০১-২. হারিয়ে যাওয়ার সময়

হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা – কিশোর উপন্যাস – শাহরিয়ার কবির

০১. হারিয়ে যাওয়ার সময়

অক্টোবরের মাঝামাঝি আমাদের স্কুলের বছর-শেষের পরীক্ষাটি হয়ে গেলো। ফলও বেরিয়ে গেলো দিন-পনের পরে। আমাদের সাধু নিকোলাসের স্কুলে পড়াশোনা এত তাড়াতাড়ি হয় যে, ছমাসের মাথায় ক্লাসের সব বই পড়া শেষ হয়ে যায়। পরের বার শেষ করতে দুমাসের বেশি সময় লাগে না। তাই প্রত্যেক বছর অক্টোবরে ক্লাস শেষ করে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। নবেম্বর, ডিসেম্বর দুমাস একটানা ছুটি। জাফলং-এর হাড়কাঁপানো শীতের ভেতর ছুটির মাস দুটো ছোট-বড় এতসব ঝলমলে ঘটনায় ভরা থাকে যে, নতুন ক্লাসে উঠে সে-সব গল্প। শেষ করতে জানুয়ারি মাস পেরিয়ে যায়। গত বছর বড়দিনের ছুটিতে বিজুকে ছেলেধরার দল ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। স্কুলের সবাইকে সেই গল্প বলে শেষ করতে পুরো তিন মাস লেগেছে।

সেবার পরীক্ষার ফল বেরোবার দিন আমি, রামু আর বিজু বহুক্ষণ স্কুলের গির্জার সিঁড়িতে বসে গল্প করছিলাম। পরীক্ষার ফল দেখে আমরা এতটুকু উত্তেজিত হইনি। রামু ফার্স্ট হয়েছে; আমি আর বিজু সেকেন্ড। আমি আর রামু এবার ক্লাস নাইনে উঠেছি, বিজু সেভেনে। যেদিন থেকে আমরা তিনজন সাধু নিকোলাসের স্কুলে ভর্তি হয়েছি, তারপর থেকে প্রত্যেকটা পরীক্ষায় রামু ফাস্ট আর আমি সেকেন্ড হয়েছি। গত চারবছর ধরে বিজু সব সময় সেকেন্ড হয়েছে। আগে স্কুলের টিচাররা আর বাড়ির বড়রা এ নিয়ে খুব হাসাহাসি করতেন। আজকাল ওঁরাও ধরে নিয়েছেন, সাধু নিকোলাসের স্কুলে আমরা যতদিন পড়ব, এতদিন এমনটি চলতেই থাকবে। ওঁদের মতো আমরাও এখন আর অবাক হই না। আমাদের হেডমাস্টার ব্রাদার এন্ডারসন যখন ক্লাসে এসে বলেন, এবার এ্যানুয়াল পরীক্ষায় তোমাদের ক্লাসে ফার্স্ট হইয়াছে–তখন নাম বলার আগেই রামু দম দেয়া পুতুলের মতো উঠে দাঁড়ায়। তবে ব্রাদার এন্ডারসন এখনো রিপোর্ট কার্ডটি হাতে তুলে দিয়ে, রামু আর আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার সময় মুখ টিপে হাসবেন। থার্ড হবার জন্যে খালেদ আর পরেশের সে কী ব্যস্ততা! আমার তাতে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। ওরাও থার্ডের বেশি হতে চায় বলে মনে হয় না।

কালো পাথরে বাঁধানো সাধু নিকোলাসের গির্জার ঠাণ্ডা সিঁড়ির ওপর আমরা তিনজন বহুক্ষণ চুপচাপ বসেছিলাম। রামু আপন মনে পাহাড়ি নেপিয়ার ঘাসের গোড়ার নরম দিকটা চিবোচ্ছিলো। প্যাট্রিকের কাছ থেকে আমি সুইস ফ্যামিলি রবিনসন বইটা নিয়েছিলাম পড়ার জন্যে। কয়েক পাতা পড়ে ভাঁজ করে রেখে দিয়েছি। এর আগে ওটা আমি তিনবার পড়েছি। আজকাল এসব পড়তে আর ভালো লাগে না। বিজু একটু দূরে বসে বেতফল খাচ্ছিলো। কিছু গেলার সময় বিজুর হুশ থাকে না। আশেপাশে কেউ আছে কি না, থাকলে তাদেরও কিছু দেয়া উচিত কি না; এসব কথা কখনো ওর মাথায় ঢুকবে না। অথচ আমরা কোনো খাবার জিনিস কিনলে ও এমন জুলজুল চোখে তাকাবে যে, পেটে অসুখ করার ভয়ে তাড়াতাড়ি ওকে একভাগ দিয়ে বাঁচি।

রামুর দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখি কী যেন গভীরভাবে ভাবছে ও। নেপিয়ার ঘাসের গোড়াটা আপন মনে খেয়ে চলেছে। আমার কাছে বেতফল থাকলে নিশ্চয়ই ওকে কটা খেতে দিতাম। বিজুটা নিতান্তই স্বার্থপর। আমাদের বাড়ির ঝি পচার মাও বলে, বিজুদাদা কী স্বার্থপর! কাউকে কিছু দিতে জানে না। আমি আর রামু কিছু খেলে পচাকেও খেতে দেই।

লম্বা নেপিয়ার ঘাসের ডগা পর্যন্ত চিবিয়ে খেয়ে রামু বললো, দূর ছাই কিছু ভালো লাগে না। সবকিছু কী রকম একঘেয়ে হয়ে গেছে, দেখেছিস আবু?

আমি বললাম, কোটা একঘেয়ে, পরীক্ষায় এরকম ফাস্ট-সেকেন্ড হওয়া?

সব কিছু। রামু বিরক্ত হয়ে বললো, ক্লাস, পরীক্ষা, ছুটি কিছুই ভালে লাগে না।

বিজু বেতফলগুলো শেষ করে জামার হাতায় মুখ মুছে আমাদের পাশে এসে বসলো।

আমি আস্তে আস্তে রামুকে বললাম, দুমাস ছুটি কীভাবে কাটাবি কিছু ভেবেছিস?

রামু বললো, এতক্ষণ ধরে সেটাই তো ভাবছিলাম। এতবড় একটা বন্ধ অথচ কিছুই করবো না, ভাবতেই আমার হাত-পা সব হিম হয়ে যাচ্ছে।

স্কুল ছুটি হওয়ার আগে, কী করে সময় কাটাবো এ নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। বিশেষ করে পরীক্ষার পড়া তৈরি করতে বসলেই এসব চিন্তাভাবনা মাথার ভেতর গিজগিজ করে। ভূগোল বইয়ে শীতে পত্রঝরা বৃক্ষের অরণ্য অঞ্চল কিংবা স্তেপের তৃণভূমির কথা পড়তে গিয়ে কতবার সেই পাতা ঝরার বনে আর মানুষ সমান লম্বা ঘাসের সমুদ্রে হারিয়ে গেছি। যে-সব গল্পের বইয়ের চরিত্র পথ হারিয়ে অচেনা কোনো জায়গায় চলে যায় সে-সব বই পড়তে আমার বেশি ভালো লাগে। কতবার আর্কাদি গাইদারের ইশকুল পড়েছি, তবু ওটা পুরোনো মনে হয় না। ফিসফিস করে রামুকে বললাম, কোথাও হারিয়ে যেতে পারলে বেশ হতো।

কী বললি? রামু ভুরু কুঁচকে আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে বলতে হলো, কিছু না।

আমার অনেক কথা নিয়ে রামু হাসাহাসি করে বলে ওকে সবসময় সবকথা বলতে পারি না। রামু আবার বলল, কোথায় যেন যাবার কথা বললি?

আমি চুপ করে রইলাম। বিজু বললো, চল, যেদিকে দুচোখ যায় বেরিয়ে পড়ি।

বিজু মাঝেমাঝে এত পাকা কথা বলে যে আমিও অবাক হয়ে যাই। রামু অবশ্য বিজুর কথা শুনেই খেঁকিয়ে উঠলো, বললেই হল বেরিয়ে পড়ি! মার কানে একবার যাক, তারপর দেখিস কান দুটো আর মাথার সঙ্গে থাকবে না।

বিজু মুখ কালো করে করুণ গলায় বললো, বারে মাকে কেন বলতে হবে!

আমিও রামুর ওপর বিরক্ত হয়ে বললাম, বিজু না হয় একটা কথা বলেছে। তুই নিজেও তো আজেবাজে কথা কম বলিস না। অন্তুর সঙ্গে সেদিন তুই কী করেছিস সে কথা বললে জেঠু তোর কান দুটো খুলে নিয়ে টেমির গলায় ঝুলিয়ে দেবে।

রামু গাঁইগুঁই করে বললো, তুই আবার আমার সঙ্গে লাগতে এলি কেন? তোকে তো কিছু বলি নি!

তুই আমাদের সব কথা বাড়িতে বলতে যাবি কেন?

বারে, আমি কি সত্যি সত্যি বলতে যাচ্ছি নাকি!

রামুর গলায় এতটুকু তেজ নেই। সুযোগ পেয়ে ওকে বলে দিলাম, কথাটা সব সময় মনে রাখলেই খুশি হব।

সাধু নিকোলাসের গির্জায় ঢংঢং করে বারোটার ঘন্টা বাজলো। আমি মনে মনে হিসেব করে দেখলাম, এক ঘন্টা চল্লিশ মিনিট হলো আমরা গির্জার সিঁড়িতে বসে আছি। বিজু একবার বললো, ঘরে যাবি না? আমরা ওর কথার জবাব না দিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম।

মাঝেমাঝে আমাদের এরকম হয়। যখন কারো কোনো কথা বলার থাকে না; শুধু চুপচাপ বসে থাকি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনের চিন্তাভাবনাগুলো কতরকম ডালপালা মেলতে শুরু করে। রামু আমার মেজ জ্যাঠার ছেলে আর বিজু হল সেজ কাকার ছেলে। আমরা তিনজন সবসময় একসঙ্গে থাকি বলে ছোটকা আমাদের বলে থ্রি মাস্কোটিয়ার্স। এই নামে যে একটা বই আছে আমি জানি, তবে এখনো পড়ি নি। ছোটকা বলেছেন ঢাকা থেকে এনে দেবেন। আমাদের তিনজনের দলটা আরো ভারি হোক এটা আমরা কখনো চাই নি। বিজুকে যদি কখনো পেয়ারা খাওয়ার জন্যে দিগন্তের সঙ্গে ভাব জমাতে দেখেছি, তখন আমি আর রামু ওকে কোরাসে বকে দিয়েছি। তেমনি একদিন রামু দেখেছিলো বই দেয়ার জন্যে আমি প্যাট্রিকের সঙ্গে হেসে দুটো কথা বলেছি, অমনি ওর মুখখানা হাঁড়ির মতো কালো হয়ে গেছে। আমি মাঝে মাঝে অন্তর কথা বলে রামুকে চুপসে দেই। বাড়িতে মা আর জেঠিমা, কাকিমারা বলেন, হ্যাঁরে তোদের কোনো বন্ধু নেই? আমরা তিনজন তখন গম্ভীর হয়ে যাই। রামু, বিজু কী চায় জানি না, আমি কিন্তু চাই আর একজন অন্তত আমার বন্ধু হোক। শুধু আমার নিজের, অন্য কারো নয়। কতদিন ভেবেছি সোনিয়ার সঙ্গে ভাব করবো, রামুদের জন্যে হয়ে ওঠে নি।

সোনিয়া আমাদের হাসি খালার ছোট মেয়ে। ওঁরা যখন নতুন এলেন তখন আমরা তিনজনই সোনিয়াকে দেখেছিলাম। গোলগাল পুতুল পুতুল চেহারা, চোখে চশমা আর মাথার দুপাশে লাল রিবন বাঁধা দুটো বেণি ঝোলানো। প্রথম দিকে ওর নাম জানতাম না বলে দুইবেণি ডাকতাম। সোনিয়ার বড় একটা ভাই আছে। অনেক বড়। কানাডায় কী যে পড়তে গেছে। হাসি খালা সব সময় অসম্ভরকম গম্ভীর থাকেন বলে তাঁর বাসায় ঢোকার সাহস এখনো পাই নি। রামু বলে দুইবেণির মার মতো সুন্দরী মহিলা ও জন্মেও দেখে নি।

একদিন সেজ কাকিমা রামুকে এ নিয়ে কী লজ্জায়ই না ফেলেছিলেন! রামু সেদিন সোনা হেন মুখ করে সেজ কাকিমাকে এসে বললো, সেজ কাকিমা, দুইবেণির মা তোমাকে যেতে বলেছে। আমি ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকালাম এই ভেবে, দুইবেণির মার সঙ্গে রামুর আলাপ হল কবে? সেজ কাকিমা অবাক হয়ে বললেন, দুইবেণির মা কে রে? রামু বলল, সেদিন তুমি যাকে আমলকির আচার পাঠালে! অমনি সেজ কাকিমা হেসে খুন দুইবেণি কি রে? ওতো হাসিপার মেয়ে সোনিয়া। ওঁকে তোমরা হাসি খালা ডাকবে। দুইবেণির মা বলে কি কোনো ভদ্রমহিলাকে ডাকা যায়?

এরপর রামু গাঁকগাঁক করে কী বললো শুনতে পাইনি। সেজ কাকিমাও বাড়ির মেয়ে-মহলে কথাটা ভালোমতেই ছড়িয়েছিলেন। তবে আমার সঙ্গে যে সোনিয়ার দুদিন কথা হয়েছে আর একদিন ও আমাকে দেখে মুখ টিপে হেসেছে, এ-কথা আমি কাউকে বলি নি। আমি রামুর মতো বোকা নই। রামু যদি কখনো অপ্রস্তুত হয়, তখন ওর মুখটা যা বোকা দেখায়–আমি হাসি চাপতে পারি না। আড়চোখে রামুর দিকে তাকিয়ে দেখি ও আবার নেপিয়ার ঘাসের গোড়া চিবোনো শুরু করেছে। আমি বললাম, ঘাসে বুঝি খুব ভিটামিন আছে রামু?

রামু কিছু খেতে বসলে ভিটামিনের হিসেব করে। আমার কথা শুনে ঘাস চিবোনো বন্ধ করলো। অর্ধেক খাওয়া লম্বা ঘাসটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হেসে বললো, কী করবো বল্! তুই তো সারাদিন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে যাচ্ছেতাই সব বাংলা উপন্যাস পড়ে দুমাস কাটিয়ে দিতে পারবি। পাজি বিজুটা ডিটেকটিভ বই আর খাবার কিছু পেলে সবকিছু ভুলে যাবে। শুধু আমি পরীক্ষার পরদিন থেকেই ভেবে মরছি কীভাবে সময় কাটাবো।

আমি হেসে বললাম, তুই পরীক্ষা দিয়ে ভাবছিস আর আমি ভাবছি পরীক্ষা দেয়ার আগে থেকে। যে-জন্যে তুই ফার্স্ট হতে পারলি। আমি ভাবছি না তোকে কে বললে?

এদ্দিন ধরে ভেবেও কোনো কুলকিনারা পেলি না?

তুই তো তখন বিজুর কথার কোনো পাত্তাই দিলি না। আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কোথাও হারিয়ে যাই।

ওরকম ইচ্ছে তো সবারই হয়। রামু বললো, শুধু ইচ্ছে হলেই তো হল না। হারিয়ে যাওয়ার মতো একটা ঠিকানা তো থাকতে হবে।

বিজু হেসে বললো, ঠিকানাই যদি জানবি তাহলে হারাবি কী করে? ঠিকানা জেনে কি কখনো হারানো যায়? নাকি হারিয়ে যাওয়ার কোনো ঠিকানা থাকে?

আমাদের তিনজনের ভেতর রামু বেশি বাস্তববাদী। একথা ওকে যদিও কখনো বলি নি, তবে মনে মনে সেটা মানতে বাধ্য। রামু বললো, ওরে হাঁদা, আমি কী বলছি সেটা তুই বুঝতে পারছিস না। কোথায় গিয়ে তুই পথ হারাতে চাস, জয়ন্তিয়া পাহাড়ে, না পিয়াইন নদীতে, সেটাও তো তোকে ঠিক করতে হবে। নাকি তুই বাড়ি থেকে বেরিয়ে উত্তর-দক্ষিণে যে-কোনো একদিকে হাঁটতে চাস, চোখ যেদিকে যায়? আমি বাপু অত বেশি এ্যাডভেঞ্চার যেতে রাজি নই।

আমি বললাম, যেতে রাজি থাকলেই বা কী! দুদিন পরে বিশ্বাস দারোগা ঠিকই কান ধরে হিড়হিড় করে বাড়িতে এনে তুলবে।

বিজু বললো, যাই বলিস, জাফলং জায়গাটা এমন অদ্ভুত যে, কেবল হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।

আমি হেসে বললাম, সেইসঙ্গে আমাদের বয়সটাও যে এমনই–সবসময় কেবল হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।

রামু আর বিজু একসঙ্গে হেসে উঠলো। রামু বলল, আসলে আমাদের এই বয়সটা নিয়েই যত গণ্ডগোল। হাবুল, মন্টুদের দেখ, মেয়েদের সঙ্গে দিব্যি এক্কাদোক্কা আর লুডু খেলে কী চমৎকার সময় কাটিয়ে দিচ্ছে। ঝন্টুদা ছোড়দারা নাটক করবে–সেখানে আমাদের নাক গলানো বারণ। আমরা কোথায় যাই বল তো?

আমি বললাম, ভাবিস না রামু। আজ রাতের ভেতরই আমরা একটা কিছু ভেবে ঠিক করে ফেলবো। কাল থেকে কাজ শুরু করবো। কোথাও যেতে না পাই, বর্ডারে শহীদ মামাকে বলে পায়ে হেঁটে চেরাপুঞ্জির পাহাড় থেকে তো ঘুরে আসতে পারি!

অনেক ভেবে দেখলাম, হারিয়ে যাওয়ার জন্যে জাফলং-এর চেয়ে ভালো জায়গা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। কেন অযথা পাতাঝরা বন আর স্তেপের ঘাসের কথা ভাবি। আমাদের বাড়ি থেকে উত্তরে মেঘের মতো জয়ন্তিয়া পাহাড় দেখা যায়। সেখানে আর কদিন পর সেগুন, তেলসুর আর বুনো নাশপাতির পাতাঝরা শুরু হয় যাবে। ঘাসের জন্যে জয়ন্তিয়া পাহাড়ে যেতে হবে না । আমাদের জাফলং-এ পাহাড়ি নেপিয়ার ঘাসের বনে শীতকালে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। খাসিয়া ছেলেমেয়েরাই সেই আগুনে বুনো খরগোশ পুড়িয়ে খায়।

আমি রামুদের চেরাপুঞ্জির কথা বলেছি, যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। পাহাড়ি পথ ধরে গেলে মনে হয় জাফলং থেকে চেরাপুঞ্জি পনের-বিশ মাইলের বেশি হবে না। চেরাপুঞ্জির পাহাড়ে সবসময় মেঘ জমে থাকে। আমাদের বাড়ির ছাদে উঠলে সব ছবির মতো দেখা যায়।

রামু বলল, তুই এতক্ষণে একটা ভালো কথা বলেছিস আবু। হারাবার কোনো ঠিকানা না পেলে চেরাপুঞ্জিই যাবো।

বিজু বলল, এবার তাহলে বাড়ি চ। আমার ক্ষিদে পেয়েছে।

আমি রামুর দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলাম। রামু হেসে একবার বিজুর দিকে, তারপর আকাশের দিকে তাকালো। বিজু রেগেমেগে উঠে গেলো।

নুড়ি-ছড়ানো সরু পাহাড়ী পথে হাঁটতে হাঁটতে আমরা হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানার কথা ভাবছিলাম। এটা ঠিক যে এ বয়সের সব ছেলেরই ইচ্ছে করে কোথাও হারিয়ে যেতে। তবে হারিয়ে যাওয়ার সত্যিকারের ঠিকানা সম্পর্কে যে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না, সেটা বিকেলের আগে কেউ বুঝতে পারি নি।

.

০২. জয়ন্তিয়া পাহাড়ের আগন্তুক

বাড়ি ফিরতেই মেজ জেঠিমা আমাদের বকুনি দিলেন। ক্লাশ নেই অথচ আমরা দেরি করে ফিরেছি, এতে নাকি আমাদের মহা অন্যায় হয়ে গেছে। জেঠিমা একবার বকতে শুরু করলে থামতে চান না। আমি বললাম, জেঠিমা, রামু ফার্স্ট হয়েছে।

তাতে কি আমার মাথা কিনে ফেলেছে! ইশকুলে থাকতে ওর বাপ দুবার ডবল প্রমোশন পেয়েছিলো। ওকি একবারও পেয়েছে? বংশের নাম ডোবাবে এই ছেলে। এই বলে মেজ জেঠিমা রামুর কান ধরার জন্য হাত বাড়ালেন।

এমন সময় সেজ কাকিমা এসে বললেন, সং-এর মতো সবাই ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? দয়া করে চাট্টি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো। কতক্ষণ তোমাদের খাবার নিয়ে বসে থাকবো!

জেঠিমা যখন বকেন, তখন এভাবেই মা-কাকিমারা এসে আমাদের উদ্ধার করেন। মেজ জ্যাঠা মারা যাওয়ার পর থেকে জেঠিমা গোটা পৃথিবীটার ওপর চটে আছেন। তাঁর বকুনি থকে আজরাইলও রক্ষা পান না। তার ধারণা এই ফেরেশতাটি নিশ্চয়ই অন্ধ, নইলে তাঁকে কেন এই যন্ত্রণার সংসারে এভাবে ফেলে রেখেছেন। দিদা মাঝে মাঝে আদর করে জেঠিমাকে বলেন, ছি মা, আজরাইল হলেন ফেরেশতা। ওঁদের কি এভাবে বলতে আছে? তোমার চেয়ে আমার জ্বালা কি কম! এ-বাড়িতে একমাত্র দিদাই জেঠিমাকে শান্ত করতে পারেন। দিদাকে বাবা, বড় জেঠু, দাদু সবাই ভয় পান।

আমাদের খাওয়ার সময় দিদা এসে তদারকি করলেন। আমরা যে ফার্স্ট সেকেন্ড হব এটা বাড়ির সবাই আগে থেকেই জানতো। তবু দিদা সেজ কাকিমাকে বললেন, সেজ বৌমা আজ ওদের পাশের খবর বেরিয়েছে। মাছের মুড়োটা ওদের তিনজনকে ভাগ করে দাও। তিন টুকরো ভাজা মাছও দিও।

সেজ কাকিমা বললেন, মাছ ভাজা তো ওবেলার জন্যে তুলে রেখেছি মা, এবেলা সবাই রান্না খেয়েছে।

দিদা একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, রোজ তো ওদের ভালো-মন্দ দিতে পারি বৌমা। উঠতি বয়েসের ছেলেদের খাওয়ার দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখতে হয়। রাতে না হয় আমাকে কম দিও।

এ বাড়ির তিনটি উঠতি বয়সের ছেলেকে দিদা একটু বেশি প্রশ্রয় দেন। আমরা পরীক্ষায় ভালো করি বলে দিদার কাছে সাতখুন মাপ। বিজু বললো, দেখ না দিদা, মা আমাকে সবসময় বলে এত খাইখাই কেন।

দিদা হেসে বিজুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, জালের আলমারিতে তোদের জন্যে পায়েস রেখেছি। তোরা তো নলেন গুড়ের পায়েস পছন্দ করিস!

দুপুরে খাওয়াটা একটু বেশিমাত্রায় হয়েছিলো। খেয়ে উঠে আমরা আমাদের চিলেকোঠার ঘরের মস্ত বড় খাটটায় কিছুক্ষণ গড়িয়ে নিলাম।

আমাদের নয়নতারা কুটির জাফলং-এর সবচেয়ে পুরোনো আর বড় বাড়ি। আগে ছিলো এটা জমিদারদের বাড়ি। দাদু আমাদের শিলং-এর বাড়ির সঙ্গে এটা বদল করেছিলেন। দাদু পাহাড়ে থাকতে ভালোবাসেন। সবাইকে বলেন বাড়ি বদল করে আমরা অনেক জিতেছি। বাড়িটা ছাড়াও জমিদারদের একটা কমলার বাগান ছিলো। সেটাও আমরা পেয়েছি! তবু দাদুর আড়ালে বড় জেঠু প্রায়ই বাবা, কাকাদের বলেন, আমরা নাকি ঠকেছি! দাদুর নাকি এতটুকু বৈষয়িক বুদ্ধি নেই। জেঠুরা যখন এসব কথা আলোচনা করেন তখন আমাদের সেখানে থাকতে দেন না। তবে ওঁরা যে সুযোগ পেলেই দাদুকে বোকা বলবেন এটা আমাদের অজানা নয়। কতদিন লুকিয়ে বড়দের সে-সব কথা শুনেছি।

বিকেলে আমরা তিন জন তিন গ্লাস দুধ খেয়ে উলের চাদর গায়ে জড়িয়ে কমলাবাগানে বসে গল্প করছিলাম। জয়ন্তিয়া পাহাড়ের ওপর দিয়ে হিমালয় থেকে হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। আগে নাকি একবার শীতের সময় ঘাসের শিশিরকণা জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলো। পিয়াইন নদীতে বরফের টুকরো ভেসে এসেছিলো। এসব কথা বলেছেন সরকার দাদু। জাফলং-এর সবচেয়ে পুরোনো বাসিন্দা তাঁরা। আমাদের নয়নতারা কুটিরের জমিদারদের সঙ্গে ওঁর ভারি ভাব ছিলো। আমাদের দাদুর সঙ্গেও ভাব হয়ে গেছে। বিকেলে ওঁরা চৌধুরীদের পুকুরঘাটে বসে গল্প করেন। জাফলং-এর মতো তাজা বাতাস নাকি আর কোথাও নেই। এখানকার ঝর্নার পানিতে রোজ গা ডুবিয়ে বসে থাকলে অনেকদিনের পুরোনো বাতের অসুখ ভালো হয়ে যায়। খাসিয়ারা পাহাড়ে বাসমতি ধানের চাষ করে। যুঁইফুলের মতো সাদা ধবধবে সেই ভাত খেলে বহুক্ষণ হাতে মিষ্টি গন্ধ লেগে থাকে। এখানকার কমলা আর নাশপাতি যে একবার খেয়েছে, সারাজীবনও ভুলতে পারবে না। আমি দেখেছি বুড়োরা অসুখ আর খাবার ছাড়া অন্য কোনো বিষয় নিয়ে গল্প করতে পারেন না। মা-কাকিমার সবসময় শিলং-এর গল্প করেন। ওঁদের জন্যে বাড়িতে বেগম পত্রিকা আসে। আমাদের জন্য আসে শুকতারা। আজকাল শুকতারা আমার ভালো লাগে না। বিজু দেখি গোগ্রাসে গেলে। রামু পড়ার বই ছাড়া গল্পের বইপত্র খুব কমই পড়ে।

পাহাড়ের নিচে ঝুনার পানিতে ছোট ছোট নুড়ি ছুঁড়ে মারছিলো রামু। পানিতে নুড়ি পড়ার টুংটাং শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। এদিকের পাহাড়াগুলো সব ছোটবড় নুড়িপাথরে বোঝাই হয়ে আছে। বর্ষার সময় পাহাড়ি ঝর্নায় অনেক সময় বড় পাথর গড়িয়ে আসে। এখন ঝর্নার পানি শান্ত সবুজ কাঁচের মতো। রোদেলা দুপুরে ঝর্নার গভীরে শুয়ে থাকা বড় পাথর আর রঙিন নুড়িগুলো ঝলমলে আলো ছড়ায়। আগে আমার রঙিন পাথর জমানোর সখ ছিলো। প্যাট্রিকের রঙিন পাথরের ওপর লোভ দেখে আমার সবগুলো পাথর ওকে দিয়ে ওর সঙ্গে ভাব জমিয়েছি। আমার লোভ ছিল ওদের চার আলমারি বইয়ের ওপর। এখনো আমি প্যাট্রিকদের সব বই পড়ে শেষ করতে পারি নি।

বিজু বললো, এবারের শুকতারায় তুষার-মানবের গল্পটা পড়েছিস আবু? আমাদের জাফলং-এ যদি হিমালয় থেকে ও রকম একটা ইয়েতি নেমে আসতো!

আমি বললাম, ওটা একটা যাচ্ছেতাই গল্প। তার চেয়ে হিমালয়ের ভয়ংকর অনেক ভালো।

বিজু বললো, তুই হিমালয়ের ভয়ংকর কোথায় পেলি?

আমি জবাব দিলাম, প্যাট্রিকের কাছ থেকে। সে তো অনেক আগের কথা।

বিজু মুখ কালো করে বললো, বারে, বইটা কবে থেকে আমি খুঁজছি আর তুই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে ফেলেছিস?

বিজু এত সাধারণ ব্যাপার নিয়ে অভিমান করে যে মাঝেমাঝে আমার ভারি রাগ হয়। রামু ঝর্নায় নুড়ি ছুঁড়তে ছুঁড়তে হেসে বললো, তুই কবে শুকতারায় বিজ্ঞাপন দেখেছিস সেটা আবু কী করে জানবে! বই পড়তে চাইলে আবুর মতো লুকিয়ে প্যাট্রিকের সঙ্গে ভাব জমাগে, ওদের অনেক বই আছে।

রামুর এ ধরনের বাঁকা কথা আমার ভালো লাগে না। আমি বললাম, কারো সঙ্গে ভাব জমাতে তো আমি কাউকে বারণ করি নি রামু। মেজ কাকিমা বললো, তুই নাকি সোনিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাস। তোকেও বলি রামু, ওভাবে কারো সঙ্গে ভাব জমানো যায় না।

আমার কথা শুনে রামুর মুখটা বোকা-বোকা হয়ে গেলো। ও একটু হাসার চেষ্টা করে বললো, মেজ কাকিমা বুঝি তোকে বলেছে ওইসব! তুই যখন ভাব জমানোর ওস্তাদ, তখন সোনিয়ার সঙ্গে চেষ্টা করে দেখ না পারিস কিনা। ও তোকে পাত্তাই দেব না।

আমি মুখ টিপে হেসে বললাম, দেয় কি না দেয় তুই জানিস কী করে? যখন দরকার হবে তখন ঠিকই ভাব জমাবো। তবে তোর মতো নিশ্চয়ই আমলকির আচার ঘুষ দিতে যাবো না

সোনিয়া প্যাট্রিকের মতো নয় যে রঙিন পাথর দিয়ে পটাবি।

আমার জানা আছে কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়।

আমাদের এরকম খোঁচা দেয়া শুরু হলে, বাধা না-পড়া পর্যন্ত চলতেই থাকে। একবার ছোড়দি বলেছিলো, মনে হচ্ছে তোরা অনন্তকাল ধরে এভাবে কথা বলে যেতে পারবি। আমারও মাঝে মাঝে তাই মনে হয়।

হঠাৎ বিজু আমাদের কথার মাঝখানে বাধা দিলো। আঙুল তুলে বললো, দেখ দেখ, একটা লোক এদিকে আসছে। আমি আর রামু একসঙ্গে সেদিকে তাকালাম।

