পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকবে, আর না হয় অন্যের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে যেতে থাকবে।”
“কিন্তু এসব সংগঠন তো–”
“শোন প্রফেসর,” বলে সে মুখটকে আবারও সামনের দিকে নিয়ে এলো। “আমি ওদেরকে এমন এক অফার দিয়েছিলাম যা তারা রিফিউজ করতে পারেনি, কিংবা রিফিউজ করার মতো অবস্থায় ছিল না তারা,” গডফাদারের সেই বিখ্যাত ডায়লগটা বলেই সে জোরে হেসে উঠল ।
“তার মানে আপনাকে আর এইসব ফান্ডামেন্টালিস্ট গ্রুপগুলোকে জড়িয়ে যে বিভিন্ন কথা প্রচলিত আছে, এগুলো কি তবে সবই ভুয়া? আসলে আপনার মোটিভের পেছনে তাহলে ধর্মীয় কোনো প্রভাব নেই…?” প্রফেসর ইচ্ছে করেই তার বাক্যটার শেষে খানিকটা বিরতি দিল। গত কয়েক ঘণ্টা ধরে নিজের শব্দ দিয়ে যে জাল সে বিছিয়েছে এবার সে ধীরে ধীরে নিজের জাল গুটিয়ে আনতে শুরু করবে। আনমনেই সে আরেকবার ফিরে তাকাল কাচটার দিকে।
“আগেও একবার বলেছি প্রফেসর, আমি মানুষের বিবর্তনে বিশ্বাস করি। একটা ব্যাপার কখনো ভেবে দেখেছ, মানুষ একটা দুর্বল স্পিসিজ যে প্রাকৃতিক ফুড চেইনের একেবারে নিচের লেভেলে ছিল এক সময়। স্রেফ কয়েক লক্ষ কিংবা কয়েক হাজার বছরের ব্যবধানে সবাইকে টপকে প্রকৃতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই ধরিত্রীর বুকে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ফুড চেইনের একবারে ওপরে এসে বসল। এর পেছনে মানুষের সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা কাজ করেছে সেটা হলো তার যুক্তিবাদী মন। মানুষই হলো এমন একটা প্রাণী যার কল্পনাশক্তি আছে। মানুষই একমাত্র প্রাণী যে কল্পনা করতে পারে, সেইসাথে পারে সেই কল্পনা বাস্তবায়ন করতে। শুধু তাই না, সেই কল্পনা দিয়ে সে আবার অন্যকে প্রভাবিতও করতে পারে,” বলে সে মৃদু হেসে উঠল। “আমাকে নিয়েও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।”
প্রফেসর মৃদু নয় বেশ উচ্চৈঃস্বরেই হেসে উঠল। এবার ইচ্ছে করেই সে নিজের মুখটাকে খানিকটা এগিয়ে নিয়ে গেল প্রফেসরের দিকে। “তাহলে আপনি যা করেন সেটার পেছনে আপনার মোটিভ কী? যদি সেটা ধর্মীয় ব্যাপার না হয়, যদি কোনো চেতনা না হয় তবে সেটা কি শুধুই টাকা?”
ফাত্তাহ প্রায় রুম কাঁপিয়ে হেসে উঠল। “গত কয়েক ঘণ্টা ধরে আমার সাথে টানা কথা বলে আমার ব্যাপারে এই বুঝলে তুমি প্রফেসর? টাকা স্রেফ একটা মাধ্যম, ঠিক যেমন চেতনা হলো আচ্ছন্ন করার একটা মাধ্যম। আর তোমাদের মতে যেটা ধর্মীয় উন্মাদনা সেটাও এক ধরনের হাতিয়ার মাত্র। প্রফেসর, বেলা শেষে এসবই আসলে একজন ব্যক্তিবিশেষ এবং তার নিজের ব্যাপার,” বলে সে একটা আঙুল তুলল। “সৃষ্টির আদি থেকে তাই হয়ে এসেছে, এখনও তাই হচ্ছে এবং তাই হবে,” বলে সে মৃদু থেমে যোগ করল। “শুধু মাধ্যম বদলেছে। একটা সময় যেটা ছিল পাথর আর লাঠি, তারপর সেটা হলো তির-ধনুক-তলোয়ারের যুগ, আর বর্তমান যুগে মিসাইল বোমা কিংবা ভবিষ্যতে হয়তো হবে ক্যামিকেল বায়ো ওয়েপন কিংবা অন্য কিছু। বেলা শেষে সবই একজন মানুষ এবং তার ইগো, একজন মানুষ এবং তার গোপন লালসা পূরণ করার ইচ্ছে। একজন মানুষ এবং তার প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তি যোগ… সেই ফেরাউন, সেই চেঙ্গিস খান, সেই নেপোলিয়ন, সেই হিটলার কিংবা যার কথাই বলো তুমি। কারণ এই জিনিস আমরা আমাদের রক্তে লালন করে এসেছি। যুগ থেকে যুগে, সময় থেকে সময়ে। বংশপরিক্রমায় পরিষ্কার অক্ষরে-হিংস্রতার হরফে লেখা আছে আমাদের প্রত্যেকের জিনের ভেতরে, আমাদের ডিএনএ নামক ডেটাবেজে পাথরে খোদাই করার মতো খোদাই করা আছে এই হিংস্রতা, এই ইগো, এই লালসা,” ফাত্তাহ জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। উত্তেজিত হয়ে উঠেছে সে।
“আর আপনার ব্যাপারটা তাহলে কী?” প্রফেসর ঘোলাটে কাচের ওপাশ থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফাত্তাহর দিকে। তার দৃষ্টি স্থির, গলা ইস্পাতের চেয়েও কঠিন। “আপনি নিজে যা বললেন সেটার কোনোটারই সাথেই তো আপনার নিজের মোটিভ কিংবা উদ্দেশ্যের কোনো সামঞ্জস্য আমি দেখতে পাচ্ছি না।”
প্রফেসরের শান্ত মুখের দিকে আগুনে চোখে তাকিয়ে আছে ফাত্তাহ। তার গলন্ত লাভার মতো চাহনি দেখে প্রফেসর বুঝতে পারল ফাইনাল শো-ডাউনের সময় উপস্থিত।