শব্দজাল – ১৩

১৩

হাতে ধরে থাকা সিগারের ছাইটা এক টোকা দিয়ে সামান্য ঝেড়ে নিয়ে ফাত্তাহ বলতে শুরু করল, “আমি জীবনে প্রথম খুন করেছিলাম আমার বয়স যখন এগারো বছর। রাতটা ছিল দারুণ উত্তাল এক রাত। যেখানে আমরা থাকতাম সেখানে ভয়াবহ দাঙ্গা চলছিল সে-সময়,” বলে ফাত্তাহ সিগার থেকে নীলচে ধোঁয়া টেনে নিয়ে নাক-মুখ দিয়ে ছাড়তে ছাড়তে বলে চলল।

প্রফেসর আগেই পাইপটাকে নামিয়ে রেখেছিল, দাঙ্গার কথা শুনে মুখের ডগায় একটা প্রশ্ন চলে এসেছিল কিন্তু বহু কষ্টে সেটাকে নিবারণ করল সে। প্রশ্নটা করলে দুটো সমস্যা হতে পারত বিশেষ করে একবার গল্পের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে গেলে সেটাতে ফেরত আনাটা খুবই দুষ্কর হবে।

ফাত্তাহ বলে চলেছে, “খুনের ব্যাপারটা বলতে গেলে আগে আমার পরিবারের কথা খানিকটা বলে নিতে হবে,” বলে সে সামান্য হেসে উঠল। “হাসলাম কারণ আমি আমার পরিবারের কথা বলব আর সেটা তুমি কিংবা তোমরা,” বলে সে রুমের বড় কাচটা দেখাল। “তোমরা বিশ্বাস করবে সেটা আমি অবশ্য আশা করি না। বিশ্বাস করা না করা তোমাদের ব্যাপার, তাতে অমার বালটা হবে,” বলে সে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে একবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে যেতে লাগল।

“আমাদের পরিবার খুব বড় কিছু ছিল না। মধ্যম আয়ের একেবারেই সাধারণ একটা মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল আমাদের। আমার বাবা ছিল স্থানীয় বৈদ্য, যাকে এখনকার দিনের আধুনিক যুগে কোয়াক ডাক্তার বলে। কোয়াক হোক আর যাই হোক আমার আব্বার হাতে জাদু ছিল। আমার মনে পড়ে অত্র এলাকার একেবারে গরিব থেকে শুরু করে বড়লোক পর্যন্ত সবাই আসত আব্বার কাছে। আব্বার রোগীর প্রসার ছিল অসাধারণ। যে কারণে তার জনপ্রিয়তাও ছিল মারাত্মক। ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে সবাই বাবার রোগি ছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আব্বার অনেক পসার থাকলেও আমাদের সংসারে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ ছিল না। কারণ আমার আব্বা ছিল অত্যন্ত সহজ-সরল মানুষ, যে ধরনের মানুষকে আমরা বোকা বলি। ঠিক যে ধরনের মানুষ আমি নিজেও ছিলাম প্রথম জীবনে,” বলে সে আবারও সেই পুরানো তার ট্রেডমার্ক হাসি হেসে উঠল।

“যে যা দিত আব্বা তাতেই খুশি থাকত। জীবনেও কারো কাছে কিছু চাইতে পারত না। আর এসব মানুষের ক্ষেত্রে যা হয়, আব্বার ক্ষেত্রেও তাই হতো, বেশিরভাগ মানুষ সাধ্য থাকার পরও আব্বাকে ফি দিত না। তবে এতে আমাদের খুব বেশি সমস্যা হতো না। আমার আব্বা-আম্মা দুজনে এতটাই সহজ-সরল ছিল যে তাদের তেমন কোনো চাহিদাই ছিল না। যে কারণে অসুখী সংসার কী জিনিস আমি আর আমার ছোট বোন কোনোদিন বুঝতেও পারিনি। কিন্তু সময় খুব খারাপ জিনিস। সময়ের সাথে সাথে সব বদলে যায়,” বলে সে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।

