তেত্রিশ
প্রথমদিনেই খাওয়া শেষ করতে মাধবীলতার প্রায় চারটে বেজে গেল। অবশ্য সে একা নয়, ছোটমাও সঙ্গে ছিলেন। হেমলতার তখনও তোড়জোড় চলছিল। তাঁর রান্না নিজের। সামান্য ভাত আর দু-তিনটে মিলিয়ে একটা ঘ্যাঁট। সকাল থেকে কিছু খেতে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না মাধবীলতার। এই বিকেলে ওই সামান্য খাবার যদি রোজ পেটে পড়ে তাহলে একটা মানুষ এত বছর কোন শক্তিতে বেঁচে থাকেন তা কে জানে। মাধবীলতা সেই কথাটা ঘুরিয়ে বলতেই হেমলতা চোখ বন্ধ করলেন, ‘খেতে পারি না। বুক জ্বলে যায়। অম্বল। বাবা বেঁচে থাকতে সরসী ডাক্তারের ওষুধ এনে দিতেন তাতে উপকার হতো।’
মাধবীলতা নরম গলায় বলেছিল, ‘এখন তার ওষুধ আনানো যায় না?’
‘কি করে যাবে? সে ডাক্তার তো কবে মরে গেছে। রাত্তিরে তো খাই না। এই সময়ে খেলে রাত্তিরে আর খিদে পায় না।’ হেমলতার শুকনো ছোট্ট মুখটায় ব্যথার ছাপ মারা ছিল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ সেটা কেটে গেল। হেমলতা উজ্জ্বল চোখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ও ছোট বউ, অনির বউ-এর হাতের রান্না কি রকম?’
ছোটমার খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। ঠোঁট টিপে একবার হেমলতাকে দেখে বললেন, ‘নতুন হাতের রান্না খেলে তো ভালই লাগে। রাত্রের রান্না তোমাকে করতে হবে না, ওটা আমিই করব।’
মাধবীলতা সংকুচিত হল। তাকে রাত্রে রান্না করতে না দেওয়ার অর্থ কি ছোটমার রান্না পছন্দ হয়নি? এই বাড়িতে আসার পর সে মহীতোষ কিংবা হেমলতাকে মোটামুটি বুঝতে পারছে কিন্তু এই মহিলাকে সে ধরতেই পারছে না। হয়তো বেশী পড়াশুনা করেননি কিন্তু অদ্ভুত একটা ব্যক্তিত্ব নিয়ে কথাবার্তা বলছেন।
খেয়ে দেয়ে বড় বাড়িতে আসতে রোদ নরম হয়ে গেল। মাধবীলতা তাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরের দরজায় এসে দেখল অনিমেষ শুয়ে আছে খাটে, অর্ক ঘরে নেই। অনিমেষ তাকে দেখামাত্র উঠে বসল, ‘কি ঠিক করলে?’
‘কিসের?’
‘এই বাড়ির ব্যাপারে?’
‘যা স্বাভাবিক তাই হবে।’
‘যা স্বাভাবিক তা সবসময় হয়?’
‘জানি না। তোমার বাড়ি তুমি যা বলবে তাই হবে। এখন আমার কথা বলতে ভাল লাগছে না। কাল সারারাত ঘুমইনি। তুমি এখানে শুলে আমার তো আবার শোওয়া যাবে না।’ মাধবীলতা চেয়ারটার দিকে তাকাল।
‘শুলে কেউ কিছু বলবে?’
‘শোওয়াটা এই বাড়িতে শোভন নয়, তাই।’
অনিমেষ তড়িঘড়ি বিছানা থেকে উঠে পড়ল। তারপর ক্রাচ বগলে নিয়ে বলল, ‘অবেলায় ঘুমিয়ে পড়ো না শরীর খারাপ হবে।’
মাধবীলতা ওকে উঠতে দেখে বলল, ‘তোমাকে আমি উঠতে বলিনি।’
‘জেদাজেদি করো না।’ অনিমেষ দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
মাধবীলতা হঠাৎ সপ্রশংস গলায় বলল, ‘বাঃ।’
অনিমেষ ঘুরে দাঁড়াল, ‘বাঃ মানে?’
মাধবীলতা ঠোঁট টিপে শান্তির হাসি হাসল, ‘এত সহজ ভঙ্গীতে কোলকাতায় তুমি খাট থেকে নামতে পারতে না। একদিনেই তোমাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে!’
অনিমেষ ঠোঁট ওল্টালো। তারপর বাইরের ঘরে বেরিয়ে আসতেই খেয়াল হল খাওয়া-দাওয়ার পর অর্ককে অনেকক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়নি। তারপরেই মনে হল, ছেলে বড় হয়েছে, সারাসময় পেছনে টিকটিক করা উচিত হবে না। ঠিক তখনই ভেতরের ঘর থেকে প্রবল গোঙানি ভেসে এল। গোঙানিটায় একটু বিপন্ন ভাব মেশানো। এর আগের গোঙানিগুলোর সঙ্গে কোন মিল নেই। অনিমেষ দ্রুত চেষ্টা করল ভেতরের ঘরে যেতে। কিন্তু ঘরের মেঝে এত পিচ্ছিল যে ক্রাচে ব্যালান্স রাখা যাচ্ছে না। গোঙানিটা শুনে মাধবীলতাও বেরিয়ে এসেছিল দরজায়। সে দেখল অনিমেষ মহীতোষের ঘরের দিকে এগোচ্ছে।
অনিমেষ মহীতোষের ঘরে ঢুকে চমকে গেল। ওঁর মাথাটা বিছানা থেকে ঝুলে পড়েছে, চোখ বিস্ফারিত; ডান হাত দিয়ে প্রাণপণে বিছানা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা চলছে। অনিমেষ কাছে আসতেই হাতটা তার ক্রাচ আঁকড়ে ধরল। অনিমেষের মনে হল সে পড়ে যাবে। বাবার শরীরের ওজন রাখা তার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। সে দেখল মহীতোষের চোখদুটো এখন বিশাল এবং আকুতিমাখা। এইসময় মাধবীলতা এসে মহীতোষকে ধরতেই অনিমেষ যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। সে টলতে টলতে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি হয়েছে?’
মাধবীলতা ততক্ষণে মহীতোষকে কোনমতে বিছানায় ঠিকঠাক আনতে পেরেছে। মানুষটার দিকে তাকালেই বোঝা যায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা পাচ্ছেন। মুখের দুপাশ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে। হাতের কাছে কোন কাপড় নেই। মাধবীলতার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। অনেকটা সম্মোহিতের মত সে আঁচল দিয়ে লালা মুছিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘কি হয়েছে আপনার?’
আবার গোঙানি ছিটকে এল। বুক ভীষণ কাঁপছে। মাধবীলতা অনিমেষকে বলল, ‘তাড়াতাড়ি ছোটমাকে ডাকো!’
অনিমেষ বেরিয়ে গেলে সে মহীতোষের বুকে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল পরম যত্নে। মহীতোষ কিন্তু মোটেই শান্ত হচ্ছেন না। ওঁর মুখটাকে আরও বেঁকা দেখাচ্ছিল। মহীতোষের ডান হাতটা শুধু মাধবীলতার কবজিটাকে শক্ত মুঠোয় ধরে রেখেছে। এই অসুস্থ মানুষটির শরীরে এত জোর যে মাধবীলতার সাধ্য ছিল না নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার। অথচ মহীতোষ মাধবীলতাকে দেখছেন না। একটা অবলম্বন খোঁজার চেষ্টা ওই মুঠোয়। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।
এইসময় ছুটতে ছুটতে ছোটমা এলেন। একটা অস্ফুট শব্দ বের হল ওঁর মুখ থেকে। তারপর ছুটে গেলেন কোণের টেবিলের দিকে। একটা ছোট্ট শিশি থেকে দুটো ট্যাবলেট বের করে নিয়ে এসে মহীতোষের খোলা মুখের ভেতর ঢেলে দিলেন। ছোটমাকে দেখে মাধবীলতা উঠে আসার চেষ্টা করলেও পারল না। মহীতোষের হাত তার কবজি ছাড়ছে না। ছোটমা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি হয়েছে?’
মহীতোষ যেন খুব কষ্ট করে আওয়াজ করলেন। শোনা মাত্র ছোটমার কপালে ভাঁজ পড়ল। চট করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন। অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘কি ব্যাপার?’
‘আমি ভাল বুঝছি না। আগে আমি ওঁর সব গোঙানির মানে বুঝতে পারতাম। এখন—। শরীর নিশ্চয়ই খুব খারাপ করছে। ডাক্তারকে খবর দিতে হবে।’
‘ডাক্তার কোথায় আছেন? আমাকে বলে দাও, আমি যাচ্ছি।’
ছোটমা চকিতে মুখ তুললেন। অনিমেষের সঙ্গে চোখাচোখি হল। অনিমেষ লক্ষ্য করল ছোটমার মুখে অদ্ভুত একটা তৃপ্তি চলকে উঠল। কিন্তু ওই মুহূর্তে সে কারণটা ধরতে পারল না। ছোটমা বললেন, ‘তুমি কি করে যাবে?’
‘কেন? আমার যেতে কোন অসুবিধে হবে না।’
একটু ইতস্তত করে শেষ পর্যন্ত ছোটমা অনিমেষকে ডাক্তারের বাড়ির নির্দেশ দিলেন। অনিমেষ আর দাঁড়াল না। দ্রুত বাইরের দরজা খুলে সে বারান্দায় এল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে এখন তেমন অসুবিধে হল না। একটু ভয় ভয় করলেও শেষ পর্যন্ত সে সহজেই নেমে এল। মাটিতে পা দেওয়ামাত্র মনে হল একটা চটি থাকলে বড় ভাল হত। অন্তত যে পা মাটিতে পৌঁছাচ্ছে সেটায়। অনিমেষ গেট খুলতে খুলতে খেয়াল করতে পারল না শেষ কবে সে চটি পরেছে! জেলে গিয়ে না তার আগেই। বড় রাস্তা অবধি আসতেই শরীরে ঘাম জমল। যতটা স্বচ্ছন্দ ভেবেছিল ততটা এখনও হয়নি। একটু বিশ্রাম নিয়ে সে হাঁটতে লাগল। একপাশে খেলার মাঠ অন্য পাশে সারি সারি কাঠের বাড়ি। এই রাস্তাটা আশৈশব একই রকম আছে। অথচ একটাও পরিচিত মানুষ চোখে পড়ছে না। নাকি মানুষগুলোর চেহারাও এত বছরে এমন পাল্টে গেছে যে সে চিনতে পারছে না! রাস্তায় বিরাট গাছ এবং বিকেলের ঘন ছায়ায় একটা মায়াময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনিমেষের মনে হল অনেক অনেক বছর পরে সে মানুষের মত হেঁটে যাচ্ছে।
চৌমাথায় এসে সে দেখল অর্ক দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে একটি মুখে প্লাস্টার লাগানো একটা ছেলে। অনিমেষকে দেখে অর্ক এগিয়ে এল, ‘কোথায় যাচ্ছ?’
অনিমেষ বুঝতে পারছিল না অর্কর সঙ্গে ওই ছেলেটির আলাপ হল কি করে! ওরা বেশ ঘনিষ্ঠ ভঙ্গীতেই গল্প করছিল। এবং দূর থেকেই সে লক্ষ্য করেছে ছেলেটি সিগারেট খাচ্ছিল। অর্কর হাতে সিগারেট নেই এটা সে দেখতে পাচ্ছে।
‘তুই এখানে কি করছিস?’
‘এমনি দাঁড়িয়ে আছি। তুমি এতদূর হেঁটে এলে কেন?’
‘ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।’
‘ডাক্তার? কেন কি হয়েছে?’
‘তোর দাদুর শরীরটা ভাল নেই।’ অনিমেষ হাঁটতে লাগল। অর্ক তার সঙ্গে এল, ‘আমি যাব তোমার সঙ্গে?’
অনিমেষের খুব ইচ্ছে হচ্ছিল অর্ককে সঙ্গে রাখতে। কিন্তু তারপরেই সে ইচ্ছেটাকে নাকচ করল, ‘না না। আমি একাই পারব। তুই সন্ধ্যের মধ্যেই ফিরে যাস।’
‘আমি এখনই যাব?’
‘না, এখনই যাওয়ার দরকার নেই।’ অর্ককে ছাড়িয়ে এসে অনিমেষের মনে বেশ স্বস্তি হল। সে এখন একাই এসব পারবে। কারও ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না জানলে মন ভাল হয়।
ডাক্তারকে অনিমেষ এর আগে কখনও দ্যাখেনি। ভদ্রলোক বছর চারেক জলপাইগুড়িতে এসেছেন। অল্পবয়সী, অনিমেষের চেয়ে ছোট বয়সে। শোনামাত্র তিনি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলেন, ‘কোন বাড়িটা বললেন?’
অনিমেষ বুঝিয়ে বলতেই ডাক্তার বললেন, ‘আমি অনেকদিন আগে ওঁকে দেখতে গিয়েছিলাম কিন্তু তারপর কেউ আমায় কোন খবর দেয়নি। আপনি রোগীর কে হন?’
‘আমার বাবা।’ অনিমেষ ডাক্তারের পাশাপাশি সমান তালে হাঁটছিল। যদিও তার দুই থাই এবং কাঁধে এখন চিনচিনে ব্যথা কিন্তু সে কেয়ার করছিল না।
‘কিছু মনে করবেন না, আপনার নামটা জানতে পারি?’
‘অনিমেষ মিত্র।’
‘সেকি!’ ডাক্তার চমকে অনিমেষের দিকে তাকালেন। তারপর নিচু গলায় বললেন, ‘আপনি মিসিং, আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই না?’
অনিমেষ অবাক হল। এই লোকটা দেখা যাচ্ছে তার সম্পর্কে অনেক খবর রাখে। অথচ তাদের পরিবারের সঙ্গে যে খুব ঘনিষ্ঠতা আছে তাও মনে হচ্ছে না। সে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল, ‘ব্যাপারটা যদিও ঠিক সেরকম না কিন্তু, আপনি এত সব জানলেন কি করে?’
‘আপনার কথা আমি অনেক শুনেছি। তবে স্বীকার করছি বেশ কন্ফিউজড ছিলাম।’
ওরা বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছিল। গেট খুলে অনিমেষ বলল, ‘আসুন।’ কিন্তু তৎক্ষণাৎ সে নিজের শরীরের কাছে হেরে গেল। সিঁড়ি ভাঙতে পারছে না সে। কিছুতেই পা তুলতে পারছে না ওপরে। ডাক্তার সেটা লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি আপনাকে ধরব?’ অনিমেষ বুঝতে পারছিল হ্যাঁ বলা দরকার কিন্তু সঙ্কোচ হচ্ছিল খুব। অথচ কারো সাহায্য ছাড়া তার পক্ষে বারান্দায় ওঠাও মুশকিল।
পানঅলার কাছ থেকে হান্টারটা নিয়ে অর্ক যখন খুঁটিয়ে দেখছিল তখনই অনিমেষ এসে পড়েছিল সেখানে। বাবার চোখ যাতে জিনিসটার ওপরে না পড়ে সেজন্যে চকিতে সেটা লুকিয়ে ফেলেছিল পেটের ওপর প্যান্টের তলায়। দাদু অসুস্থ এবং বাবা ডাক্তার ডাকতে এসেছে সুতরাং তার এখনই বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত। অথচ এখনও সন্ধ্যে হয়নি তেমন। মিনিট কুড়ি পরে ফিরলে এমন কিছু অন্যায় হবে না। সে ছেলেটাকে, যার নাম শানু, জিজ্ঞাসা করল, ‘ওদের ঠিক তুমি চেন?’
শানুর চোখ দুটো জ্বলে উঠল, ‘কিন্তু আমরা তো মাত্র দুজন!’
‘দুজন খুব কমতি মনে করছ কেন?’
‘আমার এক বন্ধু আছে, ওকে ডাকব?’
‘কোন দরকার নেই। তুমি ওদের ঠেক্টা আমাকে দূর থেকেই দেখিয়ে দাও, কাছে যেতে হবে না। তারপরের নকশা আমি বুঝে নেব।’ অর্ক হাসল।
শানু তখনও দ্বিধাগ্রস্ত, বলল, ‘একা যাওয়া ঠিক হবে না।’
অর্ক একটু জোরেই বলল, ‘ফালতু জ্ঞান দিও না। যাবে কিনা বল।’
অতএব ছেলেটি রাজি হল। পানের দোকানের পাশে তার সাইকেল রাখা ছিল। সে সেটাকে নিয়ে এসে বলল, ‘আপনি রডে বসবেন?’
অর্কর ব্যবস্থাটা ভাল লাগছিল না। সে নিজে কখনও সাইকেল চালায়নি এবং কারো সঙ্গে সাইকেলে কখনও যায়নি। পড়ে টড়ে যাওয়ার ভয় আছে তাছাড়া যে চালাবে তার ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। এক্ষেত্রে তো অন্য কোন উপায় নেই। সে সাইকেলে বসে বলল, ‘এখন থেকে আমাকে তুমি বলবে।’
শানু হাসল। তারপরে বলল, না গেলে হতো না?
‘কেন?’
‘ওই পাড়ায় ধোলাই খেতে প্রেস্টিজে লাগবে। শর্মিলা—।’
‘ধোলাই খাবে কেন?’
শানু উত্তর দিল না। দক্ষ হাতে সাইকেলটা একটা সেতুর ওপর তুলে নিয়ে এল। অর্কর খুব ভয় করছিল। রডটা ওর নিতম্বে বেশ লাগছে কিন্তু সে এমন ভঙ্গী করছিল যেন কিছুই হয়নি। সে জিজ্ঞাসা করল, ‘নদীটার নাম কি?’
‘করলা। কদিন আগে এখানে তিনজন বন্যার জলে ডুবে গেছে।’
‘যাঃ। এটা তো একটা খাল!’
‘খাল না নদী সেদিন না দেখলে বোঝা যাবে না। ওইটে থানা।’
অর্ক দেখল কয়েকজন অবাঙালি কানে পৈতে লাগিয়ে লোটা হাতে ঘোরাফেরা করছে। কলকাতার পুলিসের চেয়ে এদের চেহারা খুব নিরীহ। সে জিজ্ঞাসা করল, ‘এখানকার পুলিসরা কেমন? খুব অত্যাচার করে?’
‘মোটেই না। পুলিস কোন ঝামেলায় যায় না। কোথাও ঝামেলা হচ্ছে খবর পেয়েও পুলিস ঘণ্টাখানেক দেরি করে। ওই সময়ে যা হবার তা হয়ে গেলে তারপর পুলিস স্পটে পৌঁছাবে। আসলে কাউকে অ্যারেস্ট করলে ঝামেলা আরো বাড়ে আর গুলি করলে বোধহয় এত কৈফিয়ত দিতে হয় যে পুলিস থানা থেকে বের হতে চায় না।’
অর্ক বলল, ‘তুমি তো অনেক জানো।’
শানু হাসল, ‘এসব কথা এখন শহরের বাচ্চারাও জানে।’
সাইকেলে যত এগোচ্ছে তত মনে হচ্ছে শহরটা যেন প্রাণহীন। রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। বাড়ি-ঘরের চেহারা এককালে ভাল ছিল বোঝা যায় কিন্তু এখন যেন অযত্নে রয়েছে। রাস্তার চেহারাও ভাল নয়। একটা মোড়ের কাছে এসে সাইকেল থামাল শানু, ‘ওই মোড়টা ঘুরলেই ওদের পাড়া। ওরা ওখানেই বসে আড্ডা মারে।’
অর্ক বলল, ‘থামলে কেন? চল।’
‘না, আমি যাব না।’ শানুর গলায় এবার স্পষ্ট জেদ।
অর্ক সাইকেল থেকে নামল। বেশ ব্যথা হয়ে গেছে পশ্চাদ্দেশ। সে পেটে হাত দিয়ে হান্টারটাকে স্পর্শ করে নিল। তারপর বলল, ‘আমি ঘুরে আসছি। না আসা পর্যন্ত তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে। যদি না থাকো—।’
অর্ককে কথা শেষ শেষ করতে দিল না শানু, ‘আমি থাকবো। তবে চটপট এসো। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না তুমি কেন ওখানে যাচ্ছ?’
অর্ক কথাটার জবাব না দিয়ে এগিয়ে গেল। কয়েক পা হাঁটতেই মোড়ের মাঝখানে চলে এল সে। এখন পাতলা ছায়া নেমে গেছে পৃথিবীতে। সে সতর্ক চোখে চারপাশে তাকাতে তাকাতে হাঁটতে লাগল। এবার যে পাড়ার মধ্যে ঢুকে পড়েছে তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। তারপরেই তার নজরে পড়ল নেতাজী সংঘ সাইনবোর্ডটা। একটা চালাঘরের মধ্যে আট-দশজন গল্প করছে। এরাই কি? সে নিরীহ মুখে উঁকি দিতেই একটা ছেলে তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। অর্ক হেসে ফেলল তারপর কোমর থেকে হান্টারটা বের করে ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে ধরল, ‘আপনার জিনিস।’
এবার যেন ছেলেটি তাজ্জব। ঘরের অন্যান্যরা শব্দহীন হয়ে দৃশ্যটা দেখছে। অর্ক আবার বলল, ‘নিন, ধরুন।’
ছেলেটা এবার খপ করে অস্ত্রটা কেড়ে নিল। তারপর এক লাফে এগিয়ে গেল দরজার দিকে। তার গলায় চিৎকার শোনা গেল, ‘এই শালা তখন রংবাজি করেছিল!’ ওর সঙ্গী দুজনও উঠে দাঁড়াল। তৎক্ষণাৎ ঘরের মধ্যে বসে থাকা ছেলেদের একজন উঠে দাঁড়াল, ‘দাঁড়া তোতন, আমি আগে ওর সঙ্গে কথা বলি।’ যে কথা বলল তার বয়স একটু বেশী, চেহারাও ভারী। তার কথার যে ওজন আছে তা বোঝা গেল। লোকটা এবার জিজ্ঞাসা করল, আপনার নাম কি?
‘অর্ক মিত্র।’ নিজের নামটা বলার সময় অর্ক দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনের ওপর নজর রাখছিল। কথা বলতে পারার সুযোগটা যে আসবেই সে জানতো তাই এখন কিছুটা নিশ্চয়তাবোধ এসেছে। লোকটা বলল, ‘কোন পাড়ায় থাকেন?’
‘হাকিমপাড়ায় এসেছি। আমি কলকাতায় থাকি।’
‘সেটা ওদের কথা শুনে বুঝতে পেরেছি। শানুকে আপনি চেনেন?’
‘আগে চিনতাম না, তখনই আলাপ হয়েছে।’
‘তাহলে বাঁচাতে গেলেন কেন?’
অর্ক হাসল, ‘কেউ অসহায়ভাবে মার খাবে তা দাঁড়িয়ে দেখা যায় না।’
এবার লোকটা তোতন নামধারীর সঙ্গে চোখাচোখি করল। অর্ক বলল, “কিন্তু এখানে কারো সঙ্গে আমার শত্রুতা করার ইচ্ছে নেই তাই ওটা ফেরত দিতে এসেছি।’
‘আপনার সাহস তো খুব।’
‘আমি অন্যায় করিনি তাই ভয় পাব কেন?’
‘এই ক্লাবের কথা শানু আপনাকে বলেছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘আপনি কবে এসেছেন এখানে?’
‘আজ সকালে।’
‘এর আগে জলপাইগুড়িতে কখনও এসেছেন?’
‘না।’
লোকটা কিছু ভাবল। তারপর বলল, ‘তোতন, বসে পড়। আপনিও বসুন।’
অর্ক মাথা নাড়ল, ‘না, আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। আমার দাদুর খুব অসুখ। ওটা ফেরত দিতে এসেছিলাম, দেরি করলে হয়তো আপনারা ভুল বুঝতেন।’
লোকটা বলল, ‘দেখুন, এই শানু ছেলেটা খুব বাজে! ওর অভ্যাস পাড়ায় পাড়ায় মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করে বেড়ানো। শালা নিজেকে ফিল্মস্টার ভাবে। আপনি ওকে সাহায্য করেছেন না জেনে—।’
‘কিন্তু আপনারা ওকে যথেষ্ট শিক্ষা দিয়েছেন, তাই না?’
কথাটার কেউ জবাব দিল না। অর্ক এবার তোতনের দিকে হাত বাড়াল, ‘আসুন।’
তোতন ইতস্তত করছিল। লোকটা বলল, ‘ঠিক হ্যায়। তোতন হাত মেলাও। এরকম সাহসী আমি খুব কম দেখেছি। তবে শানুকে বলে দেবেন যেন আর কখনও এপাড়ায় পা না দেয়।’
তোতনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অর্ক বাইরে বেরিয়ে এল। লোকটাও সঙ্গে এল, ‘আমার নাম দুলাল, জলপাইগুড়িতে কোন দরকার হলে আমাকে বলবেন। আপনি ক’দিন থাকবেন?
‘ঠিক নেই, দাদুর শরীরের ওপর নির্ভর করছে?’
‘দাদুর নাম কি?’
‘মহীতোষ মিত্র।’
‘কোন বাড়িটা?’
‘টাউন ক্লাব মাঠের পাশে।’
‘কলকাতায় কোন অঞ্চলে থাকেন?’
‘বেলগাছিয়া।’
‘ওখানে আপনাদের টিম খুব শক্তিশালী, না?’
অর্ক অবাক হল। কিসের টিম? সে তো কোন খেলাধুলা করে না। কিন্তু আন্দাজে ঘাড় নাড়ল। দুলাল বলল, ‘ওদের মুখে আপনার ডায়লগ শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম। তা যদ্দিন এখানে আছেন মাঝে মাঝে চলে আসবে। আড্ডা মারা যাবে।’
কথা বলতে বলতে ওরা মোড়ের মাথায় চলে এসেছিল। অর্ক দেখল যেখানে শানুর দাঁড়িয়ে থাকার কথা সেখানে সে নেই। দুলালের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে সাইকেলের পথটা ধরে জোর পায়ে হাঁটতে লাগল। খানিকটা যাওয়ার পর কোন আড়াল থেকে শানু সাইকেল নিয়ে সহসা উদিত হল। তাকে দেখে অর্কর বেশ মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, ‘কোথায় গিয়েছিলে?’
‘বাঃ, তুমি মালগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলে, আমি কি করে থাকি?’
সাইকেলের রডে বসে অর্ক বলল, ‘তাড়াতাড়ি চালাও।’ ততক্ষণে অন্ধকার নেমে গেছে। রাস্তার ধারের আলোগুলো কোন কারণে জ্বলছে না। অর্ক বুঝতে পারছিল শানু কি হল জানবার জন্যে ছটফট করছে কিন্তু সে গম্ভীর হয়ে থাকায় সাহস পাচ্ছে না। টাউনক্লাবের পাশে এসে সে নেমে পড়ল, ‘শোন, ওই পাড়ায় তুমি আর কখনও যেও না।’
‘যাব না? শানুকে হতভম্ব দেখাল।
‘গেলে ওরা শেষ করে ফেলবে। আর পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে প্রেম করো কেন?’
‘কোন শালা বলেছে? জিন্দিগীতে আমার শর্মিলা ছাড়া আর কেউ নেই।’
‘আমি ওসব জানি না, ওরা যা বলেছে বলে দিলাম। আচ্ছা, এখানকার মাস্তানরা টাকা কামায়?’ অর্ক শানুকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল।
‘টাকা পয়সা? না তো। শুধু পুজোর সময় চাঁদা তোলে।’
‘পার্টি থেকে সাহায্য করে না?’
‘না তো।’ শানু যেন কিছুই বুঝতে পারছে না। অর্ক মাথা নাড়ল। তারপর হন হন করে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল। এখানকার মাস্তানির সঙ্গে কলকাতার অনেক পার্থক্য। এই ছেলেগুলোর ভদ্রতাবোধ আছে, টাকার জন্যে ধান্দাবাজী নেই। খুরকি কিলা কোয়ার মত হিংস্র এবং শঠ নয়। দুলাল তোতনদের আপত্তি এটুকুই যে তাদের পাড়ার মেয়ের সঙ্গে বাইরের ছেলে প্রেম করতে আসতে পারবে না। হায়, কলকাতায় এটা নিয়ে কেউ মাথাই ঘামায় না।
মহীতোষের দ্বিতীয় স্ট্রোক হয়ে গেল। ডানদিকটা যা এতকাল সচল ছিল তাও অকেজো হয়ে গেল। এখন সমস্ত শরীর অনড়। ডাক্তার আসার আগেই মাধবীলতা সেটা বুঝতে পেরেছিল। মহীতোষের যে হাতের মুঠি তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল তা হঠাৎই নরম হয়ে খসে পড়েছিল বিছানায়। এমন কি মুখ ফেরানোর শক্তিটুকুও অবশিষ্ট রইল না। কিন্তু সেইসঙ্গে আর একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটল। মহীতোষের গলা থেকে যে শব্দ এতকাল বেরোত তা গোঙানি ছাড়া কিছু নয়। একমাত্র ছোটমা তার অর্থ বুঝতে পারতেন। দ্বিতীয় স্ট্রোকের পর সেই শব্দ আচমকা স্পষ্ট হয়ে গেল। অত্যন্ত নির্জীব কণ্ঠ কিন্তু কথা বোঝা যায়। সমস্ত শরীর স্থির, মুখে কোন অভিব্যক্তি নেই, চোখের পলক পড়ছে না কিন্তু কথা বলতে পারছেন মহীতোষ।
ডাক্তার ঘণ্টাখানেক বসে থেকে অনিমেষকে নিয়ে পাশের ঘরে চলে এলেন, ‘বুঝতেই পারছেন আমার কিছুই করার নেই। হাসপাতালে রিমুভ করেও কিছু কাজ হবে না। আমার বিস্ময় লাগছে উনি কি করে ভয়েস ফিরে পেলেন!’
‘বাবা তাহলে কোনদিনই সারবেন না?’
‘সত্যি কথাটা তাই। এখন যে কদিন আছেন ওঁকে শান্তিতে থাকতে দিন। এসব ক্ষেত্রে বোধটুকু থাকে না। ফলে চলে যাওয়ার আগে কোন কষ্ট মানুষ বুঝতে পারে না। এটা খুব ব্যতিক্রম। বোধ যখন আছে তখন আপনাদের ওপর চাপ পড়বে।’
অনিমেষ দুহাতে মুখ ঢাকল, ‘কোন চিকিৎসাই নেই?’
ডাক্তার কোন উত্তর দিলেন না। ছোটমা পাথরের মত দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। হেমলতাকে কাছাকাছি দেখা যাচ্ছিল না। মহীতোষ যেসব ওষুধ খেতেন সেগুলো দেখে ডাক্তার আর ওষুধ পাল্টালেন না। বললেন, ‘দিন তিনেক যাক তারপর চিন্তা করব কি করা যায়। এখন কেউ ওঁর সঙ্গে কথা বলবেন না। ওঁকে কথা বলতে দেওয়া উচিত হবে না।’
ডাক্তার উঠে দাঁড়াতে অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনার—?’
ডাক্তার হাসলেন, ‘না, না, আপনার কাছ থেকে কিছু নিতে পারব না।’
‘আমার কাছ থেকে, কেন?’
ডাক্তার সামান্য ইতস্তত করে বললেন, ‘এ নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে, আজ আমি চলি, আপনাকে আর আসতে হবে না।’
ক্রাচ নিয়ে অনিমেষ ডাক্তারের সঙ্গে বারান্দায় এল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হঠাৎ ডাক্তার বললেন, ‘আপনার সঙ্গে এর মধ্যে কেউ যোগাযোগ করেনি?’
‘কে করবে? আমি বুঝতে পারছি না।’
ডাক্তার মাথা নাড়লেন। তারপর বললেন, ‘আপনার মানসিক অবস্থা ভাল নেই বুঝতে পারছি। তবে কাল একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। আর ওঁর কোন প্রয়োজন হলেই আমায় খবর দেবেন।’ গেট খুলে বেরিয়ে গেলেন ভদ্রলোক।
অনিমেষ ভ্রূ কুঁচকে দাঁড়িয়েছিল। লোকটার কথাবার্তা যেন কেমন অন্য সুরে বাঁধা। একটু অস্বাভাবিক। প্রতিটি কথায় অন্যকিছু ইঙ্গিত আছে। দেখা যাক, কে আসছে আগামীকাল। কেন আসছে তখনই বোঝা যাবে।
‘কি হবে?’
পেছন থেকে প্রশ্নটা আসতেই চমকে মুখ ফেরাল অনিমেষ। ছোটমা দাঁড়িয়ে আছেন দরজায়। মুখে কোন স্পন্দন নেই। অনিমেষ বলল, ‘দেখা যাক।’ তারপর মনে পড়ায় বলল, ‘পিসীমা কোথায়?’
‘ঠাকুর ঘরে।’
অনিমেষ ধীরে ধীরে ছোটমার পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকল। তারপর যতটা সম্ভব ক্রাচের শব্দ বাঁচিয়ে ভেতরের বারান্দা দিয়ে ঠাকুর ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল। এদিকটায় ঘন অন্ধকার। আলো জ্বালানো হয়নি। সে ভেজানো দরজা ঠেলতেই দৃশ্যটা দেখতে পেল। প্রদীপ জ্বলছে ঠাকুরঘরে। অনেকরকম দেবদেবী এবং অবতারের ছবির সামনে পাথরের মত বসে আছেন হেমলতা। তাঁর দুই গাল জলে ভেজা। মাঝে মাঝে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠছে থরথরিয়ে। অনিমেষ ধীরে ধীরে তাঁর পাশে এসে দাঁড়াল। তারপর ক্রাচে ভর করে মাটিতে বসে পিসীমার কাঁধে হাত রাখতেই তিনি চমকে তাকালেন। অনিমেষ চাপা গলায় বলল, ‘পিসীমা—।’
হেমলতা এবার ডুকরে কেঁদে উঠলেন, “ঠাকুর, মহীর আগে আমায় নিয়ে নাও।’
অনিমেষ দুহাতে হেমলতার পাখির মত হালকা শরীর জড়িয়ে ধরল, ‘পিসীমা—।’
‘তুই কে, ছেড়ে দে আমাকে, ছেড়ে দে—।’ হেমলতার ক্রন্দন উচ্চতর হল।
‘আমি অনি—।’ অনিমেষের গলা বুজে আসছিল।
‘অনি, বল তুই, সত্যি করে বল, তুই কি অনি?’ হেমলতা তাকে আঁকড়ে ধরলেন।