রাষ্ট্রনায়ক : ব্যক্তিত্ব
ওমরের কর্তৃত্ব বিস্তৃত ছিল সুবিশাল ভূখণ্ডে পূর্বে ও পশ্চিমে বহু দেশের নানা ধর্মাবলম্বী নানা জাতির উপর। কিন্তু তাঁর প্রতাপ ছিল দোর্দণ্ড, শাসন ছিল নিরঙ্কুশ ও অব্যাহত এবং শান্তি ও শৃঙ্খলা পূর্ণভাবে বিরাজিত ছিল রাষ্ট্রের সর্বত্র এবং দূরতম অগম্য প্রান্তদেশেও। তাঁর পূর্বে ও পরে বহু প্রতাপশালী রাষ্ট্রপতি রাজ্য শাসন করেছেন, শান্তি ও শৃঙ্খলা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। কিন্তু এ-দুয়ের মধ্যে নীতিগত পার্থক্যটা বিশেষ লক্ষণীয়। তাঁদের রাষ্ট্রে শাসনের মৌলনীতি ছিল, রাজদ্রোহের সামান্যতম আভাসে ন্যায়নীতি বিসর্জন দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা এবং একের অপরাধে সমস্ত পরিবারটিকে নির্মূল করে ফেলে এমন ভয়-বিভিষিকা সৃষ্টি করা, যার ফলে অন্য আর কারও মাথায় বিদ্রোহ করার কল্পনাও না জাগে। কিন্তু খলিফা ওমর ন্যায় নীতি থেকে এতোটুকু ভ্রষ্ট না হয়ে প্রকাশ্য রাষ্ট্রদোহীদেরকে দেখেছেন ক্ষমাসুন্দর চোখে এবং নিরাপত্তার খাতিরে তাদেরকে আত্মীয়-পরিজনসহ আপন পছন্দ স্থানে সরকারী খরচে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আর বুসের বাসিন্দারা বারে বারে বিদ্রোহের ধ্বজা তুলেছে, কিন্তু তাদের উপর ওমর কোন রকম দমননীতি প্রয়োগ বা হিংসাত্মক ব্যবস্থা অবলম্বন করেন নি নাজরানের খ্রিস্টানরা চল্লিশ হাজার সৈন্য সংগ্রহ করে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তাদেরকেও নির্মূল না করে তিনি স্বেচ্ছায় অন্যত্র বসবাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সরকারী ব্যয় এবং দুবছরের জন্যে জিয়াও মাফ করে দিয়েছিলেন।
ওমর খেলাফতের ভার গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে দুটি ভীষণ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হন। একদিকে বিদেশী বিধর্মী ও বিজাতি খ্রিস্টান ও পারসিককেরা বহু শতাব্দী সাম্রাজ্যবাদের সব রকমের ভোগ-বিলাসে অভ্যস্ত হয়ে মুসলিমদের হাতে সহসা ভাগ্য পরিবর্তনকে সহজে গ্রহণ করতে পারে নি, নতি স্বীকার করে নি; বরং সময় ও সুযোগ বুঝে বারে বারে বিদ্রোহের ধ্বজা তুলেছে। অন্যদিকে আরবের মধ্যেই এমন কয়েকটি গোত্র ও বংশ ছিল, যারা ওমরের খেলাফত সহজে মেনে নিতে চায় নি; বরং হিংসার বশবর্তী হয়ে নিজেদের উচ্চাভিলাষ পূরণ ও খেলাফতের আসন অধিকার করবার প্রয়াস পেয়েছে। ওমর শান্তভাবে ও ধীর মস্তিষ্কে এ দুটি দলকে সংযত রেখেছেন, কোন রকম দমননীতির আশ্রয় না নিয়ে। বনি হাশিম ও বনি-উমাইয়া মনে করতো, খেলাফত তাদেরই ন্যায্য ও বিধিদত্ত অধিকার ওমর অন্যায়ভাবে তাদের বঞ্চিত করেছেন। আমর- বিন্-আসের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিও যখন সরকারী রাজস্বের জন্যে হিসাবদিহি করতে বাধ্য হন তখন ক্ষোভে বলেছিলেন: কী ভাগ্যের পরিহাস। আইয়্যামে জাহেলিয়াতে আমার পিতা কিংখাবের জামা পরতেন, আর খাত্তাব মাথার বয়ে জ্বালানী কাঠ বেচে খাবার যোগাড় করতো। আজ সেই খাত্তাব-নন্দন আমার উপর মনিবানা চালাচ্ছে। হাশেমীরা কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারে নি যে, একজন তাইয়েমী (আবুবকর) এবং একজন আবি (ওমর) তাদের উপস্থিতিতে খলিফা হবে। তারা প্রকাশ্যে খলিফার পদবি লোপের প্রচারণা করতো। শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ বলেন: জুবায়ের এবং একদল হাশেমী বিবি ফাতেমার গৃহে জটলা করতেন এবং খেলাফত উচ্ছেদের আলোচনা করতেন।