“যে সময়ের কথা বলব সে সময়টাই ছিল খুব উত্তাল একটা সময়। চারপাশে চলছিল ভাঙনের গান। এরই মাঝে আমার বাবা-মা আর আমাদের পরিবার ছিল এক টুকরো দ্বীপের মতো। পরবর্তী জীবনে যতবার যা করেছি সবসময়ই সেই পরিবার আর সেই সময়টাকেই আমি মিস করেছি। তো যাই হোক, সময়টা বড় উত্তাল হয়ে উঠছিল কিন্তু এ নিয়ে আমার বাবার কোনো মাথাব্যথা ছিল না। ভিন্ন ভূমি, ভিন্ন জাতির মাঝে থাকলেও সে তার পরিবেশ চারপাশ আর চারপাশের ভিন্ন জগতের সেই মানুষদেরকে সে এতটাই ভালোবাসত যে সে কল্পনাও করতে পারেনি সময়ের খারাপ স্রোতের ধাক্কায় সেই মানুষগুলোই তার ও তার পরিবারের ক্ষতি করবে।”

“যা হয় আর কী,” প্রফেসর আনমনেই বলে উঠল। “স্থান-কাল আর পাত্র বদলায় কিন্তু মানুষের নিষ্ঠুরতা আর বেইমানিগুলো একইরকম রয়ে যায়।”

“একদম ঠিক, প্রফেসর,” ফাত্তাহর গলা যেন বহুদূর থেকে আসছে। “সত্যি কথা হলো দাঙ্গার সময়ে যেদিন আমাদের বাড়িতে আক্রমণ হলো আমার বাবা ভাবতেও পারেনি লোকগুলো আমাদের বাড়ি আক্রমণ করতে এসেছে। মজার কথা শুনবে প্রফেসর,” বলে ফাত্তাহ নিজের ভালো চোখটার দৃষ্টি স্থির করল প্রফেসরের ওপরে। “লোকেরা যখন আমাদের বাড়ি আক্রমণ করতে আসে আমার বোকা বাপ ভেবেছিল ওরা বুঝি আমাদের সাহায্য করতে এসেছে। সে সানন্দে দরজা খুলে দিয়েছিল যাতে ওরা আমাদের পাহারা দিতে পারে।”

“তারপর?” প্রফেসর প্রশ্ন করল।

“আমার বাবা ভাবতেই পারেনি যারা আমাদের বাড়িতে এসেছে ওরা আসলে আমাদেরকে মারতে এসেছে। নিজে থেকেই ঘরের দরজা খুলে দেয় তাদেরকে, বাবার সাথে ছিল আমার ছোট বোন। বসার ঘরেই তারা দুজনে মারা পড়ে। আর আমাকে আঁকড়ে ধরে আমার মা বাড়ির পেছন দিয়ে পালায়। আমাদেরকে সাহায্য করে আমাদের বাড়ির আয়া,” বলে সে আবারও হেসে উঠল। “মহিলা আমাদের দুজনকে নিয়ে বাড়ির পেছনে চলে আসে। চারপাশে তখন আগুন জ্বলছে। এর মাঝে তার সহায়তায় আমরা পালিয়ে বাড়ির পেছনের নদীর ঘাটে চলে আসি। সেখানে পৌঁছে দেখি এক দল লোক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এই মহিলা আসলে আমাদেরকে বাঁচানোর জন্য বাড়ির পেছন দিয়ে পালায়নি। বরং সে আমাদেরকে তার লোকদের হাতে তুলে দেয়ার জন্যই নিয়ে এসেছে। আমাদের বাড়ি আক্রমণের পেছনেও এই মহিলারই হাত ছিল। ওরা যখন আমাকে আর আমার মাকে ধরতে এগিয়ে আসে আমিই মাটি থেকে সরু একটা বাঁশের টুকরো তুলে নিয়ে ঢুকিয়ে দেই মহিলার চোখের ভেতরে,” বলে লোকটা একটু থামল।

