এবার পুজোয়
অভিমান হলে এক-একটা মানুষ এক-এক রকম আচরণ করে। কেউ মুখ ঘুরিয়ে রাখে। কেউ উঠে চলে যায়। ছন্দার ঘটনা অন্যরকম। অভিমান হলে সে মুচকি মুচকি হাসে। মুচকি হাসলে এই কিশোরীটিকে বড় সুন্দর দেখায়। এখনও দেখাচ্ছে। হাসিমুখে ছন্দা বলল, ‘বাবা, তা হলে তুমি কিছুতেই রাজি হচ্ছ না? এটাই তোমার ফাইনাল?’
কৃষ্ণেন্দু টিভি থেকে মুখ না সরিয়ে বলল, “হ্যাঁ, তাই। এটাই আমার ফাইনাল।’
ছন্দা ফিক করে হাসল। এর মানে তার অভিমান আর-একটু বেড়েছে। বাড়বারই কথা। একটু আগে আর প্রিয়তম মানুষটি তার যে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর সঙ্গে তার প্রেস্টিজ জড়িয়ে আছে। সে তার বন্ধুদের বলে এসেছে, বাবা অবশ্যই রাজি হবে। শুধু রাজি হবে না, শুনলেই লাফিয়ে উঠবে। সেই বাবার এই নিস্পৃহ অবস্থা! এই বয়সে সব কিছু হেলাফেলা করা যায়, কিন্তু প্রেস্টিজ হেলাফেলা করা যায় না। বাবা কি বিষয়টা বুঝতে পারছে না? মনে হচ্ছে না পারছে। একটু চুপ থেকে ছন্দা বলল, বাবা, কেন ফাইনাল কেন? রিখিয়া, মেখলা, কাবেরী, টুটুদা, ভুটুস সবার বাবাই তো পার্টিসিপেট করছে। তুমি করবে না কেন? আমি কত আশা করে তোমার নাম দিলাম।’
কৃষ্ণেন্দু বিরক্ত হল। সেই বিরক্ত ভাব চোখেমুখে ফুটল। বলল, ‘তোমার মতো একটা বুদ্ধিমতী মেয়ে এরকম কাজ কেন করল সেটাই তো বুঝতে পারছি না। নাম দেওয়ার আগে আমাকে একবার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। সবাই পাগলামি করলে তোমার বাবাকেও করতে হবে?’
সামনের নিচু টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে ছন্দা স্যুপের বাটিটা তুলল। শালপাতার আদলে তৈরি এই বাড়িগুলো চমৎকার দেখতে। চেহারায় একটা বুনো এফেক্ট আছে। চামচটাও সেরকম। ঠিক যেন একটা পাতা! ছন্দা রোজ রাতে খেতে বসার আগে এই স্যুপটা খায় এবং বাবার সঙ্গে জরুরি কথা সারে।
সামনের নিচু টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে ছন্দা স্যুপের বাটিটা তুলল। শালপাতার আদলে তৈরি এই বাড়িগুলো চমৎকার দেখতে। চেহারায় একটা বুনো এফেক্ট আছে। চামচটাও সেরকম। ঠিক যেন একটা পাতা! ছন্দা রোজ রাতে খেতে বসার আগে এই স্যুপটা খায় এবং বাবার সঙ্গে জরুরি কথা সারে।
পাতা চামচে ছোট্ট চুমুক দিয়ে ছন্দা বলল, এটা তুমি কী বলছ বাবা? পাগলামি কেন হবে? উৎসবের দিনে সবাই মিলে হইচই করাটা পাগলামি? পুজোর সময় আমাদের এখানে প্রত্যেক বছরই তো কিছু না কিছু হয়। নাটক, গান, আবৃত্তি। ছোট-বড় সকলের জন্য ব্যবস্থা থাকে। সেই যে একবার ছোটবেলায় আমাদের ছোট নদী আবৃত্তি করতে গিয়ে মাঝপথে আজ ধানের ক্ষেতে গেয়ে ফেলেছিলাম। মনে আছে?’
কৃষ্ণেন্দু আরও গম্ভীর গলায় বলল,’ কত কিছু হওয়া আর এটা হওয়া এক হল ছন্দা? নাটক, গানটানের একটা মানে আছে। এই ধরনের পারফরমেন্সের মধ্যে দিয়ে অনেকের ভেতরের চাপা থাকা গুণগুলো বেরিয়ে আসে। কিন্তু এসব কী? যত্তোসব ছেলেমানুষি। পুজো কমিটিতে কারা আছে এবার? সুধাংশুবাবু সেক্রেটারি না? কাদের মাথা থেকে এসব বেরিয়েছে!’
‘বাবা, তুমি মিথ্যে রাগ করছ। এবারের আইটেমগুলো যদি শোনো তুমি আনন্দে এত জোর লাফিয়ে উঠবে যে ছাদে মাথা ঠুকে যেতে পারে। তুমি কি শুনবে? দয়া করে তুমি যদি টিভির সাউন্ডটা একটু কমাও তা হলে তোমাকে শোনাতে পারি।’
কৃষ্ণেন্দু টিভির আওয়াজ কমাতে কমাতে বলল, শোনাতে পারো তবে তাতে আমার মত বদলাবে না।’
ছন্দা ভাষণ দেওয়ার কায়দায় হাত নেড়ে বলতে শুরু করল—
‘এবার পুজোর ফাংশনগুলো একটু অন্যরকম হচ্ছে। সামথিং ডিফারেন্ট। সেই চলতি গান, কবিতা, নাটক নয়। সব কিছুর মধ্যেই একটা ফোক আর ভিলেজ টাচ থাকবে। ফোক আর ভিলেজ টাচ মানে বুঝতে পারছ তো? লোক অনুষ্ঠান আর গ্রাম গ্রাম ব্যাপার। লোকসংগীত, লোকনৃত্য যেমন হবে, তেমনি আবার আলপনা, ধুনুচি নাচ, পিঠে তৈরি এসব গেমসও থাকছে।’
কৃষ্ণেন্দু সোজা হয়ে বসল। চোখ বড় বড় করে বলল, ‘গেমস!’
ছন্দা হাসতে হাসতে বলল, ‘বাবা, এবার কিন্তু আমি কেঁদে ফেলব। তুমি এমন একটা ভান করছ যে গেমস মানেও জানো না। সবাই বলছিল, গেম লিস্টে অন্তাক্ষরী, সং মেকিং আর হুজি বুজি ঢোকানো হোক। সেই নিয়ে একটা ঝগড়া হল। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, ওগুলোও থাকবে আবার এগুলোও থাকবে।’
‘হুজি-বুজি! হুজিবুজিটা কী জিজ্ঞেস করলে তুমি রেগে যাবে ছন্দা?’
ছন্দা ঘাড় নেড়ে বলল, না, রাগব না। তবে বলবও না। হুজি বুজি খেলাটা বড়দের আগে থেকে বলা যাবে না। তা হলে খেলা দেখার মজা নষ্ট হয়ে যায়। এর সঙ্গে আমাদের মতো টিন এজারদের জন্য থাকছে আলপনা কম্পিটিশন। মা-কাকিমারা করবে পিঠে তৈরির লড়াই। আর তোমাদের জন্য ধুনুচি নাচ। কেমন হয়েছে?’
কৃষ্ণেন্দু মুখটাকে তেতো খাওয়ার মতো কুঁচকে বলল, ‘খুব খারাপ। অতি জঘন্য। এসবের মানে কী? আমি যদি পুজো কমিটিতে থাকতাম সব বাতিল করে দিতাম। এগুলো ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু ছেলেমানুষি নয়, মেকি, বানানো। গ্রাম ভাল লাগে তো গ্রামে যাও না বাবা। দু-চারদিন বেড়িয়ে এসো। হারিকেন আর মশার কামড় কেমন লাগে দেখবে। ফ্লাইওভারের ধারের ফ্ল্যাটে বসে একতারা বাজানোর কী আছে?’
