গঙ্গারিডি রাষ্ট্র ও তার ঐতিহ্য
৩২৬ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে আলেকজান্ডার যখন পঞ্জাবে এসে উপনীত হল, তখন পঞ্জাব বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। তিনি পঞ্জাবের রাষ্ট্রগুলিকে পরাহত করে যখন ভারতের অভ্যন্তরে অগ্রসর হবার পরিকল্পনা করেছিলেন তখন তিনি সংবাদ পান যে, ভারতের অভ্যন্তরস্থ দুই পরাক্রমশালী রাষ্ট্র যথা প্রাসিওই (প্রাচ্য) ও গঙ্গারিডি (গঙ্গারাঢ় বা গঙ্গারাষ্ট্র) যৌথভাবে তাদের বিপুল সৈন্যবাহিনী ও বিশাল রণসম্ভার নিয়ে তাঁর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য অপেক্ষা করছে। পঞ্জাব পর্যন্ত এসেই আলেকজান্ডারের সৈন্যবাহিনী ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়েছিল। তারা প্রাসিওই ও গঙ্গারিডি রাষ্ট্রদ্বয়ের অধিবাসীদের শৌর্যবীর্য ও পরাক্রমের কথা শুনে, ভারতের অভ্যন্তরে অগ্রসর হতে অস্বীকার করে। অগত্যা আলেকজান্ডার বিপাশা নদীর পশ্চিম তীর হতেই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পরবর্তীকালের গ্রীক, রোমান ও মিশরীয় লেখকগণ গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের লোকদের শৌর্যবীর্য ও বাণিজ্য সম্বন্ধে অনেক কথা লিখে গেছেন। কিন্তু গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের সঠিক অবস্থান ও তার সীমানা আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে অজ্ঞাত রয়ে গিয়েছে। গ্রীক, রোমান ও মিশরীয় সূত্র থেকে আমরা মাত্র এইটুকু জানতে পারি যে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র গঙ্গানদীর মোহানা দেশে অবস্থিত ছিল এবং ওই রাষ্ট্রের প্রধান বন্দরের নাম ছিল ‘গাঙ্গে’। তার মানে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র যে নিম্ন-বাঙলায় ছিল, সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই। যদিও ভারতীয় সাহিত্যে গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের কোন উল্লেখ নেই, তবু যারা বাঙলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য করত তারা যখন গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের উল্লেখ করে গেছে, তখন গঙ্গরিডির অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দিহান হবার কোন কারণ নেই। এখানে উল্লেখনীয় যে অতি প্রাচীনকাল থেকে ভূমধ্যসাগরীয় দেশসমূহের সহিত বাঙলাদেশের যে সমৃদ্ধশালী বাণিজ্যসম্পর্ক ছিল, তা প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। খ্রিস্ট-পূর্ব প্রথম সহস্রকের পূর্বে ভূমধ্যসাগরীয় বণিকরা যে বাঙলার অভ্যন্তরস্থ বন্দরসমূহে বাণিজ্য উপলক্ষে উপস্থিত হতেন, তা পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে (বোলপুরের নিকট অজয় নদীর দক্ষিণ তীরে) প্রাপ্ত ক্রীটদেশীয় প্রত্নদ্রব্যসমূহ থেকে আমরা জানতে পারি। কালানুক্রমিকভাবে এ বাণিজ্য অনেককাল আগে থেকেই চলে এসেছিল।
এখানে উল্লেখনীয় যে, ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ‘হিন্দুস্থান স্ট্যাণ্ডার্ড’ পত্রিকার ‘পূজা সংখ্যা’য় আমি ক্রীটদেশীয় বর্ণমালার সহিত বাঙলার লাঞ্ছনময় মুদ্রার (punch-marked coins) চিহ্নসমূহের হুবহু সাদৃশ্য দেখিয়েছিলাম। সম্প্রতি ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলান পিটফিল্ড ক্রীট দ্বীপের এক পবর্তের উপর থেকে ৫০টি মৃত্তিকা নির্মিত শিবলিঙ্গ পেয়েছেন, যার সঙ্গে আমাদের দেশের মেয়েরা বৈশাখ মাসে শিবপূজার জন্য যে মাটির লিঙ্গমূর্তি তৈরি করে তার অদ্ভূত সাদৃশ্য আছে।
দুই
এ বাণিজ্য যে পরেও চলেছিল তা আমরা জানতে পারি গঙ্গারিডি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত চব্বিশ পরগনার চন্দ্রকেতুগড়, আটঘরা, হরিহরপুর, মল্লিকপুর, হরিনারায়ণপুর, বোড়াল, দেগঙ্গা, দেউলপোতা, পাকুড়তলা, মন্দিরতলা, পুকুরবেড়িয়া ও মেদিনীপুর জেলায় তিলডা, পান্না, কাঁথি ও তমলুকে উৎখননের ফলে যেসব প্রত্নদ্রব্যসমূহ পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে। এসব প্রত্নদ্রব্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, খ্রিস্টজন্মের এদিক-ওদিক শতাব্দীতে নিম্নবাঙলার সঙ্গে গ্রীক ও রোমান জগতের বেশ সমৃদ্ধিশালী বাণিজ্য চলত। এসব অঞ্চল থেকে আমরা যে সব প্রত্নদ্রব্য ও পোড়ামাটির মূর্তি ও ফলকসমূহ পেয়েছি তাতে চিত্রিত মানুষের বেশভূষা, পাদুকা, কেশবিন্যাস প্রভৃতির রীতি ও বিদেশিনীর মূর্তি যে অভ্রান্তরূপে গ্রীক ও রোমান শিল্পশৈলীর প্রভাব বহন করে, যে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। (এসব প্রত্নদ্রব্য সম্বন্ধে বিশদ বিবরণের জন্য আমার ‘হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অভ্ বেঙ্গল, ১৯৬৩, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮ দ্রষ্টব্য)।
পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে আসবার পূর্বে ভূমধ্যসাগরীয় গোষ্ঠীর জাতিরা তাম্র আহরণের জন্য বাঙলাদেশে এসে হাজির হয়েছিল। এটা স্বতঃসিদ্ধ সত্য যে যখন দুই সুদূর দেশের মধ্যে বাণিজ্যের লেনদেন চলে, তখন তারা পরস্পর উভয় দেশে গিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করে। অতি প্রাচীনকালে ভূমধ্যসাগরীয় দেশসমূহে যে বাঙালী বণিকদের উপনিবেশ ছিল, তা আমরা ভেলেরিয়াস ফ্লাক্কাস ও ভার্জিলের লেখা থেকে জানতে পারি। এসব তথ্য থেকে স্বতই প্রমাণিত হয় যে, ভারতীয় সাহিত্যে অনুল্লেখ থাকলেও গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অমূলক নয়।
তিন
কাকদ্বীপে শ্রীনরোত্তম হালদার পরিচালিত গঙ্গরিডি গবেষণা কেন্দ্রের সংগ্রহ-শালায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার দেউলপোতা, হরিনারায়ণপুর পাকুড়তলা, মন্দিরতলা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার বালা, চন্দ্রকেতুগড় প্রভৃতি স্থান থেকে প্রাপ্ত যে সকল প্রত্নদ্রব্য সংরক্ষিত হয়েছে, তা থেকে স্বতই বোঝা যায় যে, প্রাচীন গঙ্গারিডি রাষ্ট্র এক স্বকীয় সুমহান ঐতিহ্যের অধিকারী ছিল। এ সকল স্থান থেকে যেসব, মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে, তার এক পিঠে, হস্তী, বৃষ, বৃষমুণ্ড, স্বস্তিকা ও ইন্দ্রযষ্টি ও অপর পিঠে চৈত্য, “ক্রশ’ ঘেরার মধ্যে গাছ প্রভৃতি চিহ্নযুক্ত মুদ্রাগুলির বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য। ‘পাকুড়তলায় প্রাপ্ত উক্ত প্রকার মুদ্রার ‘ছাঁচ’ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বৌদ্ধযুগে এ অঞ্চল থেকে একদা এ ধরণের মুদ্রা প্রস্তুত হত। হস্তী ছিল বৃহত্তর গঙ্গাভূমি বা গঙ্গারিডির জাতীয় চিহ্ন। আর ধর্মীয় স্বস্তিকা চিহ্ন যে কত প্রাচীন তা ধারণাতীত এবং ধর্মীয়, যুক্ত চিহ্নটি (+) সম্ভবত মৈত্রী বা সমন্বয়ের চিহ্ন হিসাবে যীশুখ্রিস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলে প্রচলিত ছিল; আর চৈত্য-চিহ্নে জৈন ও বৌদ্ধ প্রভাব অনস্বীকার্য। ঘেরার মধ্যে গাছটি বোধিবৃক্ষের প্রতীক হতে পারে।’
এছাড়া মৌর্যযুগীয় তাম্রমুদ্রা, সিদ্ধিদাতা গণেশের প্রস্তরমূর্তি, বাস্কেট, চিহ্নযুক্ত পাত্র, পশুকঙ্কালের ফসিল, প্রস্তরীভূত দন্ত, পোড়ামাটি-নির্মিত কুবের মূর্তির পদযুগল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মৌর্য-উত্তর যুগের হস্তীমূর্তি পাওয়া গিয়েছে চন্দ্রকেতুগড় ও মুণ্ডহীন নারী মূর্তি পাওয়া গিয়েছে হরিনারায়ণপুর থেকে। (যথাক্রমে সুঙ্গ যুগ ও খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর)। পাকুড়তলা গ্রামে একটি দেবালয়ে একটি প্রাচীন বিষ্ণুমূর্তি পূজিত হয়, যার দুটি হাতের কনুই থেকে আর দুটি হাত বাহির হয়েছে। এ ধরনের মূর্তি এ পর্যন্ত কেবলমাত্র সরস্বতী নদী থেকে আদিগঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলের মধ্যেই পাওয়া গেছে; এই মূর্তির শিরস্ত্রাণে দক্ষিণ ভারতীয় শৈলী পরিলক্ষিত হয়। কাকদ্বীপের সন্নিকটে পুকুরবেড়িয়া গ্রাম থেকে এ ধরনের এক ছোট প্রস্তর মূর্তি এবং সাগরদ্বীপের মন্দিরতলা থেকে সংগৃহীত এ ধরনের একটি পোড়া মাটির বিষ্ণুমূর্তি গঙ্গারিডি গবেষণা কেন্দ্রে রক্ষিত হয়েছে। ছনম্বর লাট ‘ধানি’ থেকে প্রাপ্ত একটি বিদেশিনী মূর্তিতে গ্রীকো-রোমান শৈলী সুস্পষ্ট। (এরূপ মূর্তি পাকুড়তলা ও পুকুরবেড়িয়া থেকেও সংগৃহীত হয়েছে)। মাটির তলা থেকে ফাঁপা ও ভরাট উভয় প্রকার কয়েকটি মুণ্ডমূর্তি গঙ্গারিডি সংগ্রহশালায় আছে। দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের সুস্পষ্ট প্রমাণ এই মূর্তিগুলি। (নরোত্তম হালদার, ‘গঙ্গরিডি: আলোচনা ও পর্যালোচনা’)।
আটঘরা ও পাকুড়তলায় প্রাপ্ত মেষ-যুক্ত অগ্নিমূর্তি অগ্নি-উপাসকগণের উপস্থিতি সূচিত করে। চন্দ্রকেতুগড়ের সীলমোহরে সমুদ্রগামী জলযানের প্রতিকৃতি গঙ্গারিডিদের রণপোত ও নৌবাণিজ্যের পরিচয় দেয়। এছাড়া, বৃষ, অশ্ব, হস্তী, সর্প, পক্ষী প্রভৃতির মূর্তিগুলি ‘টোটেম’ পূজার নিদর্শন হতে পারে। এছাড়া গঙ্গারিডির গবেষণা কেন্দ্রে আছে পোড়ামাটির শিশুকোলে মাতৃমূর্তি, পাথরের শিশ্লাকৃতি শিবলিঙ্গ ও বিভিন্ন কালের পাত্র ও পোড়ামাটির বাটখারা। পাথরের বিষ্ণু পাদপীঠ, সরস্বতী মূর্তি, পোড়ামাটির মন্দিরফলক, প্রাচীন ইট, ঘর-ছাওরা টালি, পাতকুয়ার অংশ, পাখী-বাঁশী, মুণ্ডমূর্তির চূড়া, নর্তকীমূর্তি, মাটির প্লেট, প্রদীপ, ধুনাচী, ধূপদানি, খেলনাগাড়ির চাকা, পোড়ামাটির ঢাকনা ইত্যাদি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যা পাওয়া গিয়েছে তা প্রত্নোপলীয় যুগের পাথরের হাতিয়ার, যা থেকে আমরা এ অঞ্চলের প্রাচীনত্ব নির্ণয় করতে পারি। হাতিয়ারের ছিদ্রমধ্যে একখন্ড প্রবাল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কেননা প্রাচীন গ্রন্থাদিতে কালীঘাট থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত স্থানকে প্রবালদ্বীপের অন্তর্গত বলা হত।
চার
এই গঙ্গারিডি রাজ্যের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত ছিল আদিগঙ্গার প্রাচীন ধারা। অতীতে নাব্য অবস্থায় এই স্রোতস্বিনী ছিল বহির্জগতের সঙ্গে বাঙলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবেশপথ। খ্রিস্টজন্মের এদিক-ওদিক দু- চার শতাব্দীতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাই ছিল বহির্জগতের সঙ্গে বাঙলার ব্যবসা-বাণিজ্যের স্নায়ুকেন্দ্র। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা কল্পনা করে নিতে পারি যে, আদিগঙ্গা যখন নাব্য অবস্থায় ছিল তখন এর উভয় তীরে অবস্থিত গন্ডগ্রামসমূহ বিদেশীয়দের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সমৃদ্ধিশালীন হয়েছিল। আবার বাংলা মঙ্গল কাব্যসমূহ থেকে আমরা জানতে পারি যে আদিগঙ্গার বুকের ওপর দিয়েই বাঙালী বণিকরা বাণিজ্য করতে যেত সাত-সমুদ্দুর তের নদী পার হয়ে দূর-দূরান্তরে দেশসমূহের সঙ্গে।
সেজন্য দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার যেখানেই ঢিবি আছে, সেখানেই উৎখনন করার ফলে পাওয়া গিয়েছে বাণিজ্যপুষ্ট প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন সেই কারণে পশ্চিবঙ্গ সরকার সচেষ্ট হয়েছেন এই সকল ঢিবি উৎখনন করতে। শেষ খবরে জানা গিয়েছে বর্তমানে তাঁরা জয়নগর দু’নম্বর ব্লকের বাইশহাটা অঞ্চলের ঘোষের চক মৌজায় খননকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে মণি নদীর (পূর্বনাম নালুয়া গাঙ) উত্তরে দু’টি মাটির ঢিবিতে এই খননকার্য চলছে। এই দু’টি ঢিবি বর্তমানে মঠবাড়ি নামে পরিচিত। ১৭৭৮-৭৯ খ্রিস্টাব্দে মেজর রেনেল যখন এ অঞ্চলের জরীপ করেছিলেন তখন এখানে তিনি দু’টি মন্দির বা ‘প্যাগোডা’র ভগ্নাবশেষ দেখেছিলেন। পরে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে জায়গাটি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। ১৮৩৭ সাল নাগাদ জয়নগর মজিলপুর-নিবাসী রামধন ঘোষ এই জায়গাটার ইজারা নেন। তিনিই জঙ্গল কেটে জায়গাটাকে চাষবাসের উপযোগী করেন। তখনই মঠবাড়ির ধ্বংসাবশেষ বেড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ে খননের ফলে দু-তিনটি পাথরের মূর্তি ও পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি উচ্চতার একটি স্তম্ভ পাওয়া যায়। স্তম্ভটির গায়ে খোদিত অভিলেখটি গুপ্তযুগের ব্রাহ্মী লিপিতে লিখিত। পরবর্তীকালের লোকেরা এখানে মাটি কাটতে গিয়ে পেয়েছে বেলেপাথরের মূর্তি, শিলালিপি, ঢাকনা-সমেত, হাঁড়ি, লালপাথরের তৈরি বুদ্ধের চতুর্ভুজ মূর্তি, মৌর্যযুগের ও গুপ্তযুগের কাঁচা মাটির কালো পালিশযুক্ত পাত্র, কুমারগুপ্তের স্বর্ণমুদ্রা, শিব-দুর্গার, চিত্রাঙ্কিত স্লেটপাথরের তৈরি প্লেটের ভগ্নাবশেষ ইত্যাদি।
এখন খননকার্যের ফলে বেরিয়ে পড়েছে পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ বরাবর দুটি পাঁচিল। আরও প্রকাশ পেয়েছে ধানক্ষেত থেকে বেশ কিছুটা নিচে মাটি খুঁড়ে ইটের বাঁধানো রাস্তার হদিশ, যা থেকে অনুমান করা হয়েছে যে ওখানে অবস্থিত এক ছোট ও এক বড় মঠের মধ্যে ওই রাস্তাটি ছিল যোগসূত্র। এ-রকম খন্ড খন্ড আবিষ্কারের ফলে বাঙলার লুপ্ত সভ্যতার মাত্র সামান্য কিছু আভাস পাওয়া যায়। এ-সম্বন্ধে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুসমূহ পাওয়া গিয়েছে কলকাতা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে উত্তর চব্বিশ পরগনার দেগঙ্গা থানার অন্তর্গত চন্দ্রকেতুগড়ে (বেড়াচাপায়)। এখানে যেসব প্রত্নবস্তু পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে আছে মৌর্য, শুঙ্গ, কুষাণ এবং গুপ্তযুগের মূল্যবান নিদর্শনসমূহ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খরোষ্ঠী ও ব্রাহ্মী লিপিযুক্ত নানা আকারের ও নানাবর্ণের মৃৎপাত্রসমূহ। এগুলি অধিকাংশই কুশানযুগের (খ্রিস্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতকের)। এগুলি প্রমাণ করে যে কুশানযুগে (তার মানে গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের সময়কালে) চন্দ্রকেতুগড় এক গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী ছিল। বোধ হয় এটাই গাঙ্গে নগর।