১২
গিরিশদার বাড়ি ঢুকতেই সেদিন ভিরমি খাবার মতো অবস্থা হল পৃথুর। দুটো গডরেজ-এর আলমারির সাইজের তাকওয়ালা খাঁচা, কাকে ভর্তি।
ইয়েস! কাক। এই কাকেদেরই একটা, বোধহয় রুষার চামচ নিয়ে এসেছিল। এলেও, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে; হাটচান্দ্রাতে যত কাক ছিল সমস্ত কাককেই প্রায় রাউন্ডেড-আপ করে ফেলেছেন গিরিশদা। কিন্তু কেন? ব্যাপারটা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
গিরিশদাও ধারে কাছে নেই। অথচ দরজা খোলা হাঁ করে। বাড়িতে মহিলা না থাকলে, দরজা বন্ধ না করলেও চলে। চুরি-চামারি এদিকে বড় একটা হয় না। ছিঁচকে চুরি তো নয়ই। হলে, ডাকাতি হয়। জবরদস্ত, মর্দ লোকজন মধ্যপ্রদেশের এই হাটচান্দ্রার। একটা হাত ঘড়ি, একটা ফাউন্টেন পেন কি সোনার বোতাম চুরি করে নিজেদের পরের চোখে এবং নিজেদের চোখে তো বটেই; আদৌ ছোট করে না এরা।
তবে, ইয়েস, মাঝে মধ্যে কপি খেতে আসে শুয়োর-টুয়োর। মাঝে মধ্যে। এই ঘটনা এমন কিছু দৃষণীয় নয়। নিশ্চয়ই পৃথিবীর সব জায়গাতেই আসে। শুয়োরেরা নিরামিষাশী হলেও, প্রায় ছাগলদেরই মতো সর্বভুক হয়। ছাগলরা মানুষী-নোংরা খায় না; শুয়োররা তাও খায়। ছিঃ ছিঃ! একই মুখ দিয়ে তো খায়! ফুল-কপি বাঁধা-কপি এবং ওই সব। চিন্তা করা যায় না।
গা গুলিয়ে ওঠে ভাবলেই।
ভুচু একদিন একটা গল্প বলেছিল। ওর এক বন্ধুর বাবার কাছে শোনা। পার্টিশানের পর এক সকালে নর্থ ক্যালকাটার গলির মধ্যে একটা ঘোড়ার গাড়ি এসে দাঁড়াল। যাকে বলে, প্রেগন্যান্ট উইথ পসিবিলিটিজ! উঠতি-কবির কবিতার টেবলেরই মতো। তারপরই দরজা খুলে, সার সার মানুষেরই বাচ্চা, একদম ছোট, একটু ছোট, ছোট; একটু বড়; বড় ফুল-গ্রোন অ্যাডাল্টস। এক জোড়া।
অকৃত্রিম কলকাতাবাসী গৃহস্বামী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, আপনাদের তো চিনতে পারলাম না। মানে ঠিক…
ততক্ষণে, মিত্র কি না তখনও, অচেনা মিশ্র বাহিনী ফাঁন্স-এর তটে ল্যান্ড করে গেছে। সিচুয়েশান ইন ফুল কন্ট্রোল। ঘরের ভিতরে দ্রুতগতিতে সেঁধিয়ে গেছে একদম ছোট, একটু ছোট, ছোট; বড়, বেশ বড়; একটু বড়। সবশুদ্ধ আট জন। সাবীর মিঞারও কমপিটিটর হয়। এবং হ্যান্ডিকাপ নিয়েও। আগন্তুকের এক বউ। সাবীর মিঞার দুই।
সত্যিই বলছি, আপনাকে কাউকেই একেবারেই প্লেস করতে পারলুম না। অনেক চেষ্টা করেও। ভদ্রলোক আবারও বললেন।
এবার অবাক নয়, রীতিমত উদ্বিগ্ন গলায়।
ততক্ষণে মেল অ্যাডাল্ট, ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি অ্যাপোলজেটিকালি বললেন : দেখুন, এই দুর্দিনে ছিন্নমুল লোক, আত্মীয়র কাছে আসবে না তো কি কবিরাজের দোকানে শোভা পাবে?
আত্মীয়? আমি?
গৃহস্বামী তুতলে বললেন।
হ্যাঁ। আত্মীয়। ভেরী মাচ সো। আপনি আমার ফারস্ট কাজিন।
ফারস্ট-কাজিন? আমাদের দেশ তো জয়নগর-মজিলপুরে। বাখরগঞ্জ সাবডিভিশানে আমার বাবাও কখনও থাকেননি।
আপনার দেশ যেখানেই থাক। আপনার ঠাকুর্দা চাকরীব্যপদেশে জীবনের আধখানা কোথায় কাটিয়েছেন সে খেয়াল কি আছে?
ও। হ্যাঁ। তিনি ছিলেন বাখরগঞ্জো সাবডিভিশানের…ফরেস্ট রেঞ্জার। কিন্তু তার জন্যে আমি আপনার ফারস্ট-কাজিন…
ব্যাসস, ব্যাসস। ওই টুকুতেই হবে। বাখরগঞ্জো সাবডিভিশান কিসের জন্যে ফেমাস ছিল তা কি জানেন? আই মিন, নোটোরিয়াস?
আজ্ঞে না।
বাঘের জন্যে। রিয়্যাল সোঁদরবন মশায়, সুঁদরীগাছে ভর্তি। আপনাদের চব্বিশ পরগণার দোখনো বন নয়। নোটোরিয়াস ছিল বাঘের জন্যে।
আজ্ঞে?
হ্যাঁ। বাঘের জন্যে। ফর, দ্যা গ্রেট রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারস। ফর, দ্যা ম্যান-ইটিং টাইগারস। বুঝেছেন?
হ্যাঁ।
তাহলে এবার খোলসা করেই বলি, মাই গ্রান্ড-ফাদার অ্যান্ড ইওর গ্রান্ড-ফাদার ওয়্যার ইটন-আপ বাই দ্যা সেম ম্যানইটিং টাইগার। একই পেট থেকে জন্মালে যদি সহোদর হয় দাদাভাই, একই পেটে ভবলীলা সাঙ্গ করলে কেন হবে না তা? আর আমাদের গ্রান্ড ফাদাররা যদি সহোদর হন, তাহলে ব্রাদার আমরা দুজনে কী হলাম?
গৃহস্বামী স্তম্ভিত।
বলো, বলো পাঁচু, তাহলে কী?
পাঁচু! পাঁচু কে?
ফারস্ট-কাজিন। তুমি। পাঁচু।
আমি?
অ্যাইই তো! মাথা খুলেছে।
তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এইই যে, সো-ফার আ শুয়োর ইজ কনসার্নড়, ফুল-কপি, বাঁধা-কপি এবং মানুষী নোংরা সবাই-ই ফারস্ট-কাজিন। কারণ, এরা সমানভাবে একই প্রাণীর খাদ্য। শুয়োরের পেটেই তাদের সদগতি।
এতক্ষণে গিরিশদার প্রাইভেট-সেক্রেটারী, কাম-এ-ডি-সি মুনেশ্বরকে দেখা গেল। বাজারের দিক থেকে একটা ঝুড়ি কাঁধে করে সে আসছে। তার মধ্যে মাংসর ছাঁট। যেমন ছাঁট কুকুরে খায়। তবে ছোট্ট ছোট্ট করে কাটা, মিশ্র মাছের মুড়ো, কাটাকুটি করা পাঁঠার ও মুরগির নাড়িভুঁড়ি, লালচে, গোলাপি, ফ্যাকাসে, নানা-রঙা কানকো। ছোটবড় মাছের।
ঝুড়ি নামিয়ে মুনেশ্বর বলল, ম্যায় তো ভাগেগা সাব। আপকো ফ্যাকটোরিমে কুছ ভি একঠো কাম দিলাইয়ে সাব মেহেরবাণীকরকে। পাগলকা সাথ রহতে রহতে ম্যায় ভি পাগলহি বন যাউঙ্গা। ইতনাদিন ঘরমে বান্দর থা, লাড়ুয়া হাট সে কেলা লাতে লাতে সাচমুচ থক গ্যয়া, আভভি দুনিয়া কা তামাম কাউয়া লেকর আঁয়ে উনোনে। লান ঈ, লান ফালানা…ম্যায় চাল দুংগা। সাচ। হামসে ঔর নহী হোগা।
পৃথু জানত যে, আসলে সবহি হোগা। মুনেশ্বরের সঙ্গে গিরিশদার সম্পর্কটা অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্করই মতো। এই মেঘ; এই রোদুর। পথের কুকুরের ঝগড়া মেটানো তবু ভাল; স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া? নৈব নৈব চ। পরে দুজনের ভাব হয়ে যাবে দুজনের চোখেই খারাপ হয়ে যাবে তখন আরবিট্রেটর। ওই ভুলে, পৃথু নেই!
এমন সময় গিরিশদার চটির আওয়াজ পাওয়া গেল।
কী ব্যাপার হে পৃথু? বহুদিন বাঁচবে। এক্ষুনি তোমার ওখানেই যাচ্ছিলাম। ফোনটা তো এখনও লাগলই না। শুনছি তো আগামী সপ্তাহে লাগবে। আসলে কবে লাগবে, কে জানে। হাটচান্দ্রা তো দেখি কলকাতা হয়ে গেল। ছিঃ। পড়ে থাকি, এই এক প্রান্তে, ফোন ছাড়া কি চলে?
কেন। বহুদিন বাঁচব কেন?
পৃথু বলল।
তোমাকে মনে করছিলাম। শনিবার রাতে একটু গান-বাজনার ইন্তেজাম করেছি। আমার মেহমান এসেছে কলকাতা থেকে। আলাপ করিয়ে দেব। সাবীর, শামীম, ভুচু সকলকেই খবর দেওয়া আছে। সাবীররাই তওয়ায়েফ-এর গানের বন্দোবস্ত করেছে। আর লাড্ডুপ্রসাদও বহুদিন থেকে গান পেশ করতে চাইছে, সে নাকি জব্বর গাইয়ে, তাই ওকেও বলে দিয়েছি। তোমাকে নিজে গিয়েই বলব ভেবেছিলাম।
সাবীরকে ভার দিয়েছি খানার বন্দোবস্তর। রাঁধবে সাবীরের দুই বউ আর ছ-মেয়ে মিলে। গরম গরম উমদা বিরিয়ানী আর চাঁব নিয়ে আসবে ভুচু তার জীপ-এ করে। সঙ্গে হান্ডি-নিকালনার লোকও আসবে। চলে এসো, তাড়াতাড়ি। মুনেশ্বর একা। আর আমি। একটু হেল্প-এরও দরকার। তা, বউমাকেও আনবে না কি?
ও তো জানেন, এই সব ভিড়-ভাড়াক্কা, মদ-খাওয়া, এতরকম মিক্সড-কোম্পানিতে ঠিক মানাতে পারে না নিজেকে।
জানি ভায়া। সবই জানি। তবে, ব্যাপারটা কি জানো তো? সব জায়গায়ই একজন বিবাহিত মানুষ যদি একা একা যায়, তাহলে মন্দ লোকে দশটা মন্দ কথা বলে। মন্দ লোকেই তো পৃথিবী ভরা। রটায়, লোকটার মতলব খারাপ। ইচ্ছে করেই বোধহয় স্ত্রীকে সঙ্গে আনে না। পরস্ত্রীদের সঙ্গে ফস্টি-নস্টি করবে বলে।
মানে।…
পৃথু কী যেন বলতে গেল।
জানি। আমি জানি যে, হাটচান্দ্রা ছোট্ট জায়গা। এখানে সকলকেই চেনে সকলকে। এখানে; ইটস অলরাইট। বউমা যে অন্যদের মতো নন, সকলের সঙ্গে তিনি যে মিশতে ভালবাসেন না, বা বলব, যে সকলেরই কোম্পানি তিনি এনজয় করেন না তা আমরা সকলেই জানি। এখানে; ইটস অলরাইট। কিন্তু মনে করো, তুমি ভোপাল কিংবা ইন্দোর কিংবা জবলপুরে থাকতে যদি? কোনওদিন থাকতেও তো পারো! বিনা কারণে, তখন লোকে তোমার নামে পাঁচকথা বলবে।
পৃথু চুপ করে রইল। রিয়্যালিটির ঠেলাতেই চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে আর ইভেনচুয়ালিটি!
কথা ঘুরিয়ে পৃথু বলল, গিরিশদা, আমাদের অ্যান্টি-পল্যুশান প্রোগ্রাম, সেই আনলিমিটেড হাওয়া-ধরা লিমিটেড কোম্পানি কি রেজেস্ট্রি হবার আগেই লিকুইডেশানে গেল?
না। তা নয়। তবে প্রজেক্টটা শেলভড হয়েছে। হাওয়া-ধরা কোম্পানির ব্যাপারটা। কিন্তু কাক কি হবে গিরিশদা এত? লোকে যে বলে, কাক, কাকের মাংস খায় না।
গিরিশদা হেসে উঠলেন। বললেন, এটা ভালই বলেছ। কিন্তু ভায়া, এসব কাক খাওয়ার জন্যে নয়।
তবে? স্ক্যাভেঞ্জার-কোম্পানি ফর্ম করবেন না কি একটা এবারে? সিটি ক্লীনারস এন্ড স্ক্যাভেঞ্জারস প্রাঃ লিঃ। মন্দ হয় না কিন্তু। লক্ষ লক্ষ কাককে ট্রেইন করে নিয়ে বম্বে, কলকাতা, ভোপাল, ব্যাঙ্গালোরে চালালে এ কোম্পানি কিন্তু দারুণই চলবে। কাকের ব্রিগেড় করে, কয়েকশ কাককে এক-একটা কোম্পানিতে ভাগ করে নিলেই হবে। একটা করে সাদা, মানে অ্যালবিনো কাক, এক-একটা কোম্পানির কম্যান্ডার হবে। খুব সাহেব সাহেব, প্রেস্টিজাস ব্যাপারে হবে। সাহেব বা চামড়া সাদা না হলে তো আমরা কাউকেই নেতা বলে মানি না। কথা শুনি না। তো কালো কাকদের সাহেব নেতা হলে ব্যাপারটা দারুণ হবে। দেখাবেও দারুণ। ধবধবে সাদা নেভির অফিসারের মতো, এক সাদা কাক, কাকের কোম্পানি কম্যান্ড করছে। কাকেদের খাওয়াতে তো কোনও খরচ লাগবে না, তারা তো নোংরা আর ময়লা খেয়েই বেঁচে থাকবে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি বোনাস, ই-এস-আই কিছুই লাগবে না। লিকুইডেশানে দিতে হলে এক সকালে খাঁচা খুলে সব কাক উড়িয়ে দিলেই চুকে গেল। শুধু ওদের রাখার খরচা আর ট্রেনিং-এর খরচা। গ্রস প্রফিটই হয়ে যাবে নেট প্রফিট।
গুড আইডিয়া। ভেরী গুড আইডিয়া। আমি আর তুমি বসব একদিন প্রজেক্ট-রিপোর্ট এবং ফিজিবিলিটি রিপোর্ট নিয়ে। এটা আমার মাথায়ই আসেনি। তবে, কাক আপাতত পুষেছি, অন্য কারণে। কাকশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করছি এখন।
কাক শাস্ত্র?
পৃথু অবাক হল।
সেটা কী গিরিশদা? ‘কোকশাস্ত্র’র নাম তো শুনেছি। ছবিওয়ালা বইও দেখেছি বিক্রি হতে চওকের ফুটপাথে। পাছে অন্য কেউ দেখে ফেলে, তাই অবশ্য কখনও লজ্জায় কিনতে পারিনি। কিন্তু ‘কাকশাস্ত্র’র নাম তো শুনিনি কখনও।
তা শুনবে কেন ভায়া? ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্য সম্বন্ধে আর কতটুকু খোঁজ তোমরা রাখো। রাখলে কি দেশের এই অবস্থা হয়? চলো, দেখবে।
কাকেদের খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন গিরিশদা, পৃথুকে নিয়ে। মুনেশ্বর খাবার দিচ্ছিল। একেবারে প্যান্ডেমনিয়ম কাণ্ড। চেঁচামেচি, কামড়াকামড়ি, ঠোকরা-ঠোকরি। সভ্য মানুষদের ক্লাবে-টাবে কোনও স্পেশ্যাল ডিনার-টিনার থাকলে যেমন হয়; তেমনই আর কী!
কাকেদের দিকে চেয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে গেলেন গিরিশদা।
একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, কী শুনলে? শুনলে কিছু?
কী শুনব?
সেকি? কিছুই শুনলে না? কানের মাথা কি খেয়েছ? ও।
হ্যাঁ। অনেক কাক ডাকছে একসঙ্গে।
পৃথু বলল। শুনলামই তো।
ঈসস। পৃথু! তুমি না একটা! সে তো হাফ-উইট লোকেও বলবে। তোমার মতো ইন্টেলিজেন্ট মানুষের কাছ থেকে এরকম একটা উত্তর আমি আশা করিনি। কতরকম ডাক আছে লক্ষ করেছ কি? কত ভ্যারিয়েশন? কত বিভিন্ন জুয়ারিতে বলছে? কেউ উদারায়, কেউ তারায়। কেউ কোমল-গান্ধারে কেউ রেখাবে?
পৃথু বলল, হতেই পারে না। কাকেদের গলায় কোনওই কোমল পর্দা দেননি ভগবান।
হ্যাঁ। ভগবান তো একমাত্র তোমাকেই কনসাল্ট করেছিলেন, সৃষ্টির সময়ে।
রেগে বললেন, গিরিশদা।
তারপরই ঠাণ্ডা হয়ে বললেন, কাকেদের প্রত্যেকরকম ডাকের এফেক্টও আমাদের গলার স্বরের এফেক্টেরই মতো আলাদা আলাদা। কোনদিক থেকে ডাকছে, কখন ডাকছে, কেমন করে ডাকছে এ সব জানলে, দেখবে এ এক গভীর রহস্যময় জগৎ। ফ্যানটাস্টিক, গা-শিউরে উঠবে। কাকশাস্ত্র জানলে, কোকশাস্ত্র জানারই মতো, তুমি শত্রু জয়, মিত্র লাভ, প্রিয়া-সঙ্গ, দুষ্ট-রমণী-বর্জন সবকিছুই অবহেলায় করতে পারবে।
পৃথু থ’ মেরে গেল।
দুষ্টু-রমণী বর্জন! মানে? উনি কি রুষাকেই মীন করছেন? ভারী মীন লোক তো? এমবারাসড মুখে পৃথু দাঁড়িয়ে রইল। ওর নিজের স্ত্রীকে ও যা খুশি বলতে পারে, অন্যে খারাপ বলবে এ ভাবনাও অসহ্য।
শোনো, শোনো, ওই দ্যাখো, শুনছ? শুনতে পাচ্ছ? সাধে কি কাকশাস্ত্র এই শ্লোক দিয়ে আরম্ভ হয়েছে। “কাকস্য চরিত্র কৰ্ম্মে যথোক্তং মুনিভাষিতম। যস্য বিজ্ঞান মাত্রেণ সৰ্বতত্বং লভেন্নরঃ॥” মানে হচ্ছে, মুণিগণ কাকচরিত্র-কথা যেভাবে বলেছেন, সেই তথ্যই পরিবেশন করছি। এই তথ্য জানলে মানবকুলের বিশেষ উপকার হবে। বুঝলে!
ওই শোনো! কাককে যদি কল-কল শব্দ করে ডাকতে শোনো তো বুঝবে জিনিসপত্রর দাম ঝপঝপ করে কমে যাবে। তখন শেয়ার মার্কেটে শেয়ার কেনার সময়। ফিনান্স মিনিস্টার, প্রণব মুকুজ্জেও বাজেটের আগে নির্ঘাৎ কাকের ডাক শুনেছিলেন, নইলে, পার্লামেন্টে এমন জোর গলায় জিনিসপত্রর দাম কমার কথা বলতেন না কখনওই! আমি শুনেছি, ওঁর বাড়ি ওয়েস্ট বেঙ্গলের বাঁকড়োতে। সেখানে নাকি মেলাই কাক। হুঁ হুঁ, একেই বলে, কাকস্য পরিবেদনা।
একটু দম নিয়ে আবার গিরিশদা বললেন, শোনো, হেলা-ফেলা নয়; মনোযোগ দিয়ে শোনো, যদি ক্রোঁ-ক্রোঁ শব্দ করে কাক ডাকে, তাহলে লাভ হবে। কাক যদি কেঞা করে ডাকে, তবে কোনও মওত হবে। কারও মৃত্যু। আমজাদ খান অথবা ইন্দিরা গান্ধীরও কিছু হতে পারে। যদি কিঁ কিঁ শব্দ করে ডাকে, তবে এক্কেরে আটার ক্যালামিটি। কিন্তু যদি ক্রোলন ক্রোলন করে দুলে দুলে ডাকে, তবে মহাসুখ! আবার ধরো, যদি কোঁন কোঁন শব্দে ডাকে, তবে পরিবারের কোনও লোকের মৃত্যু আসন্ন। আমার পরিবার তো কাকেদেরই নিয়ে। ডাকুক, যত খুশি কোঁন কোঁন করে, শালারা নিজেরাই মরবে। আর যদি ক্লীন ক্লীন শব্দ করে ডাকে? তাহলে?
ভ্যাবাচাকা পৃথু বলে, তাহলে কী?
তাহলে বুঝবে নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু।
কাকরা কি ইংরিজি জানে? গিরিশদা? সেই নিকটাত্মীয় নিশ্চয়ই পয়সাওয়ালা এবং নিঃসন্তান। নইলে “ক্লীন ক্লীন” করে গ্রীণ সিগন্যাল দেবে কেন?
তাহলে হিন্দিও জানে, কঁওন কঁওন করে ডাকলে, কে মরবে তা জিজ্ঞেস করবেই বা কেন তবে হিন্দিতে? কিন্তু শোনো, বাজে কথা না বলে শোনো আরও আছে। কাক যদি ক্রোড়ন ক্রোড়ন শব্দ করে ডাকে, তাহলে দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ লাগবেই নির্ঘাৎ! পাকিস্তান এবার পায়ে পা গলিয়ে দিয়ে লাগাবে। আর কাক যদি কুঁই কুঁই শব্দ করে? তাহলে তোমার ধননাশ হবে!
ধন থাকলে তো নাশ হবে! কিন্তু আমি লক্ষ্য করছি গিরিশদা, দিন কয় হল আমাদের বাড়ির আশে পাশেই একটা ক্রেন, ক্রেন করে ডেকে চলেছে।
সত্যি? গিরিশদা উত্তেজিত হয়ে পৃথুর পিঠে জব্বর থাপ্পড় মারলেন একটা।
সত্যি! আরে ভায়া বলো কী তুমি?
যদি সত্যিই শুনে থাকো, তাহলে কোনও সুন্দরী নারীর সঙ্গে তোমার অচিরেই মিলন হবে। এ কী কথা ভায়া। বউমাকে বলব নাকি?