ছন্দা উৎসাহের সঙ্গে বলল, “চিন্তা কোরো না বাবা। একতারার ব্যবস্থাও থাকছে। এবার আমরা যে ব্যান্ড আনছি, তার নাম একতারা। নাম শুনেছ? অল বাউল সংগীত। সপ্তমীর রাতে ওদের পারফরমেন্স। তোমাদের ধুনুচি-নৃত্য অষ্টমীর সন্ধেতে।’
‘তোমাদের মানে! ছন্দা, শুনে রাখো, কোনওরকম লোক হাসানোতে আমি নেই। রাস্তায় ধুনুচি হাতে নাচতে পারব না।’
ছন্দা বলল, ‘রাস্তায় কোথায়? প্যান্ডেলের ভেতরে তো৷’
‘ওই একই হল। বরং একটু বেশিই হল। সং সেজে নাচানাচি করলে অনেকেই পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে পড়বে।’
ছন্দা হাত নেড়ে বলল, ‘এ মা, দাঁড়িয়ে পড়বে কেন? আমরা তো বসার জায়গা রাখছি।’
ছন্দা এরপর গলা নামিয়ে বলল, ‘একটা সিক্রেট কথা তোমায় বলে রাখছি বাবা। গোটা প্রোগ্রামটা তপুদা হ্যান্ডিক্যামে ধরে রাখবে। পরে প্রত্যেককে একটা করে সিডি দেওয়া হবে। তবে বিনিপয়সায় নয়। সিডির দাম ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের আলপনা কম্পিটিশনের দাম হয়েছে একশো টাকা। মায়েদের পিঠে তৈরির সিডির জন্য দিতে হবে একশো পঁচিশ। সব থেকে কস্টলি হচ্ছে ধুনুচি নাচের সিডি। ওয়ান হানড্রেড অ্যান্ড ফিফটি। ওই প্রোগ্রামটাই সব থেকে এক্সাইটিং কিনা। ইতিমধ্যেই সাতাশটা বুকিং হয়ে গেছে। ভুটুস তো বলেছে, ওর বাবার নাচ কালেকশনে রাখার জন্য তিনশো টাকা পর্যন্ত খরচ করতে রাজি। হি হি। আর কিছু জানতে চাও বাবা?’
কৃষ্ণেন্দু থমথমে গলায় বলল, ‘আর একটা জিনিসই জানতে চাইছি। এসবের প্ল্যান কার? মানে পরিকল্পনা কে করেছে?’
ছন্দা এগিয়ে গেল বাবার কাছে। কানের কাছে মুখ এনে বলল, ‘মায়ের।’
একটু চুপ করে থেকে কৃষ্ণেন্দু বলল, ‘তোমার মা কেন এরকম একটা অদ্ভুত পরিকল্পনা করেছে তুমি জানো ছন্দা?’
ছন্দা গম্ভীর গলায় বলল, ‘জানি বাবা। কিন্তু বলব না। এটা বড়দের ব্যাপার।’
২
কৃষ্ণেন্দু সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, ‘পুজো প্যান্ডেলে নাচানাচির পরিকল্পনা তোমার?’
বনানী আয়নার সামনে বসে ক্রিম মাখছে। হাসতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল। রাতক্রিম মাখার সময় হাসি কান্না বারণ। বলল, হ্যা আমার। ভাল হয়েছে না? বেশ অন্যরকম। আমাদের তো এরকম কখনও হয়নি। সবাই খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করল। অ্যাই তুমি কিন্তু আবার প্যান্ট-শার্ট পরে নাচতে যেয়ো না। ছবিতে বোকার মতো লাগবে। হাতে ধুনুচি, গায়ে একজিকিউটিভ শার্ট।
কৃষ্ণেন্দু সদ্য ধরানো সিগারেট অ্যাশট্রেতে গুঁজে দিল। উঠে গিয়ে এসি মেশিনটা চালিয়ে দিয়ে খাটে এসে বসল। বলল, ‘তুমি কী ভাবছ বনানী? আমি নাচব?’
বনানী এবার মুখ ঘোরাল। রাতের ক্রিমে কি চোখ বড় করা বারণ আছে? থাকলে থাক। বনানী দুটো চোখই বড় বড় করে অবাক গলায় বলল, ‘ওমা তুমি নাচবে না মানে! তোমার জন্যই তো আইটেমটা রাখলাম।’
কৃষ্ণেন্দু ঠান্ডা গলায় বলল, ‘আমার জন্য! কেন? তোমাদের কি ধারণা আমি খুব ভাল নাচতে পারি? এই যে রোজ সকালে আমি অফিসে গাড়ি চালিয়ে যাই, কেন যাই? সেখানে গিয়ে নাচব বলে? এই যে মাসে একদিন করে মুম্বইতে বোর্ড মিটিং হয়। আমাকে প্লেনে উড়ে যেতে হয়। চেয়ারম্যান আসেন। মিটিং-এ আমি কী করি? নাচি?’
বনানী, আর পারল না। রাতক্রিমের নিয়ম ভেঙে হাসল। বলল, ‘এরকম রাগ রাগ ভাবে বলছ কেন?’
‘কীভাবে বলব? নেচে নেচে? শুধু প্ল্যান করোনি, মেয়েটাকেও তাতিয়েছ। মনে হচ্ছে, সে তার বাবাকে না নাচিয়ে ছাড়বে না। চলো, ওই দিন আমরা কোথাও ঘুরে আসি। ছন্দার হাত থেকে বাঁচার আর অন্য কোনও পথ নেই। ভোরে কোথাও বেরিয়ে যাব। ফিরব একেবারে রাতে। বাইরে কোথাও খাব। ততক্ষণে এখানকার রং তামাশা শেষ হয়ে যাবে।’
কথা থামিয়ে কৃষ্ণেন্দু খাট ছেড়ে উঠে এসে স্ত্রীর পাশে বসল। কাধে একটা হাত রেখে বলল, ‘চলো না, তিনজনে মিলে সত্যি সত্যি একটা গ্রামের পুজো দেখে আসি। কাছাকাছি কোনও গ্রাম। গাড়ি নিয়ে চলে যাব। সন্ধের পর ব্যাক। ছন্দা তো গ্রামের পুজো দেখেনি কখনও।’
বনানীর ক্রিম মাখা হয়ে গেছে। এবার সে তুলো দিয়ে গোটা ক্রিমটা মুছে ফেলবে। এই জিনিসের এটাই মজা। লাগাতে হয়, আবার সঙ্গে সঙ্গে তুলেও ফেলতে হয়।
তুলো ঘষতে ঘষতে বনানী বলল, ‘পুজোর সময় গ্রাম দেখতে গ্রামে যেতে হবে কেন? আজকাল পুজোর সময় কলকাতার অলিতে-গলিতে অজস্র গ্রাম হয়। মাটির বাড়ি। সুপুরি গাছ। খড়ের চাল। শুনেছি, গত বছর বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের পাশে একটা গ্রামে নাকি আলপথ ধরে ঢোকার ব্যবস্থা হয়েছিল। সরু আলপথ। দু’পাশে ধানখেত। খেতে গাড়ি পার্কিং। বেশ কিছুটা আলপথ ধরে হেঁটে গেলে তবে পুজো মণ্ডপ। সেই আলপথে কাদা ছিল, এমনকী চোরকাঁটা পর্যন্ত ছিল। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ওখানে ঝিঝির ডাকেরও আয়োজন করা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী মাইকে আর কিছু বাজেনি। ওনলি ঝিঁঝি। সত্যিকারের গ্রামে গিয়ে এর থেকে বেশি তুমি কী পাবে?’
কৃষ্ণেন্দু ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলল। না, মনে হচ্ছে না পারা যাবে। এবার এদের এখান থেকে সরানো যাবে না। বনানী উঠে পড়ল। বলল, ‘নাও আলোটা নিভিয়ে দাও। পুজোর ক’টা দিন আমি গ্রাম, শহর কোথাও যাব না। এখান থেকে নড়ছি না। এত বড় একটা প্রোগ্রামের রেসপনসিবিলিটি নিয়েছি। দায়িত্ব আগে না মজা আগে? অ্যাই শোনো, আমি না পিঠে তৈরি কম্পিটিশনে চিতৈ পিঠে বানাব ঠিক করেছি। রবিবার ভবানীপুরে ছোড়দির শাশুড়ির কাছে ট্রেনিং নিতে যাব। কীরকম হবে বলো তো?’