“সত্যি কথা হলো, একজন মানুষের জীবনে বহু সময় আসে বহু ধরনের অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু আজো পরিষ্কার মনে পড়ে সেই মহিলার চোখের ভেতর দিয়ে চোখা বাঁশের টুকরোটা যখন ঢুকছিল অদ্ভুত এক জান্তব অনুভূতি আমাকে ছেয়ে ফেলেছিল। সেই অনুভূতির কোনো তুলনা নেই, প্রফেসর। জীবনে ছোট- ছোট এমন মুহূর্ত আসে যা বদলে দেয় মানুষকে। সেদিনের সেই ঘটনাটা ছিল আমার ভেতরটা বদলে যাওয়ার মুহূর্ত। আজও সেই মহিলার চোখের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া সেই বাঁশের টুকরো, সেই অনুভূতি, মহিলার আর্তচিৎকার আমি পরিষ্কার অনুভব করতে পারি। এখনও প্রতিবার যেকোনো জায়গায় বোমা লাগানোর সময় সেই একই অনুভূতি বার-বার ফিরে আসে আমার মাঝে। বারবার সেই জান্তব অনুভূতিতে ছেয়ে যায় আমার ভেতরটা,” ফাত্তাহর ভালো চোখটাতে যেন আগুন জ্বলছে। তার চামড়ায় মোড়ানো মানুষটার ভেতরের জান্তব পশুটা যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

ফাত্তাহও যেন অনুভব করতে পারছে সেই ব্যাপারটা। তাই নিজেকে একটু শান্ত করার জন্য সে প্রসঙ্গ খানিকটা পরিবর্তন করল। “আমাদেরকে ওরা ওখানেই মেরে ফেলতে চেষ্টা করে। কিন্তু হট্টগোলের এক পর্যায়ে মা আমাকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেয়। এরপর ভাসতে ভাসতে আমরা—” বলে সে হঠাৎ থেমে গেল। একটু তীর্যক ভঙ্গিতে ফিরে চাইল প্রফেসরের দিকে। “আমার ধারণা আমি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি প্রফেসর। এবার কি আমার প্রশ্ন করার পালা?” তার গলা অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। নষ্ট চোখটার লাল শিরাগুলোর ভেতরে রক্ত প্রবাহও কমে এসেছে অনেকটাই। গলায় বরং সেই পুরানো অহংবোধে ঘেরা তাচ্ছিল্যের ভাবটা ফুঁটিয়ে তুলে সে প্রশ্ন করল।

“প্রফেসর, তুমি কি কাউকে খুন করেছ কখনো? সেই জান্তব অনুভূতি হয়েছে কখনো তোমার ভেতরে?” বলেই সে জোরে জোরে হেসে উঠল। “সরি, প্রফেসর সরি। তোমাকে এ ধরনের প্রশ্ন করাটা মনে হয় তোমার জন্য খানিকটা ইনসাল্টিং হয়ে যাচ্ছে। তোমার এই তেল চিকচিকে সুন্দর চেহারা, দামি সুট আর মার্জিত কথাবার্তার সাথে প্রশ্নটা ঠিক যেন গেল না, কি বলো প্রফেসর? তোমাকে বরং আমি ভিন্ন কোনো প্রশ্ন করি। “

প্রফেসর কিছু না বলে স্থির তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে। “বলুন।”

“আসলে প্রশ্ন করার আগে, খুব ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে শার্লক হোমস গিরি ফলাতে,” বলে সে আবারও উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠল। প্রফেসরের এয়ার পিসের ভেতর দিয়ে আফসারের গলা ভেসে এলো।

“সরি স্যার ইন্টারাপ্ট করার জন্য। ফাত্তাহ সম্ভবত আপনাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে।’

আফসারের কথার জবাবে কিছু না বলে কিংবা কোনো ধরনের ইশারা না করে বরং প্রফেসর মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলল। সে নিজেও অনুমান করতে পারছে ফাত্তাহ লোকটা নিজের স্মৃতি শেয়ার করার সময়ে একটু উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। সে সম্ভবত সেটারই শোধ নেওয়ার চেষ্টা করবে।

প্রফেসরের মনে যতই ভাবনা চলুক ফাত্তাহর থামাথামির কোনো লক্ষণ নেই। “আমি তোমাকে প্রশ্ন না করে বরং তোমার ব্যাপারে কিছু জিনিস অনুমান করার চেষ্টা করি। তোমাকে দেখেই বোঝা যায় বড়লোক ঘরের ছেলে তুমি,