পৃথু বলল, বাড়িতে রুষা ছাড়া সুন্দরী নারী বলতে তো এক মেরী। তাকে তো আপনি দেখেছেন, তাছাড়া…
ছিঃ ছিঃ ছিঃ। তুমি আমাকে এত ছোট আর খারাপ রুচির ভাবলে? বৎস! পৃথিবীতে সুন্দরী নারীর অভাব কি? কাক যখন ক্রেন ক্রেন করে ডাকছে, তখন তোমার জন্যে সুন্দরী নারী জোগাড় হয়ে যাবে। যিনি কাক-ডাকান, তিনিই কাকের ডাক সফল করান।
হঠাৎই পৃথুর কুর্চির কথা মনে পড়ে গেল। ওদের পাঁচ বছর বিয়ে হয়েছে এখনও ছেলে মেয়ে হয়নি। কুর্চি আর ভাঁটু দুজনকে দেখেই মনে হয়, ছেলেমেয়ে না-হওয়ার কারণে ওদের বোধহয় খুবই কষ্ট। একদিন জিজ্ঞেস করবে গিরিশদাকে, কাকশাস্ত্রে বন্ধ্যা নারীর বন্ধ্যাত্ব ঘোচানোর উপায় আছে কি নেই! কুর্চি কি বন্ধ্যা? কে জানে।
পৃথুর মুখের দিকে তাকিয়ে কী যে বুঝলেন গিরিশদা, তা উনিই জানেন। আরও কিছুক্ষণ তীব্র চোখে পৃথুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ভায়া, তোমাকে একটা কথা বলব, কিছু মনে কোরো না।
পৃথুর বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল। কী কথা বললেন, কে জানে?
বলল, বলুন।
পত্নীকে বশীকৃত করতে, দাম্পত্য সম্পর্ককে সুখী করতে হলে…
বলেই, পৃথুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে চললেন, এটা ভায়া তোমাকে করতেই হবে। না করলে চলবে না। এ ব্যাপারটা খুবই সিম্পল। তোমার সুপারস্টিশাস দাদার এই একটা কথা শোনো। আমার কাছেই, একেবারে রেডি, মেয়ে-কাক আছে। তোমাকে একটা দান করেই দিচ্ছি এক্ষুনি, শুভ কাজে। ফরচুনেটলি, এ দেশে কাক-দানের উপর এখনও গিফট-ট্যাক্স বসেনি।
মেয়ে কাক? নিয়ে কী করব? পুষব?
পৃথু বোকার মতো বলল।
শোনো, ফরমুলাটা হচ্ছে, একটা মেয়ে কাক ধরে ওই কাকের পিঠ থেকে কয়েকটা পালক তুলে নিতে হবে। ওই পালকগুলো কর্পূর আর গোগগুল মিশিয়ে ভাল করে গুঁড়ো করতে হবে। সামনেই যেদিন রবিবার পড়বে, সেদিন সকালে ভালো করে শুদ্ধভাবে চান করে কপালে ওই গঁড়োর তিলক পরতে হবে। কপালের ওই তিলকে চোখ যেই পড়বে স্ত্রীর, অমনি সে স্বামীর প্রেমে গদগদ হবে। ‘প্রেম-খাব’ ‘প্রেম-খাব’ করবে। দাম্পত্য জীবন তারপর থেকে পরম সুখময় হবে। দে উইল লিভ হ্যাপিলি দেয়ার-আফটার!
পৃথু কী বলবে ভেবে না পেয়ে বলল, ভাল কথা। আমার দাম্পত্যজীবনে সুখের বন্যা। আপনি ব্যাচেলর মানুষ, দাম্পত্য সুখের ব্যাপারটা বোঝার নয়।
গিরিশদা একটু অপ্রস্তুতভাবে বললেন, অ।
কথা ঘুরিয়ে বলল, সুখময়ের কী খবর?
তার আবার খবর? নতুন বউ পেয়ে বাবা-মায়ের খবর রাখে আর কে বলো? ওই কয়েকদিন সব ঢং-ঢাং দেখিয়ে আরও ভাল ভাল প্রেজেন্ট-ট্রেজেন্ট নিয়ে সেই যে কেটে গেল মিঞা-বিবি; আর চেহারাই দেখাল না। মানুষেরই মতো বিবেকহীন হয়ে গেছে বাঁদরেরা! শেষ দিনে সুখময়ের স্ত্রীকে একটি ইন্টিমেট সেন্টও প্রেজেন্ট করেছিলাম।
সেন্ট? ইন্টিমেট?
হ্যাঁ। পারফ্যুম।
কী করবে? বাঁদরে, সরি, বাঁদরী।
ওর, বাহুমূলে বড়ই দুর্গন্ধ। আহা! ও-ও তো মানুষ! দুর্গন্ধ, প্রেমকে ত্বরান্বিত তো করেই না; অনেক সময়ে চিরতরে বিতাড়িতও করে।
তবু, সস্তা, ইত্বর-টিত্বর দিলেই তো হত! বাঁদরীকে অত দামি সেন্ট! ব্যবহারও জানে না।
সুখময়ের বউ-ও তো আমার কাছে দামী!
গিরিশদা বললেন।
গিরিশদার মেহমানরা ফিরে এল। তারা হাঁটতে বেরিয়েছিল। গলায় মাফলার, জুতো-মোজা পায়ে। গিরিশদার দুই বন্ধুর দুই ছেলে। স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্যে এসেছে। সঙ্গে তাদের দুজন বন্ধু। সকলেই বিজ্ঞানের ছাত্র। কিন্তু ওরা সকলেই চাটার্ড, কস্ট এবং ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যাসী পড়বে। কী সব পরীক্ষা-টরীক্ষা পাশ-টাশও করে এসেছে। পরীক্ষার ধকল সামলানোর পর শরীর মেরামতি করতে আসা আর কী!
আজকাল এসবের দিকেই বেশি ঝোঁক। তাই প্রচুর ভাল ছেলেরা আসছে এসব লাইনে। কোন লাইন কখন বেশী অর্থকরী তা বোঝার উপায় হচ্ছে আনন্দবাজারের পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনের পাতা। কোন ধরনের পাত্রর বাজার দর কমছে এবং কোন ধরনের পাত্রের বাজার দর বাড়ছে, তা একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। গিরিশদার বন্ধু পুত্র এবং তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে পৃথুর ভালই লাগল। তবে, বেশির ভাগ কলকাতার ছেলেদের যা দোষ; তা আছেই। একটু এঁচড়ে পাকা!
লাড্ডুর গান কেমন হবে শনিবারে কে জানে? আসলে, লাড্ডুর নাম কুমার সরজুনারায়ণ মিশ্র। গিদধারিয়াতে ওদের জমিদারী মতো ছিল নাকি অনেকদিন আগে, উমেরিয়ার কাছে। ওর এবং ওর বাবা, রাজা বীরজুনারায়ণেরও নাকি দারুণ শিকারের শখ ছিল। লাড্ডুর বাবা, অর্থাৎ রাজাসাহেবের সঙ্গে আগে কখনও দেখা হয়নি পৃথুর। লাড্ডু যে-কোনও কথা বললেই, ভুচু সঙ্গে সঙ্গে বলে, পার্সেন্ট কিতনা?
অর্থাৎ কত বাদ দেবে খাদ?
গিরিশদা বললেন, রাজাসাহেব নাকি জমিদারি থেকে এসে পৌঁছেছেন মাত্র পরশু দিন। শনিবারের ম্যায়ফিলে ছেলের গান শুনতেও আসবেন। গিরিশদা গলায় তোয়ালে দিয়ে তাঁকে নেমন্তন্ন করে এসেছেন গিয়ে। সরজুপ্রসাদের নাম লাড্ডুপ্রসাদ হয়ে যাওয়ার কারণ, বাজারে তার একটি প্রসিদ্ধ লাড্ডুর দোকান আছে। রাংতা-মোড়া, মুখরোচক, উমদা, লাড্ডু বেচে সে কার্ডবোর্ডের বাহারী রূপোলি-সোনালি বাক্সে। নিন্দুকেরা বলে, আফিং অথবা সিদ্ধি মেশায়। নইলে, খদ্দেররা ওর লাড্ডু এতবার খেয়েও পস্তায় না কেন?
বহু দূর দূর থেকে লোকে লাড্ডুপ্রসাদের দোকানের লাড্ডু কিনে নিয়ে যায়।
ওর নিজের গরু-মোষও আছে অনেকগুলো। তার মধ্যে প্রেস্টিজ অস্ট্রেলিয়ান ষাঁড়ও আছে একটা। সে অস্ট্রেলিয়ার, তার নিজের এবং লাড্ডুরও প্রেস্টিজ নিরন্তর এনহানস করে যাচ্ছে প্রতিদিনই! কানহার চার চারটে বাঘিনী একই সঙ্গে হামলে পড়েও সেই প্রেস্টিজাস ষাঁড়কে কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। সেই ষাঁড় থেকেও প্রচুর রোজগার লাড্ডুর। দূর দূর থেকে লোক আসে। ষাঁড়ের দুধ হয় না। এমনকি অস্ট্রেলিয়ান ষাঁড়েরও নয়! ষাঁড়টা নাকি পেডিগ্রীড। বিভিন্ন জায়গার সুন্দরী, ফর্সা, কালো, লাল-মিষ্টি গন্ধ গরুরা তাদের নির্লজ্জ মালিকদের সঙ্গে অনেক পথ ধুলোপায়ে হেঁটে এসে লাজুক-লাজুক চোখে অস্ট্রেলিয়ান সাহেবের আদর খাওয়ার জন্যে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সারাদিন, একটা মস্ত বড় পিপুল গাছের তলায়। এবং সেই অস্ট্রেলিয়ান ষণ্ড সিংহবিক্রমে তাদের আদর করে যায়। এত্ব আদর, কী করে যে অকাতরে হেলাফেলায় করে; তা সেই-ই জানে। ভেবেও আতঙ্কিত হয় পৃথু। “অশ্বশক্তি” কথাটা বদলে “ষণ্ডশক্তি” কথাটা করে দেওয়া উচিত অবিলম্বে।
ভুচু বলে, দাদা, এ ব্যাটা অস্ট্রেলিয়ান নেহাৎই লাথি মেরে বুক ফাটিয়ে দিতে পারে, নইলে, একদিন ষাঁড়টাকে নিরিবিলিতে নিয়ে গিয়ে ভক্তিভরে একটা প্রণামই করে আসতাম।
ভুচু প্রায়ই বলে লাড্ডুকে, কুমারসাহাব, চালিয়ে, দোনো মিলকে এক দফে অস্ট্রেলিয়া।
কাহে লা?
ঘাড়ে-গর্দানে, লম্বা-চওড়া, নর-পাঠঠা, হাঠঠা-কাট্টা, কোনও জমিদার তনয় লাড্ডু, কতকুতে চোখ তুলে বলে। ওর শিশুসুলভ মুখটা, ওর শরীরের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। ব্রহ্মা নির্ঘাৎ কোনও মারাত্মক গোলমাল করে ফেলে ছিলেন ওকে গড়বার সময়। ক্ষিতি, মরুৎ, অপ, ব্যোম অথবা অন্য কোনও সৃষ্টির উপাদানে নির্ঘাৎ টান পড়েছিল সেদিন। বুদ্ধিও মনে হয়, শরীরের আয়তনের অনুপাতে বেশ কম। ঘিলু দেওয়ার সময়ও কিপটেমি করেছিলেন বেজায়।
ভুচুকে বলে, কাহে লা? ভুচু? আবারও। হাসতে হাসতেই।
ভুচু মিচকে শয়তানের মতো হাসে।
বলে, লাড্ডু বেচকে হিঁয়া জিন্দগী ভর যো কামায়গা, হুঁইয়ে যাকে ছে মাহিনে মে উসসে জাদাহি কামা লেগা। জাদা হোগা তো কম নহী।
কৈ সে লা? ভুচু?
আবার শুধোয় লাড্ডুপ্রসাদ। সত্যি বোকারই মতো।
কৈ সে? আব্বে! কুমারসাহাব! লাড্ডুই বেচকে।
ইন্ডিয়ান গরুদের এই হেনস্থা একজন ইন্ডিয়ান হয়ে আর সহ্য হয় না ভুচুর। তাই-ই ওখানে গিয়ে সার্ভিস এক্সচেঞ্জ করে আসতে চায় ও। বলে, আমার তো পেডিগ্রি নেই, তুমি রাজার ছেলে কুমারসাহাব, তোমার হবে। গলায় একটা নীল-সাদা মালা পরে নেবে। শোনপুরের গরু-মোষের মেলা থেকে আমিই না-হয় কিনে এনে দেব। ভারতের ঈজ্জত বলে কথা। জমে যাবে। আমাকে ম্যানেজার করেই নিয়ে চলো।
লাড্ডু কুতকুত করে হাসে।
ভুচু বলে, দুসস শালা। লাইন চুজ করনেমে বড়হি গডবড়ি কর চুকা ম্যায়। অব ক্যা হোগা?
দুপুরের এখনও দেরি। গিরিশদা, হোস্ট হিসাবে দারুণ। বন্ধু-পুত্রদের হাতে হাতেও বিয়ার-মাগ ধরিয়ে দিয়েছেন। পৃথুকে বললেন, দুটি চেরা-কাচালংকা মিশিয়ে বিয়ার খাবে নাকি এক পাত্তর আমার সঙ্গে?
পৃথু বলল, না। যাব আমি এখন।
গরমের দিন হলেই গিরিশদার এক স্পেশ্যাল ব্যাপার থাকে। গুচ্ছের তেঁতুল গোলা জলে, লেবুপাতা ফেলে, তাতে একটি করে বীচিছাড়ানো কাঁচা-লংকা চিরে বিয়ার মাগ-এ ফেলে দিয়ে তার মধ্যে দু আঙুল ভডকা এবং এক আঙুল জিন, যেমন করে গাদা-বন্দুকের নলে বারুদ মেপে ফেলা হয়, তেমনি করে ফেলে দেন। তারপর ভাল করে শেক করে নিয়ে বরফের ড্রেসিং দিয়ে হাতে হাতে ধরিয়ে দেন। কতলোক যে খুন হয়েছে এই নিঃশব্দ গাদা-বন্দুকে আজ অবধি এখানে, তার হিসাব রাখলে অনেকই জীবন গিরিশদাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড খাটতে অথবা বহুবার ফাঁসিতে লটকাতে হত। যাযাবরের ‘দৃষ্টিপাত’ গিরিশদার হট ফেভারিট বই। তবু উনি বলেন, “যাযাবর আমাকে জানতেন না, তাইই। জানলে লিখতেন, ইফ ইঁটস আ ড্রিঙ্ক, কনসাল্ট গিরিশ ঘোষ। নট, আধারকার।”