স্থিতধী ওমর এসবে এতোটুকু বিচলিত হন নি, বরং শিষ্টাচার ও সহানুভূতির মাধ্যমে সকল শ্রেণীর হৃদয় জয় করতে সমর্থ হয়েছেন। আরবরা স্বভাবতই যথেচ্ছাচারী, আত্মসর্বস্ব ও স্বাধীনতাপ্রিয় আর তার দরুন তারা কারও শাসন শৃঙ্খল স্বীকার করতো না। আরব-চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্যগুলি নষ্ট করে দিয়ে পরবর্তীকালের আমীর মুআবীয়ার মতো নিজের আসন নিরঙ্কুশ ও নিঃসংশয় করবার মনোবৃত্তি ওমরের ছিল না; তিনি সকল প্রতিকূল মনোভাবাপন্ন দলের হৃদয় জয় করে তাদের মনোরাজ্যে নিজের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এটাই ছিল ওমরের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গৌরবজনক ভূমিকা।
কিন্তু ‘ওমর’ নাম এমনই মহিমান্বিত, এমনই শ্রদ্ধা, ভয় ও ভীতিব্যঞ্জক যে, তার শাসিত সুবিশাল ভূখণ্ডে কারও সাধ্য ছিল না, তাঁর বিরুদ্ধে টুশব্দ করে, তাঁর ফরমান অমান্য করে, তাঁর সম্বন্ধে ‘কি-ও-কেন’ প্রশ্ন তোলে। আলেকজান্দার, তায়মুর, নেপোলিয়ান প্রভৃতি বিশ্ববিজয়ী সম্রাটের নামেও মানুষের বুক দুরু দুরু কেঁপে উঠতো কিন্তু তাঁদের রাজসিক শান-শওকত, শতসহস্র দেহরক্ষী, চৌকিদার চোবদার ছিল তাঁদের মহিমা বা ভীতির প্রতীক। মুহূর্তে মুহূর্তে তাঁদের উপস্থিতিতে প্রত্যক্ষ হয়েছে কতো ভীতি প্রদর্শন, কতো শাসন-বচন। আর শত তালি-শোভিত জীর্ণ জামা পরিহিত নিরস্ত্র একাকী খলিফাতুল মুসলেমীন ওমর ফিরেছেন পথে-প্রান্তরে। অথচ আরব, মিসর, সিরিয়া, ইরাক, ইরান শিহরিত হয়েছে তাঁর নামোচ্চারণে, কম্পিত হয়েছে তাঁর তর্জনী হেলনে। পৃথিবী চমকিত, হতচকিত হয়েছে, যেদিকে তিনি দৃষ্টি ফিরিয়েছেন। সিরিয়ায় চলেছেন ইসলাম জগতের প্রহরীবিহীন চীরধারী সম্রাট খলিফা ওমর একা পথে উটের রশি ধরে। তবুও চারদিক নীরবে কেঁপে উঠেছে-পৃথিবীর শক্তিকেন্দ্র গতিলাভ করেছে।
ওমর প্রশাসনিক প্রয়োজনে খালিদকে পদচ্যুত করেছেন ভীষণতম যুদ্ধের মহাসন্ধিক্ষণে একটি ফরমান জারী করে। অথচ তখন খালিদের লোকপ্রীতিতে দিগ্দিগন্ত মুখরিত। আর বিশ্ববিজয়ী বীর খালিদ সে ফরমান মান্য করেছেন বিনা প্রতিবাদে মহাভক্তি ভরে। ইরান-বিজয়ী সা’দ-ওক্কাসের কৈফিত তলব করেছেন ওমর সা’দ দুরু দুরু বুকে মদীনায় এসে পদচ্যুতির হুকুম গ্রহণ করেছেন সামান্য সিপাহীর বেশে, কোনও প্রতিবাদ না জানিয়ে। আমর-বিন্-আসের মতো মহাপ্রতাপশালী ব্যক্তির পুত্রকে ওমর শাস্তি দিয়েছেন পিতৃসমক্ষে বেত্রাঘাতে জর্জরিত করে, আমর নীরবে তা দেখেছেন। আমীর মুয়াবিয়া ও আমরের শক্তি-গর্ব ও শান-শওকত সর্বজনবিদিত, তবুও তাঁরা ওমরের নামে সন্ত্রস্ত, শঙ্কিত। জনগণ ওমরের এ-সব কাজ অকুণ্ঠায় সমর্থন করেছে। এমনই ছিল ওমরের রাষ্ট্র কৌশল এবং প্রশাসনিক প্রতিভা ও প্রভাব।
এখানে আরও একটি দিক লক্ষ্যণীয়। আলেকজান্দার প্রতি পদক্ষেপে এরিস্টটলের জ্ঞান-বুদ্ধিতে চালিত হয়েছেন, বাদশাহ্ আকবরের শক্তি সামর্থের পিছনে ছিলেন মানসিংহ, আবুল ফজল, টোডরমল প্রভৃতি নও-রতন-সভার বীর মনীষীবৃন্দ। আলফ- লায়লা বিশ্ববিশ্রুত আব্বাসী খলিফাদের শক্তি গরিমার পশ্চাতে ছিল বারমেকী বংশের মনীষা। কিন্তু ওমর ছিলেন নিতান্তই একাকী, অন্যপক্ষে স্বয়ংপ্রভু রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ইচ্ছামতো সিপাহসালার, প্রাদেশিক শাসন নিযুক্ত করেছেন, কিন্তু প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বিনা দ্বিধায় খালিদ, আমর, আম্মার, আয়ায-বিন্-ঘনমকে পদচ্যুত করেছেন। তবু তার দরুন শাসন-যন্ত্রে এতোটুকু দুর্বলতা দেখা দেয় নি, বিজয় অভিযানের গতিরোধ হয় নি। সকলেই ছিলেন ওমরের শাসনযন্ত্রের হাতিয়ারের মতো, অবাঞ্ছিত ও অপ্রয়োজনীয় হলে ওমর নির্দ্বিধায় ছাঁটাই করে নতুন উপযুক্ত লোক বেছে নিয়েছেন। কেউই ওমরের চোখে অপরিহার্য হয়ে ওঠেন নি |
ওমর ছিলেন সুদক্ষ রাষ্ট্রনায়ক। সমকালীন মশহুর সাহাবাদের কেউই এ বিষয়ে তাঁর যোগ্যতার ধারে-কাছে ছিলেন না। আরব, ইরাক, সিরিয়া, ইরান, মিসর প্রত্যেক দেশেই শাসননীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি ছিল ভিন্ন ভিন্ন। তীক্ষ্ণধী ওমর এ-সব নীতি বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে অনুধাবন করে প্রত্যেক দেশেরই শাসন-যন্ত্র সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করে তোলেন। ইরাকের মরান ও ইরানের দেহকান্ উপাধিধারী জমিদার-জোতদারদেরকে উপযুক্ত রাজকীয় বৃত্তিদান করে শান্ত, সংযত ও অনুগত করে রাখেন। সিরিয়া ও মিসরের রোমক শোষণ জর্জরিত কৃষকও নাগরিকদের ভূমিস্বত্ব স্বীকার করে নিয়ে তাদেরকে উৎপীড়ন ও শোষণ থেকে রক্ষা করেন এবং সহৃদয় ব্যবহারে এমনভাবে . তাদের হৃদয় জয় করে ফেলেন যে, পরবর্তীকালে রোমকদের বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়াতে ও মুসলিমদের সাহায্য করতে ইতস্ততঃ করে নি। মিসরের রোমক- রাজপ্রতিনিধি সাইরাস প্রথম থেকেই মুসলিমদের শুভানুধ্যায়ী হয়ে উঠেছিলেন। তবুও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে ওমর প্রত্যেকটি ঘাঁটিতে যেমন বস্ত্রা, কুফা, ফুস্তাত সেনানিবাস স্থাপন করে সেগুলি খাস আরবদের উপনিবেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। তা ছাড়া উপযুক্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তা নির্বাচন করা, সময়ে সময়ে তাদেরকে বদলি করা, তাঁর আর একটি কৌশল ছিল। হাশেমীদের কাউকে রাজনৈতিক কারণে প্রশাসনিক কাজের ভার দেওয়া হতো না। আরও একটি আদর্শ লক্ষণীয়। ওমরের স্বজনপ্রীতির বালাই ছিল না, এজন্যে তাঁর গোত্রীয় কেউ প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অধিকার পাননি। কাজের চাহিদা ও গুরুত্ব অনুযায়ী সঠিক এবং যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন ও নিয়োগ করা ওমরের আর একটি প্রশংসনীয় কৃতিত্ব; লোক-চরিত্র অনুধাবনে ছিল তাঁর আশ্চর্য ক্ষমতা এবং সারা আরবের মনীষীদীপ্ত ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নাম ছিল তাঁর নখাগ্রে এবং যোগ্যতম ব্যক্তিকে তাঁর যোগ্য পদে নিয়োগ করা হতো। আমীর মু’আবীয়া, আমর, মুগিরা, যিয়াদ প্রশাসনিক পদে, খালিদ, সা’দ, নোমান, আয়ায সেনানায়কের পদে, মায়েদ-বিন্-সাবিত ও আবদুল্লাহ্-বিন্-আরকামের মতো শিক্ষিত ব্যক্তিরা সেক্রেটারীর পদে, কাজী শুরায়হ্ ক্কাব, সালমান আবদুল্লাহ্-বিন্-মাসুদ বিচারপতি পদে অসীম যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সংক্ষেপে যিনি যে কাজের উপযুক্ত, তাঁকে সেই কাজেই নিয়োগ করা হতো। জনৈক পাশ্চাত্য লেখক বলেন: ওমরের ক্যাপটেন ও গভর্নর নিয়োগনীতি স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে ছিল এবং আশ্চর্যভাবে কল্যাণকর হয়েছিল।
ওমরের আর একটি রাষ্ট্রনীতি ছিল অন্যদেশের আইন ও শাসননীতি সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল হওয়া এবং যেগুলি উত্তম ও আদর্শিক সেগুলি বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করা। ভূমিকর-নীতি, শুল্ক-নীতি, দরওয়ারী প্রশাসনিক নীতি, হিসাব পরীক্ষা নিরীক্ষা- নীতি, সেনানিবাস স্থাপন ও রসদ যোগান বিভাগ প্রবর্তন প্রভৃতি পারসিক ও রোম রাষ্ট্র চালনা-নীতিসমূহ তিনি রদবদল ও ইসলাম-অভিসারী করে অসঙ্কোচে গ্রহণ করেছিলেন। বাহ্যত জিয়ার ধর্মীয় সম্পর্ক থাকলেও তার হার নিরূপণ ও আদায় প্রথা নওশেরওয়ার নীতির অনুসারী ছিল। জিয়া সম্বন্ধে আলোচনাকালে তাবারী বলেছেন: এ-সব আইন পারস্য জয় করার পরে প্রবর্তন করেন। ইসলাম জগতের দার্শনিক- চিকিৎসক-বিজ্ঞানী মহামনীষী ইবনে সিনার সমসাময়িক দার্শনিক ইবনে-মাস্কাবীহ ওমরের শাসন-নীতি আলোচনাকালে আরও বিশদ করে বলেছেন: ওমর কয়েকজন পারসিককে নিজের সাহচর্যে রাখতেন। তাঁরা রাজাদের বিশেষত পারসিক রাজাদের শাসন-নীতি ওমরকে পাঠ করে শোনাতেন। তাঁদের মধ্যে নওশেরওয়ার কালেরই বেশি, কারণ ওমর নওশেরওয়ার শাসন-প্রণালী পছন্দ করতেন এবং প্রায়ই সেগুলি প্রয়োগ করতেন। আমরা দেখেছি, ফারেসের রাজা হরমুজান ইসলাম কবুল করে মদীনাবাসী হন ও ওমরের প্রশাসনিক ব্যাপারে অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠেন। এখানে এ কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ওমর পূর্বযুগের ও বিদেশী রাজন্যদের সুনীতিগুলি গ্রহণ দুর্নীতিগুলি একেবারে নির্মূল করেন। কূলগৌরব, আত্মমন্যভাব, অহেতুক ব্যঙ্গবিদ্রূপ, কামোত্তেজক কবিতা রচনা, যৌন বিকৃতি ও নারী জাতির অবমাননা এবং পানদোষ নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
ওমর গোয়েন্দা ও গুপ্তচর বিভাগের সৃষ্টি করেন, একথা উল্লেখিত হয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রনীতিরও এ বিভাগটি এক অপরিহার্য অঙ্গ। তাবারী বলেন: ওমরের কিছুই অগোচর থাকতো না। সংবাদবাহকেরা তাঁকে জানাতো ইরাকে কারা বিদ্রোহ করেছে, আবার কারা সিরিয়ায় পুরস্কৃত হয়েছে। সামান্যতম ঘটনাও তাঁর গোচরে আসতো। মায়সনের শাসক নোমান বিলাসস্রোতে গা ভাসিয়ে স্ত্রীকে কবিতার ব্যঙ্গচ্ছলে লিখে পাঠান: সাবধান! খলিফা যদি জানতে পারেন আমরা বাস করছি আর পানোৎসবে মত্ত আছি, এটা তিনি মোটেই পছন্দ করবেন না। ওমর কিন্তু যথা সময়ে এ খবর পান এবং সঙ্গে সঙ্গে নোমানকে বরখাস্ত করেন। ওমর কিন্তু এই চির-সজাগ সৃষ্টি ও বিচক্ষণতা সম্বন্ধে সম্যক অবহিত থাকায় প্রাদেশিক শাসকরা সর্বদাই হুঁশিয়ার থাকতেন এবং তাঁর বিনা পরামর্শে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করতেন না।
ওমরের শাসননীতির কয়েকটি প্রধান গুণ ছিল। তার একটি, সকলের প্রতি সমান আচরণ। ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকলেই তাঁর নিকট সমান ব্যবহার লাভ করতো। আত্মীয়-পর সকলেই রাষ্ট্রের নীতিতে সমান চোখে দৃষ্ট হতো ঘাসসানী গোত্র প্রধান জাবালা ইসলাম গ্রহণ করেন। একদা কা’বা প্রদক্ষিণকালে জনৈক সাধারণ লোক তাঁর পাগড়ী মাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি তাকে চপেটাঘাত করেন এবং সেও তাঁকে সমান চপেটাঘাত করে। জাবালা ওমরের নিকট প্রতিবাদ জানালে ওমর রায় দেন, উচিত শাস্তিই হয়েছে। জাবালা বংশমর্যাদার দাবী তুলে বলেন, এমন ব্যবহারে লোকটির মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু ওমর বলেন: আইয়ামে জাহেলিয়াতে এ নিয়ম ছিল বটে, কিন্তু ইসলাম উচ্চ-নীচ সকলকে একই সমতলে এনে দিয়েছে। রাগে, ক্ষোভে জাবালা ইসলাম ত্যাগ করে কনস্টান্টিনোপলে পলায়ন করেন। একবার কোরায়েশ প্রধানরা ওমরের সাক্ষাৎপ্রার্থী হন। সোহায়েব, বিলাল, আমার এবং আরও কয়েকজন মুক্তদাসও সেখানে আছেন। ওমর প্রথমে বিলাল প্রভৃতিকে ডাক দিলেন, কোরায়েশ-প্রধানরা অপেক্ষা করতে লাগলেন। আবুসুফিয়ান অপমানিত বোধ করে বলেই ফেলেন : অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! আযাদ গোলামরা পায় প্রথমে সাক্ষাৎ, আর আমরা বাইরে বসে থাকি প্ৰতীক্ষায়।
কাদিসিয়ার যুদ্ধের পর আরব-গোত্রসমূহকে যখন বৃত্তি দেওয়া হয়, তখনও নানা প্রতিবাদ শোনা যায়। ওমর বংশমর্যাদার প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে, ইসলামের সেবায় মানদণ্ডের বৃত্তি নির্ধারণ করেন। যারা প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেছে, কিংবা প্ৰথম জেহাদসমূহে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে, তালিকায় তাদের নাম ওঠে সবার ঊর্ধ্বে, তার পর নবীবংশের লোকদের, তার পর অন্য সকলের। প্রভু-গোলামে কোন পার্থক্য রইতো না; অথচ আরবে গোলামদের অবস্থা ছিলো সবচেয়ে ঘৃণ্য ও শোচনীয়। এমন কি খলিফার পত্রে আবদুল্লাহ্র হার ধার্য হয় ওসামা-বিন্-যায়েদের চেয়ে কম। আবদুল্লাহ্ প্রতিবাদ করলে ওমর ধমক দেন, “রসূলুল্লাহ্ তোমার চেয়ে ওসমানকে বেশি স্নেহ করতেন।
ওমরের এই সমদর্শী নীতি রাজ্যশাসনে সমাজে, বিচারালয়ে সর্বত্র সমান অনুসৃত হতো, কোন বৈষম্যের লেশমাত্র ছিল না। আমর বিন্-আস্ মিসরের জামে মসজিদে নিজের জন্যে একটা উচ্চ মিনার স্থাপন করেছিলেন। ওমর তাঁকে ভর্ৎসনা করে লেখেন : তুমি কি ভেবেছো যে, অন্য সব মুসলিম তোমার নিচে বসবে, আর তুমি উচ্চাসনে বসবে রাজসিক গর্ব নিয়ে?