সেইসাথে মেধাবী,” শেষ শব্দটা উচ্চারণ করার সময়ে শব্দটাতে অতিরিক্ত জোর দিল সে। “গুডলুকিং, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো একেবারে আদর্শ ছেলে। ঠিক যেরকম ছেলের স্বপ্ন দেখে বাবা-মায়েরা। ঠিক যেরকম ছেলেদের স্ত্রী হতে চায় সুন্দরী মেয়েরা। বিশেষ অবস্থায় ঠিক যেরকম ছেলেদেরকে মনে মনে কল্পনা করে অর্গাজম হয়ে যায় মেয়েদের,” যেন ভীষণ মজার কোনো কৌতুকের পাঞ্চ লাইন ধরে ফেলাতে দম ফেটে হাসি আসছে এমনভাবে উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠল সে।

প্রফেসর কিছু না বলে চুপচাপ তাকিয়ে আছে তার দিকে।

ফাত্তাহ হেসেই চলেছে। হাসতে হাসতে একসময় সে খানিকটা দম নিয়ে বলে উঠল, “ওহো গড, প্রফেসর। আচ্ছা যাও, তোমাকে প্রথম খুন-টুন এসব নিয়ে ঘোরতম জটিল কোনো প্রশ্ন না করে বরং সহজ কোনো প্রশ্ন করি। বরং তোমার প্রথম সেক্সের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো প্রফেসর। কোথায়, কখন, কীভাবে, তোমার অনুভূতি কী ছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি,” বলে সে আবারও উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠল।

আবারও এয়ারপিসে আফসারের গলা ভেসে এলো। ‘স্যার, আপনি চাইলে অ্যাভয়েড করতে পারেন। এই লোক অপমানজনক কথাবার্তা বলে আপনাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে। আপনি উত্তর না দিলেও কোনো সমস্যা নেই।’

আফসারের কথার জবাবে প্রফেসর কিছুই বলল না বরং ধীরে ধীরে তার মুখে ফুটে উঠল মৃদু হাসি। ফাত্তাহ তখনও হাসছিল। প্রফেসর যেন কোনো বন্ধুর খিল্লি ওড়ানো প্রশ্নের জবাবে খুব সিরিয়াস কোনো পরীক্ষার সাজেশন বলছে এমন সুরে কথা বলে উঠল।

“বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে,” সে চশমার আড়াল থেকে তাকিয়ে আছে ফাত্তাহর দিকে। তার গলার স্বর যেমন তরল মুখের ভাবভঙ্গি যেন আরও অনেক বেশি তরল। ফাত্তাহ তাকে যে প্রশ্নটা করেছে এটা যেন খুবই সিরিয়াস কোনো প্রশ্ন এমনভাবে সে জবাব দিতে লাগল।

“আমি তখন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যারয়ের ছাত্র ছিলাম। মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছি। ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হওয়া উপলক্ষ্যে আমাদের ব্যাচের সব ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে একটা পার্টি দিয়েছিল। সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিল আমাদের ব্যাচেরই একমাত্র এশিয়ান মেয়ে জেসমিন। উদ্দাম পার্টি আর কয়েক রাউন্ড বিয়ারের পর আমি আর জেসমিন সবার থেকে আলাদা হয়ে যাই। ফার্স্ট ইয়ার থেকেই আমাদের ভেতরে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছিল। কিন্তু সেইদিন সেই পার্টিতে আমাদের ভেতরকার সম্পর্কটা একটা ভিন্ন পরিণতি পায়,” এই পর্যন্ত বলে প্রফেসর একটু থামল।