কৃষ্ণেন্দু ফিসফিস করে বলল, ‘খুবই ভাল হবে। শুধু একটা কথা বলো তো বনানী, ধুনুচি নাচের প্ল্যানটা তোমার মাথায় এল কীভাবে? এসব ছেলেমানুষদের মানায়। বুঝতে পারছি, সেদিন আমাকে ফ্ল্যাট ছেড়ে পালাতে হবে।’
বনানী বিছানায় উঠতে উঠতে বলল, তুমি বড় বাড়াবাড়ি করছ। এমন একটা ভাব করছ, আমি যেন তোমাকে ধরে বেঁধে নাচাচ্ছি। তুমি বলেছিলে, তাই।’
‘আমি বলেছিলাম! আমি কী বলেছিলাম?’
বনানী বালিশে মাথা রেখে পাশ ফিরল। গলা নামিয়ে বলল, ‘তুমি সব ভুলে যাও। সেই যে বিয়ের পরই এক রাতে বলেছিলে না… মনে নেই? এই যে আমি তোমাকে গান শোনালাম। মনে পড়ছে? জানি পড়বে না। আমার কথা তোমার মনে পড়বে কেন? আমি গান করলাম। তুমি আহা উহু করলে। মনে পড়ছে। তারপর তুমিও বেসুরো গলায় একটা গান ধরলে। আমি বললাম, খুব খারাপ হচ্ছে। চুপ করো। তখন তুমি বললে, গান না পারলেও তুমি নাকি খুব ভাল নাচতে পারো। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে ধুনুচি নিয়ে… বলোনি তুমি? এবার দায়িত্ব পেয়ে ভাবলাম,আরে তোমার ধুনুচি নাচ তো এখনও দেখা হয়নি। আইটেমটা ঢুকিয়ে দিলাম। যাক অত ভাবতে হবে না। আমি ছন্দাকে বুঝিয়ে বলে দেব। ও তোমার নাম কেটে দেবে। এত চিন্তার কী আছে?’
৩
ঘন নীল কোট প্যান্টের সঙ্গে হালকা মেরুন টাই। পায়ের বাদামি জুতো চকচক করছে আয়নার মতো। ফুরফুরে চুলে হাত বোলাতে বোলাতে অফিসের করিডর ধরে হেঁটে আসছে কৃষ্ণেন্দু। পাশে হাঁটছে তীর্থপতি সান্যাল। তারা সকালের ফ্লাইটে মুম্বই এসেছে। একটু পরেই মিটিং। দু’জনেই চাপা গলায় কথা বলছে। নিশ্চয় মিটিং শুরুর আগে জরুরি কিছু ঝালিয়ে নিচ্ছে।
তীর্থপতি বলল, ‘তারপর কী হল স্যার।’
কৃষ্ণেন্দু বলল, ‘কী আর হবে। একটা ধুনুচি হাত থেকে পড়ে গেল বলে তো আর থেমে যেতে পারি না। পুরনো ট্রিকস অ্যাপ্লাই করলাম। নাচতে নাচতেই হাত বাড়ালাম। কে যেন আর একটা এগিয়ে দিল। ব্যস চটাপট হাততালি।’
‘ওয়ান্ডারফুল!’
‘ওয়ান্ডারফুল কিনা বলতে পারব না। প্রাইজ তো ভাই পেলাম না। তবে শেষ হয়ে যাওয়ার পর দেখি, মেয়েটা খুব হাততালি দিচ্ছে। হা হা। বাবার নাচ দেখে হাততালি। ভাবো
কাণ্ডটা।’
তীর্থপতি বলল, “স্যার, আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি। কোনও জখমটখম ছাড়াই এই বয়সে এতক্ষণ ধরে নাচ…।’
কৃষ্ণেন্দু অল্প হাসল। বলল, ‘না, সেরকম কিছু নয়। কোমরে একটা হালকা ব্যথা হয়েছে। তবে সেটা এনজয় করছি। নেক্সট উইকে সিডিটা হাতে পাব। একদিন এসো না সবাই মিলে দেখা যাবে।’
আজকাল রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৫