একবার খোদ্ ওমর প্রতিবাদী হিসেবে যায়েদ-বিন্-সাবিতের এজলাসে হাযির হলে যায়েদ তাঁকে সম্মানের আসন দিতে অগ্রসর হন। কিন্তু ওমর বাদী ওবাই-বিন্-ক্বাবের পাশে বসে যায়েদকে বলেন: তুমি প্রথমেই মামলাটিতে অবিচার করলে।
বস্তুত ঘরে-বাইরে, মসজিদে-দরবারে ওমরের আচারে-ব্যবহারে এতোটুকু প্রকাশ পেতো না, তিনি খলিফাতুল মুসলেমীন। তাঁর অঙ্গে এমন কোন চিহ্ন থাকতো না। ওমরের রুক্ষ মেযাজের কথা শোনা যায়, কিন্তু তাঁর সুক্ষ্ণ ন্যায় বিচারে সকলেই মুগ্ধ হতো। শাস্তি দানে আপন-পর শত্রু, মিত্র কোন পার্থক্য ছিল না। পুত্র শা’মা পানদোষের জন্যে আশিটি বেত্রদণ্ড লাভ করেন শ্যালক খোদ্ ওমরের হাতে এবং শেষে লজ্জায় ও আঘাতে প্রাণত্যাগ করেন। খলিফার মশহুর সাহাবা কাদামা-বিন্-মায়ূন একই অপরাধে প্রকাশ্য বেত্রদণ্ড লাভ করেন।
ওমরের কর্মধারার একটি বৈশিষ্ট্য এই যে কোনও কাজই তাঁর নিকট তুচ্ছ মনে হতো না। ছোট হোক, বড় হোক, গুরুত্বপূর্ণ হোক বা সামান্যই হোক, সব বিষয়েই তিনি গভীর আগ্রহ নিয়ে মনোযোগ দিতেন এবং হাসিমুখে ছোট ছোট কাজও নিজের হাতে তুলে নিতেন। শত শত মাইল দূরে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংকট-মুহূর্তে কাদিসিয়া, ইয়ারমুক কিংবা নিহাওন্দের ভীষণতম যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ওমর মদীনায় বসে প্রত্যেকটি যুদ্ধের পরিকল্পনা করছেন, হামলার নির্দেশ দিচ্ছেন। বিপক্ষদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধি হচ্ছে, ওমর প্রত্যেকটি শর্ত নির্ধারণ করেছেন। বিভিন্ন দফতরে বিভাগীয় প্রশাসনিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করছেন, আইনের কূটতর্ক ভেদ করে সহজ সরল মীমাংসা করছেন, গুরুত্বপূর্ণ শরীয়তী বিধানের নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার বায়তুল-মাল থেকে বৃত্তি নিজের হাতেই বিলি করছেন, বৃত্তিধারীদের রেজিস্টার নিজের হাতে পূরণ করেছেন। যাকাতলব্ধ পশুগুলিকে নিজেই চারণ করেছেন, রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। অনাথা বিধবার উট দোহন করে দিয়েছেন, এতিম মেয়েটির মেষের সন্ধান করেছেন। গাজীরা যুদ্ধে গেছে, তিনি তাদের সংসারে খবরদারী করেছেন, আবশ্যকীয় তৈজসপত্র সংগ্রহ করে, বাজার থেকে ক্রয় করে এনে দিয়েছেন। যুদ্ধের ময়দান থেকে চিঠির বোঝা এসেছে, খলিফা নিজেই হাতে হাতে বিলি করেছেন, কারও চিঠি পড়ে দিয়েছেন, কারও কাগজ- কলম সংগ্রহ করে দিয়েছেন, আবার কারও জওয়াব নিজের হাতে লিখে দিয়েছেন। কর্মক্লান্ত দিনের অবসানে মসজিদে নামায শেষে অপেক্ষা করেছেন, যদি কোনও মোহ্তাজ আসে, যদিই বা কারও কোন অভিযোগ থাকে। মানুষের নবীর উত্তরাধিকারী মানুষের খলিফা হয়ে তার নিকটবর্তী আত্মীয়, বন্ধু, ভাই হয়ে সুখ-দুঃখের সমভোগী হয়েছেন, সমদর্শী, ন্যায়দর্শী, সত্যদর্শী মানবপ্রেমিক ওমর ফারুক।
অন্ধ, আতুর ও দুঃখী ব্যক্তিদের জাতিধর্ম নির্বিশেষে বায়তুল-মাল থেকে জীবন ধারণের বৃত্তি দেওয়া হতো। সাহিব-ই-বায়তুল মাল অর্থাৎ খাজাঞ্চীকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যে কোরআনের বিধান অনুসারে সাদকা অর্থাৎ দানের হকদার গরীব ও অভাবগ্রস্তের দল। এ ক্ষেত্রে মুসলিম গরীব ও অমুসলিম অভাবগ্রস্ত ইহুদী ও খ্রিস্টানরাও দানের হকদার এবং সরকার তাদেরকেও প্রতিপালন করতে বাধ্য। আধুনিক সভ্যজগৎ দুস্থ-বেকার বৃদ্ধদের পেনশন দানের বিষয় চিন্তা করছে, কিন্তু তেরশো বছরেরও বহু আগে খলিফা ওমর এ বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে গেছেন। এতিম বা পিতৃমাতৃহীন শিশুদের ভরণপোষণ এবং সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণেরও ব্যবস্থা ওমর করেছিলেন। একবার ওমর হাকাম-বিন্-আল-আস্কে লিখেন : আমার আশ্রিত এতিমদের সম্পত্তি থেকে যাকাত দেওয়ায় তাদের সম্পত্তি ক্ষয় পাচ্ছে। অতএব তাদের সম্পত্তি ব্যবসায়ে খাটিয়ে মুনাফা যোগ করা উচিত। এ উদ্দেশ্যে তিনি হাকামকে দশ হাজার দিনার দান করেন এবং কালক্রমে তা একলাখে বর্ধিত হয়। অসহায়া মাতা কর্তৃক পথিপার্শ্বে পরিত্যক্ত শিশুদের ভরণ-পোষণ ও দুগ্ধদানের ব্যবস্থাও বায়তুল-মাল থেকে করা হতো। এ শ্রেণীর শিশু-প্রতি প্রথমে বার্ষিক একশ দিরহাম বৃত্তি ধার্য হয় এবং শিশুর বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে বৃত্তিও বর্ধিত হতো।
চৌদ্দ হিজরীতে আরবে দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হলে ওমর কঠোর পরিশ্রম করে, নিবারণের ব্যবস্থা করেন। এ উদ্দেশ্যে মদীনার কেন্দ্রীয় বায়তুল-মাল থেকে সাহায্য দান করা হতো, পরে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়, খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে মদীনায় প্রেরণ করতে। আবুওবায়দাহ্ সিরিয়া থেকে চার হাজার উট বোঝাই এবং আমর-বিন-আস্ মিসর থেকে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে জাহাজপ্রতি ছয় হাজার মণ শস্য-ভর্তি কুড়িটা জাহাজ আরবে প্রেরণ করেন। দুটি প্রকাণ্ড শস্য-ভাণ্ডার নির্মিত হয় এবং যায়েদ-বিন্-সাবিত দুর্ভিক্ষ পীড়িত ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করেন। ওমরের মোহরাঙ্কিত কুপর লোকদের বিলি করা হতো শস্য বিতরণের জন্যে ওমর একদিকে বৃত্তিদানের ও সাদৃকা দানের ব্যবস্থা করেন, অন্যদিকে ভিক্ষাবৃত্তিরোধেরও ব্যবস্থা করেন। যদি কোনও সক্ষম ব্যক্তি ভিক্ষা গ্রহণ করতো, তাকে তিনি অবজ্ঞা করতেন। তিনি বলতেন: যতই হীন হোক, খেটে খাওয়া ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে মর্যাদার কাজ। তিনি ধর্ম বেত্তাদের পরিষ্কার বলতেন: তোমরা মুসলিমদের ভার হয়ো না।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, সমদর্শী, ন্যায়দর্শী মহাপ্রাণ ওমর কেন আমীরুল মুমেনীনের মতো গৌরব-মণ্ডিত উপাধি গ্রহণ করেছিলেন? এ সম্বন্ধে দার্শনিক- ঐতিহাসিক ইনে-খলদুনের একটি উক্তি স্মরণীয়: সমকালীন প্রথায় উপাধিটি গর্বসূচক ছিল না। তার দ্বারা পদের দায়িত্ব বোঝানো হতো। সৈন্যাধ্যক্ষদের আমীর সম্বোধন করা হতো নেতা বোঝাতে। আর মুসলিমরা রসূলুল্লাহকে বলতো মক্কার আমীর। পরবর্তীকালে ইরাকবাসীরা সা’দ্-বিন্-ওক্কাসকে আমীরুল মুমেনীন নামে সম্বোধন করতো। ওমরের উপাধি ধারণের কোন ধারণাও ছিল না, সহসা উপাধিটি চালু হয়ে যায়। একদা লাবিদ-বিন্-রাবিয়া ও আদি-বিন্-হাতিম ওমরের সাক্ষাৎপ্রার্থী হন এবং কুফার প্রথানুযায়ী প্রকাশ করেন ‘আমীরুল মুমেনীনের সাক্ষাৎ চাই।’ আমর-বিন্-আস্ হুবহু এইভাবে ওমরকে সম্বোধন করে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ওমর এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে সাক্ষাৎপ্রার্থীদ্বয় তাঁদের সাধারণ প্রথার কথা বলেন। খলিফা এটি অনুমোদন করেন এবং তার পর থেকেই খলিফাকে ‘আমীরুল মুমেনীন’ উপাধিতে সাধারণত সম্বোধন করার রেওয়াজ হয়ে যায়। এ থেকে ওমরের ব্যক্তিগত গর্ব নাম জাহির করার অভিসন্ধি সন্দেহ করলে তাঁর অবিচারই করা হবে। আমরা পূর্বে দেখেছি, কি অবস্থায় তাঁর অনুপস্থিতিতে মৃত্যুশয্যায় খলিফা আবুবকর তাঁকে খলিফা পদে মনোনয়ন করে ওসিয়ত করেছিলেন। তখন খলিফার পদলাভে তাঁর অনীহা ও নির্লোভই প্রকাশ পেয়েছিল। যখন সমসাময়িক নেতাদের মধ্যে তাঁর চেয়ে যোগ্যতর আর কেউ ছিল না, সেই যুগ-সন্ধিক্ষণে মনোনীত হওয়ার পর তিনি এ মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রকে মজবুত ও শক্তিশালী করতে। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি জনসমাবেশে প্রকাশ্য বলেছিলেন: আমার যদি এ প্রত্যয় না থাকতো যে, আমি তোমাদের দায়িত্ব বহনে যোগ্যতম হতে পারবো, তা হলে আমি কিছুতেই এ পদ গ্রহণে সাহসী হতাম না। ‘মুয়াত্তায়’ ইমাম মুহম্মদ এ কথাটি আরো বিশদ করে বলেছেন: আমি যদি জানতেম যে, অন্য কেউ আমার চেয়েও যোগ্যতরভাবে এ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে, তাহলে তাই আমার পক্ষে গ্রহণ করা হতো সবচেয়ে আনন্দদায়ক, এ গুরুভার নিজে বহন করার চেয়েও।
রাষ্ট্রশাসনে, ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ-জীবনে ওমর যে-সব নয়া নীতি প্রবর্তন করেছিলেন, এখানে সে সবের একটি তালিকা দেওয়া গেল:
১। হিজরী সনের প্রবর্তন।
২। আমীরুল-মু’মেনীন উপাধি ধারণ।
৩। বিজিত দেশসমূহকে প্রদেশে বিভক্তীকরণ
৪। বায়তুল-মাল বা সরকারী খাজাঞ্চীখানা স্থাপন
৫। সমর-দরের সৃষ্টি।
৬। রাজস্ব-দরের সৃষ্টি।
৭। পুলিশ বিভাগের সৃষ্টি।
৮। ভূমি জরীপ ও ভূমিকর ধার্য।
৯। সমুদ্রজাত দ্রব্যাদির মাসুল ধার্য ও আদায়ের ব্যবস্থা।
১০। আমদানি ও রফতানি ধার্য ও আদায়ের ব্যবস্থা।
১১। বিদেশী সওদাগরদের ব্যবসার সুযোগ দান।
১২। ব্যবসার ঘোড়ার উপর যাকাত ধাৰ্য।
১৩। জিয়ার পরিবর্তে বানু তগলীব গোত্রীয় খ্রিস্টানদের উপর যাকাত ধার্য।
১৪। আদমশুমারী।
১৫। কারাগার স্থাপন ও বড়ো শহর স্থাপন।
১৬। সৈন্য-বিভাগে রিজার্ভ বাহিনী ও তাদের বেতন দানের সুব্যবস্থা।
১৭। প্রত্যেক ঘাঁটিতে সেনা-নিবাস স্থাপন
১৮। প্রত্যেক শহরে মুসাফিরখানা স্থাপন।
১৯। খাল খনন।
২০। আদালত স্থাপন ও কাজী নিয়োগ; এবং শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ।
২১। মদীনা থেকে মক্কার পথে সরাইখানা নির্মাণ।
২২। মাদ্রাসা স্থাপন ও বেতনভোগী শিক্ষক নিয়োগ।
২৩। ওয়াক্ফ প্রবর্তন।
২৪। মসজিদে আলোর ব্যবস্থা।
২৫। ইমাম ও মুয়ানিদের বেতন দান।
২৬। মসজিদে ধর্ম বক্তৃতার রেওয়ায় প্রবর্তন।
২৭। জানাযায় চার তাকবীর দানের ইজ্জ্মা।
২৮। ফযরের আযানে “আস্-সালাতো খায়রুম মিনান-নওম” অর্থাৎ নিদ্রার চেয়ে সালাত উত্তম শব্দগুলির সংযোজন।
২৯। জামাতে তারাবীহ্ নামায আদায়ের নিয়ম।
৩০। একসঙ্গে তিন তালাক উচ্চারনে তালাক-বায়েন বা চূড়ান্ত তালাকের বিধান।
৩১। উত্তরাধিকার আইনে সঠিক অংশ নির্ধারণের ব্যবস্থা।
৩২। কিয়াসের উদ্ভাবন।
৩৩। আবুবকরকে কোরআন-সংগ্রহে সম্মত করান এবং নিজের তত্ত্বাবধানে উক্ত কার্য সম্পাদন।
৩৪। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে আরববাসীকে ক্রীতদাস করার প্রথা বিলোপ। ৩৫। ইহুদী ও খ্রিস্টান অক্ষম ব্যক্তিদের বৃত্তির ব্যবস্থা।
৩৬। পরিত্যক্ত শিশুদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা।
৩৭। বেত্রদণ্ডের ব্যবস্থা।
৩৮। পানদোষের অপরাধে আশিটি বেত্রাঘাতের ব্যবস্থা।
৩৯। রাত্রিতে টহল দিয়ে নাগরিকদের অবস্থার অনুসন্ধান।
৪০। গোয়েন্দা ও গুপ্তচর নিয়োগ।
৪১। নিন্দা, বিদ্রুপ বা মানহানিকর কবিতা বা প্রবন্ধ রচনা নিষিদ্ধকরণ।
৪২। স্ত্রীলোকের নামাঙ্কিত বা কামোদ্দীপক যৌনমূলক কবিতা রচনা নিষিদ্ধকরণ।