ডাস্টবিন

ডাস্টবিন

বিভূতিচরণের মুখ থমথম করছে। তিনি স্থির হয়ে বসে আছেন। অথচ সকালের এই সময়টা বিভূতিচরণের হাসিমুখে থাকার সময়। তাঁকে ঘিরে থাকে দর্শনার্থী আর দলের ছেলেপিলেরা। তারা অভাব, অভিযোগ, আবার এবং বিচারের কথা বলে। বিভূতিচরণ এসব শোনেন না। শোনে তাঁর প্রাইভেট সেক্রেটারি জীবন। শুনে গুরুত্ব অনুযায়ী কাগজে লিখে ফেলে। এই গুরুত্ব বোঝাটা একটা কঠিন কাজ। অনেকদিনের অভিজ্ঞতা লাগে। কী বলছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কে বলছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কথা শুনে নয়, মুখ দেখে জীবন কাগজে নোট নেয়।

ঘরের এক পাশে কাজ চলে, অন্য পাশে বিভূতিচরণ নিচু গলায় অল্প অল্প কথা বলেন। সেইসব কথার অধিকাংশই আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলির ওপর গভীর তত্ত্বের কথা। যেমন বুশের জয় বিশ্বের কৃষি বাজারে কেমন প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে অথবা দেশে ঘনঘন ধর্মঘট এড়াতে রুশ প্রধানমন্ত্রীর ঠিক কোন পথে এগোনো উচিত এইসব।

সামনে বসে যারা এসব শোনে তারা এসব কথার বিন্দুবিসর্গ বুঝতে পারে না। পারার কথাও নয়। তবে তাতে কোনও অসুবিধে হয় না। সব কথাতেই প্রবল উৎসাহের সঙ্গে মাথা নাড়ে। সবথেকে বেশি মাথা নাডেন গঙ্গারাম পাড়ে। তিনি এ অঞ্চলের একজন নামকরা ইট-বালি সাপ্লায়ার। ইদানীং জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে পড়েজি গম্ভীরমুখে দু’-একটা মতামতও দিচ্ছেন। বিভূতিচরণের তাকে মনে ধরেছে। তিনি ঠিক করেছেন, পাড়েজিকে খুব শিগগিরই দলে নিয়ে নেবেন।

কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই সময়ে বিভূতিচরণের জন্য বাড়ির ভেতর থেকে একটা বড় কাচের গেলাসে চা আসত। কথার ফাকে ফাকে বিভূতিচরণ তাতে চুমুক দিতেন। সম্প্রতি ব্যবস্থা বদলেছে। কাচের জায়গায় আসছে পাথরের গেলাস। তাতে নিমপাতার ঘন সবুজ শরবত। সাতসকালে নিমপাতার শরবত অতি জঘন্য একটা জিনিস। মুখে দিলে পেটে পাক মারে। বিভূতিচরণ সেটা বুঝতে দেন না! চুমুক দেওয়ার সময় চোখে একটা তৃপ্তির ভাব রাখেন।

প্রতিদিনই কেউ না কেউ গদগদ গলায় তাকে জিজ্ঞেস করবে, ‘বিভুদা, ওটা কী খাচ্ছেন? বাদামের শরবত নাকি?’ বিভূতিচরণ নরম গলায় বলবেন, শরবতটা ঠিকই ধরেছ। তবে বাদামের শরবত নয়। নিমপাতার শরবত খাচ্ছি ভাই।’

‘নিমপাতার শরবত! ওরে বাবা, সে তো মারাত্মক জিনিস! শুনেছি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোজ সকালে নিমপাতার শরবত খেতেন। আপনিও খান!’

বিভূতিচরণ মৃদু হাসবেন। লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলবেন, ‘যাঃ, পাগল কোথাকার। কার সঙ্গে কার তুলনা।’

সেই বিভূতিচরণ আজ দলের কয়েকজনকে বাদ দিয়ে সব দর্শনার্থীকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তারপর থমথমে মুখে বসে আছেন। থমথমে মুখে বসে থাকার কারণ আছে। গতকাল তার এলাকায় বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে, অথচ তিনি কিছুই জানতে পারেননি। এটা ভয়ংকর ব্যাপার। বিভূতিচরণ কোনও অগাবগা পাবলিক নন, তিনি এই অঞ্চলের নির্বাচিত প্রতিনিধি। গত নির্বাচনে অমিয় সামন্তকে যোলোশো বাইশ ভোটে পরাজিত করেছেন। এই জয়ের জন্য তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। তবু তিনি কাল কিছু জানতে পারেননি। জানতে পারলেন আজ সকালে। দলের সিস্টেম একেবারে ভেঙে না পড়লে এ জিনিস হওয়ার কথা নয়। এই কারণেই তাঁর মুখ থমথমে।

সকালে খবরের কাগজগুলো খুলতেই বিভূতিচরণ দেখতে পেলেন বড় বড় হেডিং— ‘এক হতদরিদ্র ভিখিরি পরিবারের সততা।’ হেডিং-এর নীচে রঙিন ফটো। ফটোতে দেখা যাচ্ছে, সাত-আট বছরের এক বালক তার বাবা-মাকে দু’পাশে নিয়ে খাটিয়ার ওপর বসে আছে। খোলা আকাশের তলায়, ফুটপাথের ওপর সেই খাটিয়া পাতা। ব্যাকগ্রাউন্ডে নীল প্লাস্টিক, আর ভাঙা দরমা দিয়ে তৈরি ঝুপড়ি উঁকি মারছে। সম্ভবত এই ঝুপড়ি পরিবারটির বাড়ি। খাটিয়ার একদিকে একটা ট্রানজিস্টর রেডিয়ো, অন্যদিকে একটা নেড়ি কুকুর। কুকুর খাটিয়ার মধ্যে মাথা গুঁজে ঘুমোচ্ছ। তবে বাবা, মা এবং ছেলে তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে। তিনজনের চোখেই ভয় ভয় ভাব। মনে হচ্ছে, এটাই এদের জীবনের প্রথম ছবি ওঠার ঘটনা। তিনজনেরই জামাকাপড়ের অবস্থা ভয়ংকর। ছেঁড়া, তাপ্পি মারা। খাটিয়ার পাশে একটা ডাস্টবিন। গায়ে মরচের দাগ। ডাস্টবিনের ওপর থেকে উপচে পড়ছে আবর্জনা। সেই আবর্জনায় পুরনো জুতো, ফুলকপির ডাঁটা, তোবড়ানো প্লাস্টিকের বোতল, ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো সবই আছে। ফটো থেকেই যেন দুর্গন্ধ আসছে! ফটোর নীচে ক্যাপশন— ‘এই সেই সৎ ভিখিরি পরিবার এবং এই সেই ডাস্টবিন। যে ডাস্টবিন এতদিন সামান্য ময়লা ফেলবার পাত্র হয়ে পথের পাশে পড়ে ছিল, তাই আজ হয়েছে সততার প্রতীক, লোভহীনতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’

এরপর রয়েছে ঘটনার বিবরণ। বিবরণে বলা আছে, কীভাবে এই পরিবার ডাস্টবিন ঘাঁটতে গিয়ে একটা কাপড়ের পুঁটলি কুড়িয়ে পেল, কীভাবে সেই পুঁটলি খুলে দেখতে পেল গয়না, কীভাবে সেই পুঁটলি তারা পুলিশের কাছে গিয়ে জমা দিল ইত্যাদি। রোমহর্ষক, আবেগঘন কাহিনি।

বিভূতিচরণের ইচ্ছে করছে, সামনে বসে থাকা ছেলেদের দিকে নিমপাতার শরবত ভরতি পাথরের গেলাসটা ছুড়ে মারি। যাক, একটার মাথা ফেটে যাক। দরদর করে রক্ত পড়ুক। তাতে হয়তো রাগ কিছুটা কমবে। তিনি নিজেকে অনেক কষ্ট্রে সামলালেন। হিসহিসে গলায় বললেন, ‘এসব কি সত্যি? সত্যি এই ঘটনা ঘটেছে?’

পল্টু কাঁদোকাঁদো গলায় বলল, ‘হ্যাঁ বিভুদা, সত্যি ঘটেছে। কাল রাতে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। খারাপ ঘটনা হল, কীভাবে যেন অমিয় সামন্তর কানে খবরটা চলে যায়। ব্যাটা রাতেই ওই ঝুপড়ির ওখানে ছুটে গেছে। তখন টিভিওলারা ছিল। ভিখিরিদের ইন্টারভিউ নিচ্ছিল। আজ সকাল থেকে ওদের সঙ্গে অমিয়কেও টিভিতে দেখাচ্ছে।’

বিভূতিচরণ শীতল গলায় বললেন, ‘দয়া করে টিভিটা চালাও।’

টিভি চালানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই পরদায় ছবি ভেসে উঠল। সেই ছবি বিভূতিচরলেন হাড় হিম করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

ছবি এরকম—

গভীর রাত। সাদা কুর্তা আর ঘি রঙের পাঞ্জাবি পরে অমিয় হাসিমুখে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে সে ভিখিরি বালককে জড়িয়ে আছে। অন্য হাতে খানকতক কম্বল। পাশে সেই ভাঙা ডাস্টবিন। সেখান থেকে ছেঁড়া জুতো আর কপির ডাঁটা উঁকি দিচ্ছে। অমিয় জড়িয়ে ধরার কারণে ছেলেটার মনে হয়, দম চাপা লাগছে, সে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। অর্মিয় তাকে আরও শক্ত করে চেপে ধরল। তারপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে গলা কাঁপিয়ে বলল, ‘এই দরিদ্র, সৎ পরিবার আমার বহুদিনের পরিচিত। আমার এলাকার মানুষ। আমার একান্ত আপনজন। এদের সততা আসলে আমার সততা। এদের কষ্ট আসলে আমার কষ্ট। তাই এত রাতেও আমি এদের জন্য কিছু শীতবস্ত্র নিয়ে ছুটে এসেছি।’

বিভূতিচরণের এবার মনে হল, পাথরের লোসটা এবার টিভির পরদায় ছুড়ে মারলে ভাল হয়। এপ্রিল মাসের গরমের রাতে শীতবস্ত্র নিয়ে ছুটে গেছে! এ লোক ছোটখাটো হারামজাদা নয়, খুব বড় হারামজাদা। শালা প্রথম চান্সেই ইস্যুটাকে ধরে নিয়েছে। রাজনীতিতে ইস্যু বড় কথা নয়, ইস্যকে ধরাই বড় কথা। এবার ভিখিরির বাচ্চাগুলোকে নিয়ে এরা বিরাট লাফালাফি শুরু করবে। বিভূণির বুক ধড়ফড় করছে। প্রেশার কি বেড়ে গেল? মনে হচ্ছে বেড়ে গেল। এর জন্যই বলে, বিপদ কোথা থেকে আসবে তার কোনও ঠিক নেই। তাঁর বিপদ এল সামান্য ফুটপাথ থেকে! খবরটা যদি আগে পাওয়া যেত তা হলে অমিয়র বদলে টিভির পরদায় এখন তাঁর ছবি ভেসে উঠবার কথা। ধড়ফড় বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল।

আগুন-গরম মাথা নিয়ে বিভূতিচরণ চিন্তার মধ্যে ডলে ছিলেন। কিছু একটা করতে হবে। এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। যে করেই হোক অমিয়কে আটকাতে হবে। আচ্ছা, ফ্যামিলিটাকে রাতে তুলে নিয়ে হাপিস করে দিলে কেমন হয়? ঝুঁকি হয়ে যাবে? বড়লোক অপহরণ খুব একটা কঠিন কিছু নয়, হামেশাই শোনা যায়। কিন্তু ভিখিরি অপহরণ? জানাজানি হয়ে গেলে কেলেঙ্কারি। না, তাঁকে এগোতে হবে অন্য পথে। কিন্তু কী সেই পথ? সেই পথ কি পাওয়া যাবে?

মিনিট দশেক গভীর ভাবনার পরেই পথ পাওয়া গেল। মচকি হেসে জীবনকে কাছে ডাকলেন বিভূতিচরণ। ফিসফিস করে বললেন, ‘ভাল করে শোনো জীবন। শোনো।খুব মন দিয়ে শোনো। বুঝতেই পারছ এরা পরিবারটাকে নিয়ে ক’দিন খুব নাচবে। নাচুক, যত খুশি নাচুক। এই সময়টা আমরা নাচব ওই ডাস্টবিন নিয়ে। নাচ কাকে বলে দেখিয়ে দেব।’

জীবন অবাক হয়ে বলল, ‘ডাস্টবিন নিয়ে নাচব?’

‘হ্যাঁ, ডাস্টবিন নিয়ে। যে ডাস্টবিনটা থেকে গয়না-টয়না কুড়িয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে সেটাই হবে আমাদের তুরুপের তাস। ওরা খেলবে ভিখিরি নিয়ে, আমি খেলব ডাস্টবিন নিয়ে। দেরি কোরো না, তুমি বেরিয়ে পড়ে। ডাস্টবিনটা আমার চাই। ডাস্টবিন নিয়ে ফিরে এসে খবরের কাগজ, টিভি অফিসে ফোন করবে। বিকেলে বাড়িতে প্রেস কনফারেন্স করব। ডাস্টবিন বিষয়ে প্রেস কনফারেন্স। বেশি কিছু খাওয়ানোর দরকার নেই। শুধু একটা করে বড় সন্দেশ, একটুকরো করে কেক। ডাস্টবিনটাকে আমি আমার কাছে কেন নিয়ে এলাম সে কথা সাংবাদিকদের বলব। বলব, মানুষ যেমন মনীষীদের ছবি পাশে রেখে চলে, আমি তেমনি এই ডাস্টবিন পাশে রেখে দেশের কাজ করব। সামান্য মানুষ নয়, যে জিনিস মানুষকে সততার পথে নিয়ে যায়, সেটাই আসল, সেটাই খাঁটি। মানুষ চলে যায়, কিন্তু জিনিস পড়ে থাকে। আদি অনন্তকাল ধরে সে মানুষের মহান কীর্তির চিহ্ন বহন করে। তাই আমি ডাস্টবিন…। আহা! কেমন হবে জীবন?’

কেমন হবে জীবন বুঝতে পারছে না। বোঝার দরকারও নেই। সে তার স্যারের মনের কথা বুঝতে পারছে। ব্যস, সেটাই যথেষ্ট। হেসে বলল, ‘খুবই ভাল হবে স্যার। আমি স্যার তবে রওনা হয়ে যাই? স্যার, ডাস্টবিনটা আনবার সময় কাউকে বলতে হবে নাকি? কোনও অনুমতির ব্যাপার আছে?’

‘অনুমতি! অনুমতি কীসের! আমি বলছি, এটাই অনুমতি। একটা রিকশ-টিকশয় জিনিসটা তুলে নিয়ে চলে আসবে। সঙ্গে কয়েকজনকে নিয়ে যাও। দেরি কোরো না।’

‘ডাস্টবিন কি ময়লাসুদ্ধ আনব স্যার?’

‘না না, ময়লা-টয়লা ওখানেই ফেলে আসবে। খেপেছ, বাড়িতে ময়লা ঢোকাব নাকি?’

বিভূতিচরণ উঠে পড়লেন। তাঁর মন ভাল হয়ে গেছে। এবার অমিয় ব্যাটা বুঝতে পারবে। তিনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, কাগজে কাগজে তাকে নিয়ে খবর, টিভিতে টিভিতে তাঁর ছবি। হাসিমুখে তিনি। পাশে ডাস্টবিন।

2

রঙিন চাঁদোয়া। চাঁদোয়ার তলায় খানকয়েক বিয়েবাড়ির সাদা চেয়ার। সামনে উঁচু একটা টুলের ওপর টিভি চলছে। পার্টি অফিসের সামনে রাস্তা আটকে টিভি দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে। ভোর থেকে ছোটাছুটি করে অমিয় নিজের উদ্যোগে এই ব্যবস্থা করেছে। টিভিতে বেশি সময়টাই সিনেমা চলছে, শুধু খবরের সময় খবর। এখন চলছে উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা। এই সকালেও দর্শকসংখ্যা খারাপ নয়। বেকার ধরনের কয়েকজন বেশ গুছিয়ে বসে পড়েছে। তাদের হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে, সারাদিনের জন্য বিনা খরচে এমন একটা আমোদের আয়োজন পেয়ে তারা যথেষ্ট খুশি। তাদের খুবই আশা, বেলা বাড়লে হালকা ধরনের টিফিনও আসতে পারে।

পার্টি অফিসের ভেতর অমিয় বসে আছে। তার মুখ বেজার। বেজার হওয়া স্বাভাবিক। টিভি মাঝে মাঝেই গোলমাল করছে। সিনেমার সময় ঠিক চলছে, কিন্তু খবর শুরু হলেই ছবি কাপছে। এত কাঁপছে যে লোকজন ঠিকমতো চেনা যাচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে তো গোটা আয়োজনটাই ব্যর্থ। পাবলিককে সিনেমা দেখানোর জন্য তো এই আয়োজন হয়নি। টিভি খবরে তাকে দেখানো হবে। গভীর রাতে ভিখিরি বালককে জড়িয়ে ধরে আছে। হাতে কম্বল। এই দৃশ্য দেখানোর জন্যই ভোর থেকে এত ছোটাছুটি, এত ব্যবস্থা। সেটাই যদি ব্যর্থ হয়, তা হলে আর কী লাভ হল?

ব্রজেশ্বরবাবু সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বললেন, ‘তোমার সবটাতেই বাড়াবাড়ি অমিয়। টিভির খবর তো লোকে বাড়িতে বসেই দেখতে পায়। এর জন্য রাস্তায় টিভি বসানোর কী ছিল?’

ব্রজেশ্বরবাবু নেতা মানুষ। নেতা মানুষদের মাথায় সব সময়ই নানা ধরনের পরিকল্পনা আসে। কালকের ঘটনাটা নিয়েও ব্রজেশ্বরের মাথায় নাকি দারুণ একটা পরিকল্পনা এসেছে। সেই পরিকল্পনার কথা জানাবার জন্যই এই সাতসকালে সবাইকে তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন।

অমিয় নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘এতে বাড়াবাড়ির কী আছে ব্রজদা? সকাল থেকে টিভিতে আমাকে দেখাচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম, এলাকার মানুষ সেটা আরও ভাল করে জানুক।’

মাটির ভাঁড়ে সিগারেটের ছাই ফেলে ব্রজেশ্বর বিরক্তমুখে বললেন, ‘এত আমি আমি করছ কেন অমিয়? তাও যদি ভোটে জিততে একটা কথা ছিল। একটা সমাজবিরোধীর কাছে তো হেরে গেছ।’

অমিয় মনে মনে বলল, শালা, বেশি সাহস দেখায়। ভোটের দিন ভয়ে দরজায় খিল দিয়ে বসে ছিল। এখন ফুটানি। মুখে কিছু বলল না। সুতপা মিটিং-এর নোটস লিখলে। সে খাতা বের করতে করতে বলল, ‘অমিয়দা, শুলাম কাল রাতে আপনি নাবি: এল নিয়ে ওখানে গিয়েছিলেন? ঘটনা কি সত্যি? এই গরমে কম্বল! লোকে তা হাসাহাসি করছে।’

অমিয় গজগজ করে বলল, ‘কী নেব? রাতে পার্টি অফিস খুলে দেখি, কতগুলো কম্বল পড়ে আছে। লাস্ট ফ্লাডের সময় তোলা হয়েছিল। দেওয়া হয়নি। তারই কয়েকটা নিয়ে চলে গেলাম। গরমকাল বলে তো আর ফুটপাথের ঝুপড়িত এয়ারকশিন মেশিন নিয়ে যেতে পারব না।’

এমন সময় বাইরে হাততালির শব্দ হল। গোপাল জানলা দিয়ে মুখ বাড়ল। অমিয় তাকে টিভি শো ম্যানেজের দায়িত্ব দিয়েছে। বলল, ‘অমিয়দাকে দেখাচ্ছে। সবাই খুব ক্ল্যাপ দিচ্ছে। অমিয়দা বাইরে এসো।’

ব্রজেশ্বরবাবু গোপালকে জোর ধমক দিলেন, ‘জানলা বন্ধ করে দাও। মিটিং শুরু হবে। অ্যাই, অমিয় বাইরে যাবে না।’

রাগে অমিয়র চোখমুখ লাল হয়ে উঠল। হিংসুটের দল।

তবে তার রাগ বেশিক্ষণ টিকল না। অল্পক্ষণের মধ্যেই জল হয়ে গেল। জল হয়ে একেবারে গড়িয়ে পড়ল ব্রজেশ্বরের পায়ে। কী প্ল্যান! শাবাস! এই না হলে নেতা।

ব্রজেশ্বরবাবু সত্যি চমকপ্রদ!

শনিবার বিকেলে চার রাস্তার মোড়ে স্টেজ বানিয়ে সংবর্ধনা সভা হবে। সেখানে একটি সৎ দরিদ্র পরিবার এবং একটি সততার প্রতীক ডাস্টবিনকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মঞ্চে কোনও রাজনৈতিক নেতা, কর্মীকে রাখা হবে না। রাখা হবে, এই এলাকার স্কুলশিক্ষক, শিল্পী, খেলোয়াড় এবং মাধ্যমিকে ভাল নম্বর পাওয়া ছাত্রদের। আর থাকবে অমিয়। অন্য কোনও কারণ নয়, আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই তাকে স্টেজে রাখা। স্টেজের একপাশে বসবে ভিখিরি পরিবার, অন্যপাশে থাকবে ডাস্টবিন। একটা স্পট লাইট ডাস্টবিনটার ওপর পড়বে।

সভার শুরুতে অমিয় তার সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলবে, ‘সমাজের সব আবর্জনাই আবর্জনা নয়। এই সামান্য ডাস্টবিন আজ সে কথাই আমাদের প্রমাণ করে দিল। কোনও কোনও সময় আবর্জনার আড়ালে লুকিয়ে থাকে রত্ন, অলঙ্কার। যাকে দেখে আমরা একসময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, তাকে আজ সম্মান জানাতেই এই ছোট্ট আয়োজন। সততার এই প্রতীকটিকে আমরা স্থায়ীভাবে আমাদের মধ্যে জায়গা করে দিতে চাই। আমরা সিন্ধান্ত নিয়েছি, চার রাস্তার এই মোড়ে ডাস্টবিনকে ঘিরে একটা মনোরম পার্ক তৈরি করা হবে। থাকবে ফুলের বাগান। বসবে ফোয়ারা।

সুতপা বলল, ‘স্টেজের ওপর ডাস্টবিন! দারুণ আইডিয়া। ব্রজদা, ডাস্টবিনে ময়লাগুলো থাকবে, নাকি ফেলে দেওয়া হবে?’

ব্রজেশ্বরবাবু অবাক গলায় বললেন, ‘এটা কী বললে সুতপা! ময়লা ছাড়া ডাস্টবিন কী করে হবে? অবশ্যই ময়লা থাকবে। এতে মানুষের কাছে আমাদের কথা আরও বিশ্বাসযোগ্য হবে।’

অমিয় লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে পড়ল। হাতে একদম সময় নেই। অনেক কাজ। ম্যাটাভর ঠিক করতে হবে। ছেলেপিলে নিয়ে ভাস্টবিনটাকে তুলে আনতে হবে এখনই। সেরকম হলে এ কদিন জিনিসটা সে নিজের শোওয়ার ঘরে রেখে দেবে। শালা বিভূতিচরণ, দেখব এবার তুমি কেমনভাবে জেতে। এক অস্ত্রেই তুমি কুপোকাত। সেই অস্ত্রের নাম, ডাস্টবিন পার্ক।

মুম্বই থেকে ফ্যাক্স এল ঠিক বেলা দশটা পাঁচ মিনিটে। ফ্যাক্সের ওপর লেখা, ভেরি আর্জেন্ট। দশটা পনেরো মিনিটের মধ্যে শঙ্করপ্রসাদ খাস্তগিরের টেবিলে পৌঁছে গেল সেদিনের সবকটা খবরের কাগজ। সেই কাগজগুলো দ্রুত পড়ে তিনি সেক্রেটারিকে ডিকটেশন দেওয়ার জন্য ডাকলেন।

বহুদিন পর আজ জেনারেল ম্যানেজার শঙ্করপ্রসাদ শাস্তগির খানিকটা উত্তেজিত। উত্তেজনার কারণ আছে। মুম্বই থেকে যে ফ্যাক্স এসেছে সেটি খোদ চেয়ারম্যানের। তার থেকেও বড় কথা হল, তিনি যে বিষয় জানতে চেয়েছেন তার সঙ্গে এই সাবান কোম্পানির কোনও সম্পর্ক নেই। এই কারণেই তিনি উত্তেজিত।

ঠিক এক ঘণ্টা পরে মার্কেটিং ম্যানেজার ত্রিদিব চৌধুরিকে ঘরে ডেকে পাঠালেন শঙ্করপ্রসাদ। সেক্রেটারিকে বলে দিলেন, কেউ যেন বিরক্ত না করে। আজ সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল।

শঙ্করপ্রসাদ ঝুঁকে পড়ে বললেন, ‘মিস্টার চৌধুরি, আপনি কি ঘটনাটা জানেন?’

‘কোন ঘটনাটা স্যার?’

‘ওই যে একটা বেগার ফ্যামিলি গয়নাটয়না কীসব কুড়িয়ে পেয়েছে…। জানেন আপনি?’

‘টিভি নিউজে দেখেছি স্যার। প্রথমে অতটা রেজিস্টার করেনি। সকালে বাজারে গিয়েও যখন বিষয়টা নিয়ে কথাবার্তা শুনলাম, তখন খানিকটা মন দিই। ঝুপড়ি, ডাস্টবিন, ফুটপাথ নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমার মিসেসও সকালে বলেছিলেন। আমাদের বাড়িতে যে মহিলা রান্না করে সেও শুনেছে। তবে সে গয়নার কথা শোনেনি। সে শুনেছে, ডাস্টবিন থেকে একটা ডায়মন্ড খুঁজে পাওয়া গেছে। আই ডিডন্ট বিলিভ।’

খাস্তগির কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর ভুরু কুঁচকে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন, ‘দেখুন তো কী মুশকিল। আমি কিছুই জানতাম না। সকালে হেড অফিস থেকে ফ্যাক্স এল। চেয়ারম্যান নিজে লিখছেন, উনি নাকি অন্য সোর্সে খবরটা জানতে পেরেছেন। অ্যান্ড হি বিকেম ভেরি মাচ্ ইন্টারেস্টেড। এখনই ডিটেলস জানাতে হবে। আমি খবরের কাগজ আনিয়ে, নোট তৈরি করে পাঠিয়ে দিলাম। এরপর চে য়ারম্যান নিজে ফোন করলেন। বললেন, খাস্তগির, আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, আমরা কী করব? আমরা একটা সাবানের কোম্পানি….। চেয়ারম্যান মনে হল, বিরক্ত হলেন। বললেন, নো খাস্তগির, ইউ আর মেকিং আ মিসটেক। এখানে একটা ডাস্টবিনের ভাইটাল রোল আছে। এই ডাস্টবিনটাকে আমরা আমাদের সাবানের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করব।’

ত্রিদিব চৌধুরির গলায় চাপা উত্তেজনা। বললেন, ‘সেটা কীরকম?’

খাস্তগির ঝুঁকে পড়ে বললেন, প্রথমেই আমরা ডাস্টবিনটাকে কোম্পানির তরফ থেকে নিয়ে নেব। যদি দাম লাগে তাই দেওয়া হবে। যত দাম লাগে। মোদ্দা কথা হল, এটার সোল রাইট হবে আমাদের। অন্য কেউ আর এটাকে ইউজ করতে পারবে না। তারপর এটার ছবি, ডিজাইন দিয়ে আমাদের বিজ্ঞাপন শুরু হবে। হোর্ডিং, কিওস্ক, নিউজপেপার, টিভি অ্যাড। চেয়ারম্যান চাইছেন, খুব তাড়াতাড়ি এই শহরটাকে আমরা যেন ডাস্টবিন দিয়ে ঢেকে দিই। কাজটা টপ প্রায়োরিটি দিয়ে আমাদের করতে হবে।’

এতটা বলে খাস্তগির থামলেন। ত্রিদিব বললেন, ‘তা হলে স্যার পারচেজ ম্যানেজার মিস্টার মণ্ডলকে এখনই স্পটে পাঠিয়ে দেওয়া দরকার। জিনিসটা কেনবার জন্য ও নেগোসিয়েশন শুরু করুক। কারণ, উই নিড দ্য ডাস্টবিন ফাস্ট। ওটা আগে হাতে আসা দরকার। আমি একটা চেক রেডি করে দিচ্ছি। নাম আর টাকার অ্যামাউন্টটা সেখানে লিখছি না। ডাস্টবিনটা কার সেটা তো আমরা জানি না। কথা বলে মিস্টার মণ্ডল নাম বসিয়ে নেবেন। বিকেলের মধ্যে জিনিসটা নিয়ে গিয়ে আমাদের ট্যাংরা বা মৌলালির গোডাউনে ঢুকিয়ে দিতে পারলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পারব।’

খাস্তগির বললেন, ‘জিনিসটা যেন কোনওভাবেই আমাদের হাতছাড়া না হয়।’

মিটিং শেষ হওয়ার মুখে হেড অফিস থেকে আরও একটা ফ্যাক্স এল। মুম্বইতে বিজ্ঞাপন বিভাগ ইতিমধ্যেই প্রাথমিক কাজ এগিয়ে ফেলেছে। বাংলায় মূল স্লোগান তৈরি—

‘মনের ময়লা দূর করেছে ডাস্টবিন, গায়ের ময়লা দূর করছি আমরা।’

গলি সরু। ভ্যান, জিপ কিছুই ঢুকতে পারেনি। সেই সুযোগে আরও কয়েকটা ঝুপড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। যদিও এই নিয়ন্ত্রণে কোনও ভরসা নেই। যে-কোনও সময় গোলমাল আবার শুরু হতে পারে। আরও ফোর্স চাওয়া হয়েছে। সেই ফোর্স এখনও আসেনি। থানার বড়বাবু গলির মুখে দাড়িয়ে সেই ফোর্সের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। ট্রাম রাস্তায় পায়চারি করছেন এবং মনে মনে রিপোর্ট তৈরি করছেন। শালার পুলিশের চাকরি। ওপরতলায় রিপোর্ট দিতে দিতেই জান কয়লা হয়ে গেল।

এখন পর্যন্ত বড়বাবু যে রিপোর্টটুকু তৈরি করতে পেরেছেন সেটা অনেকটা এরকম—

গোলমালের কারণ জানা যায়নি। কারা করছে তাও খুব স্পষ্ট নয়। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে চিন্তার কিছু নেই, বোঝা যাবে। দুটোকে ধরে গাদন (এই শব্দ রিপোর্টে থাকবে না।) দিলেই সব বোঝা যাবে। ঘটনায় বেশ কয়েকটা বোমা পড়ে। লাঠি এবং লোহার রড় ব্যবহার হয়েছে যথেচ্ছ। মারপিটের সময় কয়েকজনের হাতে নাকি পাইপগানের মতো কিছু অস্ত্র দেখা গেছে। গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, আজ সকাল থেকে অমিয় সামন্তর পার্টি অফিসের সামনে টিভি দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। কেন হয়েছিল? সাতসকালে চেয়ার পেতে টিভি দেখানোর কী আছে? গোলমালের জন্য লোক জড়ো করা হচ্ছিল? হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। সবথেকে বেশি ঝামেলা করেছে বিভূতিচরণ। গোলমালের সময় সে নিজে হাজির ছিল। তার গাড়ি থেকেই লাঠি, লোহার রড এবং কেরোসিন তেলের টিন নেমেছে।

বড়বাবু খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন। রিপোর্ট মোটামুটি টাইট। ফাঁকফোকর কম। সমস্যা হচ্ছে তিনটি বিষয় নিয়ে। খবর পাওয়া গেছে, ঝামেলার ঠিক আগে ঘটনাস্থলে কারা নাকি গাঁদা ফুলের মালা নিয়ে ঘুরছিল। মারপিটের সময় বোমাটোমা ঠিক আছে। কিন্তু ফুলের মালা? না, ঠিক নেই। দ্বিতীয় সমস্যাটা আরও জটিল। ঘটনার পর ফুটপাথের ওপর একটা আধপোড়া চেক পাওয়া গেছে। চেকে নাম, টাকার অঙ্ক কিছুই লেখা নেই, তলায় কোনও একটা কোম্পানির সিলমোহর রয়েছে। পুড়ে যাওয়ার কারণে সেই সিলমোহর পড়া যাচ্ছে না। ভিখিরিদের ফুটপাথে চেক! অতি সন্দেহের বিষয়। খুবই রহস্যজনক। গোলমালের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র নেই তো? তিন নম্বর সমস্যাটাও জ্বালাতনের। খবর পাওয়া গেছে, ঝামেলার ঠিক আগে আগে ঝুপড়িগুলোর সামনে নাকি একটা সুট-টাই পরা লোককে ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে। কেউ বলছে সুটের রং বাদামি, কেউ বলছে কালো। ঝুপড়ির সামনে ছেঁড়া জামাকাপড় পরা লোক থাকবে, সুট পরা লোক থাকবে কেন? গোলমালের বিষয়।

বড়বাবু প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছলেন। মোবাইল বেজে উঠল। তিনি ব্যস্ত হয়ে ফোন ধরলেন— ‘হ্যাঁ স্যার বলছি, বলুন স্যার। না স্যার, ওদের পাওয়া যাচ্ছে না। যে ঝুপড়িগুলোতে আগুন লেগেছে তার মধ্যে এই ফ্যামিলির ঘরটাও আছে। তারপর থেকেই ফ্যামিলিটা মিসিং। ট্রেস করা যাচ্ছে না স্যার। বাবা, মা, ছেলে কেউ নেই। মনে হচ্ছে, ভয়ে পালিয়ে গেছে স্যার। নিশ্চয় স্যার, আমি গুরুত্ব বুঝতে পারছি স্যার। খোঁজ পেলেই আপনাকে জানাচ্ছি। আর কিছু বলবেন স্যার? কী বললেন স্যার, ডাস্টবিন! ডাস্টবিন তো খেয়াল করিনি স্যার। এটার দখল নিয়ে গোলমাল! সামান্য ডাস্টবিনের জন্য এতবড় ক্ল্যাশ! স্যার কিছু মনে করবেন না, ইনফরমেশনে কোনও গ্যাপ হচ্ছে না তো? না, না, আমি নিজে যাচ্ছি। যেখানে থাকুক এই জিনিস আমি খুঁজে আর্মড গার্ড বসিয়ে দেব। স্যার এমন ব্যবস্থা করব যাতে ধারে কাছে কেউ ঘেঁষতে না পারে।’

ফোন ছাড়ার পর বড়বাবুকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। একেই বলে ওপরতলার হুড়কো। রিপোর্টে এত কিছু রয়েছে তাতে হচ্ছে না। বলছে, গোলমালের কারণ একটা ডাস্টবিন! ধুস শালা।

ফোর্স এসে গেছে। বড়বাবু হাঁক দিলেন, ‘অ্যাঁই, ইধার আও। আমি ভেতরে যাব। আভি পজিশন লেনা হোগা।’ বিরাট পুলিশবাহিনী নিয়ে সরু গলির মধ্যে ঢুকে পড়লেন বড়বাবু।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল, আধপোড়া একটা ঝুপড়ির সামনে একদল পুলিশ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সম্ভবত একেই বলে, ‘পজিশন নেওয়া’। তাদের হাতে লাঠি, ঢাল এমনকী বন্দুকও। তারা কঠিন মুখে ঘিরে রেখেছে সামান্য একটা ভস্টবিন! ভাঙা, জং ধরা একটা ডাস্টবিন! ডাস্টবিন থেকে উপচে পড়ছে আবর্জনা। ছেঁড়া জুতো, ফুলকপির ডাঁটা, তোবড়ানো প্লাস্টিক।

শুধু কোথা থেকে যেন একটা টাটকা গাঁদা ফুলের মালা এসে সেই আবর্জনার মধ্যে পড়ছে!

শারদীয়া আজকাল, ১৪১২

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *