না, হাত ধরার অপরাধে জাত যাবে না, পুরুষ নয় মেয়েমানুষ। বিহ্বল দৃষ্টি এক বিধবা! শীর্ণ দেহ পোড়া রং। নবকুমারও বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শুনতে পায়, সত্য তার নিজস্ব সবল ভঙ্গীতে বলছে, হাতে যখন পেয়েছি, আর ছাড়ি? মেয়ে নিয়ে চলে এস তুমি আমার কাছে। আমার যদি দুবেলা দুমুঠো জোটে, তোমারও একবেলা একমুঠো জুটবে। আমার ছেলে দুটো যদি খেতে পরতে পায়, তোমার মেয়েটাও পাবে।
শুনে গায়ের রক্ত হিম হয়ে যায় নবকুমারের। এসব আবার কি কথা?
কে এ? কোথায় এর মেয়ে? সত্যর সঙ্গে কী সম্পর্ক এর? আবার হঠাৎ সেই হিম হয়ে যাওয়া রক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠল। পুরুষের রক্ত!
নবকুমারের সঙ্গে একবার পরামর্শ পর্যন্ত না করে দু-দুটো মানুষকে খেতে পরতে দেবার ভরসা দিয়ে বাড়িতে জায়গা দিতে চাইতে সত্য! এতই বা সাহস কেন মেয়েমানুষের? নবকুমার কিছু বলে না বলে বড় বাড় বেড়ে গেছে!
নবকুমারের চিরদিনের প্রাণের বন্ধু নিতাই, বিনি অপরাধে তাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। যার জন্যে মনের দুঃখে, ঘেন্নায়, অভিমানে স্বভাবটাই খারাপ করে ফেলল ছেলেটা। নবকুমারের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকলে কখনই এসব ঘটত না। মেসে কত রকম কুসঙ্গ।
নবকুমারের চোখে জল এসে গেল। তার পর ভাবল, এখন কিনা কে কোথাকার একটা মাগী, নবকুমার যাকে সাতজনও চোখে দেখে নি, তাকে বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করবার ষড়যন্ত্র আঁটা হচ্ছে।
চালাকি!
চলবে না, এসব চলবে না। নবকুমার সাফ জবাব দিয়ে দেবে–নবকুমারের বাড়িতে এসব চালাকি চলবে না।
নির্ঘাৎ সত্যর বাপের বাড়ির দেশের লোক। তাই এত ভালবাসা! সত্যি বলতে কি একটা ঈর্ষাও অনুভব করে নবকুমার। নবকুমারের সম্পূর্ণ অপরিচিত জগতের কাউকে যে সত্য মনে জায়গা দেবে এ অসহ্য। হোক না সে মেয়েমানুষ, তবুও!
মনের কথা যে মন ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না, এ বাঁচোয়াতেই পৃথিবী টিকে আছে। নইলে পৃথিবী তার সমাজ সভ্যতা শিক্ষা সংস্কৃতি সব কিছুর বড়াই নিয়ে কোন কালে রসাতলের অতল তলায় তলিয়ে যেত।
মনের কথা অন্যে টের পায় না।
নিতান্ত মনের মানুষটাও না।
এই আনন্দের যথেচ্ছ নেচে বেড়াচ্ছে মানুষ, যত পারে বড় বড় কথা বলছে। আর স্নেহ প্রেম ভালবাসার মহিমা দেখাচ্ছে। তা এ রহস্যটা মানুষ নিজেও খেয়াল করে না, এই যা মজা।
নবকুমারও খেয়াল করে না, বিধাতার কাছে এ কত বড় পাওয়া পেয়ে বসে আছে সে। মনে মনে তাই শুধু সত্যকেই বাক্যবাণে বিদ্ধ করে না, বিধাতাপুরুষকেও করে। করে বিধাতা নবকুমারকে পুরুষ আর সত্যকে মেয়ে করেছেন বলে। সহ্য হচ্ছে না। এই হাত ধরা দৃশ্য আর সহ্য হচ্ছে না।
গলা ঝাড়ার শব্দ করল নবকুমার।
এতক্ষণ সত্য নিজের ঝোঁকে ছিল, খেয়াল করে নি আর, আর একজন তো দরজার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে। গলার শব্দে উভয়েই সচকিত হল। বিধবাটি একটু সরে গেল।
আর সত্য ধরা হাতটা ছেড়ে দিয়ে হাত তুলে মাথার কাপড়টা টানল।
বুদ্ধিমতী সত্য অবশ্য তক্ষুনি হৈ-হৈ করে আবির্ভূত মহিলার পরিচয় দিতে এল না স্বামীর কাছে। তা ছাড়া লজ্জা-শরম বলেও কথা আছে। গুরুজনদের সামনে বরের সঙ্গে কথা বলা চলে না। তাই মাথার কাপড়টা টেনে গলা নামিয়ে আস্তে বলল, চল বৌ, ও ঘরে গিয়ে বসবে চল।
নবকুমার ভেবেছিল যা বলবে গলা চড়িয়ে বলবে, যাতে ওই মেয়েমানুষটার কানে পৌঁছয়। যাতে সে বুঝতে পারে বাড়ির প্রকৃত কর্তা কে। আর এও বুঝতে পারে বৃথা আশায় প্রলুব্ধ হয়ে কোনও লাভ নেই তার। সত্য ছেলেমানুষ, না বুঝেসুঝে কি না কি বলেছে, সেটা ধোপে টিকল না। এ সবই আশা করছিল নবকুমার।
কিন্তু গলা চড়ল না।
শুধু চড়ল না নয়, প্রায় বাকস্ফূর্তিই হল না। একটা গমগমে রাগ-রাগ ভাব নিয়ে চান করে এসে খেতে বসল।
ভাতের থালা ধরে দিতে দিতে সত্য প্রশ্ন করে, এত বেলা অবধি গিয়েছিলে কোথায়?
নবকুমার পাতের উপর হুস করে সমস্ত ডালটা একসঙ্গে ঢেলে ফেলে ভাত মাখতে মাখতে গম্ভীর গলায় বলল, যেখানেই যাই না, তোমার কাছে তার কৈফিয়ৎ দিতে হবে নাকি?
শোন কথা! কী কথার কী উত্তুর! কৈফিয়ৎ দিতে হবে, এ কথা কে বলেছে? নাইতে খেতে বেলা গড়িয়ে গেল, তাই শুধাচ্ছি।
না, শুধোতে হবে না। তেমনি গলাতে চালিয়ে যায় নবকুমার, শুধোবার কোনও এক্তিয়ার নেই তোমার। কি জন্যে শুধোবে? তুমি আমায় মেনে চল? তাই আমি তোমায় মেনে চলব?
সত্য অবাক হয়ে বলে, রোদের তাতে হঠাৎ মাথাটা গরম হয়ে গেল নাকি? কী বলছ আবোল-তাবোল?
আবোল-তাবোল! আবোল-তাবোল বকছি আমি? আর নিজে যখন বলা নেই কওয়া নেই—
গলা চড়াবার ব্যর্থ চেষ্টায় বিষম খায় নবকুমার।
অগত্যাই তখন সত্যর চিকিৎসাধীন হতে হয় সত্যর বীরপুরুষ স্বামীকে। জল-বাতাস, মাথায় ফু। ধাতস্থ হতে সময় লাগে।
আর ধাতস্থ হওয়া মাত্রই সত্য নিম্নস্বরে বলে, সংসারে আর দুজন মানুষ বাড়ল, একটু জানিয়ে রাখছি তোমায়। নইলে যেমন মতিবুদ্ধি তোমার, হঠাৎ হৈ-চৈ লাগাবে- কে এরা, কোথা থেকে এল?
নবকুমার বলতে পারত, তা সে কথা তো জিজ্ঞেস করবই আমি। সত্যিই তো–কে এরা, কোথা থেকে এল? কেন এল? আর আমিই বা খামোকা দুটো মানুষকে সংসারে জায়গা দিতে যাব কিসের জন্যে?
বলতে পারল না।
সেই বিষম-খাওয়া ধরা-গলায় যা বলল সেটা হচ্ছে এই, তা আমাকে জানাবার কি আছে? তুমি যা ভালো বুঝবে
কার গলা?
নবকুমারের?
নবকুমার এ কথা বলল কেন?
এতক্ষণ ধরে এই কথাটা বলবার জন্যেই কি “মহলা” দিচ্ছিল নবকুমার মনে মনে?
.
সেই সেদিন পঞ্চুর মার সঙ্গে একবারের জন্যে দেখা করে গিয়ে পর্যন্ত দত্তবাড়ির “পানসাজুনি”র প্রাণটা যে কেন দেয়ালে মাথা কুটতে চাইছিল তা ভগবানই জানেন। আর তার সাক্ষীও শুধু তিনিই।
তাই আবার যখন এদিন সে দিনদুপুরে পঞ্চুর মাকে ধরে বসল, চুপি চুপি আর একবার আমায় নিয়ে যাবি? তখন পঞ্চুর মা হাঁ হয়ে গেল।
বলল, হ্যাঁগা, সেদিন তো কথাই কইলে না! আবার আজ যাবে বলছ মানে?
কি জানি পঞ্চুর মা, মনটা কেমন টানছে। আমার একটা ছোট বোন ছিল, অনেকটা তেমনি দেখতে।
পঞ্চুর মা বোধ করি একটা তবু মানে পেয়ে আশ্বস্ত হয়। তবে এ প্রশ্ন তোলে–দিন-দুপুরে চুপি-চুপিটা সম্ভব কি করে?
সে বুদ্ধি পানসাজুনিই দিয়েছে। কালীতলায় যাবার নাম করে বেরিয়ে পড়া। ঠনঠনের মা কালী জাগ্রত কালী, তাঁর কাছে সময়-অসময় যায়ও সবাই। দূরও বেশী নয়, এই তো একটু গেলেই।
দেবীদর্শনেই এসেছিল পানসাজুনি বামুনদিদি। আর সে দর্শন তার মিলেছিল।
তারপর তো সেই নবকুমারের প্রবেশ।
শঙ্করী বলে, ঠাকুরঝি বলে ডাকবার মুখ নেই, তবু বলতে বড় সাধ যাচ্ছে তাই বলছি, মিথ্যে ছেলেমানুষি করো না সত্য ঠাকুরঝি, তুমি যা বলছ তা হবার নয়।
হবার নয়?
সত্য জোরালো গলায় বলে, কিন্তু কেন হবার নয়, সেই কথাটাই আমায় বোঝাও কাটোয়ার বৌ! ভুল-ভ্রান্তি মানুষেই করে, তা বলে কস্মিনকালে আর সে ভুল শোধরাতে পাবে না সে?
শোধরাব বললেই হল? সমাজ সে আবদার শুনবে? শঙ্করী নিঃশ্বাস ফেলে বলে, মেয়েমানুষ যে মাটির পাত্তর ঠাকুরঝি, ও তো ছুঁৎ লেগেই গেল!
মেয়েমানুষ যে মাটির পাত্তর, এ কথা বুঝি বিধাতাপুরুষ তার গায়ে দেগে দিয়ে ধরাভূমিতে পাঠিয়েছিল? সত্য তীক্ষ্ণ স্বরে বলে, আর বেটাছেলেকে সোনার বাসন বলে ছাপ মেরে পাঠিয়েছিল? তাই তাদের বেলা যা করুক তাই বাহবা! হ্যাঁ, অন্যায়ই তুমি করেছিলে সত্যি, খুব করেছিলে। তুমি বয়সে বড়, গুরুজন সম্পর্ক, বলাটা আমার শোভা পায় না, তবু না বলেও পারছি না, যা করেছিলে তা মহাপাতক। তখন জ্ঞান-বুদ্ধি ছিল না, পুরো বুঝতে পারি নি, কিসের জন্যে কি! কিন্তু পরে তো বুঝেছি। বুঝে মিথ্যে বলব না, মনে মনে তোমায় নোড়া দিয়ে ছেঁচেছি আমি। শুধু মহাপাতক বলেই নয়, বাবার মতন মান্যিমান মানুষের উঁচু মাথাটা যে তুমি হেঁট করে দিয়েছিলে, সেই ঘেন্নার জ্বালায় তোমায় শতেক ধিক দিয়েছি। তবে এও তো সত্যি, অতি পাতকেরও প্রাচিত্তির আছে। যেমন মহাপাতক করেছ তুমি, তার মহা প্রাচিত্তিরই করেছ। তুষানলে জ্বলে জ্বলে খাক হয়েছ।
সত্য ঠাকুরঝি!
শঙ্করী আবেগ-কম্পিত স্বরে বলে, মান্যে ছোটর কথা বলি না, তবে তুমি আমার চেয়ে বয়সে আদ্দেক, তাই পায়ের ধুলো নিলাম না তোমার। কিন্তু জিজ্ঞেস করি, রাতদিন যে আমি তুষানলে জ্বলছি, এ তুমি কেমন করে টের পেলে?
শোন কথা! এর আবার টের পাবার কি আছে? প্রেত্যক্ষ দেখতে পাচ্ছি না? দিষ্টিহীন তো নই? তুষানলে যে জ্বলছ, সে সাক্ষী দিচ্ছে তোমার ওই পোড়াকাঠ দেহ। কি সোনার বর্ণ রং ছিল, কী মোমে গড়া দেহ ছিল তোমার, সেটা তো আর ভুলি নি! তা যাক, রূপ গেছে বালাই গেছে, থাকলে আর কী ধুয়ে জল খেতে? ওই রূপই কাল হয়ে দংশন করেছে তোমায়। গেছে যাক, কিন্তু শরীর স্বাস্থ্যটা তো দেখতে হবে? গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে এহকালের বালাইটা ঘোচাও নি যখন?
শঙ্করী কাতর কণ্ঠে বলে, সেই ইচ্ছে কি আর হয় নি ঠাকুরঝি? রাতদিন সে ইচ্ছে হয়েছে, কিন্তু পারি নি। ওই পেটের জঞ্জালটাই পায়ের বেড়ি হয়েছে। আমিই মহাপাতকী, ওর আর অপরাধ কী! ত্রিজগতে কেউ নেই ওর, মরে ওকে কোথায় ভাসিয়ে দিয়ে যাবো?
সত্য ঝঙ্কার দিয়ে বলে, যাক সে সুমুতিটুকু যে হয়েছিল তাও মঙ্গল। একে তো এই পাতকের বোঝা, তার উপর আবার আত্মঘাতী মরণের পাপ! নরকেও ঠাই হত না। যাক গে মরুক গে, গতস্য শোচনা নাস্তি। এখন সোজা কথা হচ্ছে–এতাবৎ যা করেছ, এখন আমার চোখে যখন ধরা পড়েছ, আর তোমার শুদ্দুরের দাস্যবিত্তি করা চলবে না!
শঙ্করী বিষণ্ণ হাসি হেসে বলে, বয়েস হয়েছে, ছেলেপুলের মা হয়েছ, তবু স্বভাবটি তোমার দেখছি ঠিক তেমনি ডাকাবুকো আছে সত্য-ঠাকুরঝি। কিন্তু জগৎকে চিনতেও বাকি আছে। আমায় ঘরে ঠাই দিলে তোমাকে কি আর কেউ ঘরে ঠাঁই দেবে?
হঠাৎ সত্যর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। একটু মুখ টিপে হাসে সে। তার পর বলে, কে ঘরে ঠাই দেবে না? তোমার ননদাই?
বালাই ষাট! তা বলছি না। তিনি তোমায় চিরকাল রাজরাণী, মাথায় মণি করে রাখুন। এই সমাজের কথা বলছি। জানাজানি হয়ে গেলে
জানাজানি হয়ে যাবার আবার কি আছে কাটোয়ারী বৌ! আমি কি লুকোছাপ করব? আমি তো ঠিক করছি আজই বাবাকে পত্তর দেব। বাবা এই কাজ করেছি আমি, এখন আমায় মারতে হয় মার, কাটতে হয় কাট আর রাখতে হয় রাখ!
বাবা শব্দটা শুনেই শঙ্করী সহসা দু হাত জোড় করে কপালে ঠেকায়।
সেই বাবা নামক মানুষটার উদ্দেশে কি ভগবানের উদ্দেশে?
বোধ করি ভগবানের উদ্দেশে।
সাহস করে সেই বাড়ি, মানুষগুলো, সর্বোপরি সেই দৃপ্তমূর্তি দেবোপম ব্যক্তিটি সম্পর্কে কোনও প্রশ্নই করতে সাহস ছিল না শঙ্করীর। ভয়, লজ্জা, অপরাধের সঙ্কোচ, এসব তো আছেই, তার ওপর এক আশঙ্কার আতঙ্ক। যদি প্রশ্ন করতে গিয়ে শোনে, মানুষটা নেই? সে বড় ভয়ঙ্কর!
কিন্তু সত্য বলছে, বাবাকে পত্তর লিখব। তাই কপালে হাত ঠেকিয়েছে শঙ্করী।
আতঙ্কটা যাবার সঙ্গে সঙ্গে ভয় লজ্জা সঙ্কোচ সবই যেন একটু সরে দাঁড়ায়। যেন শঙ্করীর অবস্থা দেখে দয়া হয়েছে ওদের।
তাই শঙ্করী ঈষৎ ইতস্তত করে বলেই ফেলে, মামাঠাকুরের শরীরগতিক মঙ্গল?
শরীরগতিক!
সত্য নিঃশ্বাস ফেলে বলে, খুব ভাল নয়, তবে মানুষটাকে তো জান? ভাঙব তবু মচকাব না। নইলে মা মারা যাওয়ার পর থেকে ভেতরে ভেতরে দেহ ভেঙে গেছে। কলকাতায় আসার আগে দেখা করে এলাম তো।
মা মারা যাওয়া!
শঙ্করী ভাবে, এ ‘মা’ রামকালীরই মা, দীনতারিণী। ভাবে তা তিনি মরবেন এটা তো আশ্চয্যিও নয়, দুঃখের নয়, তার নাকি রামকালী হৃদয়বান পুরুষ, মাতৃশোককে মর্যাদা দিয়েছেন। তবু বলে, তিনি জ্ঞানবান মানুষ হয়ে এত কাতর হয়েছেন? তা বড়দিদিমা মারা গেছেন কতদিন হল?
বড়দিদিমা!
সত্য ভুরু কুঁচকে বলে, ঠাকুরমার কথা শুধোচ্ছ? মারা গেছেন এই ক’বছর যেন হল। আমি আমার মার কথা বলছি। মা তো চলে গেছেন
সত্য চুপ করে যায়।
গলার কম্পন কেউ ধরে ফেলবে, এতে সত্যর বড় লজ্জা।
শঙ্করী স্তম্ভিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, মেজমামীমা মারা গেছেন?
সত্য নীরব
সত্য নতদৃষ্টি।
অনেকক্ষণ পর শঙ্করী একটা পরিতাপের নিঃশ্বাস ফেলে বলে, কতদিন হল?
এই আমার বড় খোকা তখন আঁতুড়ে।
আস্তে আস্তে উদ্বেলিত নিঃশ্বাস শান্ত হয়ে যায়। ক্রমশ ধীরে ধীরে কখন যে নিঃশ্বাস ফেলার ধাপ থেকে গল্প করার অবস্থায় এসে পৌঁছে গেছে ওরা, তা ওদের নিজেদেরই খেয়াল থাকে না।
অতীত স্মৃতির রোমন্থনে সময়ের জ্ঞান হারায় বুঝি।
শঙ্করী প্রশ্নকত্রী।
সত্য উত্তরদাত্রী।
শঙ্করী যেন গভীর সমুদ্রে হাতড়ে হাতড়ে কী এক হারানো মানিক খুঁজতে চাইছে, আর সত্য যেন শঙ্করীর সেই প্রশ্নের হাতড়ানির মধ্যে দিয়ে ফিরে পাচ্ছে তার হারানো শৈশবকে।
নিত্যানন্দপুরের রামকালী কবরেজের অন্তঃপুরটা না একদা সশস্ত্র-প্রহরী-বেষ্টিত অন্ধকার কারাগারের মত লাগত শঙ্করীর?
তবে আজ সেই অন্তঃপুরটা আলোকোজ্জ্বল স্বর্গের মতো মনে হচ্ছে কেন তার?
সেই স্বৰ্গকে স্বেচ্ছায় হারিয়েছে শঙ্করী! ভাঙা মাটির বাসনের মত হেলায় পথের ধুলোয় আছড়ে ফেলে শয়তানের ছলনায় স্বর্গে!
অনেক কথা অনেক নিঃশ্বাস।
ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস।
তবু আবার একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে সত্য, আজ তুমি ওই দত্তবাড়ির পানসাজুনিগিরি করছ কাটোয়ার বৌ, কিন্তু এর থেকে হাজার গুণ মর্যাদা ছিল যদি তুমি কবরেজবাড়ির উঠোনটা ঝেটিয়েও খেতে।
মতিচ্ছন্ন! পূর্বজন্মের মহাপাতক! আর কিছু বলার নেই আমার।
যাই হোক, তুমি আর দ্বিধা করো না বৌ, মেয়ে নিয়ে একবস্ত্রে চলে এস। পেটের ভেতরের অন্তন্ন তো আর এক কথায় ধুয়ে মুছে সাফ হবে না, তবে পরনের ওই সব পতিত বস্ত্র পরিত্যাগ দিতে হবে। ও ত্যাগ না দিলে গলদ আর দূর হতে চাইবে না। সে যাক, মেয়ে কত বড়টা হল?
কত বড়? মানে বয়সের কথা বলছ? শঙ্করীর চোখের ছায়ায় যেন একটু ধূসর শূন্যতা। সে শূন্যতার স্পর্শ তার কণ্ঠে এসে লাগে।
বয়েস? তোমার কাছে আর লুকোছাপা করব না ঠাকুরঝি, পষ্টই বলছি–বয়েস চৌদ্দ উতরে গেছে এই মাঘে।
মাঘে! তাহলে পনেরোই! পনেরো চলছে! সত্য বিমূঢ় ভাবে বলে, বিয়ে?
বিয়ে! শঙ্করী ক্ষুব্ধ ব্যাঙ্গমিশ্রিত একটু হাসে। এ ব্যঙ্গ ভাগ্যকে। এ ক্ষোভ সত্যর প্রশ্নতে।
সত্য একটু চুপ করে থেকে বলে, তা যাদের সংসারে আছ, তারা কিছু বলে না? তাদের কি জবাব দাও?
শঙ্করী তেমন একটু হেসে বলে, সে জবাব আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম। বলেছি পাঁচ বছরের বিয়ে, সাত বছরে বিধবা, শ্বশুরবাড়ি চক্ষে দেখে নি
সত্য ইতিমধ্যে শিউরে উঠেছে।
বল কি বৌ, কি সব্বনেশে মা তুমি! আইবুড়ো মেয়েটাকে বিধবা বলে পরিচয় দিয়েছ? সমগ্র পৃথিবীতে এমন কথা কেউ কখনো শুনেছে? বলি এই কাণ্ডটা যে করে রেখেছ, আজন্ম তো তাকে আলোচাল কাঁচকলা গিলতে হচ্ছে?
তা হচ্ছে বৈকি। আমার যা তারও তাই। তার বেশী জুটছেই বা কোথা থেকে ঠাকুরঝি?
সত্য পরিতৃপ্ত সুরে বলে, তা যেন হল। কিন্তু এর পর ওর বিয়ে দেবে কি করে?
শঙ্করী নিঃশ্বাস ফেলে বলে, সে পরিচয় না দিলেই কি বিয়ে দিতে পারতাম ঠাকুরঝি? বাপ ঠাকুন্দার পরিচয়হীন মেয়েকে কে বৌ বলে ঘরে তুলবে?
সত্য ভুরু কুঁচকে বসে থাকে কিছুক্ষণ, তার পর বলে, তা সেই নগেন না কে, যার সঙ্গে বিয়ে তোমার হয়েছিল বললে–
ফাঁকি, ফাঁকি, সব ফাঁকি, বুঝলে ঠাকুরঝি, সেই নরকের কীট পাপিষ্ঠ শয়তান ফাঁকি দিয়ে আমাকে–, রুদ্ধকণ্ঠ পরিষ্কার করে বলে শঙ্করী, কী বলব ঠাকুরঝি, ওই ভোগায় না পড়লে কি দুর্মতি হত আমার? বলল, কলকাতায় এখন বিধবা বিয়ের চল হয়েছে। কত অল্পবয়সী বিধবা আবার সুখে-স্বচ্ছন্দে ঘর করছে। সেই ভোগায় ভুলে পাতালের সিঁড়িতে পা ফেললাম।
সত্য বিরসমুখে বলে,তা হলে বিয়ে করে নি?
না, সে মিথ্যে বলব না, করেছি। বিধবা বিয়ে দিতে রাজী হয় এমন পুরুত ডেকে অগ্নি নারায়ণ সাক্ষী করে ঠাট একটা দেখিয়েছিল। কিন্তু সেই বিয়েকে যদি সে মনেপ্রাণে সত্যি বলে মানত, তা হলে কি পেটে সন্তান এসেছে শুনেই আমাকে ছেঁড়া কাপড়ের মতন ফেলে চলে যেত?
তা যাক। সত্য একটা অস্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, তার চরিত্তিরের উপযুক্ত কাজই সে করেছে। কিন্তু তুমি তো একপ্রকার ধর্মে খাঁটি আছ। আর তোমার মেয়েকেও অধর্মের সন্তান বলে চলে না। বিধবা বিয়ে আমার চোখে অবিশ্যি ভাল ঠেকে না, তবে মন্দের ভাল। বড় বড় পণ্ডিতেরা যখন শান্তর পড়ে বুঝেসুঝে বিধান দিয়ে রেখেছেন, তখন একেবারে তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাঁদের চেয়ে আমি পণ্ডিত নই। তবু বলব কাটোয়ার বৌ, মেয়ের এই মিথ্যে বিধবা পরিচয়টা তোমার দেওয়া উচিত হয় নি। তার কাছেও তো একটা জবাব আছে? সে যখন বড় হবে, পাঁচজনের বিয়েথাওয়া গয়নাকাপড় ঘরবর দেখবে, তখন তার প্রাণের ভেতরটি কেমন করবে? তখন তোমায় একদিন শুধাবে না, মা, মা হয়ে তুমি আমার এই করলে–
শঙ্করী কথায় মাঝখানেই উদাস গভীর সুরে বলে, সে জিজ্ঞেসের গোড়াও মেরে রেখেছি ঠাকুরঝি। তাকে ওই কথাই বুঝিয়ে রেখেছি। বলেছি পাঁচ বছর বয়সের ঘটনা, তোর স্মরণে নেই।
বৌ! আবেগ-কম্পিত স্বরে শুধু এই একাক্ষর শব্দটুকু উচ্চারণ করে সত্য।
শঙ্করী সত্যর সেই ক্ষুব্ধ বিস্মিত আহত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, তা তুমি শতেক ঝাটা মারতে পার ঠাকুরঝি, কিন্তু এ ছাড়া আর কোনও উপায় আমি দেখতে পাই নি। বলতে পার আমি মা নই রাক্ষসী, কিন্তু তবু তো সেই দুর্দিনে গর্ভসুদ্ধ গঙ্গায় ডুবে মরতে পারি নি? আর ওর জন্যেই দোর দোর ঘুরেছি, হাজার লাথি ঝাটা খেয়েছি, মান-অপমান জলাঞ্জলি দিয়েছি, আর আজ সোনারবেনের দাসত্ব করে ভাত খাচ্ছি। কিন্তু বাড়ি ভাল নয়। লোকে বলে অন্নদাতার নিন্দে করতে নেই, তবু না বলে উপায় নেই, সোমত্ত মেয়ে নিয়ে ও বাড়িতে থাকা কাঁটা হয়ে থাকা। শুধু মেয়েটাকে যদি তুমি চুপ করে যায় শঙ্করী।
অনেকক্ষণ নীরবতার পর সত্য আস্তে বলে, নাম কি রেখেছ?
নাম! শঙ্করীর কণ্ঠে যেন অপরাধের সুর বাজে, দু মাস বয়স থেকে হাসিটা লক্ষ্মীছড়ির এত মন-কাড়া ছিল যে নাম রেখে বসেছিলাম সুহাসিনী!
তা অপরাধের সুর আসাই স্বাভাবিক, ওই হতভাগ্য মেয়েটার নাম ‘মলিনা’ কি ‘অশ্রুমতী’ নিদেনপক্ষে ছায়া’ কি ‘দাসী’ এমনি একটা হলেই যেন শোভা পেত।
কিন্তু সত্য সে খোটা দিল না। সত্য বলল, তা মন্দ নয়। সে যাক, বাড়ি যখন অমন বলছ, আর তো থাকা ঠিক নয়। মেয়ে নিয়ে অবিলম্বে চলে এস।
.
হ্যাঁ, বাড়ি ওদের অমনি! নবকুমারের কাছে বসে সত্য চাপা তীব্র স্বরে বলে, ভদ্রঘরের মেয়ের এসব কথা মুখে আনলেও পাপ, তবে অবস্থাটা তোমায় স্পষ্ট করে খুলে না বললেও তো বুঝবে না তুমি। ওই রূপের ডালি মেয়ে নিয়ে কি কাঁটা হয়ে থাকে বৌ বুঝে দেখ। বলে, নীচের তলায় রান্নাবাড়ির কাছে একখানা ছোট ঘর আছে, তাতে নাকি কাঠ-ঘঁটে থাকত, সেই ঘর পরিষ্কার করে মায়ে-ঝিয়ে আছে। কেন? না পাছে কারুর চোখে পড়ে যায়! দিনান্তে একবার নাইতে খেতে ঘর থেকে বেরোতে দেয় মেয়েকে, তাও নিজের কড়া পাহারায়। আইবুড়ো মেয়েটাকে বিধবা পরিচয় দিয়ে রেখে দিয়েছে! ভাব কষ্ট!
নবকুমার কিন্তু বেশী বিচলিত হয় না, বরং নিতান্ত ব্যাজার মুখে বলে, তা সে যার কথা সে বুঝবে, তোমার এত আগ বাড়াবার দরকার কি? শুধু গরীব দুঃখী অবীরে বিধবা ভাজ হত তার মানে ছিল। এসব কি? না না, এসব কেচ্ছাকেলেঙ্কারী আমার বাড়িতে ঢোকানো চলবে না। বাসাতেই এসেছি, তা বলে তো বেওয়ারিশ নই আমি। মা শুনলে আর আমার মুখ দেখবে, না তোমার হাতে জল খাবে?
সত্য স্থিরকণ্ঠে বলে, বলার আমার অনেক কথা ছিল, কিন্তু বলব না সে সব। শুধু বলছি, আমি যদি তাদের মত করাতে পারি?
হ্যাঁ, মত করাতে পার! নবকুমার বলে ওঠে, এ তোমার কাছা-আলগা নবকুমার বাঁড়ুয্যের কিনা, যে তোমার কথায় উঠবে বসবে! সে বড় শক্ত ঘাঁটি!
সত্য ভ্রূভঙ্গী করে বলে, নিজের মুখে নিজের ব্যাখ্যানটা আর নাই করলে। বেশ, ওনাদের মতটা পেলেই তো হল?
তা তোমাকে বিশ্বাস নেই। তুমি যা ডাকাত, হয়তো শ্বশুর-শাশুড়ীর গলায় গামছা মোড়া দিয়ে মত আদায় করবে। কিন্তু এত ঝামেলায় দরকার কি শুনি? আমি বলে দিচ্ছি-আমার সংসারে ওসব চলবে না।
সত্য সহসা ভ্রূভঙ্গী ত্যাগ করে উদাস মুখে বলে, বেশ তাই ভাল। সেই কথাই বলে দেব ভাজকে। বলব, না বৌ, এ সংসারে তোমার ঠাই হবে না, ভুল করে ভেবেছিলাম, সংসারটা বুঝি আমার, তা মস্ত একটা হাতুড়ির ঘায়ে ভুলটা ভেঙেছে। চোখ ফুটে গেছে। ভালই হল, শিক্ষা হয়ে গেল।
নবকুমার বসে পড়ে।
নবকুমার চোখে সর্ষেফুল দেখে।
নবকুমার সমস্ত বীরত্ব ত্যাগ করে ওই সেই চিরমুখস্থ কথাটা বলে বসে, হল তো! অমনি রাগ হয়ে গেল? রাগের কথা কিছু বলি নি আমি। শুধু বলেছি সুখে থাকতে ভূতের কীল খাওয়া কেন?
সত্যর মুখের কাঠিন্য কিছুটা হ্রাস হয়।
সত্য স্থির স্বরে বলে, আর একদিন তোমার এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম, আজ আবার দিচ্ছি, কীল খাওয়া কেন জান? মানুষ জাতটা মানুষ’ বলে। গরু-গাধা পাখী-পক্ষী নয় বলে।
আর ওই যে আবার একটা মেয়ে রয়েছে
রয়েছে সে কথা তো হয়েই গেছে।
সেও মায়ের মত হবে কি না—
যাতে না হয় সেই চেষ্টাই করতে হবে।
সত্য উঠে যায় দৃঢ় সংকল্পের মুখ নিয়ে।
.
সুহাসিনী!
ডাকনাম সুহাস।
হ্যাঁ, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রূপের ডালিই হচ্ছে। শঙ্করীর বাস্তুহারা কৈশোর মূর্তি যেন ওর মধ্যে এসে পুনর্বাসন করেছে। এত দুঃখ-ধান্ধা, এত লাঞ্ছণা-গঞ্জনা, মায়ের এত কড়া শাসন, তবু কলায় কলায় ভরে উঠেছে দেহ। পনেরো কলা ভর ভর, আর একটা কলা হলেই সম্পূর্ণ।
মেয়ের মুখ দেখে শঙ্করীর বুক ভয়ে ওঠে। মেয়ের রূপ দেখে শঙ্করীর বুক কেঁপে ওঠে। তাই কখনো মেয়েকে কোলে নিয়ে কাঁদে, কখনো মেয়েকে দাঁতে পেষে।
মেয়েকে দাঁতে পেষা তো নয়, নিজেকেই জাঁতার পেষা। কিন্তু করবে কি শঙ্করী, তার যে বেড়া আগুন!
যেদিন সত্য হাত ধরে বসল–সে রাত্রে মেয়েকে যাচ্ছেতাই করল শঙ্করী। বলল, তবে আন খানিক বিষ আন, তুইও খা, আমিও খাই। সকল জ্বালা জুড়োক। সকল সমস্যা মিটুক।
কথাটা এই, মার মারফত সত্যর প্রস্তাব শুনে সুহাস একেবারে বেঁকে বসেছে। ওসব অনাসৃষ্টির মধ্যে যেতে রাজী নয় সে। অনেক হাঁড়ির হালের শেষ, অনেক ঘাটের জল পার করে এতদিনে যদি পায়ের তলায় একটু মাটি মিলেছে, যার তুল্য নেই রাজবাড়িতে আশ্রয় জুটে গেছে, এখন আবার অনিশ্চিতের সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে যাবার কী দরকার?
আপনার লোক!
তিনকুলে কেউ ছিল না, একমুঠো পোড়ামুড়ি নিয়ে কেউ এগিয়ে আসে নি, এখন হঠাৎ ভূঁই ফুড়ে আপনার লোক গজাল! হতে পারে কোন এক সময় দেশের লোক ছিল, কিন্তু তাতে কি চারখানা হাত-পা বেরোচ্ছে? হঠাৎ তার এত দরদ উথলে ওঠবার কারণটাই বা কি? আর কিছুই নয়, বিনি মাইনের দাসী-রাধুনী পেয়ে যাবার আশ্বাস। ভেবেছে দুটো দরদের কথা কয়ে একবার বাড়িতে পুরে ফেলতে পারলে হয়।… শঙ্করী যেমন বোকা তাই বুঝতে পারে না, এর পর একূল ওকূল দুকূল যাবে।
হ্যাঁ, প্রথমটায় এত কথাই বলেছিল সুহাস। এত কথাই বলতে পারে সে। অবিশ্যি আর কারুকে নয়, শুধু মাকেই। মায়ের ওপর দাপটের অবধি নেই। জন্মাবধি যত দুঃখ-কষ্ট অভাব-অসুবিধে পেয়েছে, চিরদিন তার ঝাল ঝেড়েছে মায়ের ওপর।
তবু তো সম্পূর্ণ ইতিহাস জানে না। সত্যি ইতিহাস জানে না। জানে–গর্ভে নিয়ে বিধবা বলে সে সন্তানকে অপয়া বলে দূর দূর করেছিল বাড়ির লোক, তাই শঙ্করী দুঃখে অভিমানে মেয়ে নিয়ে পথে বেরিয়েছিল।
সেইটাই অভিযোগ সুহাসের।
মার অবিমৃষ্যকারিতাতেই যে তাদের এই হাঁড়ির হাল সে বিষয়ে সন্দেহ নাস্তি।
যাক, সে যাহোক হয়ে গেছে।
এখন আবার এ কী!
মায়ে ঝিয়ে তর্ক বাধে।
শঙ্করী যাচ্ছেতাই করে মেয়েকে।
এবং সুহাস সতেজে বলে, ঠিক আছে। আমি যখন এতই পাথর তোমার গলার, সে পাথর সরিয়ে দিয়ে যাব।