সে হাতে ধরা পাইপটা নড়াচড়া করতে করতে বলে চলল, “ যেমনটা বলেছি, পার্টির এক পর্যায়ে আমরা দুজনে আলাদা হয়ে যাই। তারপর সেখান থেকে আমরা দুজনেই চলে যাই আমার হোস্টেলের রুমে। সেখানেই ঘটে আমাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো- বলতে বলতে প্রফেসর থেমে গেল। ফাত্তাহ খুব সিরিয়াস দৃষ্টিতে প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রফেসর মৃদু ভুরু নাচিয়ে বলে উঠল, “কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। আপনার প্রশ্নের দুটো অংশ ছিল। প্রথম অংশে আপনি জানতে চেয়েছিলেন, কখন, কোথায়, কার সাথে। আর দ্বিতীয় অংশে আমার অনুভূতি কী ছিল। আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের জবাব আমি চাইলেও দিতে পারছি না। আমার অনুভূতির বিস্তারিত বিবরণ আমি দিতে পারব না কারণ—” বলে ইচ্ছে করেই প্রফেসর খানিকটা নাটকীয়তা আনার জন্য কথার ধারাবাহিকতায় একটু থেমেই সে আবারও যোগ করল, “কারণ, ওটা একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছিল।”

প্রফেসর এটুকু বলতেই জোরে হেসে উঠল ফাত্তাহ। কানের ভেতর থেকে আফসারেরও মৃদু হাসির আওয়াজ ভেসে এলো। প্রফেসর নিজেও হেসে উঠল। “আমরা দুজনেই একটু বেশি ড্রাঙ্ক ছিলাম। দুজনেই অতিরিক্ত উত্তেজিত ছিলাম বিধায় সেদিন ব্যাপারটা ঘটাতেই পারিনি আমরা,” বলে খুব ক্যাজুয়াল একটা ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল প্রফেসর। “আশা করি আমার এই জবাবে আপনি হাতাশ হননি,” তার কথার শেষ অংশটুকুতে বেশ খানিকটা ঝাঁঝ ছিল কিন্তু সেটাকে কোনোভাবেই রাগের বহিঃপ্রকাশ বলা যাবে না। বরং তাতে যেন এবার প্রফেসরের তরফ থেকে খানিকটা তাচ্ছিল্য মেশানো ছিল। ফাত্তাহ না চাইতেও সে নিজের দৃষ্টি খানিকটা নিচের দিকে নামিয়ে নিল। সরাসরি তাকাচ্ছে না সে প্রফেসরের দিকে। প্রফেসরকে অপমান করার উদ্দেশ্যে করা প্রশ্নটা প্রফেসরকে ছোট না করে বরং তাকেই খানিকটা নিচু করেছে এটা না বোঝার মতো বোকা লোক সে নয়।

প্রফেসর তার প্রশ্নের জবাব দিয়ে শান্তভাবে তাকিয়ে রইল অ্যালাবার্ট ফাত্তাহর দিকে। খানিকক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে ফাত্তাহ যখন চোখ তুলে তাকাল প্রফেসরের দিকে তার দৃষ্টিতে একেবারেই নতুন একটা ভাব লক্ষ করল প্রফেসর। এটাকে কি হিংস্রতা বলবে, নাকি তাচ্ছিল্য বলবে, নাকি সমীহ ঠিক বুঝতে পারল না প্রফেসর।

ফাত্তাহ তার দিকে এক দৃষ্টিতে নীরবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে খানিকটা চিবিয়েই বলে উঠল, “প্রফেসর তুমি একটা পাগল লোক, সেটা জানো? তোমার এই পরিপাটি খোলসের ভেতরে তুমি একটা খেয়ালি মানুষ। “

“হয়তোবা,” মুখে খানিকটা হাসি ফুটিয়ে তুলে টেবিল থেকে লাইটার আর পাইপটাকে তুলে নিয়ে কাঠের বাক্সে রেখে টো হাতে নিয়ে সে উঠে দাঁড়াল। “আমার মনে হয় আমাদের খানিকক্ষণ ব্রেক নেওয়ার সময় হয়েছে। আপনারও খানিকটা রিফ্রেশ হওয়ার প্রয়োজন হয়েছে,” প্রফেসর এই পর্যন্ত বলতেই ফাত্তাহ আড়চোখে একবার প্রফেসরের ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে কিছু না বলে সামান্য মাথা ঝাঁকাল।

“আমরা ব্রেক নিয়ে দশ মিনিট পর আবার শুরু করব আমাদের কথোপকথন,” বলে প্রফেসর পেছন ফিরে এসে দাঁড়াল রুমের দরজার সামনে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *