৪৪
ক্রীসমাস ঈভ-এর পার্টি খুব জমে উঠেছিল হাটচান্দ্রা ক্লাবে। প্রত্যেকের হাতেই গ্লাস। ছেলে বুড়োর মাথায় লাল-নীল টুপি। হাতে পী-পী বাঁশি। আজ লনে সাকলিং-পিগ-এর বারবীকিউ। জবলপুর থেকে ব্যান্ড এসেছে। বম্বে থেকে ক্যাবারে-গার্ল। বড়দিন বলে ব্যাপার!
যদিও মেম্বারদের একজনও ক্রীশ্চান নন।
মিঃ গাঙ্গুলী, মিঃ সেনকে বারান্দার কোণে ডেকে নিয়ে বললেন, বিয়্যালি, অ্যাম মিসিং রুষা ভেরী মাচ।
হু ইজ নট?
মিঃ গাঙ্গুলী এবং মিঃ সেন মদ খেলে বাংলা বিশেষ বলেন না। আর ওঁদের দুজনের বাড়ির ফক্স-টেরিয়ার আর ড্যাশহাউন্ডের সঙ্গে কখনওই বলেন না। কুকুরগুলো নিশ্চয়ই কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেছিল। নইলে, ইংরিজি এত ভাল জানে কী করে? কুকুরগুলো, পৃথুদের কোম্পানির ইংলিশ ডিরেক্টারদের সঙ্গেও বিনা অসুবিধায় কথা বলতে পারে।
মিঃ সেন বললেন। গ্লাসে একটি সিপ দিয়ে। ওয়াট আ গার্ল।
পুওর গার্ল। জবলপুরেই কি থাকবে কিছুদিন এখন?
বেশিদিন তো থাকতে পারবে না। ছেলেমেয়ের স্কুল আছে না?
জবলপুরে, উঠেছে কোথায়?
শাহ-ওয়ালেসের গেস্ট হাউস আছে। উধাম সিং-এর বন্ধু ঘটক সাহেব। ওঁকে কলকাতায় টেলেক্স পাঠিয়েছিলেন।
কোন ঘটক?
মিস্টার আর. এন. ঘটক।
ওঃ। একবার মীট করেছিলাম দিল্লিতে, ওবেরয় ইন্টারকন্টিনেন্টালে। নাইস গাই।
পৃথু কি বাঁচবে?
কী করে বলব বলুন? তবে, ইদুরকারের কাছে শুনলাম, ডান পাটা হাঁটুর উপর থেকে অ্যাম্পুট করে দিতে হয়েছে। মানে, থাইয়ের অর্ধেকটা আছে।
ও মাই গড! সত্যি! পুওর চ্যাপ! জঙ্গলে পাহাড়ে হেঁটে বেড়াতে এত ভালবাসত। কী করবে এখন? তবে, একেবারে হিরো বনে গেল। কি বলুন? প্রত্যেক কাগজের প্রথম পাতায় ছবি। আই জি, হোম মিনিস্টার সব হাসপাতালে গেছিলেন। চিফ মিনিস্টার কনগ্র্যাচুলেট করেছেন। আমাদের নন-এনটিটি পৃথু ঘোষ যে একেবারে ভি-ভি-আই-পি হয়ে গেল। একটা জংলি লোক।
জংলিই তো মানুষ সে। এদিকে ইদুরকার যে ভাবে অ্যাডভান্স করছে তাতে হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে দেখবে হয়তো পা তো গেছেই, বউও গেছে।
আই ডোন্ট থিংক সো। রুষা উডনট বী দ্যাট ক্রুয়েল। বরং এই ব্যাপারটা যদি না ঘটত, তবে কী হত তা বলা যায় না।
তুমি মেয়েদের চেনো না।
মিঃ সেন বললেন। কজন মেয়েকে জানো তুমি গাঙ্গুলী। জানলে, এ কথা বলতে না।
তা ঠিক। বেশি দেখিনি।
তবে ঘোষেরও দোষ আছে। ওদের কোম্পানিরই একটা কাজের ব্যাপারে কাল গেছিলাম মিঃ সিং-এর অফিসে। যা শুনছি, তাতে তো ঘোষের চাকরিই থাকবে না। ওর এই বোহেমিয়ানিজম-এ বিলেতেই বোর্ড বহুদিন থেকেই রেগে ছিল। এখন এই সব ‘ডাকাত-ফাকাত, প্রস্টিট্যুটের ঘরে গিয়ে গুলি-খাওয়ার ঘটনা-টটনা জানতে পেরে তাঁরা নাকি ফোন করেছিলেন। চেয়ারম্যান বলেছেন যে, এরকম লোককে হাই-পজিশানে রাখলে কোম্পানির রেসপেক্টেবিলিটি নষ্ট হয়ে যাবে। ওকে নাকি রেসিগনেশান দিতে বলা হবে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়েটি সব দিয়ে ভাল হয়ে উঠলেই বিদায় করে দেবে।
ও যদি না দেয়?
না দিলে স্যাক করবে।
পৃথু ইজ আ ওয়েস্টার। ভদ্র ও সভ্য সমাজে বাস করার কোনও যোগ্যতাই নেই ওর।
তা ঠিক। কিন্তু আমি ভাবছিলাম, কত টাকাই বা পাবে পৃথু হাতে? ওর বয়স তো বেশি নয়। বেশি তো জমেনি।
কতই আর পাবে! আর যাইই পাক। স্যালারিড অর প্রফেশনাল মানুষদের ক্যাপিটালের রিটার্নই বা কী হবে? হয় ফিক্সড-ডিপোজিট নয় ইউনিট ট্রাস্ট। ট্যাক্স-ফ্যাক্স কেটে সংসারই চলবে না। গাড়িও তো কোম্পানিরই। মেয়েটা এবং ছেলেটাও ছোট।
যাইই বলো, পৃথুর দোষও ছিল অনেক। যা তা মানুষদের সঙ্গে মিশত। কাউকেই কেয়ার করত না। আমাদের তো মানুষ বলেই গণ্য করত না। ও নিজে যে সমাজের মানুষ, সেই সমাজ সম্পর্কেই ওর এক দারুণ ঘেন্না ছিল। সকলের সম্বন্ধেই, সব কিছুর সম্বন্ধেই একটা হাই-ব্রাওড ক্যুডনট, কেয়ারলেস অ্যাটিচুড। এটা কেউই পছন্দ করত না। সকলেরই রাগ ছিল ওর উপর।
থাকাই স্বাভাবিক। কারণ, পৃথু ডিডনট বিলঙ টু দ্যা রান অফ দ্যা মিলস। স্বীকার আমরা করি আর নাইই করি, হী ওজ এ্যান একসেপশন। এন ওরিজিনাল ইন দিস এজ অফ ইমিটেশান।
ভীষণ কমপ্লিকেটেড, আনপ্রেডিকটেবল ক্যারাকটার। যাইই বলো তুমি! যে সমাজকে ও ডোন্ট-কেয়ার করত সেই সমাজই এখন ওকে বর্জন করবে। সমাজ ছাড়া মানুষ বাঁচে? অত ঔদ্ধত্য কারওরই থাকা ভাল না। ভীষণই আন-সোশ্যাল ছিল ও।
আন-সোশ্যাল কী, বলা উচিত অ্যান্টি-সোশ্যাল।
দুজনেই হেসে উঠলেন এই কথাতে।
সেদিন ওদের কোম্পানির ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজার শর্মা বলছিল, পৃথু ঘোষ হচ্ছে এই যুগের ডন-কুইকসো। যেখানে-সেখানে ঘোড়া থেকে নেমে তরোয়াল বের করে যুদ্ধ করতে লেগে যেত। এমনকী উইন্ডমিলের সঙ্গেও। আ মেন্টাল কেস।
কথাটা প্রায় সত্যি কিন্তু শর্মা? শর্মা ডন-কুইকসোর কথা জানল কী করে? ও তো গণ্ডমূর্খ। এবং চামচেগিরি করা আর ঘুষ-খাওয়া ছাড়া অন্য কিছুই তো জানে না ও।
শুনেছে হয়তো কারও কাছে। যে যা নয়, তাইই হতে সাধ তো সকলেরই যায়!
বেয়ারা! হুইস্কি লাও!