তখনও বেশ দূরে ছিলেন তিনি। এই এলাকায় যে নতুন এসেছেন সেটা ওঁর হাঁটা দেখলেই বোঝা যায়। পাহাড়ের চড়াই দিয়ে ওঠার সময় বারবার নুড়িতে ওঁর পা পিছলে যাচ্ছিলো। আমাদের কখনো অমন হয় না। জাফলং-এর সবাই জানে কীভাবে নুড়ি-ছড়ানো পাহাড়ের চড়াই-উত্রাই দিয়ে হাঁটতে হয়। তিনি আসছিলেন জয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে। জয়ন্তিয়া পাহাড়ে শুধু টং বেঁধে পাহাড়ি খাসিয়ারা থাকে। ওদের ওখানে এরকম একজন প্যান্টশার্টপরা, পিঠে ব্যাগ ঝোলানো ভদ্রলোক কোত্থেকে আসবেন আমরা ভেবে পেলাম না। আজকাল অবশ্য কিছুকিছু খাসিয়া ছেলে খ্রিস্টান হয়ে প্যান্টশার্ট পরা শুরু করেছে।

আরো কাছে আসার পর দেখলাম রীতিমতো ভদ্রলোক। ছোড়দাদের বয়সী হবেন। বেশ লম্বা দেখতে, গায়ের রঙটা তামাটে, পরনে জিনস-এর প্যান্ট আর জ্যাকেট; অনেকটা সিনেমার হিচ হাইকারদের মতো।

বিজু ফিসফিস করে বললো, নিশ্চয়ই সোনিয়াদের বাড়িতে এসেছেন।

রামু বললো, সোনিয়াদের বাড়িতে যাবার রাস্তা এটা নয়। ইনি যেদিক থেকে আসছেন তার আশেপাশে কোনো রাস্তাঘাট নেই।

আমি বললাম, মনে হচ্ছে ইন্ডিয়া থেকে আসছেন।

রামু তার সঙ্গে যোগ করলো, বিনা পাসপোর্টে।

বিজু বললো, ঠিক বলেছিস। পাসপোর্ট থাকলে নিশ্চয়ই চেকপোস্ট দিয়ে আসতেন।

রামু বললো, তখন আর তিনি আমাদের নজরে পড়তেন না।

ভদ্রলোক আমাদের একেবারে কাছে এসে গেলেন। আমরা তিনজন হা করে তাঁর দিকে তাকিয়েছিলাম। ভদ্রলোক আমাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। কাছে এসে ধুপ করে মাটিতে বসে পড়লেন। বললেন, তোমরা বুঝি এখানে থাকো?

আমি মাথা নাড়লাম। রামু বলল, আপনি কোত্থেকে এসেছেন?

ভদ্রলোক একটু হেসে বললেন, অনেক দূর থেকে। আপাতত আসছি চেরাপুঞ্জি থেকে।

রামু আমার দিকে আড়চোখে তাকালো। বিজু বললো, আমরাও তাই ভেবেছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই পাসপোর্ট করে আসেন নি।

ভদ্রলোক এবারও হেসে শুধু মাথা নাড়লেন। রামু আবার আমার দিকে তাকালো। ভদ্রলোক একটা লম্বা দম টেনে বললেন, আহ কী তাজা বাতাস! সূর্য ওঠার আগে হাঁটা শুরু করেছি। পথে একবার মাত্র থেমেছিলাম।

আমি বললাম, চেরাপুঞ্জি থেকে এখানে আসার পথ কি খুব খারাপ?

ভদ্রলোক আগের মতো হেসে বললেন, পথ কোথায়? আমি তো আগাগোড়া পাহাড় ডিঙিয়ে এসেছি। কী বিচ্ছিরি পাহাড়, সব আলগা পাথর ছড়িয়ে আছে। আমি রামুর দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলাম। রামু বলল, আপনি এই এলাকায় নতুন এসেছেন। এসব পাহাড়ে চলাফেরা করতে হলে অভ্যেস থাকা দরকার। খাসিয়ারা যখন ভারি বোঝা নিয়ে হাঁটে তখন ওদের পা একটুও পিছলে যায় না।

ভদ্রলোক কোনো কথা না বলে লম্বা লম্বা দম টেনে বুকটা তাজা বাতাসে ভরে ফেললেন। আমি আস্তে আস্তে জানতে চাইলাম, আপনি কি জাফলং-এ এসেছেন?

ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন। লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, কোথায় যাব আমি নিজেই জানি না। একটু থেমে আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে কী জানি ভাবলেন। তারপর বললেন, আমাকে পুলিস তাড়া করছে। আমি একজন পলাতক রাজনৈতিক কর্মী। আজকের রাতটা আমাকে জাফলং-এ কাটাতে হবে।